সোনালী দুঃখ – ১৪

১৪

পিছন ফিরে সেই যে হাঁটতে লাগলো ত্রিস্তান, বহুক্ষণের মধ্যে আর থামলো না। কোথায় চলেছে, কোন দিকে চলেছে, কোনোই খেয়াল নেই। সে যেন রয়েছে একটা ঘোরের মধ্যে, একটা নিশি-পাওয়া মানুষের মতো শুধু এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। কাহারডিন তার জন্য অপেক্ষা করছিল দিনাসের প্রাসাদে। তার কথা ত্রিস্তানের মনেও পড়লো না।

সারা রাত ধরে হাঁটলো ত্রিস্তান। সর্বক্ষণ তার কানে ভাসছে সোনালির সেই তীব্র উপেক্ষার হা-হা হাসির শব্দ। সেই দৃশ্যের কথা ভেবেই তার শরীর শিউরে উঠতে লাগলো। তার সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে যেন ঝনঝন করে বেজে চলেছে সোনালির সেই হাসি।

ত্রিস্তানের অঙ্গে তখনও ভিখারীর ছদ্মবেশ, হাতের মুঠোয় তখনও সেই ভিক্ষালব্ধ পয়সা। পরদিন সকালে সে একটি অচেনা নগরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, একজন তীর্থযাত্রী স্নান সেরে বাড়ি ফেরার পথে ত্রিস্তানকে থামিয়ে নিজে থেকেই একটা পয়সা ভিক্ষে দিলেন। তখন ত্রিস্তানের সম্বিৎ ফিরে এলো। আত্মস্থ হয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে হাসলো সে। ভিখারীর পোশাকে নিজেকে বেশ ভালোই লাগলো তার। একটা গাছতলায় দাঁড়িয়ে সে বেশ পট ভঙ্গিতে পথচারীদের কাছ থেকে করুণ সুরে ভিক্ষে চাইতে লাগলো। বালকের মতো অল্পক্ষণের মধ্যেই মেতে উঠলো এই খেলায়। কোনো রূপসী নাগরিকা হয়তো তাকে অগ্রাহ্য করে চলে যাচ্ছে ভিক্ষে না দিয়ে, ত্রিস্তান ঠিক তার পিছনে পিছনে বহুদূর ছুটে কাতর সুরে কেঁদে কেঁদে আদায় করে নিচ্ছে ভিক্ষে।

ছিল সে রাজার কুমার, স্বেচ্ছায় ছেড়ে এসেছে নিজের রাজ্য। সে বিখ্যাত বীর, কালো বর্ম পরে সাদা ঘোড়ায় চেপে যাবার কথা তার, থাকার কথা রাজপ্রাসাদে। অতবড় বীর সে, ইচ্ছে করলে যে-কোনো রাজ্যে গিয়ে এখনও সেনাপতির পদ পেতে পারে। সে রুপালির স্বামী, সে রাজ্যে তার কত সম্মান-কিন্তু ত্রিস্তানের কিছুই ভালো লাগে না। সে অনেক যুদ্ধ করেছে, কিন্তু এখন এই দীন ভিখারী সেজে থাকতেই তার ভালো লাগছে। দেখতে দেখতে তার অঞ্জলি ভরে গেল ভিক্ষের পয়সায়। তারপর ত্রিস্তান একা একা ঘুরতে লাগলো সেই অচেনা শহরে। এখানে সে আগে কখনও আসেনি। বেশ পরিষ্কার, প্রশস্ত এই শহরের রাস্তা, নাগরিকরা বেশ ধনবান মনে হয়

হাঁটতে হাঁটতে সে একটা বড় উদ্যানের কাছে এসে পৌঁছলো। সেখানে বিরাট উৎসব হচ্ছে। বড়দিনের মেলা। বন্ধ করে ঘুরছে নাগরদোলা, সেখান থেকে ভেসে আসছে কচি শিশুদের কণ্ঠে আনন্দলহরী। এক জায়গায় তীরন্দাজরা লক্ষ্যভেদের পরীক্ষা দিচ্ছে, একটা সদ্য মরা হরিণ দূরে ঝোলানো-কে তার চক্ষু বিদ্ধ করতে পারে। শন্‌শন করে ছুটে যাচ্ছে তীরন্দাজদের তীর। আর একদিকে একটা বিশাল হাতির ওপর একদল মেয়ে পুরুষ হল্লা করছে। ভাল্লুকের পোশাক পরে দুটো লোক দেখাচ্ছে কুস্তীর খেলা। আশেপাশে কয়েকটা সরাবের দোকান, তার একটার সামনে ফুলের মতো ঘাগ্গা উড়িয়ে ক্ল্যারিওনেটের তালে তালে নাচছে একটি বেদেনী। ত্রিস্তান ঘুরে ঘুরে দেখছে।

এক জায়গায় দেখতে পেল গোল করা বড় ভিড়। এরাও বাজীকর সেখানে পুতুলনাচের খেলা দেখাচ্ছে। বাজীকরের পোশাক অদ্ভুত, একটা সবুজ রঙের আলখাল্লা পরেছে, মাথায় পালকের টুপি। হাতে একটা ডমরু নিয়ে ডিং ডিং করে বাজিয়ে সে চেঁচাচ্ছে, এবার আরম্ভ হবে বড় খেলা, প্রেমের খেলা, আরম্ভ হলো, আরম্ভ হলো প্রেমের খেলা!

তারপর সে খেলা আরম্ভ করলো। তার সামনে নানারকম পুতুল নাচ শুরু করার সময় সে হেঁকে উঠলো, এ খেরার নাম ‘ত্রিস্তান আর সোনালির খেলা’-একেবারে তাজ্জব কাণ্ড। কিন্তু সত্যি ঘটনা! দেখে যান বাবু মশায়রা-

খেলার নাম শুনে বিষম চমকে উঠলো ত্রিস্তান। ভিড় ঠেলে সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। একটা ভিখারী একেবারে পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে দেখে এক সুন্দরী রমণী নাক কুঁচকোলেন।

বাজীকর একটি পুতুলের সুতোয় টান দিয়ে বললেন, এর নাম ত্রিস্তান-এর মতো সুন্দর, এর মতো বীরপুরুষ আর দুনিয়ায় দুটি নেই। ছেলেবেলায় ওর বাপ-মা মারা যায়…এই দেখুন বাবু-বিবিরা, ত্রিস্তান এখন রাজা মার্ককে প্রণাম করছে। -এইবার ত্রিস্তান যাচ্ছে মোরহল্টের সঙ্গে যুদ্ধ করতে। লড়ে যা ব্যাটা, লড়ে যা, হ্যাঁ, ঠিক আছে, বহুৎ আচ্ছা, এই দেখুন ত্রিস্তান যুদ্ধে জিতে গেল। সে ছাড়া আর কে জিতবে। এবার সে আয়ার্ল্যান্ডে যাবে ড্রাগনের সঙ্গে লড়াই করতে। সেটা খুব ভারী লড়াই। হ্যাঁ, এইবার…

এক এক করে বাজীকর দেখিয়ে গেল ত্রিস্তানের জীবনের সব ঘটনা। ড্রাগন হত্যা, সোনালির সঙ্গে দেখা, রাজা মার্কের হয়ে ত্রিস্তানের সঙ্গে সোনালির হাতে হাত দিয়ে বিয়ে, ফিরে এসে রানী সোনালির কাছে তার গোপন অভিসার, ধরা পড়ার সব ঘটনা, বনে পালিয়ে যাওয়া…

দর্শকরা দেখছে আর ঘন ঘন উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ছে। ভিখারীবেশী ত্রিস্তান দাঁড়িয়ে আছে চুপ করে। প্রথমটায় বেশ মজা পেয়ে তার হাসি আসছিল, কিন্তু অপরদিকে নিজের জীবনের সব ঘটনা স্বচক্ষে দেখে তার বুকের মধ্যে বহু দীর্ঘশ্বাস জমাট হয়ে গেল।

রাজা মার্কের হাতে রানী সোনালিকে ফিরিয়ে দিয়ে ত্রিস্তান বঞ্চিত হতভাগ্যের মতো চলে গেল নিরুদ্দেশে-এই পর্যন্ত দেখিয়ে খেলা শেষ করলো বাজীকর। দর্শকরা ত্রিস্তানের দুঃখে সরবে সমবেদনা জানাতে লাগলো। টপাটপ পয়সা পড়লো বাজীকরের সামনে। ক্রমে দর্শকদের ভিড় সরে গেল, বাজীকর যখন পয়সা কুড়োচ্ছে, ত্রিস্তান এগিয়ে এলো তার সামনে। তার হাতের সমস্ত ভিক্ষের পয়সা সে ঢেলে দিল বাজীকরের হাতে। হতচকিত বাজীকর মুখ তুলে তাকাতে, ত্রিস্তান তাকে মৃদুস্বরে জিগ্যেস করলে, বাজীকর, তুমি এর পরের ঘটনা জানো?

বাজীকর বললো, এর পর আর কি আছে? রানীকে ছেড়ে বিবাগী হয়ে গেল ত্রিস্তান, তারপর সে বোধহয় সন্ন্যাসী হয়ে গেছে, কিংবা মনের দুঃখে মরেই গেছে হয়তো! কেউ আর তার সম্বন্ধে কিছুই জানে না। তুমি জানো নাকি?

—একটু একটু জানি। আমি তো নানা দেশে ঘুরে বেড়াই, কিছু কিছু শুনেছি। –কি শুনলে? কোথায় আছে সে?

—বলবো পরে। কিন্তু তুমি বল তো, এ গল্প কি এখানেই শেষ হলে মানায়? আর একটু থাকা উচিত নয়?

—তা বলা বড় মুশকিল! জীবনে কোনো ঘটনা ঘটে গেলে, তারপরই বলা যায় সেটা গল্পে মানায় কি মানায় না। কিংবা, জীবনের সব ঘটনাই গল্প হতে পারে। কিন্তু, বানানো গল্পের মতো জীবন হয় না।

—কিন্তু বাজীকর, তোমার কি মনে হয় না, রানীর সঙ্গে ত্রিস্তানের আরেকবার দেখা হওয়া উচিত? শেষবার?

সবুজ আলখাল্লা আর পালকের টুপি পরা দীর্ঘদেহ বাজীকর এক মুখ দাড়িতে তার চেহারাটা ভয়ঙ্কর, কিন্তু বড় মমতাভরা গলায় সে বললো, আহা, আমি চাই ঐ হতভাগ্যের সঙ্গে রানীর আবার দেখা হোক কিন্তু তা কি আর সম্ভব? ত্রিস্তানের কথা বলতে গিয়ে আমার কান্না পায়। বড় দুঃখী ও লোকটা।

ত্রিস্তান মাটির দিকে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর সে বললো, বাজীকর, আমাকে তোমার সঙ্গে থাকতে দেবে? আমি তোমার খেলায় সাহায্য করবো।

বাজীকরের সঙ্গেই থেকে গেল ত্রিস্তান। ওর সঙ্গেই ঘুরে বেড়ায়। বাজীকর যখন নানান খেলার সঙ্গে ত্রিস্তান আর সোনালির খেলা দেখায়- তখন ও নিজেই পুতুলগুলো এগিয়ে দিয়ে দিয়ে, বাজীকরকে সাহায্য করে। বনের মধ্যে যেখানে ত্রিস্তান আর সোনালি কুঁড়েঘর বেঁধে আছে- সেই দৃশ্যটায় ত্রিস্তান পাখির ডাকের অনুকরণে শিস দিয়ে ওঠে। যে গল্প দেখে দর্শকরা চোখের জল ফেলে, সেই গল্পের নায়ক যে ভৃত্যবেশে এখানেই বসে আছে, তা কেউ ঘুণাক্ষরেও সন্দেহ করে না।

ত্রিস্তানের মন অনেকটা শান্ত হয়ে এসেছে। বাজীকর লোকটা অদ্ভুত ধরনের। রাত্রিবেলা এক তাঁবুতে দুজনে শুয়ে শুয়ে অনেক গল্প করে। বাজীকর তাকে শোনায় বহু অজানা দেশের কথা, সে বলে হিন্দুস্থান নামে নাকি একটা আজব দেশ আছে- যেখানে মানুষ ইচ্ছেমতো রূপ বদলাতে পারে-একটা লোকই দিনের বেলায় মানুষ আর রাত্তিরবেলায় বাঘ হয়ে যায়। সেখানে গাছও কথা বলে। সাধুরা মাটি থেকে এক হাত উঁচুতে উঠে শূন্যে বসে বসে তপস্যা করে। সেখানকার রাজারা প্রত্যেকেই তিনশো-চারশোজন রানীকে বিয়ে করে প্রত্যেক রাতেই রাজার সঙ্গে থাকে একজন নতুন রানী।

বাজীকর নিজেও অনেক মন্ত্র-তন্ত্র জড়ি-বুটি জান তো। মানুষের চোখের সামনে আঙুল নেড়ে তাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে, তাকে দিয়ে হুকুম মতো যা ইচ্ছে করানোতে সে ছিল ওস্তাদ। তার কাছে একরকম ওষুধ ছিল-সে ওষুধ গায়ে মাখলে মানুষের গায়ের চামড়ার রঙ এক মাসের জন্য বদলে যায়। ত্রিস্তান সেই ওষুধ খানিকটা চেয়ে নিয়েছিল ওর কাছ থেকে।

বাজীকরের একমাত্র দোষ ছিল, মাঝে মাঝে মদ খেয়ে সে অত্যধিক মাতাল হয়ে পড়তো। সে সময়টা সে হয়ে যেত অন্য মানুষ। তখন যত রকম কুৎসিত গালাগাল, জিনিসপত্র ভাঙা, যে-কোনো লোককে ধরে মারা ছিল তার স্বভাব। বাজীকরের এই অবস্থাটা এক-এক সময় ত্রিস্তানের অসহ্য লাগতো।

বেশ শান্ত হয়েছিল ত্রিস্তান। হঠাৎ একদিন যেন বন্যার মতো সোনালির কথা তার মনে ফিরে এলো। তার শরীরের সমস্ত রক্ত যেন মুচড়ে মুচড়ে উঠতে লাগলো সোনালির জন্য। কানে ভেসে উঠলো, সোনালির সেই উপহাসের হা হা হাসি। এক রাত্রে তাঁবুর মধ্যে একা শুয়ে থাকতে থাকতে ত্রিস্তানের আবার মনে পড়লো-মন্দিরের যাবার পথে সে সোনালির রথের চাকা ধরে দাঁড়িয়েছিল, খুব কাছ থেকে দেখেছিল তাকে- অথচ একবার ছুঁতে পারেনি, একবার বুকে জড়িয়ে ধরতে পারেনি। তার বুকটা এক মুহূর্তে শূন্য হয়ে গেল। তার হাত আর বুক, এর মাঝখানে একটা বিশাল শূন্যতা-এখানে সোনালির নরম শরীর থাকার কথা ছিল। ত্রিস্তান ভাবে-তার বেঁচে থেকে আর কি লাভ! সোনালির ঘৃণা দেখবার জন্যও তাকে বেঁচে থাকতে হলো!

কিন্তু তবু ত্রিস্তান জানে, সোনালিকে ছাড়া তার মরারও উপায় নেই। সে জানে, সোনালি তাকে যতই অবহেলা, অপমান করুক, তবু সোনালির কাছে তাকে বার বার ফিরে যেতে হবে।

একদিন ত্রিস্তান বাজীকরকে কিছু না বলে আবার বেরিয়ে পড়লো এক বস্ত্রে। পাঁচদিন পাঁচ রাত্রি পর সে এসে পৌঁছলো টিন্টাজেলে। ত্রিস্তান বাজীকরের সেই ওষুধ মেখে নিল সারা গায়ে মুখে। তামাটে রঙের শরীর হয়ে গেল ত্রিস্তানের!

নগর থেকে লোক আনাগোনা করছে বন্দরে। কেউ কেউ আসছে রাজসভা থেকে। অনেকেরই মুখে রাজার গুণগান! কেউ কেউ আবার বলছে, কিন্তু ভাই, রানীর মুখখানা বড় বিষণ্ণ। কিছুদিন থেকেই দেখছি, রানী কারুর সঙ্গে কথা বলছে না, একটুও হাসছেন না। কি ব্যাপার রে ভাই, রানীর কি অসুখ হয়েছে নাকি?

রানী! রানীর কথা শুনেই ত্রিস্তান উত্তেজিত হয়ে উঠলো। তখুনি তার ইচ্ছে হলো রানীর সঙ্গে দেখা করতে-সেই দিনের বেলাতেই। তাতে যদি সে ধরা পড়ে, তার মৃত্যু হয়, হোক! তবু রানী জানবে-ত্রিস্তান তার সঙ্গে দেখা করতে এসেই প্রাণ দিয়েছিল।

ত্রিস্তান একটা ওক গাছের ডাল ভেঙে নিল। তারপর সেটা মাথার ওপর দিয়ে ঘোরাতে ঘোরাতে বিকৃত গলায় হা-রে-রে-রে করে পাগলের মতো ছুটতে লাগলো রাস্তা দিয়ে। রাস্তার ছেলেরা তাকে দেখে মজা পেয়ে ‘এই পাগলা, এই পাগলা’ বলে ঢিল ছুঁড়তে লাগলো। বয়স্করা কৌতুহলে দেখতে লাগলো সেই বদ্ধউন্মাদকে।

উন্মাদ এসে দাঁড়ালো রাজপুরীর সিংহদ্বারে। সান্ত্রীরা ওকে দেখেই প্রথমে ওর ন্যাড়া মাথায় কয়েকটি চাঁটি মেরে হাতের সুখ করে নিল। তারপর বললে-কি রে পাগলা, এখানে কি চাস?

পাগল গম্ভীর হয়ে বললো, খবরদার আমার গায়ে হাত তুলো না বলছি। আমি রাজার আত্মীয়! আমি স্বর্গে দেবতাদের বিয়ের নেমন্তন্ন খেতে গিয়েছিলাম। এখন রাজবাড়িতে নেমন্তন্ন খেতে এসেছি।

—ওরে বাবা, নেমন্তন্ন খেতে এসেছিল এই রাজবেশে! তার চেয়ে একেবারে দেবতাদের পোশাকই পরে থাক্ না! এই বলে প্রহরীরা চেষ্টা করলো টানাটানি করে ওর পোশাক খুলে উলঙ্গ করে দেবার। উন্মাদ তখন হাস্যকর ভঙ্গিতে লাফাতে লাফাতে মাথার ওপর বনবন করে লাঠিটা ঘোরাতে লাগলো।

চেঁচামেচি শুনে রাজা খবর নিতে পাঠালেন। তারপর, পাগলের কথা শুনে বললেন, ওকে ডাকো, একটু মজা করা যাক্। রানীও অনেকদিন হাসেননি!

পাগল ওঁদের সামনে গিয়ে আভূমি প্রণাম করলো, তারপর কণ্ঠস্বর বিকৃত করে বললো, মহারাজকে দেখেই আমার মনটা কেন হু-হু করে। কতদিন আপনাকে দেখিনি।

রাজা হাসতে হাসতে বললেন, তা কি উদ্দেশ্যে তোমার এখানে আগমন?

—রানী সোনালির জন্য! মহারাজ, আমার সঙ্গে এক অপূর্ব সুন্দরী রমণীকে এনেছি। তার নাম, হীরামণি। আঃ, কি সুন্দর সে, মহারাজ কি বলবো! আপনি তাকে নিয়ে সোনালিকে আমায় দিয়ে দিন না?

রাজা আবার হেসে বললেন, তোমার সাধ তো কম নয়। রানীকে নিয়ে তুমি রাখবে কোথায়? তোমার কুঁড়েঘরে?

—কি বলছেন মহারাজ? আকাশে স্বর্গ আর মেঘের মাঝখানে আমার একটা স্ফুটিকের ঘর আছে। অসংখ্য গোলাপফুলে তার চারদিক ঘেরা। সে ঘর কখনও অন্ধকার হয় না! মহারাজ, রানীকে আমি সেখানে রাখবো।

সভার সব লোকেরা অট্টহাসি করে উঠলো। রাজা বললেন, লোকটার কথার জোর আছে বটে! উন্মাদ তখন একেবারে ওঁদের পায়ের কাছে এসে বসে, এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে রানী সোনালির দিকে। রাজা আবার জিগ্যোস করলেন, পাগল, আমি না হয় রানীকে দিয়ে দিলুম, কিন্তু তোমার অমন রূপ রানীর পছন্দ হবে কি?

—সে কি মহারাজ? রানীর জন্য আমি সারাজীবন কত অসাধ্য সাধন করেছি। রানীর জন্যই আজ আমি এরকম পাগল হয়েছি, তা কি রানী জানেন না?

হাসিতে আবার ফেটে পড়লো সবাই। রাজা হাসির দমকে ফুলতে ফুলতে বললেন, তবে তো তুমি যে-সে লোক নও! তোমার নাম কি?

উন্মাদ গুগুম্ করে নিজের বুকে কিল মেরে বললো, আমার নাম ত্রিস্তান। জীবনে-মরণে রানীকেই আমি ভালোবাসি।

অন্য সকলের হাস্যরোলের মধ্যেও রানী সোনালি ও নাম শুনে কেঁপে উঠলেন তার মুখ বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি রাজাকে বললেন, মহারাজ, ভালো লাগছে না, একে বিদায় করে দিন।

উন্মাদ তখন রানীর পা ছুঁয়ে বললো, রানী, আমাকে চিনতে পারছেন না? সেই যে মোরহল্টের সঙ্গে যুদ্ধে আমি আহত হয়ে মুমূর্ষু হবার পর ভাসতে ভাসতে আপনার দেশে গিয়েছিলাম, আমার হাতে ছিল শুধু বীণা। তখন আপনি আর আপনার মা আমাকে বাঁচিয়েছিলেন। আপনার মনে পড়ে না?

রানী ঘৃণায় পা সরিয়ে নিয়ে বললেন, এই সভায় এমন কেউ নেই-যে এই জঘন্য লোকটাকে দূর করে দিতে পারে?

সভাসদরা তখুনি ছুটে এলো। উম্মাদ তখন লাঠি ঘুরিয়ে বললো, খবরদার, খবরদার, আমি বীর ত্রিস্তান। সাবধান! আমার সঙ্গে যুদ্ধ করবে এমন সাহস কার? এই বলেই সে মাটিতে ডিগবাজি খেতে লাগলো। তার অঙ্গভঙ্গি দেখে সভাসদরা ওকে মারার বদলে হেসেই কুটিকুটি। রানী তখন রাজার পোশাক চেপে ধরে বললেন, মহারাজ, আপনি ওকে চলে যেতে বলুন।

রাজা তবু হাসতে লাগলেন। পাগল আবার বললো, রানী, আমকে চিনতে পারছেন না? সেই যে আমি ড্রাগনটাকে মারলুম? ওর জিভটা কেটে লুকিয়ে রেখেছিলুম মোজার মধ্যে। তারপর অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। হ্যাঁ, তখন একটা বীর ছিলাম বটে! আপনিই তো সেবার আমাকে বাঁচালেন। মনে পড়ে না?

রানী ক্রুদ্ধভাবে বললেন, এই লোকটা ঐ সব বীরপুরুষের নাম উচ্চারণ করে তাদের অপমান করছে। কোথা থেকে ঐসব শুনে এসে মাতলামি শুরু করেছে এখানে। একটা মাতালের মাতলামি দেখে আমার মোটেই আনন্দ হয় না।

উন্মাদ তখন হঠাৎ ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। বললো, হ্যাঁ, রানী আমি মাতাল। সেই যে সেই এক গ্রীষ্মের বিকেল-সমুদ্রের বুকে-তুমি আর আমি এক সঙ্গে এক পাত্র থেকে মায়াবী আরব পান করেছিলাম-সেই থেকে আমি মাতাল। সারা জীবনের জন্য মাতাল। তোমার নেশা হয়তো কেটে গেছে-কিন্তু আমার নেশা মৃত্যুর আগে কাটবে না।

পাগল আবার এমন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো-যে সভার সকলের নাম হেসে উপায় নেই। রাজাও হাসতে লাগলেন। রানী একাই সভা ছেড়ে চলে যাবার জন্য উঠে দাঁড়ালেন। রাজা তাকে বসালেন হাত ধরে।

রাজা বললেন, আমার সভায় বিদূষক নেই। তোমাকে আমার সভাসদ বানাতে হবে দেখছি। রানীকে ভালোবাসা ছাড়া তোমার আর কি কি গুণ আছে, হে?

পাগল সঙ্গে সঙ্গে চোখ মুছে সোৎসাহে বললো, হ্যাঁ, হ্যাঁ, মহারাজ, আমার মধ্যে আরও অনেক গুণ আছে। আমি ডিগবাজি খেতে পারি, আকাশে লাফ দিতে পারি, বীণা বাজাতে পারি, যুদ্ধ করতেও পারি। দেখবেন মহারাজ, দেখবেন?

রাজা বললেন, থাক্, থাক্, আজ থাক্। পরে দেখবো। তুমি এখানেই থেকে যাও বরং।

সভাভঙ্গ করে রাজা উঠে গেলেন রানীকে নিয়ে। তারপর একটা পাগল কোথায় থাকে না থাকে কে তার খোঁজ রাখে। সে রাজপুরীর সিঁড়ির নিচে, আস্তাবলে পড়ে রইলো। প্রহরীরা তাকে খোঁচাখুঁচি করে আনন্দ পায়।

নিজের ঘরে ফিরে হু-হু করে কাঁদতে বসলো রানী। আয়ত চক্ষু দুটি রক্তবর্ণ হয়ে গেল। হাতের সোনার কাঁকন দিয়ে নিজের কপালে আঘাত করতে করতে বললেন, আমি ক্রীতদাসী। রানী নই। আমার চেয়ে দুর্ভাগিনী কেউ নেই এ পৃথিবীতে।

বিরজাকে ডেকে বললেন, বিরজা, তুমি আমাকে একটু বিষ যদি দিতে পারিস আমি তোকে যথাসর্বস্ব দিয়ে যাবো। এ আমার কি অসহ্য জীবন! আজ আমি যা শুনলাম-সে কথা শোনার জন্যও আমাকে বেঁচে থাকতে হলো! যে-কথা ত্রিস্তান আমি আর তুই এই তিনজন ছাড়া কেউই জানে না- আমার সেই প্রিয়তম গোপন কথা-একটা জাদুকর কিংবা মায়াবী কিংবা ভাঁড় এসে সবার সামনে বলছে! জানি না ত্রিস্তান বেঁচে আছে কিনা! আমি তাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছি। সে অপমানই সহ্য করে গেছে। সে জানে না- আমার অনুতাপ। কিন্তু কোথা থেকে এই আপদ এসে জুটলো! ত্রিস্তানের নাম উচ্চারণ করে আমার বুক জ্বালিয়ে দিল! ওঃ আর পারি না-

বিরজা বললো, তুমি একটা সামান্য পাগলকে দেখে এমন বিচলিত হচ্ছো কেন?

