হায় সজনি – ১০

১০

‘নার্সকে বলে লোকটির সাহায্য নিয়ে অমিত এগিয়ে গিয়ে দেখল, সে যে তলায় আছে সেই তলায় অন্যপ্রান্তে মৃণালের কেবিন। সে একা নয়, আর একজন বালিকা রয়েছে অন্য বিছানায়!

নাকে নল, চিৎ হয়ে হয়ে যে মহিলা শুয়ে আছেন তিনিই কি মৃণাল। না বলে দিলে চেনা সহজ ছিল না। বিছানার সঙ্গে শরীর যেন মিশে গিয়েছে; মুখের আদলও অনেক বদলেছে। দুটো চোখের পাতা বন্ধ। মৃণালের শীর্ণ দুটো হাত শরীরের দু’দিকে বিছানার ওপর পড়ে আছে। লোকটি একটা টুল টেনে খাটের পাশে দিলে অমিত বসে পড়ল।

বোঝাই যাচ্ছে, মৃণালের চৈতন্য নেই। নার্স পাশে দাঁড়িয়ে ঠোঁটে আঙুল চেপে ইশারায় জানাল, কথা বলবেন না।

চোখ বন্ধ করল অমিত। কলেজ থেকে বের হয়ে বাসস্টপে দাঁড়ানো ফার্স্ট ইয়ারের মৃণাল, পার্কে সিগারেট খাওয়া মৃণালের মুখ আর ছবিতে সুযোগ পাওয়ার জন্যে তার কাছে অনুরোধ করতে আসা মুখের সঙ্গে এই মুখের কোনও মিল নেই। সময় জীবন থেকে কী এইভাবে সব কেড়ে নেয়।

নার্স বলল, ‘এবার আপনি চলুন স্যার।’

উঠতে গিয়ে মৃণালের মুঠো করা হাতের দিকে নজর যেতেই অমিত অবাক হয়ে দেখল আঙুলগুলো একটু একটু করে প্রসারিত হচ্ছে। হাতের চামড়ার রং প্রায় সাদাটে। ডান হাত বাড়িয়ে মৃণালের সেই প্রসারিত হাতের একটিতে হাত রাখল অমিত। কয়েক সেকেন্ড যেতেই মৃণালের হাত যেন নড়ে উঠল। তারপর সেটি মুঠো হয়ে যেতে অমিতের হাত সেই মুঠোর মধ্যে চলে গেল।

অমিতের মনে হল মৃণালের আঙুলগুলো তার পাঁচটা আঙুল আকড়ে ধরেছে। সে তাকাল। মৃণালের চোখ যেমন ছিল, তেমনই বন্ধ। শরীরের কোথাও বিন্দুমাত্র সাড় নেই।

কিন্তু সে মৃণালের রক্তের তাপ স্পষ্ট অনুভব করতে পারছে।

***

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *