স্বয়ম্বরা
রাণুর বিবাহ। তিন দিন ধরিয়া রোশনচৌকির বাজনা,—বাড়ি-ঘর-দুয়ার সুরে সুরে ভরাট হইয়া গিয়াছে। সুর কি ভাবে মনের মধ্যে পর্যন্ত প্রবেশ করিয়া যেন রুন রুন করিতেছে। গায়ে হলুদের দিন মেয়েদের প্রীতিভোজ। যে ব্যাপারটি সুরের মধ্য দিয়া আহুত, সেটি যেন রাণুকে আরও পরিপাটী করিয়া ঘিরিয়া ফেলিতেছে। সে যতই সঙ্কুচিত হইয়া ঘরের কোণ খুঁজিতেছে, বাড়ির যত প্রশ্ন, যত আহ্বান যেন তাহারই অভিমুখী হইয়া ঘুরিয়া বেড়াইতেছে :
“কোথায় গেল সে?”
“ওমা! তুই নিশ্চিন্দি হয়ে একঠায় বসে আছিস! কি বলে গেলাম এক্ষুনি?”
নিমন্ত্রিতদেরও ওই এক খোঁজ :
“রাণুকেই যে দেখছি না! এই যে! দেখেছ? একদিনেই কত বদলে যায়?”
“হুঁ, পুষলে-পাষলে, এবার কাটল মায়া। কিছু না, কাকের কোকিলছানা পোষা দিদি!”
শুধু রাণু, রাণু, আর রাণু!
বিবাহের দিন সমস্ত ব্যাপারটি তাহাকে আরও নিবিড়তর ভাবে ঘিরিয়া ফেলিল। বর আসা হইতে আরম্ভ করিয়া সবাইকে দেওয়া-থোওয়া বসানো-খাওয়ানোর মধ্যে যা কিছু উৎসব, ব্যস্ততা, চেঁচামেচি, হাসি, বচসা—সমস্তর মধ্যেই রাণু যেন একটা গূঢ় অলক্ষ্যে উপস্থিত আছে। তারপর আসল বিবাহের ব্যাপারটা, রাণু তো সেখানে সর্বেশ্বরী, সবাইকে যেন নিষ্প্রভ করিয়া দিয়াছে— ছোট বড়, গুরু লঘু সবাইকে।
অথচ এই রাণু সেদিন পর্যন্ত সংসারের আর সব ছেলেমেয়েদের মধ্যে মাত্র অপর একজন ছিল। সংসারের কাজে অকাজে আধময়লা কাপড় পরা—খোঁজ পড়িয়াছে ফরমাশের জন্য—কাজের অবহেলা কিংবা ভ্রান্তিতে খাইয়াছে বকুনি—মুখভার করিয়া ফিরিয়াছে; তাও কাজের তাগিদে কি মুখটাই বেশিক্ষণ বিষণ্ণ থাকিবার অবসর পাইয়াছে? আদরের কথা? হ্যাঁ, তা নেহাৎ যখন কাহারও অতিরিক্ত রকমের ফুরসত বোধ হয়, ডাকিয়া এদিক ওদিক দুইটা প্রশ্ন, দুইটা মিষ্টি কথা—
বিবাহ জিনিসটা তাহা হইলে মন্দ নয়। কেমন করিয়া যেন মনে হয় একটি প্রদীপ জ্বালার কথা,—গান, উৎসব, শঙ্খ-উলুধ্বনির সঙ্গে যেন একটি আরতির দীপ দেবতার সামনে আলোয় আলোয় ঝলমল করিয়া উঠিল।
আলোর কিন্তু একটা ছায়ার দিক আছে, ঠিক যেমন আছে একটা দীপ্তির দিক। এই কথাটি ভুলিলে চলিবে না, কেননা এই ছায়া-দীপ্তি লইয়াই তো জীবন।
বিবাহ-বাড়ির দৃশ্যটা একবার ভাবুন, বিশেষ করিয়া চারিদিকে নানা বয়সের যে মেয়েগুলি চলাফেরা করিতেছে তাহাদের কথা। সবচেয়ে ব্যস্ত, সবচেয়ে কলোচ্ছ্বাসিত, কেহ না চাহিলেও শুধু নিজের নিজের আনন্দের অতিপ্রাচুর্যে সর্বত্র সঞ্চরিতা—মনে হয়, এরাই যেন উৎসবের প্রাণ। কিন্তু সাধারণ ভাবে এ কথাটা সত্য হইলেও একটু লক্ষ্য করিলেই দেখা যাইবে, উৎসবের আলোটি সকলের মুখে সমানভাবে ফুটে নাই। এমন কি একটু ভালো করিয়া লক্ষ্য করিলে এদের মধ্যে অনেকগুলি গম্ভীর, নিষ্প্রভ, এমন কি বিষণ্ন মুখের সন্ধান পাওয়া যাইবে। এইগুলির উপর আলোর ছায়া পড়িয়াছে। এই ছায়াকে কি বলিবেন?—হিংসা? যাহা ইচ্ছা হয় বলুন, সংজ্ঞায় কিছু যায় আসে না; আমি এই গ্লানিমাটুকুকে ছায়াই বলিলাম। রাণুর বিবাহ উপলক্ষ্যে এই রকম একটি ছায়াপাতের কথা বলিব; অল্প কথা, কিন্তু বড়ই করুণ।
এই হাস্যোজ্জ্বল উৎসব-রজনীতে একটি মেয়ের চিত্ত ভারাতুর হইয়া উঠিয়াছে। তাহার কেন বিবাহ হয় নাই? কবে হইবে? কবে তাহার চারিদিকে এই বাদ্য, এই কলোচ্ছ্বাস মুখর হইয়া উঠিবে? বিবাহ! চিন্তাতেও সমস্ত চিত্ত এক মুহূর্তে ভরিয়া উঠে যেন। রূপকথার এমন প্রত্যক্ষ রূপ আর দেখা যায় না; একটি রজনীর মোহন স্পর্শের মধ্য দিয়া তাহার সব নগণ্যতা ঘুচিয়া যাইবে; রাণুর মতো সেও রানী হইয়া জাগিয়া উঠিবে। সে দিন আসিবে নিশ্চয়, এই রকম একটা রজনীর সোনার মুকুট মাথায় পরিয়া। কিন্তু কবে? বিলম্ব তো আর সহ্য করা যায় না?
কিন্তু কাহাকেই বা বলিবে, আর কেই বা বুঝিবে তাহার মনের কথা? সখীদের? তাহারা আজ নিজেদের লইয়াই উন্মত্ত, পরের কথা শুনিবার কি আর অবসর আছে? আর তা ছাড়া তাহাদের শুনাইয়া ফলই বা কি? তাহারা তো কোনো সুরাহা করিতে পারিবে না। তবুও চেষ্টা করিয়াছিল। ওদের বাড়ির রতি খুব সাজিয়াছে, মাথায় ঝকঝকে জরির ফিতা দিয়া রচিত খোঁপা, তাহাতে টকটকে একটা গোলাপ গোঁজা। ঘাগরা করিয়া পরা আঁচল গতির চঞ্চলতায় পিছনে ফরফর করিয়া উড়িতেছে, প্রজাপতির পাখনার মতো। সিল্কের রুমাল—কখনও ব্লাউজে গোঁজা, কখনও কোমরে, কখনও হাতে। চুলের, রুমালের ও ফেস-ক্রিমের মিশ্র গন্ধ যেন ঢেউ তুলিয়া সঙ্গে সঙ্গে ঘুরিতেছে।
ইহাকেই বলিবার অনেক সুবিধা, তারপর যদি কথাটা ঘুরিতে ফিরিতে বড়দের কানে পৌঁছায়—রতিকে উপলক্ষ্য করিয়া যাহা বলিল, তাহা যদি নিজের অন্তরের দূতীর কাজ করে!
“ইস, ভাবনে গেলি রতি! কি ভেবেছিস বল দিকিন!”
“ওমা ভাবব আবার কি? বিয়েবাড়ি, সবাই তোর মতন গোমড়া মুখ করে বেড়াবে নাকি?”
“নাঃ, কিছু ভাবছ না! আমি ঠিক জানি মশাই। বলব, কি ভাবছিস? রতি ভাবছে, যদি রাণুর মতো আমারও শ্বশুর এসে—”
ভিতর হইতে কে হাঁকিল, “মেয়েদের পাতা করে ফেল।” রতি সেই দিকেই ছুটিয়া গেল, তাহার নিজের মনের রহস্য আর তাহাকে শোনানো হইল না।
ভাজ অনেক সময় ঠাট্টা করে; এই সময় করিলে একটা উপকার হয়, লজ্জা-লজ্জা উত্তরের ছলে তবুও মনের ভাবটা কতকটা প্রকাশ করিয়া দেওয়া যায়। আজই কিছু বিবাহ হওয়া সম্ভব নয়, তবুও মনের অভিরুচিটা যদি জানা থাকে সবার তো—”
তাহাকে পাওয়াই দুষ্কর। যদি পাওয়াই গেল তো, এত ব্যস্ত যে ঠাট্টা করিবে কি? মরিবার ফুরসত নাই। তবুও একবার মুখটা ঘুরাইয়া প্রশ্ন করিল, “হ্যাঁ, রে, ও-রকম শুকনো মুখ করে ঘুরে বেড়াচ্ছিস যে? আজ রাণুর বিয়ে হচ্ছে তাতেই এই রকম, দুদিন পরে যখন নিজের—”
“যাও, ঠাট্টা ভালো লাগে না বউদি!”
“ওমা, ঠাট্টা কি লো? দুদিন পরে রাণু যখন নিজের ঘর করতে যাবে, মুখ শুকনো করা তো দূরে থাক, কেঁদেও কি রুখতে পারবি?”
ভাজ বুঝিয়াও বুঝিল না। আর তবে কাহার কাছেই বা আশা? বাপ মা—এদের কাছে তো আর বলা যায় না! বাকি থাকেন দাদু আর ঠাকুরমা, একটির বিদায়েই তাঁহাদের যা অবস্থা, ওখানে তো ঘেঁষাই যাইবে না। তাহা ছাড়া ঠাট্টা-বিদ্রূপের মতো মনে স্ফূর্তি ফিরিয়া আসিতে তাহাদের ঢের দেরি এখনও, রাণুর জোড়ে ফিরিবার পূর্বে তো নয়ই।
তখন মনে পড়িল মেজকাকার কথা। ও-লোকটা হাল্কা প্রকৃতির, কাজের যেমন উপযুক্তও নয়, তেমনই কাজের ভিড়ে ডাকও পড়ে না ওর। প্রচুর অবসর লইয়া কোনো নিরিবিলি জায়গায় গা ঢালিয়া পড়িয়া আছে নিশ্চয়। আর একটা মস্ত বড় সুবিধা এই যে, বিবাহ-সংক্রান্ত কোনো কথা ভালো করিয়া বোঝে না বলিয়া ওর কাছে কথাটা পাড়ায় কোনো সঙ্কোচের বালাই থাকিবে না। কেন যে মেজকাকার কথাটা আগে মনে পড়ে নাই! বোধ হয় অমন অ-দরকারী লোককে টপ করিয়া কাহারও মনে পড়ে না বলিয়াই।
অবশ্য অতটা বেকার নই আমি। তবুও লজ্জার কথা হইলেও বলিতে হইতেছে, অত কাজের ভিড়েও একটু নির্লিপ্ততা সৃজন করিয়া সেটুকু উপভোগ করিতেছিলাম—নিজের ঘরের বিছানায় শুইয়া, একটু চক্ষু মুদিয়াও।
“মেজকা!”—ডাকে তন্দ্রাবেগটা কাটিয়া গেল। আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, “তুই এখানে? মেয়েদের পাতা করা হয়েছে, খেয়ে নিলি না কেন? রাত হয়েছে যে!”
“এক্কেবারে ক্ষিদে নেই।”
“কেন? আচ্ছা, একটু মাথার চুলগুলো ধরে আস্তে আস্তে টেনে দে দিকিন।” একটু পরে।
“মেজকা!”
আলস্যের স্বরে উত্তর করিলাম, “হুঁ!”
“ঘুমুচ্ছ?”
উৎসাহিত করিবার জন্য বলিলাম, “হুঁ। বেশ মিষ্টি হাতটা রে তোর। ঘুম আসছে।”
“না, সে কথা বলছি না।”
“তবে?”
আর একটু চুপচাপ গেল। আবার তন্দ্রাটা বেশ জমিয়া আসিতেছে।
“মেজকা, আমার বিয়ের যোগাড় করে দেবে?”
তন্দ্রা ছুটিয়া একেবারে উঠিয়া বসিলাম। এ যে চার-পো কলি!
কিন্তু কেন, তা বলিতে পারি না, কোনো রূঢ় উত্তর দিতে কেমন যেন মন সরিল না। বোধ হয় মনে করিলাম, এটা নির্জলা নির্লজ্জতার নিদর্শন নাও হইতে পারে; সম্ভবত উৎসবের ছোঁয়াচ লাগিয়াছে; না হইলে—রাণুর চেয়েও ছোট, বিবাহের আর ও কি বোঝে?
উৎসবের সুরটি ভাঙিতে কেমন কেমন বোধ হইল। পরে একদিন না হয় সমস্ত বিষয়টির অনৌচিত্যটা বুঝাইয়া দিলেই হইবে। একটু নীরব থাকিয়া বলিলাম, “তোমার বিয়েটা হয়ে গেলে তো আমরা আরও নিশ্চিন্দি হতাম। আজ না হয় কাল তো দিতেই হবে; কিন্তু সে তো আর অল্প কথায় হয় না মা। দেখলেই তো, রাণুর বিয়েতে খরচের হিড়িকটা? নিজেদের খরচ তো আছেই, তা ছাড়া তোমাদের শ্বশুরেরা তো হাঁ করেই আছেন, অল্প দিয়ে কি আর পেট ভরানো যাবে? চাই এককাঁড়ি পয়সা।”
“তুমি উঠে বসলে কেন মেজকা? শোও না ওদিকে মুখ করে, আমি সুড়সুড়ি দিচ্ছি।”
বুঝিলাম মুখোমুখি হইয়া প্রসঙ্গটা চালাইতে পারিতেছে না। আহা, সত্যই কি এতটা বেহায়া হইতে পারে! হোক না এ যুগ, হোক না সে মডার্ন!
একটু প্রসন্ন ভাবেই শুইয়া পাশ ফিরিলাম। বুঝিলাম, দুজনার মধ্যে একটি লঘু তন্দ্রার পর্দা সৃষ্টি করিবার চেষ্টা এটা। ভালো। একটু পরে ডাক হইল, “মেজকা, ঘুমুচ্ছ!”
কৃত্রিম জড়িত কণ্ঠে বলিলাম, “না, বল।”
একটু থামিয়া উত্তর হইল, “পয়সা আমি যোগাড় করে রেখেছি মেজকা, তোমাদের ভাবতে হবে না।”
সর্বনাশ! আমার বিস্ময় আমায় যেন ঠেলিয়ে তুলিয়া দিল। দুই কনুইয়ের উপর ভর দিয়া অর্ধশয়ান ভাবে উঠিয়া পড়িলাম এবং চক্ষু বিস্ফারিত করিয়া প্রশ্ন করিলাম, “পয়সা যোগাড় করে রেখেছিস? সে কি রে! তুই কবে থেকে এ মতলব আঁটছিস? একটা বিয়ের খরচ যোগাড় করেছিস বলছিস, সে তো চাড্ডিখানি পয়সা নয়!”
নিশ্চয় একটা মস্ত বড় বাহাদুরি ভাবিল; না হইলে এর পরে আর উত্তর দিত না। আজকালকার মেয়ে!
একটু তেরছা হইয়া বসিয়া মুখটা ঘুরাইয়া লইল। তারপর ঘাড়টা ঈষৎ নীচু করিয়া বলিল, “অনে—ক আছে; অনেক দিন থেকে জমাচ্ছি।”
প্রবল কৌতূহল হইল, বলিলাম, “সত্যি নাকি? নিয়ে এসে দেখাতে পারিস? তোর কাছে, না তোর মা’র কাছে আছে?”
“না, আমার কাছেই আছে, আনছি।”
আপনাদের অবস্থাটা বুঝিতেছি; কিন্তু সাক্ষাৎদ্রষ্টা আমার তখনকার মনের অবস্থাটা কল্পনা করিতে পারেন কি? বিশ্বাস করিতে আপনাদের বোধহয় মনের উপর খুব একটা চাপ পড়িতেছে। কিন্তু যা হাওয়া বহিতেছে, সবই সম্ভব। আজ যাহা শুনিতেছেন, কাল যদি তাহা নিজেই প্রত্যক্ষ করেন তো কিছুই আশ্চর্য হইবার নাই। গুরু-লঘু ভেদ আর ইহারা রাখিবে না, তা হা-হুতাশ করিলে আর উপায় কি?
একটু পরে মাখন-রঙের একটি ছোট ক্যাশবাক্স আনিয়া হাজির হইল। এটা চিনি, ওর বাপের দেওয়া; মেয়েটিকে বড় ভালোবাসে। অত ভালোবাসা, অত আশাকারারই বোধ হয় এই পরিণাম।
ডালা খুলিয়া বাক্স সামনে ঘুরাইয়া ধরিয়া স্মিতহাস্যের সহিত আমার মুখের উপর চক্ষু তুলিয়া চাহিল, বিজয়ের আনন্দে সঙ্কোচের অবশেষটুকুও অন্তর্হিত হইয়া গিয়াছে।
সত্যই! বাক্সের খোপে খোপে রুমাল, নেকড়া আর কাগজের ছোট বড় একরাশ মোড়ক; একটি জ্যালজেলে ফরসা নেকড়ার গ্রন্থির মধ্যে যেন সুস্পষ্ট গিনির থাক্ ঝিকমিক করিতেছে!
.
ভূমিকাটি এই পর্যন্ত থাক। হ্যাঁ, এটা আমার গল্প নয় একটা বিজ্ঞাপন মাত্র; এ পর্যন্ত যাহা বলিলাম, সেটা তাহার ভূমিকা। কিন্তু বিজ্ঞাপনটি এই—
আমার একটি সাত বছরের ভ্রাতুষ্পুত্রী বর্তমান, নাম ডলিরানী। ছিপছিপে শ্যামবর্ণ; পিঠের অর্ধেক পর্যন্ত ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া কেশ। এদিকে মেয়েটি খুব গোছালো, কেননা নিজের বিবাহের জন্য পাই, আধলা, পয়সায় অনেক-গুলি তাম্র খণ্ড সঞ্চয় করিয়া রাখিয়াছে—একুনে সওয়া ছয় আনা। সুতরাং একেবারেই যে খালি হাতে কন্যা গ্রহণ করিতে হইবে, এমন নয়। হৃদয়বান যদি কোনো বরের বাপ থাকেন তো সম্মতি জানাইলে সুখী হইব।
একটু গোল আছে আবার এর মধ্যে, সেটাও পূর্বাহ্নেই বলিয়া রাখা ভালো। শুধু হৃদয় থাকিলেই চলিবে না। যত দূর বোঝা গেল, একটি সভা-সাজানো শ্বশুরলাভই আপাতত ডলির বিবাহ করার প্রধান উদ্দেশ্য এবং আর সব এক রকম অবান্তর। ডলির ব্যক্তিগত ইচ্ছা, শ্বশুরের শরীরে প্রচুর মেদ এবং মাথায় খুব চকচকে একটি প্রশস্ত টাক থাকা চাই। কি করা যায়? ভিন্নরুচিহি লোকাঃ। তাই যদি এরূপ ত্রিগুণাত্মক—অর্থাৎ একাধারে হৃদয়, মেদ এবং টাকবান কেহ থাকেন তো, আশা করি, অবিলম্বেই পত্রাচার আরম্ভ করিয়া বাধিত করিবেন।