উপন্যাস
বড়গল্প
ছোটগল্প
1 of 2

স্লাই ফক্স

স্লাই ফক্স

রাতের খাওয়া শেষ। আমরা সবাই খাবার টেবিলে বসে আছি। আর পাঁচ মিনিট পরে এগারোটা বাজবে। বাইরে পূর্ণিমা রাতের বীভৎস চাঁদের আলো। ফুল ভোল্টেজ। খড়ের গাদা থেকে ছুঁচ খুঁজে আনা যায়। খাওয়াটা জবরদস্ত হয়েছে। মাসিমা ট্রেনিং-এ গান্ধারীদির রান্না এমন খুলেছে, পাঁচ তারা হোটেলের শেফ করে দেওয়া যায়। মেজোমামা পরপর তিনটে ঢেকুর তুলেছেন। আর একটা তোলার জন্যে খুব চেষ্টা করছেন।

বড়মামা ভীষণ চিন্তিত মুখে বললে, ‘কঠিন অঙ্ক।’

মেজোমামা বললেন, ‘কী এমন কঠিন অঙ্ক! পৃথিবীতে এমন কোনও অঙ্ক নেই, যা আমি কষতে পারি না! আমাকে বলবে তো!’

বড়মামা বললেন, ‘এই বিশাল বড় খাবার টেবিলটা সমান তিন ভাগে ভাগ করতে হবে। ভাগ করার পরেও টেবিলই থাকবে।’

মেজোমামা বললেন, ‘এটা একটা প্রবলেম?’ কল এ ছুতোর মিস্ত্রী। সে ফিতে ফেলে মেপে, করাত দিয়ে কেটে দেবে।’

বড়মামা হুঁ হুঁ করে হেসে বললেন, ‘নট দ্যাট ইজি। হোয়াটস অ্যাবাউট পায়া। তিনটে টেবিল মানে বারোটা পায়া। আছে চারটে পায়া। আরও আটটা পায়া চাই। তা ছাড়া টেবিলটা ওভাল। একটা উপায় আছে পার্টিশান।’

মাসিমা বললেন, ‘তোমার সব অদ্ভুত অদ্ভুত ভাবনা। লোকের বাড়ি পার্টিশান হয়, টেবিল পার্টিশানের কথা শুনিনি।’

‘এইবার শুনবে। এই বাড়ির সব কিছু আমি এক মাসের মধ্যে তিন ভাগ করে দেবো।’ এমন কি শালগ্রাম শিলাও সমান তিনটুকরো হবে।’

মেজোমামা বললেন, ‘রুপোর সিংহাসনটা?’

‘গলিয়ে সমান ওজনের তিনটে সিংহাসন হবে।’

‘মজুরি কে দেবে?’

‘সমান তিনভাগে আমরা তিন তরফ দেবো।’

‘ও এর মধ্যে তরফা তরফি এসে গেল। তুমি আলাদা হতে চাইছ। তোমার মনে পাপ ঢুকেছে! অত চিংড়ি মাছ খেলে ঢুকবে না! পাপের দাঁড়া বেরিয়েছে লম্বা, লম্বা।’

‘যেমন মাগুর মাছ খেয়ে খেয়ে তোর মুগুরের মতো অহঙ্কার!’

মাসিমা জিগ্যেস করলেন, ‘আর আমার?’

‘তোর পেটে জিলিপি, মনে ঢুকেছে সেই প্যাঁচ!’

‘সে ঢুকুক, তোমার মাথায় ভাগাভাগি ঢুকল কী করে?’

মেজোমামা বললেন, ‘নিশ্চয় কোনও উকিলের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছে। অসৎ সঙ্গে পড়েছে। দেখতে হবে না।’

মাসিমা বললেন, ‘তুমি চুপ করো, আমি দেখছি। বড়দা, তোমার মাথায় পার্টিশান ঢুকলো কী করে?’

বড়মামা বললেন, ‘যা হবেই, তা হইয়ে দেওয়াই ভালো। এ-কালে ভাইয়ে ভাইয়ে মিল হতে পারে না। মুরারীদের বাড়ি পার্টিশান হয়ে গেল। রামুরা তিন ভাইয়ে মামলা লড়ছে। পাঁচ বছর হয়ে গেল। এই বাড়ি, সম্পত্তি, ঘটি, বাটি আমি সব তিন টুকরো করব।’

মেজোমামা বললেন, ‘তুমি তিনটুকরো করার কে? হু আর ইউ?’

বড়মামা বললেন, ‘তোমরা সবাই শুনলে! বললে, হু আর ইউ! মায়ের পেটের দাদাকে কি হতচ্ছেদ্য! বলে কিনা হু আর ইউ?’

মেজোমামা বললেন, ‘আমি একটু কারেকসান করে দিতে চাই। মায়ের পেটের দাদা নয়, মায়ের পেটের ভাই। কেউ দাদা হয়ে জন্মায় না। জন্মে দাদা হয়, দাদাগিরি ফলায়।’

বড়মামা বললেন, ‘আমি দাদা হতে চাই না। হু আর ইউ-এর উত্তর, আমি তোমাদের কেউ না। আমি পথের মানুষ। পথেই জীবন, পথেই মরণ আমাদের।’

মেজোমামা বললেন, ‘দেখো, সেটা যেন সৎপথ হয়।’

‘আমাকে উপদেশ করার অধিকার তোমার নেই। হু আর ইউ?’

মেজোমামা মহানন্দে হাহা করে হেসে উঠলেন, ‘কাটাকাটি হয়ে গেল। হু আর ইউ, হু আর ইউ-এ কাটাকাটি হয়ে গেল।’

মাসিমা বললেন, ‘রক্তপাত হল না।’

বড়মামা বললেন, ‘আমাদের ডাক্তারি ভাষায় একে বলে, ইন্টারন্যাল হেমারেজ। আরও মারাত্মক।’

মেজোমামা শান্ত গলায় বললেন, ‘আমাদের এত দিনের এই আনন্দ নষ্ট করতে চাইছ কেন?’

বড়মামা বললেন, ‘আমার কাছের খবর আছে, তুই মোল্লার চকে একটা ফ্ল্যাটে বায়না করে এসেছিস।’

‘কে বলেছে?’

‘যেই বলুক, আমার কাছে খবর এসেছে। অর্থাৎ, তুমি আলাদা হতে চাইছ!’

মেজোমামা বললেন, ‘আমার কাছে আরও সাংঘাতিক খবর আছে, তুমি উত্তরপাড়ায় একটা ফ্ল্যাট কিনে ফেলছে। পয়লা বৈশাখ গৃহপ্রবেশ।’

বড়মামা অবাক, ‘আমি ফ্ল্যাট কিনেছি! গৃহপ্রবেশ! কে বলেছে, হু ইজ হি? আই উইল কিল হিম জ্যান্ত, টুকরো টুকরো। মেক হিম কিমা। থোড়ের মতো থুড়ে দোবো। তার নাম বলো।’

মেজোমামা বললেন, ‘তোমাকে যে বলেছে তার নাম বলো। আমি তাকে হত্যা করব।’

বড়মামা বললেন, ‘গুরুদাস।’

মামা চিৎকার করে উঠলেন, ‘গুরুদাস! ওই গুরুদাসই তো আমাকে বললে, তোমার দাদা ফ্ল্যাট কিনেছে, তাই কিনবেই। কত টাকা! রুগিমারা পয়সা!’

দুজনে একসঙ্গে হুঙ্কার ছাড়লেন, ‘গুরুদাস! স্কাউন্ড্রেল!’

মাসিমা চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে বললেন, ‘প্রত্যেকেরই ফার্স্টবুকটা ভালো করে পড়া উচিত,

|| এ স্লাই ফক্স মেট এ হেন, ক্লোজ টু মাই ফার্ম ||

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *