স্বদেশ গাথা । নবারুণ ভট্টাচার্য (প্রেরণা গোবিন্দচন্দ্র দাস)
স্বদেশ নয় এ, মড়ার ভাগাড়
চলতে ফিরতে পায়ে ফোটে হাড়
লাশের বিলাস, লাশের পাহাড়
যেই দিকে চাই, দুচোখময়।
গোবিন্দদাস থাকলে বলত
কথায় তাহার আগুন জ্বলত
যাহার দাপে গরীব কাঁপে
ঠিক যেন সে অন্ধ হয়
স্বদেশ, স্বদেশ করছ কাকে—এদেশ তোমার নয়।
ভূস্বর্গে যে উপবাসী
শাস্ত্রে তারাই নরকবাসী
খাদ্য তাহার পচা, বাসি
নর্দমা উচ্ছিষ্টময়
শোষক চতুর বেনের দেশে
কক্ষনো তার জায়গা হয় ?
সংবিধানে কার অধিকার
বেকারি আর ক্ষুধায় মরার
বাঁচতে বেশ্যাবৃত্তি করার
চক্ষু যাহার বাষ্পময়
বুদ্ধিজীবীর মাতৃভূমি,
শস্যজীবী নিরাশ্রয়।
গোবিন্দদাস থাকত যদি
বলত কাব্যে নিরবধি
বুদ্ধিজীবীর পাছায় দুচোখ
আকাশ তাহার দেখতে নয়
স্বদেশ, স্বদেশ করছ কাকে—এদেশ তোমার নয়।
শেয়াল শকুন পথের ধারে
কাপড় খুলে ন্যাংটো করে
যাহার চিত্র চিত্রকরের
দেশ-বিদেশে কদর হয়
সংবাদে তার কান্না ছাপে
সাহিত্যিকের চক্ষু ভাপে
ঠোঁটের ডগায় সিগার কাঁপে
মদ গিলিয়া শান্ত হয়
কলম শুধু মলম লাগায়
ক্ষত যেমন তেমন রয়।
বিবেক রাখে পর্দা ঢাকা,
তাকে রবীন্দ্রনাথ রাখা
শাক দিয়ে মাছ নিত্য ঢাকা
সেবাদাসের কর্ম হয়
গোবিন্দদাস বলত থাকলে
সারাজীবন বিষ্ঠা মাখলে
কৃত্রিম এই ধুপের ধোঁয়ায়
গুয়ের কুবাস বিদায় হয় ?
স্বদেশ, স্বদেশ করছ কাকে—এদেশ তোমার নয়।
রেলস্টেশনে, হাসপাতালে
বাজার খোলা, খাস চাতালে
শহর নগর রেল পাতালে
কাহার দিবস রাত্রি হয়
জেলহাজতে, হাড়িকাঠে
দুইবেলা যার মুণ্ডু কাটে
চিতা যাহার জ্বলছে মাঠে
শ্মশানে চোখ অশ্রুময়
স্বদেশ, স্বদেশ করছ কাকে—এদেশ তোমার নয়।