স্নেহের খেলা

স্নেহের খেলা

সমুদ্রের গায়ে একতলা দুই কামরার বাড়ি, বাড়িওয়ালা এগারো মাসের বেশি ভাড়া দেবেন না। বললেন, ‘আমার বাড়িতে আপনি অনন্তকাল থাকবেন আর আমি কয়েকটা টাকার বিনিময়ে প্যাট প্যাট করে তা দেখব, নো, তা হতে পারে না। বেশি ভাড়া চাইছি না, ঠিক এগারোটি মাস থাকুন, তারপর কেটে পড়ুন।’

সমীরপতি তাতেই রাজি হলেন। অনেকদিন থেকেই মনে হচ্ছিল কোনো নির্জন জায়গায় কয়েক মাস থাকলে কেমন হয়! যেখানে কলকাতার হইচই, মিছিল, রাস্তার ট্রাফিকজ্যাম থাকবে না। স্ত্রীকে বললেন কথাটা। শোনামাত্র তিনি তীব্র প্রতিবাদ করলেন, ‘অসম্ভব! সব ছেড়ে ছুড়ে আমি ধ্যাড়ধেড়ে গোবিন্দপুরে গিয়ে থাকতে পারব না। তোমার ইচ্ছে হয়েছে, তুমি যাও।’

সমীরপতি স্বস্তি পেলেন না, বললেন, ‘তোমাকে ফেলে গেলে দুশ্চিন্তায় ভুগব।’

‘রোজ দুপুরে একটা ফোন করলেই চিন্তা দূর হবে। সবাই তো তাদের বাড়িতে যেতে বলে, তুমি আছ বলে যেতে পারি না। এই সময়টা আমি এর বাড়ি ওর বাড়িতে গিয়ে কিছুদিন থেকে আসতে পারি। আহা, কী খুশি হবে সবাই।’ স্ত্রী বললেন।

বাড়িওয়ালা থাকেন শহরে। বাড়ি দেখা—শোনার দায়িত্ব দিয়েছেন যার ওপর তার স্ত্রী এসে দুবেলা রান্না—পরিষ্কার করে দিয়ে যাবে। সকালের গাড়িতে স্টেশনে নেমে একটা অটোরিকশা ভাড়া করে সমুদ্রের ধারের বাড়িতে চলে এলেন সমীরপতি। কথা হয়ে ছিল, কেয়ারটেকার দরজা খুলে দিল। ঘরদোর দেখিয়ে বলল, ‘আমার বউ কাল থেকে রান্না করে দিতে পারে। আজ আপনাকে দোকানের খাবার খেতে হবে।’

‘কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু খাবারের দোকান কত দূরে?’

‘আপনি কি নিরামিষ খান?’

‘দুটোই চলে।’

‘তাহলে চিন্তা করবেন না। আমি বলে দেব। ওরা দুপুরের খাবার একটার মধ্যে বাড়িতে পৌঁছে দেবে। ভাত ডাল ভাজা তরকারি আর মাছের ঝোল। মাছ না খেলে দু—রকমের তরকারি আর চাটনি।’ কেয়ারটেকার জানাল।

‘তাহলে আজ মাছটা থাক। নিরামিষ দিতে বলো।’

‘এখানে চুরিচামারির কোনো ভয় নেই। তবে রাত্রে দরজা বন্ধ করে শোবেন।’

‘চুরি যখন হয় না, তখন—।’

‘সামনেই তো ঢেউ দেখছেন। রাত্রে ভয়ংকর হয়। তখন সমুদ্র থেকে কোনো প্রাণী তো উঠে আসতেই পারে। তাই সতর্ক থাকা ভালো। আর একটা কথা—।’ বলে লোকটা সমুদ্রের দিকে তাকাল, ‘বাবু, সমুদ্রে স্নান করতে গিয়ে গত দু—বছরে তিন— তিনজন মার গিয়েছে। চোরা ঢেউ টেনে নিয়ে গিয়েছে। তাই সমুদ্রে না নামাই ভালো।’

‘কোনখানে হয়েছে ঘটনাগুলো?’

