হযরত শীছ (আ)
জন্ম ও রুশ পরিচয়
বিশ্বের প্রথম মানব হযরত আদম (আ)-এর তৃতীয় পুত্র ও খলীফা। শীছ শব্দটি মূলত হিব্রু। ইহার ইংরাজী রূপ Seth, Sheth এবং আরবী রূপ [ ] । অর্থ “আল্লাহর দান”। হযরত আদম (আ)-এর দ্বিতীয় পুত্র হাবীল-এর মর্মান্তিকভাবে নিহত হওয়ার পাঁচ বৎসর পর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। সেইজন্য হযরত আদম (আ) ইহাকে আল্লাহর দানরূপে গণ্য করিয়া উক্ত নামকরণ করেন (ইবন কাছীর, আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, ১খ, ৯৮)। ঐতিহাসিক আল-মাসউদী তাঁহার মুরূজুয-যাহার গ্রন্থে বিষয়টির আরও বিস্তারিত বিবরণ এইভাবে প্রদান করিয়াছেন যে, হাবীলের নিহত হইবার সংবাদ পাইয়া আদম (আ) যখন খুবই বিষণ্ণ ও ম্রিয়মান হইয়া পড়েন তখন আল্লাহ তাআলা ওয়াহয়ির মাধ্যমে তাঁহাকে সন্তান লাভের সুসংবাদ প্রদান করেন। সাথে সাথে তাহাকে তাসবীহ-তাহলীল করিতে এবং পবিত্রাবস্থায় স্ত্রী-গমন করিতে নির্দেশ দেন। এইভাবে হযরত হাওয়া (আ) গর্ভবতী হন এবং তাঁহার মুখমণ্ডলে নূরের ঝলক দেখা যায়। অবশেষে তিনি অতিশয় সুশ্রী ও চরিত্রবান একটি সন্তানের জন্ম দেন। হাওয়া (আ)-এর নূরের ঝলক তাঁহার মধ্যে স্থানান্তরিত হয়। আদম (আ) তাহার এই পুত্রের নাম রাখেন শীছ (১খ, ৪৭)। হযরত আদম (আ)-এর ১৩০ বৎসর বয়সকালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন (বাইবেলের আদিপুস্তক, ৫:৩-৪)।
বাইবেলে হযরত শীছ
বাইবেলে শীছ (আ)-এর জন্ম, সন্তান লাভ ও মৃত্যু সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ প্রদান করা হইয়াছে, যাহা নিম্নরূপ : “আর আদম পুনর্বার আপন স্ত্রীর পরিচয় লইলে তিনি পুত্র প্রসব করিলেন ও তাহার নাম শেথ রাখিলেন, কেননা তিনি কহিলেন, কয়িন কর্তৃক হত হেলের পরিবর্তে সদাপ্রভু আমাকে আর এক সন্তান দিলেন। পরে শেথেরও পুত্র জন্মিল, আর তিনি তাহার নাম ইনোশ রাখিলেন” (বাইবেলের আদি পুস্তক, পৃ. ৬)।
পরে আদম এক শত ত্রিশ বৎসর বয়সে আপনার সাদৃশ্যে ও প্রতিমূর্তিতে পুত্রের জন্ম দিয়া তাহার নাম শেথ রাখিলেন (আদিপুস্তক, পৃ. ৬)।
শেথ এক শত পাঁচ বত্সর বয়সে ইনোশের জন্ম দিলেন। ইনোশের জন্ম দিলে পর শেথ আট শত সাত বৎসর জীবৎ থাকিয়া আরও পুত্র-কন্যার জন্ম দিলেন। সর্বদ্ধ শেথের নয়শত বার বৎসর বয়স হইলে তাহার মৃত্যু হইল (আদিপুস্তক, পৃ. ৭)। ইব্ন কাছীর-এর বর্ণনামতে শীহের এক শত পঁয়ষট্টি বৎসর বয়সে ইনোশ ৫)-এর জন্ম হয় (আল-বিদায়া, ১৩, ৯৫)।
খিলাফত ও নবুওয়াত লাভ
হযরত আদম (আ)-এর ইনতিকালের সময় তিনি স্বীয় পুত্র শীছকে নিজের খলীফা মনোনীত করিয়া যান এবং তাঁহাকে অবহিত করেন যে, তাঁহার ইনতিকালের পর তিনি আত্মাহর ‘হজাত ও পৃথিবীর খলীফা, আল্লাহর হক ওয়াসীদের নিকট প্রত্যর্পণকারী এবং তাঁহার সন্তানদের মধ্যে যাহাদের ইনতিকাল হয় তিনি তাহাদের মধ্যে দ্বিতীয় (অল-মাসউদী, মুরূজুয-যাহাব, ১, ৪৮)। আদম (আ) তাহাকে দিবারাত্রির হিসাব ও উহার প্রতিটি মুহূর্তের ইবাদত শিক্ষা দেন। পরবর্তী কালে সংঘটিতব্য মহাপ্লাবন দ্র. নূহ (আ) নিবন্ধ] সম্পর্কেও তিনি তাহাকে অবহিত করেন (ইবনুল আছীর, আল-কামিল, ১খ, ৪৩; ইবন কাছীর, আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, ১খ, ৯৮)। ইমাম হলাবীর বর্ণনামতে আদম (আ) স্বীয় পুত্র শীছ (আ)-কে যে ওসিয়ত করিয়া যান তাহা লিখিত আকারে তাহার নিকট প্রদান করেন এবং কাবীলের বংশধরদের নিকট হইতে উহা গোপন রাখিবার নির্দেশ দেন (আছ-ছালাবী, আরাইসুল-মাজালিস বা কাসাসুল আম্বিয়া, পৃ. ৪৯)। হযরত আদম (আ)-এর ওসিয়ত অনুযায়ী তাহার ইনতিকালের পর শাসন ক্ষমতা হযরত শীছ (আ)-এর উপর অর্পিত হয়। তিনি জনগণের মধ্যে শাসনকার্য পরিচালনা করেন এবং পিতার ও নিজের প্রতি নাযিলকৃত সহীফা অনুযায়ী শরীআত চালু করেন (আল-মাসউদী, মুরূজুয-যাহাব, ১খ, ৪৮)।
কুরআন করীমে হযরত শীছ (আ)-এর নবুওয়াত বা অন্য কোনও বিষয়ে কোন উল্লেখ নাই। তাঁহার নুবুওয়াতের কথা আবু যার (রা) বর্ণিত একটি হাদীছ হইতে জানা যায়, যাহা ইব্ন হিব্বান তাঁহার সাহীহ গ্রন্থে মারফ্রুপে রিওয়ায়াত করিয়াছেন যে, রাসূলুল্লাহ (স) হইতে বর্ণিত আহ্বাহ তাআলা এক শত সাহীফা ও চারখানা কিতাব অবতীর্ণ করেন। তন্মধ্যে ৫০ খানা সাহীফা হযরত শীছ (আ)-এর উপর নাযিল করেন (ইব্ন কাছীর, আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, ১খ, ৯৯; কাযী যায়নুল-আবিদীন মীরাঠী, কাসাসুল-কুরআন, পৃ.৪১)।
দাওয়াত ও তাবলীগ
নুওয়াত প্রাপ্তির পর হযরত শীছ (আ) নিজের ও কাবীলের বংশধরদের মধ্যে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ শুরু করেন। তিনি তাহাদেরকে সত্য পথ প্রদর্শন করেন এবং নেক কাজের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। এই সময় লোকজন দুই ভাগে বিভক্ত হইয়া যায়। একদল তাহার অনুসরণ ও আনুগত্য করে এবং অপর দল কাবীলের বংশধরদের আনুগত্য করে। কাবীলের বংশধরদের কিছু অংশ শীছ (আ)-এর দাওয়াতে সৎপথ প্রাপ্ত হয়, কিন্তু অন্যরা অবাধ্যতার উপর অটল থাকে (দা, মা. ই., ১১, ৮৫১)। তাহারা আল্লাহকে হাড়িয়া অগ্নিপূজা করিত যাহা শুরু হইয়াছিল কাবীলের জীবদ্দশাতেই। ইমাম ছালাবী বর্ণনা করেন যে, হাবীলকে হত্যার পর কাবীল ভয়ে য়ামান চলিয়া যায়। ইবলীস সেখানে গমন করিয়া তাহাকে বলে যে, অগ্নি হাবীলের কুরবানী এইজন্য কবুল ও গ্রাস করিয়াছিল যে, সে অগ্নির সেবা ও উপাসনা করিত। তাই তুমি তোমার ও তোমার পরবর্তী বংশের জন্য একখানি গৃহ নির্মাণ করিয়া তথায় অগ্নি স্থাপন কর। ইহা শুনিয়া কাবীল ঐরূপ গৃহ নির্মাণ করিয়া তথায় অগ্নি স্থাপন করিল এবং উহার উপাসনা করিতে লাগিল। সেই হইতে অগ্নিপূজা শুরু হইয়াছিল (আছ-ছালাবী, কাসাসুল আম্বিয়া, পৃ. ৪৮)। শীছ (আ)-এর সময়েও কাবীলের কতক বংশধর অগ্নিপূজায় রত ছিল। আর যাহারা শীছ (আ)-এর আনুগত্য করিয়াছিল পরবর্তীতে শীছ (আ)-এর ইনতিকালের পর তাহারাও পথভ্রষ্ট হইয়া যায়। এই কওমকেই সঠিক পথের সন্ধান দেওয়ার জন্য শীছ (আ)-এর অধস্তন ৫ম পুরুষ আখনূখ তথা ইদরীস (আ)-কে নবীরূপে প্রেরণ করা হয় (আনওয়ারে আম্বিয়া, পৃ. ১১)।
হযরত শীছ (আ)-এর বহু জ্ঞানগর্ভ ও মূল্যবান উপদেশ বর্ণিত রহিয়াছে (দা.মা.ই., ১১, ৮৫১)। তিনি বলিতেন, “আল্লাহকে সর্বদা স্মরণ করিবে। ন্যায়-অন্যায় বিচার করিয়া চলিবে। পিতা-মাতাকে সম্মান করিবে। তাহাদের সেবা-শুশ্রূষা করিবে। ভ্রাতৃত্বভাব রক্ষা করিবে। রিপুর বশীভূত হইয়া ক্রোধকে প্রশ্রয় দিবে না। অভাবগ্রস্ত ও দীন-দুঃখীকে মুক্ত হস্তে দান করিবে। সদয় ব্যবহার করিবে। পাপকার্য হইতে বিরত থাকিবে। বিপদাপদ, বিপর্যয় ও দুর্যোগে ধৈর্য ধারণ করিবে। আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীল হইবে। আল্লাহর করুণার জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার করিবে” (কাজী এ. এফ. মফিজ উদ্দীন আহমদ, কাছাছুল কুরআন, পৃ. ৭৭-৭৮)।
বাসস্থান
Encyclopaedia of Islam-এর নিবন্ধকার CL. Huart-এর বর্ণনামতে তিনি জীবনের অধিকাংশ সময় সিরিয়ায় কাটান। সেখানেই তিনি জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন বলিয়া একই বর্ণনা রহিয়াছে (E. J. Brills, First Encyclopaedia of Islam, vol. vii, 358)। কিন্তু এই বর্ণনা একেবারেই অমূলক ও ভিত্তিহীন। কারণ শীছ (আ) পিতার প্রিয়তম পুত্র ছিলেন। তাই তিনি সর্বদা আদম (আ)-এর সান্নিধ্যে থাকিয়া তাঁহার খিদমত করেন বলিয়া প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন উত্তর কালের বর্ণনামতে, একদা হযরত আদম (আ)-এর অসুখের সময় জান্নাতের তৈল ও যায়তুন ফল খাওয়ার জন্য তাহার বাসনা জাগিল। তিনি স্বীয় পুত্র শীছকে সায়না পর্বতে আল্লাহর নিকট হইতে তাহা চাহিয়া আনিবার জন্য প্রেরণ করিলেন। সেখানে আল্লাহ তাঁহাকে বলিলেন, তোমার পাত্র আগাইয়া ধর। অতঃপর মুহূর্তের মধ্যে উহা আদম (আ)-এর কাশিত জিনিসে পূর্ণ হইয়া গেল। অতঃপর আদম (আ) নিজের শরীরে উক্ত তৈল মালিশ করিলেন এবং কয়েকটি যায়তুন ফল খাইলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি সুস্থ হইয়া গেলেন (পূ, গ্র.)। এই ঘটনাই প্রমাণ করে যে, শীহ (আ) স্বীয় পিতা আদম (আ)-এর সান্নিধ্যে থাকিতেন। আর আদম (আ) মক্কা শরীফে বসবাস করেন, সেখানেই ইনতিকাল করেন এবং আবু কুবায়স পর্বতের পাদদেশে তাঁহাকে দাফন করা হয় (পূ. এ.; ইব্ন কাছীর, আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, ১খ, ৯৮)। ইহা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হযরত শীছ (আ) মক্কাতেই বসবাস করেন, সিরিয়ায় নহে। খ্যাতনামা ঐতিহাসিক ও সীরাত বিশারদ ইবনুল আহীর সুস্পষ্টভাবে এই মত ব্যক্ত করিয়া বলেন, তিনি মক্কায় বসবাস করিতেন এবং প্রতি বৎসর হজ্জ ও উমরা পালন করেন (ইবনুল আছীর, আল-কামিল, ১খ, ৪৭)। এতদ্ব্যতীত তাঁহার কর্মকাণ্ড দ্বারাও ইহা প্রমাণিত হয়। যেমন হযরত শীছ (আ)-ই প্রথম মাটি ও প্রস্তর দ্বারা কাবা শরীফ নির্মাণ করেন। ইতোপূর্বে সেখানে আদম (আ)-এর জন্য একটি তাঁবু ছিল যাহা আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের মাধ্যমে জান্নাত হইতে আনাইয়া সেখানে স্থাপন করাইয়াছিলেন (ইব্ন কুতায়বা, আল-মাআরিফ, পৃ. ১২)।
বিবাহ
ইব্ন ইসহাক-এর বর্ণনামতে স্বীয় ভগ্নী হাশূরার সহিত হযরত শীছ (আ)-এর বিবাহ হয় (দা.মা.ই., ১১খ, ৮৫০)। তখনকার নিয়ম ছিল হাওয়া (আ) একসঙ্গে একটি পুত্র ও একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিতেন। তাই এক গর্ভের পুত্রের সহিত অন্য গর্ভের কন্যার বিবাহ হইত (আছ-ছালাবী, কাসাসুল আম্বিয়া, পৃ. ৪৪-৪৫)।
ইনতিকাল
শেষ জীবনে হযরত শীষ (আ) রোগাক্রান্ত হইয়া পড়িলে স্বীয় পুত্র আশকে ডাকিয়া ওসিয়ত করেন। অতঃপর মক্কায়ই ৯১২ বৎসর বয়সে ইনতিকাল করেন এবং আবু কুবায়স পর্বতের গুহায় স্বীয় পিতা-মাতার পার্শ্বে তাঁহাকে দাফন করা হয় (ইবনুল আছীর, আল-কামিল, খ, ৪৭; দা, মা, ই., ১১খ, ৮৫০)।
আকৃতি-প্রকৃতি
দৈহিক অবয়ব ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়া তিনি ছিলেন অবিকল স্বীয় পিতা আদম (আ)-এর ন্যায় (দা. মা. ই., ১১খ, ৮৫১)। তবে আদম (আ) ছিলেন শশ্রুবিহীন, আর তিনি ছিলেন শত্রুমণ্ডিত (পূ. এ., পৃ. ৮৫০)।
সন্তান-সন্ততি
বাইবেলের বর্ণনামতে শীছ (আ)-এর বয়স ১০৫ (এক শত পাঁচ) বৎসর কালে তাঁহার পুত্র আনূশ জন্মগ্রহণ করে (Genesis, 5:6-৪)। আনুশ ছাড়াও তাঁহার আরও বেশ কয়েকজন পুত্র-কন্যা ছিল (ইব্ন কুতায়বা, আল-মাআরিফ, পৃ. ১৩)। কিন্তু ইতিহাস ও সীরাত গ্রন্থসমূহে তাহাদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায় না। পরবর্তী কালের সকল মানুষ শীছ (আ)-এরই বংশধর। কারণ আদম (আ)-এর দ্বিতীয় পুত্র হাবীল-এর অকাল শাহাদাত লাভের কারণে তাহার কোনও সন্তান-সন্ততি ছিল না। আর কাবীলের বংশধর সকলেই কাফির হওয়ার ফলে হযরত নূহ (আ)-এর মহাপ্লাবনে সকলেই ডুবিয়া মারা যায় (ইব্ন কাছীর, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১খ, ৯৮)।
ইনতিকালের সময় শীছ (আ) স্বীয় পুত্র আনূশকে ডাকিয়া হিদায়াতের সিলসিলা জারী রাখার জন্য ওসিয়ত করিয়া যান। ওসিয়ত অনুযায়ী তিনি আল্লাহর পয়গাম পৌঁছাইতে থাকেন। অতঃপর তদীয় পুত্র কীনান, অতঃপর তদীয় পুত্র মিহলাঈল তাহার স্থলাভিষিক্ত হন। কথিত আছে যে, পারস্যবাসীর ধারণামতে, মাহলাঈল সাত ইকলীমের বাদশাহ ছিলেন, সকল আদম সন্তানের বাদশাহ ছিলেন। তিনিই সর্বপ্রথম বৃক্ষ কাটিয়া কাঠের ব্যবহার শুরু করেন। তিনিই বিভিন্ন শহর এবং শহরের বাহিরে বড় বড় কিল্লা নির্মাণ করেন। তিনিই ছিলেন বাবিল ও সূর নগরীর প্রতিষ্ঠাতা। তিনিই শয়তানের অনুসারীদেরকে মারপিট করিয়া দূর-দূরান্তে তাড়াইয়া দেন। তাহারা পাহাড়-পর্বতে গিয়া বসবাস করিতে থাকে। তিনি একটি মুকুট বানাইয়াছিলেন, যাহা পরিধান করিয়া তিনি রাজকার্য পরিচালনা করিতেন। চল্লিশ বৎসর তিনি রাজত্ব পরিচালনা করেন (আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, ১খ, ৯৯; যায়নুল আবিদীন মীরাঠী, কাসাসুল কুরআন, পৃ. ৪২)। মিহলাঈলের পর তাহার পুত্র য়ারুদ এবং তাহার পর তৎপুত্র আখনূখ তথা ইদরীস (আ) এই দায়িত্ব প্রাপ্ত হন (পূ. এ.)।
আল-মুকান্না, যে ৭৮০ খৃ.-এর দিকে খুরাসানে নুবুওয়াতের দাবি করিয়াছিল, সে মনে করিত যে, আল্লাহর আত্মা হযরত আদম (আ) হইতে শীছ (আ)-এর মধ্যে স্থানান্তরিত হইয়াছিল (মুতাহার ইবন তাহির আল-মাকদিসী, কিতাবুল-খালক, Huart কর্তৃক অনূদিত ও সম্পাদিত, ৬খ, ৯৬-এর বরাতে স. ই. বি., ২খ, ৩৯৬)। এই ধারণাটি নসটিক (Gnostic= মর্মজ্ঞ) নামীয় একটি সম্প্রদায় হইতে বিস্তার লাভ করিয়াছে, যাহারা শীছীয় সম্প্রদায় এবং খৃস্টীয় ৪র্থ শতাব্দী হইতে ইহাদের অনুসারীদেরকে মিসরে দেখা যায় (পূ. এ.; দা, মা, ই., ১১খ, ৮৫১; বুরুস আল-বুসতানী সম্পা., দাইরাতুল-মাআরিফ, ১০৩, ৬৪৮)। ইহাদের নিকট “সাহীফায়ে শীছ-এর ভাষ্য” (Paraphrase of Seth) বিদ্যমান ছিল। সাতখানি সাহীফা ছিল শীছ (আ)-এর এবং অন্য সাতখানি তাহার পরবর্তীদের, যেগুলিকে তাহারা “আজনবী” (অপরিচিত) বলিত (Epiphanes, Hear, 5 : 39)। নসটিকদের নিকট Jaldabaoth-এর গ্রন্থ বিদ্যমান রহিয়াছে, যাহা শীছ (আ)-এর প্রতি আরোপ করা হয় (Epiphanes, পূ. এ., ৮ : ২৬)। হাররান-এর সাবীদের নিকট কয়েকখানি সাহীফা ছিল যাহা শীছ (আ)-এর প্রতি আরোপ করা হইত (E. J. Brills, First Encyclopaedia of Islam, Vol. vii, 385; দা. মা. ই., ১১খ, ৮৫১)।
গ্রন্থপঞ্জী : (১) ইবন কাছীর, আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া দারুল-ফিকর আল-আরাবী, আল-জীয়া (মিসর), তা. বি., ১খ, ৯৮-৯৯; (২) ঐ লেখক, কাসাসুল আম্বিয়া, আল-মারকাযুল-আরাবী আল-হাদীছ, মিসর তা. বি., পৃ. ৫৪-৫৬; (৩) আছ-ছালাবী, আরাইসুল-মাজালিস বা কাসাসুল আম্বিয়া, আল-মাকতাবা আল-কাসতুলিয়্যা ১২৮২ হি., পৃ. ৪৮-৫০; (৪) ইব্ন কুতায়বা, আল-মাআরিফ, দারুল-কুতুব আল-ইলমিয়া, বৈরূত ১ম সং, ১৪০৭/১৯৮৭, পৃ. ১২-১৩; (৫) ইবনুল আছীর, আল-কামিল ফিত-তারীখ, দারুল-কুতুব আল-ইলমিয়্যা, বৈরূত ১ম সং, ১৪০৭/১৯৮৭, ১খ, ৪৭; (৬) আল-মাসউদী, মুরূজুয-যাহাব, দারুল-আনদালুস, বৈরূত ৫ম সং, ১৯৮৩ খৃ., ১খ, ৪৭-৫০; (৭) কাযী যায়নুল আবিদীন সাজ্জাদ মীরাঠী, কাসাসুল কুরআন, মারকাযুল-মাআরিফ, দেওবানদ ১ম সং, ১৯৯৪ খৃ., পৃ. ৪১-৪২; (৮) ইঁদারা তাসনীফ ওয়া তালীফ কর্তৃক সম্পা, আনওয়ারে আম্বিয়া, চক আনারকলী, লাহোর ৫ম সং, ১৯৮৫ খৃ., পৃ. ১১-১২; (৯) বুতরুস আল-বুসতানী সম্পা., দাইরাতুল মাআরিফ, দারুল-মারিফা, বৈরূত তা, বি., ১০খ, ৬৪৭-৬৪৮; (১০) দা, মা. ই., লাহোর ১ম সং, ১৩৯৫/১৯৭৫, ১১খ, ৮৫০-৮৫১; (১১) সায়্যিদ কাসিম মাহমূদ সম্পা., ইসলামী ইনসাইক্লোপিডিয়া, শাহকার বুক ফাউণ্ডেশন, করাচী তা, বি., পৃ. ৯৮৪; (১২) সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা ২য় সং., ১৪০৮/১৯৮৭, ২২, ৩৯৫-৩৯৬; (১৩) কাজী এ. এফ. মফিজ উদ্দীন আহমদ, কাসাসুল কুরআন (বাংলা), ইসলামিয়া লাইব্রেরী, ঢাকা ১৯৬৬ খৃ., পৃ. ৭৮-৭৯; (১৪) The Holy Bible, Cambridge University Press, Genesis, Chapter, 4 : 25-26, 5: 3-4, 6-8, Page. 5-6; (32) E. J. Brills Encyclopaedia of Islam, Leiden 1987, Vol. vii, p. 3851
আবদুল জলীল