—ওর দিকে তাকালেই আমার ভয় করে। আমার গোপন কথা ও কি করে…

–রানী, হয়তো ও-ই ত্রিস্তান।

—অসম্ভব! তুই দেখে আয় কি বিকট চেহারা ওর! ওটা কি মানুষ না জন্তু? তোমার কি মাথা খারাপ বিরজা! – সেই ত্রিস্তান, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পুরুষ, কন্দর্পকান্তি—তার সঙ্গে তুই ওর তুলনা করছিস! তুইও দূর হয়ে যা আমার চোখের সামনে থেকে।

—হবে, ও হয়তো ত্রিস্তানের অনুচর। তার কাছ থেকে কোনো খবর এনেছে।

–তা হলে তুই এখনও দাঁড়িয়ে আছিস কেন এখানে? যা দেখে আয়। ডেকে নিয়ে আয়। যা।

সিঁড়ির নিচে বসে ছিল উন্মাদ। দূর থেকে বিরজাকে দেখেই আকুলভাবে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, বিরজা, আমায় চিনতে পারো না!

বিরজা ভয়ে পিছিয়ে এসে বললো, একি? তুই আমার নাম জানলি কি করে! সরে যা, অত কাছে আসিন না!

—বিরজা, তুমিও আমাকে ভুলে গেছ। একদিন নিজের লজ্জা বিসর্জন দিয়ে তুমি বাঁচিয়েছিলে আমাকে আর সোনালিকে। আর আজ-

—কে তুই? কি করে জানলি এ কথা?

—বহুদিন থেকে জানি। বিরজা, আমাকে দয়া করো, একবার আমাকে রানীর কাছে নিয়ে যাও। মনে নেই, তোমার সেই লুকনো কলসি থেকে মায়াবী আরব পান করেছিলাম একদিন। সেদিন তুমি বলেছিলে ভালোবাসা মানেই মৃত্যু। আমার আর সোনালির ভালোবাসা আর মৃত্যু একসঙ্গে জড়ানো। বিরজা আমাকে দয়া করো।

বিরজা ভয়ে কাঁপতে লাগলো! একি দারুণ কথা এই উন্মাদের মুখে! একথা তো ত্রিস্তান ছাড়া আর কারুর পক্ষে কিছুতেই জানা সম্ভব নয়। কিন্তু এই বীভৎস লোকটা কি করে ত্রিস্তান হয়। যদি ত্রিস্তান হয়ও, তাহলে তো টের পেলে প্রহরীরা যে-কোনো মুহূর্তে ওকে খুন করবে।

বিরজা দ্বিধার মধ্যে দাঁড়িয়ে দুলতে লাগলো। তারপর আর কিছু ঠিক করতে না পেরে-ফিরে এলো রানীর ঘরের দিকে। পাগলও ছুটে এলো তার পিছনে পিছনে তারপর দরজার কাছে রানীকে দাঁড়ানো দেখে-বুক-ফাটা আওয়াজে ‘সোনালি’ বলে চেঁচিয়ে এগিয়ে গেল দু’হাত বাড়িয়ে।

ভয়ে, ঘৃণায়, কুঁকড়ে সোনালি পিছিয়ে গেলেন দেয়ালের দিকে।

উন্মাদ তখন থমকে দাঁড়ালো। তারপর দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললো, সোনালির ঘৃণাও আমাকে দেখতে হলো শেষ পর্যন্ত। কোনোদিন ভাবিনি, সে আমাকে দেখে ভয় পেয়ে সরে যাবে। অথচ, সে বলেছিল আমার ডাকে সে কোনোদিন সাড়া দিতে ভুলবে না! সোনালি, ভালোবাসা এত সহজে মরে যায়? নদীতে যখন জল থাকে—সেই জল দু’কূল ছাপিয়ে যায় তখনই তা নদী। আর সব জল শুকিয়ে গিয়ে যখন শুকনো নদীটা পড়ে থাকে তখনও সেটা নদীর আকৃতি। কিন্তু তখন আর সেটা নদী নয়। সোনালি, ভালোবাসাহীন জীবন কি জীবন?

সোনালির এক পা এক পা করে এগিয়ে এসে বললেন, পাগল, তুমি যেই হও, কেন তুমি আমাকে কষ্ট দিতে এসেছো? কেন তুমি আমাকে অপমান করছো? তুমি যখন এত খবর জানো তখন তুমি নিশ্চয়ই ত্রিস্তানের খবরও জানো। বলো, সে কেমন আছে?

পাগল ধীর স্বরে বললো, রানী, ত্রিস্তান জীবন্মত। সে বেঁচে আছেও বলতে পারো, অথবা মরে গেছে তাও ভাবতে পারো।

—কোথায় ত্রিস্তান? সে কোথায়?

—সোনালি, তুমি তাকে চিনতে পারলে না?

—না, না, না, তুমি ত্রিস্তান নও! তুমি নও! তোমার প্রমাণ কোথায়? কোথায় সেই সবুজ আংটি? অথবা এ বাড়ির কুকুর হুড়িন, তাকে ডাকি? সে ত্রিস্তান ছাড়া আর কেউ সামনে গেলেই কামড়াতে আসে- সে তোমায় চিনতে পারবে?

উন্মাদ তখন বিষাদে শান্ত হয়ে বললো, না রানী, কোনো প্রমাণ থাক! হৃদয় যখন হৃদয়কে টানে না তখন আর প্রমাণে কি হবে? তুমি নিজে আমায় চিনতে পারলে না-আর সেই কুকুরের চেনা-তুমি স্বীকার করতে চাও। সোনালি, ভালোবাসা কি শুধু রূপে? আজ আমার বাইরের রূপ দেখে তোমার ঘৃণা? আমি কি শুধু রুপের জন্য তোমায় ভালোবেসেছিলুম? তবে, তোমার বাবা যখন তোমার সঙ্গে আমার বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন-আমি কেন তখুনি বিয়ে করিনি? আমি তো তখুনি তোমায় নিয়ে অন্য দেশে পালিয়ে যেতে পারতুম। সোনালি, ভালোবাসা চামড়ার নিচে থাকে। ওপরে নয়। সেই ভালোবাসার জন্যই আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কোনো নারীকে স্পর্শ করতে পারিনি।

রানী তখন উন্মাদিনীর মতন নিজের মাথার সোনালি চুল ছিঁড়তে লাগলেন। এক টানে খুলে ফেললেন নিজের পোশাক। তাঁর সাদা পায়রার মতো দুটি বুক গভীর নিঃশ্বাসে দুলতে লাগলো। চোখে জল, কিন্তু বিকৃতভাবে হেসে দু’হাত বাড়িয়ে বললেন, তবে নাও, গ্রহণ করো আমাকে। যদি তুমি ত্রিস্তান হও, আমার এই শরীরটা পিষে দাও তোমার বুকে। যদি তুমি ত্রিস্তান হও, তবে বুঝতে পারবে, তাকে না পেয়ে আমার বুকে কি আগুন জ্বলছে। আমাকে নিয়ে যাও যেখানে ত্রিস্তান একদিন আমাকে নিয়ে যাবে বলেছিলো, সেই দেশে-যেখানে আছে শ্বেতমর্মরের দুর্গ, যার এক হাজার ঘরের জানালা-দরজায় আলো জ্বলে-যেখানে অন্তহীন পাখির গান, যেখান থেকে আর কেউ কখনো ফেরে না। আমাকে নিয়ে যাও-ধরো আমাকে, যদি সত্যিই তুমি ত্রিস্তান হও। কিন্তু সাবধান, যদি তুমি ত্রিস্তান না হও- সাবধান, সাবধান, সে ছাড়া আর কেউ সত্যিকারের আমাকে পায়নি। এসো, তুমি যদি ত্রিস্তান হও, এসো-

উন্মাদ শান্ত স্বরে বললো, যদি নয়, আমার নাম ধরে ডাকো –

রানী সেখানে দাঁড়িয়ে দুলতে দুলতে দুলতে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। উন্মাদ নিজের জায়গাতেই চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। সে নিচু হয়ে রানীকে ধরতে গেল না। তার মুখ অদ্ভুত উদাসীন। একটু পরেই সোনালির আবার জ্ঞান হলো। লাল, অস্থির চোখ মেলে সেই উন্মাদকে দেখেই বিষম চমকে উঠলেন। সম্পূর্ণ অসংবদ্ধ গলায় চেঁচিয়ে উঠলেন, মায়াবী! জাদুকর! শয়তান! আর একটু হলেই আমাকে ভুলিয়েছিল! কে কোথায় আছ? বাঁচাও! বাঁচাও! প্রহরী! প্রহরী! এ আমাকে খুন করতে এসেছে-এ ত্রিস্তানকে খুন করেছে-আমাকেও মারবে, বাঁচাও, বাঁচাও!

মুহূর্তে ছুটে এলো প্রহরীরা। সোনালি উন্মাদের দিকে আঙুল দেখিয়ে বললেন, একে নিয়ে যাও। মেরে ফেলো, যা ইচ্ছে করো, দূর করে দাও আমার চোখের সামনে থেকে। দূর করে দাও!

প্রহরীরা সঙ্গে সঙ্গে বেঁধে ফেললো উন্মাদকে। সে একটুও প্রতিবাদ করলো না। ওরা তখুনি টানতে টানতে ওকে নিয়ে এলো দুর্গের বাইরে। প্রচুর লাথি-ঘুষি মেরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গেল সমুদ্রের পাড়ে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *