।। সৌরধর্মমাহাত্ম্য বর্ণনম্।।
।। সৌরধর্ম মাহাত্ম্য বর্ণন।।
এই অধ্যায়ে সৌরধর্মের আলোচনা প্রসঙ্গে গরুড় এবং অরুণ সংবাদ তথা সৌরধর্মের মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে।
পুনর্মে ব্রহিবিপ্রেন্দ্র সৌরং ধমমনুত্তমম্। সমাসাৎকথিতং ব্রহ্মন্বিস্তরেন প্রকীর্তয়।।১।।
রাজা শতানীক বললেন–হে বিপ্রেন্দ্ৰ, আপনি কৃপা পূর্বক সৌরধর্ম সম্পর্কে আমাকে বলুন। পূর্বে আপনি সংক্ষেপে তা বর্ণনা করেছিলেন, এখন পুনরায় বিস্তারিতভাবে তা বলুন।।১।।
সাধুসাধু মহাবাহো সাধু পৃষ্টোহসি ভারত। ত্বৎসংমো নাস্তি লোকেহস্মিন সৌরঃ পার্থিবসত্তম্।।২ কীর্তয়াম্যদ্য তং পুণ্যং সংবাদং পাপনাশনম্। গরুড়ারুণয়ো রাজন্ পুরাবৃত্তং নরাধিপ।।৩।। সুখাসীনং পুরা রাজন্নরুণং সূর্যসারথিম্। উপগম্য মহাবাহো গরুড়ো বাক্যমব্রবীৎ।।৪।। ধর্মাণামুত্তমং ধর্মং সর্বপাপ প্রণাশনম্। সৌরধর্মং খগশ্রেষ্ঠ ব্রূহি মে কৃৎস্ৰশোনঘ।।৫।। সাধু বস মহাত্মাসি ধন্যস্ত্বং পাপবর্জিতঃ। শ্রোতু কামোহসি যৎ পুত্র সৌরধমমনুত্তমম্।।৬।। শুনু ত্বং কীর্তয়াম্যেষ সুখোপায়ং মহৎফলম্। পরমং সর্বধর্মাণাং সৌরধমমনুত্তমম্।।৭।।
সুমন্তু ঋষি বললেন, হে মহাবাহো, তুমি যথার্থ বলেছ। হে ভারত, এই লোকে তোমার তুল্য কোনো রাজা সৌমধর্ম সম্পর্কে অনুরাগ প্রকাশ করেন নি।।২।।
হে মহাবাহো, আজ সেই পরমপুণ্যএবং পাপনাশী সংবাদ তোমাকে বলছি। হে নরাধিপ, পূর্বে গরুড় এবং অরুণের যে সংবাদ হয়েছিল তার বর্ণনা করছি।।৩।।
হে মহাবাহু, পুরাকালে কোনো এক সময় সূর্য সারথি অরুণ নিকট আমি সুখাসীন ছিলাম, তখন সেখানে গরুড় উপস্থিত হন এবং তিনি তখন কথাগুলি বলেছিলেন।।৪।।
হে নিষ্পাপ খগশ্রেষ্ঠ, কৃপা পূর্বক আপনি ধর্মের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং সমস্ত পাপরাশি নাশকারী সৌরধর্ম সম্পর্কে আমাকে পূর্ণ রূপে বলুন।।৫।।
অরুণ বললেন, হে বৎস, অতি উত্তম, তুমি মহাত্মা পরমধন্য এবং পাপরহিত। হে পুত্র তুমি এই পরমশ্রেষ্ঠ সৌরধর্ম শ্রবণ করতে ইচ্ছুক। সেই ইচ্ছা তোমার কৃতার্থতা এবং নিষ্পাপতাকে প্রকট করছে।।৬।।
এখন তুমি শ্রবণ কর। আমি সুখের উপায় স্বরূপ এবং মহান ফলদানকারী তথা সমস্ত ধর্মের মধ্যে অত্যুত্তম সৌরধর্ম সম্পর্কে বলছি।।৭।।
অজ্ঞানানবমগ্নানাং সর্বেষাং প্রানিনাময়ম্। সৌরধর্মো হ্যয়ং শ্রীমান পরতীরপ্রদোষতঃ।।৮।। যে স্মরন্তি রবিং ভক্ত্যা কীৰ্তয়ন্তি চ যে খগ। পূজয়ন্তি চ যে নিত্যং তে গতা পরমং পদম্।।৯।। আত্মদ্রোহঃ কৃতস্তেন জাতেনেহ খগাধিপ। নাচিতো যেন দেবেশঃ সহস্রকিরণো রবি।।১০।। সুচিরং সম্ভ্রমত্যস্মিন্দুঃখদে চ ভবার্ণবে। জরাভূত মহাগ্রাহে তৃষ্ণাবেলাকুলাপরে।।১১।। মানুষং দুর্লভং প্রাপ্য যেহচয়ন্তি দিবাকরম। তেযাং হি সফলং জন্মকৃতার্থস্তে নরোত্তমাঃ।।১২।। সূর্যভক্তিপরা যে চ মেচ তদগতমানসাঃ যে স্মরন্তি সদা সূর্যং নতে দুঃখস্য ভাগিনঃ।।১৩।।
এই সৌরধর্ম অজ্ঞান সাগরে নিমগ্ন মানবকে উদ্ধার করে জ্ঞান প্ৰদান করে।।৮।।
হে খগ, যে ব্যক্তি ভক্তিভাবের দ্বারা ভগবান্ সূর্যদেবের স্মরণ করে এবং তাঁর কীর্তন করে তথা নিত্য তাঁর ভজন করে তিনি পরমপদ লাভ করেন।।৯।।
হে খগাধিপ, যে ব্যক্তি এই লোকে জন্ম লাভ করেও সেই দেবেশ অর্থাৎ সূর্যদেবকে স্মরণ করেন না, তিনি আত্মার সঙ্গে দ্রোহ করেন।।১০।।
যে ব্যক্তি ভগবান্ সূর্যদেবের অর্চনা করেন না, তিনি অনেককাল দুঃখদানকারী এই সংসার সাগরে জরা, ভূত প্রভৃতি মহান গ্রহ ভোগ করেন তৃষ্ণাবেলাকুল থাকেন।।১১।।
এই মনুষ্য জীবন পরম দুর্লভ, কারণ অত্যধিক পুণ্যের দ্বারা এই জীবন লাভ করা যয়া। এই রকম পুণ্য জীবন লাভ করে যে ব্যক্তি সর্বদা ভগবান সূর্যদেবের পূজন করেন তার জন্ম সার্থক এবং তিনি নরশ্রেষ্ঠ।।১২।।
যে ব্যক্তি ভক্তিপূর্বক ভগবান সূর্যদেবের পূজন করেন ও সূর্যদেবের চরণে নিজমন নিয়োজিত করেন তথা সূর্যদেবকে সর্বদা স্মরণ করেন, তিনি কখনও দুঃখভোগ করেন না।।১৩।।
বিবিধানি মনোজ্ঞানি বিবিদাভরণাঃ স্ত্রিয়ঃ। ধণং বা দৃষ্টপযতং সূর্যপূজাবিধেঃ ফলম।।১৪।। যে বাঞ্ছন্তি মহাভোগান্নজ্যং বা ত্রিদশালয়ে। সৌভাগ্যং কান্তিমতুলাং ভোগং ত্যাগং যশ শ্রিয়ম।।১৫।। সৌন্দর্যং জগৎ খ্যাতিঃ কীর্তিধমাদয়ঃ স্মৃতাঃ। ফলান্যেতানি বৈপুত্র সূর্যভক্তি বিধেবুধ।।১৬।। তস্মাৎ সম্পূজয়েৎ সূযং সর্ব দিবগণাচিতম। দুলর্ভা ভাস্করে ভক্তিদুলভং চ তদচনম।।১৭।। দানং চ দুলর্ভং তস্মৈ তদ্ধোমশ্চ সুদুর্লভ। দুলভং তস্য বিজ্ঞানং তদভ্যাসোঽপি দুর্লভঃ।।১৮।। সদুলভতরং জ্ঞেয়ং তদারাধনমুত্তমম্। লোভস্তেষাং মনুষ্যাণাং যে রবিং শরণংগতাঃ।।১৯।।
সূর্যদেবের পূজনের ফলে ব্যক্তি অনেক প্রকার সুন্দর পদার্থ, নানা প্রকার আভূষণে ভূষিত স্ত্রী এবং অটুট ধনসম্পদ লাভ করেন।।১৪।।
যে ব্যক্তি মহাভোগের দ্বারা সুখ প্রাপ্ত করতে চান রাজ্যাসন লাভ করতে চান বা স্বর্গ সৌভাগ্য লাভ করতে চান এবং অতুল কান্তি, ভোগ, ত্যাগ, যশ, শ্রী, সৌন্দৰ্য্য, জাগতিক খ্যাতি, কীর্তি ও ধর্ম ইত্যাদি লাভ করতে চান তিনি সূর্যদেবের প্রতি ভক্তি প্রদর্শন করবেন। কারণ এসব সূর্য-ভক্তির ফল। অতএব হে পুত্ৰ, সূর্যভক্তি অবশ্য কর্তব্য।।১৫-১৬।।
এই কারণে সমস্ত দেবগণের দ্বারা সমর্চিত সূর্যদেবের পূজন করা উচিৎ। ভগবান্ ভাস্করের প্রতি ভক্তি এই লোকে পরম দুর্লভ। সূর্যদেবের প্রতি যজনাচনও পরম দুর্লভ।।১৭।।
সূর্যদেবের প্রতিদান অতি দুর্লভ তথা তাঁর উদ্দেশ্যে হোম করা মহাদুর্লভ। তার জ্ঞানপ্রাপ্ত হওয়া কঠিন আর তাঁকে অভ্যাস করাও দুর্লভ।।১৮।।
সূর্যদেবকে উত্তমরূপে আরাধনা করার বিধান গ্রহণ কঠিন। যিনি ভগবান সূর্যদেবের শরণাগত তিনি সূর্যদবকে প্রাপ্ত হন।।১৯।
যেষামিহেশ্বরে ভানৌ নিত্যং সূর্যেগতং মন। নমস্কারাদিসংযুক্তং রবিরিত্যক্ষরুদ্ধম্।।২০। জিহ্বাগ্রে বততে যস্য সফলং তস্য জীবিতম্। য এবং পূজয়েদ ভানুং শ্রদ্ধয়া পরয়ান্বিতঃ। মুচ্যতে সর্বপাপেভ্যঃ স নরো নাত্র সংশয়।।২১।। ডাকিন্যো বিবিধাকারা রাক্ষসাঃ সপিশাচকাঃ। ন তস্য পীড়াং কুর্বতি তথান্যাশ্চ বিভীষণাঃ।।২২।। শত্রো নাশমায়ান্তি সংগ্রামে জয়মাপুয়াৎ। ন রোগৈঃ পীড্যতে বীর আপদো ন স্পৃশান্তিতম্।।২৩। ধনমায়ুযশো বিদ্যা প্রভাবোহ্যতুলং তথা। শুভেনোপচায়ং যান্তি নিত্যং পূর্ণমনোরথা।।২৪।।
এই লোকে যার মন ঈশ্বর ভানুদেবের প্রতি নিরত থাকে এবং ‘রবি’ এই দুই অক্ষর যার নমস্কারাদিতে সংযুক্ত থাকে তিনি জীবনে সফল হন।।২০।।
যে ব্যক্তির জিহ্বাগ্র ভগবান্ রবির, নাম স্থানপ্রাপ্ত হয়, তাঁর জীবন সার্থক। এইভাবে পরম শ্রদ্ধাপূর্বক যিনি ভগবান্ সূর্যদেবের পূজন করেন তিনি সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হন — এতে কোনোপ্রকার সংশয় নেই।।২১।।
বিভিন্নাকৃতি ডাকিনী, পিশাচ এবং রাক্ষস এইসব তাকে পীড়াপ্রদান করতে পারে না। এছাড়া অন্যান্য ভীষণ জীবও তার কোনো ক্ষতি করতে পারেনা।।২২।
সূর্যোপাসক শত্রুনাশ করে তার প্রতি বিজয় প্রাপ্ত হন। হে বীর, তাকে কোনো প্রকার রোগ, পীড়া বা আপদ স্পর্শ করতে পারে না।।২৩।।
সূর্যোপাসক মনুষ্য ধন, আয়ু, যশ, বিদ্যা, অতনু, প্রভা এবং শুভ লাভ করেন। এছাড়া তার সকল মনোরথ পূর্ণ হয়।।২৪।।