হাইড্রোজেন বোমা
পরমাণু বোমা যখন পৃথিবীর কাছে নতুন জিনিস ছিল, তখন তার ভয়াবহতা দেখে আতঙ্কে কেঁপে উঠেছিলাম আমরা। পারমাণবিক শক্তির ওপর আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ চালু করারও প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই ব্যাপারটা সবার গা-সওয়া হওয়া গেল। মানুষ বুঝে ফেলল, পরমাণু বোমা যে ক্ষতিটুকু করতে পারে তা পারস্পরিক হিংস্রতাকে চরমে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে যথেষ্ট নয়। বুঝতে দেরি হলো না, পরমাণু বোমা দিয়ে বড় বড় শহরগুলোকে ধ্বংস করা গেলেও ছড়ানো-ছিটানো গ্রামের মানুষদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া তার পক্ষে অসম্ভব। এই সত্যটা উপলদ্ধি করার পর উভয় পক্ষই মরিয়া হয়ে উঠল আরও ভয়াবহ কোনো মারণাস্ত্র উদ্ভাবনের জন্য। সেই প্রচেষ্টার ফল হিসেবেই উদ্ভাবিত হলো ভয়ংকরতর মারণাস্ত্র হাইড্রোজেন বোমা। নতুন এই মারণাস্ত্র প্রথম কে বানিয়েছিল, রাশিয়া না আমেরিকা, তা বলা দুষ্কর, তবে এই দৌড়ে দুটো দেশ খুব কাছাকাছি ছিল- একটি দেশ তাতে সফল হওয়ার অল্পদিনের মধ্যেই অন্য দেশটিও বানিয়ে ফেলতে পেরেছিল ওই মারণাস্ত্র। পরমাণু বোমার থেকেই হাইড্রোজেন বোমা প্রায় এক হাজার গুণ শক্তিশালী। নানান হিসেবে দেখা গেছে, বিকিনিতে যে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল তা থেকে উদ্ভূত শক্তির সমান। পশ্চিমী দুনিয়া এ বোমার ক্ষমতার কথা জানতে পেরেছিল ১৯৫৪-র ১ মার্চ বিকিনি-তে ঘটানো পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ মারফত। যে আমেরিকানরা এ বোমা নির্মাণ করেছিলেন, বিকিনির ওই পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ তাদের যাবতীয় প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে গিয়েছিল। উভয় পক্ষের হাতে যতরকম মারণাস্ত্র আছে, তার মধ্যে এখনও হাইড্রোজেন বোমাই ভয়ংকরতম।
হাইড্রোজেন বোমা নামটা ঠিক যথাযথ নয়, কারণ বিস্ফোরক শক্তির বেশির ভাগ অংশটা এখনও ইউরেনিয়াম থেকেই নেওয়া হয়। বিস্ফোরণের সমগ্র প্রক্রিয়াটা তিনটি পর্যায়ে ঘটে। কাগজ, কাঠ আর কয়লা দিয়ে আগুন জ্বালানোর সঙ্গে ব্যাপারটার তুলনা করা যায়: কাগজের থেকে কাঠে আগুন লাগানো কঠিন, আবার কাঠের থেকে কয়লার আগুন লাগানো কঠিন। পরমাণু বোমার মতোই হাইড্রেজেন বোমাতেও প্রথমে কিছুটা ইউ-২৩৫ ব্যবহার করা হয়। ইউ-২৩৫ এর বিভাজনের ফলে যে তাপ সৃষ্টি হয় তা কিছু পরিমাণ হাইড্রোজেনের সংযোজন ঘটিয়ে হিলিয়ামে রূপান্তরিত করার পক্ষে যথেষ্ট। এই ইউ-২৩৫ আর হাইড্রোজেন, দুটোকেই সাধারণ ইউরেনিয়ামের একটা পুরু আবরণ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়। হাইড্রোজেনের হিলিয়ামে রূপান্তরের ফলে যে তাপ সৃষ্টি হয় তা বহিরাবরণের সাধারণ ইউরেনিয়ামের বিস্ফোরিত করার পক্ষে যথেষ্ট। হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণের সময় যে শক্তি নির্গত হয় তার বড় অংশটাই আসে ওই বহিরাবরণ থেকে। ইউরেনিয়াম পরমাণুগুলো নানা ধরনের হালকা পরমাণুতে বিশ্লিষ্ট হয়ে যায়, যার মধ্যে অধিকাংশই তেজস্ক্রিয়। সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, হাইড্রোজেন বোমার সাধারণ ইউরেনিয়াম ব্যবহার করতে পারাটা, বা আরও সঠিক অর্থে বললে, যে ইউরেনিয়াম থেকে মহামূল্য ইউ-২৩৫ নিষ্কাষন করে নেওয়া হয়েছে সেই ইউরেনিয়ামকে ব্যবহার করতে পারাটাই এর সবচেয়ে বড় সুবিধের দিক। বিপুল পরিমাণ তাপ সৃষ্টি হয় বলেই সাধারণ ইউরেনিয়ামকে এইভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয়।
হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণজনিত ক্ষয়ক্ষতি শুধুমাত্র বিস্ফোরণের অঞ্চলটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকে না। তেজস্ক্রিয় কণাগুলো শূন্যে বহু দূর পর্যন্ত উৎক্ষিপ্ত হয়, তারপর সারা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, আস্তে-আস্তে নেমে আসে নিচে, মানুষের শরীরে সৃষ্টি করে বিভিন্ন ভয়াবহ ব্যাধি, বিষিয়ে দেয় জল, গাছপালা আর পশুপাখিদের। তেজস্ক্রিয় কণাগুলোর এই নেমে আসাকে বলা হয় ফল-আউট। এই ফল আউটে যে তেজস্ক্রিয় কণারা থাকে তার অধিকাংশই প্রকৃতিতে সাধারণভাবে থাকে না কিংবা খুব কমই থাকে। ফল-আউট কতটা প্রাণঘাতী হতে পারে তা প্রথম জানা যায় একটা দুর্ঘটনার ফলে। আমেরিকান কর্তৃপক্ষ যতটা এলাকাকে বিপদসীমার অন্তর্ভুক্ত বলে ঘোষণা করেছিলেন, তার থেকে অনেক দূর দিয়ে যাচ্ছিল একটা জাপানি মাছধরা জাহাজ, বরাতের ফেরে যার নাম ছিল লাকি ড্রাগন। কিন্তু বায়ুপ্রবাহের আকস্মিক পরিবর্তনের ফলে গোটা জাহাজটা ভরে যায় তেজস্ক্রিয় ধুলোয়। জাহাজের প্রতিটি আরোহী অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং কিছুদিন পর তাদের মধ্যে একজন মারাও যায়। হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণের ফলে মৃত্যু প্রত্যাশিত সংখ্যাকে বহু গুণ বাড়িয়ে দেবে এই ফল-আউট।
যুদ্ধে হাইড্রোজেন বোমা ব্যবহার করা হলে তার ফল কি দাঁড়াবে, তা রীতিমতো বিতর্কের বিষয়। ১৯৫৮ সালে পেন্টাগনের একটি রিপোর্টের সারসংক্ষেপ করতে গিয়ে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রসচিব বলেছিলেন- ন্যাটো এবং ওয়ারশ জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে যদি যুদ্ধ বাধে আর সেই যুদ্ধে যদি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহৃত হয়, তাহলে ১৬০ মিলিয়ন আমেরিকান, ২০০ মিলিয়ন রাশিয়ান এবং পশ্চিম ইউরোপ ও ব্রিটেনের প্রতিটি মানুষ মারা যাবে। অনেকে মনে করেছিলেন এই তথ্য জানার পর পশ্চিম ইউরোপ আর ব্রিটেনের ব্যাপারে ন্যাটোর আগ্রহ স্তিমিত হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। সারা পশ্চিমী দুনিয়ায় যেন এক বিচিত্র দুর্বোধ্য মৃত্যুস্পৃহা ছড়িয়ে পড়েছে। পারমাণবিক যুদ্ধের পরিমাণ কত ভয়াবহ হতে পারে তা জানার পরও কোনো পশ্চিমী দেশের সরকার তাকে প্রতিহত করার ব্যবস্থা করেনি, এমনকি জনমতের ওপরেও তার তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। ১৯৫৬ সালের মে মাসে আমেরিকান সৈন্যবাহিনীর গবেষণা ও বিকাশ বিভাগের তৎকালীন প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল জেমস গ্যাভিনকে কিছু প্রশ্ন করেছিল আমেরিকান সিনেটের এক সাব-কমিটি। সিনেটর ডেকে তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, ধরুন আমরা রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লাম, আমাদের বিমানবাহিনী রাশিয়ার ওপর পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ চালাল। ধরা যাক বোমাগুলো এমনভাবে বিস্ফোরিত করা হলো যাতে করে বায়ুপ্রবাহের সাহায্যে তা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে রাশিয়ার ওপর আছড়ে পড়তে পারে। সে অবস্থায় রাশিয়ায় কতজনের মৃত্যু ঘটতে পারে বলে মনে করেন আপনি? জেনালে গ্যাভিন উত্তর দেন, এ প্রশ্নের উত্তর আমি নির্দিষ্টভাবেই দিচ্ছি, তবে আমি আপনাকে সসম্মানে জানাতে চাই যে বিমানবাহিনী অথবা এ বিষয়ের বিশেষ কোনো অনুসন্ধানকারী দল উত্তরটা আরও ভালোভাবে দিতে পারত। পরিকল্পনা পর্ষদের সাম্প্রতিক হিসেব থেকে জানা যাচ্ছে এ ধরনের ঘটনায় বহু শত মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হবে, তবে সেটা কোন অঞ্চলে ঘটবে তা নির্ভর করছে বায়ুপ্রবাহ কোনদিকে বইছে তার ওপর। বায়ুপ্রবাহ দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বইলে সব থেকে বেশি মৃত্যু ঘটবে সোভিয়েত রাশিয়ায়, তবে জাপানে এবং সম্ভবত ফিলিপাইনেও বহুজনের মৃত্যু হবে। কিন্তু বায়ুপ্রবাহ উল্টো দিকে বইলে মৃত্যুর থাবা ছড়িয়ে পড়বে পশ্চিম ইউরোপ পর্যন্ত।
এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায় আমেরিকানরা রাশিয়ার ওপর আক্রমণ চালালে বেশিরভাগ ক্ষয়ক্ষতি রাশিয়ার ঘটবে নাকি পশ্চিম ইউরোপের, তা নির্ভর করছে বায়ুপ্রবাহ নামক একটি দুর্ঘটনার ওপর। জেনারেল গ্যাভিনের এই বক্তব্যের সত্যতা কর্তৃপক্ষের খুব-একটা মনঃপুত হয়নি, ফলে সরকারি আনুকূল্য থেকে বঞ্চিত হতে হয় তাঁকে।
পারমাণবিক যুদ্ধের সময় মানুষের প্রাণ বাঁচানো যাবে কিভাবে, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। হের্মান কাহন তাঁর সুবৃহৎ গ্রন্থ অন থার্মোনিউক্লিয়ার ওয়ার- এ এই গণহত্যার ঝুঁকি নেওয়ার পক্ষে সওয়াল করে বলেছেন, মাটির নিচে বিশাল আশ্রয় বানানো গেলে বহু মানুষকেই মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো যাবে। কাহন বলেছেন, অসামরিক প্রতিরক্ষা খাতে তিরিশ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা উচিত আমেরিকার (পৃঃ ৫১৭), তবে বাস্তবে সেটা সত্যিই করা হবে বলে তিনি আশা করেন না, ফলে এই পদ্ধতিতে অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারার ব্যাপারে তাঁর ধারণাটিকেও বাস্তবের আলোয় যাচাই করা সম্ভব নয়। আমার মতে, সব থেকে যুক্তিসম্মত কথাটি বলেছেন জন এম. ফাউলার তার ফল-আউট গ্রন্থে (পৃঃ ১৭৫)।
উপযুক্ত দক্ষতা ও সঙ্গতি সম্পন্ন কোনো পরিবার যদি সম্পূর্ণ ধ্বংসের বৃত্তের বাইরে এবং ফল-আউটের প্রাণঘাতী আওতার উপান্তে থাকে, তাহলে তারা হয়তো দুঃস্বপ্নময় প্রথম কয়েকটা সপ্তাহ বেঁচে থাকতে পারবে। বাড়ির ভিতরে দেয়ালে গর্ত করে অথবা এক কোণে চটজলদি বানানো কোনো আশ্রয়ে গাদাগাদি করে ঢুকে পড়ে প্রাণ বাঁচানো যেতে পারে, তবে বাড়ির বাইরেটা নিঃশব্দ মৃত্যুর সুনিশ্চিত চুল্লিতে পরিণত হবে। সমস্ত খাদ্য আর জল বিষাক্ত হয়ে যাবে, পরিবহন ব্যবস্থার কোনো অস্তিত্ব থাকবে না, হাসপাতালগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে, চিকিৎসক বা চিকিৎসাকর্মীদের দেখা পাওয়া ভার হয়ে উঠবে-এই চিত্রটা মনে রাখলে ফাউলারের উপরোক্ত কথাগুলো আশাবাদী ভ্রান্তি হিসেবে প্রতিভাত হয়। পারমাণবিক যুদ্ধের পর যারা বেঁচে থাকতে পারে তাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের কথাটাও ভেবে দেখা উচিত। ভেবে দেখা উচিত, মানবজাতির ইতিহাসের সব থেকে বড় মানসিক আঘাত পাওয়ার পর তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা কোন পর্যায়ে পৌঁছতে পারে। ধরে নেওয়া যায় জীবিতদের মধ্যে অধিকাংশ জন না হলেও বহুজনই বিকৃত মস্তিক এবং যুদ্ধের মধ্যে এই বিপদের সম্ভাবনা তো আছেই, এমনকি অসামরিক প্রতিরক্ষার প্রবক্তাদের প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলোর মধ্যেও আছে। কাহন-এর মতো কয়েকজন মনে করেন আমেরিকানদের একটা বড় অংশকে বাঁচানো সম্ভব হবে। আমার ধারণা এটা একটা আশাবাদী ভবিষ্যদ্বাণী ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু যদি তা সত্যিও হয়, তাহলে যুদ্ধের শেষে এক নিষ্প্রণ, বিধ্বস্ত পৃথিবীতে টিকে থাকা সেইসব মানুষদের মানসিক অবস্থাটা ঠিক কেমন দাঁড়াবে? সেই মুহূর্তে সবকিছুকে আবার সাজিয়ে তোলার জন্য দরকার হবে বিপুল উৎসাহে পুনর্গঠনের কাজ শুরু করা, কিন্তু তাদের মধ্যে বহুজনের পক্ষেই সে কাজে অংশ নেওয়া কি আদৌ সম্ভব হবে? সুরক্ষিত আশ্রয়ে জীবনের চিত্রটা কেমন দাঁড়াবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছেন মরদেকাই রোশওয়াল্ড তাঁর লেভেল ৭ বইতে। বইটির যতটা প্রচার পাওয়া উচিত ছিল, ততটা পায়নি।
তবে একটা আশার রশ্মি বোধহয় আছে: ফল-আউট খুব সম্ভবত নিরক্ষরেখাকে অতিক্রম করবে না, আর যুদ্ধটা যদি মূলত উত্তর গোলার্ধেই সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে পৃথিবীর অধীশ্বর হয়ে উঠবে বর্তমান দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার। সেক্ষেত্রে সেটাকে যে মুক্ত দুনিয়ার বিজয় হিসেবেই দেখানো হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
ভাবী বিপদের সম্ভাবনা নিয়ে যারা চিন্তাভাবনা করেছেন তাঁদের কাছে কয়েকটা বিষয় একান্তই স্পষ্ট। প্রথমত, পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের আশু প্রয়োজনীয়তা; দ্বিতীয়ত, পারমাণবিক অস্ত্র-পরীক্ষা বন্ধ করার গুরুত্ব; তৃতীয়ত, তাৎক্ষণিক প্রতিশোধ নেওয়ার বর্তমান পলিসির অন্তর্নিহিত বিপদ; এবং চতুর্থত, যে সব রাষ্ট্রের হাতে এখনও পর্যন্ত পরমাণু অস্ত্র নেই, তাদের হাতে পরমাণু অস্ত্র পৌঁছে যাওয়া প্রতিহত করা। এই চারটি বিষয়েই কিছু করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সকলেই একমত হলেও এর কোনোটার ব্যাপারেই এখনও পর্যন্ত কোন সুফল পাওয়া যায়নি। এই চারটি বিষয় নিয়ে কয়েকটি কথা বলতে চাই আমি।
ইতিমধ্যে বিস্তর নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন হয়েছে। এই ধরনের সম্মেলনে সর্বদা একই পদ্ধতি লক্ষ করা যায়। উভয় পক্ষই জোর গলায় বলে যে তারা শান্তি চায় এবং উভয় পক্ষই একটা করে প্রস্তাব হাজির করে। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে হয়তো কিছু ভালো দিক থাকে, কিন্তু উভয় পক্ষই নিজেদের প্রস্তাবের মধ্যে এমন কিছু ব্যাপার গুঁজে দেয় যেগুলো অপর পক্ষ প্রত্যাখ্যান করবেই। কোনো পক্ষই যুক্তিসম্মত সমঝোতায় আসতে আগ্রহী নয়, কারণ তারা মনে করে সমঝোতায় আগ্রহ দেখালে সেটা অপর পক্ষকে কাপুরুষের মতো তুষ্ট করায় পর্যবসিত হবে। ১৯৫৫ সালে একবার এই কৌশল প্রয়োগ করতে গিয়ে পশ্চিমী দুনিয়াকে বিশ্রী ধাক্কা খেতে হয়েছিল। নিরস্ত্রীকরণের স্বপক্ষে কয়েকটি চমৎকার প্রস্তাব পেশ করেছিল তারা। পেশ করার পর পশ্চিমী সরকারগুলো আতঙ্কিত হয়ে লক্ষ করেছিল–আপত্তি করার বদলে প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করে নিচ্ছে সোভিয়েত রাশিয়া। তড়িঘড়ি নিজেদের প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেয় পশ্চিমী দুনিয়া। এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যাবে ফিলিপ নোয়েল বেকার-এর দ্য আর্মস রেস বইতে। বইটি পড়ার পর যে-কেউ এই সিদ্ধান্তেই আসতে বাধ্য হবেন যে পূর্ব অথবা পশ্চিম কোনো পক্ষই আন্তরিকভাবে নিরস্ত্রীকরণ চায় না, উভয় পক্ষের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো নিরস্ত্রীকরণের পথ বাতলানো, লক্ষ্যে পৌঁছানোর ইচ্ছে কারুরই নেই।
পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা দ্বিমুখী: একদিকে, এই পরীক্ষা বন্ধ করা হলে নতুন কোনো রাষ্ট্রের পক্ষে পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারি হওয়া আরও দুরূহ হয়ে উঠবে: অন্যদিকে যতদিন শাস্তি বজায় থাকবে ততদিন ফল-আউটের আশঙ্কা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। ফল আউট বিভিন্ন ধরনের হয়। তার মধ্যে স্ট্রনশিয়াম-৯০ আর কার্বন-১৪-ই সম্ভবত সব থেকে মারাত্মক। তেজস্ক্রিয় ধুলোর রাশি বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তর থেকে বৃষ্টি কিংবা বাতাস অথবা নিছকই মাধ্যাকর্ষণের টানে নেমে আসে নিচের দিকে। এ থেকে নানারকম অসুখ দেখা দেয়। তার মধ্যে সব থেকে গুরুতর হলো হাড়ের ক্যানসার, লিউকোমিয়া এবং জননকোষের ক্ষতি। এই রোগগুলো এমনিতেই ঘনঘন দেখা যায় বলে কোনো, বিশেষ ক্ষেত্রে ফল আউটের প্রতিক্রিয়ায় সেটা দেখা দিয়েছে কি না, তা বলা অসম্ভব। তবে বোমা পরীক্ষার সঙ্গে যাদের স্বার্থ জড়িত আছে এমন কিছু লোক বাদে প্রত্যেকেই একবাক্যে স্বীকার করেন যে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্রের যত পরীক্ষা হয়েছে তার ফলে ক্যানসারের মৃত্যু এবং বিকৃতাঙ্গ শিশুদের জন্মের সংখ্যা অনেক বেড় গেছে। ক্যান্সার প্রতিরোধ করার গবেষণা-খাতে বিভিন্ন দেশের সরকার কিছু অর্থ ব্যয় করে ঠিকই, কিন্তু ক্যানসার সৃষ্টির খাতে ব্যয় করে তার চেয়ে অনেক বেশি অর্থ। জিনগত প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে জনৈক বিশেষজ্ঞের মতামত উদ্ধৃত করছি আমি। বংশগতি বিষয়ক বিশিষ্ট আমেরিকান বিশেষজ্ঞ এ. এইচ. স্ফুর্টভ্যান্ট বলেছেন, মানবজাতি যদি আরও বেশ কিছু প্রজন্ম ধরে টিকে থাকে, তাহলে ইতিমধ্যেই বিস্ফোরিত বোমাগুলোর প্রতিক্রিয়ায় যে অসংখ্য বিকৃতাঙ্গ শিশুর জন্ম হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।… দায়িত্বপূর্ণ পদে থাকা জনৈক কর্মকর্তা (অ্যাডমিরাল স্ট্রস) বলেছেন, উচ্চশক্তির তেজস্ক্রিয়তা অল্প মাত্রায় ঘটলে তা থেকে জীবতাত্ত্বিক ক্ষতির কোনো আশঙ্কা থাকে না। তার এই মন্তব্য রীতিমতো দুঃখজনক।
এর কিছুদিন পর প্রকাশ্য জনসভায় এ.এইচ. স্টুর্টভ্যান্ট বলেন–১৯৫৪ সালে, অর্থাৎ যে বছর হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষা করা হয়, যত শিশু জন্মেছে তাদের মধ্যে অন্তত ১৮০০ জন ওই বিস্ফোরণের ফলে ছড়িয়ে পড়া উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত হয়েছে। ওই বছরেই আমেরিকান প্রাণিবিদ কুর্ট স্টার্ন বলেন, হাইড্রোজেন বোমার বিগত পরীক্ষাগুলোর ফলে এই মূহুর্তে পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীর দেহেই কিছু না কিছু তেজস্ক্রিয় উপাদান আছে হাড়ে আর দাঁতে উষ্ণ স্ট্রনশিয়াম, থাইরয়েড গ্রন্থিতে উষ্ণ আয়োডিন।
অস্ত্র প্রতিযোগিতা যেভাবে নৈতিক বোধকে বিকৃত করে দিচ্ছে, তা এক স্বাভাবিক ও হতাশাজনক ঘটনা। আমি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে একজনের শরীরে ক্যানসার সৃষ্টি করি, তাহলে আমাকে ন্যায়নীতিহীন দানব বলা হবে। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে কয়েক হাজার মানুষের ক্যানসার সৃষ্টি করলে আমাকে বলা হবে মহান দেশপ্রেমিক।
জিনগত ক্ষতির বংশগতভাবে বাহিত হওয়ার এক মারাত্মক প্রবণতা আছে। গুরুতর জিনগত ক্ষতিতে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির সন্তানরা বরাতজোরে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতেও পারে, কিন্তু অন্তর্নিহিত ক্ষতিটা তারাও বহন করবে এবং তা হয়তো ফুটে উঠবে তাদের সন্তানদের মধ্যে। ইতিমধ্যেই যে সব বোমার পরীক্ষা করা হয়েছে তার প্রতিক্রিয়ায় কতজন মানুষ এই জিনগত ক্ষতিতে আক্রান্ত হয়েছে, বলা মুশকিল। এ ব্যাপারে যে সব পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে নানান পার্থক্য আছে। পরিসংখ্যানগুলো যারা তৈরি করেছেন তাঁরা তাঁদের নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাস অনুযায়ী পরিচালিত হয়েছেন এবং সেটাই এই পার্থক্যের কারণ। কিন্তু যাবতীয় পার্থক্য সত্ত্বেও এটা নিশ্চিত যে জিনগত বেশ কিছু ক্ষতি ঘটেছে এবং পৃথিবীতে কোনো পারমাণবিক যুদ্ধ দেখা দিলে যুদ্ধের পর যারা বেঁচে থাকবে তাদের মধ্যে এই জিনগত ক্ষতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে।
যেসব আত্মতৃপ্ত ভদ্রলোক সমাহিত চিত্তে পারমাণবিক বিস্ফোরণের সম্ভাবনা নিয়ে চিন্তা করেন, তাঁদের সামনে ভবিষ্যতের এই দৃশ্যটা তুলে ধরা উচিত হাতেগোনা কিছু মানুষ বাস করে এই পৃথিবীতে এবং তারা শুধু জড়বুদ্ধি বা বিকৃতদর্শন সন্তানের জন্ম দিতেই সক্ষম।
তাৎক্ষণিক প্রতিশোধ নেওয়ার যে মতবাদটি পশ্চিমী দুনিয়ায় স্পষ্টভাবেই প্রচারিত হয়েছে এবং সম্ভবত প্রাচ্য দুনিয়াও যে মতবাদে বিশ্বাস করে, সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে সেই মতটির স্বপক্ষে জোরদার যুক্তি আছে। যুক্তির ভিত্তি হল–পার্ল হার্বার এর কায়দায় কোনো অপ্রত্যাশিত আক্রমণের ঘটনা ঘটলে যারা আক্রমণ করবে তারা প্রচুর সুবিধা পেয়ে যাবে আর অপর পক্ষ যদি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে না যায় তাহলে নিজেদের অপুরণীয় ক্ষতি ঘটে যাবার আগে তাৎক্ষণিক প্রতিশোধ নিতে হবে তাদের। উভয় পক্ষই মনে করে অপর পক্ষ যেকোনও মুহূর্তেই বিনা প্ররোচনায় তাদের ওপর আক্রমণ চালাতে পারে, অতএব আক্রমণকারীর ওপর প্রতি-আক্রমণ চালিয়ে সমুচিত জবাব দেবার জন্য প্রতি মুহূর্তেই প্রস্তুত থাকতে হবে। এ ব্যাপারে পশ্চিমী দেশগুলো কি কি ব্যবস্থা নিয়েছে তা আমরা যতটা জানি, প্রাচ্যের দেশগুলোর ব্যাপারে ততটা জানি না। সোভিয়েত রাশিয়ার কোনো বোমারু বিমান বা ক্ষেপণাস্ত্র তাদের দিকে ছুটে আসছে কি না জানার জন্য একটা বিশাল অঞ্চল জুড়ে রাডার স্টেশন বসিয়েছে আমেরিকা। রাডার থেকে এ রকম হানাদারির সঙ্কেত পাওয়া মাত্রই আমেরিকার হাইড্রোজেন বোমাগুলো যাত্রা করবে রাশিয়ার দিকে। রাডারের সঙ্কেত প্রায়শই ভুল হয়। কখনও কখনও বন্য পাখিদের ওড়াউড়িকে এবং অন্তত একবার আকাশে চাঁদ ওঠাকে রাশিয়ার মিসাইল বলে ভুল করেছিল রাডার। বিপদসঙ্কেত পাওয়া মাত্রই যাত্রা করেছিল বোমারু বিমানের দল। এখনও পর্যন্ত প্রতিবারই ভুলটা সময়মতো ধরা পড়ায় বোমারু বিমানগুলোকে ফিরিয়ে নেওয়া গেছে, কিন্তু ভবিষ্যতেও যে ভুলটা সময়মতো ধরা পড়বেই এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই এবং সেক্ষেত্রে পৃথিবী এক অনভিপ্রেত পারমাণবিক যুদ্ধের আবর্তে নিক্ষিপ্ত হবে। ঘটনাটা যে এক মাসের মধ্যেই ঘটবে এমন নয়, কিন্তু যত দিন যাবে ততই সম্ভাবনাটা প্রায় নিশ্চিত হয়ে উঠবে। কোনো ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় হাইড্রোজেন বোমার সাহায্যে তাৎক্ষণিক প্রতিশোধ নেওয়ার মতবাদটা যতদিন চালু থাকবে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের বেঁচে থাকাটা স্রেফ ভাগ্যের ওপর নির্ভর করছে-ভাগ্যের জোরেই এই বছরটা ভবিষ্যতের যেকোনো বছরে বেঁচে থাকতে পারি আমরা। পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের স্বপক্ষে এটা একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি।
যে সব রাষ্ট্রের হাতে এখনও হাইড্রোজেন বোমা নেই তাদের হাতে এই বোমা পৌঁছে যাওয়াটা আদৌ কাম্য নয়, কারণ সেক্ষেত্রে পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনা আরও বেড়েই যাবে। এ সত্য স্বীকার করেন সকলেই, কিন্তু এ ব্যাপারে এখনও কোনো কার্যকরি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রথমে শুধুমাত্র আমেরিকার হাতেই পারমাণবিক অস্ত্র ছিল, পরে সোভিয়েত রাশিয়া তার অধিকারী হলো, অতঃপর গ্রেট ব্রিটেনেও। এই মুহূর্তে খুব সম্ভবত ফ্রান্সের হাতেও পারমাণবিক অস্ত্র আছে। কিছুদিনের মধ্যেই চীনও পারমাণবিক অস্ত্র বানিয়ে ফেলবে। এক সময় দেখা যাবে পৃথিবীর বহু রাষ্ট্রই এই অস্ত্রের অধিকারী হয়ে উঠেছে। এ ব্যাপারে এখনও যদি কিছু করা না হয়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে যেকোনো দুটো ছোট রাষ্ট্রও গোটা পৃথিবীটাকে যুদ্ধের দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারবে। কথাটা সবারই জানা, কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেউই এ ব্যাপারে কিছু করেননি।
এখনও পর্যন্ত উদ্ভাবিত গণহত্যার যাবতীয় অস্ত্রের মধ্যে হাইড্রোজেন বোমাই ভয়ংকরতম, কিন্তু পৃথিবীব্যাপী এই নৈরাজ্য এবং বৈজ্ঞানিক দক্ষতা দুটোই আরও এগোতে থাকলে আরও ভয়ংকর মারণাস্ত্রও উদ্ভাবিত হবে, সম্ভবত কিছুদিনের মধ্যেই। সর্বধ্বংসী যন্ত্র সম্বন্ধে নানান আলোচনা শোনা যাচ্ছে চারপাশে। এমন এক যন্ত্র নাকি তৈরি হবে যা মুহূর্তের মধ্যে সারা পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীকে ধ্বংস করে দেবে। হের্মান কাহন বলেছেন, প্রয়োজনীয় বলে মনে করলে এ রকম একটা যন্ত্র তিনি বাঞ্ছিত বলে মনে করেছেন না। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে যন্ত্রটা কিভাবে বানাতে হবে জানা থাকলে এবং পরাজয়ের মুখোমুখি হলে যুদ্ধোন্মাদ কিছু দেশ খুব সম্ভবত সে যন্ত্র ব্যবহার করবে। জীবনের শেষের দিনগুলোতে এ যন্ত্র হিটলারের হাতে থাকলে আত্মসমর্পণের কলঙ্কের বদলে তিনি যে মানবজাতির বিলুপ্তিকেই বেছে নিতেন, সে ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই।
সর্বধ্বংসী যন্ত্র ছাড়া আরও কিছু সম্ভাবনার কথাও মনে রাখা দরকার। রাসায়নিক ও জীবাণুযুদ্ধকে এখনও পর্যন্ত হাইড্রোজেন বোমার মতো কার্যকরি পন্থা হিসেবে ভাবা হয় না ঠিকই, কিন্তু বৃহৎ শক্তিধর দেশগুলো এইসব অস্ত্রকে উন্নত করে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং অদূর ভবিষ্যতে সে প্রচেষ্টায় সফলও হতে পারে তারা। আর একটি সম্ভাবনাও কিছুদিনের মধ্যেই বাস্তবায়িত হতে পারে-হাইড্রোজেন বোমাবাহী দূর-নিয়ন্ত্রিত উপগ্রহ। ভবিষ্যতের সেই দৃশ্যই একবার ভেবে দেখার চেষ্টা করুন। রাশিয়ান আর আমেরিকান উপগ্রহে ছেয়ে আছে আকাশ, পৃথিবীকে পাক দিয়ে দিনে একবার করে ফিরে-ফিরে আসছে উপগ্রহগুলো এবং প্রতিটি উপগ্রহই গণহত্যার উপকরণে ঠাসা। অবস্থাটা যদি এ রকমই দাঁড়ায়, জীবন কি আর সহনীয় থাকবে? মানুষের স্নায়ু কি এই চাপ সহ্য করতে পারবে? প্রতিদিন প্রতি ঘন্টার এই আতঙ্কের বদলে সারা পৃথিবীর মানুষ কি এক সময় আকস্মিক ধ্বংসকেই বেশি কাম্য বলে মনে করবে না? ভবিষ্যতের দিনগুলোতে ঠিক কি কি আতঙ্ক আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে জানি না, কিন্তু একটা ব্যাপার নিশ্চিত-এখনও যদি কিছু করা না হয়, তাহলে বিজ্ঞাননির্ভর মানুষরা এক দণ্ডপ্রাপ্ত প্রজাতিতে পরিণত হবে। যে পৃথিবীতে আমরা বসবাস করি সেখানে মৃত্যুমুখি এক প্রবল ইচ্ছা নিয়ত কাজ করে চলে এবং এখনও পর্যন্ত প্রতিটি সঙ্কটের মুহূর্তে সেই ইচ্ছা বারবার পরাজিত করেছে সুস্থ চেতনাকে। আমরা যদি টিকে থাকতে চাই তাহলে এই অবস্থাটার অবসান ঘটানো দরকার। কোন পথে এগোলে এই পৃথিবীতে টিকে থাকতে পারি আমরা, তা নিয়েই এ বইয়ের বাকি অংশটুকুতে আলোচনা করব আমি।