স্ত্রীবুদ্ধি

স্ত্রীবুদ্ধি

প্রথম পরিচ্ছেদ 

মাঘ মাসের প্রারম্ভ, প্রচণ্ড শীত এখনও পর্য্যন্ত মন্দীভূত হইয়া আইসে নাই, অতিশয় প্রত্যূষে গাত্রোত্থান করা সাধারণের পক্ষে কষ্টসাধ্য। কিন্তু যাহারা তাহাদের ইচ্ছামত কার্য্য করিতে সমর্থ নহে, আহার নিদ্রা, শয়ন উপবেশন ও বিশ্রাম করিতে হইলেও যাহাদিগকে পরের মুখাপেক্ষী হইতে হয়, পরের আদেশ প্রতিপালন করিয়া ওই সকল বিষয়ে প্রবৃত্ত হইতে হয়, তাহাদিগের কথা স্বতন্ত্র। 

জনৈক ডিটেকটিভ কৰ্ম্মচারী কোন বিশেষ কার্য্যে নিযুক্ত থাকায় তাঁহার প্রত্যাগমন করিতে অধিক রাত্রি হইয়াছিল, সুতরাং তিনি যে সকল কার্য্য করিয়া আসিয়াছিলেন, তাহার বিবরণ লিপিবদ্ধ করিতে তিনি সেই রাত্রিতে সময় পান নাই। মনে করিয়াছিলেন, অতিশয় প্রত্যূষে শয্যা হইতে গাত্রোত্থান করিয়া তিনি সেই কার্য্য সমাধা করিবেন। কিন্তু কাৰ্য্যে তাহা ঘটিয়া উঠিল না, প্রত্যূষে তিনি শয্যা হইতে গাত্রোত্থান করিলেন সত্য, লেখাপড়ার কার্য্য শেষ করিবার নিমিত্ত অফিসেও আসিলেন সত্য, কিন্তু কার্য্যে হস্তক্ষেপ করিবার পূর্ব্বেই সংবাদ আসিল, বড়বাজারে একটি বড় চুরি হইয়াছে, তাহারই অনুসন্ধানে তাঁহাকেই এখনই গমন করিতে হইবে। 

এই সংবাদ পাইবা মাত্র তাঁহাকে লেখাপড়ার কার্য্য সেই সময়ের জন্য বন্ধ করিতে হইল, কাগজপত্র বন্ধ করিয়া তিনি তৎক্ষণাৎ গাত্রোত্থান করিলেন। বড়বাজারের কোন স্থান হইতে কি দ্রব্য অপহৃত হইয়াছে, তাহা জানিবার নিমিত্ত তিনি প্রথমতঃ বড়বাজারের থানায় গিয়া উপস্থিত হইলেন। 

সেই থানার ভারপ্রাপ্ত প্রধান কর্মচারীর সহিত সাক্ষাৎ হইলে কেবল এই মাত্র জানিতে পারিলেন যে, বালাখানার খোদাবক্সের বাড়ী হইতে একছড়া বহু মূল্যবান হার চুরি হইয়াছে। সেই হারের অনুসন্ধানের নিমিত্ত ডিটেকটিভ কর্মচারীকে সংবাদ প্রদান করা হইয়াছে। 

খোদাবক্স সৰ্ব্বজন-পরিচিত। ডিটেকটিভ কর্মচারীর সহিত তাঁহার বিশেষরূপ পরিচয় না থাকিলেও কৰ্ম্মচারী তাঁহাকে উত্তমরূপে জানিতেন, সুতরাং খোদাবক্স বা তাঁহার গৃহ দেখাইয়া দিবার নিমিত্ত স্থানীয় পুলিসের কাহাকেও আর তাঁহার সহিত গমন করিতে হইল না। কর্ম্মচারী একাকীই থানা হইতে বহির্গত হইয়া খোদাবক্সের বাড়ীতে গিয়া উপস্থিত হইলেন। 

খোদাবক্স যে কে, তাহার পরিচয় এই স্থানে পাঠকগণকে একটু দেওয়া নিতান্ত আবশ্যক, নতুবা যে আখ্যায়িকা এই স্থানে লিখিত হইতেছে, তাহার সম্পূর্ণ অবস্থা পাঠকগণ কোনরূপেই উত্তমরূপে হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিবেন না। খোদাবক্সের পিতা ব্যবসা উপলক্ষে নিজ দেশ পরিত্যাগ করিয়া কলিকাতায় আগমন করেন, ও ব্যবসায়ের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে দেশের মায়া একেবারে পরিত্যাগ করিয়া এই কলিকাতা সহরেই বাড়ী প্রস্তুত পূর্ব্বক তাহাতেই নিজের বাসস্থান স্থাপিত করেন। 

খোদাবক্সের জন্মস্থান কলিকাতায়, তিনি তাঁহার পিতার একমাত্র সন্তান। বড় হইবার সঙ্গে সঙ্গে তাঁহার পিতা তাঁহাকে তাঁহার ব্যবসায়ের মধ্যে প্রবিষ্ট করাইয়া, ব্যবসা কার্য্যই শিখাইতে আরম্ভ করেন ও বড় হইলে, যখন তিনি বুঝিতে পারেন যে, তাঁহার ব্যবসা এখন খোদাবক্স অনায়াসেই চালাইতে পারিবেন, তখন তিনি সমস্ত ভার খোদাবক্সের হস্তে অর্পণ করিয়া নিজে অবসর গ্রহণ করেন, ও কিছুদিবস পরে তাঁহার অগাধ বিষয় সম্পত্তি ও বিস্তৃত কারবার খোদাবক্সের হস্তে অর্পণ করিয়া, এই সংসার হইতেও অবসর গ্রহণ করেন। 

যে সময় খোদাবক্সের পিতা ইহ জীবন পরিত্যাগ করিয়াছিলেন, সেই সময় খোদাবক্সের বিবাহ হইয়াছিল। কিন্তু তাঁহার পিতার মৃত্যুর ৩/৪ বৎসর পরে খোদাবক্সের পত্নীও ইহজগৎ পরিত্যাগ করেন। সেই সময় খোদাবক্সের সন্তান-সন্ততি প্রভৃতি কিছুই হয় নাই। যে সময় খোদাবক্সের স্ত্রীবিয়োগ হয়, সেই সময় তাঁহার বয়ঃক্রম ৩০ বৎসরের অধিক ছিল না। 

যত দিবস খোদাবক্সের স্ত্রী বর্তমান ছিলেন তত দিবস পৰ্য্যন্ত খোদাবক্সের চরিত্র সম্বন্ধে কেহ কখনও কোন কথা শুনিতে পায় নাই। 

খোদাবক্সের পিতার মৃত্যুর পর যখন তিনি তাঁহার সংসারের কর্তা হইয়া বসিলেন, সেই সময় তাঁহার সমবয়স্ক দুই তিনজন পারিষদও জুটিয়া গেল। নিজের বাড়ী পরিত্যাগ করিয়া কখন তিনি তাহাদিগের সঙ্গে সন্ধ্যার পর বাহির হইতেন না। তাঁহার স্ত্রীর মৃত্যু হইবার পর তিনি আর সে নিয়ম রক্ষা করিতে পারিলেন না। প্রায়ই পারিষদদিগের সহিত সন্ধ্যার পর বাহির হইয়া যাইতে লাগিলেন ও অনেক রাত্রি পর্যন্ত বাহিরেই কাটাইতে লাগিলেন। তিনি যে কোথায় যাইতেন বা কোথায় থাকিতেন তাহা লেখক অবগত নহে। 

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ 

এইরূপে কিছু দিবস অতিবাহিত হইবার পর খোদাবক্স পুনরায় বিবাহ করিলেন, মুসলমানদিগের যে বিবাহ নিকা নামে অভিহিত, এবার তিনি সেইরূপ বিবাহ করিলেন। এবার তিনি তাঁহার পারিষদগণের মধ্যস্থিত একজনের ভগ্নী—ফিরোজাকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করিলেন। ফিরোজা বিবির বয়ঃক্রম তখন প্রায় বিংশতি বৎসর। পূর্ব্বে তাহার আর একবার বিবাহ হইয়াছিল, ও তাহার গর্ভে একটি পুত্রও জন্মগ্রহণ করিয়াছে, উহার বয়ঃক্রম তখন প্রায় পাঁচ বৎসর। যখন ওই পুত্রটির বয়ঃক্রম দুই বৎসর, সেই সময় ফিরোজার স্বামী তাহার কবরে শয়ন করে। তাহার অবস্থা ভাল ছিল না; সুতরাং ফিরোজা স্বামিগৃহে থাকিয়া পুত্রটিকে প্রতিপালন করিতে সমর্থ হন না বলিাই, তাহার ভ্রাতার নিকট আসিয়াই উপস্থিত হন; ও সেই স্থানে তাহার ভ্রাতার গলগ্রহ হইয়া এত দিবস বাস করিতে ছিলেন। স্ত্রীলোকের যে সকল গুণ সৰ্ব্বদা বাঞ্ছনীয়, তাহার কোন গুণ ফিরোজার ছিল না। থাকিবার মধ্যে কেবল তাহার রূপটি ছিল, ওই রূপেই মুগ্ধ হইয়া খোদাবক্স তাহাকে নিকা করিয়া একটি সন্তানের সহিত তাহাকে আপন বাড়ীতে আনিয়াছিলেন। 

ডিটেকটিভ কৰ্ম্মচারী থানা হইতে বহির্গত হইয়া ক্রমে খোদাবক্সের বাড়ীতে গিয়া উপস্থিত হইলেন। খোদাবক্সের বাড়ীটি খুব বড় হইলেও নিচের সমস্ত স্থান ও গৃহ তাঁহার ব্যবসা উপলক্ষে ব্যবহৃত হইয়া থাকে। কোন স্থান নানাবিধ দ্রব্যের নমুনা দ্বারা পূর্ণ। কোন স্থান খরিদ্দারবর্গের বসিবার ও বিশ্রামের স্থল। কোন স্থানে কর্ম্মচারিবর্গের অফিস, কোন স্থান বা তাঁহাদিগের থাকিবার নিমিত্ত ব্যবহৃত হইয়া থাকে। কোন স্থানে কারবারের চাকর দ্বারবাদিগের ও কোন স্থান বা তাহার নিজের ভৃত্যবর্গের দ্বারা অধিকৃত। ফল কথায়, এত বড় প্রকাণ্ড বাড়ীতে একটুমাত্র সামান্য স্থানও পড়িয়া নাই। তাঁহার নিজের অফিস ও বসিবার স্থান সেই স্থানে হয় না। দোতালার দুইটি বাহিরের ঘর তিনি তাঁহার অফিস ও বসিবার জন্য ব্যবহার করিয়া থাকেন। ওই দুইটি ঘরের সহিত অন্দরের কোন সংশ্রব নাই। 

ডিটেকটিভ কৰ্ম্মচারী খোদাবক্সের বাড়ীতে উপনীত হইয়া তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে ইচ্ছা করিলেন। একজন দ্বরবান তাঁহাকে উপরে লইয়া গেল। তাঁহাকে অফিস ঘরে বসিতে বলিয়া সে তাহার পার্শ্ববর্তী ঘরে প্রবেশ করিয়া কহিল “একটি বাবু আপনার সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিয়াছেন।” 

উত্তরে খোদাবক্স কহিলেন “বাবুকে একটু অপেক্ষা করিতে বল, আমি এখনই আসিতেছি।” 

এই কথা শুনিয়া দ্বারবান পুনরায় তাঁহার নিকট আসিল ও কহিল “আপনি এই স্থানে একটু অপেক্ষা করুন, এখনই তিনি আসিয়া আপনার সহিত সাক্ষাৎ করিবেন।” এই বলিয়া দ্বারবান নিচে গমন করিল, তিনি সেই স্থানে খোদাবক্সের প্রত্যাশায় অপেক্ষা করিতে লাগিলেন। 

তিনি কিয়ৎক্ষণ সেই স্থানে অপেক্ষা করিবার পর খোদাবক্স সেই পার্শ্ববর্তী ঘর হইতে বহির্গত হইয়া তাঁহার আফিস ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিলেন। কর্ম্মচারী তাঁহাকে দেখিবামাত্রই চিনিতে পারিলেন কিন্তু তিনি কর্ম্মচারীকে চিনিতেন না, তিনি সেই স্থানে উপবেশন করিয়া তাঁহাকে কহিলেন “আপনি কি আমার সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিয়াছেন?” কর্ম্মচারী। হাঁ মহাশয়, আমি আপনার সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিয়াছি, কেবল তাহাই নহে, আপনারই কোন কার্য্যের নিমিত্ত আপনার নিকট আসিয়া উপস্থিত হইয়াছি। 

খোদা। আমার কি কার্য্যের নিমিত্ত আপনি আগমন করিয়াছেন তাহা আপনি অনায়াসেই বলিতে পারেন।

কৰ্ম্ম। যে কার্য্যের নিমিত্ত আমি আপনার নিকট আগমন করিয়াছি, তাহা এই স্থানে প্রকাশ করিতে ইচ্ছা করি না। আমার ইচ্ছা যে, কোন নিভৃত স্থানে আপনার সহিত সেই সম্বন্ধে কথা কহি 

খোদা। তাহাই হউক, আপনি আমার সহিত এই পার্শ্ববর্তী ঘরে আসুন, সেই স্থানে অপর কেহ আমার বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করিবে না, সেই স্থানে বসিয়াই আমি আপনার সমস্ত কথা শ্রবণ করিব। 

তৃতীয় পরিচ্ছেদ 

খোদাবক্সের কথায় সম্মত হইয়া কৰ্ম্মচারী তাঁহার সহিত পার্শ্ববর্ত্তী একটি ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিলেন, সেই স্থানে দুইখানি চেয়ারে উভয়ে উপবেশন করিল খোদাবক্স কহিলেন “আপনি কি নিমিত্ত আমার সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিয়াছেন, তাহা এখন আপনি আমাকে বলিতে পারেন।” 

কৰ্ম্ম। আপনি আমাকে চিনেন কি? 

খোদা। না। 

কৰ্ম্ম। আমি ডিটেকটিভ পুলিসের একজন কর্মচারী, আপনার ঘর হইতে যে মূল্যবান হার অপহৃত হইয়াছে, তাহারই অনুসন্ধান করিবার নিমিত্ত আমি এখানে আগমন করিয়াছি। 

খোদা। আপনি কিরূপে জানিতে পারিলেন যে, আমার ঘর হইতে একছড়া মূল্যবান হার অপহৃত হইয়াছে?

কৰ্ম্ম। আমি আমার প্রধান কর্মচারীর নিকট হইতে এই সংবাদ প্রাপ্ত হইয়াছি, ও তাঁহারই আদেশ অনুযায়ী ইহার অনুসন্ধান করিবার নিমিত্ত আমি আপনার নিকট আগমন করিয়াছি। আপনি স্থানীয় পুলিসে সংবাদ প্রদান করিয়াছিলেন, বোধ হয় সেই স্থান হইতে আমার প্রধান কর্ম্মচারী এই সংবাদ প্রাপ্ত হন ও আমাকে এই স্থানে প্রেরণ করেন। 

খোদা। এখন আমাকে কি করিতে হইবে, আদেশ করুন। 

কৰ্ম্ম। কিরূপে হারছড়াটি চুরি হইয়াছে তাহার আনুপূর্বিক অবস্থা প্রথমতঃ আমি জানিতে ইচ্ছা করি। 

খোদা। যে হারছড়াটি অপহৃত হইয়াছে, তাহা মূল্যবান প্রস্তর ও মুক্তায় গঠিত। ওরূপ সুদৃশ্য ও নির্দোষ প্রস্তর, ওরূপ সুগোল বৃহৎ ও সুদৃশ্য মুক্তা আজ-কাল দেখিতে পাওয়া যায় না। উহা বহু পুরাতন জিনিস, কোন ধনবান ব্যক্তি উহা সংগ্রহ করিয়াছিলেন, পরিশেষে কোন গতিকে উহা এই স্থানের জনৈক ধনবান ব্যবসায়ীর হস্তে পতিত হয়, তিনিও বহুদিবস উহা সযত্নে রক্ষা করিয়াছিলেন, প্রায় ২৫ বৎসর গত হইল, কোন অনিবার্য কারণে, হঠাৎ তাঁহার কিছু অর্থের প্রয়োজন হয়, তিনিই উহা আমার নিকট বন্ধক রাখিয়া আমার নিকট হইতে প্রথমতঃ পঁচিশ সহস্ৰ মুদ্রা গ্রহণ করেন, ও দুই বৎসর পরে আরও পঞ্চাশ সহস্র মুদ্রা তাঁহাকে পুনরায় আমার নিকট হইতে লইতে হয়। কিন্তু ওই অর্থ তিনি আর আমাকে প্রদান করিতে পারেন না, সুদ সমেত যখন আমার প্রায় লক্ষ মুদ্রা পাওনা হয়, সেই সময় তিনি উহা আমাকেই একেবারে প্রদান করিয়া, ঋণ হইতে মুক্ত হন। আমি দুই একজন জহুরিকে উহা পরিশেষে দেখাইয়াছিলাম তাহারা সেই সময় উহার মূল্য দুই লক্ষ টাকা স্থির করিয়াছিল। আমার সেই মূল্যবান হার এখন অপহৃত হইয়াছে। 

কৰ্ম্ম। হারছড়াটি কবে অপহৃত হইয়াছে? 

খোদা। কাল সন্ধ্যার পর উহা অপহৃত হইয়াছে। ওই হার আমার নিকট থাকিত না। উহা আমি আমার স্ত্রীকে ব্যবহার করিতে দিয়াছিলাম। তাঁহারই নিকট হইতে উহা অপহৃত হইয়াছে। 

কৰ্ম্ম। কিরূপে উহা অপহৃত হইল তাহা আপনি তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন কি? 

খোদা। করিয়াছিলাম। 

কৰ্ম্ম। তিনি কি বলিয়াছিলেন? 

খোদা। তিনি এই কথা বলেন যে, গতকল্য দিবাভাগে সেই হার তিনি পরিধান করেন। সমস্ত দিবসই ওই হার তিনি তাহার গলায় দিয়া রাখিয়াছিলেন। সন্ধ্যার পর নামাজ করিবার নিমিত্ত তিনি তাঁহার নিজের থাকিবার ঘর হইতে অন্য ঘরে গমন করেন। যাইবার সময় গলা হইতে হারছড়াটি উন্মোচন করিয়া, তাহার ঘরের মধ্যস্থিস্ত একটি টেবিলের উপর উহা রাখিয়া দিয়া, হস্তমুখাদি প্রক্ষালন করিবার মানসে স্নান করিবার ঘরে গমন করেন ও সেই স্থান হইতে বহির্গত হইয়া যে ঘরে তিনি নামাজ করিতেন, সেই ঘরে প্রবেশ করিয়া উপাসনা কার্য শেষ করিয়া পুনরায় আপন ঘরে আগমন করেন। সেই সময় ওই হারের কথা তাঁহার একেবারেই মনে ছিল না, রাত্রি ১২টার পর শয়ন করিবার নিমিত্ত আমি তাহার ঘরে গমন করি, সেই সময় তাহার হারের কথা মনে পড়ে, যে টেবিলের উপর তিনি হারছড়াটি রাখিয়াছিলেন, সেই স্থানে গমন করিয়া তিনি সেই হারের অনুসন্ধান করেন, কিন্তু সেই স্থানে উহা আর দেখিতে পান না। পরিশেষে ওই ঘরের সমস্ত স্থান ও যে যে ঘরে তিনি গমন করিয়াছিলেন, তাহার প্রত্যেক স্থানে তিনি ওই হারের অনুসন্ধান করেন, কিন্তু কোন স্থানেই ওই হার আর দেখিতে পান নাই। তাঁহার বিশ্বাস, ওই টেবিলের উপর হইতেই ওই হার অপহৃত হইয়াছে। 

কৰ্ম্ম। যে ঘরের ভিতর ওই হার রক্ষিত হইয়াছিল, ও যেস্থান হইতে ওই হার অপহৃত হইয়াছে, সেই স্থানে বাহিরের কোন লোকের যাতায়াত করিবার সুযোগ আছে কি? 

খোদা। না। ওই স্থান অন্দরের ভিতর, সেই স্থানে বাহিরের কোন লোকের গমনাগমনের উপায় নাই। 

কৰ্ম্ম। বাড়ীর ভৃত্যগণ তো সেই স্থানে গমনাগমন করিয়া থাকে? 

খোদা। কোন ভৃত্যের অন্দরে গমন করিবার অধিকার নাই। একটি পরিচারিকা, যে আমার স্ত্রীর নিকট সদা সর্ব্বদা থাকে, কেবল তাহারই ওই ঘরে প্রবেশ করিবার অধিকার আছে; তদ্ভিন্ন অপর কেহ সেই ঘরে বা যে মহলে আমার স্ত্রী থাকে সেই মহলে প্রবেশ করে না। 

কৰ্ম্ম। যে সময় আপনার স্ত্রী উপাসনা করিবার নিমিত্ত অন্যঘরে গমন করিয়াছিলেন, সেই সময় সেই পরিচারিকা কোথায় ছিল? 

খোদা। আমার স্ত্রী বলিয়াছেন, সেই সময় তাহার পরিচারিকা বাড়ীতে ছিল না, তাহার কোন আত্মীয়ের সহিত সাক্ষাৎ করিতে সে গমন করিয়াছিল, সুতরাং তাহাদ্বারা এ কার্য্য কোনরূপেই হইবার সম্ভাবনা নাই। 

কৰ্ম্ম। সে যে এই কাৰ্য করিয়াছে এ কথা বলিতেছি না, আমাদিগের কার্য্যের নিয়ম অনুযায়ী আমি সমস্ত বিষয়ই একে একে জিজ্ঞাসা করিতেছি, সেই পরিচারিকার বয়ঃক্রম এখন কত হইবে? 

খোদা। বোধ হয় তাহার বয়ঃক্রম ১৮, ২০ বৎসর হইতে পারে। তাহার বয়ঃক্রমের কথা জিজ্ঞাসা করিবার প্রয়োজন কি মহাশয়? 

কৰ্ম্ম। তাহার চরিত্র কেমন? 

খোদা। তাহার চরিত্র খুব ভাল, সে ভাল ঘরের স্ত্রীলোক, ঈশ্বর তাহার অবস্থা হীন করিয়াছেন বলিয়াই তাহাকে দাসীবৃত্তি অবলম্বন করিতে হইয়াছে। 

কৰ্ম্ম। তাহার স্বামী তাহাকে প্রতিপালন করিতে পারে না? 

খোদা। তাহার স্বামী নাই, সে বিধবা, তাই তাহাকে এ কার্য্য করিতে হইতেছে। 

কৰ্ম্ম। আপনার সন্তান-সন্ততি কি? 

খোদা। আমার সন্তান-সন্ততি কিছুই হয় নাই, তবে একটি বালককে আমি প্রতিপালন করিয়া থাকি। 

কৰ্ম্ম। সেটি কে? তাহার নাম কি? তাহার বয়ঃক্রমই বা কত? 

খোদা। তাহার নাম আবুল হোসেন, এখন তাহার বয়ঃক্রম প্রায় ২০/২২ বৎসর হইবে। 

কৰ্ম্ম। আপনি কোথা হইতে তাহাকে পাইয়াছিলেন? 

কর্ম্মচারীর প্রত্যেক প্রশ্নের সঙ্গে সঙ্গে খোদাবক্স যেমন উত্তর প্রদান করিতেছিলেন, এই প্রশ্নের কিন্তু তিনি সেরূপ ভাবে উত্তর প্রদান করিলেন না, কিয়ৎক্ষণ চুপ করিয়া কি ভাবিলেন, ও পরিশেষে কহিলেন, আবুল হোসেন তাঁহার কোন্ আত্মীয়ের পুত্র, তাহার পিতা তাহার শৈশবকালেই ইহজীবন পরিত্যাগ করিয়া গিয়াছেন। সেই পৰ্য্যন্তই সে আমাদ্বারা প্রতিপালিত হইতেছে। 

চতুর্থ পরিচ্ছেদ 

অনেকক্ষণ চিন্তা করিয়া খোদাবক্স কর্মচারীর শেষ প্রশ্নের উত্তর প্রদান করিলেন সত্য, কিন্তু তাঁহার মুখের ভাব দেখিয়া ও পরিবর্ধিত কণ্ঠস্বর শুনিয়া কর্ম্মচারীর বিশেষরূপে প্রতীতি জন্মিল যে, খোদাবক্সের অন্তরে যেন একটি নব ভাবের উদয় হইয়াছে, তিনি যেন কোন কথা তাঁহার নিকট গোপন করিতে বিশেষ চেষ্টা করিতেছেন। কর্ম্মচারী আরও ভাবিলেন, খোদাবক্স যে কোন বিষয় তাঁহার নিকট গোপন করিবার চেষ্টা করুন না কেন, তাহা তিনি কোনরূপেই গোপন করিয়া রাখিতে পারিবেন না, যে কোন উপায়েই হউক, বা যাহার নিকট হইতেই হউক, তিনি তাহা জানিয়া লইবেন। এইরূপ ভাবিয়া তিনি তাঁহাকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন “আবুল হোসেন এখন কোথায়?” 

খোদা। তিনি এখন বাড়ীতে নাই, কোথায় গমন করিয়াছেন? 

কৰ্ম্ম। তিনি কোন কর্ম্ম কার্য্য করেন কি? 

খোদা। বিশেষ কোনরূপ কর্ম্ম কার্য্য করেন না, সময়ে সময়ে আমারই ব্যবসা কাৰ্য্য তিনি দেখিয়া থাকেন, তিনি দেখিতে পারেন এরূপ নিজের কার্য্য বিস্তর আছে, অপর কোন কর্ম কার্য্যের নিমিত্ত তাঁহাকে চেষ্টা করিতে হইবে কেন? 

কৰ্ম্ম। তাহার বিবাহ হইয়াছে কি? 

খোদা। বিবাহ এখনও হয় নাই, কিন্তু তাহার যোগাড় হইতেছে, পাত্রী দেখা যাইতেছে, ইচ্ছা করিয়াছি শীঘ্রই তাহার পরিণয় কার্য্য সমাধা করিয়া দিব। 

কৰ্ম্ম। যখন তিনি তাহার বিবাহের বয়সে পদার্পণ করিয়াছেন, তখন তাহাকে আর অবিবাহিত রাখা কর্ত্তব্য নহে। শীঘ্রই তাহার বিবাহ দেওয়া কৰ্ত্তব্য। যে রাত্রিতে ওই হার অপহৃত হয়, সেই রাত্রিতে বা সেই সময় তিনি কোথায় ছিলেন? 

খোদা। আপনি যে নিমিত্ত আমাকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতেছেন আবুল হোসেন সে চরিত্রের বালক নহে, তাহার চরিত্র অতি ভাল, সে সেই সময় সেই স্থানে উপস্থিত থাকিলেও এ কাৰ্য্য কখনই তাহাদ্বারা হইত না, বিশেষ সে অবগত আছে যে, আমার সন্তান-সন্ততি কিছুই নাই, এই যে বিষয়-বিভব সমস্তই তাহার, যখন সে ইচ্ছা করিলে, সমস্তই পাইতে পারে, তখন এরূপ নীচ কার্য্যে তাহার প্রবৃত্তি জন্মিবে কেন? বিশেষ সেই রাত্রিতে সে বাড়ীতেই ছিল না। 

কৰ্ম্ম। আমি এ কথা বলিতেছি না যে, এই কার্য আবুল হোসেনদ্বারা সম্পন্ন হইয়াছে। আমি পূৰ্ব্বেই আপনাকে বলিয়াছি যে, আমার কর্তব্য কর্ম, সমস্ত কথা জিজ্ঞাসা করা, তাই জিজ্ঞাসা করতেছি মাত্র। সে যাহা হউক, যখন আপনি বলিতেছেন যে বাড়ীর কোন লোক দ্বারা এই কাৰ্য্য সম্পন্ন হইবার সম্ভাবনা নাই, তখন আপনার বিবেচনায় এ কার্য্য কাহা দ্বারা সম্পন্ন হইল? 

খোদা। আমার বিবেচনায় এই কাৰ্য্য প্রসিদ্ধ চোরদ্বারা সম্পন্ন হইয়াছে। বাহির হইতে প্রাচীর উল্লঙ্ঘন করিয়া বা অপর কোন উপায়ে চোর বাড়ীর ভিতর প্রবেশ করিয়াছে, পরে কোনরূপ উপায়ে মুক্ত বাতায়ন পথে সে আমার শয়ন-ঘরে প্রবেশ পূর্ব্বক এই কার্য্য সমাপন করিয়া গিয়াছে। যে ঘর হইতে ওই হার অপহৃত হইয়াছে, তাহা দেখিলে আপনি অনায়াসেই বুঝিতে পারিবেন যে, সেই মুক্ত বাতায়ন-পথ দিয়া সেই ঘরে প্রবেশ করিতে কেহ সমর্থ হয় কি না? আমরা ব্যবসা-কার্য্য বুঝি, চোর ধরিবার বিদ্যা শিক্ষা করি নাই বা বুঝিও না। সে কার্য্য আপনাদিগের। আমার সহজ-বুদ্ধিতে যাহা আসিল, তাহাই আমি বলিলাম, এখন আপনি বিবেচনা করিয়া দেখুন, এ কার্য্য কাহাদ্বারা হইয়াছে? আপনি অপহৃত দ্রব্য বাহির করিয়া দিন, ও কে চুরি করিয়াছে তাহা স্থির করিয়া দিন। সে যেই হউক যাহাতে সে দীর্ঘকালের নিমিত্ত জেলের ভিতর গমন করে, আমি তাহার চেষ্টা করিব। সে আমার পুত্রই হউক, বা আমার বিশেষ কোন আত্মীয়ই হউক, আমি বিনাদণ্ডে কোনরূপেই তাহাকে অব্যাহতি প্রদান করিব না। 

সেই সময় ডিটেকটিভ কৰ্ম্মচারী খোদাবক্সকে আর কোন কথা জিজ্ঞাসা না করিয়া বলিলেন, যে ঘর হইতে ওই বহু মূল্যবান হার অপহৃত হইয়াছে, চলুন একবার সেই স্থানটি দেখিয়া লই। সেই স্থানের অবস্থা দেখিলে আমি বেশ বুঝিতে পারিব, বাহিরের কোন চোর দ্বারা এই কার্য্য হইয়াছে কি বাড়ীর কোন লোক এই কার্য করিয়াছে। 

কর্মচারীর কথা শুনিয়া খোদাবক্স গাত্রোত্থান করলেন, কর্মচারীও তাঁহার সঙ্গে সঙ্গে সেই স্থান হইতে উঠিলেন। তিনি প্রথমতঃ অন্দরে প্রবেশ করিলেন ও পরিশেষে বাহিরে আসিয়া কর্ম্মচারীকে সঙ্গে লইয়া, যে ঘর হইতে হার অপহৃত হইয়াছিল, সেই ঘরের ভিতর প্রবেশ করিলেন। কর্ম্মচারী ও খোদাবক্স ভিন্ন সেই সময় সেই স্থানে অপর কেহই উপস্থিত ছিল না, অন্দরে প্রবেশ করিয়া আর কাহাকেও দেখিতে পাইলেন না। বুঝিতে পারিলেন খোদাবক্সের স্ত্রী বা অপর কেহ যাহারা সেই সময় সেই স্থানে উপস্থিত ছিলেন খোদাবক্স অগ্রে গমন করিয়া তাহাদিগকে সেই স্থান হইতে স্থানান্তরে সরাইয়া দিয়াছেন। 

যে ঘর হইতে হার অপহৃত হইয়াছিল, খোদাবক্সের সঙ্গে গমন করিয়া কৰ্ম্মচারী সেই ঘরে উপস্থিত হইলেন। দেখিলেন, ওই ঘরটি বাড়ীর অন্দর মহলের মধ্যে হইলেও, সেই প্রকাণ্ড গৃহের একপার্শ্বে, উহার বাতায়নগুলি লৌহদণ্ডদ্বারা বা অপর কোনরূপে আবদ্ধ নাই, খড়খড়ি খোলা থাকিলে, বাহিরের কোন চোর সেই মুক্ত পথে যে একেবারে প্রবেশ করিতে পারে না তাহা নহে, কিন্তু ভূমি হইতে উহা অনেক উচ্চে। সিঁড়ি বা অপর কোন দ্রব্যের সাহায্য ব্যতীত সেই স্থানে আরোহণ করিবার উপায় নাই। ওই গৃহ হইতে কিছু অন্তরে উচ্চ প্রাচীর আছে, ওই প্রাচীর উল্লঙ্ঘন করাও নিতান্ত সহজ নহে, অথচ ওই প্রাচীর উল্লঙ্ঘন না করিলে বাহিরের কোন লোক ভিতরে প্রবেশ করিতে সমর্থ নহে। 

যে টেবিলের উপর ওই হারছড়াটি ফিরোজা বিবি রাখিয়াছিলেন বলিয়াছেন, তাহা তাঁহার শয়ন করিবার পালঙ্ক হইতে কিছুদূরে স্থাপিত, অথচ একটি বাতায়নের নিকটবর্তী। সেই স্থানে হার রক্ষিত হইলে যে কোন ব্যক্তি সেই ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিবে তাহার নয়ন অগ্রেই উহার দিকে আকৃষ্ট হইবে। 

এই ঘরের অবস্থা, বাতায়ানের অবস্থা ও যে টেবিলের উপর হার রক্ষিত হইয়াছিল, তাহার অবস্থা দেখিয়া কর্মচারীর মনে একটি নূতন ভাবের উদয় হইল। কতকগুলি সোণার চশমা চুরির কথা তাঁহার মনে পড়িল। 

পঞ্চম পরিচ্ছেদ 

এই ঘটনার প্রায় পাঁচ বৎসর পূর্ব্বে চৌরঙ্গি অঞ্চলের সাহেবদিগের বাড়ী হইতে সোণার চশমা চুরি হইতে আরম্ভ হয়। যে সকল ঘর দোতালার উপর স্থাপিত, যে সকল ঘরের বাতায়ন মুক্ত সেই সকল ঘর হইতেই প্রায় চশমা চুরি হইত। কেহ তাহার চশমা টেবিলের উপর দিবাভাগে রাখিয়া কর্ম্মান্তরে গমন করিয়া সন্ধ্যার সময় আসিয়া দেখেন যে তাঁহার সেই চশমা সেই স্থানে নাই, উহা সেই স্থান হইতে অপহৃত হইয়াছে। বাড়ীর ভৃত্যগণ ব্যতীত আর কাহারও সেই স্থানে গমন করিবার উপায় নাই, সুতরাং তাহারাই ওই চশমা চুরি অপরাধে অভিযুক্ত হয় ও বিনা দোষে পুলিস কর্তৃক নানারূপে লাঞ্ছিত হইয়া পরিশেষে অব্যাহতি পায়; কিন্তু চশমা পাওয়া যায় না। 

কেহবা সংবাদ-পত্র পাঠ করিতে করিতে টেবিলের উপর চশমা রাখিয়া কর্ম্মান্তরে গমন করেন, ও অতি সল্প সময়ের মধ্যে প্রত্যাগমন করিয়া দেখেন যে, তাঁহার চশমা অপহৃত হইয়াছে। সন্দেহ হয়, চাকরদিগের উপর। কেহ টেবিলের উপর চশমা রাখিয়া স্নান করিবার ঘরে গমন করিলেন, প্রত্যাগমন করিয়া দেখেন তাঁহার চশমা নাই। কেহবা টেবিলের উপর চশমা রাখিয়া সেই ঘরের সম্মুখে বারান্দায় কিয়ৎক্ষণ পদচারণা করিয়া যখন সেই ঘরে পুনঃ প্রবেশ করেন, তখন দেখিতে পান যে তাঁহার সেই চশমা অপহৃত হইয়াছে অথচ তাঁহার সম্মুখে সেই ঘরের ভিতর কেহই পরিবেশ করে নাই। এইরূপ দিন দিন কত যে সোণার চশমা চুরির সংবাদ আসিয়া উপস্থিত হইতে লাগিল, তাহা বলা যায় না। পুলিস এই সমস্ত চুরিরই অনুসন্ধান করিতে লাগিলেন, কিন্তু চোর ধৃত হইল না বা অপহৃত চশমাও পাওয়া গেল না। সেই সময় চৌরঙ্গি অঞ্চলের সাহেবদিগের মনে চশমা চুরির এক ভয়ানক আতঙ্কের আবির্ভাব হইল। সকলেই আপনাপন সোণার চশমা লইয়া ব্যস্ত হইয়া পড়িলেন, ইচ্ছা করিয়া টেবিলের উপর সহজে আর কহ তাঁহার সোণার চশমা রাখিলেন না। এইরূপ আতঙ্কের সহিত ক্রমে দিন অতিবাহিত হইতে লাগিল। একদিবস সন্ধ্যার সময় সংবাদ আসিল যে, উচ্চপদস্থ একজন ইংরাজ কর্ম্মচারী তাঁহার কাৰ্য্য হইতে প্রত্যাগমন করিয়া তাঁহার সোণার চশমা তাঁহার শয়ন ঘরের ভিতর একটি টেবিলের উপর রাখিয়া দিয়া সেইদিকে পশ্চাৎ ফিরিয়া আপন পরিহিত বস্ত্র পরিবর্তন করিতেছিলেন, কিয়ৎক্ষণ পরে ফিরিয়া দেখেন, তাঁহার সেই চশমা সেই স্থান হইতে অপহৃত হইয়াছে। তাঁহার নিকট সেই সময় কেবল একটিমাত্র পরিচারক ছিল, সেই তাঁহাকে তাঁহার কাপড় পরিবর্তন করিবার সাহায্য করিতেছিল। সুতরাং তাহাদ্বারা কখনই ওই কাৰ্য্য সম্পন্ন হইতে পারে না। এই সংবাদ পাইয়া পুলিস-কৰ্ম্মচারিগণ ওই চশমা চুরির অনুসন্ধানে সেই স্থানে গমন করেন। তাহার ভিতর বর্ত্তমান ডিকেটিভ কর্ম্মচারীও ছিলেন। দুই তিন দিবস অনুসন্ধান করিয়া এই চশমা চুরির কোনরূপ অনুসন্ধান হয় না, স্থানীয় পুলিস-কৰ্ম্মচারিগণ নিরাশ হইয়া ওই চশমা পাইবার আশা পরিত্যাগ করিয়া ওই অনুসন্ধান পরিত্যাগ করেন, কিন্তু ডিটেকটিভ কৰ্ম্মচারী ওই অনুসন্ধান পরিত্যাগ করেন না। যাঁহার চশমা অপহৃত হইয়াছিল, তিনি তাঁহার গৃহ হইতে বাহির হইয়া যাইবার পর ওই ডিকেটটিভ কর্ম্মচারী একদিবস সেই স্থানে আগমন করেন। যে বাড়ীতেওই ইংরাজ কর্মচারী বাস করিতেন সেই বাড়ী খুব বড় না হইলেও উহার সংলগ্ন বাগানটি অতি বৃহৎ। উহার ভিতর সুবৃহৎ ক্রীড়াস্থল ব্যতীত নানাবিধ দুষ্প্রাপ্য পুষ্পের বৃহৎ উদ্যান ছিল। ত্যদ্ব্যতীত দূরে দূরে প্রকাণ্ড ও পুরাতন বৃক্ষ সকল মস্তক উত্তোলন করিয়া আকাশ স্পর্শ করিতেছিল। সেই ইংরাজ কৰ্ম্মচারীর যে পরিচারক তাঁহার কাপড় পরিবার সময় সাহায্য করিয়াছিল, তাহাকে সঙ্গে লইয়া তিনি সেই বৃহৎ বাগানের একটি সুবৃহৎ বৃক্ষের ছায়ায় গিয়া উপবেশন করিলেন ও সেই চশমা চুরি সম্বন্ধে নানা কথা তাহার সহিত করিতে লাগিলেন ও নানারূপ কথা জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন। সেও তাঁহার প্রশ্নের যথাযথ উত্তর প্রদান কহিতে লাগিল। 

এইরূপ কিয়ৎক্ষণ অতিবাহিত হইবার পর সেই কর্মচারী একবার তাঁহার মস্তক উত্তোলন করিলেন সেই সময় দেখিতে পাইলেন, একটি কাক কোথা হইতে উড়িয়া আসিয়া ওই বাগানের মধ্যস্থিত একটি বৃহৎ আম্রবৃক্ষের একটি শাখায় উপবেশন করিল। আরও দেখিলেন, তাহার চঞ্চুপুটে যেন কি একটি চাকচিক্যময় দ্রব্য রহিয়াছে। উহা যেন কি তাহা দেখিবার নিমিত্ত তিনি বিশেষরূপ চেষ্টা করিলেন, কিন্তু তাঁহার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হইল না। ওই কাক দেখিতে দেখিতে একটি নীড়ের ভিতর প্রবেশ করিল, বলা বাহুল্য সেই দ্রব্যটি তখন পর্য্যন্ত তাহার চঞ্চুপুটেই ছিল। সে সেই নীড়ের ভিতর প্রবেশ করিয়া অনেকক্ষণ পর্য্যন্ত তাহার ভিতর রহিল ও পরিশেষে বাহির হইয়া আসিল। যখন সে বাহিরে আসিল, তখন তাহার চঞ্চুপুটে সেই দ্রব্য আর দৃষ্টি গোচর হইল না। কাকটি বৃক্ষের এ ডাল ও ডাল করিয়া কিয়ৎক্ষণ বেড়াইয়া পরিশেষে সেই স্থান হইতে স্থানান্তরে প্রস্থান করিল। 

কাকের এই অবস্থা দেখিয়া কর্ম্মচারীর মনে কেমন একরূপ সন্দেহ আসিয়া উপস্থিত হইল। তিনি সেই সাহেবের চাকরকে বলিলেন “তুমি গাছে উঠিতে পার?” 

চাকর। পারি, কেন মহাশয় আপনি আমাকে ও কথা জিজ্ঞাসা করিতেছেন? 

কৰ্ম্ম। ওই আম্র বৃক্ষের উপর যে একটি পাখীর বাসা দেখা যাইতেছে, তাহা তুমি দেখিতে পাইতেছ কি? 

চাকর। হাঁ মহাশয়, দেখিতে পাইতেছি। 

কৰ্ম্ম। আমার ইচ্ছা, যদি তুমি পার, তবে ওই বৃক্ষে আরোহণ করিয়া দেখ ওই বাসার ভিতর কি আছে। 

চাকর। ইহাতে আপনার প্রয়োজন কি? 

কৰ্ম্ম। প্রয়োজন না থাকিলে আর আমি তোমাকে ও কথা বলিব কেন? তবে তুমি যদি বৃক্ষারোহণ করিতে অসমর্থ হও, তাহা হইলে এই কার্য যাহাদ্বারা হইতে পারে, এরূপ একটি লোককে না হয় ডাকিয়া আন, আমি সে পর্যন্ত এই স্থানে অপেক্ষা করিতেছি। 

চাকর। অপর কাহাকেও ডাকিতে হইবে না, আমি বৃক্ষারোহণ করিতে সমর্থ, আমি এখনই ওই বৃক্ষে আরোহণ করিয়া আপনার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করিতেছি। 

এই বলিয়া সেই পরিচারক সেই আম্রবৃক্ষে আরোহণ করিল, যে স্থানে সেই পাখীর বাসা ছিল তাহার নিকট গমন করিয়া উহার ভিতর উত্তমরূপে দেখিল ও কহিল, ইহার “একটিও পক্ষিশাবক নাই।” 

কৰ্ম্ম। উহার ভিতর আর কোন দ্রব্য আছে? 

চার। আর ত কিছুই দেখিতে পাইতেছি না। 

কৰ্ম্ম। তাহা হইলে তুমি এক কার্য্য কর, ওই বাসাটি ভাঙ্গিয়া মাটিতে ফেলিয়া দেও। 

কর্মচারীর কথা শুনিয়া সেই পরিচারক তাহাই করিল, ওই বাসাটি ভাঙ্গিয়া সেই বৃক্ষের নিচে ফেলিয়া দিল। কৰ্ম্মচারী তাহাকে নিচে নামিতে বলিয়া সেই স্থানে গমন করিলেন, ও সেই ভাঙ্গা বাসাতে হাত দিয়া তিনি অত্যন্ত বিস্মিত হইলেন। ওই বাসাটি কতকগুলি তৃণদ্বারা গঠিত হইলেও তাহার মধ্যে কতকগুলি সোণার ও রূপার চশমা তাঁহার নয়ন গোচর হইল, তিনি অত্যন্ত বিস্ময়ের সহিত সেইগুলি সেই তৃণাচ্ছাদিত বাসা হইতে বাহির করিলেন, এইরূপ যে সকল চশমা উহার মধ্য হইতে সংগৃহীত হইল, তাহার সংখ্যা পঞ্চাশ খানার কম হইবে না। 

কর্ম্মচারী যখন সেই সকল চশমা সংগ্রহ করিয়া একস্থানে রাখিতেছিলেন, সেই সময় সেই পরিচারক সেই বৃক্ষ হইতে অবতরণ করিয়া তাঁহার নিকট আসিয়া উপস্থিত হইল, ও সেই চশমাগুলি দেখিয়া বলিল “মহাশয়, এত চশমা কি এই বাসার ভিতর ছিল?” 

উহার কথার উত্তরে কর্মচারী কহিলেন “সমস্তগুলিই এই বাসার মধ্যে ছিল, এখন দেখ দেখি তোমার মনিবের চশমা ইহার মধ্যে আছে কি না।” 

কর্ম্মচারীর কথা শুনিয়া সে সেই সমস্ত চশমা একে একে দেখিতে লাগিল, ও পরিশেষে বলিল, ইহাই তাঁহার মনিবের ঘর হইতে অপহৃত হইয়াছিল। 

ইতিপূৰ্ব্বে নানা স্থান হইতে যে সকল চশমা অপহৃত হইয়াছিল, তাহার অধিকাংশই এই কাক নীড়ের মধ্যে পাওয়া গেল, তদ্ব্যতীত যে সকল চশমার অপহরণের সংবাদ থানায় প্রদত্ত হয় নাই, তাহারও অনেক চশমা বাহির হইয়া পড়িল। এখন সকলেই জানিতে পারিলেন যে, মনুষ্য ব্যতীত পশুপক্ষিগণদ্বারাও সময় সময় অনেক দ্ৰব্য অপহৃত হইয়া থাকে। কর্মচারী এই চশমা চুরির অবস্থা আনুপূর্বিক খোদাবক্সের নিকট বিবৃত করিয়া কহিলেন “আপনার হার তো চশমার ন্যায় অপহৃত হয় নাই।” 

উত্তরে খোদাবক্স কহিলেন “সে কথার উত্তর আমি কিরূপে প্রদান করিব? চোরে চুরি করুক বা পাখীতেই চুরি করুক তাহা আপনারা বুঝিতে পারিবেন, যে কোন রূপেই হউক হারের উদ্ধার হইলেই আমি পরিতোষ লাভ করিব, ও উপযুক্তরূপ পারিতোষিকও প্রদান করিব।” 

খোদাবক্সের নিকট সেই সময় তাঁহার যাহা কিছু জিজ্ঞাস্য ছিল ও সেই স্থানের অবস্থা যাহা কিছু সেই সময় তাঁহার দেখিবার ছিল, তাহা সমাপন করিয়া, তিনি সেই সময় সেই স্থান হইতে বহির্গত হইলেন। 

এই হার চুরির অনুসন্ধানের নিমিত্ত কোন উপায় অবলম্বন করিতে হইবে, সেই সময় তাহার দিকে আর কিছুমাত্র লক্ষ না করিয়া, কৰ্ম্মচারী তাঁহার বাসায় আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তিনি প্রত্যূষে বাহির হইয়া যাইলেও যখন প্রত্যাগমন করিলেন তখন দিবা ১২টার কম নহে, সেই সময় মনে মনে স্থির করিলেন, স্নান আহার সমাপন করিয়া পুনরায় ওই হার চুরির অনুসন্ধানে বহির্গত হইবেন। 

কর্ম্মচারী নিয়মিত রূপে স্নান আহার সমাপন করিয়া হার চুরির অনুসন্ধানে গমন করিবার নিমিত্ত প্রস্তুত হইলেন; কিন্তু কোথায় যে গমন করিবেন, কোথায় গমন করিলে, ওই অপহৃত হারের সন্ধান প্রাপ্ত হইবেন, ভাবিয়া তাহার কিছুই স্থির করিয়া উঠিতে পারিলেন না। 

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ 

কর্মচারী মনে করিলেন ফিরোজা বিবির পরিচারিকা সম্বন্ধে কথা উল্লেখ করিবার সঙ্গে সঙ্গে খোদাবক্স সেই কথার শেষ করিয়া দিল কেন? তাহার চরিত্র বিশেষ উৎকৃষ্ট, তাহাদ্বারা এ কার্য্য কিছুতেই সম্পন্ন হইতে পারে না, এরূপ ভাবের কথা বলিয়া সেই পরিচারিকা সম্বন্ধে কর্মচারীর মুখ বন্ধ করিয়া দিবার কারণ কি? “সে সেই সময় বাড়ীতে উপস্থিত ছিল না, সুতরাং তাহাদ্বারা এই কার্য্য হইতে পারে না”, খোদাবক্স এইরূপ বলিলেও এখন একটু বিবেচনা করিয়া দেখা উচিত যে, কোন্ সময়ে সে বাড়ীতে উপস্থিত ছিল না। ফিরোজা বিবি তাহার হার রাখিয়াছিলেন সন্ধ্যার সময়, হইতে পারে সেই সময় সে বাড়ীতে ছিল না, কিন্তু হারের অনুসন্ধান হইল রাত্রি বারটার পর। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে সেই পরিচারিকা কি আর বাড়ীতে প্রত্যাগমন করে নাই! যদি আসিয়া থাকে, তাহা হইলে কখন আসিয়াছে, সেই সময়ে কি সে সেই হার অপহরণ করিতে পারে না? সমস্ত রাত্রির মধ্যে সে যদি প্রত্যাগমনই না করিয়া থাকে, তাহা হইলে সমস্ত রাত্রি সে কোথায় অতিবাহিত করিল? এ সম্বন্ধে কি একটু অনুসন্ধান করা কর্ত্তব্য নহে? সে কি চরিত্রের স্ত্রীলোক তাহাও জানিয়া লওয়া কৰ্ত্তব্য। 

খোদাবক্স ইচ্ছা করিয়া একটি কথা যে কেন গোপন করিলেন তাহাও তো বুঝিতে পারা যাইতেছে না। তিনি অবলীলাক্রমে কহিলেন, “আবুল হোসেন তাঁহার কোন আত্মীয়ের সন্তান, ও তিনি তাহাকে পুত্র নির্বিশেষে প্রতিপালন করিয়া তাহাকেই তাঁহার পুত্র স্থানীয় করিয়া লইয়াছেন।” যতদূর অবগত হইতে পারা গিয়াছে তাহাতে আবুল হোসেন যে তাঁহার কোন আত্মীয়ের পুত্র নহে ইহা স্থির। সে তাঁহার স্ত্রীর পূৰ্ব্ববিবাহিত স্বামীর পুত্র, যে সময় সে ফিরোজাকে বিবাহ করিয়াছিল সেই সময় সে খোদাবক্সের কোনরূপ আত্মীয় হইত না, কিন্তু তাহার মৃত্যুর পর যখন খোদাবক্স তাহার স্ত্রীকে বিবাহ করিয়াছিলেন, তখন যদি সে তাঁহার আত্মীয়ের মধ্যে পরিগণিত হইয়া থাকে তাহা হইলে সে স্বতন্ত্র কথা। 

“আবুল হোসেন খুব ভাল ছেলে, তাহার চরিত্র, দেব চরিত্র” ইহাই খোদাবক্সের বিশ্বাস, কিন্তু সে এখন পৰ্য্যন্ত অবিবাহিত কেন? তাহার বিবাহের বয়ঃক্রম হইয়াছে, পিতার অর্থের কিছুমাত্র অভাব নাই, তবে তাহার বিবাহ হয় নাই কেন? ইহাও কি একটু সন্দেহের বিষয় নহে? “আবুল হোসেন কোন কর্ম্ম কার্য্য করে না, সময় সময় পিতার ব্যবসা কাৰ্য্য দেখিয়া থাকে” কিন্তু কই তাহাকে তো বাড়ীতে দেখিতে পাইলাম না। তাহার চরিত্র কিরূপ, কিরূপ কার্য্যে নিযুক্ত থাকিয়া সে সময় অতিবাহিত করিয়া থাকে? এ কার্য্য তাহাদ্বারা হইতে পারে কি না, সে বিষয়ও একটু বিশেষ বিবেচনার সঙ্গে অনুসন্ধান করা আবশ্যক। আরও অনুসন্ধানে অবগত হওয়া আবশ্যক যে, যে সময়ের মধ্যে হার অপহৃত হইয়াছে, সেই সময়ের মধ্যে আবুল হোসেন বাড়ীতে আসিয়াছিল কি না? 

ফিরোজা বিবির সম্বন্ধেও একটু দেখিবার বিশেষ প্রয়োজন। ফিরোজা বিবি গরিবের কন্যা, গরিবের ভগ্নী ও গরিবের পূর্ব্বপত্নী, সুতরাং তাহার হৃদয় উচ্চ ধরণের হওয়ার সম্ভাবনা কম। ওই হার খোদাবক্স ফিরোজাকে ব্যবহার করিতে দিয়াছেন, এ কথা খোদাবক্স নিজেই বলিয়াছেন। তিনি উহা স্ত্রীধনরূপে তাঁহার স্ত্রীকে প্রদান করেন নাই, সুতরাং যখন ইচ্ছা তখনই তাঁহার নিকট হইতে গ্রহণ করিতে পারেন, এরূপ অবস্থায় ফিরোজা বিবির অন্তরে ত কোনরূপ পাপ মতির উদয় হয় নাই? তিনি নিজেই ত উহা আত্মসাৎ করেন নাই? স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর বিষয় এইরূপে অপহৃত হওয়া এ দেশের নিয়ম বহির্ভূত হইলেও একেবারে যে অসম্ভব তাহাই বা বলি কি প্রকারে? এক স্বামীর অবর্তমানে অপর স্বামী গ্রহণের ব্যবস্থা মুসলমান ধর্ম্মের বিপক্ষ না হইলেও, উচ্চবংশীয় মুসলমানদিগের গৃহে এরূপ প্রথা নিতান্ত অল্পই দেখিতে পাওয়া যায়। ফিরোজা বিবি প্রথম স্বামীর অবর্তমানে পুনরায় বিবাহ করিয়াছেন সত্য, কিন্তু তাঁহার স্বভাব চরিত্র কিরূপ রাখিয়াছেন, তাহা তিনিই অবগত আছেন। স্বভাবের যদি কোনরূপ পরিবর্তন হইয়া থাকে, তাহা হইলে এ কার্য্য তাঁহাদ্বারা যে একেবারে না হইতে পারে এ কথাই বা ভাবি কি প্রকারে? 

আর একটি বিষয়ও এই স্থানে একটু চিন্তা করিয়া দেখা কৰ্ত্তব্য। অনেক বড়লোকের গৃহে অনেক মূল্যবান অলঙ্কার আছে, কিন্তু কই, সদা সর্ব্বদা ও ওই অলঙ্কার কাহাকেও ব্যবহার করিতে দেখা যায় না! কোন কৰ্ম্ম কাৰ্য্য উপলক্ষে স্ত্রীলোকগণ তাহাদিগের মূল্যবান অলঙ্কার পরিধান করিয়া থাকেন, কিন্তু ফিরোজা বিবির সেই মূল্যবান হার পরিধান করার কোন কারণ তো কল্য দেখিতে পাওয়া যায় নাই, তাহা হইলে হঠাৎ তিনি ওই হার গত কল্য কেন পরিধান করিয়াছিলেন? 

এই সমস্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় আনুপূর্ব্বিক জানিতে হইলে, ফিরোজা বিবির সহিত সাক্ষাৎ করিয়া, এই সমস্ত কথা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিবার প্রয়োজন; কিন্তু বৰ্ত্তমান অবস্থায় তাহা হইবার কোনরূপ উপায় নাই। ফিরোজা বিবি পর্দা-নসিন স্ত্রীলোক। তিনি সর্ব্বদা পর্দার মধ্যে অবস্থান করিয়া থাকেন, বিশেষ সেই পর্দা ধনবান মুসলমানের, সুতরাং ফিরোজা বিবিকে কোন কথা জিজ্ঞাসা করিবার উপায় একেবারেই নাই। ধনবান মুসলমানের পর্দা-নসিন স্ত্রীলোকের চরিত্র সম্বন্ধে অনুসন্ধান করা, বা সংবাদ সংগ্রহ করা যে কতদূর কষ্টসাধ্য তাহা পাঠকগণ অনায়াসেই বুঝিতে পারেন, কিন্তু যতই কষ্টসাধ্য হউক না কেন, না করিলেও তো উপায় নাই। 

এই তো খোদাবক্সের অন্দর মহলের অনুসন্ধানের বিষয়। তদ্ব্যতীত বাহিরের কোন লোক দ্বারা এই কাৰ্য্য সম্পন্ন হইতে পারে কি না, তাহাও একবার উত্তমরূপে বিবেচনা করিয়া দেখা আবশ্যক। আর যদি বাহিরের কোন লোক দ্বারা এই কার্য সম্পন্ন হওয়া সম্ভবপর হয়, তাহা হইলে কোন্ ব্যক্তি দ্বারাই বা এই ভয়ানক কাৰ্য্য সম্পন্ন হইতে পারে? খোদাবক্সের বাড়ীতে যে সকল লোক আছে, তাহাদিগের কাহা দ্বারা কি এই কার্য্য সম্পন্ন হইতে পারে না? খোদাবক্সের অনুমান, বাহিরের কোন প্রসিদ্ধ চোর দ্বারা এই কাৰ্য্য সম্পন্ন হইয়াছে, তাহাও যে একেবারে হইতে পারে না, তাহাই বা বলি কি প্রকারে? চোর দ্বারা না হইতে পারে এমন কার্য্যই নাই। 

সপ্তম পরিচ্ছেদ 

মনে মনে এইরূপ নানাপ্রকার চিন্তা করিয়া কর্মচারী হারের সন্ধান উপলক্ষে পুনরায় বহির্গত হইলেন। এই কলিকাতা সহরের মধ্যে যে সকল স্থানে ওইরূপ মূল্যবান প্রস্তর ও মুক্তা বিক্রয় হইবার সম্ভাবনা, সেই সকল স্থানে গমন করিয়া ওইরূপ কোন দ্রব্য দুই একদিবসের মধ্যে বিক্রয় হইয়াছে কি না, তাহার সংবাদ গ্রহণের চেষ্টা করিলেন কিন্তু কোন স্থানে নে কোনরূপ সংবাদ প্রাপ্ত হইলেন না। 

ফিরোজা বিবির পরিচারিকার বাসস্থান কোথায়, তাহার স্বামী কোথায় থাকিত ও কি করিত, তাহার বিবরণ কর্মচারী পূর্ব্বেই কিয়ৎ পরিমাণে সংগ্রহ করিয়াছিলেন, কিন্তু সেই সময়ে সে সম্বন্ধে কোনরূপ অনুসন্ধান করিবার সুযোগ তিনি প্রাপ্ত হন না। 

আমড়াতলা গলির একখানি খোলার ঘরে সেই পরিচারিকা ও তাহার স্বামী বাস করিত। কৰ্ম্মচারী সেই স্থানে গমন করিয়া উহাদিগের সম্বন্ধে একটু অনুসন্ধান করিবার সময়, দুইজন পরিচিত মুসলমানের সহিত তাঁহার সেই স্থানে সাক্ষাৎ হইল। উহাদিগের বাসস্থানও সেই স্থানে। তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিয়া কর্মচারী সেই পরিচারিকা ও তাহার মৃত স্বামী সম্বন্ধে সমস্ত বিষয় অবগত হইতে পারিলেন। আরও জানিতে পারিলেন তাঁহার পরিচিত ওই দুইটি মুসলমান যুবকের একজনের সহিত সেই পরিচারিকার বিশেষ আত্মীয়তা আছে। ইচ্ছা করিলে তিনি যাহা জানিতে চাহিবেন, তাহার সমস্তই তাহা দ্বারা জানিতে পারিবেন। 

এই সমস্ত বিষয় অবগত হইয়া কৰ্ম্মচারী পুনরায় খোদাবক্সের বাড়ীতে গিয়া উপস্থিত হইলেন। যে সময় তিনি সেই স্থানে গিয়া উপস্থিত হইলেন সেই সময় অতি অল্পমাত্র বেলা ছিল। তিনি পুনরায় খোদাবক্সের সহিত একান্তে সাক্ষাৎ করিলেন ও তাঁহাকে অপরাপর নানা কথা জিজ্ঞাসা করিবার পর পরিশেষে জিজ্ঞাসা করিলেন “ যে মূল্যবান হারছড়াটি অপহৃত হইয়াছে, তাহা আপনার স্ত্রী সদা সর্ব্বদা ব্যবহার করিতেন কি?” 

খোদা। আপনি যাহা অনুমান করিতেছেন তাহাই ঠিক, তবে সময় সময় ইচ্ছা করিয়াও তিনি ওই হার পরিধান করিতেন। যে রাত্রিতে ওই হার অপহৃত হইয়াছে তাহার পূর্ব্বে, দিবাভাগে, ওই হার আমি আমার স্ত্রীর কণ্ঠে দেখিয়াছিলাম। 

কৰ্ম্ম। পূৰ্ব্ব কথিত কোনরূপ কৰ্ম্ম কার্য্য উপলক্ষে তিনি কি ওই হার পরিধান করিয়াছিলেন? 

খোদা। না, বোধ হয় ইচ্ছা করিয়া তিনি ওই হার পরিধান করিয়াছিলেন। 

কৰ্ম্ম। আমি আপনাকে আর একটি কথা জিজ্ঞাসা করিতে ইচ্ছা করি? 

খোদা। কি? 

কৰ্ম্ম। আপনার স্ত্রী কোন সময়ে নোমাজ করিবার নিমিত্ত তাহার ঘর পরিত্যাগ করিয়া থাকেন ও কোন্ সময়ে পুনরায় আপন ঘরে প্রত্যাগমন করেন? 

খোদা। ঠিক সন্ধ্যার সময়ে তিনি নোমাজ করিবার মানসে প্রস্তুত হইবার নিমিত্ত তাঁহার ঘর পরিত্যাগ করিয়া থাকেন, ও একঘণ্টার মধ্যেই পুনরায় নিজের শয়ন-ঘরে প্রত্যাগমন করেন। 

কৰ্ম্ম। আপনার স্ত্রীর পরিচারিকা এখন বাড়ীতে আছেন কি? 

খোদা। বোধ হয় আছেন। 

কৰ্ম্ম। তাহার সহিত আমি একবার সাক্ষাৎ করিয়া গুটি কয়েক কথা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিতে ইচ্ছা করি। ইহাতে আপনার কোন আপত্ত আছে কি? 

খোদা। সে ত আপনার সম্মুখে বাহির হইবে না। সে পর্দা-নসিন স্ত্রীলোক, অপর কাহারও সম্মুখে সে বাহির হয় না। 

কৰ্ম্ম। আপনার পুত্রটি এখন বাড়ীতে আছেন? 

খোদা। আপনি এখানে আসিবার একটু পূর্ব্বে আমি তাহাকে এখানে দেখিয়াছি, এখন সে বাড়ীতে নাই।

কৰ্ম্ম। কোন সময় তাহার সহিত সাক্ষাৎ হইবার সম্ভাবনা? 

খোদা। তিনি প্রায় সর্বদাই বাড়ীতে থাকেন, যখন ইচ্ছা করিবেন, তখনই তাহার সহিত সাক্ষাৎ হইতে পারিবে।

কৰ্ম্ম। আমি দুইবার আপনার বাড়ীতে আসিলাম কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য বশতঃ একবারও তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে পারিলাম না। 

খোদা। আপনি যে সময় মনে করিবেন সেই সময়ই আমার পুত্রের সহিত সাক্ষাৎ হইবে, কিন্তু তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিয়া আপনার বিশেষ কোন লাভ হইবে বলিয়া আমি বিবেচনা করি না। সে বালক, সাংসারিক কার্য্য সে কিছুই বুঝে না, বিশেষ সে তাহার মাতার ঘরে কখনই প্রায় প্রবেশ করে না। যে সময় ওই হার অপহৃত হইয়াছে, সে সময় সে বাড়ীতেও ছিল না। 

কৰ্ম্ম। আপনি যাহা বলিতেছেন তাহা সত্য, কিন্তু বাড়ীর ভিতর যে সকল লোকের যাতায়াত আছে, বা যাহারা এই স্থানে সদা সৰ্ব্বদা থাকে, তাহাদিগের প্রত্যেককেই জিজ্ঞাসা করিয়া দেখা আমার কর্ত্তব্য, তাই আমি আপনার পুত্র প্রভৃতির সহিত একবার সাক্ষাৎ করিবার ইচ্ছা করিতেছি। 

খোদা। আবুল হোসেন বাড়ীতে আসিলে আপনি অনায়াসেই তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে পারেন। 

অষ্টম পরিচ্ছেদ 

খোদাবক্সের সহিত এইরূপ কথা বলিতে বলিতে সূর্য্যদেব পশ্চিম আকাশ হইতে ক্রমে অন্তর্হিত হইবার উপক্রম করিলেন। সেই সময় আমি খোদাবক্সকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলাম “মহাশয় আপনার স্ত্রীর নোমাজ করিবার সময় হইয়াছে কি?” 

খোদা। হইয়াছে, বোধ হয় এতক্ষণ তিনি নোমাজ করিবার নিমিত্ত গমন করিয়াছেন। 

কৰ্ম্ম। আপনি অনুগ্রহ পূর্বক এই সংবাদটি একবার গ্রহণ করুন যে তিনি নোমাজ করিবার উপলক্ষে তাঁহার শয়ন-ঘর হইতে অন্য ঘরে গমন করিয়াছেন কি না? 

খোদা। এই সংবাদে আপনার প্রয়োজন কি? 

কৰ্ম্ম। বিশেষ প্রয়োজন আছে, আপনি এই সংবাদটি অগ্রে গ্রহণ করুন, তাহার পর আমি আমার প্রয়োজনের কথা আপনাকে বলিতেছি। 

কর্মচারীর কথা শুনিয়া খোদাবক্স নিজেই অন্দর মহলে গমন করিলেন ও তখনই প্রত্যাগমন করিয়া কহিলেন “ফিরোজা নোমাজ করিবার নিমিত্ত গমন করিয়াছেন।” 

কৰ্ম্ম। তাঁহার শয়ন ঘরে এখন কে আছে? 

খোদা। কেহই নাই। 

কৰ্ম্ম। তাঁহার পরিচারিকা? 

খোদা। তাহাকেও এখন সেই স্থানে দেখিতে পাইলাম না। 

কৰ্ম্ম। অনুগ্রহ করিয়া আপনি একবার আমার সহিত সেই স্থানে চলুন, আমি ঘরটি আর একবার দেখিতে চাই। খোদা। আপনি তো সে ঘরটি একবার দেখিয়াছেন, পুনরায় দেখিবার প্রয়োজন কি? 

কৰ্ম্ম। সেই সময় আমার কোন কোন বিষয় দেখিতে বাকী ছিল, তাই আমি ওই ঘরটি আর একবার দেখিবার ইচ্ছা করিতেছি। 

কর্ম্মচারীর কথা শুনিয়া খোদাবক্স বিরক্তিভাব প্রকাশ পূৰ্ব্বক কহিলেন “যাহা আপনি একবার দেখিয়াছেন তাহা পুনরায় দেখিবার কারণ আমি দেখিতে পাইতেছি না, যদি নিতান্তই দেখিতে চাহেন তাহা হইলে এই সময় আমার সহিত আসুন, আমার স্ত্রী ওই ঘরে ফিরিয়া আসিবার পূর্ব্বেই আপনি আপনার কার্য্য শেষ করিয়া লউন ও যাহা যাহা আপনার দেখিবার থাকে তাহা দেখিয়া লউন, কারণ এরূপ ভাবে বার বার আমি নিজেও বিরক্ত হইতে চাহি না, বা অপরকেও বিরক্ত করিতে চাহি না।” 

খোদাবক্সের কথা শুনিয়া কর্ম্মচারীও মনে মনে একটু অসন্তুষ্ট হইলেন ও কহিলেন “যে পর্য্যন্ত যে বিষয়ে আমি সন্তুষ্ট না হইব, সেই পৰ্য্যন্ত উহা আমাকে দেখিতেই হইবে, আপনি বিরক্ত হউন বা অপর কেহই বিরক্ত হউন তাহার দিকে আমি কিছুমাত্র লক্ষ করিব না, যতক্ষণ আমার কার্য্য শেষ না হইবে, ততক্ষণ আমাকে সকলেরই বিরক্তিভাজন হইতে হইবে।” এই বলিয়া কৰ্ম্মচারী গাত্রোত্থান করিলেন ও খোদাবক্সের পশ্চাৎ পশ্চাৎ যে ঘর হইতে হার অপহৃত হইয়াছিল, সেই ঘরের ভিতর প্রবেশ করিলেন। 

সেই ঘরের ভিতর প্রবেশ করিয়াই কৰ্ম্মচারী খোদাবক্সকে লক্ষ্য করিয়া কহিলেন “মহাশয়, আপনি আমার উপর অসন্তুষ্ট হউন বা বিরক্তই হউন আমার নিয়মিতরূপ কার্য্য আমাকে করিতেই হইবে। এই ঘর হইতে আপনার হার অপহৃত হইয়াছে, সুতরাং এই ঘরটি আমাকে উত্তমরূপে অনুসন্ধান করিয়া দেখিতে হইবে। এই ঘরের ভিতর যে সকল আলমারি বাক্স ইত্যাদি আছে, তাহার চাবি যদি আপনার নিকট না থাকে, তাহা হইলে যাহার নিকট উহা আছে, তাহার নিকট হইতে উহা আনাইয়া লউন, আপনার সম্মুখে আমি এই ঘরটি উত্তমরূপে খুঁজিয়া দেখিতে বাসনা করি।” খোদা। চোরে হার অপহরণ করিয়া কিছু এই ঘরের ভিতর রাখিয়া যায় নাই যে, ইহার ভিতর অনুসন্ধান করিয়া দেখিলে আপনি সেই হার প্রাপ্ত হইবেন। 

কৰ্ম্ম। মনুষ্যমাত্রেরই সময় সময় বিষম ভ্রম হইয়া থাকে, আপনি বা আমি কাহারই সময় সময় সেই ভ্রমের হস্ত হইতে উদ্ধার পাইবার উপায় নাই। এরূপ অনেক সময় দেখা গিয়াছে, একস্থানে এক দ্রব্য রাখিয়া অপর স্থানে তাহার বিশেষরূপ অনুসন্ধান করা হইয়াছে। যেস্থানে ওই দ্রব্য রাখা হইয়াছে বলিয়া মনে দৃঢ়বিশ্বাস ছিল, সময়ে সেই দ্রব্য অপর স্থানে পাওয়া গিয়াছে। আপনার স্ত্রীও যে সেইরূপ ভ্রমে পতিত হন নাই, তাহাই বা বলি কি প্রকারে? হয় ত তাঁহার দৃঢ়বিশ্বাস যে তিনি তাঁহার হার টেবিলের উপর রাখিয়া দিয়াছেন, কিন্তু কাৰ্য্যে হয়ত তিনি তাহা করেন নাই, অপর কোন স্থানে তিনি তাহা রাখিয়াছেন। আমরা এইরূপ অনুসন্ধানে অনেক সময় অনেক অপহৃত দ্রব্য প্রাপ্ত হইয়াছি ও যাহার দ্রব্য অপহৃত হইয়াছিল, তিনিও পরিশেষে নিতান্ত বিস্মিত হইয়াছেন, সে যাহা হউক আপনি সন্তুষ্ট হউন বা অসন্তুষ্ট হউন, এ ঘরটি আমাকে একবার উত্তমরূপে দেখিতেই হইবে। 

এই বলিয়া সেই কৰ্ম্মচারী ওই ঘরের এক প্রান্ত হইতে আরম্ভ করিয়া ওই ঘরের মধ্যে যে সকল দ্রব্যাদি ছিল, তাহা উত্তমরূপে দেখিতে আরম্ভ করিলেন। প্রথমেই তিনি একটি আলমারি খুলিলেন, উহা কতকগুলি পুস্তকে পূর্ণ ছিল, পুস্তকগুলি একে একে উঠাইয়া তাহার ভিতর উত্তমরূপে দেখিলেন, কিন্তু কিছুই প্রাপ্ত হইলেন না। 

পুস্তকের আলমারি দেখা শেষ হইলে তাহার নিকটবর্তী একখানি টেবিলের প্রত্যেক দেরাজগুলি খুলিয়া উত্তমরূপে দেখিলেন, কিন্তু তাহার ভিতরে হারের চিহ্নমাত্র দেখিতে পাইলেন না। 

যে পালঙ্কে ফিরোজা বিবি শয়ন করিতেন তাহার উপরস্থিত বালিস, চাদর, তোষক, গদি প্রভৃতি বিছানাগুলি একে একে স্থানান্তরিত করিয়া দেখিলেন। আলমারি, বাক্স, সিন্দুক প্রভৃতির মধ্যেও উত্তমরূপে অনুসন্ধান করিতে কিছুমাত্র বাকী থাকিল না, কিন্তু কোন স্থানেই হারের কোনরূপ সন্ধান প্রাপ্ত হইলেন না। 

খোদাবক্স সেই স্থানে স্থিরভাবে দাঁড়াইয়া কর্মচারীর অনুসন্ধান কাৰ্য্য দেখিতেছিলেন, কৰ্ম্মচারী যেরূপ ভাবে ওই ঘরের সমস্ত দ্রব্য পরীক্ষা করিতেছিলেন, তাহা দেখিয়া তিনি অতিশয় বিরক্ত হইতে লাগিলেন, কিন্তু প্রকাশ্যে কোন কথা না বলিয়া সেই ঘরের মধ্যস্থিত একখানি চেয়ারের উপর গিয়া তিনি উপবেশন করিলেন। 

কর্মচারী সেদিকে কিছুমাত্র লক্ষ্য না করিয়া, একমনে আপনার কার্য সমাপন করিতে লাগিলেন। 

ওই ঘরের ভিতর একটি লোহার আলমারি ছিল। খোদাবক্সের নিকট হইতে কর্ম্মচারী জানিতে পারিলেন, ওই লৌহনির্ম্মিত আলমারিতে ফিরোজা বিবি তাহার অলঙ্কারপত্র রাখিয়া থাকেন। খোদাবক্স দ্বারা ফিরোজা বিবির নিকট হইতে লৌহনিৰ্ম্মিত আলমারির চাবি সংগ্রহ করিয়া, কৰ্ম্মচারী ওই আলমারি খুলিলেন, উহার ভিতরে ফিরোজা বিবির সমস্ত অলঙ্কারগুলি রক্ষিত আছে দেখিতে পাইলেন। বুঝিলেন ওই সমস্ত অলঙ্কারগুলির মূল্য ১০/১২ হাজার টাকার কম হইবে না। অলঙ্কারগুলি যথাস্থানে সংস্থাপিত করিয়া ওই আলমারির আর একটি দেরাজ খুলিলেন ও উহার ভিতর যাহা ছিল তাহা কেবলমাত্র নয়ন গোচর করিয়াই ওই দেরাজ পুনরায় বন্ধ করিলেন ও খোদাবক্সকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন “মহাশয় আমি আপনাকে এখন দুই একটি কথা জিজ্ঞাসা করিতে চাহি, অনুগ্রহ করিয়া তাহার উত্তর দিবেন কি?” 

খোদা। কেন দিব না, আমি আপনার কোন প্রশ্নের উত্তর না দিয়াছি। 

কৰ্ম্ম। আপনার স্ত্রীর যে সকল অলঙ্কার আলমারির ভিতর রহিয়াছে, তাহার মূল্য আমার বিবেচনায় ১০/১২ হাজার টাকার কম হইবে না। 

খোদা। বরং অধিক হইবে। 

কৰ্ম্ম। এ সমস্ত অলঙ্কার কি আপনি আপনার স্ত্রীকে প্রদান করিয়াছেন? 

খোদা। আমি ভিন্ন তাহাকে আর কে দিবে! 

কৰ্ম্ম। তাঁহার পিতা-মাতা বা অপর কোন আত্মীয় তাঁহাকে ইহার একখানিও কি প্রদান করেন নাই? 

খোদা। তাহারা কেথায় পাইবেন, কে দিবেন। ফিরোজা গরিবের কন্যা ও গরিবের ভগিনী, তাঁহারা কোথা হইতে অলঙ্কারপত্র ফিরোজাকে প্রদান করিবেন? এ সমস্তই আমিই তাহাকে দিয়াছি। 

কৰ্ম্ম। অলঙ্কারপত্র ব্যতীত নগত অর্থও বোধ হয় আপনি ফিরোজাকে প্রদান করিয়াছেন? 

খোদা। হাঁ। সময় সময় দিয়াছি বৈ কি? তাঁহার নগত অর্থের কিছুমাত্র প্রয়োজন হয় না, যখন যাহা তাঁহার আবশ্যক হয়, তখনই তিনি তাহা প্রাপ্ত হইয়া থাকেন, সুতরাং নগত অর্থ অধিক দিবার প্রয়োজন হয় না। 

কৰ্ম্ম। যে সময় হইতে আপনি ফিরোজা বিবিকে বিবাহ করিয়াছেন, সেই সময় হইতে আজ পর্যন্ত আপনি তাহাকে কি পরিমাণ নগত অর্থ প্রদান করিয়াছেন, তাহার একটি মোটামুটি অনুমান করিতে পারেন কি? 

খোদা। তাহা কি কখনও বলা যাইতে পারে? 

কৰ্ম্ম। আমি একটি মোটামুটি সংখ্যা জানিতে চাহিতেছি। দুই চারি হাজার এদিক ওদিক হউক, তাহাতে কিছু ক্ষতি বৃদ্ধি হইবে না। 

খোদা। বোধ হয় ৮/১০ হাজার টাকা দিয়া থাকিব। 

কৰ্ম্ম। তাহার অধিক বোধ হয় হইবে না? 

খোদা। ইহার অধিক নগত অর্থ যে আমি ফিরোজাকে দিয়াছি বলিয়া আমার মনে হয় না। 

কৰ্ম্ম। আপনি না দিলেও আপনার অজ্ঞাতে, আপনার তহবিল হইতে কোন অর্থ তিনি লইতে পারেন কি?

খোদা। না। অধিক পরিমাণে নগত অর্থ কখনই বাড়ীর ভিতর আনা হয় না। উহা বাহিরে কারবারের তহবিলে ও ব্যাঙ্কেই থাকে। ওই স্থান হইতে নগত অর্থ আনাইয়া লইতে হইলে আমি নিশ্চয়ই তাহা জানিতে পারিব, কারণ কারবারের তহবিল হইতে টাকা লইতে হইলে কাগজে খরচ লিখাইয়া লইতে হয় ও ব্যাঙ্ক হইতে টাকা আনিতে হইলে আমার স্বাক্ষরের প্রয়োজন হয়; সুতরাং উহার যে কোন স্থান হইতে টাকা আনিতে হইলে, আমার অগোচরে হইতে পারে না। 

খোদাবক্সের কথা শুনিয়া কৰ্ম্মচারী তাঁহাকে তাঁহার সন্নিকটে ডাকিলেন। তিনি সেই লোহার আলমারির সন্নিকটে আসিলে কর্ম্মচারী তাঁহাকে ওই আলমারির দেরাজ খুলিতে কহিলেন। তিনি কর্মচারীর মনের ভাব কিছুমাত্র অবগত হইতে না পারিয়া যে দেরাজটি কর্ম্মচারী দেখিয়াই বন্ধ করিয়া দিয়াছিলেন, তাহা খুলিলেন, ও দেখিলেন ওই দেরাজটি নোটে পরিপূর্ণ। কর্ম্মচারী তাঁহাকে ওই নোটগুলি বাহির করিয়া গণিতে কহিলেন। 

কর্ম্মচারীর কথা শুনিয়া খোদাবক্স ওই নোটগুলি বাহির করিয়া গণিতে আরম্ভ করিলেন। উহার সমস্তই দশ টাকা হিসাবের নোট ও হাজার টাকা করিয়া এক একটি তাড়া বাঁধা। তিনি নোটের তাড়াগুলি একটি একটি করিয়া বাহির করিয়া দেখিলেন ওই বৃহৎ দেরাজটি একশত তাড়া নোটে পরিপূর্ণ ছিল। এত টাকার নোট তাঁহার স্ত্রীর নিকট দেখিতে পাইয়া খোদাবক্স অতিশয় বিস্মিত হইলেন, কিন্তু প্রকাশ্যরূপে কোন কথা প্রকাশ না করিয়া, ওই নোটগুলি যথাস্থলে স্থাপন করিলেন ও সেই আলমারির চাবি নিজেই রাখিয়া দিলেন। 

খোদাবক্সের সেই সময়ের অবস্থা দেখিয়া কৰ্ম্মচারী তাঁহার মনের ভাবও কিছু কিছু অনুমান করিতে সমর্থ হইলেন ও প্রকাশ্যরূপে খোদাবক্সকে কহিলেন “আপনি আপনার স্ত্রীকে যখন ৮/১০ হাজার টাকার অধিক অর্থ প্রদান করেন নাই, ও যখন তাঁহার অপর কোন স্থান হইতে এত অর্থ আসিবার উপায় নাই, তখন তিনি এত নগত অর্থ কিরূপে ও কোথা হইতে সংগ্রহ করিলেন?” 

খোদা। আমিও তাহাই ভাবিতেছি। 

কৰ্ম্ম। আপনার স্ত্রী ত সেই বহুমূল্যবান হার বিক্রয় করিয়া এই অর্থের সংস্থান করেন নাই? 

খোদা। তাহাই বা এখন বলি কি প্রকারে? আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা না করিয়া এখন আমি আপনার এই প্রশ্নের উত্তর প্রদান করিতে পারিতেছি না। 

এই বলিয়া খোদাবক্স ওই ঘর হইতে বহির্গত হইয়া তাঁহার স্ত্রীর উদ্দেশে প্রস্থান করিলেন। 

নবম পরিচ্ছেদ 

ওই ঘরের এক পার্শ্বে একটি আনলা ছিল। ফিরোজা বিবি সদা সর্বদা যে সকল বস্ত্র বা পিরাণাদি ব্যবহার করিতেন, তাহা তাহারই উপর রক্ষিত হইত। কাপড়ের অবস্থা দেখিয়া অনুমান হইল ফিরোজা বিবি নেমাজ করিবার উদ্দেশে সেই ঘর হইতে বাহির হইয়া যাইবার সময় তাঁহার পরিধেয় পিরাণাদি সেই স্থানেই রাখিয়া দিয়াছেন। 

খোদাবক্স সেই ঘর হইতে বাহির হইয়া যাইবার পর কর্ম্মচারী সেই আলনার নিকট গমন করিলেন, ও ওই বস্ত্রগুলি একে একে পরীক্ষা করিতে লাগিলেন। দুই একখানি বস্ত্র পরীক্ষা করিবার পর, একটি পিরাণের উপর তাঁহার হস্ত পড়িল, তিনি তাহার পকেটে হস্ত দিয়া যাহা বাহির করিলেন, তাহাতে অতিশয় বিস্মিত হইলেন। দেখিলেন যাহার নিমিত্ত তিনি এত কষ্ট সহ্য করিতেছিলেন, ইহা সেই অপহৃত হার। তিনি হারছড়াটি হস্তে করিয়া একবার উত্তম রূপে দেখিলেন, ও যে চেয়ারের উপর খোদাবক্স কিয়ৎক্ষণ উপবেশন করিয়াছিলেন, সেই চেয়ারের উপর উপবেশন করিয়া খোদাবক্সের প্রত্যাগমনের প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন। খোদাবক্স যে হারের মূল্য দুই লক্ষ টাকা বলিয়াছিলেন, সেই হার দেখিয়া কর্ম্মচারীর অনুমান হইল না যে, ইহার মূল্য দুই লক্ষ টাকা হইতে পারে। যেরূপ প্রস্তর ও মুক্তা দ্বারা সেই অপহৃত হার গ্রথিত ছিল বলিয়া খোদাবক্স বর্ণন করিয়াছিলেন, এই হার দেখিয়া বেশ বুঝিতে পারা যায় যে, উহার সেইরূপ প্রস্তর ও মুক্তদ্বারা প্রস্তুত, কিন্তু প্রস্তর ও মুক্তাগুলি প্রকৃত বলিয়া বোধ হয় না, বোধ হয় যে উহার সমস্তই কৃত্ৰিম। 

কর্মচারী কিয়ৎক্ষণ অপেক্ষা করিবার পরই, খোদাবক্স সেই স্থানে আসিয়া উপস্থিত হইলেন; তাঁহাকে দেখিয়াই কৰ্ম্মচারী কহিলেন “মহাশয়, যে হারের জন্য আপনি এত উৎসুক হইয়াছেন, দেখুন দেখি এই হার সেই কিনা” এই বলিয়া কৰ্ম্মচারী তাঁহার হস্তে ওই হার প্রদান করিলেন। 

খোদাবক্স ওই হার আপন হস্তে গ্রহণ করিয়া নিতান্ত বিস্ময়ের সহিত জিজ্ঞাসা করিলেন “মহাশয়, হার আপনি কোথায় পাইলেন?” 

কৰ্ম্ম। আপনার স্ত্রীর এই পিরাণের পকেটে। 

খোদা। এ হার আমার স্ত্রীর পকেটের ভিতর কিরূপে গমন করিল? 

কৰ্ম্ম। তাহা আপনার স্ত্রীই বলিতে পারেন। আপনি আপনার স্ত্রীকে ওই টাকার কথা জিজ্ঞাসা করিয়া ছিলেন কি?

খোদা। করিয়াছিলাম। 

কৰ্ম্ম। তিনি কি বলিলেন? 

খোদা। তিনি আমার কথার কোনরূপ সন্তোষজনক উত্তর প্রদান করিলেন না। আমার উপর একটু রাগভাব প্রকাশ করিয়া কেবল এই মাত্র কহিলেন যে “উহা আমার টাকা, ওই টাকা আমি কোথা হইতে পাইয়াছি তাহা আপনার জানিবার কিছুমাত্র প্রয়োজন নাই।”

কৰ্ম্ম। এরূপ কথা আমি ইতিপূর্ব্বে কোন গৃহ রমণীর মুখে শুনিয়াছি বলিয়া আমার মনে হয় না। সে যাহা হউক, এই হার সম্বন্ধে তিনি এখন কি বলিতে চাহেন? 

খোদা। আমি পুনরায় তাঁহার নিকট গমন করিয়া জিজ্ঞাসা করিয়া দেখি, এই হার সম্বন্ধে তিনি কি বলেন। 

এই বলিয়া যে পিরাণের পকেটে হার পাওয়া গিয়েছিল সেই পিরাণ ও হারছড়াটি লইয়া তিনি পুনরায় তাহার স্ত্রীর নিকট গমন করিলেন ও অতি অল্প সময়ের মধ্যে ফিরিয়া আসিয়া কহিলেন “আমার স্ত্রী কহিলেন, তবে বোধ হয়, আমি ভুলক্রমে ওই হার টেবিলের উপর না রাখিয়া আমার পরিহিত পিরাণের পকেটে রাখিয়াছিলাম, তাহা না হইলে “আমার পিরাণের পকেটে উহা কিরূপে যাইবে?” 

খোদাবক্সের কথা শুনিয়া কৰ্ম্মচারী তাঁহাকে কহিলেন আমার এই স্থানের কার্য শেষ হইয়া গিয়াছে, এখন চলুন আপনার বাহিরের ঘরে গমন করি, সেই স্থানে এ সম্বন্ধে কথাবার্ত্তা কহা যাইবে। অন্দরের মধ্যে এখন আমাদিগের আর থাকিবার কিছুমাত্র প্রয়োজন নাই। হার ছড়াটি আমি আর একবার ভাল করিয়া দেখিতে চাই, উহাও সঙ্গে করিয়া লইয়া আসুন” এই বলিয়া কৰ্ম্মচারী গাত্রোত্থান করিলেন, খোদাবক্সও হারছড়াটি হস্তে লইয়া কৰ্ম্মচারীর পশ্চাৎ পশ্চাৎ তাঁহার বাহিরের বসিবার ঘরে গমন করিলেন। 

বাহিরের ঘরে আসিয়া দুইজনে উপবেশন করিলে কর্মচারী খোদাবক্সকে বলিলেন “এখন আমাদিগের মধ্যে যে সকল কথাবার্ত্তা হইবে, তাহা যেন অপর কোন ব্যক্তি শ্রবণ করিতে না পারে, আপনি অগ্রে তাহার বন্দোবস্ত করুন।” 

খোদাবক্স কর্ম্মচারীর আদেশ প্রতিপালন করিলেন। তাঁহার একজন বিশ্বাসী কৰ্ম্মচারীকে ডাকিয়া, তাহাকে দূরে বসাইয়া দিলেন, তাহার উপর এই আদেশ রহিল যে, যে পর্য্যন্ত তিনি পুনরায় আদেশ না করিবেন, সেই পর্যন্ত কোন লোক যেন তাঁহার বসিবার ঘরে প্রবেশ না করে, বা ওই ঘরের নিকটবর্ত্তী না হয়। 

খোদাবক্স তাঁহার কর্ম্মচারীকে এইরূপ আদেশ প্রদান করিয়া, সরকারী সেই কৰ্ম্মচারীর সহিত তাঁহার ঘরের মধ্যে বসিয়া নিম্নলিখিত কথোপকথনে নিযুক্ত হইলেন। 

কৰ্ম্ম। এই হারই কি অপহৃত হইয়াছিল? 

খোদা। হাঁ মহাশয় এই হারই অপহৃত হইয়াছিল। 

কৰ্ম্ম। এই হার যে আপনার, সে সম্বন্ধে আর কিছুমাত্র সন্দেহ নাই? 

খোদা। কোন সন্দেহ নাই। 

কৰ্ম্ম। এই হারের মূল্য দুই লক্ষ টাকা? 

খোদা। যাহারা এই সকল দ্রব্য ভালরূপে চিনে তাহারাই আমাকে ওই মূল্য বলিয়াছিল। 

কৰ্ম্ম। ইহাতে যেরূপ সুদৃশ্য প্রস্তর ও মুক্ত রহিয়াছে, তাহা যদি প্রকৃত হয় তাহা হইলে ইহার মূল্য যে দুই লক্ষ টাকা হইতে পারে, সে বিষয়ে আর কিছুমাত্র সন্দেহ নাই, কিন্তু এ প্রস্তর ও মুক্তাগুলি কি প্রকৃত? 

খোদা। আপনার বিবেচনায় কি এই প্রস্তর ও মুক্তা সকল প্রকৃত বলিয়া বোধ হয় না? 

কৰ্ম্ম। আমার মনে যেন কেমন একরূপ সন্দেহ হইতেছে। যে সকল ব্যক্তি ইতিপূর্ব্বে এই হার দেখিয়া দুই লক্ষ টাকা মূল্য অবধারিত করিয়া দিয়াছিল, তাহাদিগের কোন ব্যক্তি এখনও বৰ্ত্তমান আছেন কি? 

খোদা। আছেন বৈ কি, একজন আমার বাড়ীর নিকটেই থাকেন যদি বলেন এখনই ডাকাইতে পারি। 

কৰ্ম্ম। তাহা হইলে বড় ভাল হয়, তিনি আসিয়া এই হারছড়াটি একবার পরীক্ষা করিয়া দেখিলে, আমাদিগের সমস্ত সন্দেহ মিটিয়া যায়। 

কর্মচারীর কথা শুনিয়া খোদাবক্স তাহাকে ডাকিবার নিমিত্ত তখনই একটি লোক পাঠাইয়া দিলেন। পনের মিনিট অতিবাহিত হইতে না হইতেই খোদাবক্সের প্রেরিত লোক যাহাকে ডাকিতে গিয়াছিল, তাহার সহিত আসিয়া সেই স্থানে উপস্থিত হইল। 

খোদাবক্স তাহাকে বসিতে বলিয়া কহিলেন “বহু দিবস পূর্ব্বে আমি আপনাকে একছড়া হার দেখাইয়াছিলাম, মনে আছে কি?” 

আগন্তুক। আছে বৈ কি, সে খুব মূল্যবান হার, সেরূপ প্রস্তর ও মুক্তা আজ-কাল প্রায়ই দেখিতে পাওয়া যায় না।

খোদা। এই হারছড়াটি একবার দেখুন দেখি। 

এই বলিয়া খোদাবক্স সেই হারছড়াটি সেই আগন্তুকের হস্তে প্রদন করিলেন। 

আগন্তুক সেই হারছড়াটি উত্তমরূপে দেখিয়া কহিলেন “ইহা ত দেখিতেছি আপনার সেই হারের নকল। যখন আসল হার আপনার ঘরে আছে, তখন তাহার নকল হার প্রস্তুত করাইলেন কেন? অনুকরণটি অতি সুন্দর হইয়াছে।” 

খোদা। ইহার মূল্য কত? 

আগ। অপরের কাছে ইহার মূল্য কিছুই নাই। তবে, ৪০/৫০ টাকায় অনেকেই ইহা লইতে পারে, কিন্তু ইহা প্রস্তুত করাইতে আপনার বোধ হয় দুই তিন শত টাকা খরচ পড়িয়া গিয়াছে। 

খোদা। এ প্রস্তরগুলি আসল নহে? 

আগ। না, কৃত্রিম প্রস্তর। 

খোদা। মুক্তাগুলি? 

আগ। বিলাতি, কিন্তু হঠাৎ দেখিলে আসল মুক্তা বলিয়া অনুমান হয়। 

খোদা। এই হারের মূল্য এখন ৪০/৫০ টাকার অধিক নহে বলিতেছেন, কিন্তু আমার সেই হারের মূল্য এখন কত হইতে পারে? 

আগ। যে সময় আমি উহা দেখিয়াছিলাম, সেই সময় উহার মূল্য দুই লক্ষ টাকা অনুমান করিয়াছিলাম; কিন্তু আজ-কাল ভাল মুক্তার দাম যে রকম চড়িয়া গিয়াছে, তাহাতে উহার মূল্য আরও অধিক। 

আগন্তুকের কথা শুনিয়া খোদাবক্সের মুখ মলিন হইয়া গেল, তিনি কর্ম্মচারী ব্যতীত সকলকে সেই স্থান হইতে বিদায় দিয়া কিয়ৎক্ষণ নিতান্ত মৌন ভাবে বসিয়া রহিলেন ও পরিশেষে কর্মচারীর দিকে লক্ষ্য করিয়া কহিলেন “মহাশয়! এই সম্বন্ধে যে কি রহস্য ঘটিয়াছে, আমি তাহার কিছুই বুঝিয়া উঠিতে পরিতেছি না।” 

দশম পরিচ্ছেদ 

খোদাবক্সের কথা শুনিয়া কর্ম্মচারী কহিলেন “এ রহস্য আপনি সহজে বুঝিয়া উঠিতে পারিবেন না, কিন্তু আমি বুঝিতে পারিয়াছি! আপনি আমার নিকট কোন কথা গোপন করিবেন না, আপনার কোন গোপনীয় কথা আমি কোনরূপ কাহারও নিকট প্রকাশ করিব না। আপনি আমার প্রশ্নের যথার্থ উত্তর প্রদান করুন। আপনার হার আপনার স্ত্রীকে ব্যবহার করিতে দিবার পর আর কখনও কি আপনি চাহিয়াছিলেন?” 

আমার কথা শুনিয়া খোদাবক্স অনেকক্ষণ চুপ করিয়া রহিলেন, ও পরিশেষে কহিলেন “আপনার কথার আমি প্রকৃত উত্তর প্রদান করিতেছি, কিন্তু এ কথা আপনি কাহারও নিকট প্রকাশ করিবেন না। এ কথা প্রকাশিত হইলে আমার বর্তমান ব্যবসায়ের বিশেষ ক্ষতি হইবে। সম্প্রতি কোন একটি নতুন কারবার খুলিয়া আমি অনেকগুলি টাকা লোকসান দিয়াছি। অনেক চেষ্টা করিয়াও সেই ক্ষতি আমি কোনরূপেই পূরণ করিতে পারিতেছি না, অর্থের অনটনে বাজারে আমার সম্ভ্রম নষ্ট হইবার উপক্রম হইয়াছে, এই নিমিত্ত আমি মনে মনে স্থির করিয়াছিলাম গোপনে ওই হারছড়াটি বিক্রয় করিয়া আমার সম্ভ্রম বজায় রাখিব। যে ব্যক্তি ওই হার ছড়াটি খরিদ করিতে ইচ্ছুক তাঁহার অদ্য এখানে আসিয়া, হারছড়াটি দেখিবার কথা ছিল, সেই জন্য আজ কয়েক দিবস হইল আমি আমার স্ত্রীকে ওই হারছড়াটি বাহির করিতে বলি। তাই তিনি হারছড়াটি বাহির করিয়াছিলেন।” 

কৰ্ম্ম। আপনি যে হার ছড়াটি বিক্রয় করিবেন, তাহা আপনার স্ত্রী জানিতে পারিয়াছিলেন কি? 

খোদা। তিনি জানেন বৈ কি। আমি তাঁহাকে বলিয়াছিলাম। 

কৰ্ম্ম। মহাশয়, আপনি আমার কথায় রাগ করিবেন না। আপনার স্ত্রীর সহিত আমার কথা কহিবার উপায় নাই। আপনি আমার পক্ষ হইতে তাঁহাকে বলুন যে আমি বিশেষরূপে জানিতে পারিয়াছি যে, তিনি পূর্ব্বে সেই হার অপহরণ করিয়া তাহার পরিবর্তে লক্ষ মুদ্রা সংগ্রহ করিয়া রাখিয়াছেন। এখন যদি তিনি সমস্ত কথা না বলেন, তাহা হইলে আমাকে নিশ্চয়ই আইনমত চলিতে হইবে। আইনের নিকট বা আমাদিগের কর্তব্য কার্য্যের নিকট রাজা, মহারাজা, নবাব বা সমাজের শীর্ষস্থানীয় কাহারও অব্যাহতি নাই। পর্দা-নসিন স্ত্রীলোকদিগের পক্ষেও তাহাই। এখন যদি তিনি সমস্ত কথা স্বীকার করেন, তবেই মঙ্গল, নতুবা আমাকে বাধ্য হইয়া এখনই তাঁহাকে গ্রেপ্তার করিয়া থানায় লইয়া যাইতে হইবে, ও যে পর্য্যন্ত তিনি সন্তোষজনকরূপে আমাদিগকে দেখাইতে না পারিবেন যে, ওই লক্ষ মুদ্রা তিনি কোথা হইতে পাইয়াছেন, সেই পর্য্যন্ত কোনরূপেই তিনি অব্যাহতি পাইবেন না।” 

আমার কথা শুনিয়া খোদাবক্স পুনরায় অন্দর মহলে প্রবেশ করিলেন। আমি সেই স্থানে বসিয়া রহিলাম। প্রায় দুই ঘণ্টা পরে খোদাবক্স বাহিরে আসিলেন, ও আমাকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন “মহাশয় ফিরোজা আমার নিকট সমস্ত কথা স্বীকার করিয়াছে, কিন্তু এখন আপনাকে বিশ্বাস করিয়া সেই সমস্ত কথা বলিতে আমি প্রস্তুত নহি, ইহার গোলযোগ মিটিয়া গেলে, আপনার নিকট সমস্ত কথা বলিতে আমার কিছুমাত্র আপত্ত নাই। আমি এ সম্বন্ধে আইনজীবী কোন লোকের সহিত পরামর্শ করিয়াছি, ও এখন আপনাকে কেবল এই মাত্র বলিতে পারি যে, আমার যে হার অপহৃত হইয়াছে বলিয়া পুলিসে সংবাদ প্রদান করিয়াছিলাম আপনার অনুকম্পায় সেই হার আমি প্রাপ্ত হইয়াছি, সুতরাং এ সম্বন্ধে আর কোনরূপ অনুসন্ধান করিবার প্রয়োজন নাই। যে লক্ষ মুদ্রা তাঁহার আলমারির মধ্যে পাওয়া গিয়াছে, এখন জানিতে পারিতেছি তাহা আমার। কিরূপ উপায়ে তাহা আসিয়াছে, তাহা যদি প্রমাণ করিবার প্রয়োজন হয় তাহাও আমি করিতে পারিব। আপনার কার্য্যে আমি অতিশয় সন্তুষ্ট হইয়াছি। আপনার পারিতোষিক আমি আপনার প্রধান কর্মচারীর নিকট প্রেরণ করিব। 

খোদাবক্সের কথা শুনিয়া কর্মচারী তাঁহার অভিপ্রায় বুঝিতে পারিলেন, বুঝিলেন যে তিনি তাঁহার স্ত্রীর কোন কথা প্রকাশ করিতে প্রস্তুত নহেন, যাহাতে তাঁহার স্ত্রীর মান সম্ভ্রম কোনরূপে নষ্ট না হয়, তাহার নিমিত্ত তিনি এখন মিথ্যা কথা বলিতে বা অপর লোক দ্বারা বলাইতে প্রস্তুত। এইরূপ অবস্থায় এ বিষয়ে তাঁহার আর কোনরূপে অগ্রসর হওয়া কৰ্ত্তব্য নহে, ইহা বিবেচনা করিয়া তিনি কহিলেন “আপনি আমার কার্য্যে পরিশেষে যে সন্তুষ্ট হইয়াছেন ইহাতেই আমি আপনার নিকট কৃতজ্ঞ হইলাম, এখন আমি নিজ স্থানে প্রস্থান করিতেছি, কিন্তু কিছুদিবস পরে আমি আর একবার আপনার নিকট আসিব; ও সেই সময় আপনার স্ত্রী এখন আপনাকে যাহা বলিয়াছেন তাহা জানিয়া আমার কৌতূহল নিবারণ করিব।” 

এই বলিয়া কৰ্ম্মচারী সেই স্থান হইতে গাত্রোত্থান করিলেন ও খোদাবক্সের নিকট বিদায় গ্রহণ করিয়া সেই স্থান হইতে প্রস্থান করিলেন। 

একাদশ পরিচ্ছেদ 

খোদাবক্সের স্ত্রী খোদাবক্সকে যাহা বলিয়াছিলেন তাহা কর্ম্মচারী পরিশেষে অবগত হইতে পারিয়াছিলেন। পাঠকগণ তাহা জানিতে না পারিলে এই প্রবন্ধ অসম্পূর্ণ থাকে, সুতরাং তাহার সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে প্রদত্ত হইল। 

ফিরোজা বিবি তাঁহার স্বামীকে বলিয়াছিলেন: – আমার পুত্রের বিষয় তুমি বিশেষরূপে অবগত আছ, সে যেরূপে অর্থ নষ্ট করিত, তাহা তুমি জানিলেও কিন্তু তাহার খরচের নিমিত্ত কখনও একটি পয়সাও প্রদান করিতে না। আমি তাহার গর্ভধারিণী, সুতরাং আমি মধ্যে মধ্যে তাহাকে টাকা না দিয়া পরিত্রাণ পাইতাম না। তোমার নিকট হইতে সময় সময় আমি যে সামান্য টাকা গ্রহণ করিতাম, তাহার সমস্তই আমি আবুল হোসেনকে প্রদান করিতাম, তাহাতেও তাহার খরচ কুলাইত না, সুতরাং সময় সময় আমাকে তোমার প্রদত্ত অলঙ্কারও বন্ধক দিয়া তাহার খরচের সাহায্য করিতে হইতে। এইরূপে ক্রমে আমার তিন সহস্র মুদ্রা দেনা হইয়া পড়ে। আমার নিকট হইতে টাকা লইয়াও সে সন্তুষ্ট থাকিত না, হেণ্ডনোট লিখিয়া দিয়া অপরের নিকট হইতে সে টাকা ধার করিত। 

যাহার নিকট হইতে আবুল হোসেন হেণ্ডনোটে টাকা ধার করিয়াছিল, ক্রমে সে সেই টাকার তাগাদা আরম্ভ করিল, কিন্তু আবুল হোসেন সেই টাকা দিতে পারিল না, আমিও সেই সময় অত টাকা কোথায় পাইব যে দিব? সুতরাং যে টাকা পাইত সে নালিশ করিয়া আবুল হোসেনের নামে ডিক্রী করিল, ও পরিশেষে তাহাকে জেলে পুরিয়া দিল। 

যে অর্থ পুত্র অপব্যয় করে, পিতা তাহা না দিতে পারেন, পুত্রকে জেলে যাইতে দেখিয়া পিতা চুপ করিয়া থাকিতে পারেন, কিন্তু মাতা তাহা কোনরূপেই দেখিতে পারেন না। যে মাতার হস্তে অর্থ থাকে, বা যাহার অর্থ সংগ্রহ করিবার উপায় থাকে, সেই মাতা অর্থ প্রদান করিয়া পুত্রকে জেল হইতে মুক্ত করিয়া থাকেন। সুতরাং আবুল হোসেনকে জেল হইতে মুক্ত করিবার নিমিত্ত আমাকে আরও পাঁচ সহস্র মুদ্রা ধার করিতে হয়, আমার সমস্ত অলঙ্কারই এইরূপে বন্ধক পড়ে। 

এই সময় আমার মনে অতিশয় ভয়ের সঞ্চার হয়, যদি তুমি কোন গতিকে জানিতে পার যে, তোমার প্রদত্ত সমস্ত অলঙ্কারই আমি নষ্ট করিয়া ফেলিয়াছি তাহা হইলে আমার পরিণাম কি হইবে? ইহা ভাবিয়া আমি অতিশয় ব্যস্ত হইয়া পড়ি, ও পরিশেষে একটি মতলব স্থির করিয়া, আমি আমার ভ্রাতাকে এই স্থানে ডাকাইয়া আনি ও তাঁহাকে কহি “আমার স্বামী আমাকে একছড়া মূল্যবান হার ব্যবহার করিতে দিয়াছেন, শুনিয়াছি উহার দাম দুই লক্ষ টাকা। আমি অনেকগুলি টাকা ঋণ করিয়া আমার সমস্ত অলঙ্কার বন্ধক দিয়াছি তাহা তুমি অবগত আছ। এখন এক কাৰ্য্য কর, কোন একটি ভাল কারিকর দিয়া এই হারের ঠিক একছড়া নকল হার প্রস্তুত করাও, ও আসল হার খরিদ করিতে পারে এমন একটি লোক স্থির কর। নকল হার প্রস্তুত হইলে আসল হার বিক্রয় করিয়া ফেলিব।” ভ্রাতাকে আরও কহিলাম “এ সমস্ত কথা তুমি যেন বিন্দুমাত্রও জানিতে না পার।” 

ভ্রাতা আমার সমস্ত অবস্থাই জানিতেন তিনি আমার প্রস্তাবে সম্মত হইলেন ও আমার অভিলষিত কার্য্য করিলেন। নকল হার প্রস্তুত হইলে উহা আমি আসল হারের সহিত মিলাইয়া দেখিলাম। দেখিলাম অনুকরণ অতিশয় উত্তম হইয়াছে। দুই ছড়া হার একত্রে রাখিলে কোটি আসল ও কোটি নকল তাহা স্থির করা নিতান্ত সহজ নহে। 

সেই সময় বিলাত হইতে একেজন জহুরি এখানে জহরৎ খরিদ করিতে আসিয়াছলেন। আমার ভ্রাতা তাঁহার নিকট ওই হার দেড় লক্ষ মুদ্রায় বিক্রয় করিয়া ফেলেন। যে লক্ষ মুদ্রা আমার আলমারির ভিতর আছে তাহা ওই হার বিক্রয়ের টাকা। অবশিষ্ট টাকা হইতে আমার অলঙ্কারগুলি ছাড়াইয়া আনি, দালালিতে কিছু যায়, অন্যান্য খরচ করিয়া ও সময় সময় পুত্রকে কিছু কিছু দিয়া ওই টাকা ব্যয়িত হইয়া যায়। প্রায় চারি পাঁচ বৎসর ধরিয়া অবশিষ্ট টাকা খরচ করিয়া আসিতেছি। এই পাঁচ বৎসর কাল আমাকে যে হার ব্যবহার করিতে দেখিতেছেন উহা সেই কৃত্রিম হার। 

সে দিবস যখন আপনি আমাকে বলিলেন যে আপনি ওই হার বিক্রয় করিয়া দেনা পরিশোধ করিতে মনস্থ করিয়াছেন তখনই আমার মস্তকে বজ্রাঘাত হইল, আপনার আদেশানুসারে হার বাহির করিলাম সত্য, কিন্তু বুঝিতে পারিলাম এতদিবস পরে আমার সমস্ত চাতুরী বাহির হইয়া পড়িবে, সুতরাং অনন্যোপায় হইয়া কৃত্রিম হার লুকাইয়া রাখিয়া, ওই হার অপহৃত হইয়াছে বলিয়া আপনার নিকট প্রকাশ করিলাম। আমি মনে করিয়াছিলাম না যে, পিরাণ আমি সৰ্ব্বদা পড়িয়া থাকি, তাহার পকেট হইতে কেহ সহসা এই হার বাহির করিতে সমর্থ হইবে। 

এখন যাহা হইবার তাহা হইয়া গিয়াছে, ওই লক্ষ মুদ্রা লইয়া আপনি আপনার দেনা পরিশোধ করুন ও আমার এই দুষ্কর্ম্মের নিমিত্ত, আমাকে আপনার অভিরুচিমত দণ্ড প্রদান করুন। 

খোদাবক্সের নিকট ইহা অবগত হইয়া কৰ্ম্মচারী বুঝিতে পারিলেন যে তাঁহার শেষ অনুমান প্ৰকৃত 

সম্পূর্ণ 

[ বৈশাখ, ১৩১৮ (?) ] 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *