হরিচরণবাবু
ঈশ্বর যখন আছেন, তখন ভূতও থাকবেন। হরিচরণবাবু আমাকে এমন বলতেন। আমরা একসঙ্গে তখন একটা কারখানায় কাজ করি। হরিচরণবাবুকে কারখানায় আমি কাজ দিয়েছিলাম। মাথায় টাক, বয়স হয়েছে, বেকার ছিলেন, বাবা ডাকসাইটে ফুটবলার ছিলেন এবং বলতে গেলে আমার কাছে চাকরির উমেদারিতে যখন দেখা করতে আসেন, তখন ওঁর বাবার নাম শুনে চাকরিটা না দিয়ে পারিনি। এত বড়ো ফুটবলার, বলতে গেলে কিংবদন্তী, এমন মানুষের একজন পুত্র বেকার থাকবে ভাবতে কষ্ট হয়েছিল। প্রথমে ভাউচার লিখতেন, কারখানার বিল আদায় করতেন, পরে কারখানার প্রোডাকশনের দিকটা সামলাতেন।
হরিচরণবাবু বিয়ে থা করেননি। বয়স পঁয়ত্রিশ-ছত্রিশ—এই বয়সে প্রথম তাঁর চাকরি, তা ছাড়া আমাদের কারখানার অবস্থাও বিশেষ ভালো না, আজ ওঠে তো, কাল উঠে যায়—এহেন পরিস্থিতিতে তাঁর বিয়ে করা চলে না—এমন বলতেন। পাওয়া ছুটিছাটা নেবার কোনো আগ্রহ তাঁর ছিল না। কেবল অমাবস্যা এবং বিশেষ বিশেষ শনিবার বাদে।
মাঝে মাঝেই তিনি বলতেন, স্যার যাবেন, চলুন না। আমি বলতাম, কোথায়? তিনি বলতেন, চলুন, দেখতে পাবেন, আপনি তো ভূতটুত বিশ্বাস করেন না। আমার বিশ্বাস, একটা রাত আমার সঙ্গে কাটালে বিশ্বাস হবেই।
আমি বলতাম, বিশ্বাস করি না কখন বললাম! বলেছি, আমি নিজে ভূত দেখিনি। ভূতটুতের বিষয়টা আসলে সংস্কার। যেমন ঈশ্বর আছেন—এটা একটা সংস্কার। মন্দির দেখলে মাথা যে ঠুকি—তা সংস্কার থেকেই।
হরিচরণবাবু বলতেন, না তেনারা আছেন। এবং এটা হত, যখনই হরিচরণবাবু আমার ঘরে ঢুকতেন, এ-কথায় সে-কথায় ভূতের প্রসঙ্গ টেনে আনতেন। বলতেন, দেখুন, আমার ঠাকুমার একটা পোষা ভূত ছিল।
পোষা ভূত শুনে চমকে গিয়েছিলাম!
বিশ্বাস করুন। আমাদের পরিবারের কোনটা শুভ অশুভ—সেই পোষা ভূতটা এসে ঠাকুমাকে সাবধান করে দিয়ে যেত।
কী জানি মশাই, এমন আজগুবি কথা আমি শুনিনি!
হরিচরণবাবু ততোধিক উৎসাহের সঙ্গে বলতেন, আমার দাদু, বুঝলেন না, তিনি ঠাকুমার পোষা হবেন না! অকালে মারা গেলেন—ঠাকুমা বাবা-কাকাদের বড়ো করেছেন, তাঁরই নির্দেশে। আমার পিসি এল বেড়াতে, ঠাকুমা দেখলাম হত্যা দিয়েছেন ঠাকুর মণ্ডপে। কী ব্যাপার! সারাদিন জলগ্রহণ করলেন না! সাঁঝবেলায় বললেন, নীহারকে আজ একটু বেশি মাছ মাংস খেতে দে। আমার বাবা শুনে অবাক। ঠাকুমার এককথা, নীহারের বর কালই মরে যাবে। তিনিই বলে গেছেন। পরে আমরা সব জেনেছিলাম।
তিনি মানে?
আমার দাদু, মানে ঠাকুমার পোষা ভুত। আমার বাবা যে ডাকসাইটে ফুটবলার হবেন, ঠাকুমা আগেই জানতেন। বলতেন, ও পড়াশোনা করছে না তো কী হয়েছে। যা করতে চায় করতে দাও। খেলার দৌলতে বাবা ইস্টার্ন রেলের বড় চাকরি পেয়ে গেলেন।
সুতরাং যাদের বাড়িতে পোষা ভূত থাকে তারা ভূতে বিশ্বাসী হবে বিচিত্র কী। হরিচরণবাবুও নাকি ঘোর অমাবস্যায় ঠাকুমার আসনে বসলে টের পান, পোষা ভূতটি বাড়ি ছেড়ে যায়নি। তাঁর যে চাকরি হবে আমার সঙ্গে দেখা করলে, এটাও নাকি তাঁর ঠাকুরদারই নির্দেশ।
আমাকে শুনতেই হত। কারণ অবিশ্বাসের কথা বললে, নানারকমের যুক্তি, আচ্ছা আপনি, পড়েছেন! বলে একজন ভূত বিশেষজ্ঞের বইয়ের এমন সব কাহিনি উল্লেখ করতেন যে, আমি খুবই বিস্মিত হতাম।
যেমন, একবার হরিচরণবাবু বলেছিলেন, একটা ছবি দেখাব।
ছবি!
হ্যাঁ। দেখবেন ছবিটা। দেখলেই বুঝতে পারবেন! বলে তিনি সত্যি একটা ছবি একদিন এনে আমাকে দেখালেন। একজন বিধবা মহিলা, আর তার পাশে তিন ছেলে দুই মেয়ে। পেছনে আরও একজন কেউ দাঁড়িয়ে আছেন, ছায়ার মতো—খুব স্পষ্ট নয়।
তিনি ছবিটা দিয়ে বললেন, আগে ভালো করে দেখুন।
বললাম, দেখছি।
ভালো করে দেখুন।
বলছি তো ভালো করে দেখেছি।
তিনি এবারে উঠে এসে আমার পাশে দাঁড়ালেন। এই যে দেখছেন, পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন, তিনি ভদ্রমহিলার স্বামী।
ভদ্রমহিলাটি কে?
আমার সেই পিসি!
অঃ।
আমার পিসেমশাইয়ের মৃত্যুর তিন মাস পরে তোলা। ছবিটাতে দেখা যাচ্ছে, আমার পিসেমশাইও আছেন। মৃত্যুর পরও মানুষ তার আত্মীয়স্বজন ছেড়ে যে যেতে চায় না, এটা তার জ্বলন্ত প্রমাণ। আপনার এখনো বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় ভূত নেই! ভূতটুত আসলে সংস্কার, ঈশ্বর আসলে সংস্কার এ রকম ভাববেন না।
সেদিন আমি বলেছিলাম, এটা যে আপনার পিসেমশাই জানলেন কী করে!
জানব না! তাঁকে আমি চিনব না!
ছবিটা স্পষ্ট নয়। আপনার পিসিমা কী বলেন!
পিসি কী বলবেন! মরে যাবার পরও মানুষটা ঘরবাড়িতে ঘুরে বেড়ায়, এমনকী ছবি তোলার সময় পর্যন্ত তিনি স্থির থাকতে পারেননি, শত হলেও স্ত্রী-পুত্র-কন্যার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে কার না শখ হয়। শখের জন্যই শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে গেলেন। পিসিমা তো ছবিটা দেখার পর বাড়িতে রক্ষাকালীর পূজা, চণ্ডীপাঠ সব করালেন। গয়াতে গিয়ে প্রেতশিলায় পিণ্ডদান করালেন। তারপর আবার ছবি তুললেন সবাইকে নিয়ে। দেখা গেল, না আর পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে নেই। কেউ দাঁড়িয়ে থাকত না।
সেই যা হোক, হরিচরণবাবুর সঙ্গে এক কারখানায় আমার আর বেশিদিন কাজ করা হল না। শ্রমিকদের দাবিদাওয়া বাড়তে থাকল, অথচ প্রোডাকশন বাড়ল না— বেশি প্রোডাকশনের দাবিতে চুক্তি হয়। পরের বছর চুক্তি ফেল করে। ওভারটাইম নেবে, অথচ কাজের সময় কাজ করবে না। হরিচরণবাবু বলতেন, এও এক রকমের ভূত স্যার। মাথায় ভূত না চাপলে, কাজ করব না, পয়সা নেব ঠিক কখনো হয়! সবই হলোগে সেই ভূত রহস্য। হরিচরণবাবু সবটাতেই অদৃশ্য এক ভূতের হাত দেখতে পেতেন! আমার হাসি পেত। একদিন নাছোড়বান্দা হয়ে আমাকে তাঁর বাড়ি নিয়ে গেলেন। পৈতৃক সম্পত্তির একখানা ঘর ভাগে জুটেছে। শোভাবাজারের এক এঁদো গলির মধ্যে দোতলা বাড়ি। বাড়ির শেষ কোণের ঘরটায় তিনি থাকেন। কাকা জ্যাঠাদের সঙ্গে খুব ভালো একটা সম্পর্ক আছে মনে হয় না। আলো না জ্বাললে ঘরের কিছু দেখা যায় না। একটা ঘুলঘুলি দিয়ে সামান্য আলো আসে। প্রায় পা টিপে টিপে তাঁর ঘরের দিকে এগোলাম। দিনের বেলাতেও কেমন গা ছমছম করে। বাড়ির লোকজন এদিকটায় বড়ো একটা আসেন না, এটাও টের পেলাম। ঘরের দেয়ালে সেই পিসির গ্রুপ ছবি। তাতে সিঁদুর দেওয়া নীচে তক্তপোশ, মাদুর, ময়লা তোষক বালিশ। একটা হরিণের ছাল। এটাতে বসেই হরিচরণবাবুর ঠাকুমা তাঁর দাদুর সঙ্গে কথা বলতেন। তক্তপোশের নীচে অজস্র শিশি বোতল, পেতলের বাটি, আলতার শিশি।
আলতার শিশি দেখে বলেছিলাম, ও দিয়ে কী হয়! হরিচরণবাবু কেমন কিছুটা ধরা পড়ে গেছেন, ভেবে বলেছিলেন, আমার ঠাকুমা বিধবা হলেও সধবার বেশে থাকতেন। মাছমাংস খেতেন, সিঁদুর পরতেন, আলতা পায়ে দিতেন। আমার দাদুই নাকি বলেছেন, আমি তো আছি। থান পরা দেখলে কষ্ট হয়—তুমি ওভাবে থাকবে না। হরিচরণবাবু আরও বলেছিলেন, শুধু এই আসনটার জন্য তিনি পৈতৃক সম্পত্তির সব ছেড়ে দিতে রাজি ছিলেন—কিছু নেনওনি। তবু তাঁর ছোটোকাকা বাড়ির ছেলে ফুটপাথে গিয়ে উঠবে ভেবে শেষের দিকের একতলায় এই পরিত্যক্ত ঘরটা ছেড়ে দিয়েছিলেন।
আমি কিন্তু আলতার শিশিটাই দেখছিলাম।
হরিচরণবাবু কী ভাবলেন, কে জানে। বললেন, আমি আসনটায় বসলে অনেক কিছু টের পাই। বিশ্বাস করুন, আমাদের ছাদের কার্নিশে শকুন উড়ে এসে বসবে আগেই টের পেয়েছিলাম। গেরস্তের বাড়িতে শকুন বসা খুব অশুভ ব্যাপার। সকালের দিকেই সেদিন ছাদে উঠে গেছিলাম, ঠিক দেখছি উড়ে আসছে। ভাইপো ভাইঝিদের নিয়ে সারাদিন ছাদে শকুন দুটোকে তাড়া করলাম। ওরা বসবেই—যেন এক খণ্ডযুদ্ধ বেধে গিয়েছিল আর কী!
বললাম, বসলে কী হত!
কারও অপমৃত্যু হত!
সেটা কে!
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলেছিলেন, সম্ভবত আমি নিজেই। কথাটাতে কেমন গা শিরশির করে উঠেছিল।
হরিচরণবাবু বলেই চলেছেন, ঘোর অমাবস্যায় আসনটায় বসলে, ঠাকুমা ঠাকুরদা, যে-কোনো আত্মার সঙ্গে আমি কথা বলতে পারি। আপনি বিশ্বাস করবেন না, এক একজন এক এক ধাপে থাকে। অনেকের নামতে কষ্ট হয়। ঠাকুমাই দেখছি কেবল রাগ করেন না। আপনি বসবেন একদিন! নিয়মকানুন আছে, লাল পাড় গরদের শাড়ি পরতে হবে। পায়ে আলতা, কপালে সিঁদুরের টিপ—একেবারে একজন নারীর বেশে বসতে হবে। না হলে হবে না।
আলতা-রহস্য টের পেয়ে মুচকি হাসলে তিনি খুব গম্ভীর হয়ে গেছিলেন। বলেছিলেন, এদের নিয়ে তামাশা ঠিক নয় স্যার।
এমন একজন এ-বাড়িতে থাকে, ভাইপো-ভাইঝিরা পর্যন্ত কাছে আসে না, উন্মাদ নয় তো! কী জানি, এতটা বিশেষণের আমার কোনো প্রয়োজন ছিল না। পথিবীতে কত বিচিত্র লোক আছে—যে যার বিশ্বাস নিয়ে বড়ো হয়, বাঁচে তারপর একদিন মরেও যায়। হরিচরণবাবুর বিশ্বাসে আঘাত দিতে আমার ইচ্ছে হয়নি।
বছর দশেক হল ওঁর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে আমার। কারখানা সত্যি উঠে গেল। তিনি বেকার হলেন। আমিও। তবে সঙ্গে সঙ্গে একটা কাগজে চাকরি পেয়ে আমি থিতু হয়ে বসতে পেরেছিলাম। আমার বাড়িঘরও হয়েছে। দোতলা বাড়ি। কেষ্টপুর খালের ধারে আমার বাড়িটা। সকালে লিখতে বসেছি, দেখি হরিচরণবাবু হাজির। কেমন সামান্য কৃশকায়—লম্বা ছ-ফুট মানুষটা যেন কিছুটা অস্বস্তির মধ্যে পড়ে গেছেন। এসেই বললেন, স্যার এলাম। আপনার ছোটো ছেলে এবার ডাক্তারিতে ভরতি হয়েছে। ও একটা কঙ্কাল এনেছে। ওটা আমার দেখার শখ হয়েছে, তাই চলে এলাম, কিছু মনে করবেন না।
হরিচরণবাবুর এসব কথা জানবার নয়। বছর চারেক ধরে তাঁর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। তবু এতটা খবর রাখায় আমি ভারি অবাক হয়ে গেছিলাম। হয়তো কৃতজ্ঞতাবশে তিনি আমার সব খবরই রাখতেন। আমি তাঁর কোনো খবর রাখার উৎসাহ বোধ করিনি।
নীচের ঘরে কথাবার্তা হচ্ছিল। জিজ্ঞেস করলাম—কী করছেন? কেমন আছেন? শরীরটা তো দেখছি বেশ ভেঙে গেছে। কতদিন পর দেখা!
বাড়ির কাজের মেয়েটি আমাদের জন্য চা রেখে গেল, কিছু খাবার।
হরিচরণবাবু বললেন, আমি এত সকালে কিছু খাই না। কঙ্কালটা দেখে চলে যাব। একটা বড়ো বেতের বাসকেটে কঙ্কালটা নিয়ে এসেছে।
তিনি এত খবর পান কী করে?
হরিচরণবাবু বললেন, দোতলার ঘরে ছেলের খাটের নীচে আছে।
হরিচরণবাবুর অদ্ভুত চরিত্র আমার জানা। অন্য যে-কারও মুখে এমন কথা শুনলে চোখ কপালে উঠে যেত, কিন্তু হরিচরণবাবু বলেই চোখ কপালে উঠল না। আসনটায় বসলে তিনি তো সবই টের পান। পরলোক রহস্য আমরা আর কতটা জানি। টেবিল টার্নিং-এর কথা তাঁর কাছেই প্রথম জানতে পারি। ওপার থেকে যাঁরা মাঝে মাঝে পৃথিবীতে নেমে আসেন, যেমন দানিকেনের বইগুলি আমার পড়া আছে—বিশ্বাসও করতে পারি না, আবার অবিশ্বাসও করতে পারি না। বললাম, চলুন দেখবেন।
ছোটো ছেলে বাড়িতেই ছিল। তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। বললাম, উনি হরিচরণবাবু। তোমরা ওঁকে ছেলেবেলায় দেখেছ। আমার বাসায় মাঝে-মাঝে যেতেন। উনি তোমার কঙ্কালটা দেখতে চান।
ছেলে দেখাবে কী, তিনি নিজেই বাসকেটটা টেনে বের করলেন। হাড়গোড় সব মাটিতে ফেলে সাজাতে বসে গেলেন। আমার ছেলে হরিচরণবাবুর আচরণে কেমন ঘাবড়ে গেছে। সে তাঁকে শুধু দেখছিল।
করোটিটা হাতে নিয়ে দেখতে থাকলেন।
তারপর মেরুদণ্ডের আলগা হাড়গুলি—বুকের পাঁজরের হাড়। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনার কখনো মনে হয় ঠিক এরকম একটা কুৎসিত কঙ্কাল আপনি বয়ে বেড়াচ্ছেন! আপনার ভেতরেই আছেন তিনি।
আমার কেমন জ্বর আসছে। মুখ মাথা গরম হয়ে গেল। সত্যি তো এটা আছে, অথচ বিশ্বাস করতে পারি না ছালচামড়া তুলে নিলে আমিও এই। খুবই নিষ্ঠুর সত্য।
হরিচরণবাবু অনেকক্ষণ ধরে অপলক দেখলেন কঙ্কালটা। তারপর বললেন, করোটির একটা হাড় কম।
ছেলেও দেখছি সায় দিল। বলল, হ্যাঁ। অকসিপিটালের পাশের দুটো হাড়ের একটা নেই, প্যারাইটাল একটা।
হরিচরণবাবু ছেলেকে বললেন, ওটা খুঁজে আনবে। যার কাছ থেকে এনেছ, তার বাড়িতেই এটা পড়ে আছে। খুঁজলেই পাবে! খুঁত রাখবে কেন! এই বলে তিনি নেমে গেলেন। নামার সময় বলে গেলেন, দেখে গেলাম স্বচক্ষে।
তিনি চলে গেলে আমি কিছুক্ষণ কেমন বিমূঢ়ের মতো বসেছিলাম। মানুষটা সত্যি যোগসিদ্ধ এমন মনে হল আমার। এর কী ব্যাখ্যা আছে জানি না।
আর তার ক-দিন পর সহসা স্ত্রীর চিৎকারে ওপরে উঠে গেলাম। স্ত্রী বললেন, দেখগে ছাদের কার্নিশে, সব শকুন বসে আছে। আমি কেমন অশুভ সংকেতে ঘাবড়ে গেলাম। হরিচরণবাবুর আসা, কঙ্কাল দেখা, শকুন উড়ে আসার মধ্যে সারা বাড়িটা এক ভৌতিক ষড়যন্ত্রের মধ্যে বুঝি পড়ে গেছে। যেন হরিচরণবাবু শিক্ষা দিতে চান, কেমন বিদেহী আত্মায় বিশ্বাস নেই, দেখুন এবারে মজা!
সকালেই ভাবলাম, না, ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। বলতে হবে, তেনারা আছেন। আপনি আসনে বসে জেনে নিন, আমার বাড়িটি অশুভ প্রভাবের হাত থেকে কী ভাবে রক্ষা পেতে পারে। সকালেই সামান্য চা খেয়ে বের হয়ে পড়লাম। ওঁর বাড়ি যেতে সময় লাগে না। কিন্তু আজ কেন জানি মনে হল অনেক দূরে হরিচরণবাবু থাকেন।
বাড়িতে কড়া নাড়তেই, এক ভদ্রমহিলা দরজা খুলে দিলেন। বললাম, হরিচরণবাবু আছেন?
ভদ্রমহিলা বললেন, আপনি কোত্থেকে আসছেন?
সব বললে, তিনি জানালেন, সে কী তিনি তো আজ চার বছর হল নিখোঁজ। তিনি আপনার বাড়ি গেলেন, অথচ নিজের বাড়ি ঘুরে গেলেন না! তাজ্জব!