এগারো
দরকারি জিনিস জোগাড়ে ব্যস্ত বেন হ্যানন, ওই একইসময়ে আবারও ফোনালাপ করল আগের সেই দুই লোক।
নতুন রিপোর্টে জানাল একজন, ‘আজকে জরুরি আরেকটা ঘটনা ঘটেছে, চিফ।’
তার কথায় বিরক্ত হলো দ্বিতীয়জন। ‘কথা না বাড়িয়ে সংক্ষেপে বলো।’
‘হঠাৎ হাজির হয়েছে বুড়ো এক লোক। সে নাকি আবার পিটার হ্যাননের চাচা। ‘
‘তুমি না বলেছিলে পিটারের কোনও নিকটাত্মীয় নেই?’
না, আছে। আসলেই চাচা হয় সে। নামের লেজে হ্যাননও আছে। থাকে ইতালিতে। আজ সকালে এসে হাজির হয়েছে হঠাৎ।’
দীর্ঘশ্বাস ফেলল দ্বিতীয় লোকটা। ‘ঠিক আছে। এবার বলো তার ব্যাপারে ফোন দিলে কেন। বুড়ো চাচা ইতালি থেকে এলে আমাদের কী?’
‘সাধারণ বুড়ো নয়। অর্ধেক বয়সের লোকও বোধহয় তার সঙ্গে মারপিটে পারবে না। দুই ইঞ্চি পেরেকের মতই শক্ত।’
‘তাতে আমাদের সমস্যা কী?’
‘চিফ, লকের পানিতে ডুবে রবার্টের মরে যাওয়ার গল্পটা একেবারেই বিশ্বাস করেনি সে। পিটার আর রবার্টের দুই কেস কোনভাবে জড়িত বলে ভাবছে।’
‘কী কারণে ভাবল? তার সঙ্গে কথা বলেছে ওই পোচার?’
‘না, তবে আহত হওয়ার আগে সবই ওকে বলেছে তার ভাতিজা।’
‘হতে পারে। সন্দেহ করেছিলাম। বলতে থাকো।’
‘মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতে শেখেনি শালার বুড়ো। ভাতিজা মার খেয়েছে বলে ভীষণ খেপে গেছে। ভাবছে, নিজেই তদন্ত করে দেখবে।’
‘বুঝতে পেরেছি। তবে তাতে আমাদের সমস্যা কী? ওই শালা তো একটা বুড়ো গাধা।’
‘না, চিফ, আগে সে ছিল মিলিটারিতে। এসএএস ফোর্সের নন-কমিশণ্ড অফিসার। তার ফাইল ঘাঁটতে গিয়ে দেয়ালে বাড়ি খেয়ে থেমে গেছি আমরা। প্রায় সবই ক্লাসিফায়েড। এর মানে বুঝতে পারছেন?’
‘কথা না পেঁচিয়ে যা বলার জলদি বলো।’
‘এর মানে, ওই লোক সত্যিকারের ঝামেলা,’ বলল ভাড়াটে লোকটা। ‘মিনিস্ট্রিতে আমার এক ভায়রা ভাই চাকরি করে। একবার তার বিরাট উপকার করেছিলাম। তাই যোগাযোগ করলাম তার সঙ্গে। সে বলল আমার হয়ে…
‘আমি ব্যস্ত। কথা সংক্ষেপ করো। আসলে কী জেনেছ ওই লোকের ব্যাপারে?’
‘বুড়োর বায়োগ্রাফি এখন আমার কাছে। সাধারণ সৈনিক ছিল না শালা। তাই মন দিয়ে শুনুন, চিফ।’
‘শুনছি।’
‘পঞ্চান্ন সালে গ্লাসগো শহরে জন্মেছে। এরপর সতেরো বছর বয়সে যোগ দিয়েছে এসএএস ফোর্সে। যুদ্ধ করেছে নানান দেশে গিয়ে। একবারও আহত হয়নি। তার হাতে মরেছে শত শত শত্রু। মাসুদ রানা নামের বাংলাদেশি এক লোকের সঙ্গে বসনিয়ায় ঢুকে বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিল সার্ববাহিনীর।’
‘তার মানে, পিটার হ্যাননের চাচা ছিল এসএএস ফোর্সের দুর্ধর্ষ যোদ্ধা। এবার বুঝলাম।’
‘কয়েক বছর আগে অবসর নিয়েছে। আগে কাজ করেছে কাউন্টার-হাইজ্যাক অ্যাণ্ড কাউন্টার টেরোরিযম স্পেশালিস্ট হিসেবে। যেসব অপারেশনে গেছে, সেই তালিকা পড়লে নিজেই হাঁফিয়ে উঠবেন। আমি আর আপনাকে বিরক্ত করতে চাই না। তবে যা বুঝলাম, ওই লোক সত্যিকারের ইবলিশ। যদি একবার জেনে যায় যে আমরা এসবে জড়িত, এক এক করে আমাদেরকে খুঁজে বের করে শেষ করবে সে।’
‘বুঝতে পেরেছি।’
‘সব বুঝতে পারেননি, চিফ। একের পর এক অসংখ্য মিশনে বিজয়ী হয়ে ফিরে এসেছে লোকটা। এর কীর্তিকলাপ বেশির ভাগই টপ সিক্রেট। সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স নেই বলে আমার ভায়রা ভাই সব ডেটা পায়নি। অবসরের পর ইতালিতে গেছিল এই শালা চাচ্চু। ওখানে এক ইতালিয়ান মহিলাকে বিয়ে করে খামার গড়েছে।’
‘বলতে চাইছ, এখন ফিরে এসেছে স্কটল্যাণ্ডে আমাদের সঙ্গে ঘেষ্টাতে? ব্যাপারটা খুবই দুঃখজনক।’
‘ওই লোক সত্যিই ভীষণ বিপজ্জনক, চিফ। শুঁকতে শুরু করে একবার গায়ের গন্ধ পেয়ে গেলে আমাদের কারও রক্ষা নেই।’
‘আগেই সাবধান করলে বলে ধন্যবাদ।’
‘চিফ, পিটার হ্যাননকে খুন করলেও হাজির হতো সে। তার ভাতিজাকে এখন খুন করলে বড় ধরনের বিপদে পড়ব আমরা।’
‘বুঝলাম। …তো এখন কোথায় আছে বুড়ো?
‘ভাতিজার বাড়িতে। তার পিছু নিয়েছে মিচ। চোখ রেখেছে ওই বাড়ির ওপর। ভেতরে আছে বুড়ো শালা। আমি জানতে চাইছি, এই অবস্থায় আমরা এখন কী করব। আমরা কি শেষ করে দেবে তাকে?’
‘যদি বলি: হ্যাঁ, মেরে ফেলো, তুমি ভাববে কাজটা করার যোগ্যতা আছে তোমার। তবে ভুলিনি যে গতবার পিটারের ঘটনায় আমাকে কীভাবে ডুবিয়ে দিয়েছ তুমি।
‘আর কখনও এমন হবে না, বলেছি তো। আমরা কি এখন খতম করে দেব বুড়ো শালাকে?’
‘একেবারে উধাও করতে হবে। যাতে লাশ পর্যন্ত খুঁজে না পায় কেউ। গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলার আগেই গুম করতে হবে লোকটাকে।’
‘কাজটা পারবে মিচ। ছোরা ব্যবহার করবে। কোনও সাক্ষী থাকবে না। বুড়ো এখনও ওই বাড়ির ভেতর। মরার আগে বুঝবেও না কীভাবে মরল।’
‘না। মিচ মাথা-নষ্ট একটা নোংরা শুয়োর। সব গুবলেট করবে। তোমার কাছ থেকে যা শুনলাম, মিচকে স্রেফ চিবিয়ে খেয়ে নেবে লোকটা; হাড্ডিগুলো শুধু থুঃ করে ফেলে দেবে মাটিতে। ওকে বলো বুড়োর ধারে-কাছেও যেন না যায়। এর জন্যে অন্য প্ল্যান করতে হবে।’
‘সেটা কী ধরনের হবে?’
‘দক্ষ লোক দিয়েই কাজ সারব। কোরিয়া থেকে ডেকে নেব বাক ওয়াকিকে।