স্ট্যাচু

স্ট্যাচু

জলখাবার খাওয়ার সময় এমন তাড়াহুড়ো করে ব্রজগোপাল, বাড়ির বাইরে যেন সমাজটা তার সেবার জন্য অপেক্ষা করে আছে।

আয়নার সামনে দাঁড়ালে চিরুনি, পাউডার এগিয়ে দেয় ঠাকুমা, ব্রজর চেহারায় ঠাকুরদার আদল দেখে।

ঠাকুরদা ছিলেন এলাকার মুখ উজ্জ্বল করা মানুষ। স্বাধীনতা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী এবং প্রকৃত সমাজসেবী। তাঁর সেবায় রাজনীতির ছায়া ছিল না। বাড়ির সামনের রাস্তাটা ঠাকুরদার নামে। হরিধন মুখার্জি রোড। আবক্ষমূর্তি আছে চৌমাথায়।

এ রকম একটা কথা আছে, এক জেনারেশনে বিশিষ্ট কেউ জন্মালে পরের জেনারেশন ঝিমোয়। সেই নিয়মে ব্রজর বাবা, জ্যাঠারা সবাই ঘরমুখো, চাকুরিজীবী মানুষ। ছাত্রাবস্থা থেকেই ব্রজর বারমুখো স্বভাব। তবে দিনকালের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রাজনীতির হাত ধরে সমাজসেবাটা করে। কলেজবেলায় সরকারের প্রধান বিরোধী দলে ছিল ব্রজ। কিছু দিন হল সেই দল ভেঙে আর একটা দল হয়েছে। বুদ্ধি করে ব্রজ চলে এসেছে নতুন দলে। কোনও ডজ, ড্রিবলিং ছাড়াই সে এখন লোকাল কমিটির সেক্রেটারি। রাজনীতিতে এই পজিশানে গেলে চাকরি, মোবাইল ফোনের খরচা নিয়ে ভাবতে নেই। তা ছাড়া বাড়ির লোকও গর্বিত হয়ে ব্রজকে স্পনসর করে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে অন্য জায়গায়। ব্রজ কিছুতেই পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির মঞ্চে নিজের নামটা প্রতিষ্ঠিত করতে পারছে না। দোষ ব্রজর নয়, এলাকার। এত শান্তশিষ্ট, অলস জায়গা খুবই কম আছে। অথচ পাশেই হৃদয়পুরে কত কী ঘটে সারাক্ষণ। সেখানে চেঁচামেচি করে পার্টির কচিকাঁচারা ফোকাসড হয়ে গেল। একডাকে চেনে সবাই। আজকাল নিজের জন্মস্থানের ওপর ব্রজর ভীষণ অভিমান হয়।

খাদির পাঞ্জাবি, পাজামা, ঘাড়ে বগলে পাউডার মেখে রোজকার মতো আজও বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল ব্রজ। প্রথমে যাবে পার্টি অফিসে। সেখানে অপেক্ষা করে আছে বিমর্ষ কিছু পার্টিকর্মী।

ঠাকুরদার নামাঙ্কিত এবড়োখেবড়ো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ব্ৰজ আকাশ দেখে, পানসে খবরের কাগজের মতো থম মেরে আছে। কিছু দিন যাবৎ মাঝে মধ্যেই ব্রজগোপালের আশঙ্কা হচ্ছে, বোধহয় শেষ হয়ে গেল কেরিয়ার। কালকেও কলকাতার লিডার নন্দদা ফোনে ধমকেছে, কী রে কোনও খবর নেই কেন? চুপচাপ বসে থাকলে হবে! আমাদের নতুন পার্টি, টিভি, কাগজের ক্যাচলাইনে না থাকলে ভুলে যাবে লোকে। সামনে বিধানসভা ভোট, খেয়াল আছে? নাকি ওয়াকওভার দিয়ে দিলি অপনেন্ট পার্টিকে?

চুপ করে ছিল ব্রজ। তার এলাকার ম্যাদামারা, ঝিমানো স্বভাবের দায় সে মাথা পেতে নিয়েছে।

হসপিটাল মাঠের কাছে চলে এসেছে ব্রজ। এটাই তার জন্মপীঠ। মেঘের আড়াল থেকে রোদের তলোয়ার বেরিয়ে হাসপাতাল বাড়ি, কোয়ার্টার, মাঠ ছুঁয়েছে। ঘাসের মাথায়, কচুবনের ওপর মুক্তোর মতো চকচক করছে কাল রাতের বৃষ্টির জল। বড় মহিমাময় লাগে এলাকার এই অংশটা। এমন হতেই পারত, ব্রজগোপালের জন্য হাসপাতালটা স্থান পেয়ে যেত ইতিহাসে।

খানিকটা বিহ্বল হয়ে পড়লেও একটা দৃশ্য চোখ এড়ায় না ব্রজর, কিছু কি ঘটতে যাচ্ছে? সতর্ক, সন্ধানী হয়।

সদ্য নির্মিত এবং কিছু দিনের মধ্যেই পরিত্যক্ত লেপ্রসি ওয়ার্ডের পেছনে দুজন নিচু হয়ে কী যেন করছে! চট করে ভাঙা পাঁচিলের আড়ালে চলে যায় ব্রজ। তারপর খুব সন্তর্পণে কচুবনের ভেতর দিয়ে ব্যান্ডেজ, তুলো, ডিসপোজেবল সিরিঞ্জের প্যাকেট, ফাটা তোশক, বালিশ মাড়িয়ে এগোতে থাকে।

ঘটনার ফুট দশেক দূরে কাঠচাপা গাছের পেছনে দাঁড়ায় ব্রজ। তেমন উৎসাহ পাচ্ছে না। সামনে যা ঘটছে তার চোখে নতুন হলেও, নিতান্ত সাধারণ। কোনও নিউজ ভ্যালু নেই। ওই দুজনের মধ্যে একজন হসপিটাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট ; অন্যজন কাগজ, শিশিবোতলওলা। হাসপাতালে ব্যবহৃত ওষুধের ফাঁকা শিশি বোতল, যার মধ্যে স্যালাইনের বোতলই বেশি, সুপার বিক্রি করে দিচ্ছে।

এই নিয়ে আর কতটা চেঁচামেচি করা যায়! উপায়ও নেই, ব্রজগোপালের এলাকায় কিছুই যে ঘটছে না। গাছের পেছন থেকে চকিতে বেরিয়ে আসে ব্রজ। গটগট করে এগিয়ে যায় ওদের সামনে।

এটা কী করছেন আপনি? সরাসরি সুপারকে চার্জ করে ব্রজ। ঘাবড়ে গিয়ে পেছন ঠুকে মাটিতে বসে পড়েন সুপার। আমতা আমতা করে বলেন, না মানে, ফাঁকা শিশিবোতল…

তো কী হয়েছে? আপনাকে কে রাইট দিয়েছে এগুলো বিক্রি করতে? তা ছাড়া আপনি যে শুধু ফাঁকা বোতলই বিক্রি করেন, সেটা কী করে বিশ্বাস করব? এভাবে লুকিয়েচুরিয়ে ওষুধ, স্যালাইন পাচার করে দিতে পারেন, কাকপক্ষীও টের পাবে না।

কথার ফাঁকে শিশিবোতলওলা মাথায় ঝাঁকা তুলে নিয়েছে, ব্রজ চট করে তার কলার ধরে, এই তুমি কোথাও যাবে না। দাঁড়াও এখানে। কত দিন ধরে এ বাবুর সঙ্গে কারবার করছ?

লোকটা প্রায় কান্নাকাটিই জুড়ে দেয়, হে বাবু, হাম গরিব আদমি। হামকো ছোড় দিজিয়ে। হামি কুছু জানি না।

হাসপাতালের উচ্ছিষ্ট খেয়ে চেহারা বাগানো দুটো কুকুর জুটে গেছে, শুরু করেছে ঘেউ ঘেউ। গলা তোলে ব্রজ, জানি না? জানাচ্ছি তোমাকে। একদম এখান থেকে নড়বে না। পুলিশে খবর করতে হবে।

গুটি গুটি পায়ে লোক জুটতে শুরু করেছে। এরকমটাই চাইছিল ব্রজ। দু’একজন এগিয়ে

এসে জিজ্ঞেস করে, কী কেস দাদা? — মুখচেনারা জানতে চায়, কী ব্যাপার রে ব্রজ? পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে ব্রজ বলতে থাকে, অনেক দিন ধরেই কানে আসছিল হাসপাতালের ওষুধ পাচার হয়ে যাচ্ছে, আজ একেবারে হাতেনাতে ধরেছি।

কৌতূহলী মানুষগুলোর মুখে ঘৃণার ভাব ফুটে ওঠে, রাগের দৃষ্টিতে সুপারের দিকে তাকায়। সেই যে মাটিতে থেবড়ে বসে পড়েছে সুপার, আর ওঠেনি। ভ্যাবলার মতো চারপাশে তাকাচ্ছে। সমানে চেঁচিয়ে যাচ্ছে ব্রজ, এই সব দুর্নীতির পেছনে কাদের মদত আছে আমরা জানি। নয়তো কী করে সাহস হয় সরকারি ওষুধপত্তর বাইরে বেচে দেওয়ার!

দেখতে দেখতে তিন-চারটে ইয়াং ছেলে ঝড়ের গতিতে সাইকেল নিয়ে মাঠে ঢোকে। ওদের মধ্যে দু’জন ব্রজর পার্টির। সেকেন্ডখানেক সময় নেয় হুজ্জোতটা বুঝতে, সাইকেল থেকে নেমে এসে সুপারের কলার ধরে দাঁড় করায়। হাত তুলেছিল মারতে। ব্রজ সাবধান করে, খবরদার না। কোনও ইনজুরি চলবে না। পাবলিক সেন্টিমেন্ট ঘুরে যাবে ওর দিকে।

ঠিক তখনই ব্রজর চোখে পড়ে কোয়ার্টারগুলোর একটা থেকে উদ্ভ্রান্তের মতো বেরিয়ে আসছে এক মহিলা, সঙ্গে এক যুবতী এবং এক কিশোর। ধরে নেওয়াই যায় এরা সুপারের বউ-ছেলে-মেয়ে। দৃশ্যটা প্রত্যাশিত। একটাই খটকা থেকে যাচ্ছে, কোয়ার্টারের সামনে বাঁশের খাঁচা কেন? প্যান্ডেল হবে, নাকি হয়ে গেছে?

সুপারের পরিবার অকুস্থলে এসে দাঁড়াতেই ব্রজর পার্টির ছেলে দুটোর আস্ফালন বেড়ে যায়। অতি উৎসাহের কারণ অবশ্যই সুপারের পূর্ণ যুবতী মেয়ে। দারুণ দেখতে! অন্য সময় ব্রজর পার্টির ছেলে দুটো মেয়েটির থেকে বাতিল হ্যান্ডবিলের থেকে বেশি মর্যাদা পেত না। সত্যি বলতে কী, মেয়েটার রূপে ব্রজও একটু থমকে গেছে।

পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নেয় ব্রজ, এত সহজে আপ্লুত হলে চলবে না। রাজনৈতিক জীবনে তাকে এখন বহু দূর যেতে হবে।

ভিড় বাড়ছে। বক্তৃতার ঢঙে লোক তাতিয়ে যাচ্ছে ব্রজ। সুপার ভিড়ের মাঝে কপালে হাত দিয়ে উবু হয়ে বসে আছে।

এক চেলা ব্রজর কানে কানে বলল, মালটাকে আর মাঠে রেখো না। পাবলিক খেপে গেলে, গণধোলাই হয়ে যাবে। রুখতে পারবে না। পরে খামোকা কোর্ট-কাছারি দৌড়োতে হবে। কোনও ঘরেফরে সাঁটিয়ে দাও।

খুব সময়মতো কথাটা খেয়াল করিয়ে দিয়েছিল ছেলেটা। সুপারকে মাঠ থেকে তুলে আউটডোরের চেম্বারে ঢুকিয়ে দিয়েছে ব্রজ। মাঝে সুপারের বউ ব্রজর হাত ধরে বলেছিল, এবারের মতো ছেড়ে দাও বাবা, কাল আমার মেয়ের বিয়ে। সব পণ্ড হয়ে যাবে।

ব্রজর কানে আগুন, কথাটা মর্মে ঢোকার আগেই পুড়ে গেল। খেঁচিয়ে উঠে ব্রজ বলে, বিয়ের আগের দিন চুরি করা অপরাধ নয় বুঝি? …তারপর সুপারের পরিবার, শিশিবোতলওলা কোথায় যে হারিয়ে গেল ভিড়ে, কে জানে! ব্রজ এখন হাসপাতালের বারান্দায়, বিপুল জনতার সামনে। স্লোগান তুলেছে, জনগণের পয়সা নয়ছয় করা চলবে

না, চলবে না… সরকারি দুর্নীতি রুখছি, রুখব.. হাসপাতালের ওষুধ চুরি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর জবাব চাই, জবাব দাও…

খেলা মাঝমাঠে জমে উঠেছে। ব্রজর স্লোগানের পর ধুয়ো তুলছে সবাই। হাসপাতালের দোতলার বারান্দায় ভিড়। ব্যান্ডেজ বাঁধা রুগিও কৌতূহলে ঝুঁকে দেখছে। কেউ না আবার স্যালাইন নিতে নিতে বোতল হাতে চলে আসে! …সবই তো ঠিকঠাক এগোচ্ছে, কিন্তু এর পরের স্টেপ কী হওয়া উচিত? তাড়াতাড়ি ভাবতে থাকে ব্রজ। এই সময় এক ভাঁড় চা না খেলেই নয়।

স্লোগানের দায়িত্ব পাশের ছেলের কাঁধে দিয়ে ভিড় কেটে বেরিয়ে আসে ব্রজ। দু’চারটে ছেলে সঙ্গ নিচ্ছিল, ব্রজ ইশারায় জানায়, তোরা এখানেই থাক, চা খেয়ে আসছি।

হাসপাতালের গেটে রামলালের চা গলা দিয়ে নামতেই মাথা খুলে যায় ব্রজর, যে উদ্দেশ্যে এত হইহল্লা, তার সঙ্গেই সরাসরি যোগাযোগ করে নেওয়া যাক। পকেট থেকে মোবাইল বার করে ভোরের বার্তার জেলা সাংবাদিক সঞ্জয়দাকে ফোন করে ব্রজ। ভোরের বার্তার সার্কুলেশন সব থেকে বেশি।

এক চান্সেই পাওয়া গেল। গলায় টেনশান এনে ব্রজ নিজের সুবিধেমতো গোটা ঘটনার বিবরণ দেয়। সঞ্জয়দা ঝানু রিপোর্টার, মোক্ষম প্রশ্নটি করে, যে মালগুলো বিক্রি করে দিচ্ছিল, মানে ইনট্যাক্ট স্যালাইনের বোতল, ট্যাবলেটের স্ট্রিপ, ইঞ্জেকশানের ভরা অ্যাম্পুল, ডিসপোজেবল সিরিঞ্জের নতুন প্যাকেট সব রেখে দিয়েছিস তো?

ঢোঁক গিলে ব্রজ বলে, না গো, সে সব নিয়ে শিশিবোতলওলা কখন যেন কেটে গেছে।

ও প্রান্ত থেকে ধমক আসে, বাজে কথা বলিস না। শিশিবোতলওলার কাছে সুপার হয়তো ফাঁকা…

কথা শেষ করতে না দিয়ে ব্রজ মরিয়া কণ্ঠে বলে ওঠে, না বস্। আমি শিয়োর, ওই ফেরিওলাটাই কেরিয়ার। সুপার ওর মাধ্যমেই মাল পাচার করে।

তাকে যখন ধরে রাখতে পারিসনি, কিছুই প্রমাণ করতে পারবি না। কেসটা ফসকা গেরো হয়ে গেছে। ইসুটা থেকে হাত ধুয়ে ফেল।

প্রায় আঁতকে উঠে ব্রজ বলে, কী বলছ তুমি! একবার যদি এখানে আসো দেখবে কত পাবলিক জমা হয়েছে। সবাই গরম। এই সময় আমি ব্যাকগিয়ার মারলে, লোকে আমায় ছেড়ে দেবে ভেবেছ! তা ছাড়া এই মওকা বারবার আসবে না। তুমি তো জানোই আমাদের এলাকা কীরকম ন্যাতানো মার্কা।

অপর প্রান্তে কোনও শব্দ নেই। ভাবছে সঞ্জয়দা। একটু পরে বলে, এক কাজ কর, থানা ঘেরাও আর জিটি রোড অবরোধ করে দে। তুই খবর হতে চাইছিস তো? হয়ে যাবি।

উৎফুল্ল হয় ব্রজ। বলে, থানা ঘেরাও করে ডিমান্ড কী করব?

অ্যারেস্ট করতে বলবি সুপারকে।

ওরা তো সাক্ষী, প্রমাণ চাইবে।

সাক্ষী তুই নিজে, প্রমাণ দেখাতে নিয়ে আসবি। তারপর বলবি লোপাট হয়েছে।

তখন তো সুপারকে অ্যারেস্ট না করেই ফিরে যাবে পুলিশ। আমার প্রেস্টিজ… চিন্তা করিস না। একঘণ্টার গ্যাপ দিয়ে আমি ও সি-কে ফোন করে বলছি রেসকিউ করে আনুক সুপারকে। গোলা পাবলিক ভাববে অ্যারেস্ট। এই এক ঘণ্টায় যতটা পারিস বাওয়াল করে নে।

দশটা আঞ্চলিক নেতাকে খলনুড়িতে মেড়ে নিলে একটা বড় কাগজের রিপোর্টার হয়। ব্রজ বলে, ও কে বস্। তুমি মোবাইল অন রেখো, দরকারে যেন যোগাযোগ করতে পারি।

ঠিক আছে। বলে, ফোন কেটে দিল সঞ্জয়দা। ব্রজ নতুন উদ্যমে জনসমাবেশের দিকে এগিয়ে যায়।

