হলদে গোলাপ – ৪০

৪০

আরও বেশ কিছুদিন কেটে গেল অনিকেতের। বিহার থেকে বেরিয়ে আলাদা প্রদেশ হল ঝাড়খণ্ড—২০০০ সালের নভেম্বরে। আকাশে বাজি চমকালো, বাজনা ঝমকালো, বাজারের ব্যবসায়ীরা লন্ডা নাচাল। আবার ‘ক্যালকাটা’-ও হয়ে গেল কলকাতা। বাঙালিরা উচ্চারণ করে ‘কোলকাতা’। কিন্তু টিভিতে অবাঙালিরা বলছে ‘কঅল্‌কাতা’। শুনতে কেমন যেন লাগছে।

অনিকেতের আরও কিছুদিন পেরিয়ে যাওয়া মানে তো দুলালেরও আরও কত কী ঘটে যাওয়া। দুলাল তো নয়, ‘দুলালী’। অনিকেত দুলালীকে নিয়ে লিখছে।

নাগেশ্বরী চাত্তারা-কে বলল—অনেকদিন তো হল, দুলালীর ‘নথ-ভাঙা’ কবে হবে লো? চাত্তারা গত রাতে অনেকটা ‘খিলুয়া’ খেয়েছিল। ঘুম ভাঙতে দেরি হয়েছে। হাই তুলে বলল—এখনই করে দাও, এধারে তো ‘বাঁধনা পরব’ চলছে।

‘বাঁধনা পরব’ হল সাঁওতাল-কুর্মিদের উৎসব। গরুদের খুব খাতির করা হয় এই সময়, ওদের গায়ে চটের জামা পরানো হয়, ক্ষুরে জল পড়ে, গুড়-ছোলা খাওয়ানো হয়। বাঁধনা পরব- এর মধ্যে যদি কোনও গাই ‘পাল’ খেতে চায়, সেটা ভাবা হয় খুব ভাল লক্ষণ। লক্ষ্মীমন্ত গাই বাঁধনায় পাল খায়।

নাগেশ্বরী বলল, তবে রবিবার করে দে।

রবিবার দিন রোজগারপাতি ভাল হয় না। দুর্গাপুর-পানাগড়ের গেরস্ত পাড়ায় ব্যাটাছেলেগুলো ঘরে বসে থাকে। হুমদো মদ্দা ঘরে থাকলে রোজগার ঢিলে যায়। রোববার-ই ঠিক হল ‘নথ-ভাঙা’ হবে। হাতে দু’দিন।

‘নথ-ভাঙা’ অনেকটা কৌমার্য ভঙ্গের মতো।

অ ছবি… গুরুমা ডাকেন।

–রোববার দুলালীর ‘নথ-ভাঙা’। তোরা পারবি, না কি বাইরে বলাব?

ঝর্না-টর্নারা বলল—ধুর। বাইরে বলবে কেন, নিজেরা করব। বড় খোবরা, কপি ভাজার টাকনি।

মহুয়া বলল, ট্যাংরা মাছ খুব উঠেছে।

নাগেশ্বরী বলল, ছুঁড়িদের শখ কত, ট্যাংরা খাবে। ট্যাংরা পোঁদে দে।

মহুয়া বলল, নথ-ভাঙার দিনে মাছ খেতে হয়। আমার সময় হয়েছিল।

—কী মাছ হয়েছিল যেন?

—তেলাপিয়া।

—ঠিক আছে, দেখা যাবে। চাত্তারা যা বলবে।

চাত্তারা বলল, কত হাতি গেল তল, মশা বলে কত জল। বেড়ালকে মাছ খাওয়ানো শেখানো। দুলালী পাক্কি মাল। বহুত চুয়া খা চুকা বিল্লি।

ওরা সবাই জানে, এসব খোলে যারা আসে, তারা এর আগে ভালমতো পুরুষ-সঙ্গ করেছে। তবু এটা একটা ‘প্রথা’। নথ-ভাঙার নামে একটু নাচা-গানা, খিলুয়া-খোবরা খাওয়া

এখানে আসার পর এখনও পারিক বসায়নি দুলাল। অন্যরা বসায়। দুলাল দেখে। মুখ ফুটে কিছু বলেনি। ও জানে, ‘নথ-ভাঙা’ না-হলে স্বাধীনভাবে পারিক বসাতে পারবে না। মেয়েরা যেমন মা-কে বলতে লজ্জা পায়, ‘মা আমার বিয়ে দিচ্ছো না কেন?’—তেমনই দুলালীও বলেনি—’আমার নথ-ভাঙা কবে হবে মা?”

তবে গুরুমা-র নজর আছে।

তবে এ ক’মাস যে একদম উপোসী ছিল দুলালী, তা নয়। রেল স্টেশনের ডিউটিতে গিয়ে রেল পুলিশ ওকে একবার বসিয়েছিল। খুব লাগছিল। দুলালী দেখছিল, ওর ঘরে ভেন্ডি আছে। ভেন্ডি ছেঁচে, একটু জলে মিশিয়ে নিলে, বেশ একটা হড়হড়ে জিনিস তৈরি হয়। ওতে কাজ হয়েছিল।

এখানে লাল-হলুদ-সবুজ রঙের কাঠের তৈরি বিভিন্ন সাইজের ‘লোলা’ রাখে কেউ-কেউ। ‘লোলা’ হল বাচ্চাদের মুখে দেওয়ার জন্য কাঠের তৈরি একটা জিনিস। একটা ছোট্ট হাতল, সামনের মুখটা গোল। বাচ্চারা যা পায় মুখে দেয়। ফ্রয়েডের চিন্তায় ওটা ‘ওরাল ফেস’। মায়ের স্তন খাওয়ার সময় ওদের মুখে একটা সুখানুভূতি হয়। সেই অনুভূতি পাওয়ার জন্য ওরা আঙুল চোষে, কলম-পেন্সিল—যা পায় মুখে দেয়। বাচ্চাদের জন্যই তৈরি করা হয়ে থাকে ওই ‘লোলা’। গ্রাম্য বাজারে কিংবা মেলায় পাওয়া যায়। ওগুলো রঙিন হয়। হয়তো খুব খারাপ রং। শিশুদের জন্য একেবারেই অনুপযুক্ত রং। কিন্তু এসব দেখছে কে। গ্রাম্য মেলায় বড় মাথাওলা লোলা-ও পাওয়া যায়। বোঝাই যায়, ওগুলো শিশুদের জন্য নয়। মাথাটাও গোল নয়। একটু ডিম্বাকার। ওগুলো তবে কাদের জন্য বিক্রি হয়? যাদের জন্য বিক্রি হয়, ওরা কিনে রাখে। এসব ওদের টুল্স। ভেন্ডি ভেজানো জলে, কিংবা কাঁচা ডিমে ভিজিয়ে ওরা পায়ু- ব্যায়ামটা করে। প্রথম দিকে তো করতেই হয়। বিদেশে ‘গে’-দের জন্য এসব ব্যায়ামের জিনিসপত্র পাওয়া যায়। ইন্টারনেট-এ দেখেছে অনিকেত। খোজাদের সম্পর্কে পড়তে গিয়ে দেখা গিয়েছে, অটোমান সম্রাটরা ওদের হারেমে অন্যান্য রাজার মতোই খোজা রাখতেন। হারেম পাহারা ছাড়াও সম্রাটদের কাম-ক্রিয়ায় সাহায্য করত। বালিশ সেট করে দেওয়া, পা দু’টো ঠিক জায়গায় ‘সেট’ করে দেওয়া ইত্যাদি। কখনও-কখনও সমকামী সম্রাটরা এদের যৌন-সঙ্গী হিসেবে ব্যবহার করতেন। ওদের পৌরুষহীন, যৌনতাহীন বলেই ভাবা হত। অথচ খোজাদেরও একটা যৌন-জীবন ছিল। ওরা নিজেদের মতো করে কামকলা উপভোগ করত। সুতো দিয়ে বাঁধা ডিম সেদ্ধ বা কাঠ বা ধাতব দণ্ড সুতোয় বেঁধে, পায়ুপথে প্রবেশ করিয়ে সুতো ধরে নাড়াত। পায়ুনালীর অপর পাশে প্রস্টে। প্রস্টেটের সঙ্গে ঘর্ষণ হত, কিন্তু ওরা তো জানত না—ওটা প্রস্টেট, ওরা জানত সুখানুভূতি। কেটে ফেলা লিঙ্গের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকা এবড়োখেবড়ো মাংসপুঁটুলির মাঝখানে লুকিয়ে থাকা ছিদ্রপথে নেমে আসত সুখরস। যেটা প্রস্টেট থেকে নিঃসৃত। এরকমও গল্প আছে, একে অন্যের সুতোর ওপর ছড় দিয়ে ভায়োলিন জাতীয় বাজনা বাজাত। একটা অদ্ভুত শব্দ তৈরি হত। সেই শব্দঝংকার বা ধাতব কম্পন প্রস্টেটে পৌঁছত। এবং ওই অদ্ভুত শব্দকে বলা হত ‘ক্যাফ্রিয়ান প্যাথোজ’। ওই আওয়াজটা পরে ভায়োলিনে ঢুকে গিয়েছিল।

দুলাল যখন নতুন-নতুন—সিনিয়ররা ওকে একটু-আধটু র‍্যাগিং করত। গুরুমা দুলালকে ডেকে গা-হাত-পা টেপাত। চাত্তারাও মাঝে-মাঝে। দুলালকে বলত, লিক্‌ম ঠেকাতে। কিন্তু দুলাল ওই কাজটা করতে পারত না বলে বকাবকি করেনি। বলেছে, আহা লো…। ওই ডাক শুনে দুলাল আর দুলাল থাকত না, ‘দুলালী’ হয়ে যেত।

ফুলিও ডেকে নিয়ে ঘরে এটা-ওটা করতে বলে। একদিন তেল মাখিয়ে দিতে বলেছিল। ম্যাক্সি খুলে দিয়েছিল ফুলি। বলেছিল, সারা গায়ে মাখা। ফুলির হাতে-পায়ে লোম ছিল, বুকটায় লোম ছিল না, সামান্য উচু। মাঝখানে ছোট-ছোট কিশমিশ। তার দু’উরুর মাঝখানে চুলে ঢাকা একটা ছোট্ট পুটুলি। ‘ছিন্নি’ হলে দুলালীরও ওরকম হবে। ঘাবড়ায় না ও। সবার যা হয়, ওরও হবে। এটাই হল লিক্‌-টার গোড়া। একদম গোড়া থেকে কাটলেও, আধ আঙুল পরিমাণ মাংস রয়েই যায়। ওখানে তেল মাখায় দুলালী, যত্নে। কী আশ্চর্য ওই আধ আঙুল পরিমাণ সমাধি ফলকের মতো মাংসখণ্ড কেমন জেগে ওঠে, কঠিন হয়ে ওঠে, শক্ত হয়ে ওঠে। কাঁপে। মুঠোয় চেপে ধরে দুলালী। ফুলি হাসে। বলে, চড়াই পাখি ডিম পেড়ে গিয়েছিল। বেশি চাপিস না ফেটে যাবে।

দুলালীরও ওটা খসাতে হবে। এটা না-খসালে, কদর নেই। কেটে ফেলাই ভাল। এ শালা মাঝে-মাঝে জ্বালাতন করে। কষ্ট তো একটু পেতেই হবে। সব ধর্মেই কষ্ট আছে। ধর্মরাজের থানে যারা কাঁটা ঝাঁপ দেয়, যাঁরা জিভে লোহার কাঠি ফোঁড়ে, জ্বলন্ত আঙারে হাঁটে—ওদেরও তো কষ্ট হয়।

দুলালীকে দিয়ে শুধু গা-টেপানো তেল-মাখানো নয়, আরও কতরকম রসিকতা করে ওরা। একদিন সকালবেলা ঘুম ভেঙে দেখে, ওর লিক্‌মের মাথায় কী যেন সাদা সাদা। ‘নিরখা’ এত ঘন হয় না কি? মাঝেমধ্যে একটু-আধটু ‘নিরখা’ খসে। কিন্তু এটা অন্য কিছু। হাতে নিয়ে শুঁকে দেখে। ও হরি! টুথ পেস্ট। তখন সবাই হাসাহাসি করে। বলে, তোর খোকা দাঁত মাজবে। তোর ম্যাক্সির তলায় দ্যাখ গে, একটা ব্রাশ রেখে দিইচি। সত্যিই দেখল একটা ব্রাশ আছে।

এসব ঠাট্টা-ইয়ার্কি ছাড়া অন্য ট্রেনিংও হয়েছে। চাত্তারা, ফুলি সবাই কিছু-না-কিছু ট্রেনিং দিয়েছে গুরুমা-র হুকুমে। পুরুষ পারিককে গা টেপার ট্রেনিং দিয়েছে। চাত্তারা বলেছে, টেপাটিপিতে মদ্দারাও খুব আরাম পায়। দোষ দেয় মাগিদের। কানের কাছে গরম ভাপ দেওয়া শিখিয়েছে, কানের লতি আস্তে করে কামড়ানো, পুরুষের বুকে ছোট করে জিভের কাজ করা—সব।

—আর মুখের কাজ কী শেখাব, ওটা না-করলে পারিক ধরে রাখতে পারবিনে। ফুলি বলেছিল—কোনও-কোনও পারিক দেখবি হাবার মতো তোর আদর খেল কিছুক্ষণ, তারপর তোকে আদর করবে। তোর শাড়ির তলায় হাত চালাবে, তোর লিম-টা খুঁজবে। নাড়িয়ে ফড়কে দেবে। ও তোকে উপড় করে যেমন ধুরবে, তোকেও বলবে ‘ধুরে’ দিতে। ওরা হল ডুপ্লি। দেয় আবার নেয়।

দুলাল বলেছিল, অ্যা-মা। ওসব আমি পারব না।

ফুলি বলেছিল, ওসব তো আমারও ভাল লাগত না। ওই জন্যই তো আমি ছিবড়েছি।

.

দুলালের নথ-ভাঙতে আজ আসবে লছমন যাদব। গাড়ি সারাইয়ের কারবারি। ওর নিজের একটা কিংবা দু’টো গ্যারাজ আছে। পানাগড়ে এই ব্যবসাটা খুব ভাল চলে, কারণ মিলিটারি গাড়ি নিলাম হয় এখানে। যারা কেনে, ওরা সারাই করে। বডি তৈরি করে।

লছমনের দেশ বিহারের কোথাও। ওখানে ওর বউ-সংসার, মকাই খেত, গেঁহু খেত, বরি- ভঁইস সব আছে। পানাগড়েও দোতলা বাড়ি, বিলাইতি কুত্তা, জেনানা, নোকর—সব আছে। আজকের ‘বড় খোবরা’ মানে পাঠার মাংস, আর বিলাইতি মালের খরচ যাদবই দেবে। যাদব ঝুমকোরও ‘নথ’ ভেঙেছিল। নাগেশ্বরীকে বলেছে—কীসব মাল আনছ, আকখাট, একটা ‘নাগিন’ আনতে পারো না?

‘নাগিন’ মানে বেশ মিষ্টি-মিষ্টি দেখতে পুতুপুতু পুরুষ। চোখ বড়-বড় হবে, রং ফরসা হবে, ঠোঁট লালচে হবে, পেটে ভুঁড়ি থাকবে না, একটু ন্যাকা ন্যাকা কথা বলবে—মানে মেয়েদের মতো দেখতে মেয়েলি-পুরুষ। নাগেশ্বরী এখনও ‘নাগিন’ জোগাড় করতে পারেনি। নাগেশ্বরী জানে, ‘নাগিন’ পেলে যাদব বহুত খরচ করবে।

‘নথ-ভাঙা’ যাদবের হবি। শুধু হিজড়েদেরই ‘নথ’ ভেঙেছে এমন নয়, বর্ধমানের বেশ্যা পল্লিতে গিয়ে কিশোরী বালিকারও ‘নথ’ ভেঙেছে। ওর লোক ফিট করা আছে। নথ-ভাঙার বরাত পেলে এই শুভকর্মটা করে আসে। এজন্য যাদব খরচাও করে।

খরচা মানে ওখানে আনন্দ-ফূর্তির খরচা ছাড়াও, নিজের শরীরেরও মেনটেনেন্স আছে। ভোরবেলা ছোলা ভেজানো খায়, একটু পর পেস্তা-কাজু বাটার শরবত মধু দিয়ে। কে যেন বলেছিল, পাঁঠার অণ্ডকোষ দুধে সেদ্ধ করে খেলে খুব ‘তাকত’ হয়। সেটাও খায়। শিলাজিৎ দুধে গুলে খেয়েছে। বাজার থেকে পালঙ্কতোড় তেল মালিশ করে পুংদণ্ডে। যদি গন্ডারের শিঙের গুঁড়ো পায়, যত টাকা লাগুক—খরচ করতে রাজি।

সকালবেলা পার্বতী হোটেলের হেড রাঁধুনি এসে বলে গিয়েছে, যাদবজি আসবে। খবর দেওয়া হয়েছে। ওই লোকটার নাম লসুন পাইক। দালালির কাজ করে। হিজড়ে খোলে খদ্দের নিয়ে যায়। অনেক ট্রাক ড্রাইভার কিংবা গাড়ির মিস্ত্রি মেকানিক খেতে আসে হোটেলে, লগন ঠিক বুঝে যায়। কীভাবে বলবে, কখন বলবে—এ ব্যাপারে বাহাদুর। নতুন খদ্দের নিয়ে গেলে কমিশন পায়।

লছমন যাদব এই খোলের নিয়মিত খদ্দের নয়। কমই আসে এখানে। কারণ ঠিকমতো কেউ নেই। কাউকেই খুব একটা পছন্দ নয়। নাগেশ্বরী এখনও একটাও ‘নাগিন’ এনে দিতে পারেনি।

লছমন আসবে সন্ধে নাগাদ। দুপুরে একটু গড়ানো হল। চোখ ফুলো করা হল। ফুলশয্যার দিন নতুন শাশুড়ি-মা আজকাল বলে, একটু ঘুমিয়ে নাও মা। এটাকে মেয়েদের ম্যাগাজিনে বলে ‘বিউটি স্লিপ’। চারটে নাগাদ ওঠা হল। উঠানের বাইরে তিন-চারটে কুকুর বসে আছে। ওরা ছল্লায় বের হল কি না কুকুররা ঠিক খবর পায়। না-বেরলে দুপুরে খাওয়াদাওয়া হয়। কিছু এঁটোকাঁটা পড়ে থাকে। দরজাটা খুললেই কুকুরগুলো সে সবের ওপর হামলে পড়বে।

এবার প্রসাধন। দর্শন দিয়ে দাড়িগোঁফ টেনে-টেনে তোলা। এতদিনে গোঁফ-দাঁড়ি অনেকটাই কমে গিয়েছে। গত ক’মাস ধরে গর্ভনিরোধক বড়ি খাচ্ছে দুলাল। চামড়াও বেশ নরম-নরম হয়েছে। বুকের ওপর অল্প-অল্প মাংসও গজিয়েছে। গুরুমা-র ঘরে নানারকম সাজগোজের জিনিসপত্র আছে। দুলালীর তেমন কিছু নেই। পাউডার, ক্রিম, লিপস্টিক আর কাজল কাঠি। হাসি বেশ সাজাতে জানে। ও গুরুমার ঘর থেকে এটা-ওটা কত কী নিয়ে এসে, মুখে মাখাল। ভ্রু টেনে দিতে-দিতে একবার বলল, মাধুরী দীক্ষিত। চোখের ওপর কী একটা মাখিয়ে গুনগুন করে গাইছিল, আঁখ মার দে। নখে রুপোলি নেলপালিশ লাগাল, সঙ্গে গান, ‘মেহেন্দি লাগাকে রাখ না।’ মেহেন্দি হলে ভালই হত, কিন্তু এখানে মেহেন্দি করবে কে? একটা লাল শাড়ি কিনতে হয়েছিল দুলালীকে। ওটা বার করল। শায়া পরার আগে জাঙ্গিয়া পরে নিল। ওরা বলে, প্যান্টি। দুলালী এখনও প্যান্টি কেনেনি। প্যান্টি আর জাঙ্গিয়ার মধ্যে তফাত কতটুকুই বা? বোধহয় একটু ছোট আর বড়। এরপর শায়া এবং শাড়ি। বেশ সুন্দর করে পরিয়ে দিল ওরা। সুন্দর দু’টো ইলু’ ভরে দিল বুকে। জল ভরা মোটা রবারের বেলুন। এই বেলুন ওজন দরে কিনে আনে, পিচকিরি দিয়ে জল ভরে রাখে। আয়নার সামনে দাঁড়াল দুলালী। চেনাই যাচ্ছে না। ওপাশ থেকে যেন দুলালী শুনল : তুই কে এলি?

দুলাল যখন বিয়ে করতে গিয়েছিল, এরকমই লাল শাড়িতে সেজেছিল ওর বউ। কপালে চন্দনের ফোঁটা ছিল। দু’জনে দুলালীর দু’হাত ধরে গুরুমা-র কাছে নিয়ে গেল। গুরুমা’কে দুলালী প্রণাম করল। গুরুমা দুলালীর থুতনিটা ধরে নাড়িয়ে দিয়ে বলল—বারেব্বা, একদম গাল-ভাঙা হেমামালিনী।

ঘর থেকে বেরনোর সময় ঢোলে পা লেগে গেল দুলালীর। এ কী করলি—গান্ডুনি, বোকাচুদি—কানা খানকি—এসব খিস্তি করতে লাগল সবাই মিলে। মহা অন্যায় হয়ে গিয়েছে। ঢোলে পা লাগা পাপ। তাও আজকের মতো শুভদিনে?

লাজে মরে যায় দুলালী। দেখতে পায়নি। মাথায় ঘোমটা ছিল যে। যে-ঢোলটা পায়ে লেগেছিল, দু’হাতে স্পর্শ করে নমস্কার করল। গুরুমা বলল—এমন করে পেনাম করলি যেন ‘আয়াম সরি, আয়াম সরি’। এস্টাইলের মাগিরা যেমন পায়ে পা লাগলে করে। লম্বা হ, দণ্ডবৎ হয়ে পেনাম কর।

তাই করল দুলালী। ‘ঢোল’-কে কী বলে সম্বোধন করবে—বুঝতে পারছিল না। এটুকু বুঝেছিল, ওদের এই সমাজে ঢোল খুব পবিত্র। বেস্পতিবার ঢোলের গায়ে সিঁদুরের ফোঁটা পড়ে। ঢোল-ই তো লক্ষ্মী। কিন্তু ঢোল কি দেবী না দেবতা? হে ‘ঢোল বাবা’ বলবে, না কি হে মা ঢোল’ বোঝেনি—দুলালী বলেছিল, হে ঢোল, ক্ষমা করো। ইচ্ছে করে পা ছুঁইনি।

পরে যখন দুলালের অসুখ করেছিল, দুলালের মনে হয়েছিল ওটা সেই ‘নথ-ভাঙা’র দিনে ঢোলে পা লাগার ফল।

উৎসবের আবহাওয়া কেমন যেন থমথমে হয়ে গেল। এরই মধ্যে লছমন যাদব এসে গেল। টেরিকটের ঘিয়ে পাঞ্জাবি এবং সরু পাজামা পরে এসেছে। গা থেকে আতরের গন্ধ বেরচ্ছে। লোকটার বেশ মোটা গোঁফ আছে। কান থেকে লোম বেরিয়েছে। কাশছে লোকটা।

গুরুমা ওকে নিজের ঘরের চেয়ারে বসাল। হাসি আর ফুলি দুলালীকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে গেল। এখন, যাওয়ার আগে বহুচেরা-র ছবিটাকে প্রণাম করার ছলে আড়চোখে পারিক- কে দেখে নেয়। ‘পুরীর স্মৃতি’ লেখা রেকাবিটা থেকে কালো পিঁপড়ে ঝেড়ে একটা নকুল দানা উঠিয়ে নিয়ে কপালে ঠেকিয়ে বলল, পাপ খণ্ডন করো মা।

ঘরে আসর বসে গেল। বেচারা দুলালী বাইরে। তবে গুরুমা-র ঘরে সবাই ঢুকতে পারেনি। গুরুমা যাদের বলেছে তারাই এসেছে। সিনিয়রদের মধ্যে চাত্তারা তো আছেই, ফুলি, ঝর্না আর মহুয়া আছে। মহুয়ার নথ-ভাঙার কাজটা যাদব-ই করেছিল, তাই জুনিয়ার হয়েও ও অনুমতি পেয়েছে। তা ছাড়াও, একটু ঝলবনানি আছে। নাচতে পারে। হাসিও থাকছে, কিন্তু ও বেশিক্ষণ থাকতে পারবে না। খাবারদাবারের দিকটা সামলাতে হবে ওকে। লালুকে খবর দিয়ে ডেকে আনা হয়েছে। ও একজন আকখাট মদ্দ। গুরুমা একটা সাইড বিজনেস চালায়। গাঁজার। লালুকে ফোকটে খিলুয়া খাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ করা হয়েছে।

কাচের আলমারি খুলে গেলাস বার করল ঝুমকো। বোতল বার করল যাদব। ঝর্না থালায় সাজিয়ে চানাচুর আর আলুভাজা এনে দিল। গেলাসের ঠুংঠাং শব্দ। টু ইন ওয়ান’-এ ক্যাসেট ঢুকিয়ে দেওয়া হল। গান বাজল ‘রূপ তেরা মস্তানা’। ভিতরে হাহা হিহি চলতে লাগল, খিস্তি- খেউড় চলতে লাগল, গালাগালি-মাখা গানও। মাঝখানে হাসি এসে একটু গরম জল চেয়ে নিয়ে গেল। যাদব গরম জল দিয়ে রাম খাবে। ওর খুব কাশি হয়েছে।

একটা ঘর ফাঁকা রাখা হয়েছে। ওখানে দুলালীর নথ-ভাঙা হবে। চাদরটা পরিষ্কার। চাদরের ওপর কেউ মজা করে কয়েকটা গাঁদা ফুল ছিড়ে ছড়িয়ে রেখেছে।

দুলালীর হাতে একটা গেলাস ধরিয়ে দিল চাত্তারা। বলল, তিনবার ফুঁ মারতে হবে। এক ফুঁয়ে সদা যেন থাকি চনমন, দুই ফুঁয়ে পারিকের সদা টাইট ধন, তিন ফুঁয়ে পারিকের সদা থাকে মন।

খাওয়াদাওয়া হল। দুলালী কনে বউয়ের মতো খাটে বসে আছে। গুরুমা এলেন। ‘অম্বার পাঁচালি’-টা পড়বেন এবার-

জয় জয় নম নম পুণ্য কাশীধাম
কাশী রাজের কন্যা ছিল অম্বা তাঁর নাম।
গুণবতী কন্যা সে, রূপবতী নারী
রূপের বর্ণনা তার দিতে নাই পারি।।
যেমন নাই তার তেমনি মাই
এ মেয়ের তুলনা ত্রিভুবনে নাই।
শাল্ববদেশে এক রাজা সুন্দর চেহারা
বড় মদ্দ জম্মু লিকম সদা থাকে খাড়া
অম্বা রানী তাহাকেই মনটা দিয়াছে
কিন্তু ভীষ্ম রাজা তাকে হরিয়া নিয়াছে।।

কিন্তু শোনো, ভীষ্ম হল ব্রহ্মচারী ন্যাকড়া লিম। ওর নিজের জন্য অস্বাদেবীকে লেয়নি কো। ওর জ্ঞাতি বিচিত্রবীর্যের সঙ্গে বে দেবে বলে হরণ করেছিল। পরে জানতে পারল যে অম্বা অন্য একজনকে মন দিয়ে রেকেচে। ভীষ্ম তখন অম্বাকে ছেড়ে দেয়। অম্বা শাল্ব রাজার কাছে যায়—ওগো রাজা, আমি ফিরে এলাম, আমায় আলিঙ্গন দাও। শাল্ব বলল—আলিঙ্গন? আমি তোকে ছুঁব না। শালা ভীষ্ম তোকে অপবিত্র করেছে। অম্বা বলল মায়ের দিব্বি। ভীষ্ম কিছু করেনি। ও ব্রহ্মচারী।

শাল্ব বলল,
ব্রহ্মচারীর গান্ডি মারি
তুই হলি কুলটা নারী
তোকে আমি ঘিন্না করি
তুই ফুটে যা হতচ্ছাড়ি।
মনোদুখে অম্বা দেবী চলে গেল বনে
শিবঠাকুরের ধ্যান করে ভক্তিমনে।
মনে ভাবে ভীষ্মের জন্য তার এই হাল।
ভীষ্ম যদি মরে তবে মেটে গায়ের ঝাল।
নমো নমো শিব শিব করিছে অম্বা
হেনকালে শোনা গেল ষাঁড়ের হাম্বা
ষাঁড়ে চড়ি মহাদেব অম্বা সকাশে
ষাঁড়ের উপরে বসে মহাদেব কাশে।

অম্বা তখন করল কী, কতগুলো তুলসী পাতা নিয়ে এসে মহাদেবের হাতে দিয়ে বলল, আপনার খুব কাশি হয়েছে, প্রভু, খেয়ে ফেলুন। কমে যাবে। মহাদেব দেখলেন, মেয়েটার ভো তাঁর প্রতি খুব আড়িয়াল আছে, অম্বার হাত থেকে তুলসী পাতা নিয়ে চিবিয়ে খেলেন। মনে হল, গলায় আরাম হয়েছে। এরপর বললেন, কী চাস বল।

অম্বা বলল, আমি ভীষ্মকে শায়েস্তা করতে চাই।

শিব মাখা চুলকে বলল, এ জন্মে হবে না। পরের জন্মে তোকে হাফ-নারী করে পাঠাব দেখতে ব্যাটাছেলের মতো। নইলে রথ চালাবি কী করে, ভেল করবি কী করে। তুই হবি শিখণ্ডী।

অম্বা জন্মালো রাজা দ্রুপদের ঘরে
শিশুকালে তারে সব শিখণ্ডী নাম করে
দেখিতে ছেলের মতোই লিক্‌‍ তাহার
বড় হলে তার হল নারীর বাহার।

হিজড়ে যেমন হয় আর কী, অর্জুন জানত, ভীষ্ম পুরুষ ছাড়া কাউকে যুদ্ধ করে মারে না। অর্জুন ভীষ্মের সঙ্গে যুদ্ধ মারাতে গিয়ে শিখণ্ডীকে রথের সামনে সেট করে রাখল। তির মারতে গেলেই শিখণ্ডীর গায়ে লেগে যাবে। এদিকে শিখণ্ডী তো আকখাট মদ্দ নয়। হিজড়েই। ভীষ্ম কিছু করতে পারল না, অর্জুন ভীষ্মকে কাত করে ফেলল। শিখণ্ডী পরের জন্মে আবার নারীজন্ম পেয়েছিল।

গুরুমা-র গলা জড়িয়ে এসেছে। ভালই নেশা হয়েছে। বলছে, আমরা হলাম অম্বা, জগদম্বা—কী সে কম-বা।

অল্প ক’দিন শিখণ্ডীর মতো এসেছি। নাচব, গাব, মস্তি করব। আবার ফুল মাগি হয়ে জন্মাব। ব্যস। জয় অম্বা মাইকি।

নথ-ভাঙার দিন এই কাহিনিটা নাকি শুনতে হয়। সবাই শুনল।

দুজনে ধরাধরি করে নথ-ভাঙা ঘরে পৌঁছে দিল দুলালীকে। একটা জগে জল। দু’টো গেলাস, একটু তুলো। একটা ভেজলিন-এর কৌটো।

ফুলি বলল, দিয়ে গেলুম গো। আমাদের মেয়েকে সাবধানে রেখো।

দরজা বন্ধ করল একটু জোরে।

‘লে গয়ি দিল, গুঁড়িয়া জাপান কী।’—’লাভ ইন টোকিও’ বাজছে ক্যাসেটে।

এরই মধ্যে উলু দিল ওরা।

আজকের মস্তির পুরো খরচ ছাড়াও গুরুমাকে পাঁচশো টাকা দিয়েছে যাদব। যাদব এবার উশুল করবে।

যাদব খাটে বসে আছে। ও ডাকল, আ যাও পেয়ারি। দু’হাত মেলে দিল।

দুলালী ওর পাশে বসল।

—নাম দুলালী আছে, হ্যায় না?

–হুঁ।

—আগে দুলাল ছিল? সাচ্ না?

–হুঁ।

—ডান্স আতি হ্যায়? ডান্স?

থোড়া-থোড়া। —শাদিসুদা?

–হুঁ।

—আমি ভি শাদিসুদা। দেশ মে হ্যায়। ইধার ভি এক রাখ দিয়া। বাঁচো মস্তি মে। হামকো সব চলতা হ্যায়। শ বুর গলাকে বন্তা হ্যায় এক গাঁড়। বলতে বলতে কেশে ফেলে।

—থোড়া সা পানি পি লিজিয়ে। দুলালী বলে।

—পানি ক্যায়া হোগা, বোতল মে থোড়া রাম বাচা হুয়া হ্যায়।

ওর মুখ থেকে খুব মদের গন্ধ পাচ্ছিল দুলালী। কথাটাও জড়ানো ছিল।

দুলালী বলল, আর মদ খেয়ো না।

যাদব বলল, থোড়াসা। মুঝে সার্ভ করো।

দুলালী সামান্য একটু ঢেলে দেয়।

যাদব খায়। তারপর সদ্য মদ-খাওয়া জিভ দুলালীর ঠোঁট ছুঁতে যায়, তখন আবার কাশির দমক আসে।

—অত কাশি হল কেন? দুলালীর প্রশ্নে একটা অন্তরঙ্গতা।

—ঠান্ডা লেগে গিয়েছে। পরসোঁ বাইক লিয়ে বাড়োয়ান গেলাম কিনা।

দাঁড়াও। তোমার কাশি কমিয়ে দিচ্ছি। দরজার ছিটকিনি খুলল, দুলালী। বাইরে তঞ্চ খিলুয়া খাওয়া চলছে। গান বাজছে,

চান্দা হ্যায় তু, মেরা সুরজ হ্যায় তু।

দুলালীকে দেখে ওরা কলকলিয়ে উঠল। কী রে? হয়ে গেল? ধুতে এলি না কি?

—না, তুলসী পাতা।

—তুলসী পাতা কী হবে?

—ওর বড় কাশি হচ্ছে। তুলসী তুলব।

—রাতে তুলসী তুলতে নেই।

—নেই তো নেই। পাপ আমার হবে। ও কাশছে খুব। দুলালী উঠানে নেমে কোে গাছগুলো থেকে কয়েকটা তুলসী পাতা ছিঁড়ে নিয়ে এল। অম্বাও তো শিব ঠাকুরকে তুলসী পাতা খাইয়েছিল। এরপর রান্না ঘরে গিয়ে একটু আদা থেঁতো করল, সঙ্গে তুলসী পাতা। এর বলল, খুব সোহাগ লো…

যাদবকে বলল, আদা-তুলসী পাতা থেঁতো করে এনেছি। আরাম হো জায়েগা। একটু খেয়ে নাও।

একটু অবাক চোখে দুলালীর দিকে তাকিয়েছিল যাদব।

তারপর হাঁ করে দিল।

দুলালী আদা-তুলসি বাটা একটু-একটু করে খাইয়ে দিয়েছিল। খাওয়ানোর সময় দুলালীর মুখটা কেমন ছুঁচোলো হয়ে গিয়েছিল বাচ্চাকে খাইয়ে দেওয়ার সময় যেমন হয়, মুনু- বলার সময় যেমন হয়।

যাদব বলেছিল—চিজ বহুত আচ্ছি হ্যায়। তারপর জড়িয়ে ধরে বলেছিল, চিজ বড়ি হ্যায় মস্ত-মস্ত। যাদবের বুকে জল-ভরা বল লাগছিল। জল-ভরা বল লাগুক। সেটা যখন খুশি লাগতে পারে। কিন্তু ‘চিজ বড়ি হ্যায় মস্ত-মস্ত’ কী করে হবে? দুলাল-কাহিনি তো ফ্ল্যাশ ব্যাকে বলা হচ্ছে। ১৯৮৭-৮৮ সাল। তখনও তো এই গানটা সৃষ্টিই হয়নি বলিউডে। না হোক গে স্থান-কাল মিশিয়ে দেওয়া হল। আর, একটু ব্রেখ্‌টিয়ান অ্যালিয়েনেশনের কায়দাও করা গেল।

যাদব বলল, ও বল উতার দো। বকোয়াস হ্যায়। খুলে দাও।

দুলালী বলল, তুমিই খোলো।

যাদব বলল, না, তুমি।

দুলালী বলল, না, তুমি-তুমি।

যাদব তখন ব্লাউজের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে, বল দু’টো বের করে আছাড় মারল।

ওরা কেউ ফাটল না। লাফাতে-লাফাতে খাটের তলায় ঢুকে গেল।

যাদব বলল, ওসব ঝুটমুট মাগি সেজে কী লাভ? লেড়কা হল লেড়কা, লেড়কি হল লেড়কি। গাঁড়, বুর, দু’টো দু’রকম। দু’টোই ভাল। বলতে গিয়ে আবার কাশল।

দুলালী যাদবকে শুইয়ে দিল। বুকে হাত বুলিয়ে দিল। মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। ঘুম পাড়াতে লাগল।

যাদব বলল, তুম বহুত প্যায়ারা হ্যায় দুলালী, বহোত।

কিছুক্ষণ ঝিম মেরে থাকল যাদব। বলল, বহুত পি লিয়া দুলালী। ক্যায়া করু?

দুলালী তলপেটে হাত বুলোতে বুলোতে আরও নীচে নিয়ে গেল। দেখল লিক্‌ম ঘুমিয়ে আছে।

থাক। নাড়াচাড়া করার দরকার নেই।

যাদব গাইল—ক্যায়া করু সজনি…।

এরপর উঠে বসল। বলল, নথ-ভাঙা আছে, তাই না?

দুলালী ছদ্ম-লজ্জায় মাথা নাড়ে। আঁচল দিয়ে ঢাকতেও গিয়েছিল রিফ্লেক্স বশে। কিন্তু ইলু দু’টো তো খাটের নীচে।

যাদবের চোখ লাল। পা জামার দড়ি খোলে। দুলালী বলল, তোমার শরীর খারাপ সোনা, কাশি হয়েছে। কিচ্ছু করতে হবে না। ঘুমু করো। শুধু একবার ঠেকিয়ে দাও, তা হলেই হবে।

দুলালী উপুড় হয়ে শোয়।

অনেক দূর থেকে আসা শঙ্খধ্বনি শুনতে পাচ্ছে দুলাল। খাজাইতলা থেকে। মা বাজাচ্ছে।

আসলে রাতের ইলেকট্রিক ট্রেন পানাগড় স্টেশনে ভোঁ দিল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *