হক-জিন্না বিরোধ
মনে-প্রাণে খাঁটি বাঙালী আর উদার স্বভাব ফজলুল হক শীঘ্র তাঁর ভুল বুঝতে পারেন এবং পাকিস্তান প্রস্তাব যে অবাস্তব এবং বাংলাদেশের তথা ভারতের স্বার্থবিরোধী তা উপলব্ধি করেন। তিনি সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বেষ্টনী থেকে নিজেকে মুক্ত করবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তাঁর কয়েকটি ভাষণ ও কার্যাবলি থেকে আমরা তাঁর মনের গতিপ্রকৃতি বুঝতে পারবো। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পরে ১২ আগস্ট (১৯৪১ খ্রি) বাংলার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী ফজলুল হক একটি শোক প্রস্তাব উত্থাপন করে এক অনবদ্য ভাষণ দেন।১ তিনি বলেন: শব্দের মালা গেঁথে রবীন্দ্রনাথের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা সহজ কথা নয়। গত কয়েকদিন ধরে সমগ্র পৃথিবীর অগণিত মানুষ রবীন্দ্রনাথের প্রতি তাঁদের গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। কিন্তু আমি বাঙালী হিসাবে বলতে গিয়ে অনুভব করছি যে, আমাদের পক্ষে এই তথ্য কখনই ভুলে যাওয়া সম্ভব নয় যে রবীন্দ্রনাথ এই প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন, আমাদের ভাষায় কথা বলেন এবং এই মহান ব্যক্তি বাংলা সাহিত্যকে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষা ও সাহিত্যের মধ্যে একটি উচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি আজ আমাদের মধ্যে নেই। কিন্তু তাঁর রচনাবলি কেবলমাত্র গ্রন্থের মধ্যেই আবদ্ধ থাকবে না, তাঁর লক্ষ লক্ষ দেশবাসীর অন্তরেও তা জীবন্ত থাকবে। ঠিক এই মুহূর্তে আমার কবি টেনিসনের In Memoriam কাব্যের বন্ধুর মৃত্যু উপলক্ষ্য করে রচিত সেই সুন্দর লাইনগুলির কথা মনে পড়ছে, যেখানে তিনি বলছেন:
We feel it almost half a sin to put in words the grief we feel, for words like nature half reveal and half conceal the sorrow within.
আমরা যতই শ্রদ্ধা নিবেদন করি-না-কেন তবুও মনে হবে যেন ঠিকমত শ্রদ্ধা নিবেদন করা হল না। তিনি মহান ছিলেন, একথা বলাই যথেষ্ট নয়। তিনি কবি হিসাবে মহান ছিলেন। তিনি দার্শনিক হিসাবে মহান ছিলেন। তিনি শিক্ষাবিদ হিসাবে মহান ছিলেন। তিনি মানবদরদী হিসাবে মহান ছিলেন। তিনি তাঁর গানের মধ্যে মহান ছিলেন। তিনি তো কেবল মাত্র কবিতাই রচনা করেনি, তাঁর সমগ্র জীবনই ছিল কবিতা। আমরা বাঙালি হিসাবে অনুভব করি যে, তিনি তো কেবলমাত্র বাংলাদেশের বা ভারতের ছিলেন না, তিনি ছিলেন সমগ্র সভ্য মানবজাতির। এই বিষয়ে যাঁদের দক্ষতা আছে তাঁরা আরও অনেক কিছু আলোচনা করবেন। আমি শুধু এই কথাই বলতে চাই যে, এখানে তাঁর মহাপ্রয়াণে যে-গভীর শোক আমরা প্রকাশ করছি, তা ব্যক্তি হিসাবে করছি না, কোন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসাবেও করছি না, মহান বাঙালি জাতির অধিবাসী হিসাবেই করছি। আমরা আজ গর্বিত যে আমাদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের মত একজন ব্যক্তি ছিলেন যাঁকে সমগ্র সভ্য জগৎ শ্রদ্ধা নিবেদন করে।২
ফজলুল হকের এই ইংরেজি ভাষণ থেকে কিছু অংশ এখানে উদ্ধৃত করা হল:
…Speaking as a Bengalee, belonging to the province which gave Rabindra Nath birth, speaking the very language which Rabindra Nath spoke, it is impossible to lose sight of the fact that the great man who earned for the Bengali literature one of the highest positions in the languages and literatures of the world is no more with us, and that all that now lives are his works enshrined not merely in books but in the hearts of millions of his countrymen. …I hope that the few words which I have been privileged to speak on this occasion will be taken to be indicative of our deep sense of sorrow not as individuals, not as members of a community but as members of the great Bengalee race who are proud today that we had in our midst one like Rabindra Nath to whom the whole world, whether he was alive or whether as now he was not alive, the whole of the cultured humanity readily pays homage.৩
একথা মনে রাখা দরকার যে, বাংলার মুসলমান রাজনীতিবিদদের মধ্যে ফজলুল হকই সর্বপ্রথম মহান বাঙালি জাতির অস্তিত্বের কথা মনে রেখে রবীন্দ্রনাথের অবদান গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। এইভাবে অনেকদিন আগে ফজলুল হক বাঙালি সংস্কৃতির যে মূলধারাটি তুলে ধরেন, কয়েক বছর আগে তারই বলিষ্ঠ প্রকাশ ঘটে পূর্ববঙ্গে ভাষা আন্দোলনের মধ্যে ও রবীন্দ্রনাথের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে। সংস্কৃতি সম্পর্কে এই সুস্থ চেতনা ফজলুল হককে সাম্প্রদায়িক শিবির থেকে দূরে টেনে নিয়ে যায়।
কি অবস্থায় ফজলুল হক জিন্না ও মুসলিম লিগ বিরোধী হন? ফজলুল হক নিজেই তা বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে ফজলুল হক ন্যাশন্যাল ডিফেন্স কাউন্সিলের সদস্য হন। তখন থেকেই প্রকাশ্যে হক-জিন্না বিরোধের সূত্রপাত হয়। জুলাই মাসের প্রারম্ভে ভাইসরয় বাংলার গভর্ণরের মারফত ফজলুল হককে মুখ্যমন্ত্রীরূপে ডিফেন্স কাউন্সিলের সদস্যপদ গ্রহণ করে বাংলাদেশের প্রতিনিধি করতে আমন্ত্রণ জানান। তিনি সম্মত হন। কারণ তিনি অনুভব করেন, এ তাঁর কর্তব্য। ডিফেন্স কাউন্সিলের সদস্যদের নামের তালিকা প্রকাশিত হবার পর মুসলিম লিগের প্রেসিডেন্ট জিন্না একটি বিবৃতিতে বলেন, লীগের যেসব সভ্য ডিফেন্স কাউন্সিলের সদস্য পদ গ্রহণ করেছেন তাঁদের আচরণ খুবই আপত্তিকর এবং তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবলম্বনের কথা তিনি চিন্তা করছেন। তৎক্ষণাৎ ফজলুল হক একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে প্রকৃত অবস্থা ব্যাখ্যা করে বলেন, মুখ্যমন্ত্রীরা তাঁদের পদের জন্য মনোনীত হন এবং যতদিন পর্যন্ত তাঁরা প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন ততদিন পর্যন্ত ভাইসরয়কে অগ্রাহ্য করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। এই ব্যাখ্যায় জিন্নাপন্থীরা খুশী হননি। জিন্নার বিবৃতি মুসলমানদের মনে ফজলুল হক ও অন্যান্যদের সম্পর্কে ভুল ধারণা সৃষ্টি করে এবং তাঁরা লিগ সদস্যদের ডিফেন্স কাউন্সিল থেকে পদত্যাগ দাবি করেন। ৩০ জুলাই (১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ) হায়দ্রাবাদ থেকে জিন্না একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলেন, শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য ডিফেন্স কাউন্সিলের লিগ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবলম্বন করা হবে। ২৫ আগস্ট একটি টেলিগ্রামে এবং ২৬ আগস্ট একটি পত্রে সারা ভারত মুসলিম লীগের সম্পাদক লিয়াকৎ আলি খান ফজলুল হককে ওয়ার্কিং কমিটির সিদ্ধান্ত জানান। তাতে তাঁকে ডিফেন্স কাউন্সিলের সদস্যপদ ত্যাগ করতে বলা হয়। ৮ সেপ্টেম্বর লিয়াকৎ আলি খানের নিকট লিখিত এক দীর্ঘপত্রে ফজলুল হক জিন্নার অগণতান্ত্রিক আচরণের তীব্র সমালোচনা করেন।৪ তিনি কী অবস্থায় ডিফেন্স কাউন্সিলের সদস্য হন তা বিশদভাবে এই পত্রে আলোচনা করেন। ফজলুল হক লেখেন, যেভাবে জিন্না ওয়ার্কিং কমিটিকে প্রভাবান্বিত করে তাঁদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন তা নিয়মতন্ত্র বিরোধী কাজ বলে গণ্য হবে। মুসলিম লিগের মাদ্রাজ প্রস্তাবে ভুল পথ অনুসরণকারী সভ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবলম্বনের জন্য জিন্নাকে অবাধ ক্ষমতা দেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও সদস্যদের কাছ থেকে কোন ব্যাখ্যা না শুনে এবং তাদের সিদ্ধান্তের পক্ষে যেসব তথ্য ও যুক্তি রয়েছে তা বিবেচনা না-করে একতরফা রায় দেওয়া অনুচিত হয়েছে। এই সাধারণ নিয়তান্ত্রিক অধিকার প্রতিটি ব্যক্তিই দাবি করতে পারেন। কেবলমাত্র বিশেষ জরুরি অবস্থায় এই নিয়ম লঙঘন করা যেতে পারে। কিন্তু বর্তমান ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করা চলে না। সুতরাং, জিন্নার এই সিদ্ধান্ত ওয়ার্কিং কমিটিতে পাস করা অর্থহীন হয়েছে। অন্য কোনো পথ না-থাকায় ওয়ার্কিং কমিটি জিন্নার কাজে সম্মতি জ্ঞাপন করে। জিন্নার প্রস্তাব সমর্থন না-করলে তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করা হত। ওয়ার্কিং কমিটি এর জন্য প্রস্তুত ছিল না। এই কারণে ডিফেন্স কাউন্সিল থেকে সদস্যদের পদত্যাগ দাবি করে প্রস্তাব গৃহীত হয়।৫
এই বিষয়ে জিন্নার আচরণ আলোচনা করা প্রয়োজন। ২১ জুলাই (১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ) জিন্না বোম্বের গভর্ণর মারফত ভাইসরয়ের কাছ থেকে একটি সংবাদ পান। তাতে বলা হয়, মুখ্যমন্ত্রীদের ডিফেন্স কাউন্সিলের সদস্য হবার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। লিগ সদস্যদের মুখ্যমন্ত্রীরূপে মনোনীত করা হয়েছে কি জনপ্রতিনিধিরূপে গ্রহণ করা হয়েছে, এই নিয়ে হয়তো বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই, সদস্যদের নামের তালিকা প্রকাশের অন্তত একদিন পূর্বে জিন্না সব জানতে পারেন। সুতরাং তাঁর দায়িত্ব ছিল সদস্যদের টেলিগ্রাম বা টেলিফোন করে জানানো যে, তাঁরা যেন অবিলম্বে ডিফেন্স কাউন্সিলের সদস্যপদ ত্যাগ করেন। একথাও তিনি বলতে পারতেন, তাঁরা পদত্যাগ না করলে তিনি তাঁদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনবেন। কিন্তু জিন্না এসব কিছুই করেননি। তিনি সদস্যদের নাম প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। তারপর সরোষে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবলম্বনের কথা ঘোষণা করেন। এমনকী সাধারণ ভদ্রতা অনুযায়ীও জিন্নার উচিত ছিল এই সিদ্ধান্ত নেবার পূর্বে সদস্যদের সতর্ক করে দেওয়া। তিনি যে-ব্যবস্থা অবলম্বন করেন তাতে তাঁদের এক অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলেন। তাঁদের অবস্থা বুঝিয়ে বলবার কোন সুযোগ তিনি দেননি। প্রকাশ্যে নিজের ক্ষমতা জাহির করতেই তিনি উদগ্রীব ছিলেন। তাই একটি সাধারণ ঘটনা সাম্প্রতিককালের মুসলিম ভারতের ইতিহাসের একটি জটিল রাজনৈতিক সমস্যায় পর্যবসিত হয়।৬
ফজলুল হক মনে করেন, ডিফেন্স কাউন্সিলের সদস্য হওয়া মুসলিম লীগের নীতি বিরোধী নয়। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম লিগ ভাইসরয়ের প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে, কারণ তাতে দেশীয় রাজ্যসমূহ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নিয়ে সম্প্রসারিত কাউন্সিল গঠনের কথা ছিল। কিন্তু বর্তমানের ডিফেন্স কাউন্সিল দেশীয় রাজ্যসমূহ ও প্রদেশগুলির প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত হয়। জিন্না দাবি করেন, মুসলিম লিগের সদস্যরা মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরূপে মনোনীত হন। কিন্তু ফজলুল হক বলেন, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীরূপেই সদস্য পদ লাভ করেন। প্রসঙ্গত ফজলুল হক একথাও স্মরণ করিয়ে দেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হবার পর থেকেই তিনি সরকারি ও বেসরকারি ক্ষমতা অনুযায়ী বাংলাদেশের অধিবাসীদের যুদ্ধ প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করতে অনুপ্রাণিত করেন। এইজন্য তিনি নিজে উদ্যোগী হয়ে অর্থ সংগ্রহ করেন। অনেক জনসভায় ও রেডিওতে তাঁকে ভাষণও দিতে হয়। যুদ্ধ প্রচেষ্টায় সাহায্যের জন্য যেসব সংস্থা গঠিত হয় তার প্রধান পদও তিনি অলঙ্কৃত করেন। কিন্তু জিন্না কখনই এইসব কাজে অসম্মতি প্রকাশ করেননি। বরঞ্চ ভারতের সর্বত্র প্রখ্যাত মুসলিম লীগ নেতাদের এইসব কাজ করতে তিনি অনুমতি দেন। যুদ্ধের প্রয়োজনে ফজলুল হক যেসব দায়িত্ব পালন করেন তার তুলনায় ডিফেন্স কাউন্সিলের সদস্য হওয়া মোটেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। বাংলাদেশে সহযোগিতা করার এতগুলি দৃষ্টান্ত থাকা সত্ত্বেও, এখন কেন্দ্রে ভারত সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতা করতে বলা যে অসংগত তা সহজেই বোঝা যায়। তাই ফজলুল হক জিন্নার আচরণ অযৌক্তিক মনে করেন।৭
জিন্নার বিবৃতি পাঠ করে এই ধারণা হয়, ফজলুল হক ডিফেন্স কাউন্সিলের সদস্য পদ গ্রহণ করে মুসলিম স্বার্থ বিরোধী কাজ করেন এবং মুসলিম ভারতকে দ্বিধাবিভক্ত করেন। ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি অথবা উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের বাধিত করবার উদ্দেশ্যেই তিনি এই পদ গ্রহণে সম্মত হন। তাই তিনি বেশিরভাগ মুসলমানদের সমর্থন থেকে বঞ্চিত হন। ফজলুল হক এইসব ভিত্তিহীন অভিযোগের উত্তর দিয়ে বলেন, কলকাতার কিছু সংখ্যক অবাঙালি অধিবাসী ও কারখানার অবাঙালি শ্রমিক বাদ দিলে বাঙালি অধিবাসী মুসলমানদের আচরণে এমন কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি যা থেকে সিদ্ধান্ত করা যায় তিনি তাঁদের দ্বারা নিন্দিত হন। উপরন্তু বাংলার বাইরেও অনেকে তাঁকে সমর্থন করেন। ফজলুল হক লেখেন:
I do not also admit that my conduct in accepting a membership of the Defence Council, has the disapproval of the majority of the Moslem Community of India. Except for a few non-Bengali residents in Calcutta and a few non-Bengali workers in the mills, I do not find any indications that the Moslems of Bengal, as such, are in a mood to condemn my membership of the Defence Council. As regards public opinion outside my Province, I find that there is a large volume of public opinion in my favour. A friend from Lucknow has sent me a long letter which shows that it is not quite correct to say that the whole Urdu Press is supporting Mr. Jinnah. There are numerous Urdu papers who are strongly opposing Mr. Jinnah’s dictatorial policy, and have no faith in the Qaid-i-Azam.
I have also received letters from members of Jamait-ul-Ulema both in Bengal and outside, who have strongly supported me and advised me to resign the membership of the Defence Council. As a matter of fact, I have been flooded with letters and telegrams which prove conclusively that I have a strong volume of public opinion behind me supporting my action in accepting membership of the Defence Council.৮
সুতরাং ডিফেন্স কাউন্সিল থেকে পদত্যাগ করার যুক্তিসংগত কোনো কারণ ছিল না। তবুও ফজলুল হক অনুভব করেন, অন্যসব মুখ্যমন্ত্রীরা যখন পদত্যাগ করেছেন তখন এর সদস্য থাকার অর্থই হবে ভারতের মুসলমানদের বিভক্ত করা। এই অবস্থায় তাঁর পক্ষে সদস্য থাকা সম্ভব নয়। তাই তিনি পদত্যাগ করেন। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, এই বিষয়ে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী স্যার সিকন্দর হায়াৎ খানের সঙ্গে তাঁর মতপার্থক্য আছে। ফজলুল হক লেখেন:
In this respect the reasons for my resignation are different from those of Sir Sikandar Hyat Khan. He is alleged to have resigned because he felt convinced that he had acted under a misconception of facts; I resign because although I am convinced I was perfectly right in accepting membership of the council, my continuance in the council would jeopardise the interest of the Community. Sir Sikandar feels he was wrong and has rectified a mistake; I feel I was right, but I cannot continue to be a member in view of possible consequences.৯
ফজলুল হক পরিষ্কার করে বলেন, মুসলিম ভারতের ঐক্যের স্বার্থেই তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। জিন্নার মতামত গ্রহণের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। যেভাবে বাংলাদেশ ও পাঞ্জাবের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের স্বার্থ সংখ্যালঘিষ্ঠ প্রদেশের মুসলিম নেতৃবৃন্দ নষ্ট করছেন, তার বিরুদ্ধেও ফজলুল হক প্রতিবাদ করেন। ভারতের মুসলিম জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক এই দুটি প্রদেশে বাস করেন। আর বাকি অর্ধেক অন্যান্য প্রদেশে ছড়িয়ে আছেন। কোনো কোনো প্রদেশে মুসলমানদের সংখ্যা এতই কম যে, শাসনতন্ত্রে কখনোই তাঁরা প্রাধান্য স্থাপন করতে সক্ষম হবেন না। স্বভাবতই তাঁরা বাংলাদেশ ও পাঞ্জাবের মুসলমানদের প্রভাবের কথা অনুভব করতে পারেন না। এমন কি এই-দু-টি প্রদেশের মুসলিম মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বের কথাও তাঁরা ভাবেন না। তাঁদের ধারণা, তাঁদের মতই বাংলাদেশ ও পাঞ্জাবের মুসলমানদের কোনো রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নেই। ফজলুল হক সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশের মুসলিম নেতৃবৃন্দকে স্মরণ করিয়ে দেন, যদি তাঁরা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম প্রদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে বেশিমাত্রায় হস্তক্ষেপ করেন তবে তাঁরা সমগ্র ভারতের মুসলমানদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করেই তা করতে পারবেন। আর তিনি কখনোই বাইরের কাউকে বাংলাদেশের মুসলমানদের উপর প্রাধান্য স্থাপন করতে দেবেন না। তা তিনি যতই বিখ্যাত ব্যক্তি হোন না-কেন। ফজলুল হক অনুভব করেন, অবাঙালী নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের স্বার্থের কথা চিন্তা করেন না। যদিও ভারতের মুসলিম জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ এখানেই বাস করেন। ফজলুল হকের যে বিশেষ দায়িত্ব ও অসুবিধা আছে, তাও তাঁরা বিবেচনা করতে প্রস্তুত নন। তাঁর কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করে দেওয়াই তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য। এই কারণেই জিন্না তাঁর মতামত না শুনেই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবলম্বন করেন এবং তাঁকে নিন্দা করেন। ফজলুল হক লিয়াকৎ আলির নিকট লিখিত পত্রে যে দৃঢ় মনোভাব ব্যক্ত করেন তার কিছু অংশ এখানে উদ্ধৃত করা হল:
But before I conclude I wish to record a most emphatic protest against the manner in which the interests of the Moslems of Bengal and the Punjab are being imperilled by Moslem leaders of the Provinces where the Moslems are in a minority, popularly known among Moslems as the minority provinces of India. Except in Bengal and the Punjab which together account for nearly 50 millions of Moslems and nearly 50 per cent of the total Moslem population of India, the remaining 50 millions of Moslems are scattered throughout the continent in such a manner that they are in a most hopeless minority in the so-called minority provinces, in some cases the Moslem minority dwindling to about 4 or 5 per cent of the population. It is evident that these Moslem brethren of ours can never hope to be in the enjoyment of even and effective voice in the administration, leave alone the prospect of their ever being in power. It is conceivable that they cannot realise, nor even imagine, the advantages of the Moslem community being in a dominant position in the administration of Bengal and the Punjab. Nor do they realize the responsibilities of the Moslem Premiers of those provinces. Naturally enough they think that just as all their own political prospects are bleak and barren, even so is the case with the Moslems of Bengal and the Punjab. Naturally enough they do not care for the repercussions on the politics of the Moslems of Bengal and the Punjab of any decision they may take with regard to Molsem India as a whole. I would ask the Moslem leaders of the minority provinces to remember that if they meddle too much with the politics and the majority provinces, they will do so at the peril of the interest of the entire Moslem community of India. For my part, I will never allow the interest of 33 millions of the Moslems of Bengal to be put under the domination of any outside authority however eminent it may be.
At the present moment I have a feeling that Bengal does not count much in the counsels of political leaders outside our province, although we constitute more than 1/3rd of the total Moslem population of India. Even in this controversy, the leaders of the minority provinces never cared to take into in consideration my particular responsibilities and difficulties and wanted to drown my voice with meaningless slogans which may suit their own conditions of political helplessness, but which are utterly unsuited to the conditions prevailing in my province. I was condemned before I could put before the President my point of view.১০
ফজলুল হক উল্লেখ করেন, প্রকৃত কারণ না জেনেই অন্যান্য নেতৃত্ববৃন্দ জিন্নার কাজকে সমর্থন করেন। তিনি আজীবন মুসলিম সম্প্রদায়ের সেবা করা সত্ত্বেও সমালোচকেরা তা ভুলে যান। কি ভয়ানক অসুবিধার মধ্যে, সুশিক্ষিত ও সুসংগঠিত অ-মুসলমানদের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও, তিনি মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা করেন, তাও তাঁরা মনে রাখেননি। সমস্ত ঘটনাই জিন্না এমনভাবে সাজান, যার ফলে ফজলুল হকের বিবেক বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। তাই তার পক্ষে সারাভারত মুসলিম ন্দ্রলগের ওয়ার্কিং কমিটি ও কাউন্সিলের সদস্য থাকা সম্ভব হয়নি। তিনি জিন্নার অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে এই-দু-টি সংস্থা থেকে পদত্যাগ করেন।১১
১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের মে মাসেই জিন্নার সঙ্গে বাংলা ও পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ফজলুল হক ও স্যার সিকন্দর হায়াৎ খানের মতান্তর প্রকাশিত হয়। তাঁরা জিন্নাকে যেভাবে চ্যালেঞ্জ করেন তাতে অনেকেই বিস্মিত হন। এই বিষয়ে স্যার তেজবাহাদুর সাপ্রু ও বি, শিব রাও-এর মধ্যে পত্রালাপ হয়। তখন ভারতের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদেরা এই বিরোধ ও বিতর্ক নিয়ে আলোচনা করেন। বাংলা ও পাঞ্জাবের রাজনীতিতে এর প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে, তাই ছিল প্রধান আলোচ্য বিষয়। তেজ বাহাদুর সাপ্রু ২২ মে (১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ) শিব রাও-এর নিকট একটি পত্রে লেখেন, যদি জিন্না কংগ্রেস প্রতিষ্ঠানের মত নিজের অনুগামীদের উপরে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব স্থাপন করতে না পারেন, তবে তাঁরা অবাধে মত প্রকাশ করবেন। যদি এইসব মুসলিম নেতৃবৃন্দ কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারেন, তাহলে তা আনন্দের ব্যাপার হবে।১২
৫ আগস্ট (১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ) শিব রাও সাপ্রুর নিকট লেখেন, ৪ আগস্ট তাঁর সঙ্গে স্যার সিকন্দরের অনেক আলোচনা হয়। স্যার সিকন্দরের সঙ্গে জিন্নার সম্পর্ক বেশ তিক্ত হয়েছে। পাঞ্জাবের মুসলমান ছাত্ররা খুবই সক্রিয়ভাবে জিন্নার ও পাকিস্তান দাবির সমর্থনে সভা সমাবেশ করছে। জিন্না তাঁর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা অবলম্বন করলেও পাঞ্জাবের বিধানসভায় তাঁর সংখ্যাগরিষ্ঠতা নষ্ট হবে না। স্যার সিকন্দর শিব রাওকে বলেন, কংগ্রেস ও জিন্না বিরোধী মুসলিম লিগের নেতৃবৃন্দের সামনে এক সুবর্ণ সুযোগ উপস্থিত। এই দুই অংশ এখন সহজেই মিলিত হতে পারে, এমনকী ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গেও মীমাংসায় পৌঁছুতে পারে। স্যার সিকন্দর বিস্মিত হন এই ভেবে যে, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা গান্ধীজিকে এই সুযোগের কথা বুঝিয়ে বলছেন না। শিব রাও স্যার সিকন্দরের যুক্তিতে আকৃষ্ট হন। কারণ তার মনে হয়েছে, দীর্ঘকাল ধরে জিন্নাকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তৎকালীন অবস্থা উল্লেখ করে শিব রাও লেখেন:
Sikander told me that Jinnah overlooks one important factor : During the last three years the League has had a great deal of influential support from outside, just because of its nuisance value against the Congress. If, however, Jinnah should now decide to challenge Government and throw out the three Premiers because of their support of the war effort, he will find himself without many of these powerful allies. The question is, can he afford to kick the ladder by which he has arisen? At the same time Sikander is not free from anxiety. He regretted that Gandhiji has not called off C. D. and allowed Congress ministers to function. He suggested that the present will be an excellent opportunity for the Congress and the non-Jinnah section of the Muslim League to come to terms. The War Advisory Council, he pointed out, would consist of the Premiers of the provinces, representatives of the states and some important people. All these could, apart from participating in the deliberations of the council, open negotiations for India’s permanent constitution. He wondered that influential people have not approached Gandhiji to point out the excellence of the present opportunity for a settlement not only with a large section of the League but also with British Government. Personally, if I may say so, I am impressed with the force of this argument. For too long, it seems to me, Jinnah has been allowed to stand in the way of a settlement.১৩
১২ আগস্ট (১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ) শিব রাও সাপ্রুকে লেখেন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ প্রকটভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এর হাত থেকে উদ্ধার পেতে হলে এখনই দায়িত্বশীল ও যুক্তিনিষ্ঠ মুসলমানদের সঙ্গে একটি মীমাংসায় আসা দরকার। আর তা সম্ভব যদি কংগ্রেস আইন অমান্য আন্দোলন প্রত্যাহার করে, কংগ্রেস সরকারি দায়িত্ব গ্রহণ করে, প্রদেশগুলিতে কোয়ালিশন মন্ত্রীসভা গঠন করে, আর একান্তভাবে সংখ্যালঘুদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করে। অবশ্য মহাত্মা গান্ধী তাঁর কথায় গুরুত্ব আরোপ করবেন কিনা তা তিনি জানেন না। শিব রাও লেখেন:
Sir N. N. Sircar who is here gives a most distressing account of the spread of the communal virus in the masses of Bengal, both Hindu and Muslim. There is no other way out of this mess than to impress upon the reasonable sections of the Muslims the desirability of seeking a common solution. That can only come if civil disobedience is withdrawn, the Congress resumes office and forms coalitions in the provinces and later makes a sincere effort to satisfy the minorities. If in this process there have to be radical changes in the structure of India’s constitution, the price is well worth paying. I do not know if the Mahatma would listen to my view.১৪
৭ সেপ্টেম্বর (১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ) তেজবাহাদুর সাপ্রু শিব রাওকে লেখেন, তিনি ৩০–৩১ আগস্ট কলকাতাতে ছিলেন। তখন ফজলুল হকের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ আলোচনা হয়। ফজলুল হক জিন্নার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সাপ্রুর মনে হয়েছে, তিনি কখনোই জিন্নার সঙ্গে আপোশ করবেন না। স্যার সিকন্দর ফজলুল হককে বলেছিলেন যে, তিনি জিন্নার বিরুদ্ধে তাঁর সঙ্গে থাকবেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি এই প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেননি। তাই ফজলুল হক ক্ষুব্ধ হন। সাপ্রু লেখেন:
I met Fazlul Huq at Calcutta and had a long talk with him. He seemed to be very angry with Jinnah and I thought that he was not going to fall into line with him…He seemed, however, to be very bitter against Sikander Hyat for having let him down after assuring him that he was going to take a firm stand.১৫
১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৮ সেপ্টেম্বর ফজলুল হক লিয়াকৎ আলি খানের নিকট যে-পত্র দেন তা পাঠ করে তেজবাহাদুর সাপ্রু শিব রাও-এর নিকট ১৪ ও ১৬ সেপ্টেম্বর (১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ) দু-টি চিঠিতে লেখেন, ফজলুল হক প্রচণ্ড চাপের ফলে নতি স্বীকার করলেও জিন্নার স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। সাপ্রু লেখেন:
What are the reactions there to Fazlul Huq’s letter to the Secretary of the Muslim League? He has no doubt surrendered to the pressure of Muslim opinion but at the same time has given evidence of a spirit of revolt against the autocracy of Jinnah… Fazlul Huq showed some courage in publicly criticising Jinnah though his resignation from the National Defence Council was neither Courageous nor defensible on any reasonable ground. At the same time it is clear that the Muslim League generally is out to down him and although his influence in Bengal is great yet he may find himself unable to cope with Muslim opposition to him. Do not forget that if rebels like Khare of the C. P. etc., could be hounded out by the congress the same thing can be done by Jinnah and the Muslim League.১৬
এই সময়ে আল্লা বক্স ও ফজলুল হক জিন্নার নেতৃত্ব অস্বীকার করায় জিন্না খুবই উদ্বিগ্ন হন।১৭
৮ সেপ্টেম্বরের চিঠিতে ফজলুল হক এই মনোভাব ব্যক্ত করায় সর্বত্র মুসলিম লিগ মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিভিন্ন প্রতিবাদ সভা থেকে এই দুরভিসন্ধিমূলক অভিযোগ প্রত্যাহার করা অথবা তাঁর পদত্যাগের দাবি উত্থাপন করা হয়। ২৭ অক্টোবর (১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ) মুসলিম লিগ ওয়ার্কিং কমিটি একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে ফজলুল হককে দশ দিনের মধ্যেই এইসব অভিযোগ প্রত্যাহার করতে এবং কুৎসা প্রচারের জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে বলে। তখনও ফজলুল হক জিন্নার সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধিতায় অবতীর্ণ হবার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। তাই ১৪ নভেম্বর (১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ) ফজলুল হক সারাভারত মুসলিম লিগের সম্পাদকের নিকট একটি পত্র লিখে জানান যে, কাউকে আঘাত দেওয়া বা কারও বিরুদ্ধে নিন্দা প্রচার করা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না। তিনি লেখেন:
I regret the delay in sending you my reply. It has been due entirely to the poor state of my health, and I did not feel justified in replying to a communication of such serious import without giving the matter most anxious consideration. No one knows better than the President himself that I have always been a loyal member of the League, have never hesitated to carry out its mandates, and once a decision was constitutionally adopted by it, have never hesitated to obey it, even though that decision might not personally commend itself to me. If there were any doubts in regard to this point, my resignation from the National Defence Council amply proves it. It is an irony of fate that, of all those who have given of their best to build up the only national organization of Muslim India, I should have been the object of so much misunderstanding and so much uninformed criticism. It appears that portions of my letter have hurt the feelings of the President and some of my other friends. I convey to them through you my assurance that nothing was further from my intention than to hurt the feelings of or to cast aspersions on anyone and I hope that my assurance will be accepted and the matter considered as closed.১৮
এই আশ্বাস ও কৈফিয়ত পাবার পর ওয়ার্কিং কমিটি তাঁর বিরুদ্ধে আর কোন ব্যবস্থা অবলম্বন করেনি।
তবে জিন্না ফজলুল হককে বিশ্বাস করতে পারেননি। তাই বাংলাদেশে তাঁর কার্যাবলির উপর গোপনে সতর্ক দৃষ্টি রাখবার জন্য এবং এই বিষয়ে তাঁকে ওয়াকিবহাল রাখবার জন্য তিনি হাসান ইস্পাহানিকে তাঁর দূত হিসাবে নিযুক্ত করেন। ইস্পাহানি লেখেন, ফজলুল হক লিগের প্রতি কেবলমাত্র মৌখিক সমর্থন প্রদর্শন করেন। তখনও ফজলুল হক বাংলার মুসলিম লিগের সভাপতি, আইনসভার মুসলিম লিগ পার্টির নেতা, সর্বভারতীয় লীগের ওয়ার্কিং কমিটি ও কাউন্সিলের সদস্য এবং বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। স্বভাবতই তাঁকে আক্রমণ করা জিন্নার পক্ষেও সহজসাধ্য ছিল না। এই সময়ে বাংলার জিন্নাপন্থীরা অভিযোগ করতে থাকেন যে, ফজলুল হক এইসব গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থেকেও লিগের প্রভাব ক্ষুণ্ণ করছেন। তাঁর কাগজ ‘নবযুগ’ লিগের বিরুদ্ধে প্রচার করছে। জিন্না উপলব্ধি করেন, ফজলুল হক কিছুতেই বাংলার রাজনীতিতে তাঁকে হস্তক্ষেপ করতে দেবেন না। এই অবস্থায় বাংলায় জিন্নাপন্থীদের কোন ভবিষ্যৎ নেই বিবেচনা করে তিনি প্রথমে ফজলুল হককে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেবার জন্য তাঁর সমর্থকদের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী নিজে পদত্যাগ না করলে, অথবা অনাস্থা প্রস্তাব এনে তাঁকে সরিয়ে না দিলে, অথবা গভর্ণর কর্তৃক বিতাড়িত না হলে, এই উদ্দেশ্য সফল করা জিন্নার পক্ষে মোটেই সহজ ছিল না। এই অবস্থায় একটি মাত্র পথই খোলা ছিল। কোয়ালিশন মন্ত্রীসভার লিগ সদস্যরা পদত্যাগ করে মন্ত্রীসভার পতন ঘটাতে সক্ষম ছিলেন। আর তাঁরা এই পথই বেছে নিলেন। তাই তাঁর রাজনৈতিক শত্রুরা হঠাৎ ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ১ ডিসেম্বর মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেন। তাঁরা ভেবেছিলেন ফজলুল হক নতুন মন্ত্রীসভা গঠন করতে ব্যর্থ হবেন। এই অবস্থায় তাঁরা ক্ষমতায় বসবেন। কিন্তু ফজলুল হক দ্রুত মন্ত্রীসভা গঠন করে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।১৯ স্বভাবতই মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ সহজভাবে এই পরাজয়ের গ্লানি মেনে নিতে পারেননি। তাঁরা জিন্নার দ্বারস্থ হন। জিন্না এই সংকটসৃষ্টির অপেক্ষায় বসেছিলেন। তিনি ৬ ডিসেম্বর (১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ) ফজলুল হকের কাছে একটি টেলিগ্রাম পাঠান। তাতে জিন্না পরিষ্কার করে বলেন, ফজলুল হকের আচরণ বিশ্বাসঘাতকতার সমতুল্য হয়েছে এবং তাঁকে আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যে লিখিত কৈফিয়ত পাঠাতে বলেন। টেলিগ্রামের ভাষা মোটেই শোভন ছিল না। তাই ফজলুল হক খুবই ক্ষুণ্ণ হন। তবুও তিনি প্রকৃত অবস্থা জিন্নাকে জানানোর সিদ্ধান্ত নেন। তিনি একটি টেলিগ্রাম জিন্নাকে পাঠান। তিনি মুসলিম লিগের প্রেসিডেন্ট হিসাবে জিন্নাকে বাংলাদেশে আসতে অনুরোধ করেন এবং নিজে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বলেন। কিন্তু জিন্না এই অনুরোধ অগ্রাহ্য করেন। জিন্না পুনরায় ৮ ডিসেম্বর একটি টেলিগ্রাম পাঠিয়ে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে ফজলুল হককে লিখিতভাবে বক্তব্য জানতে বলেন। এই অবস্থায় ফজলুল হক তাঁকে টেলিগ্রাম করে জানান যে, তাঁর বিরুদ্ধে প্রেরিত অভিযোগ সম্পর্কে কোন তথ্য না পেলে তাঁর পক্ষে কোন লিখিত কৈফিয়ত পাঠানো সম্ভব নয়। অবশ্য জিন্না কোন যুক্তি বা অনুরোধের ধার ধারেন না। তাই ১০ ডিসেম্বর ‘স্বৈরতান্ত্রিক পদ্ধতিতে’ তিনি একতরফা ফজলুল হকের উপর নির্দেশ জারী করে তাঁকে মুসলিম লিগ থেকে বহিষ্কার করেন।২০ আর তিনি ১৩ ডিসেম্বর লীগ ওয়ার্কিং কমিটিতে ফজলুল হকের জায়গায় বাংলাদেশে তাঁর বিশেষ দূত ইস্পাহানিকে মনোনীত করেন। এইভাবে হক-জিন্না বিরোধের একটি জটিল অধ্যায়ের সূত্রপাত হয়।২১
অবশ্য লিগ থেকে বিতাড়নের পূর্বেই ফজলুল হক প্রকৃত অবস্থা অনুধাবন করতে পারেন। ২৭ নভেম্বর (১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ) জে, সি, গুপ্তের বাড়িতে কর্মপন্থা নির্ধারণের জন্য একটি বৈঠক বসে। তাতে শরৎচন্দ্র বসু, ফজলুল হক, ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী, শামসুদ্দিন আমেদ, খান বাহাদুর হাসেম আলি খান, হেমচন্দ্র নস্কর প্রভৃতি নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। মন্ত্রীসভা গঠন করার বিষয়ে শরৎচন্দ্র বসু একটি দলিল তৈরি করেন। এই দলিল ভিত্তি করেই নতুন প্রগ্রেসিভ কোয়ালিশন পার্টি গঠন করা হয় এবং নতুন মন্ত্রীসভা গঠনের ব্যবস্থা করা হয়। ফজলুল হককে এই পার্টির নেতৃপদে আসীন হতে আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু ঐদিন তিনি দলিলে স্বাক্ষরও দেননি এবং নেতৃপদও গ্রহণ করেননি। কারণ তখনও তিনি লিগ-হক কোয়ালিশন মন্ত্রীসভার নেতা ছিলেন।২২ ২৮ নভেম্বর এই মন্ত্রীসভার শেষ বৈঠক বসে। তাতে ফজলুল হক উপস্থিত থেকে লিগ সদস্যদের প্রকৃত মনোভাব বুঝতে পারেন। ১ ডিসেম্বর লীগ সদস্যরা পদত্যাগ করায় ফজলুল হক প্রগ্রেসিভ কোয়ালিশন পার্টির নেতৃত্বপদ গ্রহণ করেন এবং লিগের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়ে নিজে কৃষক প্রজা পার্টি, কংগ্রেসের একাংশ ও হিন্দু মহাসভার সক্রিয় সহযোগিতায় পুনরায় মন্ত্রীসভা গঠন করেন। ১২ ডিসেম্বর হক-শ্যামাপ্রসাদ মন্ত্রীসভা দায়িত্বভার গ্রহণ করে। এই মন্ত্রীসভা গঠনে শরৎচন্দ্র বসু ও শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী সক্রিয়ভাবে ফজলুল হকের সঙ্গে সহযোগিতা করেন।২৩ লিগপন্থীরা এই দুই মুসলমানদের শত্রু মনে করেন এবং তাঁদের সঙ্গে মিলিত হওয়ায় তাঁরা ফজলুল হকের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন। এই মন্ত্রীসভা গঠন করতে দেওয়ায় জিন্না তীব্র ভাষায় গভর্ণরের সমালোচনা করেন।২৪
১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ১ ডিসেম্বর জিন্নার নিকট লিখিত চিঠিতে হাসান ইস্পাহানি মন্তব্য করেন:
Haq, by no means, is a spent force. He has influence and a following. The Hindus are almost daily with him. They are out to divide and crush the Muslims.২৫
তথ্যসূত্র
১ The Bengal Legislative Assembly Proceedings, Eleventh Session, 1941, vol. LX–No. 3, pp. I–9.
২ Ibid, pp. 1–2.
৩ Ibid.
৪ Letter of A. K. Fazlul Huq, dated 8 September, 1941, addressed to the Secreatary of the All-India Muslim League. Vide Statesman, 11 September, 1941.
৫ Ibid.
৬ Ibid.
৭ Ibid.
৮ Ibid.
৯ Ibid.
১০ Ibid.
১১ Ibid.
১২ Sapru Manuscripts Series I, vol. 21, R. 138, pp. 75–79.
১৩ Ibid, R. 175/1, pp. 199–201.
১৪ Ibid, R. 175/3, pp. 213–217.
১৫ Ibid, R. 175/11, p. 257.
১৬ Ibid, 175/13, R, 175/14, pp. 265–269.
১৭ Ibid, vol. 22, R, 201, p. 43.
১৮ Ispahani, Jinnah, p. 49.
১৯ Letter of A. K. Fazlul Huq, dated 20 June, 1942. Vide Hindusthan Standard, 21, June, 1942.
২০ Ibid.
২১ Ispahani, Jinnah, pp. 50, 52–54.
২২ The Bengal Legistative Assembly Proceedings, Thirteenth Session, 1942, vol. LXII–No. 3, p. 407.
২৩ Ibid.
২৪ Ispahani, Jinnah, pp. 53–54.
২৫ Ibid, p. 51.