আধঘণ্টার মধ্যেই থানা প্রায় মৌচাকের আকার ধারণ করেছে। জানলা, দরজা, গেটে গিসগিস করছে পাবলিক। থানা লাগোয়া জিটি রোড। অটোমেটিকালি অবরোধ হয়ে গেছে। ভেসে আসছে স্টার্ট দিয়ে রাখা গাড়ির আওয়াজ, রিকশার হর্ন, সাইকেলের অসহিষ্ণু ক্রিরিং ক্রিরিং, জনতার হইচই। পুরো তালগোল পাকিয়ে গেছে অফিস টাইমের বাজার।

ব্রজ গোঁ ধরে বসে আছে ও সি-র ঘরে। ঘামে ভেজা পাঞ্জাবির তলায় গেঞ্জি, পইতে এখন স্পষ্ট। ও সি সেই থেকে ব্রজকে বুঝিয়ে যাচ্ছেন, প্লিজ, রাস্তার অবরোধটা অন্তত তুলে নিন, এই সময় ট্রাফিকের চাপ অনেক বেশি। এক্ষুনি ওপরতলা থেকে ফোন আসবে। বাধ্য হয়ে আমাকে…

যা পারেন করুন। লাঠিচার্জ করবেন তো? কোনও অসুবিধে নেই। সরকারি দুর্নীতি রুখতে যদি আমাদের পার্টিকর্মী ইনজিয়োরড হয়, মিডিয়া আপনাদের ছেড়ে কথা বলবে না।

ব্রজর কথা শেষ হয়েছে কি হয়নি, ও সির টেবিলের ফোন বেজে ওঠে। সন্ত্রস্ত হয়ে ফোন তুলে নেন ও সি,… হ্যাঁ… না…কী করে জানলেন… ঠিক আছে… সত্যি, ব্যাপারটা মাথায় আসেনি… থ্যাঙ্ক ইউ… অপর প্রান্তের কথা শোনার ফাঁকে ফাঁকে এগুলো বলে গেলেন ওসি। মুখের উৎকণ্ঠা এখন অনেকটাই দ্রবীভূত। শীতের কুয়াশার মতো আবছা হাসির প্রলেপ পড়েছে ঠোঁটে।

চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান ও সি। ব্রজর চোখে অবুঝ দৃষ্টি। ওসি বলেন, চলুন তুলে নিয়ে আসি সুপারকে।

ব্রজ যেন আন্দাজ করতে পারে, একটু আগের ফোনটা সঞ্জয়দার ছিল।

ও সি-র সঙ্গে থানার বাইরে এসেছে ব্রজ, আপশোস হচ্ছে খুব, ইস, চার চারটে টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা ঘেরাও, অবরোধের ছবি তুলছে। ব্রজ খামোকা ও সি-র ঘরে বসে সময় কাটাল। আক্ষেপ বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না, টিভি-র সাংবাদিক, ক্যামেরা সব ঝাঁপিয়ে পড়ল ব্রজ আর ও সি-র ওপর। উত্তেজিত ভঙ্গিতে ব্রজ তাদের আন্দোলনের ব্যাখ্যা দিতে থাকে। পরনের পাঞ্জাবিটা নিয়ে মনের গভীরে একটা খিচখিচানি থেকে যায়। আগে আর একদিন এটা পরে ক্যামেরার সামনে কথা বলেছিল, কালারটা ভাল আসেনি টিভিতে। …নিজের

ছেলেদের অবরোধ তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেয় ব্রজ। ও সি এবং দু’জন কনস্টেবলের সঙ্গে জিপে গিয়ে বসে। ওসি ইশারায় ডাকলেন সব থেকে জনপ্রিয় বাংলা চ্যানেলের সাংবাদিককে, আলগোছে জিজ্ঞেস করলেন, ক’টায় দেখাবেন?

কেন, মফস্সলের খবর যখন দেখানো হয়। সন্ধে সাড়ে ছ’টা। ব্যাপক বাংলায়। ব্রজও ঠিক করে নেয় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব টাইমটা বাড়িতে জানিয়ে দিতে হবে, গাদাখানেক রিলেটিভদের ফোন করার সময় দিতে হবে মাকে।

জিপের পাশে ভিড় দৌড়োতে লাগল সমান তালে।

হ্যান্ডকাফ, কোমরে দড়ি, কিছুই পরাল না সুপারকে। ও সি হাত ধরে এগিয়ে চললেন জিপের দিকে। এতক্ষণ বন্ধ ঘরে থেকে সুপার এমনভাবে ঝিমোচ্ছে, যেন কবর থেকে তোলা হয়েছে।

এরই মধ্যে একটা অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটল, সুপারের স্ত্রী আর মেয়ে উঠে পড়ল পুলিশের জিপে। ব্রজও যাচ্ছিল উঠতে, ও সি বললেন, আপনি আর গিয়ে কী করবেন থানায়। আপনার কথামতোই তো কাজ হচ্ছে। আপনি গেলে পাবলিকও যাবে। মিছিমিছি ক্যাওস! কথাটা ব্রজর পক্ষেই যাচ্ছে। সে জানে তার রোল এখানেই শেষ। অভীষ্ট লাভ হয়েছে। এবার মানে মানে সিন থেকে সরে যাওয়াই ভাল। পাচার হওয়া ওষুধের প্রমাণ তার হাতে নেই।

ঘুরে গিয়ে হাঁটতে থাকে ব্রজ, দু’পা এগোতেই দৌড়ে আসে দু’-তিন জন ক্যাডার, কী হল ব্রজদা, যাবে না থানায়?

নাঃ, গিয়ে কী হবে। আমরা আমাদের কাজ করেছি, পুলিশ নিজেদের কাজ করুক। এক ক্যাডার বলে ওঠে, পুলিশ যদি একটু পরেই ছেড়ে দেয়। খবর পেয়েছি এম এল এ অলরেডি থানায় পৌঁছে গেছে।

কপট বিরক্তিতে ধমকে ওঠে ব্রজ, থানা নিয়ে পড়ে থাকলে আমার চলবে! আরও অনেক কাজ আছে! তোরা যা না পুলিশের সঙ্গে।

ধুলো উড়িয়ে স্টার্ট দিয়েছে পুলিশের জিপ। ব্রজ একবার জিপের দিকে ঘাড় ফেরায়, মুহূর্তের মধ্যে ভীষণ চমকে ওঠে, ধুলোর আস্তরণ ভেদ করে তার দিকেই চেয়ে আছে এক জোড়া জ্বলন্ত চোখ। যেন ভয়ংকর কোনও আগ্নেয়াস্ত্র। চাউনিটা সুপারের মেয়ের।

বাড়িতে ফিরে টিভি নিউজের টাইমটা বলে দিয়েছে ব্রজ। নাওয়া-খাওয়া সেরে এখন বিছানায় শুয়ে পা দোলাচ্ছে। সিডি প্লেয়ারে বাজছে রবীন্দ্রনাথের গান।

আধঘণ্টা আগে মোবাইলে ফোন এসেছিল হাইকমান্ডের, কাজের খুব প্রশংসা করলেন। দেখা করতে বললেন তাড়াতাড়ি।

সঞ্জয়দা স্পটে আসেনি, ফোনও এল না। খবরটা কাগজে বেরোবে কি না, বোঝা যাচ্ছে না। না বেরোলেও খুব একটা ক্ষতি নেই, টিভি চ্যানেল ঠিকঠাক কভার করে দিলেই কাফি।

একটা ব্যাপারেই মনটা একটু অশান্ত হয়ে রয়েছে, সরকার পক্ষের এম এল এ মধুদা বসে আছে থানায়। ব্রেনি লোক, কেসটা যে ফাঁপা বুঝতে অসুবিধে হবে না। উলটো কোনও খেলা ব্রজর এগেনস্টে শুরু করে না দেয়।

গা ঝাড়া দিয়ে বিছানায় উঠে বসে ব্রজ। থানায় একবার যাওয়া উচিত। খুব কাছ থেকে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে হবে।

থানা পর্যন্ত যেতে হল না। ব্যানার্জি পাড়ার গলিতে এসেই পা থমকে গেল। জি টি রোড থেকে একপাল লোক গলিতে ঢুকছে। ভিড়ের মেজাজ অনেকটা ঠাকুর ভাসানের মতো। প্রতিমার জায়গায় সামনের তিনজনকে দেখে দমবন্ধ করে ফেলেছে ব্রজ। দূরত্ব এখনও অনেকটাই, তবু ব্রজ স্পষ্ট দেখতে পায় সুপারের গলায় জুতোর মালা, এক পাশে স্ত্রী, অন্য পাশে মেয়ে, ভয়ার্ত, বিমূঢ় দৃষ্টি নিয়ে তারা এপাশ ওপাশ তাকাচ্ছে।

পাছে চোখাচোখি হয়ে যায় এই আশঙ্কায় ব্রজ পাশের গলিতে ঢুকে পড়ে।

এ গলি, সে গলি ধরে ব্রজ যখন প্রকৃতপক্ষে লুকিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, হার্ট কাঁপিয়ে বুক পকেটে মোবাইল ফোন বেজে ওঠে। ফোন বার করে স্ক্রিনে দেখে সঞ্জয়দার নাম্বার। কানে নেয় ফোন। ‘হ্যালো’ বলার সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁঝিয়ে ওঠে সঞ্জয়দা, হ্যাঁরে, তোর কোনও কাণ্ডজ্ঞান নেই! শুনলাম সুপারের মেয়ের কাল বিয়ে। এই সময় তুই ওদের ফাঁসালি ! মেয়েটার বিয়ে আটকে যাবে না!

ব্রজ তোতলাতে থাকে, আমি, মানে ঠিক…

ইডিয়ট, থানা থেকে ছেড়েছে ওদের? জানতে

চায় সঞ্জয়দা।

ছেড়েছে। বলে চুপ করে যায় ব্রজ। তারপর কী হয়েছে আর কিছু বলে না। ও প্রান্তে সঞ্জয়দা ফের বলতে শুরু করে, কিছুক্ষণ আগে এম এল এ আমাকে ফোন করেছিল। বলছে, মেয়েটার যদি বিয়ে আটকে যায়, তোকে ছেড়ে কথা বলবে না। তুই এক কাজ কর, দু’-তিন দিনের জন্য আন্ডারগ্রাউন্ড হয়ে যা।

ঠিক আছে। বলেই ফোন কেটে দেয় ব্রজ। মনে মনে বলে, গোটা প্ল্যানটায় তোমারও অবদান আছে, চট করে কেমন সাধু সেজে নিলে!

তবু ভাল সঞ্জয়দা এখনও জুতোর মালার ব্যাপারটা জানে না। পাবলিকেরও বলিহারি, এমন লাফাচ্ছে, যেন রাষ্ট্রযন্ত্রের চোরের সর্দারকে ধরে ফেলেছে।

সব থেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু, পার্টিকর্মী পলাশের বাড়িতে শেল্টার নিয়েছে ব্রজ। পলাশ অনেকক্ষণ হল বেরিয়েছে এলাকার পরিস্থিতি জানতে। এখনও ফেরার নাম নেই।

ইতিমধ্যে সন্ধের টিভি-র খবরে নিজেকে দেখেছে ব্রজ। জুতোর মালা পরিহিত সুপার, বিব্রত, অসহায় স্ত্রী, মেয়ের ক্লোজ-আপ বারবার ভেসে উঠেছে টিভি-র পরদায়। অর্থাৎ বিয়ে পণ্ড হওয়ার সমস্ত ব্যবস্থা পাকা।

ব্রজর হাত-পা ঘামছে। শরীর জুড়ে অস্থির ভাব। গেটের আওয়াজের জন্য কান খাড়া করে রেখেছে, এই বুঝি পলাশ ভাল কোনও খবর নিয়ে এল।

আরও ঘণ্টাখানেক বাদে ফিরল পলাশ। যা জানাল, সেটাই স্বাভাবিক, ছেলের বাড়ি বিয়ে ক্যানসেল করেছে। ব্রজদের অপনেন্ট পার্টির লোকেরা গেছে বোঝাতে। এই প্রথমবার ব্রজ মনে মনে বিরোধীপক্ষের বিজয় প্রার্থনা করল।

রাতে ভাল ঘুম হল না। বিচ্ছিরি একটা স্বপ্ন দেখল ব্রজ, চৌমাথায় ঠাকুরদার আবক্ষ মূর্তিটা চুরি গেছে। পড়ে আছে পাথরের ফলকে নাম লেখা ফাঁকা বেদি। একটা দাঁড়কাক বেদির ওপর লাফিয়ে ঘুরে ডেকে যাচ্ছে।

সকালের দিকে গভীর ঘুমে তলিয়ে গিয়েছিল ব্রজ। পলাশ ঠেলে তোলে। হাতে চায়ের কাপের সঙ্গে কিছু দুঃসংবাদ দেয়, ছেলের বাড়িকে রাজি করাতে পারেনি বিরোধীপক্ষ। চমকানিতেও কাজ হয়নি। পাত্রপক্ষের ভাল কানেকশান আছে ওপর মহলে। সুপার নাকি ইতিমধ্যে একবার সুইসাইড করার অ্যাটেম্পট নিয়েছে।

আধ খাওয়া চায়ের কাপ রেখে উঠে পড়ে ব্রজ। বাথরুমে গিয়ে চোখ-মুখ ধুয়ে পলাশের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। বেরোনোর সময় পলাশ জিজ্ঞেস করেছিল, কোথায় যাচ্ছিস? ব্রজ উত্তর দেয়নি।

হাসপাতালের মাঠ চিরে ব্রজ এগিয়ে চলেছে সুপারের কোয়ার্টার লক্ষ করে। বাঁশের খাঁচার ভেতর ইতস্তত রঙিন কাপড়ে বড় বড় পুটুলি। সম্ভবত প্যান্ডেল বাঁধতে এসে কাজ মুলতুবি রেখেছে ডেকরেটর।

এতক্ষণে এ বাড়িতে গায়ে হলুদ এসে যাওয়ার কথা ছিল। ব্রজর জায়গায় অন্য যে কেউ হলে হাসপাতালের ত্রিসীমানা মাড়াত না। কিন্তু ভুললে চলবে না, ব্রজগোপাল হরিধন মুখার্জির নাতি। জনপ্রতিনিধি হওয়ার সমস্ত বৈশিষ্ট্য, গুণাবলি তার রক্তে উপস্থিত। তার সাহস, ত্যাগ, তিতিক্ষা আর পাঁচজনের থেকে আলাদা।

কড়া নাড়তে দরজা খুলল সুপারের মেয়ে। ব্রজকে দেখে মেয়েটার মুখে ভর্ৎসনা, তিরস্কার, ঘৃণা কিছুই ফুটল না। মেয়েটা যেন লুট হয়ে যাওয়া ধানের গোলা। বলল, আসুন।

ঘরের ভেতর এসে দাঁড়াল ব্রজ। আত্মীয়-স্বজন কাউকে দেখা যাচ্ছে না। সবাই হয়তো ফিরে গেছে। পরিবারের চারজন এখন এই ঘরে। ব্রজকে দেখে কারও মধ্যে কোনও চঞ্চলতা দেখা গেল না। সুপার বসে আছে বিছানায়, ব্রজকে দেখে নিয়ে জানলার বাইরে চোখ রাখল।

কেউ বসতে বলছে না। ব্রজ নিজেই একটা চেয়ার টেনে বসে। একটু পরে প্রথম কথা বলে সুপারের স্ত্রী, শুনেছ তো বাবা সব, আমার মেয়ের কপাল পুড়েছে।

ব্রজ বলে, শুনেছি। সেই কারণেই এসেছি আপনাদের কাছে। যদি কোনও আপত্তি না থাকে, আমি আপনাদের মেয়েকে, মানে আজই…

বাকিটা ঘরের বাতাস বলে দেয়। আনন্দ উথলে ওঠে মেয়ের মায়ের মুখে। ভাইয়ের মুখেও স্বস্তি নেমে আসে। পাত্রীর কোনও ভাবান্তর নেই। সুপারও ঘাড় ফেরায়নি এদিকে।

সুপারের স্ত্রী স্বামীর উদ্দেশে বলে, শুনছ, ও কী বলছে! কানে গেছে তোমার? ওগো… পাত্রীও তার বাবার দিকে উৎকণ্ঠিত হয়ে তাকিয়ে আছে। তবু ভাল, মেয়েটি ব্রজর প্রস্তাবে না করে দেয়নি।

সুপারের দিক থেকে কোনও সাড়া নেই।

স্ত্রীর নিরন্তর ডাকাডাকিতে একসময় ঘাড় ফেরাতে বাধ্য হয়। চেহারায় ঝিমানো ভাবটা স্থায়ী ভাবে বাসা বেঁধেছে। সবার মুখের দিকে তাকিয়ে নিয়ে সুপার বলে, আমার একটা শর্ত আছে।

ঘরের সবাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে সুপারের দিকে তাকায়। বিছানা থেকে নেমে আসে সুপার। ধীর পায়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়।

বাকি চারজন পড়ে রইল বিষম ধন্দে। ব্রজ দ্রুত ভাবতে থাকে কী হতে পারে শর্ত, ঘর থেকে বেরিয়েই বা গেল কেন?

খানিক পরেই দোরগোড়ায় এসে দাঁড়ায় সুপার। চেহারা দেখে এতটাই চমকে যায় ব্রজ, চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ে। সুপারের হাতে সেই জুতোর মালা। সকালে যেটা পরিয়ে দিয়েছিল এলাকার মানুষ।

পাগলাটে চাউনি নিয়ে সুপার তাকিয়ে আছে ব্রজর দিকে। বলছে, আমার একটাই শর্ত, এই মালাটা দিয়ে আজ তোমাদের মালাবদল করতে হবে।

ঘরে এখন পিন পড়লে বাজের শব্দ হবে। সুপার এগিয়ে আসছে। বাড়ির লোক সুপারকে বাধা দিচ্ছে না কেন? সুপার ফের জিজ্ঞেস করে, কী, রাজি তো?

উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়েছে ব্রজ। ভীষণ শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। সে যেন এখন স্বপ্নে চুরি যাওয়া ঠাকুরদার আবক্ষ মূর্তি। মালাটা তুলে ধরেছে সুপার। এখনই পরিয়ে দেবে নাকি? সুপার কি জানে না, জ্যান্ত কবরে যাওয়া আর জীবন্ত স্ট্যাচুর কষ্ট একই।

শারদীয়া আনন্দবাজার, ২০০৫

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *