হাদীসের উৎপত্তি

হাদীসের উৎপত্তি

পূর্বোক্ত বিস্তারিত আলোচনা হইতে ইসলামী জীবনে হাদীসের স্থান এবং হাদীসের গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হইয়াছে। বর্তমান পর্যায়ে আলোচনা করিব কিভাবে হাদীস লাভ করিলেন, তাহাই হইবে এখনকার মূল আলোচ্য বিষয়।

নবী করীম (ﷺ) এর নিকট হইতে হাদীসের সর্বপ্রথম শ্রোতা হইতেছেন সাহাবায়ে কিরাম। দ্বীন-ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ও বিস্তারিত জ্ঞান লাভের জন্য তারা রাসূলেল দরবারে উদগ্রীব হইয়া বসিয়া থাকিতেন। তারা নবী করীম (ﷺ) কে চব্বিশ ঘন্টা পরিবেষ্টিত করিয়া রাখিতেন। তিনি কোথায়ও চলিয়া গেলে তারা ছায়ার মত তাঁহার অনুসরণ করিতেন।

রাসূলে করীম (ﷺ) জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে ছিলেন ইসলামী বিধানের ব্যাখ্যাদাতা। কেবল মুখের কথায়ই নয়, নিজের কাজকর্ম ও সাহাবাদের কথা ও কাজের সমর্থন দিয়াও তিনি উহার বাস্তব ব্যাখ্যা দান করিতেন। সাহাবাগণ ইহার মাধ্যমেই হাদীসের মাহন সম্পদ সংগ্রহ এবং সঞ্চয় করিতেন। দ্বীন-ইসলামের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে যখনই কোন জটিলতা কিংবা অজ্ঞতা দেখা দিত। কোন প্রশ্নের উদ্রেক হইত, তখনই রাসূলের নিকট সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জিজ্ঞাসা করিয়াজওয়াব হাসিল করিতেন এবং সাহাবায়ে কিরাম (রা) একটি অমূল্য সম্পদ হিসাবে ইহার সংরক্ষণ করিতেন।

এতদ্ব্যতীত হাদীস উৎপত্তির আরো উপায় ইলমে হাদীসের ইতিহাসে সুস্পষ্টরূপে পরিলক্ষিত হয়। হযরত জিবরাঈল (আ) কখনো কখনো ছদ্মবেশে রাসূলের দরবারে উপস্থিত হইতেন এবং রাসূলের নিকট নানা বিষয়ে প্রশ্ন করিয়া ও উহার জওয়াব হাসিল করিয়া উপস্থিত সাহাবাদিগকে পরোক্ষভাবে শিক্ষাদান করিতেন। বুখারী ও মুসলিম শরীফে উদ্ধৃত ‘হাদীসে জিবরাঈল’ নামের প্রখ্যাত হাদীসটি ইহার অকাট্য প্রমাণ। ইহাতে বলা হইয়াছে যে, একজন অপরিচিত ও সুবেশী লোক রাসূলের দরবারে উপস্থিত হইয়া ইসলাম, ঈমান, ইহসান ও কিয়ামাত প্রভৃতি বুনিয়াদী বিষয়ে প্রশ্ন করেন। রাসূলে করীম (ﷺ) প্রত্যেকটি প্রশ্নের যথাযথ জওয়াব দান করেন। অতঃপর তিনি দরবার হইতে চলিয়া যান। রাসূলে করীম (ﷺ) উপস্থিত সাহাবাদের মধ্যে হযরত উমর ফারূক (রা) কে জিজ্ঞাসা করেনঃ

******************************************************

হে উমর, তুমি জান, এই প্রশ্নকারী লোকটি কে?

হযরত উমর (রা) স্বীয় অজ্ঞতা প্রকাশ করিলে রাসূলে করীম (ﷺ) নিজেই বলিলেনঃ

******************************************************

এই প্রশ্নকারী ছিলেন জিবরাঈল, তিনি তোমাদের নিকট তোমাদিগকে দ্বীন শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে আসিয়াছিলেন।

[*******************]

অতঃপর আমরা প্রামাণ্য গ্রন্হাবলী হইতে এমন কিছু ঘটনার উল্লেখ করিব, যাহা হইতে রাসূলের নিকট সাহাবাদের নানা বিষয়ে প্রশ্ন করা ও উহার জওয়াব হাসিল করার কথা প্রমাণিত হয়।

বস্তুত নবী করীম (ﷺ) এর নিকট সাহাবীদের সওয়াল করা অস্বাভাবিক ব্যাপর ছিল না। তিনি নিজেই তাহাদিগকে সওয়াল করিতেন, তাঁহার নিকট জিজ্ঞাসা করিয়া জানিয়া লইতে ও তদনুযায়ী কাজ করিতে বলিয়াছিলেন এবং এইজন্য সময় সময় তাকীদও করিতেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বলেনঃ নবী করীম (ﷺ)-এর যামানায় এক ব্যক্তি আহত হইলে তাহাকে গোসল করিতে বলা হইল। পরে সে মারা যায়। এই ঘটনার কথা নবী করীম (ﷺ) শুনিতে পাইয়া ক্রুদ্ধস্বরে বলিলেনঃ

******************************************************

আল্লাহ‍‍! ঐ লোকগুলিকে খতম করুন। আমার নিকট জিজ্ঞাসা করিলে না কেন? জিজ্ঞাসা করাই কি সব অজ্ঞতার প্রতিবিধান নয়?

[********************]

হযরত নাওয়াস ইবনে সালমান (রা) বলেনঃ আমি রাসূলের নিকট একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার জন্য দীর্ঘ একটি বৎসর পর্যন্ত মদীনায় অবস্থান করিয়াছি।

******************************************************

শেষ পর্যন্ত আমি তাঁহার নিকট ‘বিরর’ ও ‘ইসম’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলোম। তিনি জওয়াবে বলিলেনঃ ‘বিরর’ হইতেছে নেক চরিত্র আর ‘ইসম’ তাহাই যাহা তোমার খটকা জাগায়-সংকোচের সৃষ্টি করে এবং তাহা লোকেরা জানুক ইহা তুমি পছন্দ কর না।

[*****************]

কেবল মদীনায় উপস্থিত লোকেরাই যে রাসূলের নিকট প্রশ্ন করিতেন তাহা নহে; সুদূরবর্তী শহর ও পল্লী অঞ্চল হইতেও নও-মুসলিম লোকেরা দরবারে উপস্থিত হইয়া প্রশ্ন করিতেন। একদিন নবী করীম (ﷺ) সাহাবাদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হইয়া মসজিদে নববীতে বসিয়াছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি উটের উপর সওয়ার হইয়া আসিয়া উপস্থিত হইল। রাসূলের নিকট প্রশ্ন করার অনুমতি চাহিয়া বলিলঃ

******************************************************

আমি আপনার নিকট প্রশ্ন করিব; প্রশ্ন করার ব্যাপারে আমি অত্যন্ত কঠোরতাও প্রদর্শন করিব, আপনি কিন্তু আমার সম্পর্কে মনে কোন কষ্ট নিতে পারিবেন না।

অতঃপর নবী করীম (ﷺ) তাহাকে প্রশ্ন করার অনুমতি দান করিলে সে আল্লাহ সম্পর্কে, সমগ্র মানুষের প্রতি রাসূলের রাসূল হিসাবে প্রেরিত হওয়া সম্পর্কে, পাঁচ ওয়াকত নামায, একমাসের রোযা এবং ধনীদের নিকট হইতে যাকাত আদায় করিয়া গরীবদের মধ্যে বন্টন করা ফরয হওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিল। রাসূলে করীম (ﷺ) উত্তরে বলিলেনঃ

******************************************************

হ্যাঁ, আল্লাহ তা’আলা এই সবই ফরয করিয়া দিয়াছেন।

শেষ কালে সেই লোকটি রাসূলের জওয়াবে উদ্ধুদ্ধ হইয়া বলিলঃ

******************************************************

আপনি যে দ্বীন লইয়া আসিয়াছেন, তাহার প্রতি আমি ঈমান আনিলাম। আমার নাম যিমাম ইবনে সা’লাবা; আমি আমার জাতির লোকদের প্রতিনিধি হইয়াই আপনার নিকট আসিয়াছি।

হযরত আনাম বলেনঃ গ্রামদেশীয় এক ব্যক্তি আসিয়া রাসূলে করীম (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করিলঃ

******************************************************

আপনার প্রেরিত ব্যক্তি আমাদের নিকট গিয়া এই সংবাদ দিয়া আসিয়াছে যে, আপনাকে আল্লাহ তা’আলা রাসূল বানাইয়া পাঠাইয়াছেন বলিয়া আপনি মনে করেন, ইহা কি সত্য?

নবী করীম (ﷺ) উত্তরে ইহার সত্যতা স্বীকার করিয়া লন। অতঃপর সেই ব্যক্তি দ্বীন-ইসলামের কতগুলি মৌলিক বিষয়ে পূর্বে যাহা কিছু শুনিতে পাইয়াছিল তাহার সত্যতা সম্পর্কে রাসূলকে প্রশ্ন করে। রাসূল (ﷺ) তাহার সত্যতা বুঝাইয়া দিলে পর সে উদাত্ত কন্ঠে বলিয়া উঠেঃ

******************************************************

আপনাকে সত্য বিধানসহ যে আল্লাহ পাঠাইয়াছেন তাহার নাম শপথ করিয়া বলিতেছিঃ আপনার বিবৃত বিষয়সমূহে আমি কিছুই বেশি-কম করিব না।

[****************]

আবদুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধিদল নবী করীম (ﷺ)-এর খেদমতে উপস্থিত হইয়া নিজেদের অসুবিধা সম্পর্কে বিবরণ দিতে গিয়া বলিলঃ ‘হে রাসূল, আমাদের ও আপনার মাঝে মুশরিক গোত্রের অবস্থিতি রহিয়াছে, এই কারণে যে চার মাস যুদ্ধ করা হারাম তাহা ব্যতীত অপর সময়ে আমরা আপনার নিকট উপস্থিত হইতে পারি না’। অতএবঃ

******************************************************

দ্বীন-ইসলামে মূল বিষয় সম্পর্কে আমাদিগকে এমন কিছু বলিয়া দিন, যাহা অনুসরণ ও সে অনুযায়ী আমল করিলে আমরা বেহেশতে দাখিল হইতে পারিব এবং আমাদের পিছনে অবস্থিত লোকদিগকে তদনুযায়ী আমল করার জন্য আমরা দাওয়াত জানাইব।

[বুখারী শরীফ, ২য় খণ্ড, ৬২৭ পৃষ্ঠা-************]

বনূ তামীম গোত্র ও ইয়েমেনবাসীদের পক্ষ হইতে একদল লোক রাসূলের দরবারে উপস্থিত হইয়া আরয করিলেনঃ

******************************************************

আমরা আপনার নিকট দ্বীন-ইসলাম সম্পর্কে গভীর জ্ঞান লাভের উদ্দেশ্যে আগমন করিয়াছি। এই সৃষ্টির মূলে ও প্রথম পর্যায়ে কি ছিল, সে সম্পর্কেও আমরা আপনাকে জিজ্ঞাসা করিতেছি।

[বুখারী শরীফ, ১ম খণ্ড, ১৫ পৃষ্ঠা।]

বসরার বনূ-লাইস ইবনে বকর ইবনে আবদ মানাফ ইবনে কিনানা হইতে কিছু সংখ্যক যুবক ও সমবয়সী লোক মদীনায় রাসূলের দরবারে আসিয়া প্রায় বিশ দিন পর্যন্ত অবস্থান করেন। তারা যখন নিজেদের দেশে প্রত্যাবর্তন করিবার জন্য উদ্বগ্ন হইয়া পড়িলেন, তখন নবী করীম (ﷺ) তাঁহাদিগকে বলিলেনঃ

******************************************************

তোমরা ফিরিয়া যাও, তোমাদের পরিবার-পরিজনদের সহিত জীবন যাপন কর। তাহাদিগকে দ্বীন-ইসলামের শিক্ষা দান কর। তোমরা নামায পড়।(বুখারী)

মুসলিমের অপর বর্ণনায় ইহার পর রহিয়াছেঃ

******************************************************

(যেমন ভাবে তোমরা আমাকে নামায পড়িতে দেখ) আর যখন নামায উপস্থিত হইবে, তখন তোমাদের একজন সকলের জন্য আযান দিবে এবং তোমাদের অধিক বয়স্ক ব্যক্তি ইমামতি করিবে।

[বুখারী শরীফ, ১ম খণ্ড, *****************]

নবী করীম (ﷺ) এই যুবক দলকে বিশ দিন পর্যন্ত দ্বীন-ইসলামের অনেক কথাই হাতে-কলমে শিক্ষা দিয়াছিলেন। শরীয়াতের হুকুম আহকাম ও ইবাদতের যাবতীয় নিয়ম-নীতিও শিক্ষা দিয়াছিলেন। ফলে একদিকে যেমন বহু হাদীসের উৎপত্তি হইয়াছে, অপরদিকে ঠিক তেমনি রাসূলের এই হাদীসসমূহ মদীনা হইতে সুদূর বসরা পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য সাহাবীদের মারফতে পৌছিঁতে ও প্রচারিত হইতে পারিয়াছে।

হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বলেনঃ হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বলেনঃ আমরা রাসূলের দরবারে বসিয়াছিলাম। তিনি লোকদের সাথে কথা বলিতে ব্যস্ত ছিলেন। এমন সময় জনৈক আরব বেদুঈন আসিয়ারাসূলের নিকট জিজ্ঞাসা করিলঃ *************** ‘কিয়ামত কবে হইবে’? নবী করীম (ﷺ) তাঁহার কথা শেষ করিয়া বেদুঈনকে ডাকিয়া বলিলেনঃ

******************************************************

আমানত যখন বিনষ্ট করা শুরু হইবে তখন কিয়ামরে অপেক্ষা করিবে।

লোকটি জিজ্ঞাসা করিলঃ *************** আমানত কিভাবে নষ্ট করা হইবে?

নবী করীম (ﷺ) বলিলেনঃ

******************************************************

দায়িত্বপূর্ণ কাজ যখন অনুপযুক্ত ব্যক্তির উপর ন্যস্ত করা হইবে, তখন কিয়ামতের প্রতীক্ষার সময় উপস্থিত মনে করিবে।

[বুখারী শরীফ, ১ম খণ্ড, ১৪ পৃঃ।]

এইসব ঘটনা হইতে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, কুরআনের বাহক হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)- এর নিকট হইতে ইসলামের বিভিন্ন মৌলিক ও খুটিঁনাটি বিষয়ে জানিয়া লওয়ার তীব্র আকাঙ্খা এবং সেই জন্য চেষ্টা ও কষ্ট স্বীকার করিবার প্রবণতা সকল সহাবীর মধ্যেই বর্তমান ছিল। আর রাসূলে করীম (ﷺ) এইসব জিজ্ঞাসার জওয়াবে যত কথাই বলিয়াছেন, যত কজই করিয়াছেন এবং যত কথা ও কাজের সমর্থন করিয়াছেন, তাহার বিবরণ ইসলামী জীবন-ব্যবস্থার বিস্তৃত ব্যাখ্যার পর্যায়ভুক্ত এবং তাহাই হাদীস। এই সম্পর্কে আল্লাম বদরুদ্দীন আয়নী যাহা লিখিয়াছেন, তাহা এখানে উল্লেখ করা যাইতেছেঃ

******************************************************

সাহাবায়ে কিরাম রাসূলের নিকট অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ব্যাখ্যা ও তাৎপর্য জিজ্ঞাসা করিতেন। নবী করীম (ﷺ) তাহাদিগকে একত্র করিতেন, তাহাদিগকে দ্বীনের শিক্ষাদান করিতেন। সাহাবাদের কিছু লোক রাসূলের নিকট প্রশ্ন করিয়াজওয়াব লাভ করিতেন, অপর কিছু লোক উহা স্মরণ করিয়া রাখিতেন, কিছু লোক তাহা অপরের নিকট পৌছাইয়া দিতেন, অপরকে জানাইতেন, এইভাবে আল্লাহ তা’আলা তাঁহার দ্বীনকে পূর্ণতারয় পরিণত করিয়া লন।

[***********]

হাদীস শাস্ত্রের উৎপত্তি সম্পর্কে ইহা এক প্রামাণ্য ভাষণ, সন্দেহ নাই। এই প্রসঙ্গে ইমাম এবনে কাইয়্যেমের একটি উদ্ধৃতিও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বনুল মুনফাতিক নামক এক কবীলার আগমন সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে তাহাদের এক প্রশ্নের উল্লেখ করিয়াছেন এবং তাহার পর লিখিয়াছেনঃ

******************************************************

******************************************************

ইহা হইতে প্রমাণ পাওয়া গেল যে, সাহাবাগণ রাসূলের সম্মুখে তাঁহাদের নানাবিধ প্রশ্ন ও শোবাহ-সন্দেহ পেশ করিতেন এবং তিনি তাঁহাদিগকে উহার জওয়াব দিতেন। ফলে তাহাদের মন সান্ত্বনা লাভ করিত। তাঁহার নিকট শক্ররাও প্রশ্ন করিত, যেমন করিত তাঁহার সাহাবিগণ। পার্থক্য এই যে, শক্ররা প্রশ্ন করিত ঝগড়া করা ও নিজেদের বাহদুরী প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে, আর সাহাবিগণ প্রশ্ন করিতেন দ্বীনের তত্ত্ব বুঝিবার জন্য, উহার প্রকালের জন্য এবং বেশী বেশী ঈমান লাভের উদ্দেশ্যে। আর রাসূল (ﷺ) তাহাদের সকলেরই জওয়াব দান করিতন। অবশ্য যেসব বিষয়ের কোন জওয়াব তাঁহার জানা ছিল না- যেমন কিয়ামত হওয়ার সময়- কেবল সে- সব বিষয়েরই তিনি জওয়ার দিতেন না।

[****************]

নবী করীম (ﷺ) কেবল যে লোকদের সওয়ালেরই জওয়াব দিতেন এবং তাহাতেই হাদীসের উৎপত্তি হইত, তাহাই নয়। তিনি নিজে প্রয়োজন অনুসারে সাহাবিগণকে দ্বীন সম্পর্কে বিস্তারিত শিক্ষা দান করিতেন। হাদীসে এই পর্যায়ে বহু গটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। আমরা এখানে এই পর্যায়ের দুই একটি বিবরণের উল্লেখ করিতেছি।

১. হযরত আবূ যায়দ আনসারী (রা) বলেনঃ “একদিন নবী করীম (ﷺ) আমাদের লইয়া ফজরের নামায পড়িলেন। পরে তিনি মিম্বরে উঠিয়া দাঁড়াইলেন ও আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দান করিলেন। জোহরের নামাযের সময় পর্যন্ত এই ভাষণ চলিল। তখন তিনি নামিয়া জোহরের নামায পড়িলেন। নাময পড়া হইয়া গেলে তিনি আবা মিম্বরে উঠিয়া দাঁড়াইলেন ও ভাষণ দিতে থাকিলেন। আসরেরর নামায পর্যন্ত তাহা চলিল। আসরের নামাযের সময় উপস্থিত হইলে তিনি নামিয়া আসরের নামায পর্যন্ত তাহা পড়িলেন। নামায পড়া হইয়া গেলে তিনি আবার মিম্বরে দাঁড়াইয়া ভাষণ দিতে লাগিলেন। এই ভাষণ সূর্যাস্তকাল পর্যন্ত চলিল। এই একদিন ব্যাপী দীর্ঘ ভাষণে তিনি আমাদের নিকট অতীত ও ভবিষ্যতের অনেক কথাই বলিলেন। শুধু বলিলেনই না, আমাদিগকে জানাইয়াদিলেন ও মুখস্থ করাইয়া দিলেন।

[মুসনাদে আহমদ ইবন হা’ল, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৫৩।]

২. হযরত হানযালা (রা) বলেনঠঃ আমরা একদিন রাসূল (ﷺ)- এর সঙ্গে ছিলাম। এই সময় তিনি আমদিগকে জান্নাত ও জাহান্নামের কথা সবিস্তারে বলিলেন। উহার ফলে এই দুইটি জিনিস আমাদের সামনে উজ্জ্বল উদ্ভাসিত হইয়া উঠিল, যেন আমরা প্রত্যক্ষভাবে দেখিতে পাইতেছি……………….।

[মুসনাদে আহমদ ইবন হা’ল, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৫৩।]

মাত্র দুইটি বর্ণনা এখানে উদ্ধৃত করা গেল, যদিও হাদীসের কিতাবে এই পর্যায়ের বহু কথারই উল্লেখ রহিয়াছে। এই দুইটি বিবরণ হইতেই এই কথা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হইতেছে যে, নবী করীম (ﷺ) প্রয়োজনে বুঝিয়ানিজ হইতেই অনেক সময় দ্বীন সম্পর্কে অনেক কথাই বলিতেন এবং সব কথাই সাহাবিগণ স্মরণ রাখিতেন ও অন্যান্য লোকদের নিকট এই হাদীস- কথাসমূহ তারা বর্ণনা করিতেন।

হাদীসের উৎপত্তি পর্যায়ে এই কথাও উল্লেখ্য।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *