1 of 2

স্যেশেলস দ্বীপপুঞ্জ

স্যেশেলস দ্বীপপুঞ্জ

পৃথিবীর ম্যাপ দেখে কোনো দেশ বলে বোঝা যায় না। ভারত মহাসাগরের মধ্যে আফ্রিকা এবং মরিশাস ও জাঞ্জিবারের মধ্যে কয়েকটি সরষেদানার মতো বিন্দু দেখা যায় শুধু সমুদ্রের মধ্যে।

প্লেনটা যখন মুম্বাই, ডার-এস-সালাম অথবা মরিশাস থেকে স্যেশেলস আইল্যাণ্ডস-এর রাজধানী ভিক্টোরিয়াতে নামবে বলে উচ্চতা হারাতে থাকে, তখনই নীচে বহু ছোটো ছোটো দ্বীপ বড়ো হতে থাকে। মনে হয়, যেন কোনো স্বপ্নের দেশের দিকে নেমে চলেছে প্লেন। প্রত্যেকটি দ্বীপই প্রবাল দিয়ে ঘেরা। আর সে প্রবালের কী রঙের বাহার। হলুদ, কমলা নীল, লাল এবং আরও নানা-রঙা নিমজ্জিত প্রবাল শুয়ে থাকতে দেখে মনে হয় যেন কোনো রাজকুমারীর সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে ওইসব দ্বীপের কোনো একটি দ্বীপে নামলেই।

প্রবাল দেখা যায় আমাদের দেশের কোভালাম এবং আন্দামান উপসাগরে। আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের পোর্ট ব্লেয়ার থেকে জলি-বয় আইল্যাণ্ড গিয়ে। অথবা ইউনাইটেড স্টেটস-এর হাওয়াইয়ান দ্বীপপুঞ্জে গেলেও।

আমাদের দেশে প্রবাল দেখতে হয় ‘গ্লাস-বটম’ বোটে চড়ে। সেই নৌকোগুলি ডিঙি নৌকোর মতো কাচ-এর একটি টুকরো, তাও ঘোলা এবং অস্বচ্ছ, তারই মধ্যে দিয়ে দেখতে হয় প্রবাল (যেখানে যেখানে দেখা যায়)।

হাওয়াইয়ান আইল্যাণ্ডস-এ বিরাট বিরাট ‘গ্লাস-বটম’ বোটে করে সমুদ্রের গভীরে গিয়ে দেখা যায়। সেইসব প্রকান্ড ও পুরু কাচের ওপরে নাচ, গান এবং খাদ্য-পানীয়র বন্দোবস্তও থাকে। যদিও নামেই ‘বোট’ সেগুলি ছোটোখাটো জাহাজ এক-একটি। ‘আমেরিকা’ বলে ব্যাপার। সে এক এলাহি কান্ড। অত্যন্ত জোরালো সাউণ্ড সিস্টেমে গান ও বাজনা শোনা যায়। আর নীচের কাচের মধ্যে দিয়ে বড়ো ও ছোটো নানারঙা মাছের ঝাঁককে দেখা যায় সাঁতরে যেতে, নানা-রঙা প্রবালের পটভূমিতে। সে এক অভিজ্ঞতা। কিন্তু স্যেশেলস-এর মতো প্রবালের শান্ত স্নিগ্ধ সৌন্দর্য এবং রংবাহার আর কোথাওই আছে বলে জানি না। আমি অবশ্য অস্ট্রেলিয়াতে যাইনি। সেখানের কথা বলতে পারব না। ভিক্টোরিয়া যে দ্বীপে তার নাম হচ্ছে ‘মাহে’। স্যেশেলস-এর রাজধানী বুকে-করা মাহে, সতেরো-আঠেরো মাইল লম্বা আর তিন চার মাইল চওড়া। এই-ই যদি দ্বীপের রাজধানীর আয়তন হয় তবে অন্যান্য ছোটো দ্বীপগুলির কেমন আয়তন হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।

স্যেশেলস দ্বীপপুঞ্জ পালতোলা জাহাজের যুগে ছিল জলদস্যুদের আড্ডা। ফরাসি, ডাচ, ইংরেজ এবং নানা জায়গার জলদস্যুরা এখানে তাদের লুন্ঠিত ধনরত্ন পুঁতে রাখত। ফরাসিদের আধিপত্যই বেশি ছিল এই দ্বীপে। সেইসব ধনরত্নের খোঁজে আজও এই দ্বীপে খননকার্য চলেছে সমানে, বিভিন্ন জায়গাতে। বোভাঁলোতে, মাহেরই একটি জায়গা, একটি কোম্পানি গুপ্তধনের খোঁজে খননকার্য চালাচ্ছে। যদি কিছু পাওয়া যায় তবে তার অর্ধেক দিতে হবে স্যেশেলস-এর সরকারকে। ‘এখনও’ বলতে আমি বলছি ১৯৭৯-এর কথা। আমি যখন স্যেশেলস-এ গেছিলাম আফ্রিকা থেকে ফেরার পথে। প্রায় ত্রিশ বছর আগে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে স্যেশেলস ছিল রাশিয়ার ডুবোজাহাজের ঘাঁটি। আমি যখন গেছি তখনও সব দেশের বিমানকে স্যেশেলস-এর মাটিতে অবতরণ করতে দেওয়া হত না। তবে আমি গেছিলাম এয়ার তানজানিয়ার প্লেনে, ডার-এস-সালাম থেকে।

স্যেশেলস এয়ারপোর্টটি ছোট্ট। প্লেন ল্যাণ্ড করার পর প্লেন যখন ট্যাক্সিং করে তখন মনে হয় সমুদ্রে পড়েই যাবে বুঝি।

সন্ধের একটু পরে পরে গিয়ে পৌঁছেছিলাম। এয়ার তানজানিয়া বলেছিল মাহের হোটেল-খরচ তারাই দেবে। ডাহা মিথ্যে কথা। কিছুই দেয়নি।

অচেনা-অজানা জায়গাতে রাতে পকেট প্রায় শূন্য। তখন ক্রেডিট কার্ড-এর সুবিধেও ছিল না। সেখানে জানাশোনাও কেউই ছিল না। এয়ারপোর্টের অফিসারেরা বললেন, এয়ারপোর্টের খুবই কাছে একটি গেস্ট হাউস আছে। একজন ফরাসি মহিলা সেটি চালান। মাত্র দুটি ঘর আছে। সমুদ্রের একেবারে ওপরে। তবে গেস্ট হাউসটি সস্তা।

অগত্যা সেখানেই গিয়ে উঠলাম। ভদ্রমহিলা মাঝবয়েসি। বললেন, তাঁর ইংরেজ স্বামী ছিলেন পুব-আফ্রিকার পেশাদার বিগ-গেম হান্টার। বহুদিন আগে একবার আমেরিকান লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের বাৎসরিক শিকারযাত্রাতে তিনি সঙ্গী হয়েছিলেন। কয়েক বছর পরে অন্য এক শিকারি দ্বারা নিযুক্ত হয়ে হাতির আক্রমণে ভদ্রমহিলার স্বামী মারা যান। একথা শোনার পরে স্বভাবতই তাঁর প্রতি এক দুর্বলতা জন্মে গেল। যাইহোক, অন্য একজন শিকারির বিধবা বলে কথা!

উনি বললেন, এখানে তোমার অসুবিধে হবে না। আমার গেস্ট হাউসটি একেবারে সমুদ্রের ওপরেই, দেখতেই পাচ্ছ। যদি আর কোথাও যেতে না চাও তো বারান্দায় বসে সমুদ্রের সান্নিধ্যেই কাটিয়ে দিতে পারো। তবে ভিক্টোরিয়ার বিখ্যাত সমুদ্রতটে অবশ্যই যেয়ো। গেস্ট হাউসের সামনে তেমন তটভূমি নেই। অত সুন্দর সাদা বালির তটভূমি পৃথিবীর আর কোথাওই নেই। একটি ক্রেওল মেইড আছে আমার। সে-ই রান্নাবান্না করে, বিছানা-টিছানা করে, ঝাড়পোঁছও। রাতে কী খাবে বলো? মাটন, পর্ক, চিকেন, যা বলবে তাই রেঁধে দেবে। পর্ক-চপ খাবে? আমার ডিপ-ফ্রিজে সবই রাখা আছে।

বললাম, প্লেনেই তো ডিনার খেয়ে এসেছি। রাতে আর কিছুই খাব না।

তিনি বললেন, আমার কাছে আমেরিকান হুইস্কি আছে। এক আমেরিকান অতিথি নিয়ে এসেছিলেন। আমাকে দিয়ে গেছেন একটি বোতল, এখনও খোলা হয়নি। খাবে? অন্য দ্য হাউস।

হেসে বললাম, আজ থাক। তাড়াতাড়ি ঘুমোব।

আই হোপ ইউ উইল এনজয় ইয়োর স্টে হিয়ার। আই হ্যাভ ওনলি ওয়ান রিকোয়েস্ট। ডোন্ট ব্রিং এনি গার্লস।

বললাম, ওক্কে।

মনে মনে বললাম, কড়ি না থাকলে কি তেল মাখা যায়? তা ছাড়া, অনুরাগিণীর কি কিছু কমতি আছে আমার? পয়সা দিয়ে যারা নারীশরীর কেনে তারা সোশ্যালি কনডেমড। তারা অসহ্য।

গেস্ট হাউসের ঘরে শুয়ে জানালা দিয়ে রাস্তার ওপারের একটি গাছগাছালিভরা টিলা দেখা যাচ্ছিল। তার মাথাতে একটি ছবির মতো ভিলা। পথ দিয়ে এয়ারপোর্টের দিকে কোনো গাড়ি যাচ্ছিল না। সন্ধের পর থেকেই প্লেনের যাতায়াত বন্ধ সেই ছোট্ট এয়ারপোর্টে। চাঁদের আলো, সেই পাহাড়, গাছগাছালি এবং সমুদ্রপারের অতিথিশালাকে গা-ছমছমে এক রহস্যে মুড়ে রেখেছিল।



সকালে ঘুম ভেঙে বাইরে আসতেই রোদ-ঝলমল সমুদ্র আর এয়ারপোর্ট যাওয়ার পথ, উলটোদিকের পাহাড় সব যেন স্বপ্নের মতো মনে হল। মেইডটির নাম হেনরিয়েটা। সে আমার ব্রেকফাস্টের জন্যে হ্যাম, বেকন এবং ডিমের পোচ তৈরি করছে। বেকন কুড়মুড়ে করে ভাজছে। সঙ্গে কড়া করে ব্রাউন গার্লিক ব্রেড-এর টোস্ট আর আফ্রিকান কফি। কিচেন থেকে তার গন্ধ উড়ছে হাওয়াতে। পুরো সকালটিই যেন খুশিতে ঝলমলে হয়ে উঠেছে।

স্যেশেলস-এর মানুষ ইংরেজি বোঝে কারণ সারাপৃথিবী থেকে ট্যুরিস্টরা আসেন এখানে। কিন্তু এখানের স্থানীয় ভাষার নাম ‘ক্রেওল’। ফ্রেঞ্চ আর আফ্রিকান মেশানো এক ভাষা। ফ্রেঞ্চ তো বোঝেই।

ব্রেকফাস্টের পরে একটি ট্যাক্সি নিয়ে শহরে গেলাম। এয়ারপোর্ট থেকে ট্যাক্সি চলে এল পাঁচ মিনিটে, ফোন করতেই। এরকম সুন্দর ছোট্ট শহর খুব কমই দেখেছি। ছবির মতো। তুলনা করতে হলে কানাডার ‘কিবেক’ সিটির সঙ্গেই করতে হয়। তাও আধুনিক শহরটির নয়, পুরোনো ‘কিবেক’ সিটির।

পথের একপাশে পাহাড় একপাশে সমুদ্র। মাঝে মাঝে পথটি সমুদ্র কেটে গেছে—ছোটো ছোটো Causeway। যেখানে ফরাসিদের প্রাধান্য সেখানে পৃথিবীবিখ্যাত স্থপতিদের হাতের ছাপ তো থাকারই কথা। শহরের সবচেয়ে জমজমাট জায়গাতে সারি দেওয়া ভালো ভালো হোটেল। তানজানিয়ান এয়ারলাইনস আমার সঙ্গে তঞ্চকতানা করলে, এয়ারপোর্টের কাছের গর্তে না থেকে এখানেরই কোনো হোটেলে থাকতে পারতাম। ডানদিকে সমুদ্র।

এইরকমই সারি সারি হোটেল আছে হাওয়াইয়ান আইল্যাণ্ডস-এর ‘ওয়াইকিকি’ বিচ-এ। তবে আমেরিকানদের ব্যাপারস্যাপার যেমন হয় আর কী। সবকিছুই ভীষণ Loud, তার চেয়ে এই স্যেশেলস অনেক ভালো। ছোটো কিন্তু মনোরম।

তটভূমির রং দুধের মতো সাদা। এর কারণ আছে। এই তটভূমি বালির নয়, সাদা প্রবালের গুঁড়োর নাকি। কত বৈচিত্র্যই যে আছে এই পৃথিবীতে।

একটি শপিং মল আছে দেখলাম। দোকানগুলির মালিকের মধ্যে অনেকেই দক্ষিণ ভারতীয়। সিন্ধি আর পাঞ্জাবিদের পরে এরাই হয়তো সবচেয়ে অ্যাডভেঞ্চারাস। সিন্ধু ও পাঞ্জাবে না-হয় দেশভাগের ধাক্কা লেগেছিল কিন্তু দক্ষিণ ভারত তো ভাগ হয়নি। দেশ ভাগ হওয়া সত্ত্বেও সেই প্রজন্মের বাঙালিরা নিজেদের রাজ্য ছাড়া বিশেষ বাইরে যাননি। তবে বি কে খান্না সাহেব ভালোবেসে তাদের আন্দামানে আর দন্ডকারণ্যে পাঠিয়েছিলেন। ভিটেছাড়া হওয়ার পরেই সে এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা।



স্যেশেলস দুটি জিনিসের জন্যে বিখ্যাত। একটি হল সামুদ্রিক নারকেল, যার নাম কোকো-দ্য মেয়ের। আর অন্যটি হল বিশালাকার সামুদ্রিক কচ্ছপ। যদিও নাম সামুদ্রিক নারকেল এই গাছ কিন্তু সমুদ্রে জন্মায় না। মাহের কাছেই Praslin Island (উচ্চারণ প্রাঁলে)। সেখানের ভ্যালি দ্য মেইতে সেই প্রকান্ড প্রকান্ড ছাতার মতো গাছগুলি আকাশ ঢেকে রাখে। নানারকম সরীসৃপ ডাকাডাকি করতে করতে এ-গাছ থেকে ও-গাছে দৌড়ে বেড়ায় উঁচু ডালে ডালে। গাছের তলায় গভীর রহস্যময় জঙ্গল। মনে হয় যেন বহুদূর থেকে স্যেশেলস দ্বীপপুঞ্জের কালো টিয়ারা শিস দিতে দিতে দ্বীপ পরিক্রমা করবে। সেই বনভূমি দূর থেকে দেখলেও মনে সম্ভ্রম জাগে। এই বনভূমিতে সব গাছই ঊর্ধ্বমুখী, সূর্যমুখী। যেন নিজের নিজের আকাশটুকুর জন্যে সকলেই সংগ্রাম করছে। এখানে গেলে শুধু ওপর দিকেই তাকাতে হয়। গভীর ছায়াচ্ছন্ন বনভূমিতে দৃষ্টি চলে না। একটি অতিকায় পাতা খসে নীচে পড়লে বনের পাতায় পাতায় এমন আওয়াজ ওঠে তেমন আওয়াজ যে নিজকানে না শুনেছেন, তাঁর পক্ষে অনুমান করাও মুশকিল। তারই মধ্যে ধুপ করে শব্দ করে একটি কোকো-দ্য-মেয়ের হয়তো খসে পড়ে নীচে। রোদভরা দিনের আলোয় ওপরে রোদ ঝলমল করলে কী হয়, সে-রোদ যখন বড়ো বড়ো পাতার আস্তরণ ভেদ করে নীচে নামে তখন তা সবুজাভ হয়ে যায়। বনরোদ্দুরে সবুজ অন্ধকারে।

স্যেশেলস দ্বীপপুঞ্জেও অসংখ্য দ্বীপ আছে। আন্দামান দ্বীপপুঞ্জেরই মতো। অগণ্য দ্বীপের অনেকগুলোরই এখনও নামকরণই হয়নি। এমনকী তাদের সার্ভেও করা হয়নি। সেইসব দ্বীপে কী কী গাছ আছে, কী প্রাণী, তার খবরও নেওয়া হয়নি। এখানের অনেক গাছ ও অনেক প্রাণীই Endemic আন্দামানেরই মতো। সেসব অন্য কোথাওই পাওয়া যায় না।

আউটার আইল্যাণ্ডস-এ চারটি পুঞ্জ আছে। ইনার আইল্যাণ্ডস-এর দ্বীপের কথা তাও কিছু কিছু মানুষে জেনেছে। আউটার আইল্যাণ্ডসে যে-চারটি পুঞ্জ আছে তাদের নাম হল আসিরান্তেস, আলফোঁস, ফারকুহার আর আলডাবরা। এদের মধ্যে মধ্যে স্বর্গের মতো সুন্দর অ্যাটলও আছে অনেক।

অনেক দ্বীপেই মাহে থেকে ছোটো আইল্যাণ্ডার প্লেনে করে যাওয়া যায়। এয়ারস্ট্রিপ নেই—নারকেল গাছের বনের মধ্যেই ফাঁকা জায়গাতে প্লেনের একটি ফ্লিট আছে। আট-দশজন পাইলটও আছে। তাদের ক্যাপ্টেন হচ্ছে একজন পাঞ্জাবি অল্পবয়েসি ছেলে। জেনে ভালো লাগল। এই প্লেনে করেই গেছিলাম প্রাঁলে দ্বীপে।

লাল ঠোঁট লাল ল্যাজ-এর টুপিক বার্ড দেখা যায় এখানে। শরীরটা মসৃণ সাদা। নানারকমের টার্ন আছে। নডি টার্নদের আমাদের দেশের ধনেশদের মতো দুটি রকম আছে। গ্রেটার এবং লেসার। ব্রাউন নডি টার্ন, সুটি টার্ন আছে। ওদের আরেক নাম ওয়াইড-অ্যাওয়েক টার্ন। কিছু দেখলেই জোরে চিৎকার করে ওঠে। ওরকম নাম, কারণ, তারা সদা জাগ্রত। আমাদের দেশের টিটি পাখি বা ল্যাপউইং-এর মতো। সাদা-কালো আরও একরকমের টার্ন দেখা যায় এখানে। ওদের নাম ফেরারি টার্ন। পুরো সাদা ঠোঁট, পা আর চোখ কালো। একরকমের Ibis আছে যা Endemic। আলডাবরা দ্বীপেই পাওয়া যায়। ওদের বলে স্যাক্রেড আইকিস। ‘স্যাক্রেড’ বলে ওদের চোখের জন্য। আশ্চর্য নীল চোখ ওদের—চায়না ব্লু।

আলডাবরাতে আর একরকম পাখি দেখতে পাওয়া যায়—রেইল। রেইল পাখি হলেও উড়তে পারে না। যেহেতু উড়তে পারে না, এদের প্রজাতিরা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সামুদ্রিক দ্বীপগুলিতেই এসব পাখি বেশি দেখতে পাওয়া যায়। যেমন আন্দামানের-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের মেগাপাড। মরিশাসের ডোডো এবং হাওয়াইয়ান দ্বীপপুঞ্জের নেনে।

অ্যাস্টর দ্বীপে পাখিদের স্যাংচুয়ারি আছে। টুরিস্টরা সেখানে যান পাখি দেখতে, বিশেষ করে পাখিপ্রেমীরা।

আপনারা যদি কেউ স্যেশেলস-এ যান বেড়াতে তবে মিস্টার Tom Bowers-এর সঙ্গে দেখা করে আসবেন যদি অবশ্য এখনও তিনি বেঁচে থাকেন। আমি তো গেছিলাম প্রায় ত্রিশ বছর আগে। এতদিনে কত কী পরিবর্তন এসেছে কে জানে!

কত গাছ যে আছে ওখানকার নিজস্ব। কত ফুল। Sangdragon নামের একরমের বড়ো বড়ো গাছ হয়, তাদের নীচে নীচে আলো-ছায়ার দোলনায় দুলে দুলে বনপথে চলতে ভারি ভালো লাগে। সাদা সাদা ছোটো ছোটো ফ্যাঙ্গিপ্যানি ফুল যখন ফোটে তখন সারাদ্বীপকে সুগন্ধে ভরে দেয় ছোটাছুটি করা হাওয়া। একরকমের বড়ো বড়ো গাছ হয়, অনেকটা আমাদের কৃষ্ণচূড়ার মতো। তাদের নাম ফ্ল্যামবয়্যান্ট। তাদের নামেই তাদের পরিচয়। লালের যে কতরকম হতে পারে কী বলব। সারাবনে রঙের বন্যা বইয়ে ফোটে সে-ফুল। হাইবিসকাস-এর যে কতরকম। না দেখলে বিশ্বাস হয় না। হাইবিসকাস মানে আমাদের জবা।

এখানে প্রত্যেক বাড়িতেই সজনে গাছ দেখতে পাওয়া যাবে কিন্তু সজনের ডাঁটা ওরা খেতে জানে না। ‘সজনের ফুল উড়ে উড়ে পড়ে দূরে, নরম দুপুরে মাছরাঙা পাখি ঝিমোয়’।

স্যেশেলস আমার বড়ো প্রিয় জায়গা। তাই সে জায়গার কথা বলতে বসে খেই হারিয়ে ফেলি। এই বাচালতা ক্ষমা করবেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *