পরিমিত বেশভূষা দ্বারা স্ত্রীলোক আপন সৌন্দর্য বৃদ্ধির চেষ্টা করিলে আমাদের খারাপ লাগে না। কিন্তু কেহ বিশেষ কোনো হাবভাবভঙ্গি অনুশীলন করিয়া রূপচ্ছটা বিকাশ করিবার চেষ্টা করিতেছে ইহা জানিতে পারিলেই আমাদের অত্যন্ত খারাপ লাগে এবং অধিকাংশ স্থলে রূপসীর উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়। ইহার কারণ কী? সৌন্দর্য আমাদের মনে পূর্ণতার ভাব আনয়ন করে, পূর্ণতার সহিত চপলতার যোগ নাই; পূর্ণতার মধ্যে একটি বিরাম আছে। পরিমিত বসনভূষণ আমাদের মনকে নিমেষে উত্তেজিত করে না– রূপের সহিত মিলিয়া মিশিয়া একটি পরিপূর্ণতা আমাদের সমক্ষে আনয়ন করে। এইজন্য সর্বত্র বলে লজ্জা স্ত্রীলোকের ভূষণ। লজ্জা অর্থে সংযম, সামঞ্জস্য, বিরাম। কোনো প্রকার গতিচাপল্য বা উচ্চস্বর প্রভৃতি যাহাতে সৌন্দর্যের শোভন সামঞ্জস্য, বিরাম। কোনো প্রকার গতিচাপল্য বা উচ্চস্বর প্রভৃতি যাহাতে সৌন্দর্যের শোভন সামঞ্জস্য নষ্ট করে তাহা নির্লজ্জতার অঙ্গ। এই হিসাবে অত্যধিক অলংকার বেং অতি রঙচঙ নির্লজ্জতা। বিবসন নিশ্চল প্রশান্ত গ্রীক প্রস্তরমূর্তির মধ্যে একটি আশ্চর্য সসম্ভ্রম সলজ্জ ভাব আছে– কিন্তু বিস্তর বাহার-করা বাসাচ্ছাদিতা ভঙ্গি-নিপুণা রূপসীর মধ্যে তাহা নাই। চেষ্টার ভাব পূর্ণতার ভাবকে হ্রাস করে– বসনভূষণ অপেক্ষা হাবভাবে অধিক চেষ্টা প্রকাশ পায়– মন প্রতিক্ষণে প্রশ্ন করে এমন সময়ে হাত কেন নাড়িল, অমন সময় ঘাড় কেন বাঁকাইল, যদি তাহার কোনো স্বাভাবিক উদ্দেশ্য না খুঁজিয়া পায় তবে তখনই বুঝিতে পারে তাহা সৌন্দর্য-বৃদ্ধির চেষ্টা; এবং মন বলে সৌন্দর্যের সহিত চেষ্টার তো কেনো যোগ নাই। বলের সহিত সৌন্দর্যের প্রভেদ তাহাই। চেষ্টা হইতে চেষ্টার জন্ম হয়। বলের মধ্যে চেষ্টা আছে, এইজন্য সেই চেষ্টাকে প্রতিহত করিবার জন্য স্বভাবতই আমাদের মনে চেষ্টার উদয় হয়। এইজন্য বলের অধীন হইতে আমাদের লজ্জা বোধ হয়, দাসত্ব বলিয়া জ্ঞান হয়, তাহার মধ্যে পরাজয় অনুভব করি। নিশ্চেষ্ট নিরস্ত্র সৌন্দর্যের নিকট আমরা নিশ্চেষ্ট নিরস্ত্র ভাবে আত্মসমর্পণ করি। তাহার মধ্যে যখনই চেষ্টা দেখি তখনই তাহা বলে সামিল হইয়া দাঁড়ায়, তৎক্ষনাৎ আমাদের মন সচেতন হইয়া তাহার বিরুদ্ধে বদ্ধপরিকর হয়। “দেখি, কে হারে কে জেতে’ এই ভাবটাই প্রবল হইয়া উঠে।
পারিবারিক স্মৃতিলিপি পুস্তক