হাওয়ায় দুলছে
তুই আগেও মেরিনা বিচে স্নান করেছিস? সংস্থিতার বসার ঘরের চেয়ারে গা এলিয়ে পিয়াল জিজ্ঞেস করল।
একবারই করেছি। আজ আবার কী ইচ্ছে হল… সংস্থিতা তোয়ালে দিয়ে ভেজা মাথা মুছে নিয়ে বলল।
ইচ্ছে আবার কী হবে? আমায় ডোবানোর। জানিস আমার কলকাতা থেকে একটা ফোন এসেছিল তখন, নইলে আমি তো জানতামই না এই বিচ কতটা ডেঞ্জারাস।
মেরিনা বিচ কতটা বিপজ্জনক, তা জানার জন্য কলকাতার ফোনের দরকার হয় না পিয়াল। ওখানেই বোর্ডে স্পষ্ট করে লেখা আছে যে সমুদ্রস্নান নিষিদ্ধ।
সে-নিষেধ মানছে কে?
অধিকাংশ লোকই মানছে, মানবে না কেন? আগের বছরই এই বিচে ষোলোশোর ওপর লোক মারা গেছে। আসলে এখানে জলের এমন একটা চোরাস্রোত আছে…
পিয়াল সংস্থিতাকে থামিয়ে বলল, কী আছে, কত লোক মারা গেছে তুই সব জানিস। কিন্তু তুই তবু মানিস না কিছু। কী চমৎকার তাই না?
সংস্থিতা হাসতে হাসতে বলল, আমিও মানি রে পাগলা! সব সময়ই মানি। কিন্তু আজ তোর সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে কেমন একটা মনে হল ওই ফ্লাডলাইটের আলোয় মেরিনা বিচ যেমন ভেসে যাচ্ছে তেমনি আমিও ভেসে যাচ্ছি, আমার অতীত, ভবিষ্যৎ কিছু নেই, আছে শুধু এই মুহূর্তটা…
তোর কী হয়েছে আমাকে বল, পিয়াল গম্ভীর গলায় বলল।
আমার আবার কী হবে? ভাল আছি, তোফা আছি।
বিয়ে করছিস না কেন?
আমার সঙ্গে বনবে এমন কাউকে পাচ্ছি না বলে।
তোর কীরকম চাই আমায় বল? আমি খুঁজব।
তুই পারবি না রে পিয়াল। যে-ছেলেকেই খুঁজে বের করবি, তার সঙ্গেই তুই নিজে একটা কম্পিটিশনে জড়িয়ে পড়বি।
মানে?
মানে তোর মনে হবে, সংস্থিতা যদি এই ছেলেটাকে বিয়ে করতে পারে তা হলে আমাকে পারবে না কেন? আর এই ভাবনাটা মাথায় গেড়ে বসলেই তোর ছেলেটাকে অপছন্দ হতে শুরু করবে। বল, আমি ঠিক বলছি কিনা?
বোধহয় নয়। এতটাই যদি একনিষ্ঠ হতাম তোর প্রতি তা হলে টুয়ার প্রেমে পড়লাম কী করে? ওকে বিয়ে করার কথাও তো ভাবছিলাম।
ওই মেয়েটিকে তোর থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে সতীর্থ একটা উপকার করেছে তোর।
কীরকম উপকার, শুনি? পিয়াল গম্ভীর।
তুই দুনিয়ার হাল-হকিকত সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল হয়েছিস।
আমি দুনিয়ার হাল-হকিকত জানি। আমার তো তোর মতো মাস মাইনের চাকরি নেই, আমাকে খুঁটে খেতে হয়। নইলে বাংলা সিনেমার গান গাইতে চেন্নাই আসব কেন?
সত্যিই তো, কেন এসেছিস? সংস্থিতা হালকা রসিকতার চালে বলল।
পিয়াল মজাটা ধরতে পারল না। বলল, এসেছি কারণ এখন দশটার মধ্যে আটটা বাংলা সিনেমা তামিল নয়তো তেলুগু ছবির রিমেক। এবার আমি যার ছবিতে কাজ করছি তিনি আবার পারফেকশনিস্ট। মানে, টুকলি পারফেকশনিস্ট। এই লোকটার ছবিতে গ্রামবাংলার উঠোনে তামিল কায়দায় আলপনা দেওয়া থাকে, বাংলার বউরা সাউথ ইন্ডিয়ান বউদের মতো বড় বড় ঝোলানো নথ পরে থাকে…
উফ, ডিসগাস্টিং! সংস্থিতা বলল।
আরও শোন না, এই ভদ্রলোক এখন চাইছেন যে ওর ছবির গানেও একটা অরিজিনাল ইডলি-দোসা ফ্লেভার থাকুক। তাই আমি সেই অরিজিনাল কম্পোজারের কাছ থেকে বাংলা নকলের সুর তুলব বলে প্রোডিউসারের পয়সায় চেন্নাই এসেছি।
কী আশ্চর্য! অথচ এখনও যে-কোনও বাংলা গল্প সংকলনে পঞ্চাশজন লেখকের পঞ্চাশটা গল্প পড়লে মনে হয় এর থেকে দশটা নিয়ে ভাল ছবি বানানো যায়, তাই না? দৈন্য যখন নেই, তখন এতটা দৈন্য এল কোত্থেকে? সংস্থিতা উদাস গলায় বলল।
এই প্রশ্নটাই যদি তোকে আমি করি?
কী বলতে চাইছিস?
বলতে চাইছি আমি কেন টুয়ার পিছনে চক্কর কাটতে গেলাম, তুই কেন চেন্নাইতে পড়ে আছিস, যখন আমরা একসঙ্গে থাকতে পারতাম, ভালই থাকতে পারতাম।
সংস্থিতা হাসল, ভাল তো থাকতামই। তুই এখন বলে কত বড় স্টার।
আওয়াজ দিস না আমাকে, আমি জানি আমি কী। আমাদের বাড়িতে চোদ্দোপুরুষে কোনও গান-বাজনার চর্চা ছিল না। আমার ছোট পিসির বিয়ের সুবিধে হবে বলে বাবা একটা হারমোনিয়াম কিনেছিল কারণ সেই সময় ‘সংগীতজ্ঞা’, ‘সূচীশিল্পনিপুণা’ মেয়েদের একটা ডিমান্ড ছিল পাত্র-পাত্রী কলামে। তো সেই হারমোনিয়াম ছাড়াই আমার ছোট পিসি পার হয়ে গিয়েছিল বলে ওটাতে ইঁদুর আর আরশোলারাই বাস করত, বাজাত ওরাই। আমি দুঃস্বপ্নেও কোনওদিন ভাবিনি যে গায়ক হব…
সংস্থিতা বলল, ঠাকুর চেয়েছিলেন।
মানলাম। কিন্তু তোর-আমার সম্পর্কটা ঠাকুর চান না এরকম তোর মনে হচ্ছে কেন?
চাইলে আমি বুঝতে পারতাম।
তুই বুঝতে পারছিস না? তুই যে ভুলভাল প্রেমটা করতি সেটা কেটে গেল, আমি অন্য একটা জায়গায় মন লাগাতে গিয়েও ধাক্কা খেলাম।
তারপর হঠাৎ তোকে কাজের সূত্রে চেন্নাই আসতে হল…
তুইও সেই বৈষ্ণোদেবী যাওয়া নিয়ে অভিমান-টভিমান ঝেড়ে ফেলে আমাকে বাড়িতে আসতে বললি…
তো? সংস্থিতা পূর্ণদৃষ্টিতে তাকাল।
এগুলোকে তোর সিগনাল বলে মনে হচ্ছে না কেন? তোর কেন মনে হচ্ছে তোকে একা একা মহাপ্রস্থানের পথে যেতেই হবে?
ভাল বলেছিস। কিন্তু মহাপ্রস্থানের পথেও তো কেউ একা একা যায় না রে পিয়াল। না যুধিষ্ঠির, না সেই কুকুর।
তো আমাকে তোর সঙ্গে নে না রে? আমি ওই কুকুরটার মতোই তোকে ফলো করব, একদম শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত।
সংস্থিতার চোখে জল এসে গেল, এভাবে বলিস না পিয়াল, তুই জানিস না তুই কী। হনুমান যেমন জানত না সে কী করতে পারে কিন্তু রামচন্দ্র জানতেন ও সাগর পেরোতে পারে, তেমনি ঈশ্বর জানেন তুই কোথায় কোথায় যেতে পারবি। আমার কথা মিলিয়ে নিস।
পিয়াল ওর কাছে সরে এসে দুঃসাহসে ভর করে সংস্থিতার দু’গালে নিজের দুটো হাত রেখে বলল, সমুদ্র পেরোতে চাই না, তোর কাছে থাকতে চাই। আমার কথা শোন। তুই ভালবাসিস না আমাকে?
সংস্থিতা চোখ নামিয়ে বলল, বাসি বোধহয়।
তুই সুখী হতে চাস না?
তুই ওই গানটা জানিস, ‘সুখে আমায় রাখবে কেন, রাখো তোমার কোলে/ যাক না গো সুখ জ্বলে…’?
না, জানি না। কেন?
জানলে বুঝতি।
কী বুঝতাম? পিয়াল জড়িয়ে ধরল সংস্থিতাকে।
সংস্থিতা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, যারা ঠাকুরের আশ্রিত, ঠাকুর তাদের কর্মক্ষয় করিয়ে নেন। সুখ দেন না।
এটা একটা কথা হল? লোকে তবে ধম্মোকম্মো করতে যায় কেন? পিয়াল বলল।
কেন যায়? সুখের লাগিয়া? কোন ভগবান, কোন সদ্গুরু চব্বিশ ঘণ্টা নন-স্টপ জলের মতো সুখের সাপ্লাই দেবেন বলেছেন? ঈশ্বর তো ঘুষখোর অফিসার নয় যে তোকে সুবিধে পাইয়ে দেবে, রিসর্ট মালিক তো নয়, যে তোর ফুর্তির বন্দোবস্ত করে দেবে, সংস্থিতা হাঁপাচ্ছিল।
পিয়াল উঠে গেল সংস্থিতার সামনে থেকে। পাশের ঘরে গিয়ে বইপত্র নাড়াচাড়া করতে শুরু করল। কী বলবে ও এই মেয়েটাকে? কিন্তু একই সঙ্গে ও নিজেকেই বা কী বলবে? এই মেয়েটা, যাকে ও ভালবেসেছে সেই কবে থেকে, কেন এত জেদি হল? নাকি ওর জেদটাই ভাল লেগেছিল পিয়ালের? কিন্তু সব কিছুর একটা সীমা তো থাকবে? সংস্থিতা রান্নাঘরে গেল, কিছু চাপাল, নামাল, আওয়াজ হল অনেক রকম। তার মধ্যে শেষেরটা সংস্থিতার আবার বসার-ঘরে ফিরে আসার শব্দ। পিয়াল বুঝতে পারল। পাশের ঘরটা থেকে বেরিয়ে আবার সামনে এসে দাঁড়াল ওর, একাই যদি থাকবি, তা হলে দুটো ঘর ভাড়া নিয়েছিস কেন?
তোর মতো গেস্ট মাঝে মাঝে আসবে বলে।
আমি তো রাতে চলে যাব। তোর ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে তিন মিনিট হাঁটলেই পাঁচটা অটো ‘ইয়াঙ্গা’ ‘ইয়াঙ্গা’ বলে চেঁচাবে, তাদের একটাতে উঠে যাব, ব্যস।
থেকেও যেতে পারিস। এই ঘরটাতে শুবি, আমার প্রবলেম নেই।
আমার আছে। তোর মহত্ত্ব, তোর ইমেজ আমি ভাঙতে চাই না বস!
সংস্থিতা কী একটা বলতে গিয়ে বলল না, কেঁদে ফেলল। পিয়াল হতভম্ব হয়ে ওর সামনে হাঁটু মুড়ে বসল মেঝেতে। সংস্থিতা ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, আমি বিরাট নই, মহৎ নই, আমি সাধারণ। আমাদের ছোটবেলায় একটা নেড়িকুকুর থাকত আমাদের বাড়িতে, ভীষণ লোভী। সব সময় ছুকছুক করত। তো আমরা সেটার নাম দিয়েছিলাম ‘গ্রিডি’। কিন্তু আমার ঠাকুমা তো ‘গ্রিডি’ বলতে পারত না, ওকে দেখলেই জল ছেটাত গায়ে আর চিৎকার করত, গিরিডি পালা, পালা এইখান থেকে। এরকম চলতে চলতে এক সময় কুকুরটার নামই গিরিডি হয়ে গেল। আমারও তাই হয়েছে। আমি নেহাত পাতি, নেহাতই গ্রিডি। আমি সুখ চেয়েছি, সংসার চেয়েছি, তার সঙ্গে চেয়েছি আমাদের সম্পর্কগুলো যেন শুধু খদ্দের আর মালপত্তরের সম্পর্ক না হয়ে ওঠে, দর যাচাইয়ের হাট না হয়ে দাঁড়ায়। ব্যস, অমনি তোরা সবাই মিলে আমাকে ‘অন্যরকম’ বানিয়ে দিলি, ‘আধ্যাত্মিক’ বানিয়ে দিলি। আমার ভিতর ঝরনা নেই, পাহাড় নেই, তবু গিরিডি বানিয়ে দিলি আমাকে।
পিয়াল সংস্থিতার দুটো হাঁটুতে ওর মুখটা গুঁজে দিয়ে বলল, তোর ভিতর ঝরনা আছে, পাহাড় আছে, তুই সত্যিই গিরিডি যেখানে লোকে ভগ্ন স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে যেত। আমারও সব কিছু ভেঙেচুরে গেছে। আমাকে উদ্ধার কর সংস্থিতা, আমাকে উদ্ধার কর।
সংস্থিতা চোখ মুছে বলল, কিন্তু তোকে যে অন্য একজনকে উদ্ধার করতে হবে রে পিয়াল।
পিয়াল ওর হাঁটু থেকে মাথা না তুলেই বলল, কাকে? যার শ্বশুরবাড়ি তোর হুমকি শুনে ভয় পেয়েছে।
পিয়াল চমকে উঠে বলল, পিউ?
হ্যাঁ পিয়াল। পিউয়ের জন্য আবার কোথায় পাত্র খুঁজতে যাব বল? আমার বাবা তো আবার তিন লাখ টাকা খরচ করে ওর বিয়ে দিতে পারবে না রে!
পিয়াল স্থিরচোখে সংস্থিতার দিকে তাকিয়ে বলল, তোর ঠাকুর তোকে এই সিগনাল দিলেন?
ঠাকুর দেননি। আমার ভিতরের যে স্বার্থপর আমি সে দিয়েছে। তুই আমাকে ভালবাসিস, আমি তার সুযোগ নিয়ে আমার বোন, আমার থেকে দূরে থাকা আমার প্রাণটাকে তোর ঘাড়ে চাপাতে চাইছি। নিবি না পিয়াল?
পিয়াল চুপ করে রইল। সংস্থিতা জড়িয়ে ধরল ওকে। বলল, আমি তোকে ভালবাসি কিনা তাই নিয়ে কোনও কথা বলব না। কারণ যা বলা হয়, তা বলাই হয়ে যায়। তা শুধু স্মৃতির স্মরণিকায় থাকে।
আর যা বলা হয় না? পিয়াল জিজ্ঞেস করল।
তার অনেক বড় জায়গা রে। সে কালের সঞ্চয়ে থেকে যায়।
পিয়াল চোখ তুলে তাকাল। কিছু বলল না।
সংস্থিতা ওর চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলল, সেই মহাপরিণামী কাল তোকে-আমাকে ঘিরে নিজের বৃত্ত ছোট করে আনছে। আমরা তার হাত থেকে আজকের মতে, এই জন্মের মতো ওই মেয়েটাকে বাঁচাতে পারব না পিয়াল? আমাদের দু’জনের প্রেম দিয়ে সুখী করতে পারব না?
কলকাতা ফিরে যাওয়ার আগের দিন সন্ধ্যায় পিয়াল সংস্থিতার এগিয়ে দেওয়া চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল, তোর চা-টা কিন্তু বেড়ে।
সংস্থিতা কপট রাগের গলায় বলল, পাঁচদিন ধরে রোজ আসছিস, রোজ খাওয়াচ্ছি আর প্রশংসা আজ করলি?
আহা, করলাম তো! পিয়াল বলল।
শোন, এটা কেয়া ম্যামের দেওয়া চা। আমি পারতপক্ষে অন্য কাউকে খাওয়াই না। নেহাত তুই ওর স্মরণসভায় অত ভাল গেয়েছিলি তাই… আচ্ছা শোন, একটা কথা রোজ বলব ভাবি কিন্তু ভুলে যাই, তুই যেদিন ম্যামের বাড়িতে গাইছিলি, সেদিন সতীর্থ একটা মেয়েকে নিয়ে অনেকক্ষণ উলটোদিকের ফুটপাথে দাঁড়িয়ে ছিল।
সতীর্থ এসেছিল?
হ্যাঁ। আমি ওপর-নীচ করছিলাম তো, ওকে দেখতে পেয়ে ওপরে যেতে বললাম। কিন্তু ও গেল না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেয়েটার সঙ্গে গুজুর-গুজুর করতে থাকল। ভাসা ভাসা চোখ মেয়েটার। ওই টুয়া, তাই না?
পিয়াল নির্লিপ্ত গলায় বলল, না, ও আমার তৃষ্ণা।
সংস্থিতা বলল, কীভাবে মেটাব? আর একটু চা খাবি?
পিয়াল বলল, না। তার চেয়ে বরং ওই তেষ্টার গানটা আর একবার গাই।
সংস্থিতা হাতে চাদ পেয়েছে এমনভাবে বলল, প্লিজ গা! তবে দাঁড়া, আগে মোবাইলটা স্পিকারে দিই। পিউও শুনুক।
ঘটনার আকস্মিকতায় পিউ একটু চমকে গিয়েছিল। সামলানোর জন্য বলল, আমি একদম পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছি।
পিয়াল বলল, আমরাও তোমার কথা পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছি, শ্রীতমা।
পিউ উচ্ছ্বসিত গলায় বলল, আমার ভাল নামটা তোমার মনে আছে?
পিয়াল উত্তরের বদলে গাইতে শুরু করল—
সমতল বা পাহাড়
তুমি কার, কে তোমার
হচ্ছে না বরফ থেকে জল
চুলোয় যায় চেষ্টা
অসম্ভব তেষ্টা
তেষ্টার থাকে না কোনও ছল
যা থাকে তার ভাষা
হয়তো ভালবাসা
বলেছিল যে
সে নয়তো আলাদা
তোমারই সাথে বাঁধা
হাওয়ায় দুলছে…
গানটা ছড়িয়ে গেল ঘরে, ইথারে। পিয়ালের সামনে বসে সংস্থিতা আর কলকাতা থেকে পিউ একযোগে বলে উঠল, শেষটা আর একবার। ওরা তিনজনই যে বিনিসুতোয় বাঁধা পড়ে গেছে, সেটা দেখে স্থির একটা মুহূর্ত মুচকি হেসে উঠল হয়তো বা। সেই মুহূর্তটাকে ধাক্কা দিয়ে আগামীতে মিশিয়ে দেবে বলে পিয়াল আবারও গেয়ে উঠল ‘হাওয়ায় দুলছে, হাওয়ায় দুলছে…’।
(এই উপন্যাসের সব ঘটনা ও সমস্ত চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক।)