স্পেশাল অফিসার – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

স্পেশাল অফিসার – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

রামপ্রসাদ গান গেয়েছিলেন, মা আমায় ঘুরাবি কত, কলুর চোখ বাঁধা বলদের মতো। আর আমাদের এই প্রসাদ, প্রসাদ মিত্র ডাকবাংলার হাতায় বসে মনে মনে বলছেন, কী ফ্যাসাদে ফেললে প্রভু! কারুর ওয়াইফও নই, মিডওয়াইফও নই, অথচ এ কী পাপ! কুকুর ছানা কোলে নিয়ে কতক্ষণ বসে থাকতে হবে কে জানে! কুঁই কুঁই করলেই চাকরি চলে যাবে।

সময়, সন্ধ্যা। স্থান, একটি জেলা শহর। শীত আসছে। বাতাসে ঠাণ্ডার আমেজ। বেলা একটার সময় ডাকবাংলায় একটা জিপ এসে ঢুকেছিল। জিপ থেকে নেমেছিলেন সস্ত্রীক এস. ডি. ও.। মেমসাহেবের কোলে ছিল এই কুকুরটি। এখন প্রসাদের কোলে।

পমেরেরিয়ানের বাচ্চা। মেমসাহেব মুখে ঝকঝকে দাঁতের হাসি খেলিয়ে, শরীর দুলিয়ে মন্ত্রীর হাতে কুকুর বাচ্চাটি দিতে দিতে বলেছিলেন, দিস ইজ ফর ইয়োর ওয়াইফ স্যার। গতবার এসে আমাকে বলেছিলেন, আই প্রমিসড হার। আমাদের কুকুরটা তখন প্রেগনান্ট ছিল। সেন্টপারসেন্ট পেডিগ্রিড। ঠিক মতো মানুষ করতে পারলে শি উইল বি আ জয় ফর এভার।

এস.ডি.ও ভেট দিয়ে চলে যাবার পরই মিনি-স্টারের খেল শুরু হয়েছে। মিনিট পাঁচেক কুকুরটাকে ঘাঁটাঘাঁটির পরই তাঁর অরুচি ধরে গেল। (দলে অরুচি ধরার মতো। তিনবার দল বদল করে, এই খেপে গদি পেয়েছেন।) কুকুরটা প্রসাদের হাতে দিয়ে ডি. এমের সঙ্গে লাঞ্চ খেতে চলে গেলেন। যাবার সময় বলে গেলেন, যত্ন করবে, আদর করবে, আনন্দে রাখবে, যেই দেখবে পেট পড়ে গেছে দুধে তুলো ভিজিয়ে চুকচুক করে খাওয়াবে। দুধ যেন বেশি ঘন না হয়, বেশি তরল না হয়। মায়ের দুধের ডাইল্যুশানে নিয়ে আসবে জল মিশিয়ে মিশিয়ে।

কুকুরের মায়ের দুধ কতটা ঘন, কতটা তরল প্রসাদের জানা ছিল না। ডাকবাংলার চৌকিদার, ঝাড়ুদার, খানসামা কেউই জানত না। পশুপালন বিভাগের প্রবীণ পশু চিকিৎসকও জানেন না। ডিসট্রিক্ট হেলথ্‌ অফিসারও এ বিষয়ে অজ্ঞ। এত অজ্ঞতায় দেশ চলছে কী করে, কে জানে! যাই হোক প্রসাদ হাফ দুধ, হাফ জল মিশিয়ে হাসপাতাল থেকে বরিক তুলে এনে, নুটি করে ভিজিয়ে ভিজিয়ে দুপুরে কুকুর বাচ্চাটাকে নানা ভাবে চেষ্টা করেছিল দুধ খাওবার। সে এক দুঃসাধ্য ব্যাপার। কেঁউ কেঁউ করবে, না খাবে! একটু জোর জবরদস্তি করতেই তুলোর তালটা কুকুরের গলায় চলে গেল। চোখ উলটে দম বন্ধ হয়ে মরে আর কী! প্রসাদ রেডি ছিল। কুকুরের প্রাণ বায়ু বেরোলেই সে-ও ঝুলে পড়বে গলায় দড়ি দিয়ে। কুকুরের কান দুটো ধরে পেছনটা কৌটো ঠোকার কায়দায় কার্পেটে বার কতক ঠুকতেই তুলোর ডেলা গলা ছেড়ে পেটে চলে গেল। বিপদ কাটলেও ভয় রয়ে গেল। তুলো পেটে গিয়ে হজম হবে তো! না লিভারে মেয়েদের খোঁপার জালের মতো জড়িয়ে বসে থাকবে! সঙ্গে সঙ্গে নিজেও সমপরিমাণ তুলো দুধে ভিজিয়ে খেয়ে বসে রইল। সেই পক্সের টিকে যে সাহেব আবিষ্কার করেছিলেন তিনিও তো প্রথম নিজের ওপরেই পরীক্ষা করেছিলেন। প্রসাদ একবার ভেটেরিনারি অফিসারকেও ফোন করেছিল। সরাসরি জিগ্যেস করেনি। কায়দা করে, কুকুরে তুলো খেলে কী হয়?

ডাক্তার বলেছিলেন, জুতো খেয়ে যে জাত হজম করে তুলো তো তাদের কাছে বেলের মোরব্বা মশাই।

দুপুর গড়িয়ে সন্ধে এসেছে। মন্ত্রী মহোদয় স্নান সেরে শরীরে পাউডার ঢেলে ভস্ম মাখা মহাদেবটি হয়ে ধ্যানে বসেছেন। মাথার ওপর পাঁই পাঁই পাখা ঘুরছে। শরীরের চাপে ডানলাপিলো দেবে গেছে। কোণের টেবিলে রুপোর ফোলডিং ফ্রেমে মন্ত্রীর গুরুদেব বাঘছালে বসে আছেন। শিবনেত্র হয়ে। আর একদিকে মা মহামায়া। নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ধ্যানের মাত্রাও তত বেড়ে যাচ্ছে। জন্মপত্রিকা নিয়ে জ্যোতিষীরা অঙ্ক কষে চলেছেন। হস্তরেখাবিদরা হাতের ওপর ম্যাগনিফাইং গ্লাস ফেলছেন।

মন্ত্রীর হুকুমে প্রসাদ কুকুর কোলে পাকুড় গাছের তলায় বসে আছে। কেঁউ কেঁউ শব্দে ধ্যানভঙ্গ যেন না হয়। তৃতীয় নয়নে ভবিষ্যৎ দেখার চেষ্টা করছেন। আর একবার গদি চাই। কত কাজ বাকি! নিজের এলাকায় জমিজমা বেড়েছে। বাস আর ট্যাকসি খাটছে। এইবার সিনেমা হল, আর একটা কোল্ডস্টোর হলেই কে আর গদির পরোয়া করে! চুলোয় যাক তোদের দেশ, চুলোয় যাক রাজনীতি। চাষির জমিতেও চাষ হবে, মন্ত্রীর জমিতেও চাষ হবে। চাষ হলেই হল। হিমঘর তো দেশের চাষ আবাদের কল্যাণেই। অর্থনীতি বলছে, ধরো, ধরে রাখো, চড়ো আরও চড়ো, তারপর ছাড়ো। মন্ত্রী বলে কি মানুষ নন। মানুষের কাজই তো গুছানো। আখের চাষের মতোই, আখেরের চাষ।

রাতে মন্ত্রী বিশেষ কিছু খেলেন না। লাঞ্চে গুরুভোজন হয়েছে। মাছের মুড়ো দিয়ে সোনামুগের স্পেশাল ডাল, সরু বাসমতী চালের দু’চামচ ভাত, একটা মুরগির ঠ্যাং, এক চৌকো পুডিং দিয়ে রাতের আহার শেষ করে বিশাল একটি ঢেঁকুর তুললেন। পেটের মতো মুখও গুরুগম্ভীর হয়ে আছে। নির্বাচন আসন্ন। জেলায় পার্টির ভেতরের অবস্থা বিশেষ ভাল নয়। ফাটল ধরে চাকলা চাকলা। যে যেমন পারছে খাবলাখাবলা টাকা মেরে সরে পড়ছে। কোঁদল শুরু হয়ে গেছে। কোঁদল থেকে কোদাল। কোদালেই কবর তৈরি হয়। দাঁতে কাঠি খুঁচতে খুঁচতে ডাকবাংলার বারান্দায় পায়চারি করছেন আর সুর করে বারে বারে একটি নামই উচ্চারণ করছেন, বসন্ত, বসন্ত। অসুখ বসন্ত নয়, মানুষ বসন্ত। রাজনীতির প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী। হজমি পায়চারি চালাতে চালাতে প্রশ্ন করলেন, খাওয়া হয়েছে?

প্রসাদ বললে, এইবার বসব স্যার।

মন্ত্রী বিরক্ত হয়ে বললেন, তোমার নয়, তোমার নয়, কুকুরের খাওয়া হয়েছে?

হয়েছে স্যার।

সারাদিন ক’লিটার দুধ খেয়েছে?

প্রসাদ বিপদে পড়ে গেল। ক’ফোঁটায় লিটার হয় জানা নেই। কেউ যদি প্রশ্ন করেন ক’লিটার কেঁদেছে, কোনও উত্তর হয় কি? প্রসাদ বললে, প্রায় এক বাটি।

ইডিয়েট। তোমার মাপজোকের কোনও ফ্যাকালটি নেই। চেষ্টাও করো না। সেদিন ডিস্‌ট্রিকট কনফারেন্‌সে জিগ্যেস করলুম, জেলায় কত ধান হয়? বলতেই পারলে না। ইনএফিশিয়েন্ট। মন্ত্রীর সঙ্গে ঘুরছ, স্ট্যাটিস্টিক্স তোমার মুখেমুখে থাকা উচিত। যখন যা চাইব, চটপট বলে দেবে। তা না, হাঁ করে নিরেট নীরেনের মতো মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবে। দেশের বারোটা তোমরাই বাজাবে। যেমন অ্যাডমিনস্‌ট্রেশানের অবস্থা, তেমনি পলিটিকসের অবস্থা। আমার কী, তোমরাই বুঝবে ঠ্যালা।

মন্ত্রী হাই তুললেন। ঘুম আসছে। জড়ানো গলায় বললেন, আমি শুয়ে পড়ছি। কাল ভোরেই বেরতে হবে। তুমি কুকুরটাকে কাছে নিয়ে শোবে। মাতৃস্নেহে সারারাত রাখবে। একটা মা বের করার চেষ্টা করো প্রসাদ। পৃথিবীতে মায়ের বড় অভাব। খরা চলেছে। স্নেহ নেই, ভালবাসা নেই, থাকার মধ্যে ছত্রিশটা দল। ভোট ভাগাভাগি। ভাগের মা গঙ্গা পায় না।

চৌকিদার প্রসাদকে বললে, বাবু ওটাকে হিসি করিয়ে নিয়ে শুতে যান। তা না হলে বিছানা ভেজাবে! সব সময়েই তো কেঁউ কেঁউ করছে। বুঝবেন কী করে কোন কেঁউটা হিসির। প্রসাদ গাছতলায় কুকুরটাকে রেখে হিস্‌স্‌স্‌ হিস্‌স্‌স্‌ করতে লাগল। চারপাশে গাছ, মাথার ওপর তারাভরা আকাশ। ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। কুকুরটা পায়ের কাছে গোল হয়ে ঘুরছে আর কেঁউ কেঁউ করছে। মানুষের বাচ্চা হিস্‌ বোঝে। কুকুরের ভাষাটা কী? প্রসাদ বিরক্ত হয়ে বার কতক ঘেউ ঘেউ শব্দ করে কুকুরের ভাষা নকল করার চেষ্টা করল। লাভ হল না। শেষে ধৈর্য হারিয়ে বিছানায় চলে এল। সাধে বলে, মা হওয়া কি মুখের কথা!

অনেক রাতে প্রসাদের ঘুম ভেঙে গেল! পেটের কাছটা ভিজে ভিজে লাগছে। পাজামার দড়িটাকে মাতৃস্তন ভেবে মুখে পুরে মন্ত্রীর কুকুর সারারাত চুকুর-চুকুর চুষে ভিজিয়ে দিয়েছে। কেমন গুটিসুটি মেরে কোলের কাছে শুয়ে আছে। প্রসাদ বড় সন্তুষ্ট হল, যাক এতক্ষণে কুকুরে কুকুর চিনেছে!

হাইওয়ে দিয়ে মন্ত্রীর গাড়ি ছুটছে। সবুজ রঙের ঝকঝকে অ্যামবাসাডর। অন্যান্যবার প্রসাদ সামনে ড্রাইভারের পাশে বসে, এবারে কুকুরের ইঞ্জিনের গরমে কষ্ট হবে বলে মন্ত্রী নিজেই সামনে বসেছেন। প্রসাদ পেছনের আসনে। কোলের ওপর তোয়ালে, তার ওপর কুকুর। পাশে প্লাস্টিকের ঝুড়িতে দুটো ফিডিং বোতল। একটায় দুধ, আর একটায় জল। প্রসাদের নিজের চান আর ব্রেকফাস্ট না হলেও কুকুরের প্রসাধন হয়েছে। পাউডার পড়েছে গায়ে, লোমে বুরুশ পড়েছে। গাড়ির ঝাঁকুনিতে মাঝে মধ্যে প্রসাদের কোল ছেড়ে খচরমচর করে পালাবার চেষ্টা করলেও সুবিধে করতে পারছে না। একদিনেই প্রসাদ বাচ্চা সামলাবার কায়দাটা বেশ রপ্ত করে ফেলেছে। মন্ত্রীকে সামলাতে পারে না ঠিকই, মন্ত্রীও কি পারেন ভোটার সামলাতে, দপ্তর সামলাতে, দল সামলাতে। প্রসাদ ডান হাতের বুড়ো আঙুলটা কুকুরকে চুষতে দিয়েছে, তাইতেই জীবটি বোকা বনে প্রসাদের কোলে পড়ে আছে। সেই একই টেকনিক। দেশের মানুষও তো ওই একই ভাবে পড়ে আছে, রাজনীতির বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ চুষে। ওরাও জীব, এরাও জীব। ওরা পাঁচবছর পারে আর এ ব্যাটা ঘণ্টা ছয়েক পারবে না। বোকা বানানো কি এতই শক্ত!

মাইল চারেক আসার পর মন্ত্রী বললেন, প্রসাদ একবার করিয়ে নাও। প্রসাদ রাস্তার পাশে নেমে কুকুরকে হিস হিস করাল। হিস হিস করতে করতে নিজেরই পেয়ে গেল। করার উপায় নেই। গাড়িতে ফিরে এল। মন্ত্রী বললেন, ড্রাই হয়ে গেছে সিস্টেম, একটু জলের বোতলটা ধরো।

আবার মাইল চারেক গিয়ে মন্ত্রী বললেন, প্রসাদ ট্রাই করো। প্রতি চার মাইল অন্তর প্রসাদ নামে আর ওঠে। এদিকে নিজের পেট ফেটে যাবার অবস্থা। কুকুরের বদলে তাকে করতে বললে ছোটখাটো একটা পুকুর তৈরি করে দিতে পারে। শেষে শান্তিপুরের কাছে একটা জংলা জায়গায় প্রসাদ কুকুর নিয়ে নেমে আর সামলাতে পারল না। নিজেও বসে পড়ল। অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল বোধহয়। পেছন ফিরেই চক্ষু চড়ক গাছ। কুকুর নেই। কিছু দূর হাইওয়ের ওপর মন্ত্রীর সবুজ গাড়ি। প্রসাদ চাপা গলায় ডাকল, আয় আয় তু তু। ডাক শুনে নিচের ঢালু জমি থেকে একটা ঘিয়ে ভাজা নেড়ি কুকুর উঠে এসে ন্যাজ নাড়তে লাগল। ধ্যার ব্যাটা তোকে কে ডেকেছে। প্রসাদের মনে হল, সে যে-ডাকে ডেকেছে তাতে নেড়িই সাড়া দেবে। বিলিতির ডাক আলাদা। জোরে ডাকতে পারছে না, মন্ত্রী শুনতে পেয়ে যাবেন। হঠাৎ নেড়িটা ঢাল বেয়ে একটা ঝোপের দিকে এগিয়ে গিয়ে গড়ড় গড়ড় শব্দ করতে লাগল। মরেছে। মন্ত্রীর কুকুর বোধহয় ঝোপে গিয়ে ঢুকেছে। কামড়ে ছিঁড়ে দিলে রক্ষে নেই। পড়ি কি মরি করে প্রসাদ ঢাল বেয়ে নামতে গিয়ে পা হড়কে সড়াত করে ফুট ছয়েক হেঁচড়ে নেমে গেল। প্রসাদের পতন দেখে নেড়িটা ভয়ে সরে গেছে। প্রসাদ ঝোপঝাড় থেকে বাচ্চাটাকে বগলদাবা করে কামড়ের হাত থেকে বাঁচালেও নিজে আর উঠে আসতে পারছে না। পতন যত সহজে হয় আরোহণ তত সহজে হয় না। দুটো হাত কাজে লাগাতে পারলে হয়তো হত। এক হাতে কুকুর। ছ’ফুট ওপরে আকাশের পটে মন্ত্রী মহাশয়ের মুখ দেখা গেল। তিনি কিছু বলার আগেই প্রসাদ নীচে থেকে বললে, পড়ে গেছি স্যার।

মন্ত্রীর মুখটি প্রসাদের চোখে কালো আর বীভৎস দেখাচ্ছে। পেছনে উজ্জ্বল আকাশের জন্যেই বোধ হয় ওই রকম মনে হচ্ছে। সাদা সাদা দাঁত ফাঁক হয়ে লাভা-স্রোতের মতো মন্ত্রীবাক্য নিঃসৃত হল, পড়লে কী করে?

প্রসাদ কুকুরটাকে দেখিয়ে বললে, আজ্ঞে এ বড় বাইরে করতে নেমেছিল।

ড্রাইভারের সাহায্যে প্রসাদ ওপরে উঠে এল। কেটেকুটে গেছে। হাতে বাবলা কাঁটা ফুটে গেছে। চেহারা দেখে মন্ত্রী বললেন, অপদার্থ। গুড ফর নাথিং।

এক মাসের মধ্যে প্রসাদের প্রোমোশান হয়ে গেল। যে ফাইল কিছুতেই নড়ছিল না। কখনও ডিপার্টমেন্টে আটকায়, কখনও ফাইনান্স থেকে অবজেকশান নিয়ে ফিরে আসে, সেই ফাইল হঠাৎ, সচল হয়ে প্রসাদকে ভাঙা চেয়ার থেকে চেম্বারে তুলে দিলে। মন্ত্রীর কুকুরের বয়েস বেড়েছে, প্রসাদের পদমর্যাদাও বেড়েছে। চেম্বার ছোট হলেও, চেম্বার। টেবিলে কাচ। চেয়ারের পেছনে ভাঁজ করা তোয়ালে। প্রসাদের কতদিনের আশা। চেম্বারের বাইরে নেমপ্লেট। কাঠের টুকরোর ওপর সাদা হরফে লেখা—স্পেশাল অফিসার। কীসের স্পেশাল অফিসার তা ঠিক না হলেও স্পেশাল অফিসার। টেবিলে আবার ঘণ্টা পেয়েছে। টিপলেই কৌ কৌ করে বেজে ওঠে। হঠাৎ একদিন দেখা গেল চকখড়ি দিয়ে স্পেশাল অফিসারের পাশে ব্র্যাকেট দিয়ে কে বা কারা লিখে গেছে, ডগ। প্রসাদ মিত্র। স্পেশাল অফিসার (ডগ)। তা লিখুক। প্রসাদ এখন, মিত্তির সাহেব। অধস্তনরা স্যার বলে সম্বোধন করে।

২৪.০৫.১৯৮১

লেখক পরিচিতি

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়: ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় জন্ম। শৈশব কেটেছে ছোটনাগপুরের পাহাড়ি অঞ্চলে। শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবনের শুরু। প্রথম প্রকাশিত গল্প সারি সারি মুখ। প্রথম ধারাবাহিক রচনা সঞ্জয় ছদ্মনামে। ‘জীবিকার সন্ধান: পশ্চিমবঙ্গ’ দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। দেশ পত্রিকায় তাঁর প্রথম গল্প ‘চকমকি’। ১৯৮১-তে আনন্দ পুরস্কার।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *