সোনোরানের বিষ-ব্যাং – রাজেশ বসু
বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় গৌরদাদু বারণ করেছিলেন। ‘আজ আর বেরসনি রূপু। আকাশে গতিক সুবিধের না। মেঘ করেছে খুব। ঝড়বাদলে পড়বি।’ তা রূপু শুনলে তো। দাদুর নড়বড়ে সাইকেলটা নিয়ে ‘বেশি দূরে যাব না’ বলে বেরিয়ে পড়েছিল। আসলে কলকাতা থেকে এখানে এসে এত ভালো লেগে গিয়েছে রূপুর। কী সুন্দর শান্ত সবুজ জায়গা কত গাছপালা, পুকুর, পাখি, মিষ্টি ঠান্ডা বাতাস। শরীরমন জুড়িয়ে যায় একদম।
সত্যি কী বুদ্ধি করে গৌরদাদু এখানে বাড়ি করেছিলেন। গৌরদাদু আসলে রূপুর বাবার কাকা। কলকাতায় চাকরি করলেও বাড়ি করেননি সেখানে। অবসরের পর এই গ্রামে এসে বাড়ি করেছেন। দুটি মাত্র মানুষ। গৌরদাদু আর তার খুড়তুতো বোন মিমিপিসি। ভাইবোনে কেউ বিয়ে-থা করেননি। পিসিও চাকরি করতেন। দাদু বাড়ি করার পর চাকরি ছেড়ে দাদার কাছেই চলে এসেছেন। দুর্দান্ত রান্না করেন পিসি। একবার খেলে জিভে আর আঙুলে তার স্বাদ আর গন্ধ থেকে যাবে বহুদিন। স্বভাবতই খুব আনন্দ রূপুর। ভাগ্যিস এসেছিল এখানে। আসলে গরমের ছুটিতে এবার গ্যাংটকে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাবার অফিসে কাজ পড়ে যাওয়াতে সে পরিকল্পনা বাতিল হয়ে গেল। এমনসময় গৌরদাদুর চিঠি এসে হাজির। দাদুর নতুন বাড়িতে ওরা যদি ক’দিন কাটিয়ে যায় এসে। বাবা তো আসতে পারবেন না। শেষে মা-বাবা এসে দু’সপ্তাহের জন্যে রেখে গিয়েছেন ওকে।
এই ক’দিনে গ্রামের কয়েকজনের সঙ্গে বন্ধুত্বও হয়ে গিয়েছে রূপুর। তাদের সঙ্গে দল বেঁধে ফুটবল কাবাডি সব চলছে চুটিয়ে। আজও রূপু ঠিক করেছিল মিঞাপুরের মাঠে গিয়ে ফুটবল খেলবে জমিয়ে। মাঠটা রূপুদের বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে। জোর প্যাডেলে সাইকেল চালাচ্ছিল ও। তখনই বিপদটা ঘটল। দাদুর কথা সত্যি করে হঠাৎই ঝড় উঠল দাপিয়ে। সেই সঙ্গে ম্যাজিকের মতো বিকেল সাড়ে চারটেতেই যেন সন্ধে সাড়ে-ছটার অন্ধকার নেমে এল হঠাৎ। পঞ্চুকাকার মুদির দোকানের সামনে কমলকে দেখে থামল রূপু। ওও রূপুর সঙ্গে খেলে। ওরই বয়সি। পড়েও এক ক্লাসে। নাইনে।
কমল বলল, ‘কোথায় যাচ্ছ রূপু? জানো না আজ খেলা হবে না। বল ফেটে গেছে।’
‘এ বাবা।’ বলল রূপু, ‘আর বল নেই?’
‘না। ওটাই জুড়তে হবে। তবে আকাশের যা অবস্থা। বল জুড়তে কাউকে পেলে হয়। তার চেয়ে একটা কাজ করা যাক, জলপিড়ির চরে যাই। এ সময়ে অনেক কাঁকড়া ওঠে। ধরি গিয়ে।’
কথাটা শুনেই রোমাঞ্চ হল রূপুর। ধরবে কী করে, আনবেও বা কীসে? কমলকে বলতে সে বলল, ‘তুমি চল না। দেখবে গিয়ে। চটের একটা থলি না হয় নিয়ে নিচ্ছি পঞ্চুকাকুর দোকান থেকে।’
দু’ একটি ফোঁটা করে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তবু ব্যাপারটায় এত উত্তেজনা আছে, রূপু রাজি হয়ে গেল। আসলে সত্যি বলতে ওর নিজেরও এখন একটুও বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করছে না। চুপ্পুস হয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে। কলকাতায় বৃষ্টিতে ভেজার কথা ভাবতেই পারে না একদম। একটু বৃষ্টির জল গায়ে লেগেছে কি মায়ের বকুনি ‘জল গায়ে লাগিও না রূপু, ঠান্ডা লেগে যাবে। সামনে ইউনিট টেস্ট।’
এখানে এই মুহূর্তে বারণ করার কেউ নেই। পঞ্চুকাকার দোকান থেকে একটি পুরনো চটের ব্যাগ চেয়ে নিয়ে কমলকে সাইকেলের কেরিয়ারে বসিয়ে জোরে প্যাডেল করতে শুরু করল রূপু। জলপিড়ির চরে এর আগে একবারই এসেছে ও। একটু দূর বটে। গ্রামের একদম শেষ সীমানায়। নদীর ওপারে হদিসপুরের জঙ্গল। গৌরদাদুর সঙ্গেই এসেছিল রূপু। বেশ নিঝুম জায়গা। কাছেপিঠে জনবসতিও নেই খুব একটা। বাড়ি বলতে দেড়শো বছরের পুরনো সিংহনিবাস। হদিশপুরের জমিদার হর্ষক্ষপ্রসাদ সিংহ ছিলেন সে বাড়ির মালিক। তিনি গত হয়েছেন অনেককাল। বংশধর যা ছিল গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছ শহরে। শরিকি সম্পত্তির জন্য রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি মোটেই। হানাবাড়ি হয়ে পড়েই ছিল। শেষে বছরটাক আগে বর্তমান মালিকেরা বাড়িখানি বিক্রি করে দেন। গোলোকবিহারী সামন্ত নামে এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক বাড়িটি কেনেন। এ তল্লাটে সকলেই বলে গোলোকবাবু লোকটিও নাকি বেশ খ্যাপাটে গোছের। দিনের বেলা ঘুমোন। আর সারা রাত জেগে কাজ করেন। কাজ বলতে গবেষণা। ভদ্রলোক নাকি বিজ্ঞানী। বহুদিন বিদেশে ছিলেন। বিজ্ঞানের নানান বিষয়ে অগাধ জ্ঞান। নির্বিঘ্নে গবেষণা করতে এই গ্রামে বাড়ি করে চলে এসেছেন। দেশি-বিদেশি পাঁচরকম পত্র-পত্রিকা আসে তার বাড়ির ঠিকানায়। সত্যি কথা বলতে কী, অখ্যাত এই গ্রামটি তাঁর কারণেই যেন বাইরের লোকজনের নজরে এসেছে খানিক।
জলপিড়ি নদীর কাছাকাছি হতে কাণ্ডটা ঘটল। বৃষ্টি যেমন নামল হুড়মুড়িয়ে তেমনি ফটাস শব্দে রূপুদের সাইকেলের টিউবটিও ফাটল সময় বুঝে। সেইসঙ্গে শুরু হল কড়কড় বাজের আওয়াজ। এমন অবস্থায় খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা মানে ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনা। সাইকেল হাতে নিয়েই ছুটতে শুরু করল দুই বন্ধু। একটু এগোতে গাছগাছালি ঘেরা সিংহনিবাস। দু’তলা বাড়িটিকে খানিক মেরামত করে নিয়েছেন ভদ্রলোক। ভাঙা পাঁচিল জুড়েছেন। আগাছা ঝোঁপঝাড় সাফসুতড়ো করেছেন। দেওয়ালের প্রাচীন পলেস্তারা খসিয়ে নতুন প্লাস্টার করেছেন। ভাঙা দরজা জানালাগুলি বদলিয়েছেন। কেবল লোহার ফটকটিকে এখনও সারাননি। আধভাঙা হয়েই পড়ে আছে। সেই ভাঙা ফটক দিয়ে রূপুরা ঢুকে পড়ল সিংহনিবাসে। পাঁচধাপ সিঁড়ি বেয়ে উঠে এল বারান্দায়। সাইকেলটিও তুলে ফেলেছে। ঠেস দিয়ে রেখেছে দেওয়ালে। মাথার ওপরে বারান্দার ছাত আছে বটে। কিন্তু দমকা বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টির ছাঁট চাবুকের মতো এসে লাগছে চোখেমুখে।
কমল বলল, ‘কী বিপদে পড়লাম বল তো, তোমার দাদু নিশ্চয় খুব চিন্তা করছেন।’
দাদুর কথা ভেবে রূপু একটু শঙ্কিত ঠিকই। বাড়ি ফিরলে বকবেন খুব। দাদুর কথার অবাধ্য হয়েছে সে। তবে এই মুহূর্তে ওর কিন্তু দারুণ লাগছে। দুমদাম বাজ পড়ছে বলে বৃষ্টিতে ভেজা হল না বটে, তবে প্রকৃতির এমন উথাল-পাথাল তাণ্ডবময় রূপ গোটা শরীর দিয়ে উপলব্ধি করার মজাই আলাদা। সে কথাই বলতে যাবে, এমন সময় দুড়ুম করে সাইকেলটা উলটে পড়ল শানবাঁধানো মেঝেয়। আর তার একটু পরেই কি আশ্চর্য, খটাস করে খুলে গেল বারান্দার দরজাটা। ভিতরের নরম সাদা আলো এসে পড়ল ওদের ওপর।
দরজায় একটি অদ্ভুতদর্শন লোক। পাঁশুটে মতো গায়ের রং। ঢিপির ফুলে ওঠা চোখে পাতা। ঠোঁটদুটি এত বড়ো যে প্রায় কান ছুঁয়ে ফেলে আরকি। খালি গায়ে অসংখ্য ছোটোবড়ো আঁচিল। পোশাক বলতে শুধু একটি কালো রঙের বারমুডা। সবচেয়ে যেটা চোখে লাগছে, তা হল লোকটির অস্বাভাবিক লম্বা পা। পুরোপুরি সোজা না হয়ে দাঁড়িয়ে হাঁটু মুড়ে একটু ঝুঁকে দাঁড়িয়েছে সে। ওদেরকে দেখে গোঁক-গোঁক আওয়াজে কী একটা বলল। বোঝা গেল না ঠিক।
কমল বলল, ‘রূপু চল এখান থেকে চলে যাই। লোকটা আমাদের পছন্দ করছে না মনে হচ্ছে।’
কথাটা ঠিকই। লোকটির চোখমুখের হাবভাবে তাইই মনে হয়। রূপুর যদিও যেতে ইচ্ছে করছে না। গোলোকবিহারীবাবুর কথা ইতিমধ্যেই অনেকের কাছে শুনেছে ও। একজন বিজ্ঞানীকে কাজ থেকে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব। কমলকে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল ও, ‘ইনিই গোলোকবাবু?’
‘না রে।’ বলল কমল, ‘তাকে আমি চিনি। হপ্তায় একদিন করে সজনেতলার হাটে আসেন। গোটা হপ্তার বাজার নিয়ে যান ওই দিনে। ইয়া লম্বা। দুধের মতো গায়ের রং, মুখভরতি সাদা দাড়ি…’ —কমলকে থামতে হল। কারণ খালি গা লোকটির ঠিক পিছনে সাদাকালো ডোরাকাটা হাউজকোট পরা যিনি এসে দাঁড়িয়েছেন তিনিও একজন দীর্ঘকায় ব্যক্তি, মুখভরতি সাদা দাড়ি। লম্বা কাচাপাঁকা চুল। টিকোলো নাক। চোখে সরু ফ্রেমের চশমা। বলা বাহুল্য ইনিই এই বাড়ির বর্তমান মালিক বিজ্ঞানী গোলোকবিহারী সামন্ত।
‘টোডি ভিতরে যাও তুমি।’ গম্ভীর গলায় হুকুম দিলেন তিনি। তারপর ওদের দিকে তাকিয়ে বেশ মিহি স্বরে বললেন ‘আয় আয়, এই দুর্যোগে বাইরে দাঁড়িয়ে কেন?’
কমল ইতস্তত করছিল। গাঁয়ের লোকের কাছে সুনাম নেই গোলোকবিহারীর। দাম্ভিক অহংকারী মানুষ। কারও সঙ্গে মেশেন না। কমল জানত একাই থাকেন, এখন দেখছে আর একজন কাজের লোকও আছে।
‘কী হল? ভাবছিস কী? ঢুকে পড়, কী নাম তোদের?’ তাড়া দিলেন গোলোকবিহারীবাবু। নাম বলে আমতা-আমতা পায়ে ঘরে ঢুকল ওরা।
বেশ বড়োসড়ো ঘর। সুন্দর করে সাজান। বাড়ি পুরনো বলেই হয়তো সাবেকি আমলের আসবাবপত্রে সাজানো হয়েছে ঘরটি। মখমলে ঢাকার সোফার মতো দেখতে একটি বড়ো আরামকেদারায় বসল দু’জন। সামনে একটি কাঠের কারুকার্য করা গোলটেবিল। সেটার উলটোদিকের সোফায় বসলেন গোলোকবিহারীবাবু। এতবড় ঘরে একটিমাত্র ঠোটর টিউবলাইট জ্বলছে। আলো তাই একটু কম কম। গোলকবিহারীবাবু বললেন, ‘বল এবার তোদের কথা? কে কোন ক্লাসে পড়িস?’
কমল একদম চুপ হয়ে গিয়েছে। রূপু বলল, ‘আমরা দুজনেই নাইনে পড়ি।’
‘বা বা, বেশ বেশ, কোন স্কুলে?’
স্কুলের নাম বলতে গিয়ে রূপুকে জানাতে হল ও এখানে বেড়াতে এসেছে। ওর স্কুল কলকাতায়। গোলোকবিহারী বললেন ‘বেশ বেশ।’ তারপর একটু গম্ভীর হয়ে কি যেন ভাবতে শুরু করলেন। বাইরে ঝড়বাদলের আওয়াজ একটু কমে এসেছে মনে হচ্ছে। অবশ্য দরজা বন্ধ করে দেওয়াতেও শব্দ কম মনে হতে পারে। রূপুর খুব ইচ্ছে করছে গোলোকবিহারীবাবু কী গবেষণা করছেন জানতে।
গোলোকবিহারীবাবু বললেন, ‘চা কফি খাস তো? আলুর চপ বেগুনি পেঁয়াজি এসব? আজকালকার ছেলেদের তো আবার এসব সেকেলে বাঙালি খাবার চলে না। বিশেষ করে রূপুর মতো যারা শহরে থাকে।’
রূপু বলে উঠল, ‘মোটেই না। বেগুনি পেঁয়াজি আমিও ভালোবাসি। চা কফিও খাই মাঝে-মাঝে।’
‘বটে, দাঁড়া টোডিকে ডাকি তবে। বলে দিই জিনিসগুলো চটপট বানিয়ে ফেলতে। দারুণ হাত ওর। নাইনটিন সেভেনটিথ্রি-তে তিনমাস কোস্টারিকা ছিলাম। তখনই ওকে দেখি। আসল নাম ছিল কারাজো। সে নামেও ডাকি কখনো-সখনো। তা আমার সব ‘কার্য’-ই তো করে ও।’ ঝকঝকে দাঁত বের করে হেসে নিলেন গোলোকবিহারীবাবু। দাড়িগোঁফ চুলের বেশিরভাগ সাদা হলেও চামড়া যথেষ্টই টানটান। বয়স বোঝা যায় না ঠিক। এখন সাজানো দুপাটি দাঁত দেখে মনে হচ্ছে বয়সটা তেমন বেশি নয় হয়তো। কিন্তু বলছেন সেভেনটিথ্রিতে কোস্টারিকা ছিলেন!
‘টোডি অনাথ ছিল। যখন ওকে সঙ্গে নিই, তখন ওর মোটে ছ’-সাত বছর বয়স। তখনি কী শক্তি গায়ে। আসলে এমনিতেই মুল্যাটোরা শক্ত-সমর্থ হয়। মুল্যাটো কারা জানিস তো?’
‘জানি।’ বলল রূপু, ‘বাবা মায়ের মধ্যে একজন যদি শ্বেতাঙ্গ আর অন্যজন কৃষ্ণাঙ্গ হয়।
‘গুড। গুড। আজকালকার ছেলেরা জানে অনেক কিছু।’
কমল চুপ করে শুনছিল। হঠাৎ বলল, ‘আচ্ছা ও কি কথা বলে না? মানে বাংলা জানে ও?’
‘তেরটা ভাষা জানে ও। ইদানীং একটু অসুবিধায় আছে বলে বলতে পারে না। সে অন্য কথা। দাঁড়া ডাকি ওকে।’
‘টোডি’ বলে হাঁক দিলেন গেলোকবিহারীবাবু। একডাকেই ঘরে ঢুকল সে। অবশ্য একডাকে না বলে বলা যায়, একলাফে। লোকটির হাঁটাচলাও কেমন অদ্ভুতরকম। লাফ দিয়ে দিয়ে চলে যেন। রূপু জিজ্ঞেস করেই ফেলল, ‘ওর কি কোনো শারীরিক অসুবিধা আছে?’
‘জন্মগত নানান অসুবিধা ছিল ওর। আমি তো তাও চিকিৎসা করে অনেকটা সারিয়ে এনেছি।’
কমল বলল, ‘আপনি কি ডাক্তার? সবাই বলে যে সায়িন্টিস্ট—’
‘কেন ডাক্তাররা কি সায়িন্টিস্ট নয়? আরে বোকা যারাই সায়েন্স নিয়ে পড়ে আছে তারাই সায়িন্টিস্ট। তবে লোকে আমাকে কী বলে জানি না, কেবল বলতে পারি, বাষট্টি বছর ধরে বিজ্ঞান নিয়ে আছি। একসময় বিজ্ঞানের টানেই এ দেশ ছেড়েছিলাম। ফিরেও এসেছি আবার। যাকগে, টোডি খাবার বানাক, চল এই ফাঁকে আমার ল্যাবটা দেখিয়ে আনি তোদের।’
কমল বলল, ‘বরং আমরা এবার যাই। অনেকটা রাস্তা চলে এসেছি। সাইকেলের টিউব ফেটেছে। হেঁটে ফিরতে দেরি হয়ে যাবে। বাড়িতে বকবে।’
‘টিউব টোডি জুড়ে দেবে। চিন্তা করতে হবে না।’ উঠে দাঁড়িয়েছেন গোলোকবিহারীবাবু। ‘একবার এসেই পড়েছিস যখন দেখে যা অ্যাদ্দিনে কী করলাম আমি।’
কমলের ইচ্ছে নেই। ফিসফিস করে রূপুকে বলল, ‘চলে গেলেই ভালো হত রে।’
‘চল না। সাইকেল তো টোডি সারিয়ে দেবে। জোর প্যাডেলে চালিয়ে তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাব।’
‘আয় আয় দেরি করিস না।’ ভিতরের ঘরে যাওয়ার দরজায় গিয়ে হাঁক দিলেন গোলোকবিহারীবাবু।
এ ঘরটিও বড়ো। একটিমাত্র রিডিংলাইট জ্বলছে কোণার একটি টেবিলে। তবু তাতেই বোঝা যাচ্ছে ঘর জুড়ে নানারকমের এবং নানান ধরনের গবেষণার জিনিসপত্রে ভরতি। এছাড়া রয়েছে দেওয়াল জুড়ে বইয়ের তাক। এবং সেগুলির সবকটিই মোটা মোটা বইয়ে ঠাসা। ঘরের মেঝেতেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য বই, ম্যাগাজিন, চিঠিপত্র। ঘরের ডানদিকে আর একটি দরজা। তার মুখেই দু’তলায় ওঠার কাঠের সিড়ি। সেই সিড়ি দিয়ে দু’তলায় উঠে এল ওরা। সামনে ছোটো প্যাসেজ। দুদিকে পরপর ঘর। সবকটিরই দরজা বন্ধ। গোলোকবিহারীবাবু ডানহাতে হাউজকোটের পকেট হাতড়ে একগোছা চাবি বের করলেন। তালাখুলে ডানহাতের প্রথম ঘরটিতে ঢুকলেন তিনি। পিছনে রূপু আর কমল। সুইচ টিপে লাইট জ্বালাতে নরম সাদা আলোয় ভরে উঠল গোটা ঘর।
বিকার টেস্টটিউব বুনসেন বার্নারের মতো কেমন অ্যাপারাটাস তো আছেই, এছাড়াও এমনসব যন্ত্রপাতি আছে যা এই প্রথম দেখছে রূপু। গোলোকবিহারীবাবু ঠিক কি নিয়ে গবেষণা করছেন বোঝা যাচ্ছে না। তবে যন্ত্রপাতি ছাড়াও ঘরভরতি কাচের জারে নানারকমের প্রাণী দেখা আছে। কীটপতঙ্গ থেকে শুরু করে সাপ ব্যাং পিছে কাঁকড়া কেঁচো কেন্নো গিরগিটি, এরকম প্রাণী তো বটেই, কয়েকটি অদ্ভূত দেখতে গাছ-গাছড়াও রয়েছে। প্রাণীগুলির বেশিরভাগই মৃত। ফরম্যালিন জাতীয় কোনো দ্রবণে চুবিয়ে রাখা হয়েছে। কয়েকটি জীবিত প্রাণীও আছে। এর মধ্যে ব্যাঙের সংখ্যাই বেশি। কোনোটি জ্যান্ত। কোনোটি মৃত। কোনোটি বা সদ্য কাটা হয়েছে। পেট চেরা অবস্থায় পড়ে আছে ডিসেকশন ট্রে-তে। আর ব্যাঙের যে এত রকমের কালার হয়, এই প্রথম দেখছে রূপু। লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, সোনালি, বাদামি, কমলা কোনো রংই বাদ নেই। তাদের আকারও বিস্ময়কর। কোনোটি লম্বায় দু’ইঞ্চি তো কোনোটি প্রায় ফুটখানেক।
‘অবাক হচ্ছিস তো?’ বলে উঠেছেন গোলোকবিহারীবাবু। ‘পৃথিবীতে কতরকম প্রজাতির ব্যাং আছে জানিস? সাড়ে-চারহাজারের ওপর। গত চল্লিশবছর ধরে এদের নিয়ে কাজ করছি আমি।—এদিকে আয়,’ একটি কাচের জারের কাছে সরে এলেন তিনি, নীলরঙের একটি ব্যাং দ্রবণে চোবানো আছে সেটিতে, ‘এটা হল পয়জন অ্যারো ফ্রগ। সেন্ট্রাল আর সাউথ আমেরিকার রেনফরেস্টে পাবি। এদের চামড়ায় আছে মারাত্মক বিষ। আদিবাসীরা এই ব্যাং ধরে তিরের ফলাটা ঘসে নেয় এদের চামড়ায়। তারপর বিষাক্ত সেই তির দিয়ে শিকার করে পশুপাখি। আমি জ্যান্ত এনেছিলাম। বাঁচল না। এখানকার কীটপতঙ্গ পছন্দ হচ্ছিল না মনে হয়। না খেয়েই মারা গেল।’
রূপু আর কমল অবাক হয়ে শুনছে। দেখছে। কমল বলল, ‘পোকামাকড় ছাড়া অন্য কিছু দিতে পারতেন।’
হেসে উঠলেন গোলোকবিহারীবাবু। ‘অন্য কী? সুক্তো? না মোচার ঘন্ট? জানিস না ব্যাঙেরা নিরামিষ পছন্দ করে না। পৃথিবীর প্রায় সব প্রজাতির ব্যাংই মাংসাসি। বড়ো অদ্ভুত প্রাণী রে এরা। জল অব্দি খায় না।’
রূপু বলে উঠল, ‘জল আলাদা করে খাবে কেন? ওদের স্কিনটাই পারমিয়াবল। চামড়া দিয়েই জল সরাসরি ওদের শরীরে ঢুকে যায় বলে আলাদা করে জল খাওয়ার দরকার পড়ে না। এমনকী শ্বাস-প্রশ্বাসও ওরা চামড়া দিয়েই করে।’
‘বা বা। ভেরি গুড। অনেক কিছু জানিস দেখছি তুই।’ রূপুর পিঠ চাপড়ে বললেন গোলোকবিহারীবাবু। কমল বলল ‘আমিও জানি।’
‘জানবি না কেন, আয় আর একটা ব্যাং দেখাই,’ বলে সেই একফুট মতো লম্বা ব্যাংটির দিকে আঙুল দেখলেন তিনি। এটিও বড়ো একটি কাচের পাত্রে তরল দ্রবণে রাখা। গায়ের রং বাদামি মতো। ‘গোলায়েথ ফ্রগ। বৈজ্ঞানিক নাম conraua goliath, পশ্চিম আফ্রিকার ক্যামেরুন থেকে এনেছিলাম। লার্জেস্ট ফ্রগ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড। তিনকিলো ওজন হয়েছিল যখন মারা গেল।’
‘আপনি কি ব্যাঙের ওপরে গবেষণা করছেন?’ কমল হঠাৎ বলল।
‘বলতে পারিস।’ বললেন গোলোকবিহারীবাবু, ‘আমার উদ্দেশ্য হল উন্নতমানের প্রাণ সৃষ্টি করা। যা পৃথিবীর সবরকম প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করতে পারবে। প্রতিটি জীবের মধ্যেই প্রকৃতি কিছু না কিছু বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছে। জীবদেহের জিনের মধ্যে লুকিয়ে আছে সেসব। এ ব্যাপারে আমি যা করেছি জানবি কোনো লালমুখো নোবেল-পাওয়া সাহেব তা কল্পনাও করতে পারবে না।’
রূপু বলল, ‘জিন ট্রান্সপ্ল্যান্ট, মানে জিনের প্রতিস্থাপন?’
‘ঠিক তাই।’ বললেন গোলোকবিহারীবাবু, ‘তোরা জানিস তো জিন কাকে বলে?’
জিন কী জানবে না ওরা। জীববৈশিষ্ট্যের ক্ষুদ্রতম একক। জীববিজ্ঞানের বইয়ে অনেক কথাই বলা হয়েছে জিন নিয়ে। গড়গড় করে অনেকটা বলে ফেলল দু’জন।
এমনসময় পিছন থেকে গোঁক-গোঁক আওয়াজ। টোডি। ইশারাতে যা বোঝাল খাবার রেডি। গোলোকবিহারীবাবু বললেন, ‘তোরা একটু দাঁড়া। আমি আসছি।’
ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন তিনি। রূপু দেখল হাউজকোটের পকেট থেকে মোবাইল বের করছেন। ফোন এসেছে কারও। ভাইরেশন মোডে ছিল বলে রূপুরা শুনতে পায়নি। রূপু লক্ষ করল গোলোকবিহারীবাবুর মুখের সৌম্যভাবটা হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। চোয়ালটোয়াল শক্ত হয়ে মুখটা কেমন কঠিন হয়ে পড়ল।
ফোন বের করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন তিনি। ইংরেজিতে কথা বলছেন। একটু উত্তপ্ত আলোচনা। গোলোকবিহারীবাবুর পিছন-পিছন টোডিও বেরিয়ে গিয়েছে। রূপু দেখল সে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে গেল। অন্যের কথা শোনা অনুচিত। তবু রূপুর কৌতূহল হচ্ছে ভীষণ। দেওয়াল ঘেঁষে দরজার ঠিক পাশটাতে দাঁড়াল ও। সব কথা বোঝা না গেলেও কয়েকটি শব্দ কানে এল। জিন-টিন নিয়ে তো বলছেনই, সঙ্গে সোনোরান ডের্জাট, বুফোটক্সিন, ডলার, পেমেন্ট,—এরকম সব শব্দও কানে আসছে। জিনের ওপর কাজ করছেন, তাই নিয়ে কথা বলবেন, কিন্তু সোনোরান মরুভূমির প্রসঙ্গটা বুঝতে পারল না রূপু। আর টক্সিন মনে তো বিষ, বুফোটক্সিন-টা কী? কুনোব্যাং বুফোনিডি ফ্যামিলির অন্তর্গত, তবে কী কুনোব্যাঙের বিষ কে বুফোটক্সিন বলছেন? কৌতূহলী হয়ে দরজার বাইরেই বেরিয়ে এল রূপু।
—এখন গোলোকবিহারীবাবু বলছেন,…হ্যাঁ হ্যাঁ বলছি তো সব রেডি..না না কারাজোর ওপরে অ্যাপ্লাই করা যাবে না…একটু সময় দাও…মনে হচ্ছে অন্য কাউকে পেয়েছি…হ্যাঁ হ্যাঁ কী এফেক্ট হয় জানাব…
বলতে বলতে গোলোকবিহারীবাবু পাশের ঘরটির দরজার লক খুলে ঢুকে পড়লেন। রূপুর বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল। কারাজো মানে টোডির ওপরে কী অ্যাপ্লাই করা হয়েছিল? সে কারণেই কি ও কথা বলতে পারে না? আর এখনই বা কী অ্যাপ্লাই করবেন? কাকে পেয়েছেন, — ওদের দু’জনকে? তাতে ওদের দুজনেরও তো ক্ষতি হতে পারে। হঠাৎই ভয়ে হাত-পা আড়ষ্ট হয়ে এল রূপুর। কমলকে বলবে কী? চিন্তা করল রূপু। থাক। ও যা ভীতু। বিপদ বেশি বুঝলে বলবে তখন। আসলে কমল তো আর রূপুর মতো কাঁড়িকাঁড়ি দেশিবিদেশি গোয়েন্দা গল্পের বই পড়েনি। কিংবা রূপুর মতো অনুসন্ধিৎসার বাতিকও নেই ওর। তাই ব্যাপারগুলো অন্যচোখে দেখতে পারছে না।
কমল ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। ‘তুই একটু দাঁড়া। আমি চট করে দেখে আসি উনি ওই ঘরে কী করছেন।’ বলল রূপু।
‘না রে। ওভাবে যাওয়া ঠিক না। আমাদের তো যেতে বলেননি।’
‘তুই দাঁড়া না।’ বলেই রূপু এগিয়ে গিয়েছে। এ ঘরের দরজাটা অন্যরকম। কাঠের বদলে স্টিল বা অন্য ধাতুতে তৈরি। এয়ারটাইট করার জন্যে কী? কে জানে। দরজায় একটু ঠেলা দিতেই খুলে গেল পাল্লাটা। দমটা ছাড়ল রূপু। ভাগ্যিস ভিতর থেকে লক করে দেননি। ঘরে ঢুকে পড়ল ও। ভিতরটা যথেষ্টই ঠান্ডা। কোনো একটা মেশিন চলছে রিনরিন শব্দে। খুব হালকা সাদা একটা আলো জ্বলছে ঘরে। ঘর জুড়ে অসংখ্য যন্ত্রপাতি। তবে আগের ঘরটার মতো বিকার বা বুনসেন বার্নারের মতো পরিচিত এটি যন্ত্রও নেই। এখানে আরও জটিল-জটিল সব যন্ত্র। কয়েকটিতে কোম্পানির নামের সঙ্গে মেশিনেরও নাম লেখা আছে। তাতেই বোঝা যাচ্ছে, জিন পালসার, ইলেকট্রোফোরেসিস অ্যানালাইজার, চার্ট রেকর্ডার ইত্যাদি।
গোলোকবিহারীবাবু ঘরের একদম কোণায় বিশাল বড়ো একটা স্টিলর্যাকের সামনে একটা গোল ফাইবারের টুলে বসে কিছু করছেন। র্যাকভরতি নানা ধরনের বাক্স। গোলোকবিহারীবাবু নাইলন জাতীয় সাদা একটা কানঢাকা পোশাক পরে নিয়েছেন। মুখে মাস্ক, দু’হাতেও গ্লাভস। ওনার সামনেই একটি বাক্স, বা বলা যেতে পারে টেস্টটিউব কেস। কারণ ভিতরে দশ-বারোটি টেস্ট-টিউব দেখা যাচ্ছে। প্রত্যেকটিই তরল পদার্থে ভরতি। গোলকবিহারীবাবু ডানহাতে লম্বা একজা সিরিঞ্জ থেকে বাঁ-হাতে ধরা একটি টেস্টটিউবে কিছু ফেলছেন। রূপু ঢুকেছে টের পাননি। সাহস করে আর একটু এগোতে টেস্টটিউব কেসটির লেবেলটা দেখতে পেল ও : 5 MeO-DMT / bufo alvarius
‘5 MeO-DMT’ —কী বুঝতে পারার কথা নয়, তবে বুফো আলভারিয়াস ব্যাঙেরই কোনো একটি প্রজাতির বৈজ্ঞানিক নাম হতে পারে। টেস্টটিউবে তবে এই ব্যাঙেরই জিন সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে? এই জিন নিয়ে গোলোকবিহারীবাবু গবেষণা করছেন? উন্নত প্রাণী সৃষ্টি করবেন বলেছিলেন। সে কী তবে এই ব্যাঙের জিন দিয়ে? এমনকী সম্ভব? ব্যাঙের জিন কী মানুষের দেহে প্রয়োগ করা যায়,—কে জানে। গোলোকবিহারীবাবু হয়তো পেরেছেন। সেই জন্যেই বললেন তিনি যা করেছেন মানুষের কল্পনারও অতীত। টোডি কী তাই অমন ব্যাঙের মতো লাফিয়ে চলে? এবং ওই জন্যেই কী ওর নাম টোডি? টোড মানেও তো ব্যাং। টোড থেকে টোডি। ওর শরীরের অস্বাভাবিক পরিবর্তনটাও কী গোলকবিহারীবাবুর পরীক্ষার ফল? এবার কী তিনি ওদের ওপর পরীক্ষা করবেন? সেই জন্যেই বললেন, অন্য কাউকে পেয়েছি।…আর চিন্তা করতে পারল না রুপু। ভয়ে ওর হাত-পা ঠান্ডা হয়ে এল।
গোলোকবিহারীবাবুর কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। টেস্টটিউবটা কেসের মধ্যে ভরছেন। রূপু দেখল টেস্টটিউবে লম্বালম্বি লেখা রয়েছে bufotoxin-sonamon, বুকের মধ্যে হাতুড়ি পড়ল যেন। সর্বনাশ এতো জিন না, টক্সিন, মানে বিষ। ওদের ওপর এই বিষ কি প্রয়োগ করবেন উনি!—না, এখনও বনবিহারীবাবু টের পাননি। তড়িত বেগে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল রূপু। বেরতে গিয়ে কমলের সঙ্গে ধাক্কা। সে একদম দরজার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছিল।
‘পালাতে হবে, এক্ষুনি।’ বলল রূপু। কমল তো অপেক্ষাতেই ছিল। হাওয়ার বেগে সিঁড়ি দিয়ে নামল দু’জন।
বইপত্তরের ঘর পেরিয়ে বাইরের ঘরে এল ওরা। টিমটিম সেই সাদা আলো জ্বলছে এখনও। বাইরে থেকে ঝড়বৃষ্টির আর একটুও আওয়াজ আসছে না। দরজার খিলে হাত দিতে যাবে এমন সময় কে যেন দুড়ুম করে পিছনে এসে পড়ল। টোডি। গোঁক-গোঁক আওয়াজের সঙ্গে চোখের মণিটা অবিশ্বাস্য ভাবে প্রায় কপাল অবধি তুলে কিছু বলল সে। যার একটাই মানে হয়, বেরন চলবে না!
রূপুরা কী করবে ভেবে পেল না। পরক্ষণেই ঘরে ঢুকলেন গোলোকবিহারীবাবু। নীচে নেমে এসেছেন। মুখে উজ্জ্বল হাসি। মিহি গলায় মৃদু ধমক দিলেন, ‘কী ব্যাপার, কোথায় যাচ্ছিস তোরা? এক-কাড়ি তেলেভাজা হল কে খাবে সে সব।’
‘আমরা খাবো না। খিদে নেই।’ বলল রূপু।
‘তুই আমার মাস্টারল্যাবে ঢুকেছিলি, দেখলাম দৌড়ে পালিয়ে গেলি?’ জিজ্ঞেস করলেন গোলোকবিহারীবাবু।
রূপু চুপ।
‘আরে বাবা এতে ভয় পাচ্ছিস কেন, আমি নিজেই দেখাতাম। তবে কিনা না বলে ঢোকাটা ঠিক না। যাকগে, বোস তোরা, আমিই খাবারটা নিয়ে আসছি। আর একটা কথা শোন টোডির অবাধ্য হোস না, তোদের মতো দুটো পুঁচকে ছোঁকরাকে দুটি থাপ্পড়েই অজ্ঞান করে দিতে পারে ও।’ ভিতরের দিকে পা বাড়ালেন গোলোকবিহারীবাবু। শেষ বাক্যটি যে ধমকানি তা না বোঝার মতো ছোটো নয় ওরা। থমথমে মুখ নিয়ে মখমলি আরামকেদারায় এসে বসল দু’জন। টোডি একটু হাসল। রূপুর মনে হল হাসিটা ঠিক যেন ভয় দেখানোর নয়, একটু করুণ-করুণ যেন।
কমল ফিসফিসিয়ে বলল, ‘ওই ঘরটায় কি দেখলে তুমি?’
যা দেখেছে যতটা পারে সংক্ষেপে রূপু বলল ওকে। সামনের কারুকার্যকরা কাঠের সেন্টারটেবিলে একটি পেন রয়েছে। রূপু হাতে তুলে নিল। ফাইভ মিও ডিএমটি আর বুফো আলভারিয়াস, দুটোই মনে আছে এখনও। স্পেলিংটাও। টেবিলে একটি বিদেশি ম্যাগাজিনও রয়েছে, যার প্রচ্ছদ কাহিনি, মরুভূমির ব্যাং। কাজটা অনুচিত, তবু রূপু চট করে পেনটা ম্যাগাজিনের একটি পাতায় লিখে দেখে নিল, লেখা পড়ছে কিনা। ব্যাপারটা টোডির মনে হয় পছন্দ হয়নি, সে এগিয়ে এসেছে কিছুটা। রূপু একটু হেসে ম্যাগাজিনের পাতা ওলটাতে লাগল। টোডি কিছু বলল না। সে একটু পিছিয়ে একটা টুলের ওপরে বসল গিয়ে। ম্যাগাজিনের পাতা ছিঁড়ে লিখতে সাহস হল না রূপুর। নিজের বাঁ-হাতে বাংলায় লিখে নিল ফাইভ মিইও ডিএমটি / বুফো আলভারিয়াস।
‘এই যে ছেলেরা, টেস্ট দিজ বেঙ্গলি ডেলিকেসি।’ বড়ো একটি ট্রে নিয়ে এসে ঢুকলেন। সেন্টারটেবিলে ট্রে-টা রাখতে রূপু দেখল তাতে একটি বড়ো স্টিলের জাগ আর দুটি বাটি, দুটি স্টিলের চামচ আর তিনটি কাচের গ্লাস। বাটি দুটি পায়েসে ভরতি।
‘তেলেভাজাটা আর আনলাম না। ঠান্ডা হয়ে গেছে। পায়েস খা। রসগোল্লার পায়েস। খাঁটি দুধে তৈরি। আজ সকালেই করেছে টোডি। জগে আমপোড়ার শরবতও আছে। — কী হল? অত কী ভাবছিস বলত? আয় চটপট খেয়েনে।’ বললেন গোলোকবিহারীবাবু, তারপর টোডির দিকে ফিরে বললেন, ‘বারান্দায় ওদের সাইকেলটা পড়ে আছে। টিউব ফেটেছে। দ্যাখ তো চটপট জোড়া যায় কিনা।’
টোডি উঠে পড়ল সঙ্গে-সঙ্গে। হেঁটে নয়, প্রায় লাফিয়ে লাফিয়ে চলে গেল দরজার সামনে।
কমল একদম চুপ। রূপুর দিকে তাকিয়ে আছে, ও যা করবে তাই করবে সে।
‘টোডি খাবে না?’ ম্যাগাজিনটা টেবিলে রেখে জিজ্ঞেস করল রূপু।
‘না, না, ও এসব খাবার খায় না। ওর জিনিস অন্য। পায়েসের অভ্যেসটা করিয়েছিলাম, এটাই এখনও খায় একটু। তোরা খা, ও পরে খাবে ‘খন।’ বলে উঠলেন গোলোকবিহারীবাবু। বাটি দুটিতে চামচ দিয়ে এগিয়ে দিলেন ওদের দিকে।
কমল চেয়ে আছে রূপুর দিকে।
‘কি হল খা,’ তাড়া দিলেন গোলকবিহারীবাবু, ‘কী ভাবছিস ব্যাঙের বিষ খাওয়াচ্ছি তোদের? আচ্ছা এই দ্যাখ,’ রূপুর প্লেট থেকে চামচের আগায় একটু পায়েস নিয়ে আলগোছে নিজের মুখে পুরলেন।
‘খা ব্যাটারা খা এবার।’ জাগ থেকে তিনটি গ্লাসে আমের সবুজ শরবতও ঢেলে ফেলেছেন। এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায় দেখছে না রূপু। তাছাড়া গোলোকবিহারীবাবু নিজেও তো খেলেন। শরবতও ঢাললেন একই জাগ থেকে। নাঃ ও একটু বেশি ভাবছে। ভদ্রলোককে অকারণে সন্দেহ করছে না তো? খাওয়াই যাক। এক চামচ পায়েস নিয়ে মুখে দিল রূপু। সত্যি দারুণ বানিয়েছে।
‘এই তো লক্ষ্মী ছেলে।’ বললেন গোলোকবিহারীবাবু।
রূপুকে দেখে কমলও খেতে শুরু করল। কয়েকমিনিটের মধ্যে বাটি শেষ। গোলোকবিহারীবাবু অবশ্য আর খেলেন না। তিনি কেবল শরবতটাই খেলেন তারিয়ে তারিয়ে। বাইরের দরজা খুলে টোডি কাজ করছে। ওদের খাওয়ার মধ্যে একবার ভিতরে ঢুকে একটা বাক্স নিয়ে এসেছে। সাইকেল সারানোর টুকিটাকি জিনিসপত্র যে এ বাড়িতে আছে বোঝা যাচ্ছে। বৃষ্টি এখন হচ্ছে না। তবে মাঝেমধ্যে বিদ্যুতের ঝলকানি আছে।
খাওয়া হয়ে গিয়েছে। রূপু পুরোটা খেল না। কেমন একটা গা-গোলানি মতো হল হঠাৎ। শরবতও খেল কয়েক চুমুক। কমল অবশ্য সবই খেল চেটেপুটে। সে এখন হঠাৎ গান ধরেছে গুনগুনিয়ে। টোডি এসে গোঁক-গোঁক শব্দে হাত-পা নেড়ে জানাল সাইকেল রেডি।
‘চল কমল।’ বলে উঠে দাড়াতে গিয়েও বসে পড়ল রূপু। মাথার মধ্যে কেমন ঝিমঝিম করছে। শরীরটা হঠাৎই যেন খুব হালকা হয়ে গিয়েছে। ভালো লাগছে, কিন্তু কেমন একটা অন্যরকম অস্বস্তিও হচ্ছে শরীরে, এমন কখনো অনুভব করেনি ও আগে। আবার ডাকল কমলকে, ‘ওঠ রে কমল।’
কমল হেসে উঠল হো হো করে। অদ্ভুত আচরণ শুরু করেছে সে। আরামকেদারায় দু’পা উঠিয়ে বসেছে। স্কুলের প্রার্থনা সংগীতটা গাইছে চিৎকার করে। গোলোকবিহারীবাবু পকেট থেকে মোবাইল বের করে ভিডিও রেকর্ডিং করে চলেছেন ওর কাণ্ডকারখানা।
ঝিমঝিমানির মধ্যে রূপুর মনে পড়ল গোলোকবিহারীবাবু বলছিলেন, ‘সম্ভব হলে কেমন এফেক্ট হয় রেকর্ড করে রাখব।’—না, কোনো সন্দেহ নেই আর। খাবারের মধ্যে কিছু একটা মিশিয়ে খাইয়ে দিয়েছেন ওদের। বুফোটক্সিন? সর্বনাশ! কী হবে কে জানে। মনের জোরে উঠে দাঁড়াল রূপু। পা কাঁপছে। কাঁপুক। যে করেই এখুনি পালাতে হবে এখান থেকে। কমলটা বেশি খেল বলেই মনে হচ্ছে ‘এফেক্ট’টা বেশি হয়েছে ওর। শেষকালে ‘টোডি’র দশা না হয় ওর!
গোলোকবিহারীবাবু মোবাইল পকেটে পুরে বললেন, ‘যাবি তোরা? যা। তোর বন্ধুর দেখছি মাথায় ছিট আছে। সাবধানে যাস বাবা।’
গান থামিয়ে কমল হঠাৎ বলল, ‘টোডির বৈজ্ঞানিক নামটা কি?’
হো হো করে হেসে উঠলেন গোলোকবিহারীবাবু—’বাঃ বাঃ বেড়ে বলেছিস তো।? ওর বৈজ্ঞানিক নাম বুফো কোস্টারিকাস।’
রূপু কমলের হাত ধরে টেনে নিয়ে এসেছে বারান্দায়। গোলোকবিহারীবাবু হাসছেন। খুব আনন্দ তাঁর।
‘ঠিক সময়ে এসেছিলিস তোরা। পৃথিবী ভরে যাবে এবার ‘সোনামন’-এ।’
কমল আবার জিজ্ঞেস করল, ‘আর তোমার বৈজ্ঞানিক নাম?—বুফো বেঙ্গলিকাস!’
মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল গোলোকবিহারীবাবুর দুড়ুম করে দরজা বন্ধ করে দিলেন।
বাইরে এখন ঝুপঝুপ অন্ধকার। কোনোমতে বারান্দা থেকে সাইকেল নামিয়ে নিল রূপু। কমল আবার গান ধরেছে। ঠিক গান না মোগল সাম্রাজ্যের পতনের কারণগুলো গানের সুরে বলে যাচ্ছে সে। তা করুক, একটা অন্তত সুবিধা গানটান গাইলেও এমনি কথা শুনছে সে। হাত ধরে ডাকাতে সাইকেলের কেরিয়ারে উঠেও বসল।
রূপুর হাত কাঁপছে খুব. সাইকেলের ব্যালান্স রাখতে অসুবিধা হচ্ছে। সবচেয়ে মুশকিল হচ্ছে চোখের সামনে হঠাৎ…হঠাৎ তুবড়ির মতো আলোর ঝলকানি উঠছে। সাইকেল থামিয়ে একটা গাছের নীচে দাঁড়াল ও। একটা ছোটো সিমেন্টের কালভার্টও আছে। সাইকেল স্ট্যান্ড করে দুজনে বসল সেটায়। কমল একটু শান্ত হয়েছে। চুপচাপ কি যেন ভাবছে। রূপুও ভাবছে। গোলোকবিহারীবাবু গোলমেলে কিছু বিষয় নিয়ে যে গবেষণা করছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কমল যেরকম আচরণ করছিল মনে হচ্ছিল যেন সে নেশা করেছে। রূপুদের পিছনের ফ্ল্যাটের সৈকত কাকা মাঝেমধ্যেই ক্লাবেটাবে গিয়ে নেশা করে রাতবিরেতে বিচ্ছিরি চিৎকার করে সকলের ঘুম ভাঙান। গোলোকবিহারীবাবু নিশ্চয় এরকম কোনো নেশাটেশার জিনিস তৈরি করছেন। এবং সেই জিনিসটির কার্যকারিতা ওদের ওপর প্রয়োগ করে দেখে নিলেন। আর ‘টোডি’? সে ওরকম ব্যাঙের মতো হয়ে গেল কী করে? সত্যিই ছোটো থেকে অমন ছিল, না জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে গোলকবিহারীবাবু ওকে ব্যাংমানুষ বানিয়ে ফেলেছেন। বাড়ি ফিরে কলকাতায় অগ্নিবাণকে ফোন করতে হবে। ফাইভ মিও ডিএমটি আর বুফো আলভারিয়াস—মনে আছে পুরো। তবু বাঁ-হাতের তালুটা দেখে নিল রূপু। অন্ধকারে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। সাইকেলের ভেজা হ্যান্ডেলে উঠে না যায়। এবার ফেরাই ভালো। পঞ্চুকাকার ব্যাগটাও ফেরত দিতে হবে। সাইকেলে উঠে বসল দু’জন। ঠান্ডা বাতাসে অনেকটাই ভালো লাগছে এখন।
2
রূপুর আশঙ্কাটা যে এতটা সত্যি হবে ও নিজেই ভাবেনি. 5-MeO DMT আর bufo alvarius শব্দগুলো অগ্নিবাণকে ফোনে বলেছিল ও। সেদিন রাতে বাড়ি ফিরেই। অগ্নিবাণের বাবা সরকারি গোয়েন্দা বিভাগের বড়ো অফিসার। রূপুর অনুমান ঠিক। বুফো আলভারিয়াস হল আমেরিকার সোনোরান মরুভূমির একটি বিশেষ প্রজাতির ব্যাং। মূলত কলোরাড়োা নদী উপত্যকায় পাওয়া যায় এদের। 5-MeO-DMT হল এই ব্যাঙেরই ত্বকনিঃসৃত একটি বুফোটক্সিন মানে বিষ। সোনোরান ব্যাঙের এই বিষের বৈশিষ্ট্য হল এটি মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে তীব্র নেশার সৃষ্টি করে।
গোলোকবিহারীবাবু মূলত একজন হারপিটোলজিস্ট। মানে সরীসৃপ এবং উভচর প্রাণী বিশেষজ্ঞ। পরে জেনেটিক্স নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। কিন্তু এই গবেষণার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। কোনো প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করতেও তার অনীহা। তাছাড়া তিনি যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা সরাসরি মানবদেহে করার পক্ষপাতী। সে কারণেই বিরোধ লাগে। নামি একটি প্রতিষ্ঠান থেকে বিতাড়িত হন তিনি। চলে আসেন এদেশে। এমন সময়ে বিদেশি একটি কোম্পানি তাকে সেনোরান ব্যাঙের টক্সিন খাবারে ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়। চকোলেট বা নরমপানীয়ে ব্যবহার করা হবে সেই টক্সিন। নেশার ঝোঁকে বিক্রিও হবে দুর্দান্ত। গোলোকবিহারীবাবুর ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয় এমনভাবে মেশাতে হবে যা কিনা ল্যাবরেটরি টেস্টেও সহজে ধরা যাবে না। এ জন্য প্রচুর টাকাও পান গোলকবিহারীবাবু। টক্সিন তৈরি হয়। কিন্তু মুশকিল হয় তার কার্যকারিতা কতটা তা নিয়ে। টোডির ওপরে প্রয়োগে কোনো লাভ নেই। তাঁর দেহে ব্যাঙের বিষ কোনো প্রভাব ফেলে না। কারণ, ইতিপূর্বেই ব্যাঙের জিনের সঙ্গে ওর জিনের কিছু গুণগত এবং কার্যগত পরিবর্তন করে ফেলেছেন গোলোকবিহারীবাবু। তাকে এখন ব্যাংমানুষ বলা যেতে পারে। জন্ম থেকেই সে এমন ছিল না। গোলোকবিহারীবাবুর অমানবিক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি তাকে একটি অস্বাভাবিক মানুষে পরিণত করেছে।
এমন সময়ে রূপুরা এসে পাড়ায় গোলকবিহারীবাবু ঠিক করেন সোনোরানের ব্যাঙের বিষ তিনি ওদের ওপরে প্রয়োগ করে দেখবেন। পায়েস আর শরবতে তিনি মিশিয়ে দেন বিষাক্ত 5 MeO-DMT, নিজেও খেয়েছিলেন। কিন্তু তার আগে বিষ প্রতিহত করার জন্য নিজেরই তৈরি অ্যান্টিটক্সিন খেয়ে নিয়েছিলেন। তাই তার কিছু হয়নি। নেশার এই বিষ ‘সোনামন’ পানীয় নামে পৃথিবীর গরিব দেশগুলিতে বিক্রির মতলব করেছিল কোম্পানিটি। শেষ পর্যন্ত যে তা হল না, তা কেবল রূপুর জন্যে। ওর কাছ থেকে সব শুনে অগ্নিবাণের বাবা পুলিশ এবং নামি গবেষকদের নিয়ে হানা দেন গোলকবিহারীবাবুর বাড়ি। প্রচুর বেআইনি কাগজপত্র এবং বেশ কিছু বিপন্ন প্রাণী পাওয়া যায় তার বাড়ি থেকে। জেরার মুখে তিনি স্বীকার করেন এইসব। এই অসৎকার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত বাকি লোকদেরও ধরার চেষ্টা চলছে এখন।
যা হোক, রূপু এবং কমল এখন দারুণ বিখ্যাত। খবরের কাগজ আর টিভির চ্যানেলে-চ্যানেলে ওদের মুখ এখন। গৌরদাদু, মিমিপিসিও খুশি খুব। পিসি তো এই ক’দিন ধরে কেবল রকমারি পায়েস রান্না করে যাচ্ছেন। ‘আহারে, পায়েস খেতে এত ভালোবাসিস, আগে বলবি তো আমায়।’ বলছেন আর দুর্দান্ত-দুর্দান্ত সব পায়েস করে চলেছেন। স্বাদ গন্ধ এবং বর্ণ, তিনেতেই অতুলনীয়।
তবে এত আনন্দের মধ্যে রূপুর একটু দুঃখ থেকেই গিয়েছে। টোডিকে এখনও স্বাভাবিক করে তোলা যায়নি। দেশ-বিদেশের বাঘাবাঘা সব বিজ্ঞানীরা ওকে নিয়ে পড়েছেন। গবেষণার জ্বালায় সে বেচারির এখন খুব কষ্ট!