স্বীকারোক্তি

স্বীকারোক্তি 

সন্ধ্যা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আশফাক চৌধুরীর বাড়ির চকচকে বসার ঘর। সারা ঘরে অনেকগুলো বৈদ্যুতিক বাতি লাগানো থাকলেও মাত্র দুটো বাতি জ্বালানো আছে। সেই আলো ঘরটাকে আরও অন্ধকার করে দিয়েছে। 

টুং করে শব্দ হল। 

জেনারেল কাঁচের গ্লাসটা পলিশ করা কাঠের টেবিলের ওপরে রাখতে রাখতে স্কচের বোতলটা টেনে নিলেন। কাঁচের গ্লাসটা খয়েরী রঙের তরলে ভরে গেল। তারপর গ্লাসটা প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দিকে এগিয়ে দিলেন জেনারেল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আশফাক চৌধুরী স্কচের গ্লাসটা মেজর জেনারেল ফিরোজের দিকে বাড়িয়ে ধরলেন। মেজর জেনারেল মাথা নেড়ে জানালেন যে তিনি খাবেন না। স্কচ খাবেন না নাকি কিছুই খাবেন না- সেটা বোঝা গেল না। 

আশফাক চৌধুরী স্কচের গ্লাসটা টেবিলের ওপর রেখে দিলেন। না খেলে নাই। কোন জোর জবরদস্তি নাই। ডান পাটা বামপায়ের ওপরে তুলে আশফাক চৌধুরী ফিরোজের দিকে তাকালেন। ভেতরে ভেতরে আশফাক চৌধুরী অনেক খুশি। নিজেকে অনেক বড় মনে হচ্ছে তার। হাতি আজ কাদায় পড়েছে। মেজর জেনারেল ফিরোজের দাপটে গত কয়েক বছর তিনি প্রধানমন্ত্রীর আশেপাশে যেতে পারেননি। নিজের ছেলেটাকে ক্যাডেটে ভর্তি করানোর জন্য একটু সুপারিশ চেয়েছিলেন আশফাক সাহেব। সেটাও মেজর জেনারেল ফিরোজ করেননি। বলে কিনা, ভর্তি পরীক্ষায় যেটা হবে সেটাই। আবার উপদেশ দেয়, সুপারিশ করে ছেলেকে পঙ্গু করে দেবেন না। তুই ব্যাটা চিরকুমার। তুই কি বুঝবি বাচ্চা কাচ্চার ব্যাপার? দেমাগের ঠ্যালায় তোমার মাটিতে পা পড়ে না। বিদেশ থেকে ট্রেনিং নিয়ে এসেছ বলে এত অহংকার। বিদেশ থেকে তো এমনি আসো নাই। দিছে তো পাছায় লাখি দিয়ে খেদায়ে। আরে ব্যাটা, তোর মত দশটা ফিরোজকে আশফাক চৌধুরী পকেটে নিয়ে ঘোরে। এতদিন পরে আজ সুযোগ এসেছে। আশফাক চৌধুরীর পুরু গোঁফের নিচে একটু মুচকি হাসি চাপা পড়ে গেল। 

আশফাক চৌধুরী কেশে গলাটা পরিস্কার করে নিলেন। তারপর বললেন, “ফিরোজ সাহেব।” 

“হুম বলেন।” ফিরোজ হক সোফার ওপরে একটু নড়েচড়ে বসতে বসতে বললেন। তার দৃষ্টি সোজা আশফাক চৌধুরীর চোখে। এইটা আশফাক চৌধুরী মোটেই আশা করেননি। চোখের দিকে তাকিয়ে থাকা মানুষের ভেতরে অপরাধবোধ কাজ করে না। অপরাধবোধ কাজ না করলে তাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তারপরেও হাল ছাড়া যাবে না। আশফাক চৌধুরী বললেন, “জেনারেল যা বলছেন সেগুলো কি সত্যি ফিরোজ সাহেব?” 

“কি বলেছেন জেনারেল?” ফিরোজ সাহেব একটু দূরে বসে থাকা জেনারেলের দিকে তাকিয়ে বললেন। জেনারেল সাহেব মূর্তির মত সোফায় বসে আছেন। তার দৃষ্টি একটা বইয়ে নিবদ্ধ। তার ভাব দেখে মনে হচ্ছে, তিনি অনিচ্ছাসত্ত্বেও এখানে আছেন। যেন আলাপচারিতায় নিজেকে জড়ানোর ইচ্ছা নেই তার। 

“প্রায়শ্চিত্ত প্রকল্পের ব্যাপারটা। এই প্রকল্প করতে গিয়ে এতগুলো মানুষের জীবন চলে যাওয়া- এগুলো কি সব সত্যি?” 

“আংশিক সত্যি।” 

“তাহলে পুরো সত্যটা কি?” 

“আপনার হাতে সময় আছে? আশা করব আপনি আমার কথা গুলো ধৈর্য্য ধরে শুনবেন।” 

“সময় আছে, বলেন।” আশফাক চৌধুরী চেয়ারে নড়ে চড়ে বসতে বসতে বললেন। 

“আজ থেকে পাঁচ বছর আগে আমি ডঃ বশির জামানের কাছে একটা প্রকল্প নিয়ে যাই। প্রকল্পটাতে একজন মনোবিজ্ঞানী হিসাবে তার সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। তিনি তখন ইতালিতে। প্রথমে রাজি না হলেও পরে তিনি আমাকে সাহায্য করবেন বলেও রাজি হয়ে যান। প্রথমে কেন রাজি হননি আর পরের বার কেন রাজি হলেন আমি জানি না। শুধু রাজিই হননি, গবেষণার জন্য তার পৈতৃক বাড়িটাও ব্যবহার করার অনুমতি দেন। গোপনীয়তা রক্ষার জন্য তাকে ইতালি থেকে এমনভাবে দেশে আনা হয়, যেন কেউ বুঝতে না পারে।” 

কিছুক্ষণ নীরবতা। তারপর আবার বললেন, “প্রায়শ্চিত্ত প্রকল্পের একটাই উদ্দেশ্য ছিল, অপরাধীদেরকে আবার সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা। আমি লক্ষ্য করছিলাম, অপরাধীরা কারাগারে গিয়ে আরও বেশি অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এর অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে বলে আমার মনে হয়েছিল। একটা বড় কারণ ছিল পরিবেশ। জেলখানার পরিবেশ অপরাধীদেরকে নিজের ভুল বুঝতে সাহায্য করে না। বরং নিজের কৃত অপরাধের জন্য অপরাধীদের মনে একটা অহংকার জন্মাতে থাকে। মানে ব্যাপারটা অনেকটা বাউন্টি হান্টিং-এর মত। যে যত বেশী অপরাধ করেছে তার সম্মান জেলখানাতে তত বেশী। কেউ সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা করলেও পরিবেশের কারণে সেটা সম্ভব হয় না। কারাগারে গেলে প্রায়শ্চিত্তের বদলে একজন অপরাধী আরও পাপের জালে জড়িয়ে পড়ে। আরও অপরাধ করতে উৎসাহিত হয়। নানা রকম অপরাধে তারা একরকম আসক্ত হয়ে পড়ে। আমরা যে অপরাধীদেরকে নিয়ে কাজ করছিলাম, তাদের সাথে কথা বলে এই ব্যাপারে আরও নিশ্চিত হয়েছি। তাছাড়া আমাদের সমাজে সব অপরাধীকেই খারাপ একজন মানুষ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সব অপরাধী খারাপ মানুষ না, কিন্তু সব খারাপ মানুষই অপরাধী এই জিনিসটা আমরা বুঝতে চাই না। এবং একটা মানুষের অপরাধী হয়ে যাওয়া অনেকটা সমাজের ওপরে নির্ভরশীল। সমাজ যদি একজন অপরাধীর ভেতরে ইতিবাচক সম্ভাবনা দেখতে পারে তাহলে তার জন্য জেলখানার আর প্রয়োজন হওয়ার কথা না।” 

“তো আপনি কি করলেন? তাদেরকে আরও ভালোভাবে প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিলেন। এইতো? গলায় তাচ্ছিল্যের সুর নিয়ে আশফাক চৌধুরী বললেন।” 

“অনেকটা সেরকমই। কিন্তু আমরা নিশ্চিত হতে চাচ্ছিলাম ঠিক কিভাবে অপরাধীদেরকে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যায়। তাদেরকে জোর করে মানসিক চাপ দিয়ে? নাকি আত্মউপলব্ধির মাধ্যমে? আমরা আমাদের তেরোজন অপরাধীদেরকে দুটো গ্রুপে ভাগ করে ফেলি। একটা গ্রুপকে আমরা এটা বোঝানোর চেষ্টা করি যে, তাদের অপরাধের পেছনে তাদের কোন হাত ছিল না। সামাজিক কারণে, অথবা পারিবারিক কারণে অথবা অন্য কোন কারণে তারা অপরাধগুলো করতে বাধ্য হয়েছে। এখানে তাদের কোন দোষ নেই। তারা যেন অপরাধবোধে না ভোগে। এই গ্রুপটাকে নিয়মিত প্রার্থনা করার সুযোগ দেওয়া হয়। ভালো ভালো সিনেমা দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। একটা লাইব্রেরীরও ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় তাদের জন্য। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য প্রতি সপ্তাহে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হত যে তারা কি বই পড়ছে। মাঝে মাঝে অনেকে খুব বিষন্ন হয়ে যেত। অনেক কান্নাকাটি করত। তাদেরকে আমরা বাগান করার ব্যাপারে উৎসাহ দিতে থাকি। বিভিন্ন ধরণের লেখালেখিতে উৎসাহিত করতে থাকি। জোর জবরদস্তি না। শুধুমাত্র উৎসাহ। শুধুমাত্র পরামর্শ।” 

“আর আরেকটা গ্রুপে?” 

ফিরোজ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন। তারপর উঠে গিয়ে স্কচের গ্লাসটা হাতে নিলেন। গ্লাসের সম্পূর্ণ স্কচটা বেসিনে ফেলে দিয়ে ফিল্টার থেকে পানি খেলেন। তারপর চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললেন, “দ্বিতীয় গ্রুপটাকে আমরা রোজ মনে করিয়ে দিতাম যে তারা অপরাধী। এই কারণেই তারা সমাজে আলাদা। তাদের সাথে একজন অপরাধীর মতই আচরণ করা হত। তাদেরকে বলা হত যে তারা সমাজের কীট, সমাজের ক্যান্সার। কারণ তাদের দেখে অন্যরাও অপরাধ করতে উৎসাহিত হচ্ছে। প্রথম গ্রুপটার মত তাদেরকে লাইব্রেরী, বাগান করার মত সুযোগগুলো দেওয়া হত না। রুটিন করে শাস্তি দেওয়া হত দ্বিতীয় গ্রুপের সবাইকে।” 

“কি ধরণের শাস্তি?” 

“সেটা বলতে বাধ্য নই আশফাক সাহেব। সেটা আমাদের গবেষণার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ।” 

“আপনি মনে হয় ভুলে যাচ্ছেন ফিরোজ সাহেব যে আপনি নিজেই এখন একজন অপরাধী। আপনার হাতে দশজনেরও বেশি মানুষের রক্ত লেগে আছে। কাজেই এই মুহূর্তে স্পর্ধা দেখানো মনে হয় আপনার শোভা পায় না।” 

ফিরোজ সাহেব এক দৃষ্টিতে আশফাক সাহেবের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। তার ভেতরে কোন ভাবান্তর দেখা গেল না। তিনি একবার জেনারেলের দিকে তাকালেন। জেনারেল তখনও নীরব শ্রোতা। বই হাতে বসে আছেন। 

“বলেন ফিরোজ সাহেব। ঠিক কি ধরণের শাস্তি দেওয়া হত?” 

“তাদেরকে একে অন্যের সাথে মারপিট করতে বাধ্য করা হত। তাদেরকে বলা হত, নিজেকে কষ্ট দেওয়াটাই তাদের জন্য প্রায়শ্চিত্ত।” 

“কিভাবে?” 

“আমাদের কিছু স্টাফ সেখানে কাজ করত। বশির জামান ইচ্ছাকৃতভাবে অপরাধীদেরকে উস্কানি দেওয়াতেন। যাতে তারা নিয়ম ভাঙে। আর নিয়ম ভাঙার ফলে আমরা একটা কাজ করতাম। যে নিয়ম ভেঙেছে তাকে দিয়ে এমন একজন অপরাধীকে মারতে বলতাম যে নিয়ম ভাঙেনি। দুইপক্ষেরই আত্মরক্ষার সুযোগ থাকত। তাই এর ফলাফলও হত অমানুষিক রক্তারক্তি।” 

“এটা করার কারণ কি?”

“এটাকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলে কন্ট্রোল থিওরি। কার্ল মার্ক্সের শ্রেণী বিভাজনের কিছুটা ছাপ আছে এখানে। এটা করার কারণ হল, আমরা এটা দেখতে চাইতাম, একজন অপরাধী যখন নিজে একটা অপরাধের শিকার হয়, তখন যে অপরাধ করছে তার ওপরে কি রকম রিয়েক্ট করে। তাছাড়া যে নিয়ম ভেঙেছে তার ভেতরে কোন অপরাধবোধ কাজ করে কিনা সেটাও দেখা হত।” 

কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে মেজর জেনারেল ফিরোজ আবার বললেন, “দুই গ্রুপের কাউকেই জানতে দেওয়া হত না যে আরেকটা গ্রুপে কি হচ্ছে। বশির জামান প্রতিদিন আমাকে রিপোর্ট করতেন। মোটামুটি সবই ঠিক চলছিল, হঠাৎ করে বশির আমাকে এই তথ্য জানানো বন্ধ করে দেন। পরপর দুইদিন আমি রিপোর্ট পাই না। কি হচ্ছে না হচ্ছে আমি কিছুই জানতে পারি না। তারপর এক গার্ড আমাকে ফোন করে জানায় যে……”

আশফাক চৌধুরী একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লেন। আনমনে মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন, “এটাই কি সেই তেরোজন যাদেরকে প্রধানমন্ত্রী খুঁজছেন?” ফিরোজ যেন কিছুটা চমকে উঠলেন। এই তথ্য আশফাক চৌধুরীর জানার কথা না। কিভাবে জানলেন? যদি হ্যাঁ বলা হয়, তাহলে পেছনের সবগুলো ঘটনা আশফাক চৌধুরীকে বলতে হবে। আর তিনি যে প্রধানমন্ত্রীকে বলবেন না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। আর যদি না বলা হয়, তাহলে পাল্টা প্রশ্ন আসবে যে তাহলে এই লোকগুলোকে আপনি কোথা থেকে পেলেন? ফিরোজের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করল। 

“কি হল? বলেন ফিরোজ সাহেব?” আশফাক চৌধুরী সামনের টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা চুরুট বের করতে করতে বললেন। নিজেকে ঈশ্বরের সমতুল্য মনে হচ্ছে তার। কারণ, মেজর জেনারেল ফিরোজের কাছে কৈফিয়ত চাওয়ার সুযোগ সাত জন্মের ভাগ্য না থাকলে হয় না। 

“হ্যাঁ।” ফিরোজ সাহেব দ্বিধাহীন কণ্ঠে বললেন। 

চুরুটে আগুন ধরতেই আশফাক চৌধুরী বললেন, “আমি আগেই অনুমান করেছিলাম। জেনারেলকে বলেছিলামও। জেনারেল বিশ্বাস করেননি। ওই তেরোজনের ব্যাপারে আমরা অবশ্য তেমন একটা কথা বলতেও পারতাম না, কারণ-” আশফাক চৌধুরী চুরুটে লম্বা একটা টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়লেন, তারপর বললেন, “কারণ প্রধানমন্ত্রীর বারণ ছিল। মিডিয়া যদি এতটুকু গন্ধ পেত, তাহলে আর দেখতে হত না। কেলেঙ্কারি হয়ে যেত। বাদ দেন। তো এত খুনখারাপি কিভাবে হল?” 

ফিরোজ বুকের ভেতরে আটকে থাকা একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে দিলেন। আশফাক চৌধুরী অতীত ঘাঁটাঘাঁটি করছেন না। কিন্তু তারমানে কি এইলোক জেল ভাঙার সব ঘটনা জানে? জানলে বলছে না কেন? ফিরোজ সব অস্বস্তি চাপা দিয়ে একটা স্বস্তির শ্বাস নিয়ে বললেন, “আমি জানি না। ডঃ বশির জামানকে যতক্ষণ না পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত কিছুই জানা যাচ্ছে না কিভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল। আমরা গবেষণার প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম। সবাইকে একটা সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতাম আমি। প্রত্যেককে আমার এজেন্সীতে চাকরিও দিতাম। তারা যেন আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে সেই চেষ্টা করতাম। কিন্তু … “ 

“এখনও আপনি এটাকে দুর্ঘটনা বলছেন মেজর জেনারেল? মানুষকে গিনিপিগ বানিয়ে গবেষণা করাটা মোটেই দুর্ঘটনা না মেজর জেনারেল। আর মিথ্যা কেন বলছেন শুধু শুধু? এরা এক একজন মৃত আসামী। সবাই জানে এরা মারা গিয়েছে। এদেরকে আপনি কিভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিতেন? মানুষকে দেখাতেন যে এই দেখ, এরা আসলে মরেনি, প্রধানমন্ত্রী এদেরকে লুকিয়ে রেখেছিলেন। তাই তো? বাদ দেন। কতজনের লাশ পেয়েছেন এখন পর্যন্ত?” 

“বত্রিশ জনের। বেশিরভাগ লাশেরই চেহারা ক্ষতবিক্ষত করে দেওয়া হয়েছে। তাই চেনা যাচ্ছে না। বাইশটা লাশের ভেতরে দশটা লাশই যে সেই অপরাধীদের এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত। বাকিরা প্রকল্পে নিয়োজিত কর্মী।” 

“কিভাবে নিশ্চিত হলেন? বললেন তো চেহারা চেনা যাচ্ছে না।” 

“তাদের সবার নিতম্বে একটা করে নম্বর আঁকা ছিল। উল্কি আর কি। ওরা এটা জানত না। প্রকল্পের শুরুতে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় সময় প্রত্যেককে অজ্ঞান করে এই উল্কি এঁকে দেওয়া হয়। এই উল্কি দেখেই ওদেরকে শনাক্ত করা হয়েছে।” 

“তাহলে আর বাকি তিনজন অপরাধী?” 

“জানি না। ওরা বেঁচে আছে না মারা গেছে সেটাও জানি না। ডঃ বশির জামান কিংবা মেজর ইকবালও এদের কোন একজনকে খুঁজে বের করতে পারলেই জানা যাবে সেই তিনজনের কি হয়েছিল। বা কি হয়েছে।” 

ফিরোজ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন। চুপ করে থাকলেন বাকি দুইজনও। তিনজনই কিছু একটা বলতে চান। কিন্তু কি বলতে চান সেটাই যেন জানেন না। ফিরোজই সবার আগে নীরবতা ভাঙলেন। বললেন, “আপনার কাছে এটা নৃসংশতা মনে হতে পারে কিন্তু, এরকম গবেষণা আগেও হয়েছে। জানেন না, তাই নৃশংস মনে হওয়াটা স্বাভাবিক। 

“কোথায় হয়েছে?” যেন খেঁকিয়ে উঠলেন আশফাক চৌধুরী।”

১৯৫৪ সালে উত্তর আমেরিকার ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২২ জন এগারো বারো বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে একটা গবেষণা করা হয়। এরা প্রত্যেকেই প্রায় একই সামাজিক অবস্থান থেকে উঠে এসেছিল। এদেরকে দুইটা দলে ভাগ করে আলাদা আলাদা সামার ক্যাম্পে নিয়ে রাখা হয়। একটা গ্রুপে কি হচ্ছে না হচ্ছে তা আরেকটা গ্রুপকে জানতে দেওয়া হত না। পুরোটা গ্রীষ্ম তাদেরকে একসাথে রাখার পরে যখন হঠাৎ করে দুইটা গ্রুপকে একটা ক্যাম্পে থাকতে বলা হয়, একসাথে দৈনন্দিন কাজ করতে বলা হয়, তখন দুইটা গ্রুপের ভেতরে একটা চাপা ক্ষোভ দেখা যেতে থাকে। দুইটা গ্রুপ পরস্পকে সহ্য করতে পারে না। এই নিয়ে সহিংসতাও দেখা দেয়। পরে অবশ্য কর্তৃপক্ষ কিছু দলগত কাজের মাধ্যমে তাদের ভেতরে সম্প্রীতি আনার চেষ্টা করে। এই যেমন একসাথে বাজি পোড়ানো, একসাথে রান্নারান্না করা ইত্যাদি। তাদের ভেতরে দুরত্ব কমে আসে। তারা ক্যাম্পিং শেষে একই বাসে বাড়িও ফেরে। কিন্তু ঝামেলা হয় তখন, যখন ১৯৫৬ সালে গ্রুপ দুইটার কয়েকটা ছেলে পরস্পরের হাতে খুন হয়। এটাকে কর্তৃপক্ষ কাকতাল হিসাবে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও ব্যাপারটা এখন পর্যন্ত অমীমাংসিত।” 

আশফাক চৌধুরী কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে বললেন, “পশ্চিমা দেশগুলা আমাদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য অনেক কিছুই করে, তাই বলে আমাদেরকেও করতে হবে? আপনি এই যে কাজটা করলেন, খুব কি বুদ্ধিমানের কাজ হয়েছে?” 

ফিরোজ একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললেন, “আপনি উইলিয়াম গোল্ডিং-এর লর্ড অফ দ্য ফ্লাইজ পড়েছেন?” 

আশফাক চৌধুরী মাথা নাড়লেন। এই সব বইটই পড়া তার কাজ না। তিনি ফিরোজকে তোয়াক্কা না করার ভঙ্গিতে পাশের টেবিলে রাখা অ্যাশট্রেতে চুরুট রাখলেন। 

তারপর অ্যাশট্রেটা সরিয়ে রাখতে রাখতে জেনারেলকে বললেন, “জেনারেল, কি করবেন তাহলে?” 

জেনারেল বইয়ের পাতা থেকে মুখ সরালেন। হাতের বইটা টেবিলের ওপরে রেখে এই প্রথম তিনি বললেন, “ফিরোজকে আমি অনেক বিশ্বাস করতাম। অনেক ভরসা করতাম। কিন্তু ও যে এই রকম একটা কাজ করে ফেলবে আমার জানা ছিল না।” 

জেনারেলের কণ্ঠে আফসোস। কৃত্রিম আফসোস। 

“এইজন্য ফিরোজের কোর্টমার্শাল হওয়া ছাড়া তো আর উপায় দেখি না আশফাক। আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটা ব্যাপার আছে। আন্তর্জাতিক মহলে যদি জানাজানি হয় তাহলে ফিরোজকে আরও বড় বিপদের ভেতরে পড়তে হবে। প্রধানমন্ত্রী মহোদয় ব্যাপারটা জানলে কি হবে ভেবে দেখেছ আশফাক? যাকে তিনি এত বিশ্বাস করতেন সেই মানুষটাই তার নাকের নিচ দিয়ে জেল ভেঙে তেরোজন আসামীকে বের করে নিয়ে গেল। এখনও পুলিশ শিকারী কুকুরের মত সেই তেরোজনকে খুঁজছে।” 

আশফাক ফোঁড়ন কেটে বললেন, “আরও একজনকে খুঁজছে। সাবেক জেলসুপার, শংকর সাহা। আর শংকরের বউ আর মেয়েটাকেও খুঁজছে। কোথায় যে গা ঢাকা দিয়েছে। ওরে পেলে হইছে, বুজছেন।” 

জেনারেল বললেন, “আজ নাহয় কাল এই প্রায়শ্চিত্ত প্রকল্পের কেলেংকারী ধরা পড়বেই। তখন কি হবে ফিরোজ? কতদিন তুমি এই কেলেঙ্কারী লুকিয়ে রাখবা? তোমার সারেন্ডার করা উচিত। তাতে সবার মঙ্গল। তোমার জন্যও, তোমার এজেন্সীর জন্যও।” 

ফিরোজ একদৃষ্টিতে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে। মেঝের দামি ইরানী কার্পেটটার নকশাটা তার কাছে খুব অদ্ভুত মনে হল। সবগুলো ফুলের লতা ঘুরে ফিরে একটা ফুলেই এসে মিশছে। তারপর আবার ছড়িয়ে গিয়েছে। পাতাগুলো দেখে মনে হচ্ছে যেন ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে পড়ছে। সবগুলো পাতার সংখ্যা যোগ করলে আবার লতাগুলোর সংখ্যার সমান হচ্ছে। 

আত্মসমর্পন করবেন? আত্মসমর্পণ করলে কি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে? আত্মসমর্পণ করে কি বলবেন সবাইকে? যে তিনি নির্দোষ? তিনি যদি নির্দোষ হন, দোষী কে? নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য আসল দোষীকে খুঁজে বের করতে হবে তাকেই। বশির জামানকে তিনি ছাড়া আর কেউ খুঁজে বের করতে পারবে না। সেই সামর্থ্য আর কারও নেই। 

জেনারেলের গলা খাঁকারি দেওয়ার শব্দে ফিরোজের ধ্যান ভাঙল। আশফাক চৌধুরী অনেক কষ্টে নিজের খুশি চাপা দিয়ে বললেন, “কি হল ফিরোজ সাহেব? কি ভাবছেন? এই পাপের প্রায়শ্চিত্ত কিভাবে করবেন? হ্যাঁ?” 

ফিরোজ জেনারেলের চোখে চোখ রেখে উত্তর দিলেন, “দশদিন সময় দিন জেনারেল। দশদিনের ভেতরে আমি বশির জামান আর ইকবালকে খুঁজে বের করছি। তারপর আপনারা সিদ্ধান্ত নেবেন কি করবেন।” 

জেনারেল আর আশফাক চৌধুরী মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন। আশফাক চৌধুরী কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন। জেনারেল তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, “দশদিন না, এক সপ্তাহ। এক সপ্তাহের ভেতরে তুমি ওদেরকে খুঁজে বের করবে। তারপর আমাকে জানাবে ঠিক কি হয়েছিল। না হলে পরিস্থিতি সামলাতে আমরা মাননীয় প্রধামন্ত্রীকে জানাতে বাধ্য হব। এই অপরাধীগুলো এখন সাধারণ মানুষদের ভেতরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কাল যদি এরা কারও মৃত্যুর কারণ হয় তাহলে তার সম্পূর্ণ দায়ভার কিন্তু তোমার ফিরোজ। এটা মনে রেখো।” 

ফিরোজ মাথা নেড়ে সামরিক কায়দায় জেনারেলের কাছ থেকে বিদায় নিল। আশফাক চৌধুরীর মুখ দেখে বোঝা গেল তিনি মোটেই খুশি হননি। মেজর জেনারেল ফিরোজ রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে আশফাক চৌধুরী জেনারেলকে বললেন, “এইটা আপনি কি করলেন জেনারেল? ফিরোজকে সাতদিন সুযোগ দেওয়া মানে বুঝছেন? সে পুরো ব্যাপারটা ধামাচাপা দিয়ে ফেলবে। ওর মত চালবাজ লোক পুরো ডিফেন্সে আর একটা নেই। আপনি চেনেন ওকে?” 

“এইজন্যই সুযোগ দিলাম। ওকে অনুসরণ করলেই বশির জামান আর শংকরকে পাওয়া যাবে। আমাদেরকে আর কষ্ট করে খুঁজতে হবে না। বশির জামান আর শংকর ধরা পড়লে তেরোজন আসামীর কেলেংকারীও ফাঁস হয়ে যাবে। আমরা বশির আর শংকরকে সাক্ষী হিসাবে ব্যবহার করব। ক্ষমতাসীন দল আমাদের কাছে জিম্মি হয়ে যাবে। আমরা মিডিয়াকে বলব, প্রায়শ্চিত্ত প্রকল্পে সরকারের সায় ছিল। আর এই সুযোগে একটা অভ্যুত্থান ডেকে সামরিক শাসন জারি করে ফেলব। আর তফিসুল বারীকেও সরিয়ে দেব।” 

আশফাক চৌধুরীর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। প্রধানমন্ত্রীকে খুন করে ফেলার পরিকল্পনা করছেন জেনারেল! এইটা হলে দেশে কি হবে লোকটা কি একবারও ভাবেনি? 

জেনারেল স্কচের গ্লাসটা এক ঢোঁকে শেষ করে বললেন, “তফিসুল সরে গেলেই আমি তোমাকে ওই চেয়ারটাতে বসাব। তাছাড়া, ভয়ের কোন কারণ নেই, আমি জানি কারা এই কাজটা নিখুঁতভাবে করতে পারবে। এমন কেউ, যার সাথে তফিসুল বারীর অনেক পুরনো শত্রুতা আছে।” 

আশফাক চৌধুরী বোকার মত জেনারেলের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। তারপর বললেন, “কংসচক্র?” 

জেনারেল মাথা নাড়লেন। 

আশফাক চৌধুরীর চোয়াল ঝুলে পড়ল। এই অভিশপ্ত দলটার নৃশংসতা তার এখনও মনে আছে। তিনি নিজের কানে বিশ্বাস করতে পারলেন না যে জেনারেল এদেরকে আবার দেশে ফিরিয়ে আনবেন। 

“জেনারেল। আপনি বুঝতে পারছেন আপনি কাদের কথা বলছেন?”

“বুঝতে পারছি বলেই বলছি।” 

“আপনার মনে আছে তো এরা কারা?” 

“আছে। তোমাকে অত কিছু নিয়ে ভাবতে হবে না আশফাক। তুমি ফিরোজকে ফলো করার ব্যবস্থা কর।” 

আশফাক পাঞ্জাবীর পকেট থেকে মোবাইল বের করলেন। বারান্দায় গিয়ে সেলফোনে কাকে যেন ফোন করলেন। বললেন, “একটা কালো ল্যান্ডরোভার বের হবে একটু পরে। ওটাকে ফলো কর।” 

আশফাক চৌধুরী জানেন কিভাবে মানুষকে হাতের পুতুল বানাতে হয়। পুতুলের লাশের ওপরে হেঁটে তিনি এই পর্যায়ে এসেছেন। 

***

কিন্তু আশফাক চৌধুরীও জানেন না, মেজর ফিরোজ তার আহত স্বপ্নটাকে পুনর্জীবিত করতে কতদুর যেতে পারেন। জবাবদিহিতার অভ্যাস তার নেই। কারও কাছে জবাবদিহি করাকে খুব বেশি ঘৃণা করেন ফিরোজ। আজ সেই কাজটাই তাকে করতে হয়েছে। বাধ্য হয়ে। 

“আমি শুধু নিজের কাছে জবাদিহি করি জেনারেল। এই জবাবদিহিতার ফল আপনি পাবেন।” – ফিরোজ মনে মনে বললেন। পার্কিং লটে গিয়ে মেজর রঞ্জনকে ফোন করলেন। সিসিটিভি ফুটেজগুলো নিয়ে তার বাসায় দেখা করতে বললেন দুই ঘণ্টার ভেতরে। আজ রাতেই বহরমপুরে ফিরতে হবে। যা কিছুর শুরু ওখানেই। কাজেই ওখান থেকেই বশিরকে খোঁজা শুরু করতে হবে। কিছুক্ষণ পরে ল্যান্ডরোভারে করে ফিরোজ বেরিয়ে গেলেন। বিপদে পড়লে মানুষ ঈশ্বরকে স্মরণ করে। ফিরোজও করলেন। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি ঈশ্বর পর্যন্ত যাবেন না ফিরোজ। 

একটা কালো টয়োটা ল্যান্ডরোভারটার পিছু নিল, নিঃশব্দে। 

শহরের আকাশে তখন মেঘ জমেছে। তারা গুলোকে আর দেখা যাচ্ছে না।

***

বহরমপুরের দিকে যাচ্ছে ল্যান্ডরোভারটা। চালক MRAU এর এজেন্ট মুসা। অপর আরোহী মেজর জেনারেল ফিরোজ এবং মেজর রঞ্জন। দুইজনেরই চোখ ল্যাপটপ স্ক্রিনে আটকে আছে। 

সবগুলো সিসিটিভি ফুটেজ কয়েকবার করে দেখা হয়ে গেছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে কোন ফুটেজেই সেরকম কিছু নেই। বেশকিছু ফুটেজে অবশ্য কয়েদীদের ভেতরে হাতাহাতি হওয়ার খণ্ডচিত্র দেখা গিয়েছে। একটা ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, দুইজন কয়েদী মিলে একজন কয়েদীকে খুব জঘন্যভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাচ্ছে। এগুলো ঘটনাস্থলে ঘুরেই দেখা গিয়েছে যে পৈশাচিক একটা হত্যাযজ্ঞ হয়েছে। কিন্তু কিভাবে সেটার সূত্রপাত হল এইটা কোন ফুটেজেই দেখা গেল না। 

ফিরোজ আর রঞ্জন বারবার ফুটেজগুলো দেখছেন। যে তিনজন অপরাধী পালিয়ে গিয়েছে তাদের কোডনেম আর ফাইল নম্বরও পাওয়া গেছে। কিন্তু এই অপরাধীদের আসল নাম কোন ফাইলেই নেই। এই তিনজন অপরাধীদের কোডনেম হল প্রমিথিউস, হেডিস আর পোসাইডন। এদের আসল নাম একমাত্র বশির জামানই জানতেন। 

হঠাৎ একটা ফুটেজে মেজর জেনারেল ফিরোজের চোখ আটকে গেল। সেই জানালাহীন স্টোর রুমটার একটা ফুটেজ। তিনজন অপরাধীকে পালিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। স্ক্রিনের বাম কোণায় দুই সেকেন্ডেরও কম সময়ের জন্য একটা টাক মাথা দেখা গেল। এই টেকোমাথাটাকে ফিরোজের চিনতে ভুল হলো না। এই মাথার ওপরে বিশ্বাস করেই তিনি এই প্রজেক্টটা হাতে নিয়েছিলেন। কয়েদী তিনজনের বের হয়ে যাওয়ার কয়েক সেকেন্ড পরেই সিসিটিভিটা বন্ধ হয়ে যায়। 

“এইটা দেখো তো রঞ্জন।” ফিরোজ রঞ্জনকে ডেকে বললেন। রঞ্জন বেশ কয়েকবার ফুটেজটা দেখে বললেন, “স্যার, আপনি বলতে চাচ্ছেন এইটা বশির জামান? কয়েদীগুলোর সাথে তিনিও পালাচ্ছিলেন? ফুটেজ দেখে মনে হচ্ছে বশির ক্যামেরাটা বন্ধ করছেন।” ফিরোজ বললেন, “আমার তো সেরকমই মনে হচ্ছে। কিন্তু বশির কয়েদীদের সাথে পালিয়ে যাবে কেন? এর মানে বশির বেঁচে আছে!” 

গাড়ির ভেতরে একটা নীরবতা নেমে এলো। রঞ্জন আর মেজর জেনারেল কেউই স্বীকার করলেন না যে ডঃ বশির জামান বেঁচে আছেন। যেন মুখে স্বীকার করলেই বশির জামান সত্যি সত্যিই বেঁচে থাকবেন। 

আবার অস্বীকারও করলেন না। কারণ মানুষ সেটাই অস্বীকার করে যেটাকে সে ভয় পায়। 

ফুটেজটা প্লে হতে লাগল। বারবার। বারবার। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *