হত্যারহস্য – কণা বসুমিশ্র
সুখেনের মৃত্যুর খবর দিতে এসেছিল যে-যুবকটি, সে-ই গ্রামের মধ্যে অবস্থাপন্ন গৃহস্থ। থানার ও. সি. সন্তোষবাবু লোকটির এজাহার নথিভুক্ত করলেন। দু-তিনজন কনস্টেবলকে সঙ্গে নিয়ে চলে গেলেন সেই গ্রামে।
ছোট স্টিমার স্টেশন গোমেরীঘাট। স্টিমারের মাল ওঠানামার জন্য জলের ওপর ভাসে স্টিমারের সঙ্গেই চেন দিয়ে বাঁধা একটি ফ্ল্যাট। একজন সুখানী সেই ফ্ল্যাটের মালের চার্জে থাকে। কয়েকজন খালাসি থাকে। একজন সারেঙ ফ্ল্যাটের দিক নির্ণয় করে।
এই গোমেরীঘাটের পাশে মুদির দোকানের মালিক ছিল সুখেন। মোটামুটি শিক্ষিত বেকার যুবক। চাকরি জোটাতে না পেরে চলে এসেছিল গৌহাটি ছেড়ে।
গ্রামের শেষপ্রান্তে একটি মাঠের মধ্যে ছিল তার দোকান। কাছাকাছি সব চাষি, গরিব মানুষের বাস। চা-বাগানের মালবাবু, গুদামবাবুর টিনের ঘর। যাঁরা দু-চারদিনের জন্য ছুটি কাটাতে যান।
সুখেনের চালাঘরের পাশে এসে ও. সি. দেখলেন রীতিমতো ভিড়। টিনের দরজাটা খোলাই ছিল। কিন্তু গাঁওবুড়া, মানে মোড়ল, দরজা আগলে রেখেছে।
বালিশের ওপর পড়ে রয়েছে সুখেনের মৃতদেহ। ও ডানপাশ ফিরে শুয়েছিল। সেই অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ওর। সুখেন বিষ খেয়েছে। ও আত্মহত্যা করেছে, এটাই গ্রামের লোকের ধারণা।
ইনকোয়েস্ট রিপোর্ট তৈরি করলেন ও. সি.।
প্রথম রিপোর্ট দিয়েছিল যে-যুবকটি, সেই এজাহারকারী আবার এসে উপুড় হয়ে পড়ল সন্তোষবাবুর পায়ের ওপর। সুখেন ওর অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিল। বন্ধুর মৃত্যু সে সহ্য করতে পারছে না। সে বারবারই বলতে লাগল, ‘হুজুর, আপনার তদন্ত যেন জোরদার হয়।’
ধ্মকে ওঠেন সন্তোষবাবু : ‘ধৈর্য ধরো। আমি যা জানতে চাই তার জবাব দাও। তোমরা বলছ, ওর অনেক টাকা ধার হয়েছিল। তা ওর পাওনাদারদের নাম-ঠিকানাগুলো বলতে পারো?’
‘হ্যাঁ, বাবু।’ সুখেনের বন্ধু রাজেন কান্না জড়ানো গলায় বলল, ‘এই গাঁয়েরই লোক। ওই তো, গাঁওবুড়ার কাছেই সে অনেক টাকা ধার করেছিল।’
ও. সি. তাকালেন মোড়লের দিকে। খুঁটিয়ে দেখলেন ওর আপাদমস্তক।
গাঁওবুড়ার বয়স হয়েছে। একমাথা পাকা চুল। মুখ-ভরতি খোঁচা-খোঁচা দাড়ি। ওর চোখদুটো জবাফুলের মতো লাল। জলে ভরা।
গাঁওবুড়া বলল, ‘আমি ওকে খুব স্নেহ করতাম, বাবু। সুখেন আমার ঘরের ছেলের মতো ছিল।’ কথা বলতে-বলতে গলা ধরে এল গাঁওবুড়ার।
এই বুড়োমানুষটির দিকে তাকিয়ে সন্তোষবাবুরও খুব মায়া হল।
‘কে-কে আছেন আপনার ঘরে?’ উনি প্রশ্ন করলেন।
‘আমার বউ আছে, মেয়ে আছে, বাবু।’
‘কতদিন থেকে সুখেনের সঙ্গে পরিচয়?’
‘যতদিন থেকে সে এখানে দোকান করেছে। মানে তিন বছর।’
‘খুব যাতায়াত ছিল বুঝি?’
‘তা তো ছিল।’
‘কাল রাতে আপনার বাসায় গিয়েছিল?’
‘না। ও রোজই যেত। তবে গত কয়েকদিন থেকে মোটেই যায়নি। কাল রাত্তিরে আমার ঘরে খেতে ডাকি। তাও আসেনি।’
ডায়েরিতে নোট করলেন ও. সি.।
‘আপনি টাকার জন্যে ওকে তাগাদা দিতেন?’
‘তা বাবু, মাঝে-মাঝে দিতাম। গরিব মানুষ। খেত-খামার করে খাই। টাকার তো দরকার, হুজুর। তা সুখেন—’ লোকটি থামল।
ও. সি. তীক্ষ্নদৃষ্টিতে তাকালেন : ‘বলুন।’
গাঁওবুড়া বলল, ‘কয়েকদিন ধরে সুখেন টাকার জন্যে বোধহয় খুব ঘুরছে। এই সোমবার সকালে সে সব টাকা শোধ করবে বলেছিল।’
‘মানে আজ? আজই তো সেই সোমবার।’
গাঁওবুড়া মাথা নাড়ল।
সুখেনের দোকানঘর তছনছ করলেন সন্তোষবাবু। টাকাপয়সার কোনও হদিশ মিলল না। তবে কি আত্মহত্যাই করল সুখেন? কিন্তু সন্তোষবাবুর ধারণা কেউ তাকে খুনই করেছে।
এজাহারকারীকে জিগ্যেস করলেন সন্তোষবাবু, ‘কাল কত রাত্তিরে সুখেন ফিরেছিল জানো?’
‘সঠিক বলতে পারব না, বাবু। তবে মনে হয়, অনেক রাত্তিরে।’
‘তুমি কি কাল রাত্তিরে ওর কাছে এসেছিলে?’
‘না, বাবু। ভোরবেলা এসেছিলাম।’
‘তবে কী করে জানলে অনেক রাত্তিরে ও ফিরেছে?’
‘ফ্ল্যাটের ওই খালাসি বলছিল, সুখেন তাদের ফ্ল্যাটে গিয়েছিল। তাড়ি খেয়ে ফিরেছে অনেক রাত্তিরে।’
‘খালাসিকে ডাকো।’
হঠাৎ সন্তোষবাবুর নজরে পড়ল সুখেনের চাবিটার দিকে। চাবিটা পড়ে রয়েছে চৌকির তলায় একটা অন্ধকার কোণে। আশ্চর্য! এতক্ষণ টর্চ জ্বেলে সারা ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজেও ক্যাশবাক্সের চাবিটা পাননি সন্তোষবাবু। চাবি-বন্ধ ক্যাশবাক্সটা সুখেনের মাথার কাছেই রয়েছে।
সন্তোষবাবু বাক্সটা খুললেন। একটা নোটের বান্ডিল। উনি গুনে দেখলেন, পুরোপুরি দু-হাজার টাকা।
তবে কি যে ওকে খুন করেছে, সে টাকাটার কথা জানে না? অথবা, ক্যাশবাক্স ভাঙার কথা তার মনে হয়নি কেন? চাবিটা খুঁজে পাওয়াও কি তার পক্ষে খুব অসম্ভব ছিল?
জাহাজের খালাসিরাও নাকি তাকে ভালোবাসত খুব। গ্রামের মানুষেরা সবাই। তার কোনও শত্রু ছিল না। অথচ সে খুন হল। টাকার লোভেও খুন করল না খুনি। তবে সুখেন খুন হল কেন?
ফ্ল্যাটের খালাসি এই ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়েছিল। সে এগিয়ে এসে দাঁড়াল ও. সি.-র সামনে।
‘কাল কত রাত্তিরে সুখেন তোমার কাছ থেকে ফিরেছে?’
‘রাত গোটা দুয়েক।’
‘খুব তাড়ি খেয়েছিল?’
‘খুব না।’
‘সেই তাড়ির বোতলটা আছে?’
‘হ্যাঁ, হুজুর।’
‘নিয়ে এসো।’
বোতলের তলায় সামান্য কিছু তলানি পড়েছিল। পরীক্ষার জন্য ওটা সঙ্গে নিয়ে নিলেন সন্তোষবাবু।
ময়না তদন্ত হল সুখেনের লাশটির। বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে। তাড়িতেও কিছু পাওয়া যায়নি। তার স্টমাকে ফলিডল পাওয়া গেছে। কে তাকে ফলিডল খাওয়াল? কেন খাওয়াল? সে যদি নিজে খেয়ে থাকে, তো কেন খেল? সেই ফলিডলের শিশিটাই বা কোথায়? হত্যাকারী বোকা সন্দেহ নেই। সন্তোষবাবুর মনে হল।
তদন্ত করতে-করতে পরিশ্রান্ত হলেন ও. সি.। ঘটনার কোনও সূত্রই ধরতে পারলেন না। সুখেনের ধারে-কাছে কোথাও কোনও ফলিডলের শিশি ছিল না। অথচ সে ফলিডল খেল।
স্টিমারের ফ্ল্যাটটা সার্চ করা হয়েছে। খালাসি, সারেঙ কেউই পুলিশের জেরার হাত থেকে রেহাই পায়নি। কোনও সূত্র ধরতে পারছেন না ও. সি.।
হঠাৎই একদিন ও. সি. এলেন গাঁওবুড়ার বাড়িতে। যদিও এর আগেও এসেছিলেন, কিন্তু গাঁওবুড়ার মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়নি তাঁর। সে থাকে মঙ্গলদই। শিক্ষিতা যুবতী। মঙ্গলদই মহকুমার কোনও একটি প্রাইমারি স্কুলে পড়ায়। সপ্তাহের শেষে গাঁয়ে আসে।
রোববার খুব ভোরে গাঁওবুড়ার দরজায় টোকা মারলেন ও. সি.।
গাঁওবুড়ার মেয়ে লপং-এর চোখ-মুখের ভাব সন্তোষবাবুকে চিন্তিত করল। লপং-এর মধ্যে কেমন একটা মনমরা ভাব। বেশ কয়েকদিন না ঘুমিয়ে চোখদুটো বসে গেছে। ও. সি.-কে দেখেই লপংও যেন চমকে উঠল, ভয়-পাওয়া চোখে বলল, ‘আমাকেও দরকার আপনার?’
‘সুখেনকে তুমি ভালোবাসতে?’
বিব্রত বোধ করল লপং।
‘আমার কথার জবাব দাও।’ সন্তোষবাবু সহানুভূতির সুরেই বললেন কথাটা।
লপং-এর ঠোঁট কেঁপে উঠল। দু-চোখে জলের ধারা বয়ে চলল। জবাবটা গাঁওবুড়াই দিল।
‘সুখেন লপংকে শাদি করবে বলেছিল, হুজুর।’
‘এ-খবরটা তুমি দাওনি কেন?’ সন্তোষবাবু ধমকালেন গাঁওবুড়াকে।
গাঁওবুড়া মাথা চুলকে বলল, ‘এই খবরের সঙ্গে ওর মৃত্যু-রহস্যের কী যোগ আছে, বাবু?’
সন্তোষবাবু কোনও উত্তর দিলেন না। উনি রিপোর্ট লিখে চললেন।
‘সুখেনের সঙ্গে তোমার কতদিন ধরে ঘনিষ্ঠতা চলছিল?’ সন্তোষবাবু পুলিশি চোখে তাকালেন।
গাঁওবুড়াই জবাব দিতে যাচ্ছিল, ও. সি. চোখের ইশারায় তাকে থামতে বললেন।
লপং-এর সঙ্গে কথা বলতে-বলতে ও. সি.-র হঠাৎ নজরে পড়ল বন্ধুকে। যে গত একমাস ধরে বন্ধুর মৃত্যুর জন্য শোকে কাতর, এই মুহূর্তে উনি আবিষ্কার করলেন, তার চোখে বাজপাখির ছায়া।
এই কাহিনি যখন ঘটেছিল, তখনও ট্রেনিং দেওয়া কুকুরের মাধ্যমে অপরাধীকে সব্যস্ত করার রেওয়াজ হয়নি।
ও. সি.-র চোখদুটো বারবার ঘুরতে লাগল সুখেনের বন্ধুটির ওপরে।
‘এ-বাড়িতে তোমার কতদিন আসা-যাওয়া?’ ও. সি.-র প্রশ্ন ঘুরে গেল সুখেনের বন্ধুর দিকে। থতমত খেল যুবকটি, আমতা-আমতা করে কী একটা বলতে যাচ্ছিল। ওর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে লপং তাড়াতাড়ি বলল, ‘সুখেনের ও বন্ধু। সুখেনের সঙ্গেই এ-বাড়িতে আসত।’
ও. সি. তির্যক চোখে তাকালেন লপং-এর দিকে। তারপর ফের প্রশ্ন করলেন সুখেনের বন্ধুকে, ‘কতদিন থেকে সুখেনের সঙ্গে তোমার মনোমালিন্য চলছিল, বলো।’
‘সুখেনের সঙ্গে?’ এবার যেন ওরা দুজনেই চমকে গেল—লপং আর সুখেনের বন্ধুটি।
লপং কী বলতে যাচ্ছিল, ও. সি. হাতের ইশারায় তাকে থামতে বললেন। তারপর ফের প্রশ্নটা করলেন রাজেনকে। রাজেনের মুখটা অ্যানিমিক রুগির মতো ফ্যাকাসে দেখাল। ও ভয় পাওয়া চোখদুটো লুকোতে গিয়েও পারল না। ধরা-পড়া গলায় বলল, ‘তেমন কিছু না।’
‘উত্তরটা ঠিকমতো হল না।’ ও. সি.-র কড়া গলা। লপং ভেতরে যাচ্ছিল। ও. সি. কড়া গলায় বললেন, ‘তুমি এখানে দাঁড়াও।’
‘আপনার জন্যে চা করতে যাই, স্যার।’
‘না, না, চায়ের দরকার নেই। তুমি এইখানেই বোসো। তোমার আরও কিছু প্রশ্নের জবাব দেওয়া বাকি।’
‘আচ্ছা, রাজেন!’ সন্তোষবাবু তাকান সুখেনের বন্ধুর দিকে : ‘পুলিশের চোখে তুমি কিন্তু ধুলো দিতে চেষ্টা কোরো না। যা বলবে সত্যি বলবে।’
রাজেন মাথা নাড়ল।
সন্তোষবাবু বললেন, ‘লপং-এর সঙ্গে তুমি কতদিন থেকে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করছ?’
‘লপং-এর সঙ্গে?’ গাঁওবুড়া যেন আকাশ থেকে পড়ল। সুখেনের বন্ধু রাজেনের সঙ্গে মুহূর্তে চোখাচোখি হল লপং-এর।
রাজেন রাগী চোখে তাকাল। বলল, ‘এসব কি আপনার তদন্তের মধ্যে পড়ে?’
‘নিশ্চয়ই।’ সন্তোষবাবু আড়চোখে তাকালেন লপং-এর দিকে। লপং-এর চোখদুটো মৃত মানুষের মতো দেখাচ্ছিল। রুক্ষ গলায় সন্তোষবাবু বললেন, ‘রাজেন, আমি কিন্তু আমার কথার উত্তর পাইনি।’
‘যদি না বলি, তাহলে আপনি কী করতে পারেন?’
ওর কথার জবাব না দিয়ে সন্তোষবাবু রিপোর্ট লেখায় মন দিলেন।
‘লপং, তুমি এবারে বলো তো, তোমাকে কেন্দ্র করে সুখেন ও রাজেনের মধ্যে কতদিন থেকে তিক্ত সম্পর্ক চলছিল?’
রাজেন ধূর্ত শেয়ালের মতো তাকাল সন্তোষবাবুর দিকে। বলল, ‘কোনওদিনই না। সুখেনের সঙ্গে আমার তিক্ত সম্পর্ক ছিল না।’
সন্তোষবাবু ধমকে বললেন, ‘তুমি থামো। প্রশ্নটা আমি লপংকে করেছি।’
লপং-এর চোখদুটো হঠাৎ জলে ভরে উঠল। ঠোঁট কাঁপতে থাকল। ও. সি. একটা সিগারেট ধরিয়ে ফের প্রশ্ন করলেন রাজেনকে, ‘ঘটনার দিন রাত্রে তুমিই বন্ধুকে মদ বলে ফলিডল খাইয়েছিলে।’
‘তার প্রমাণ?’ রাজেনের গলার স্বর খাদে নেমে গেল।
সন্তোষবাবু বললেন, ‘সুখেনের স্টমাকে ফলিডল পাওয়া গেছে। ময়না তদন্তে তাই বলছে।’
‘কে তাকে ফলিডল খাওয়াল?’ রাজেন স্মার্ট হতে চাইল।
ও. সি. গোয়েন্দার ভঙ্গিতে পায়চারি করতে-করতে বললেন, ‘নদীর ধারে তুমি যে-ফলিডলের শিশিটা ফেলে রেখে এসেছিলে, তাতে আঙুলের ছাপ রয়েছে।’
ভয়ার্ত চোখে রাজেন তাকাল : ‘আমার আঙুলের ছাপ পেলেন কোথায় আপনি? আর ওটা যে আমার আঙুলেরই ছাপ তার প্রমাণ কী?’
সবাইকে অবাক করে দিয়ে ও. সি. এবারে গাঁওবুড়াকে বললেন, ‘সুখেন যখন টাকা ধার নেয়, তখন সাক্ষি হিসাবে রাজেনের আঙুলের টিপসই ছিল তোমার খাতায়।’
ও. সি. তাঁর হাতের পোর্টফোলিও থেকে লাল খেরোর খাতাখানা বের করলেন, যেটা তিনি ঘটনার দিনই গাঁওবুড়ার কাছ থেকে নিয়েছিলেন। উনি পকেট থেকে বের করলেন আর-একখানা ফটো, ফটোটা বোতলের গায়ের আঙুলের ছাপ।
রাজেন তবু গর্জে উঠল, ‘শুধু একটা আঙুলের ছাপ দিয়েই আপনি, মশাই, বাহাদুরি দেখাচ্ছেন?’
ও. সি. ঠোঁট ভেঙে হাসলেন, ‘তোমার বাকি আঙুলের ফটোগুলোও নেওয়া হবে। তার চেয়েও বড় প্রমাণ লপংকে লেখা, এই দ্যাখো, তোমার সেই চিঠি, যেটা পোস্ট অফিসে মার গিয়েছিল। এই চিঠিই কি তোমার সমস্ত ষড়যন্ত্রের প্রমাণ নয়?’
সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল হলদে ছোপধরা একটা পুরোনো খামের দিকে।
লপং তখন মাথা নিচু করে বসে রয়েছে। ও. সি. বললেন, ‘ছিঃ লপং, সুখেনকে বিয়ে না হয় না-ই করতে, কিন্তু রাজেনের এতবড় একটা জঘন্য কাজে তুমি কী করে মত দিয়েছিলে ভাবা যায় না!’
রাজেনের গলার স্বর নরম হয়ে এল। বলল, ‘আমাদের দুজনকে হাজতের একই ঘরে রাখুন, ,বাবু।’
‘বটে! বটে!’ ক্রুদ্ধ চোখে তাকালেন ও. সি. ওদের দুজনের দিকে।
গাঁওবুড়া মেয়েকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ল।
ক্রাইম
এপ্রিল, ১৯৮১