‘এই, এ—বাড়ির সামনে। এখানেই ভাড়া থাকত তারা। আচ্ছা, চলি।’

লোকটা চলে যাওয়ার পর সমীরপতি বাড়িটাকে ভালো করে বুঝে নিলেন। সাজানো ফ্ল্যাট, যেখানে যা দরকার সেখানে তা রাখা আছে। কিচেনে গ্যাস থেকে রান্নার সব সরঞ্জাম সাজানো। টেবিলে ফ্লাস্ক দেখে সেটা খুলে খুশি হলেন তিনি। গরম চা। লোকটা করেছে কিন্তু তাকে বলতে ভুলে গিয়েছে। সমুদ্র নিয়ে কথা বলতে এত মগ্ন ছিল যে চায়ের কথা বেমালুম ভুলেছে। কাপে চা ঢেলে নিয়ে সমীরপতি বারান্দার বেতের চেয়ারে বসলেন। এখানকার সমুদ্রের ঢেউ—এর কাছে দিঘার সমুদ্র লজ্জা পাবে। বিশাল ঢেউগুলো যেন ফুঁসতে ফুঁসতে এগিয়ে এসে তীরের কাছে ভেঙে পড়ছে। কানে তালা লাগানো আওয়াজ। সেইসঙ্গে বইছে দুরন্ত বাতাস। কিছুক্ষণ তাকাবার পরে মনে হয় সমুদ্রের এই রাগী চেহারার কাছে মানুষ কত অসহায়।

ঢেউগুলোতে ছায়া পড়ল। কোথায় ছিল কে জানে, খানিকটা মেঘ ধীরে ধীরে এসে সূর্য আর সমুদ্রের মাঝখানে দেওয়াল তুলতেই জলের রং বদলে গেল। আর এই রং বদলে যাওয়া ঢেউগুলোকে যেন বেশি হিংস্র বলে মনে হচ্ছিল। পৃথিবীটা যদি মাত্র আধ ইঞ্চি এদিকে ঢলে আসে তাহলে এই বাড়িঘর, সামুদ্রিক শহর এক নিমেষে জলের তলায় চলে যাবে। পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম ঘটনা বেশি ঘটলে কেউ সমুদ্রের ধারে বাসা বানাত না।

দুপুরের খাবারটা নেহাত মন্দ ছিল না। কলেজ জীবনটা হোস্টেলে কাটাতে হয়েছিল সমীরপতিকে। এতদিন পরে সেই হোস্টেলের ঠাকুরের রান্নার স্বাদ ফিরে পেলেন তিনি। ওড়িশ্যাবাসীদের রান্নার ধরনে বোধহয় তেমন পার্থক্য থাকে না।

বিকেলে হাঁটতে বের হলেন সমীরপতি। সমুদ্রের এদিকটা একেবারেই ফাঁকা। জলের ধারের বালিতে, সব সমুদ্রের ধারের মতো এখানেও কুচি কুচি লালচে কাঁকড়া ভিড় করে ছিল, তাঁর পায়ের আওয়াজ টের পাওয়ামাত্র এক ছুটে গর্তে গেল। এত দ্রুত ওরা ছুটতে পারে, না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। আর গর্তের সংখ্যা অগুনতি। যত তিনি এগোচ্ছেন তত এই খেলা চলছে। খানিকটা এগিয়ে পেছনে তাকালে দেখতে পাচ্ছেন তাঁর পায়ের আওয়াজ মিলিয়ে যাওয়া মাত্রই কাঁকড়াগুলো আবার ওপরে উঠে এসেছে।

প্রায় সিকি মাইল হাঁটার পরে দোকানটাকে দেখতে পেলেন তিনি। একটা বড় ঢিবির ওপর দোকান, আশেপাশে কোনো বাড়িঘর নেই। দোকানদার মধ্যবয়সি, সাধারণ মানুষ। তার সামনের বেঞ্চিতে তিনজন বসে আছেন, যাঁর একজন বেশ বৃদ্ধ। সমীরপতি কাছাকাছি হতেই দোকানদার হাত মাথায় ঠেকিয়ে বলল, ‘আসুন বাবু, নমস্কার। কেমন লাগছে।’

‘খুব ভালো। কিন্তু আমাকে—।’ কথা শেষ করলেন না সমীরপতি।

‘এখানে কথা ঢেউ—এর আগে ছোটে। অনন্তবাবুর বাড়িতে নতুন ভাড়াটে এসেছে, আজ হোটেল থেকে খাবার গিয়েছে, এসব তো আমরা জেনে গিয়েছি।’ দোকানদার বলল।

বৃদ্ধ মাথা দুলিয়ে হাসলেন, ‘আমিও আপনার মতন।’

‘মানে বুঝলাম না!’ সমীরপতি বৃদ্ধের দিকে তাকালেন।

‘আমিও আপনার মতো নিরামিষ খাই। মাছ—মাংস—ডিম বাদ দিয়ে দিয়েছি। কিন্তু পেঁয়াজ রসুন ছাড়তে পাচ্ছি না।’ বৃদ্ধ বললেন।

‘কাকা, দয়া করে ছেড়ো না। তাহলে আমার দোকান তুলে দিতে হবে।’

খুব অবাক হলেন সমীরপতি। এসব খবর নিশ্চয়ই ওই কেয়ারটেকার চারপাশে ছড়িয়েছে। অবশ্য হোটেল থেকেও এরা জানতে পারে। তিনি দেখলেন এটা সেই অল—ইন—ওয়ান ধরনের দোকান। প্রয়োজনীয় সব জিনিস এই দোকানে পাওয়া যায়। কিন্তু কাছাকাছি কোনো বাড়ি নেই, দোকান চলে কী করে!

প্রশ্নের উত্তর পেতে দেরি হল না। দোকানের ভেতর থেকে টেলিফোনের রিং—এর আওয়াজ ভেসে এল। দোকানদার হাত বাড়িয়ে রিসিভার তুলে কথা বলতে বলতে কাগজে কীসব লিখে নিয়ে রিসিভার রাখল। তারপর হেসে বলল, ‘হারানদা, তোমার কাজ এসে গিয়েছে।’

‘কোন হোটেল?’

‘সাগরবিলাস। প্রায় বাইশশো টাকার মাল। তুমি দুশো রাখলে সাড়ে চব্বিশ শো নিয়ে এসো। ওরে হরিপদ, ভালো করে কাগজে যা লেখা আছে তা প্যাক করে হারানদাকে দে।’

দোকানের ভেতর থেকে একটা বেঁটে কিন্তু শক্তসমর্থ লোক এসে কাগজটাকে নিয়ে আবার চলে গেল। দোকানদার বলল, ‘শুনলাম, কাল থেকে আপনার বাড়িতে রান্না শুরু হবে। যা নেওয়ার নিঃসংকোচে নিয়ে যেতে বলবেন। একটা বাড়তি পয়সা নেব না। ইচ্ছে করলে বাবু মাস গেলে দাম দিতে পারেন। কোনো চিন্তা নেই।’

‘না, না, আমি ধারবাকিতে বিশ্বাস করি না। নগদ টাকা দিয়ে যা নেওয়ার নিয়ে যাব।’ সমীরপতি বললেন, ‘আচ্ছা, এই সমুদ্রে স্নান করা কি খুব বিপজ্জনক?’

সামনের বেঞ্চিতে বসা বৃদ্ধ বললেন, ‘জল যেমন মানুষের বন্ধু তেমনি শত্রুও। ওপরে ঢেউ দেখছেন, ভয়ংকর ঢেউ, কিন্তু তার নীচে আছে চোরা স্রোত। অজগরের মতো পাক দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওসব সামলে কেউ কেউ সাঁতার কাটে বটে, হিম্মত আছে তাই কাটে।’

দোকানদার মাথা নাড়ল, ‘না বাবু, জলে না নামাই ভালো।’

সমীরপতি বললেন, ‘এদিকের সমুদ্রে তো হিংস্র জন্তু থাকার কথা নয়, তাই না?’

দোকানদার মাথা নাড়ল আবার, ‘না, কুমির বা জলহস্তীকে কেউ দ্যাখেনি।’

বৃদ্ধ বলল, ‘তবে রাতবিরেতে বাইরে না বের হওয়াই ভালো। রাতের অন্ধকার তখন সমুদ্রের তলার অন্ধকারে মিশে যায়। কী দরকার তখন সেসব দেখার!’

মাথা নেড়ে আর একটু হেঁটে বাড়ি ফিরে এলেন সমীরপতি। হাওয়া দিচ্ছে সোঁ সোঁ করে। বাড়ির কাছাকাছি এসে তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। অজস্র কুচিকুচি কাঁকড়া একটা বড়, বেশ বড় কাঁকড়াকে যেন গার্ড করে তলায় নিয়ে যাচ্ছে। মৌমাছির চাকে যেমন রানি মৌমাছি থাকে, তেমনি বোধহয় এই খুদে কাঁকড়াদেরও রানি কাঁকড়া আছে। নির্জন সমুদ্রের ধার দিয়ে রানি কাঁকড়া হয়তো ভ্রমণে বেরিয়েছে। কিন্তু কাঁকড়াদের বালির নীচে পালিয়ে যাওয়ার যে গর্ত তা খুব সরু। ওই বড় কাঁকড়ার শরীর তো সেখান দিয়ে নীচে যেতে পারবে না। সমীরপতির মনে হল পায়ের আওয়াজ টের পেতেই রানি কাঁকড়া নিশ্চয়ই সমুদ্রের জলে নেমে যাবে।

তিনি এগোনোমাত্র ক্ষুদেগুলো প্রাণের ভয়ে দৌড়ে যে যার গর্তে ঢুকে পড়ল। রানি কাঁকড়া রয়ে গেল যেখানে ছিল। সমীরপতি কাছে গিয়ে হেসে ফেললেন। হাত বাড়িয়ে যেটাকে চোখের সামনে আনলেন সেটা একটা মৃত কাঁকড়ার খোল। তার শরীরের সব মাংস উধাও হয়ে গিয়েছে। এবং এই ঘটনাটা যে বেশ কিছুদিন আগে ঘটেছে তা খোলটার শুকনো চেহারা দেখলেই বোঝা যায়। কথা হল, ওই ক্ষুদেগুলো ওই শুকনো খোলটাকে নিয়ে যাচ্ছিল কোথায়!

শোপিসের মতো বারান্দার একপাশে খোলটাকে রেখে ভেতরে ঢুকলেন সমীরপতি।

রাতের খাওয়া তাড়াতাড়ি হয়েছিল। হোটেলের ছেলেটা দিয়েছিল সন্ধের পরে। হাওয়ার ধাক্কায় বারান্দায় বসা যাচ্ছিল না। ঘরের ভেতর জানলার পাশে চেয়ার টেনে বসে সমুদ্র দেখছিলেন সমীরপতি। কী শান্তি!

বাথরুম যাওয়ার প্রয়োজন হতে বুঝলেন, তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে এসে দেখলেন রাত গভীর হয়েছে। ঘড়ির কাঁটা একটা বাইশে। এরকম সময়ে ঘুম ভাঙলে চট করে আবার ঘুম আসতে সময় লাগে। বিছানায় না গিয়ে চেয়ারেই বসলেন তনি। আকাশে এখন চাঁদ উঠেছে। ফিনফিনে জ্যোৎস্নায় ভাসছে বালির চর, সমুদ্র। ঢেউ—এর উদ্দাম ভাব খানিকটা কম। এইসময় তার চোখ জলের কিনারায় যেতেই তিনি সোজা হয়ে বসলেন। ওগুলো কী? পরপর কয়েকটা উঠে আসছে জল থেকে। ভালো করে দেখে বুঝতে পারলেন ওগুলো কচ্ছপ। কিন্তু এত বড় শরীর তাদের যে চট করে বিশ্বাস করতে পারেননি। এক দুই করে আটটা কচ্ছপ গুনলেন সমীরপতি। ওরা এগিয়ে আসছে এই বাড়ির দিকে। জলে ভেজা শরীরগুলোর ওপরে জ্যোৎস্না পড়ায় চকচক করছে। যেতে যেতে হঠাৎ সামনের কচ্ছপটা থেমে গেল। সমীরপতি লক্ষ করলেন ওরা জল থেকে ওঠা মাত্র খুদে কাঁকড়াগুলো যারা বালির ওপর ছুটে বেড়াচ্ছিল তারা উধাও হয়ে গিয়েছে। সামনের কচ্ছপটা তার ভারী শরীর নিয়ে সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে কোনোমতে ওপরে উঠে এল। অবাক হয়ে সমীরপতি দেখলেন বিকেলে রেখে দেওয়া সেই কাঁকড়ার খোলটাকে গপ করে মুখে পুরে চিবিয়ে গিয়ে ফেলল কচ্ছপটা। তারপর নীচে নেমে দলের সঙ্গে বাড়ির পাশে বালির ঢিপির দিকে চলে গেল। জানলা দিয়ে ওপাশটা দেখা যাচ্ছিল না। সমীরপতি নিঃশব্দে এপাশের ঘরের জানলায় চলে এলেন। কচ্ছপগুলো এখন বালির ওপর স্থির হয়ে থাকার চেষ্টা করলেও মাঝে মাঝে তাদের শরীর নড়ছে। শেষ পর্যন্ত তারা একটু সরে গিয়ে দুই পায়ে বালি ছিটোতে লাগল। সেই সময় সমীরপতির চোখে পড়ল ডিমগুলো। ডিমের ওপর বালিচাপা দিয়ে কচ্ছপগুলো আবার জলে নেমে গেল। ডিমগুলো বালির তলায় থাকায় এখন দেখা যাচ্ছে না। কচ্ছপরা ডিম পাড়তে বালিতে উঠে আসে। তারপর কি আর মাথা ঘামায় না? এইসময় দুটো বড় চেহারার রাতপাখি তীব্র চিৎকার করতে করতে বালির ঢিপির ওপর পাক খেতে লাগল। সমীরপতি দ্রুত বাড়ি থেকে নেমে চিৎকার করলে পাখি দুটো উড়ে গেল। ওরা নিশ্চয়ই ডিমের অস্তিত্ব টের পেয়েছে। বালির নীচে পড়ে থাকা অসহায় ডিমগুলোর আত্মরক্ষা করার ক্ষমতা নেই। সমীরপতি ডিমগুলোর ওপরে আরও বালি চাপা দিতে লাগলেন যাতে ওরা অক্ষত থাকে।

পরের দিন কয়েকটা কুকুরকে বালির ঢিপির ওপর দেখে বুঝতে পারলেন সমীরপতি ওরা ডিমের গন্ধ পেয়ে গেছে। লোক লাগিয়ে বালির ঢিপির যেখানে ডিমগুলো আছে সেখানে শক্ত করে বেড়া লাগালেন তিনি। মাথার ওপর চ্যাটাই—এর বেড়া দিয়ে দিলেন। তাঁর মনে হয়েছিল ওদের মায়েরা নিশ্চয়ই রাতের বেলায় আসবে, ডিমের প্রতি টান তো থাকবেই। কিন্তু শেষরাত পর্যন্ত জেগেও তাদের দেখা না পেয়ে খুব হতাশ হলেন তিনি।

সময় কাটাবার এক খেলা পেয়ে গেলেন তিনি। ডিমগুলো বাঁচাতেই হবে। পাখি, কুকুরদের কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছেন না, কিন্তু খুদে কাঁকড়াগুলোকে আর দেখা যাচ্ছে না কেন? শেষ পর্যন্ত কৌতূহলী হয়ে বালি খুঁড়ে হতভম্ব হয়ে গেলেন। ডিমগুলোর খোলা পড়ে আছে আর তাদের ঘিরে খুদে কাঁকড়াদের শরীর চাক বেঁধেছে। খুঁড়তে খুঁড়তে শেষপর্যন্ত একটা ডিম পেয়ে গেলেন যা অক্ষত। সেটাকে তুলে বাড়ির ভেতর নিয়ে এলেন তিনি।

সমীরপতি অপেক্ষা করে আছেন, কবে তার অতিথিকে তার মায়ের কাছে পৌঁছে দিতে পারবেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *