স্বাধীনতা ও সংখ্যালঘুর দ্বিধা
হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের কথা বারবার আলোচনায় এসেছে। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই কাশ্মীরের সামাজিক ব্যবস্থায় জড়িয়ে রয়েছে ধর্মের প্রভাব আর নানা ধর্মীয় মতভেদ। ১৯৪৭ সালে এসে সেই রাজনীতি জটিল রূপ ধারণ করেছে। ক্রমে হয়েছে জটিলতর। শেখ আবদুল্লাহর কাশ্মীরিয়াতের বিপরীতে হিন্দু নেতাদের ভারতবাদের কথাও আগের আলোচনায় এসেছে। এখানে উল্লেখযোগ্য হলো, ১৯৯০-পরবর্তী সময়ে কাশ্মীরে হিন্দু জনসংখ্যার কী হয়েছিল? অধিকাংশ ভারতীয় বয়ানে শোনা যায় যে, কাশ্মীরি মুসলমানরা হিন্দুদের তাড়িয়ে দিয়েছিল।
অর্থাৎ, তারা সাম্প্রদায়িক, হিন্দু বিদ্বেষী, সহিংস। ওই বর্ণনায় পূর্বাঞ্চলীয় আরাকানের বৌদ্ধ আর কাশ্মীরি মুসলমানদের একই চেহারা ভেসে ওঠে সবার সামনে। আরও বড় দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টিকে সরলীকরণ করে বলা যায়, পৃথিবীর সবখানেই সংখ্যালঘুর ওপর সংখ্যাগুরুর চরিত্র যেমন এখানেও তেমন। কিন্তু, সমস্যার গভীরে যেতে হলে বহুমাত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার জন্য সকল পক্ষের মতামতের সমন্বিত উপস্থাপন জরুরি। আলেকজান্ডার ইভান্স” লিখেছেন, মুসলমানদের মতো কাশ্মীরি পণ্ডিতরাও ১৯৮৮ পরবর্তী সংঘাতের শিকার।
কিন্তু, তাদের কথা তুলনামূলকভাবে কম প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৯০ সালের আগে দুটিমাত্র গবেষণায় তাদের ইতিহাস ও নৃবিজ্ঞান তুলে ধরা হয়েছিল। অসংখ্য বইয়ে তাদের কথা উল্লেখ রয়েছে তবে সেটা খুবই সীমিত। তাদের সম্পর্কে অনেক নিবন্ধ আছে যার বেশিরভাগই তথ্য-উপাত্তহীন মতামত দিয়ে ঠাসা। হিন্দুদের পরিচালিত বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট এই ঘাটতি ইদানীংকালে পূরণ করেছে। তবে তারাও তুলনামূলকভাবে একপেশে তথ্য সরবরাহ করছে। ব্রাহ্মণদের ব্যাপারে প্রায় সব মতামতই ভিন্ন ভিন্ন জাতীয়তাবাদী’ প্রিজমের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা। ফলে, ব্রাহ্মণদের মোট সংখ্যা, নিহতের সংখ্যা এবং ঘরছাড়া হওয়া লোকের সংখ্যা নিয়ে চলছে ‘পরিসংখ্যানের রাজনীতি’। এসব কারণেই বিষয়টি আলোচনার জন্য সুনির্দিষ্ট কয়েকটি প্রশ্ন এখানে আলোচনা প্রয়োজন।
১. কাশ্মীরি সমাজে ব্রাহ্মণদের অবস্থান ঐতিহাসিকভাবে কেমন ছিল?
২. ১৯৯১ সালে কী প্রেক্ষিতে, কেন, কিভাবে এবং কতজন ব্রাহ্মণ কাশ্মীর ছেড়েছিলেন?
৩. তাদের কাশ্মীরে ফিরে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা আছে কি? তারা নিজেরা কী কাশ্মীরে ফিরতে আগ্রহী? এ অধ্যায়ে এই বিষয়গুলো আলোচনা করা হবে।
আগেই বলেছি, কাশ্মীরের সমাজে ব্রাহ্মণবাদ বা শিবের উপাসনা যাকে শেইবিজম বলা হয়, বিকাশ হয়েছে প্রাগৈতিহাসিক কালে। কাশ্মীরের পুরাকৃতি বা পুরাতত্ত্বের সঙ্গেও রয়েছে ব্রাহ্মণবাদ। কিন্তু, ইতিহাসের ধাপে ধাপে মানুষের পরিচয়বোধের পরিবর্তন ঘটেছে। গড়ে উঠেছে নতুন পরিচিতি ও ধর্মবোধ। হিন্দুত্ব থেকে বৌদ্ধ ধর্ম, তারপর ক্রমান্বয়ে ইসলাম সেখানে সংখ্যাধিক্য অর্জন করেছে চতুর্দশ শতকের পর থেকে। নেপালি গবেষক বিষ্ণু পোখরেল পরিবর্তনের গোটা বিষয়টিকে সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করেছেন তিনটি শব্দের মাধ্যমে। কনফ্লিক্ট, কো-অপারেশন ও কনভার্সন’। যাইহোক, চতুর্দশ শতকে বিপুল সংখ্যক মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছিল।
তা সত্ত্বেও ব্রাহ্মণদের একটা সংখ্যা অবশিষ্ট ছিল। নানা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেই তারা টিকে ছিলেন। ত্রয়োদশ শতকে রাজদেব (১২১৩ – ১২৩৬) কাশ্মীরি ব্রাহ্মণদের নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করতেন। যার ফলে পণ্ডিতরা এমনটা বলতে বাধ্য হতো যে, “আমি ভাত্তা নই’।” কাশ্মীরি ভাষায় ভাত্তা মানে কাশ্মীরি ব্রাহ্মণ। কাশ্মীরের ইতিহাসে ব্রাহ্মণদের অস্তিত্বের ইতিহাস আরও পুরনো, এমনকি হিন্দুবৌদ্ধ-ইসলাম ধর্মগুলোরও আগের। আর্যরা যখন উত্তর-পশ্চিম ভারতে আসে তখন স্থানীয় বিভিন্ন গোষ্ঠীর মুখোমুখি হয়। সে সময় একটা জনগোষ্ঠী আন্তরিকভাবে আর্যদের গ্রহণ করেছিল, যারা বানর জাতি হিসেবে পরিচিত হয়। অপর জনগোষ্ঠী, যারা আর্যদের সহজে গ্রহণ করেনি, পরিচিত হয় নাগ (সাপ) বা পিশাচ (শয়তান) হিসেবে।
ধীরে ধীরে আর্যরা প্রতিষ্ঠা পায়। কালক্রমে তারাই ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় হিসেবে পরিচিত হয়। অবশ্য এর ভিন্নমতও আছে। অনেকে বলছেন, কাশ্মীরের ব্রাহ্মণরা যে লর্ড শিবকে পূজা করে তা অনার্য ঈশ্বর। মোদ্দাকথা, ব্রাহ্মণদের গভীর অতীত রয়েছে কাশ্মীরে। তবে বারবারই তাদের মধ্য থেকে বিপুল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। নিলমাত পুরাণ অনুসারে বর্ণব্যবস্থার কারণেই কাশ্মীরি নাগরিকদের মধ্যে আর্যবিরোধী প্রতিক্রিয়া ছিল, যা বৌদ্ধধর্মের জনপ্রিয়তার কারণ। এছাড়া ললিতাদিত্য (৬৯৭-৭৩৮) ছিলেন নাগ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। তিনি আর্য হিন্দুদের বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্ন যুদ্ধ করেছেন।
তিনিই আর্যদের ধুতি পরতে বাধ্য করেছিলেন যেন তাদের পশুর মতো লেজবিশিষ্ট দেখায়।” তবে, পরবর্তীতে অবন্তি বর্মণের আমলে ব্রাহ্মণবাদ পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসে। অবন্তি বর্মণের সময়ে নির্মিত অসংখ্য মন্দির ও স্থাপনা এখনও কাশ্মীরে আছে কোনোটা পূর্ণ আবার কোনোটা ভগ্নাংশ। পরবর্তীতে হর্ষদেব (১০৮৯ – ১১০১) নিজে ব্রাহ্মণ হয়েও হয়তো জনপ্রিয় হওয়ার জন্য অগণিত মন্দির ভাংচুর করেছেন। সবমিলে একথা স্পষ্ট, কাশ্মীরে ব্রাহ্মণদের সঙ্গে অন্যদের দ্বন্দ্বের গল্পটা সুপ্রাচীন। মুসলিম যুগেরও বহু আগের।
এই বাস্তবতায়ই অনুসন্ধান করা জরুরি যে, কাশ্মীরে ব্রাহ্মণদের অবস্থান কেমন ছিল? শেখ আবদুল্লাহ তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, যদিও তারা ছিল মাইক্রোস্কোপিক মাইনরিটি, কিন্তু তাদের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারি’। ইসলামী
যুগেও সুলতান জাইনুল আবেদীনের (১৪২০ – ১৪৭০) সময় পণ্ডিতরা প্রশাশনের কাজের বিপুল সুযোগ পেয়েছিল। সুলতানকে ‘ভাত্তা শাহ’ বা ব্রাহ্মণদের। হিসেবে আখ্যায়িত করা হতো যা পরে রূপান্তরিত হয়ে বাদশাহ হয়েছে। এই সুলতানের আমলেই কাশ্মীরের মন্দিরগুলোকে ব্রাহ্মণদের মালিকানায় দেওয়া হয়। ফলে সেগুলোর সংশ্লিষ্ট সম্পত্তিও ব্রাহ্মণদের মালিকানায় যায়। এভাবে সুলতান জাইনুল আবেদীনের সময়ই কাশ্মীরের ব্রাহ্মণরা পুরহিত শ্রেণির পাশাপাশি জমিদার শ্রেণিতে পরিণত হন। আবার ওই বাদশাহর’ই সন্তান ছিলেন সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তিনি ব্রাহ্মণদের ওপর খড়গহস্ত হয়েছিলেন। কাশ্মীরের নাগরিকদের মধ্যে ব্রাহ্মণরাই ছিল শিক্ষিত ও প্রশাসনিক কাজে দক্ষ জনগোষ্ঠী।
ফার্সি ও সংস্কৃত ভাষায় দক্ষ ছিলেন তারা। এই দক্ষতার কারণে তারা মোগল শাসকদের বিশ্বস্ততা অর্জন করেন। সম্রাট আকবর তাদের অনুষ্ঠানাদিতে নিয়মিত যোগ দিতেন। এমনকি আওরঙ্গজেবও এই নীতি অনুসরণ করেছিলেন। আফগান শাসনামলে কাশ্মীরে হিন্দুমুসলিম সবার ওপর নিপীড়ন হয়েছে। সে সময়ও ফার্সি জানা কাশ্মীরি ব্রাহ্মণরা আফগান সাম্রাজ্যের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ছিলেন যারা আফগানদের অর্ডার অনুসরণ করতেন। আফগান আমলে কিছু কিছু কাশ্মীরি ব্রাহ্মণ দেওয়ান পদে আসীন হয়েছিলেন যাদের নামাঙ্কিত পয়সা প্রচলিত ছিল। বীরবল ধর নামে এক কাশ্মীরি ব্রাহ্মণ উচ্চপদস্থ অবস্থায়ই আফগানদের বিরুদ্ধে পাঞ্জাবকে আহ্বান করেছিলেন। সেভাবেই আফগান দখলদারিত্বের অবসান হয়েছিল কাশ্মীরে। তবে, তার বিনিময়ে কাশ্মীর পতিত হয়েছিল পাঞ্জাবের শিখদের অধীনে।
১৯৫৩ সালে শেখ আবদুল্লাহকে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রেও ব্যাপক কৌশলী ভূমিকা রেখেছিলেন দুর্গা প্রসাদ ধর (ডিপি ধর)। তিনিও ছিলেন কাশ্মীরি পণ্ডিত। কাশ্মীরে এ নিয়ে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে, যখন ধরেরা ক্ষমতাসীন হয় তখন কাশ্মীর পরাজিত হয়!(৬)। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যুদ্ধের ইস্যুতেও ইন্দিরা গান্ধীর উপদেষ্টা ছিলেন ডিপি ধর। এভাবে সব শাসনামলেই কাশ্মীরি পণ্ডিতরা ছিলেন শীর্ষস্থানীয় ও প্রভাবশালী। মহারাজার শাসনামলে তারা রাজ্যের প্রশাসনে আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ পায়। ১৯৩০ সালের দিকে কাশ্মীরি ব্রাহ্মণরা রাজ্যের সিংহভাগ জমি ও প্রশাসনিক পদের নিয়ন্ত্রণ করতেন।
১৯৩১ সালে রাজ্যের আমলাতন্ত্রের ৭৮ শতাংশের দখল ছিল হিন্দু ও শিখদের, যদিও জনসংখ্যায় মুসলমানরা ছিল তাদের চেয়ে দশগুণেরও বেশি। ব্রিটিশ আমলের নথি অনুসারে কাশ্মীরি ব্রাহ্মণদের প্রধান পেশা ছিল লেখালেখি।) দাদন ও সুদে অর্থঋণ দেওয়ার চর্চা ছিল তাদের নিয়মিত ব্যবসার অংশ। এরই ধারাবাহিকতায় যখন মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষাদীক্ষা বাড়তে শুরু করল তখনই আর্থসামাজিক অবস্থায় হিন্দুদের সঙ্গে মুসলমানদের একটি স্থায়ী দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছিল। ফলে, শত চেষ্টা করেও শেখ আবদুল্লাহ খুব বেশি সংখ্যক হিন্দু সদস্য তার দলে ভিড়াতে পারেননি।
পরে ১৯৪৭ সালের পর শেখ আবদুল্লাহ ভারতের অধীনে রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হলেন। তখনকার ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুও ছিলেন কাশ্মীরি ব্রাহ্মণ। আবদুল্লাহ তার সময়ে কাশ্মীরি ব্রাহ্মণদের আর্থসামাজিক অবস্থায় নতুন আঘাত হেনেছিলেন তার নয়া কাশ্মীর মেনিফেস্টো বাস্তবায়ন করতে গিয়ে। ওই মেনিফেস্টো অনুসারে রাজ্যের প্রায় সব জমিদারের অধীনস্থ জমিন সরকারি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কয়েক লাখ কৃষকের মধ্যে বণ্টন করে দিয়েছিলেন। এর মাধ্যমে মূলত রাজ্যের অর্থনীতির পুরো কাঠামোই বদলে দেওয়া হয়েছিল। জমিদারি ব্যবস্থার সঙ্গে কাশ্মীরি ব্রাহ্মণদের সম্পর্ককে তুলনা করা হয়েছে উত্তর প্রদেশের মুসলিম জমিদারদের সঙ্গে।
কেউ কেউ বলেছেন, উত্তর প্রদেশের মুসলিম জমিদাররা যেমন সেখানকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকায় ১৯৪৭ সালে দেশছাড়া হয়েছে, তেমনি হয়েছে কাশ্মীরি ব্রাহ্মণদের ক্ষেত্রেও। অর্থনৈতিক এতসব চড়াই উত্রাই সত্ত্বেও কাশ্মীরি ব্রাহ্মণ ও মুসলমানরা একসঙ্গেই ছিল বছরের পর বছর। তবে, হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ভারতে যতটা তীব্র হয়েছে তার ছোঁয়াও ততবেশি লেগেছে কাশ্মীরে। ১৯৪৭ সালের পর থেকে অভ্যন্তরীণভাবে আবদুল্লাহর নয়া কাশ্মীর মেনিফেস্টো যেমন ব্রাহ্মণ জমিদারদের স্বার্থহানি করেছে; একই সময়ে ভারতে শ্যামা প্রসাদ মুখার্জির নেতৃত্বাধীন হিন্দু সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস) বিরোধপূর্ণ জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর রাজ্যকে পূর্ণরূপে ভারতে যুক্ত করতে সক্রিয় আন্দোলন শুরু করে।
জনসংঘ ও প্রজা পরিষদও একই দাবিতে সক্রিয় ছিল। সে সময় কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা বিভাগ কাশ্মীরের কিছু এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে অনুমতির ব্যবস্থা চালু করে। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি এই পারমিট ব্যবস্থা বাতিলের দাবি করেন। প্রতিরক্ষা বিভাগ তা অস্বীকার করার পর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বিনা পারমিটে কাশ্মীরে প্রবেশের ঘোষণা দেন। ১৯৫৩ সালের ৮ মে যখন তিনি জম্মুর মধুপুর ব্রিজ পার হয়ে রাজ্যের সীমানায় প্রবেশ করেন তখনই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। শ্রীনগরের নিশাতবাগ এলাকায় তাকে জেলবন্দি রাখা হয়। এ ঘটনায় জম্মুর হিন্দু সংগঠনগুলো ব্যাপক বিক্ষোভ করে। ২৩ জুন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি কারাবন্দি অবস্থায় মারা যান।
এ ঘটনাও শেখ আবদুল্লাহকে অপসারণের পাশপাশি হিন্দু-মুসলিম বৈরিতার অন্যতম কারণ। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির হিন্দুত্ববাদ কাশ্মীরি ব্রাহ্মণদের খানিকটা প্রভাবিত করেছিল বলেও মনে করা হয়। তিনি কাশ্মীরি ব্রাহ্মণদের ভারতীয় পোশাক ও ভাষা অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছিলেন। এক সময় কাশ্মীরি হিন্দু-মুসলিম সবাই ফেরেন (মোটা কাপড়ের জুব্বা বিশেষ) ও সালোয়ার-কামিজ পরতো। পরে কাশ্মীরি ব্রাহ্মণরা ধুতি ও শাড়ি পরা শুরু করেন। আর কালক্রমে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের কাছে আপন থেকে পর হয়ে পড়েন। কাশ্মীরি মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক বা সামাজিক আন্দোলন ১৯৩১ সালে শুরু হলেও ব্রাহ্মণরা সম্প্রদায়ভিত্তিক ঐক্যবদ্ধ কার্যক্রম শুরু করে বেশ আগেই। ১৯১৪ সালে কাশ্মীরের
হিন্দু সম্প্রদায়ের সংস্কারের উদ্দেশ্যে কাশ্মীরি পণ্ডিত সভা নামের একটি গোষ্ঠী গড়ে ওঠে জম্মুতে। নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নয়নের উদ্দেশ্যে ওই সভা গঠিত হয়। পরে ধীরে ধীরে তারা রক্ষণশীল হিন্দুচর্চার দিকে ধাবিত করার চেষ্টা করে সম্প্রদায়টিকে। তারা কাশ্মীরি ব্রাহ্মণদের মুসলিম আচার অনুষ্ঠানে যোগদানে নিষেধ করতে শুরু করে। সুফি আস্তানাগুলোতে যেতেও মানা করে। একই প্রচেষ্টা মুসলিম সম্প্রদায়ে শুরু হয় ১৯৫০-এর দশকে জামায়াতে ইসলামীর মাধ্যমে।
এর ফলে কাশ্মীরি বহু সাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা ধীরে ধীরে বিভক্ত হতে শুরু করে। পঞ্চাশের দশক থেকেই এই ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় ভারতের বিভিন্ন স্থানে বসতি স্থাপন করে। দিল্লির পাম্পেশ কলোনি, জম্মুর সুভাসনগর গড়ে ওঠে কাশ্মীরের সশস্ত্র সংগ্রাম শুরুর বহু বছর আগেই। কিন্তু, এতদসত্ত্বেও এ সম্প্রদায়ের একটি বিরাট সংখ্যা ছিল কাশ্মীরে। তারা কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা, শ্রীনগরসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যবসাবাণিজ্য করছিল। তবে, সুদীর্ঘকালের আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক পটপরিবর্তনের ক্লাইম্যাক্স ইভেন্ট ছিল ১৯৯০ – ৯১ সালে কাশ্মীরি ব্রাহ্মণদের গণপ্রস্থান। এবার দ্বিতীয় প্রশ্নের আলোচনায় আসা যাক। ১৯৮৮ সাল থেকেই সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হয় ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে। দলে দলে লোকেরা সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তান গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসছিল।
শ্রীনগরের রাস্তায় রাস্তায় যুবকরা শ্লোগান দিত, চল চল পিন্ডি চল, কাশ্মীরকো আজাদ কর’। অজ্ঞাত এক কারণে সীমান্ত (লাইন অব কন্ট্রোল) ছিল উন্মুক্ত। আসা-যাওয়া ছিল নিয়মিত। এমন এক পরিস্থিতিতে ১৯৯০ – ৯১ সালের দিকে কয়েক মাসের মধ্যে প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার কাশ্মীরি ব্রাহ্মণ ভ্যালি ছেড়ে চলে যায়। তারা প্রাথমিকভাবে জম্মুতে ভয়ানক দারিদ্রপীড়িত ‘অস্থায়ী ক্যাম্পে অবস্থান করে। পরে ১৯৯৭ সাল নাগাদ তাদের অনেকে জম্মু ও দিল্লির বিভিন্ন ঘর-বাড়িতে চলে যায়। এখনও জম্মুর ক্যাম্পে অনেকে অবস্থান করছে। এ অবস্থা সম্প্রদায়টির ওপর এক অপরিসীম মানবিক বিপর্যয় নিয়ে আসে। আর এ নিয়ে শুরু হয় এক নতুন দোষারোপের রাজনীতি। জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট (জেকেএলএফ) তাদের স্বাধীনতার দাবিতে প্রচারণা শুরু করে ১৯৮৮ সালের ৩১ জুলাই।
শ্রীনগরে দুটি ভয়ানক বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। তারপর নানা সময় বিচ্ছিন্ন আক্রমণের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে। আগেই বলা হয়েছে, ব্রাহ্মণরা তখনও রাজ্যের সিংহভাগ গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন। জেকেএলএফ-এর টার্গেট হয়ে পড়েন তারা। ফলে, হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থার সংকট স্পষ্ট হয়ে পড়ে। ব্রাহ্মণদের ভারতের বিশ্বস্ত মনে করা হয়। আর মুসলিম জনসাধারণের মধ্যে আইন অমান্য (সিভিল ডিজঅবিডিয়েন্স) করে স্বাধীনতার দাবি সমর্থনের প্রবণতা স্পষ্ট হয়। মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ তখন অপাংক্তেয়। ভারত সরকার গভর্ণরের শাসন চালু করে। জানুয়ারির শেষ দিকে মালহোত্রা জাগমোহনকে গভর্নর করে পাঠানো হয় যিনি আগেও এক মেয়াদে রাজ্যটির গভর্নরের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৯০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি দূরদর্শন
টিভির প্রধান লাসা কোলকে হত্যা করে জেকেএলএফ। ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯ বিজেপির কাশ্মীরি প্রধান টিকা, লাল টপলুকে হত্যা করা হয়। হাইকোর্টের জজ নীলকান্ত গাঞ্জু জেকেএলএফ-এর প্রতিষ্ঠাতা মকবুল বাটকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। ৪ নভেম্বও, ১৯৮৯ তাকেও হত্যা করে প্রতিশোধ নেয় সংগঠনটি। ১৬ এপ্রিল, ১৯৯০ তারিখে আলসাফা ও শ্রীনগর টাইমস পত্রিকায় ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধে হুমকির খবর প্রকাশ করে। মিলিট্যান্টরা দাবি করতো, ভারতের এজেন্টদের মারা হচ্ছে। আর ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের কাছে এটা একটা সাম্প্রদায়িক হুমকি হিসেবেই আবির্ভুত হচ্ছিল।
ব্রাহ্মণদের বিশ্বাস, পাকিস্তান এবং তার সমর্থকরা কাশ্মীরকে হিন্দুমুক্ত করার জন্য এই হুমকিগুলো দিয়েছে এবং তারা সফল হয়েছে। আবার মসলিম সম্প্রদায় মনে করে, গভর্নর জাগমোহন রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় একটা উত্তেজনা তৈরি করেছেন। তারপর ব্রাহ্মণদের সরিয়ে নিয়েছেন যাতে মুসলমানদের ওপর নিশ্চিন্তে ‘গণহত্যা’ চালানো যায়। অনেকে বলেছেন জাগমোহন দায়িত্ব নেওয়ার আগে থেকেই প্রস্থান শুরু হয়েছিল। একজন কাশ্মীরি ব্রাহ্মণ এই লেখককে বলছিলেন, আমরা টেরও পাইনি যে পাশের বাড়ির ব্রাহ্মণ পরিবারটি সব ছেড়ে চলে যাচ্ছে। চারদিকে আতঙ্ক বিরাজ করছিল পুরো সম্প্রদায়ের মধ্যে। আবার ভারতীয় গণমাধ্যমে অনেক কাশ্মীরি ব্রাহ্মণ দাবি করেছেন, ১৯৯০ সালের ১৯ জানুয়ারি রাতে ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি করে তাদের ঘর ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল। ওই দিনটিকে ‘কেপি এক্সোডাস ডে’ হিসেবে স্মরণও করা হয়।
১৯৯০-এর মার্চের শেষ দিকে অল ইন্ডিয়া কাশ্মীরি পণ্ডিত কনফারেন্স-এর পক্ষ থেকে কাশ্মীরি ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়কে জম্মুতে স্থানান্তরের দাবি জানানো হচ্ছিল। আবার বিপরীত ঘটনাও ঘটেছে, একযোগে ট্রাকে চেপে মধ্যরাতে ব্রাহ্মণ পরিবারগুলো জম্মুর দিকে যাত্রা করেছে। অনন্তনাগের কাজিগন্ড দাঁড়িয়ে এক স্কুলপড়ুয়া কিশোর তা দেখছে। সেই কিশোর এখন কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। সব মিলিয়ে স্পষ্টত, পরস্পরবিরোধী দুটি বক্তব্য এখানে বিদ্যমান। সে সময় জেকেএলএফ ও হিজবুল মুজাহিদিন যেমন হুমকি দিয়েছিল তেমনি অনেকে ব্রাহ্মণদের চলে যাওয়া ঠেকাতে চেষ্টা করছিলেন। ওয়াজাহাত হাবিবুল্লাহ তখনকার অনন্তনাগে কর্মরত এক সরকারি কর্মকর্তা।
তিনি আলেকজান্ডার ইভান্সকে বলেছেন, একদিন একজন এমএলএ’র নেতৃত্বে শ’তিনেক লোক এসে আমাকে বলল, কাশ্মীরি পণ্ডিতরা চলে যাচ্ছে। তাদের থামান। আমি তখন গভর্নরের কাছে সুপারিশ করলাম এ বিষয়ে একটি গণমাধ্যম-ঘোষণা দেওয়ার। কিন্তু, সেটি করা হয়নি। বরং গভর্নর জাগমোহন নির্দেশনা দিলেন জম্মুতে কিছু ক্যাম্প তৈরি করে চলে যাওয়া পণ্ডিতদের থাকার ব্যবস্থা করতে। একই সঙ্গে নির্দেশনা দিলেন চাকরিজীবী ব্রাহ্মণদের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও বেতন জারি রাখতে। এটা অবশিষ্ট ব্রাহ্মণদেরও চলে যেতে উৎসাহিত করেছিল। ব্যাপারটা একটা প্রশাসনিক ব্যর্থতা
হিসেবে ওই কর্মকর্তা মনে করেন। অনেক ব্রাহ্মণ মনে করেছিলেন কিছুদিন পরই তারা ফিরে আসতে পারবেন। অনেকে গভর্নরকে দোষারোপ করেন এভাবে যে, ‘জাগমোহন তাদের চলে যেতে বলেননি বটে, তবে তাদের চলে যাওয়া ঠেকাতে ব্যবস্থাও নেননি। সুমিত গাঙ্গুলি বলেছেন, জাগমোহন দায়ী এজন্য যে, তিনি ব্রাহ্মণদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেননি। আর সশস্ত্র গ্রুপগুলো দায়ী। কারণ, তারা আতঙ্ক তৈরি করেছিল। পিএস বর্ম লিখেছেন, ‘অল্প কিছু ব্রাহ্মণই কেবল তাকে জানিয়েছেন তারা সরাসরি হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। অনেকে বলেছেন, মুসলিম প্রতিবেশীরা অনুরোধ করেছিলেন থেকে যেতে। জম্মু বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সার্ভেতে জানা গেছে, ঘর ছাড়ার পর ক্যাম্পে অবস্থান করা ব্রাহ্মণদের মধ্যে ২ শতাংশ সরাসরি হুমকিযুক্ত চিঠি পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন।
প্রায় ৮০ শতাংশ কোনো ধরনের সরাসরি হুমকির মুখোমুখি হননি। তবে, অনস্বীকার্য রকমের একটা সহিংস অবস্থার মধ্যে তারা খুবই অনিরাপদ বোধ করছিলেন।” প্রস্থান বা বিতাড়ন যাই হোক, এ সম্প্রদায়ের সিংহভাগ লোক তাদের ঘর ছেড়েছিল তখন। তার পরের ঘটনা মোটেও সুখকর ছিল না। অদ্যাবধি তাদের নিয়ে চলছে দোষারোপ আর সংখ্যার রাজনীতি। গুগলে খুঁজলে দেখা যায়, হিন্দুদের পরিচালিত বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট দাবি করছে, ১৯৯০ সালে কাশ্মীরি ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের মোট জনসংখ্যা ছিল সাত লাখ, যার মধ্যে সাড়ে তিন লাখ তখন ভ্যালিতে বসবাস করছিল। কিন্তু সরকারি তথ্যমতে, ১৯৩১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী সম্প্রদায়টির জনসংখ্যা ছিল ৭৮ হাজার। সেখান থেকে ১৯৯১ সালে অর্থাৎ পায় দশকে সংখ্যা যদি সাড়ে তিন লাখ হয় তাহলে প্রতি ১০ বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় ৩৫%।
আর যদি মোট সংখ্যা ১৯৯০ সালে সাত লাখ ধরা হয় তাহলে দশকপ্রতি জনসংখ্যা বৃদ্ধি দাঁড়ায় ৪৫%। অথচ, ওই শতকে কাশ্মীরের জনসংখ্যার মোট বৃদ্ধির হার ছিল ৫-৩০ শতাংশ। উল্লেখ্য, অধিক শিক্ষা ও আর্থিক অবস্থাসম্পন্ন কাশ্মীরি ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের জন্মহার আরও কম হওয়ার কথা। ফলে, সম্প্রদায়টির জনসংখ্যা নিয়ে যে দাবি করা হয় তার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশের সুযোগ আছে। আলেকজান্ডার ইভান্স তার হিসেবে দাবি করেছেন, ১৯৯০ সালের দিকে রাজ্যের মোট হিন্দু জনসংখ্যা এক লাখ ৯০ হাজারের মতো, যার মধ্যে এক লাখ ৬০ হাজার থেকে এক লাখ ৭০ হাজার লোক ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছিল।
পানুন কাশ্মীর নামে একটি সংগঠন আছে, যারা কাশ্মীরি ব্রাহ্মণদের তাদের মাতৃভূমিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে বিভিন্ন স্থানে প্রচারণা চালায়। তাদের ওয়েবসাইটেও দাবি করা হয়, ১৯৯০-এর আগে তিন লাখ ব্রাহ্মণ বসবাস করতেন। ইন্দো-আমেরিকান কাশ্মীর ফোরাম নামের একটি সংগঠনের প্রচারপত্রে বলা হয়, ১১০০ কাশ্মীরি ব্রাহ্মণকে হত্যা করা হয়। অপর একটি সূত্র দাবি করছে, সাত শতাধিক ব্রাহ্মণকে হত্যা করা হয়েছে ১৯৮৯ – ৯০ সালের মধ্যে। ভারতীয় সরকারি নথি বলছে ২২৮ জন হিন্দু বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে ১৯৮৮ থেকে ১৯৯১
পর্যন্ত সময়ে। এক সরকারি কর্মকর্তা যিনি ক্ষতিপূরণ কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি আলেকজান্ডার ইভান্সকে বলেছেন, সরকারি কর্মচারিদের মিলিয়ে সংখ্যাটি ৪৯০-এর বেশি নয়। শেষতক, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, সংখ্যা যাই হোক, লক্ষাধিক কাশ্মীরি ব্রাহ্মণকে ছাড়তে হয়েছিল তাদের কয়েক হাজার বছরের পুরনো আবাসভূমি। তারা কেউ তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছিল। আবার কারও কারও সম্পত্তি এখনও একইভাবে রয়েছে। অনেকের মুসলিম প্রতিবেশীরা এখনও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করছে পরিত্যক্ত সম্পত্তিগুলো। এত কিছুর মধ্যেও আশা জাগিয়ে রেখেছে যে ব্যাপারটি তা হলো, সেই আতঙ্কের সময়ও কাশ্মীরি পণ্ডিতদের কেউ কেউ তাদের প্রতিবেশীদের ওপর আস্থা রেখেছিলেন।
তারা ঘর ছাড়েননি। সরকারি তথ্যমতে, সেই সংখ্যাটা বর্তমানে চার হাজারের কাছাকাছি। কাশ্মীরে থেকে যাওয়া এই পরিবারগুলোর গল্পগুলো অবশ্য অন্যরকম। তারা এখনও কাশ্মীরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেখা পায় বলে দাবি করে। ২০১১ সালের আল-জাজিরার এক রিপোর্টে বোঝা যায়, অপেক্ষাকৃত গরিব আর অবহেলিত পণ্ডিতরাই কাশ্মীর ছাড়েনি তখন। আর ধীরে ধীরে মূল সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক অবস্থানের সঙ্গে তাদের অভিজ্ঞতাগুলো বেমানান হয়ে পড়েছে। ২০১৬ সালের অশান্ত পরিস্থিতির মধ্যেও দুএকটি খবর তারই উদাহরণ। জুলাই মাসের একটি খবর বলছে, কাশ্মীরের ত্রাল এলাকায় নিহত মিলিট্যান্ট বুরহানের মৃত্যুর পর তার পরিবারকে সমবেদনা জানাতে গ্রামের ব্রাহ্মণ নারীরা হাজির হয়েছেন।
১৮ নভেম্বরের খবরে বলা হয়, কারফিউর মধ্যেই শ্রীনগর পুরনো শহরে সুষমা পারিমু নামে ৪০ বছর বয়সী এক ব্রাহ্মণ নারীর মৃত্যু হয়। তার দুই ভাই আর তাদের স্ত্রীরা ছাড়া আর কেউ ছিলেন না কাছাকাছি। ওই নারীর শেষকৃত্যের কাজ স্থানীয় মুসলমানরা সম্পন্ন করেন। এর মধ্যে অবশ্য আরেকটি দিক স্পষ্ট হয়। তা হলো, যারা এখনও কাশ্মীরে আছেন তারা অধিকাংশই তাদের সন্তানদের বিয়ের জন্য নিজের সম্প্রদায়ের কাউকে খুঁজে পাচ্ছেন না। ফলে, তাদের সন্তানরাও ছুটছে দূরে, ভারতের অন্য কোনো রাজ্যে, যেখানে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের কোনো সঙ্গী মিলবে সচরাচর। গোটা সম্প্রদায়টির ঘরে ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে নানা কারণে রয়েছে সংশয়। রাজ্যের সকল রাজনৈতিক দল নীতিগতভাবে একমত যে, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ফিরিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মুফতি সাঈদ (মৃত্যু: ২০১৫) বলতেন,
‘কাশ্মীরি পণ্ডিতদের কাশ্মীর ফেরার প্রয়োজন নাও হতে পারে, কিন্তু, কাশ্মীরিদের নিজস্ব বৈচিত্র্য ধরে রাখার জন্য হলেও পণ্ডিতদের প্রয়োজন।
কিন্তু, বাস্তব প্রয়োগের প্রশ্নে বিষয়টি নিয়ে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে রয়েছে অনাস্থা, সন্দেহ, অবিশ্বাস এবং সংশয়। এ নিয়ে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা সৃষ্টির উদ্যোগও সে অর্থে নেই। ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের ঘরছাড়া হওয়ার পরপরই বিষয়টি নিয়ে
ভারতসহ বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সম্প্রদায়ের সিংহভাগ লোক মেধাবী ও শিক্ষিত হওয়ায় এ ঘটনা গণমাধ্যম ও সাহিত্যে ব্যাপকভাবে স্থান পেয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতাপূর্ণ একটি ঘটনাপ্রবাহের অংশ বলেই সম্ভবত যুথবদ্ধ।
এই সম্প্রদায়টির সদস্যদের সেসব মর্মান্তিক বর্ণনা একমুখিনতার দোষে দুষ্ট। বিপরীত দিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সম্প্রদায়ও প্রতিপক্ষের চশমা দিয়ে দেখেছে পুরো ব্যাপারটিকে। এ সম্প্রদায়টিই যে হাজার হাজার বছর ধরে একই সমাজে অবস্থান করে আসছে সেই সত্যটি এখন সুদূরপরাহত। শাকিল কালান্দার নামে একজন বিশিষ্ট নাগরিকের একটি মন্তব্যের মাধ্যমে ব্যাপারটি বোঝানো যাবে। শ্রীনগরের একটি সেমিনারে তার মন্তব্য ছিল, ভারত সরকার এক লাখ মুসলমানের মৃত্যুকে অস্বীকার করে।
সেখানে মাত্র কয়েকশ কাশ্মীরি পণ্ডিতের মৃত্যুর ঘটনাকে বড় করে দেখার কী কারণ থাকতে পারে? অধিকাংশ কাশ্মীরি মুসলমানের দৃষ্টিভঙ্গি এমনই। একই সভায় কাশ্মীরি ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের এক যুবতী অংশ নিয়েছিলেন। তিনিও মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে ক্ষুব্ধ, ক্রুদ্ধ ও আত্মসংবরণহীন হয়ে পড়েছিলেন। স্পষ্টতই এই দৃষ্টিভঙ্গি দুটি সম্প্রদায়ের পরস্পরের পাশে আসার পথে মস্তবড় বাধা। পণ্ডিতদের ঘরে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে পানুন কাশ্মীর (আমাদের কাশ্মীর) নামে একটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে ১৯৯০-এর দশকেই। তাদের অন্যতম দাবি হলো,
কাশ্মীরি পণ্ডিতদের কাশ্মীরে ফিরিয়ে নিতে হবে। তাদের জন্য সেখানে স্বতন্ত্র কলোনি স্থাপন করতে হবে। তাদের দাবি হলো, কাশ্মীরি মুসলমানরা সাম্প্রদায়িক। ফলে, তাদের সঙ্গে একসঙ্গে থাকা যাবে না। কাশ্মীর অঞ্চলের মধ্যেই ব্রাহ্মণদের জন্য তিনটি আলাদা অঞ্চল স্থাপন করতে হবে। ঝিলাম নদীর তীরবর্তী অনন্তনাগ জেলায় একটি, শ্রীনগর শহরে একটি আর বারামুলা জেলায় একটি। পানুন কাশ্মীর এই দাবি করলেও, পণ্ডিত সম্প্রদায়ের অন্য একটি বাস্তবতা আলোচনার বাইরে থেকে যাচ্ছে। তা হলো, গত ২৬ বছরে এই সম্প্রদায়টি বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে।
তাদের অনেকে শিক্ষিত ও দক্ষ হওয়ায় ভারতে এবং বিদেশে বিভিন্ন বড় বড় অবস্থানে চলে গিয়েছেন। অনেকে ভারতের অন্য রাজ্যে বৈবাহিক ও পারিবারিক সূত্রে আবদ্ধ হয়েছেন। ফলে, তাদের মধ্যে কাশ্মীরে ফিরে যেতে আগ্রহী লোকের সংখ্যা সামান্যই। তবুও রাজনৈতিক এজেন্ডা হিসেবে ব্রাহ্মণদের ঘরে ফেরার দাবি উত্থাপিত হচ্ছে এবং হবেও। দীর্ঘদিন ধরে এই দাবীর করা হলেও এ নিয়ে বাস্তব উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ২০১৫ সালে নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর পণ্ডিত সম্প্রদায়ের জন্য একটি আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়।
ওই বছরই জম্মু-কাশ্মীরে রাজ্যে পিডিপি-বিজেপি ক্ষমতায় আসে। ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং কাশ্মীরে পণ্ডিতদের জন্য কম্পোজিট টাউন’ প্রতিষ্ঠার জন্য জমি বরাদ্দ চান। মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মো. সাঈদও জমি দেওয়ার আশ্বাস দেন। এর প্রতিবাদ শুরু হয় সর্বমহল থেকে। ভারতমুখী রাজনীতিক হওয়া সত্ত্বেও রাজ্যের বিরোধীদলীয় নেতা ওমর আবদুল্লাহ বলেন
‘সুস্থ মস্তিষ্কের কোনো কাশ্মীরি পণ্ডিতদের আলাদা, বিচ্ছিন্ন ক্যাম্পে ফেরত আসা সমর্থন করে না। কাশ্মীরিয়াত ও কম্পোজিট কালচারকে সংরক্ষণের জন্য তাদের ফেরত আনতে যা যা করার আমি করতে রাজি। কিন্তু, তা ঘেটু বা বিচ্ছিন্ন ক্যাম্পে নয়। আমার সংশয় আছে অনেক কাশ্মীরি পণ্ডিতই ওই রকম ক্যাম্পে ফিরবেন কিনা।“১৬)
জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের (জেকেএলএফ) বর্তমান চেয়ারম্যান ইয়াসীন মালিক বলেন
‘স্বাধীনতাকামীরা সবসময় তাদের নিজ নিজ ঘরে ফেরার পক্ষে। তাদের মর্যাদা ও সম্মান নিয়ে এখানে থাকার অধিকার আছে। তারা আমাদের ভাই ও বোন। কিন্তু ধর্মের নামে ঘৃণার দেয়াল তৈরির কোনো ষড়যন্ত্র মেনে নেওয়া হবে না। এর মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরকে আরেকটি ফিলিস্তিন বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
এই জেকেএলএফই প্রথম ব্রাহ্মণ কর্মকর্তাদের যুদ্ধের কৌশল হিসেবে হত্যা করেছিল। অবশ্য, ২০০২ সালের পর থেকে সংগঠনটি সশস্ত্র পন্থা ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। ইয়াসীন মালিক বলেন,
মুফতি সাঈদ এ উদ্যোগের মাধ্যমে আরএসএস-এর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। পণ্ডিতরা আমাদের আত্মার অংশ। তারা আমাদের এই ভূমির মাস্টার। আমরা ১৯৪৭ সালেও ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষা করেছি। যখন, আরএসএস-এর সন্ত্রাসীরা জম্মুতে মুসলমানদের গণহত্যা করেছে তখনও পণ্ডিতরা এবং অন্য অমুসলিমরা এখানে নিরাপদে ছিল। যে কারণে গান্ধীজি বলেছিলেন, কোনো আশার আলো যদি থাকে তা কাশ্মীর।
অবশ্য, মুখ্যমন্ত্রী মুফতি সাঈদ পরে বলেছিলেন, কম্পোজিট টাউনশিপ’ হবে ইনকুসিভ। যে কেউ সেখানে বসবাস করতে পারবে। আজাদিপন্থী শিবির থেকে আরও বলা হয়েছিল কাশ্মীরি পণ্ডিতরা ফিরতে আগ্রহী নয়। এখন পণ্ডিতদের নামে ভারতীয় হিন্দুদের কাশ্মীরে সেটেল করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। অবশ্য, এই উদ্যোগ এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। হলেও তা দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি যে করবে না তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। দুই সম্প্রদায়ের বিরোধের আরও একটি উদাহরণ এখানে তুলে ধরা জরুরি। মহারাজার আমলে চালু হওয়া রণবীর পেনাল কোড অনুসারে রাজ্যে গরু-মহিষ জবাই, মাংস বিক্রি ও আমদানি-রপ্তানি নিষিদ্ধ।
সে আইনের আর কোনো সংশোধন হয়নি। যদিও, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম এবং তাদের অপরিহার্য খাদ্য হওয়ার কারণে আইনটি কাশ্মীরে কখনও বলবৎ হয়নি। বিশেষ করে কাশ্মীর এলাকায় গরুর মাংস প্রায় সবসময়ই সহজলভ্য; এখনও। অবশ্য, কাটরা, জম্মুসহ হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলাগুলোতে ওই আইন চালু আছে। ২০১৫ সালে, হঠাৎ হাইকোর্টের এক নির্দেশে বলা হয় গরুর মাংস বিক্রি এবং আমদানি-রপ্তানি বন্ধের উদ্যোগ নিতে। এ নিয়ে পুরো রাজ্যে হুলুস্থুল পড়ে যায়। বিরোধী দল ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) বিষয়টিকে ডিক্রিমিনালাইজেশনের প্রস্তাব রাজ্যসভায় আলোচনার জন্য বিল উত্থাপনের ঘোষণা দেয়।
অন্যদিকে সংসদের স্পিকার ওই বিল আলোচনার অনুমতি দিলে কাশ্মীরের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ সৃষ্টির হুমকি দেয় জম্মুভিত্তিক বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (বিএইচপি)। ২০০৮ সালের অবরোধের কথাও তারা স্মরণ করিয়ে দেয়। এমনকি কেউ গরু জবাই করলে তাকে ফাঁসি দেওয়ার দাবি জানান বিজেপির এক এমএলএ। স্বাধীনতাকামী ও ভারতবিরোধী সকল রাজনৈতিক দল এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ডাকে হরতাল। শুক্রবার নামাজের পর ব্যাপক প্রতিবাদে লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে। আহত হয় অনেক মানুষ। জামায়াতে ইসলামীর আমীর মন্তব্য করেন, ‘হালালকে হারাম আর হারামকে হালাল করার ক্ষমতা সরকারের নেই’।
পাকিস্তানপন্থী মুসলিম নারী সংগঠন দুখতারানে মিল্লাতের নেত্রী আয়শা আক্কাবি শ্রীনগরে গরু জবাই কর্মসূচি পালন করেন। ওই অনুষ্ঠানের ভিডিও কাশ্মীরের সবার মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায়, কয়েকজন পুরুষ একটি গরু ধরে আছে। আয়শা আক্র্যাবি বক্তৃতা দিচ্ছেন। আল্লাহু আকবর বলে গরু জবাই করা হলো। আয়শা বললেন, ‘হামলোক গাই জবাহ কার দিয়া’। হাইকোর্টের এই নির্দেশের প্রতিবাদে একজন এমএলএ গরুর গোশতের পার্টি আয়োজন করেন।
পরের দিন বিধানসভায় তার ওপর হামলা করে বিজেপি সদস্যরা। কয়েকদিন পর ৯ অক্টোবর (২০১৫) গরুর চামড়া বহন করার অভিযোগে কাশ্মীরি এক ট্রাকচালকের গায়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় জম্মুর উদমপুরে। জাহিদ নামে ওই যুবক (১৮) মারা যায় নয় দিন পর। নিহতের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের সময় বিফ পার্টির আয়োজক ওই এমএলএ’র মুখে পেট্রল ছুঁড়ে মারে এক হিন্দু যুবক। এভাবেই একুশ শতকেও গরুর মাংস দুই সম্প্রদায়ের সম্প্রীতির জন্য হুমকিই শুধু নয়, বিভিন্ন মতের লোকদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।(১৮)
নোট/সূত্র
১. বিষ্ণু পোখরেল লেখকের সহপাঠী হিসেবে কাশ্মীরে অধ্যয়ন করেছেন। তিনি একজন নেপালি ব্রাহ্মণ। হিন্দুধর্ম ও ব্রাহ্মণবাদ সম্পর্কে লেখকের ভাবনাগুলো গড়ে উঠতে বিষ্ণুর অবদান উল্লেখযোগ্য।
২. আলেকজান্ডার ইভান্স লন্ডনের কিংস কলেজের সেন্টার ফর ডিফেন্স স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক। তিনি ২০০২ সালে কমপ্লিমেন্টারি সাউথ এশিয়া জার্নালে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। নিবন্ধের শিরোনাম ছিল, A Departure from history: Kashmir Pandits, 1990-2001′, এই অধ্যায়ে ওই নিবন্ধটির বেশ কিছু তথ্য গ্রহণ করা হয়েছে।
৩. Sheikh Showkat Hussain, Facts of Resurgent of Kashmir (2008); Pp: 2-11; Prem Nath Bazaz, Kashmir in crucible, veering Publishers, Mirpur (1991); P5.
৪. Sheikh Abdullah (1993), Flames of the Chiner, Pp: 270 72,
৫. Zaved Iqbal; Zaldagar 1865; Greater Kashmir; May 2, 2015; P:9.
৬. Sheikh Abdullah (1993), Flames of the Chiner, P. 128.
৭. Srinath Raghavan (2013), 1971: The Global History: Prologue; Pp: 1-13.
৮. Shreya Biswas; January 19, 2016; Exodus of Kashmiri Pandits: What happened on January 19, 26 years ago?; http://indiatoday.intoday.in/story/exodus-of-kashmiri pandits-january-19-jammu-and-kashmir/17574071.html
৯. Sumit Ganguli (1997); The Crisis in Kashmir: Paterns of War, Hopes of Peace; New York; P107.
১০. PS Verma, Jammu and Kashmir at the political crossroads (New Delhi: Vikash Publishing House, 1994), P-254,
১১. Azad Essa; August 2, 2011; Kashmiri Pandits: Why we never fled Kashmir, http://www.aljazeera.com/indepth/ spotlight/kashmirtheforgottenconflict/2011/07/201176134818984961.html
১২. Zahid Maqbool; July 15, 2016; Pandits of Tral grievedat Burhan’s death; Greater Kashmir.
১৩. Kashmir Observer; Nov 28, 2016; Muslims neighborsperform last rites of Pandit woman in Srinagar; https://kashmirobserver.net/2016/city-news/muslimsneighbors-perform-last-rites-pandit-woman-srinagar12140
১৪. মুফতির মৃত্যুর পর তার অন্যতম উপদেষ্টা আমিতাভ মাটু, যিনি একজন কাশ্মীরিপণ্ডিত, কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আলোচনায় (মার্চ, ২০১৬) এ কথা বলেছিলেন।লেখক সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
১৫. শ্রীনগর মিডিয়া সামিট, ২০১৫; লেখক সেখানে উপস্থিত ছিলেন
১৬. গ্রেটার কাশ্মীর; ৯ এপ্রিল ২০১৫: পৃষ্ঠা ১
১৭. গ্রেটার কাশ্মীর, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, পৃষ্ঠা ১
১৮. অক্টোবর, ২০১৫ কাশ্মীরের স্থানীয় খবরের কাগজ দ্রষ্টব্য।