স্বামী-স্ত্রী ইত্যাদি
মহামতি শেক্সপিয়ার তাঁর বিখ্যাত নাটক মার্চেন্ট অফ ভেনিসে একটা মারাত্মক কথা বলেছিলেন। নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কের নবম দৃশ্যে নারিসা নামে এক নারী চরিত্রের মুখে এই সংলাপটি রয়েছে।
“Hanging and wiving go by destiny” মানে হল ফাঁসি হওয়া আর স্ত্রী পাওয়া দুই-ই ভাগ্যের ব্যাপার। বিয়ে যে একটা চরম ব্যাপার, ফাঁসি কাঠে ঝোলার মতোই মারাত্মক এবং সেটা ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল, শেক্সপিয়ারের এই সংলাপের ব্যাখা এটাই।
শেক্সপিয়ার ছাড়া সক্রেটিস আছেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিল বিয়ের সুখই বেশি না বিয়ে না করার সুখই বেশি।
ওই গ্রিক দার্শনিক অনেকক্ষণ ভেবেচিন্তে তারপর তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে উত্তর দিয়েছিলেন, এর কোনওটাই সুবিধের নয়।
তাঁকে প্রশ্ন করা হল, বিয়ে করলেও সুবিধে হবে না আবার বিয়ে না করলেও সুবিধে হবে না এই হেঁয়ালির মানে কী?
সক্রেটিস সাহেবের পরিষ্কার উত্তর হল, “বিয়ে করলে একদিন আফসোস করতে হবে কেন বিয়ে করেছিলাম এই ভেবে। আবার বিয়ে না করলেও একদিন আফসোস করতে হবে কেন বিয়ে করলাম না এই ভেবে।”
অন্য এক দার্শনিক বলেছিলেন, সবচেয়ে ভাল বিয়ে হল সেটা যেখানে স্বামী কালা এবং স্ত্রী অন্ধ। কথাটার সাদা অর্থ হল বউ কী বলছে স্বামী শুনতে পাবে না আর স্বামী কী করছে (স্বামীরা সাধারণত খারাপ কাজই করে) স্ত্রী দেখতে পাবে না—সেটাই সর্বোত্তম বিবাহ।
তবে সক্রেটিস সাহেবের বক্তব্যের কাছাকাছি উত্তর ভারতের একটা কথা আছে।
কথাটা হল, “বিয়ে জিনিসটা দিল্লির লাড্ডু, খেলেও পস্তাবে, না খেলেও পস্তাবে।”
উটপাখির সম্বন্ধে একটা গল্প আছে। চিড়িয়াখানায় উটপাখির খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে এক ভদ্রমহিলা জানতে চেয়েছিলেন, “এ জিনিসটা কী?”
সর্বত্রই কয়েকজন সবজান্তা লোক থাকে, ওই চিড়িয়াখানার মধ্যেও তার অভাব হয়নি। সেই সবজান্তা ব্যক্তিটি উটপাখি নিয়ে অনেক কিছু ব্যাখ্যা করে বোঝালেন তারপর বললেন, “সবচেয়ে মজার কথা এটা যে উটপাখি চোখে প্রায় কিছুই দেখতে পায় না আর যা কিছুই খায় তার সবই হজম করতে পারে।”
উটপাখির এই যোগ্যতা শুনে সবজান্তা ভদ্রলোককে অবাক করে দিয়ে ভদ্রমহিলা স্বগতোক্তি করলেন, “আহা! আমার স্বামী যদি এমন হত।”
অর্থাৎ ভদ্রমহিলার পতিদেবতা যদি সবকিছু একটু কম দেখতে পেতেন আর ভদ্রমহিলার রান্না ছাইভস্ম খেয়ে হজম করতে পারতেন তা হলে কী ভালই না হত।
এরপর একটা বিয়ের গল্প বলি।।
এক যুবক তার বন্ধুদের আড্ডায় সে কীরকম বউ আশা করে সেই বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করেছিল। সে বলেছিল, “আমার উপযুক্ত স্ত্রী হবে ঝলমলে, ঝকঝকে। সে কথা বলতে পারবে সবচেয়ে সুন্দরভাবে, সে হবে স্মার্ট, সদাসর্বদাই সুসজ্জিতা, সব বিষয়ে আলোচনা করতে পারবে তা ছাড়া সে নাচতে পারবে, ভাল গাইতে পারবে।”
ভাবী বধুর রূপগুণের এই ফিরিস্তি শুনে বন্ধুরা তো অবাক, শুধু তাদের মধ্যে একজন বলল, “একটা মেয়ের মধ্যে এতসব পাওয়া অসম্ভব, আসলে তুমি একটা টেলিভিশন সেট কিনতে চাইছ। ”
অন্যদিকে এক চিরকুমারী বিলিতি মেমসাহেবের সেই পুরাতন উক্তিটিও স্মরণ করি। এক নাবালক ভাইপো পঞ্চাশ পেরোনো সেই অবিবাহিতা পিসিকে একদিন সাগ্রহে জিজ্ঞাসা করেছিল, “সোনাপিসি তুমি কোনওদিন বিয়ে করলে না কেন? তুমি এখনও দেখতে ভাল, আগে নিশ্চয় আরও ভাল ছিলে, খাঁটি সুন্দরী ছিলে, তা ছাড়া লেখাপড়া জাননা, ভাল চাকরি করো আমাদের মতো উচ্চবংশের মেয়ে তুমি। তবু তুমি বিয়ে করলে না।”
সোনাপিসি বুদ্ধিমতী রমণী, স্নেহাস্পদ ভ্রাতুপুত্রের অনাবিল কৌতূহল থামিয়ে খুব শান্ত গলায় তাকে নিজের বিবেচনার কথা জানালেন।
সব ভাইপোর নামই হয় বাচ্চু, যদিও এটা বিলেত দেশের গল্প তবু বাচ্চু নামটাই মানানসই। এই খণ্ডকাহিনীতে বাচ্চু নামটা ব্যবহার করছি।
সোনাপিসি নবযুবক বাচ্চুর মাথার ঘন চুলে বিলি কাটতে কাটতে বললেন, “বাচ্চু তুই তো জানিস, আমার একটা তোতাপাখি আছে সেটা সারাদিন চেঁচায়?”
বাচ্চু বলল, “হ্যাঁ, সোনাপিসি ওই তো খাঁচার মধ্যে রয়েছে তোমার আচাভূয়া কাকাতুয়া। সারা সন্ধ্যা, কাকে যেন ধমকাচ্ছে।”
সোনাপিসি মন দিয়ে শুনে বললেন, “বাচ্চু তুই তো জানিস আমার একটা কুকুর আছে সেটা শুধু শুধু ঘেউ ঘেউ করে।”
বাচ্চু বলল, “হ্যাঁ, সোনাপিসি ওই তো টাইগার, ভাগ্যিস চেনে বাঁধা আছে; আমাকে দেখার পর থেকে খালি লাফাচ্ছে আর গজরাচ্ছে, বাঁধা না থাকলে আমাকে ছিড়ে খেয়ে ফেলে দিত।”
সোনাপিসি ভাইপোর কুকুর বর্ণনা শুনে খুব খুশি হলেন তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমার টম বেড়ালটাকে দেখেছিস?”
বাচ্চু বলল, “না তো। তোমার একটা বেড়ালও আছে নাকি?”
সোনাপিসি বললেন, “আরে টম কি বাড়িতে থাকে যে দেখবি। শুধু খিদের সময়ে খাবার খেতে আসে। তুই তো আসিস সন্ধেবেলায়, তখন টম থাকে বাইরে, সারারাত বাড়ি ফেরে না।”
এতসব বলার পর সোনাপিসি বললেন, “বাচ্চ এবার বুঝতে পেরেছিস আমি কেন বিয়ে করিনি?” বাচ্চু বলল, “না।”
সোনাপিসি বললেন, “বিয়ে করব কেন? আমার বরের কী দরকার। আমার তোতাপাখি সারাদিন ধমকায়, আমার কুকুর ঘেউ ঘেউ করে। আমার বেড়াল সারারাত বাইরে থাকে। আমার একটা বর থাকলে সে তো এই সবই করত।”