সাঁইত্রিশ
বানারজুলির বসন্ত এবারে শুধু আনন্দের পসরা সাজিয়ে বসে আছে। সেই আনন্দের ছোঁয়া বাপীর শিরায় শিরায়। অস্তিত্বের কণায় কণায়। এতকালের নিঃসঙ্গ যন্ত্রণা, দুঃসহ প্রতীক্ষা—সবেরই কিছু বুঝি অর্থ আছে। হাত বাড়ালে সহজে যা মেলে তার সঙ্গে এই পাওয়ার কত তফাৎ, সমস্ত সত্তা দিয়ে সেটুকু অনুভব করার জন্যেই বোধ হয় অত যন্ত্রণা আর অমন প্রতীক্ষার প্রয়োজন ছিল। নিজের সুরবিস্তারে শিল্পী অনেক সময় নিজেই ভেসে যায়, ডুবে যায়
মিষ্টিকে নিয়ে আবু রব্বানীর বাড়িতে সেদিন সকালের দিকে এসেছিল। আগের বারে সন্ধ্যায় এসেছিল। আবু অনুযোগ করেছিল, জঙ্গলের গরিবখানা বহিনজি রাতে আর কি দেখবে, সকালে এলে ভালো লাগত।
এবারে বাপী তাই সকালে নিয়ে এসেছে। আবুর এখন দস্তুরমতো বড়সড় কাঠের বাংলো। একেবারে জঙ্গলের মধ্যে এরকম বাংলো বানারজুলিতে আর দুটি নেই। মিষ্টির সত্যি ভালো লেগেছে। ইলেকট্রিক নেই তাই আগের বারে রাতে এসে গা ছমছম করেছিল। আবু বা দুলারি কারোরই ইলেকট্রিক পছন্দ নয়। জঙ্গলের মধ্যে বিজলীর আলো বেখাপ্পা। জঙ্গলে থাকার মজা মাটি। দিনের আলোয় চারদিকের সবুজের মধ্যে সবুজ বাংলোটা সত্যি সুন্দর।
প্রায় ঘণ্টা দুই আদর আপ্যায়ন আর আড্ডার পর মিষ্টির আপাদমস্তক একদফা ভালো করে দেখে নিয়ে দুলারি হঠাৎ বাপীকে বলল, তোমাদের বিয়েতে মরদেরা বউকে কত গয়না দেয় শাড়ি দেয়, তুমি বহিনজিকে কি দিলে বাপীভাই?
ভিতরে ভিতরে বাপী সত্যি অপ্রস্তুত। অন্যভাবে সামাল দিল। সাদামাটা মুখ করে বলল, এত দিয়েছি যে তোমার বহিনজি নিতে পারছে না।
শুধু দুলারি নয়, আবুও উৎসুক। আর কিছু বলছে না দেখে দুলারিই জিজ্ঞেস করল, কি দিলে?
মুখে জবাব না দিয়ে ডান হাতের বুড়ো আঙুলটা বাপী বার দুই তিন নিজের বুকে ঠুকল। অর্থাৎ নিজেকেই দিয়ে ফেলেছে।
আবু রব্বানী আনন্দে হৈ-হৈ করে বলে উঠল, বহিনজি বুঝলেও এই দেওয়ার কদর ও বুঝবে না দোস্ত, ও বুঝবে না—নিজেকে ফতুর করে দিয়েও মন পেলাম না।
দুলারির কোপ আর আবুর চপলতায় দেওয়ার প্রসঙ্গ ধামা চাপা পড়ে গেল। কিন্তু বাংলোয় ফেরার পথে দুলারির কথাগুলো বাপীর মাথায় ঘুর-পাক খেতে লাগল। জঙ্গলের মেয়ের পর্যন্ত যে-বাস্তব চোখদুটো আছে ওর তাও নেই। মিষ্টিকে ঘরে এনে তুলেছে কিন্তু এখন পর্যন্ত তাকে কিছুই দেওয়া হয়নি। না দুটো ভালো শাড়ি না কিছু গয়না। কলকাতা থেকে ওকে তুলে নিয়ে বানারজুলিতে ছুটে আসা ছাড়া মাথায় আর কিছু ছিলই না। নইলে দুটো ছেড়ে দু’ডজন শাড়ি কিনে ফেলতে পারত। আর গয়নাও…
আবার মনে পড়ল কি। ঠোঁটে স্বস্তির হাসি।
শোবার ঘরে ঢুকে মিষ্টি বাইরের শাড়িটাও বদলাবার ফুরসৎ পেল না। দু—মিনিট বিশ্রামের জন্য সবে শয্যায় এসে বসেছিল। আঁতকে উঠে দাঁড়াল।—ও কি!
বাপী ঘরে ঢুকে ভিতরের দরজা দুটো বন্ধ করছিল। বাইরের দরজা বন্ধই ছিল। ছিটকিনি দিয়ে বাপী ঘুরে দাঁড়াল।—কি?
—এই সাতসকালে দরজা বন্ধ করছ কেন?
নিরীহ মুখে বাপী ঘড়ি দেখল।—সকাল কোথায় এখন, বেলা সাড়ে দশটা।
—ভালো হবে না বলছি, দরজা খোলো শিগগীর!
বাপী ঘটা করে নিঃশ্বাস ছাড়ল একটা।—উঃ। পাপ মন সবেতে সাপ দেখে। হাসতে হাসতে দেরাজ খুলে বড় একটা চাবির গোছা বার করল। একটা চাবি বেছে নিয়ে সামনে ধরল। কোণের পেল্লায় সিন্দুকটা দেখিয়ে বলল, ওটা খোলো।
মিষ্টি থতমত খেল একটু।—ওটা কি?
আঙুল তুলে দেয়ালে টাঙানো গায়ত্রী রাইয়ের বড় ছবিটা দেখালো।—এটা ওই ঠাকরোনের, খোলোই না।
ওই মহিলার সম্পর্কে এ কদিনে অনেক শুনেছে। চাপা আবেগও লক্ষ্য করেছে। তাই দুষ্টুমির ব্যাপার কিছু ভাবল না। খুলল।
ওপরে ভাঁজ ভাঁজ করা রঙচঙা কার্পেট, রঙিন বেড-কভার, শৌখিন গায়ের চাদর। বাপীই এগিয়ে এসে একে একে সেগুলো তুলে ফেলল। তার পরেই মিষ্টির দু’চোখ ধাঁধিয়ে যাবার দাখিল। এত সোনা একসঙ্গে দেখেনি। শুধু সোনা নয়, একদিকে হীরে জহরত মণি মুক্তো। ঝুঁকে প্রথমে সোনার বারগুলো তুলে বাপী বেড-কভারে ঢাকা বিছানার ওপর রাখল। মিষ্টি হাঁ করে দেখছে। ছোট বড় মিলিয়ে পনেরটা বার। হাতে নিয়ে দেখল। সব থেকে ছোটটার ওজন দশ ভরির কম হবে না। বিশ-তিরিশ ভরি ওজনেরও আছে। বাপী হীরে জহরত মুক্তোর কাঁধ-উঁচু ট্রেটাও এনে খাটের ওপর রাখল।
মিষ্টির হঠাৎ কেমন অস্বস্তি হতে লাগল। সোনার বাজার চড়া। একশ দশ পনের টাকা ভরি। কম করে আড়াইশ’ ভরি হবে এখানে। আর ট্রেতে এতসব দামী পাথর। এসব খোলা পথে সিন্দুকে এসে উঠেছে ভাবতে পারছে না। ঘরে কারো এত সোনা থাকে কি করে! কেন থাকে!
—এই সব তোমার?
বাপীর মজাই লাগছিল। জবাব দিল—এই সব তোমার। এর ডবল ছিল। ওই ঠাকরোনটি তার মেয়েকে এই কাঁধে ঝোলাতে না পেরে মনের দুঃখে অর্ধেক তাকে ভাগ করে দিয়েছে, বাকি অর্ধেক তোমার জন্যে রেখে গেছে। মিষ্টি মনে মনে মস্ত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল একটা।—উনি আমার কথা জানতেন?
—ও বা-বা, না জানলে। রেহাই পেলাম কি করে! পিঠের দাগ পর্যন্ত দেখানো হয়েছে।
এই লোকের অসাধ্য কিছু আছে ভাবে না মিষ্টি। জিগ্যেস করল, তুমি কলকাতায় ছিলে আর এ-সব এখানে পড়ে ছিল?
—না তো কি, এর থেকে ঢের দামী জিনিস ছিনিয়ে আনার তালে ছিলাম বলে এসবের কথা মনেও ছিল না। আজ দুলারি বলতে মনে পড়ল।
মিষ্টি হেসে ফেলল। তারপর বলল, বুঝলাম, কিন্তু এসব ব্যাঙ্কে না রেখে ঘরে ফেলে রেখেছ কোন সাহসে?
—ব্যাঙ্কের থেকে এখানে রাখা ঢের নিরাপদ। ধরা পড়লে চোখে সর্ষেফুল দেখতে হবে।
শোনামাত্র মিষ্টির আবার সেই অস্বস্তি। কিছু সংশয় প্রকাশ পেলে দেয়ালের ওই মহিলার প্রতি অবিশ্বাস বা অশ্রদ্ধা ভাবতে পারে।—ঠিক আছে, এখন চটপট তুলে ফেলো।
—তুলে ফেলব মানে? দুলারি দারুণ লজ্জা দিয়েছে। খাওয়া-দাওয়া সেরেই তোমাকে নিয়ে আর এসব নিয়ে শিলিগুড়ি যাব। সেখানে গয়নার অর্ডার দিয়ে পরে শাড়ি কেনা হবে।
মিষ্টির আবার মজা লাগছে। চোখেমুখে কপট খেদ…এটুকু সোনার আর হীরেমুক্তোর গয়না?
কি দিয়ে হয় বা কতটা হয় বাপীর ধারণা নেই। তবু ঠাট্টা বুঝল। হেসে জবাব দিল, করে রাখতে দোষ কি, ইঁটের ডেলা আর পাথরকুঁচির মতো তো পড়েই আছে।
জবাব না দিয়ে গম্ভীর মুখে মিষ্টিই এবার খাট থেকে সব-কিছু তুলে নিয়ে আবার সিন্দুকে রাখল। তার ওপর যা ছিল একে-একে সব তুলে চাপা দিতে লাগল।
—ও কি! সব চাপাচুপি দিচ্ছ, শিলিগুড়ি যাবে না?
—না।
—আলবৎ যাবে। বাপী বাধা দিতে এগিয়ে এলো।
—দেখো, পাগলামো করো না! তোমার এই বুদ্ধি দেখলে দশ বছরের ছেলেও হাসবে।
—কেন হাসবে?
—কলকাতা থেকে এসে শিলিগুড়ি যাব গয়না গড়াতে আর শাড়ি কিনতে? কলকাতায় গিয়ে যা-হয় হবে।
বেজার মুখ দেখে হেসে ফেলে মিষ্টি কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। ঘরের দরজা বন্ধ এখনো। এই লোককে বিশ্বাস নেই। বলতে যাচ্ছিল, এই জঙ্গলের রাজ্যে তুমিই আমার সেরা গয়না।
আরো সাত দিন বাদে মিষ্টিকে নিয়ে বাপী ভুটান পাহাড়ে বাংলোয় চলে এলো। দিন দশেক নিরিবিলিতে কাটানোর ইচ্ছে এখানে। নিজেই ড্রাইভ করে এসেছে। পাহাড় বেয়ে ওঠার সময় গায়ত্রী রাইয়ের স্বামীর অ্যাকসিডেন্টের গল্প করেছে। ফলে এমন সুন্দর পাহাড়ী রাস্তাটাকে মিষ্টি ভয়ের চোখে দেখল। পরে ওঠা-নামার সময় গল্পের ফাঁকে ওর দিকে ঘাড় ফেরালেই ধমক লাগায়, সামনে চোখ রেখে চালাও—বর্ষায় এ-রাস্তায় তুমি মোটে আসবে না!
বাপীর দু-কান জুড়োয়। আরো বেপরোয়া হতে ইচ্ছে করে।
দুজনকে একসঙ্গে পেয়ে ঝগড়ুর কালো মুখে খুশি ধরে না। মাথায় তুলে রাখা সম্ভব হলে রাখত। পাহাড়ের এই বাংলোর সে-সব জমজমাট দিনগুলো সে ভুলতে পারে না। তাই মনমরা। দিনকতকের জন্য হলেও মরা নদীতে খুশির জোয়ার এসেছে। এই মালিক মস্ত দিলের মানুষ গোড়া থেকেই জানে। কিন্তু তার রীপনা বউও যে সেই রকমই হবে, নিজের হাতে খেতে দেবে, বসে গল্প শুনতে চাইবে, এ কি ভেবেছিল?
এখানে বসন্ত আরো উদার। আরো অকৃত্রিম। বাংলোর সামনেই ফুলের বাহার। পিছনে ব্যবসার গাছ-গাছড়ার চাষ করে পাঁচ-ছটা লোক। বাংলোর বাইরে যে-দিকে তাকায় জঙ্গল আর পাহাড়, পাহাড় আর জঙ্গল। পাহাড়গুলোও রিক্ত নয় এখন। মৌসুমি ফুলের মুকুট পরে বসে আছে। অর জঙ্গল তো ঋতুসাজে সেজেই আছে। তার বাতাস রক্তে দোলা দিয়ে যায়। তখন নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে ইচ্ছে করে।
যেতে হয়ও। জীবনের এই দোসরই তাকে বসন্তের বে-হিসেবী ভোগের রকমারি স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। বাধা দিতে গেলে বাঁধ ভাঙে। তখন আর কৃপণ হতে ইচ্ছে করে না। হাল ছেড়ে রাগই করছিল।—তুমি এত জানো কি করে?
এ সম্পর্কেও বাপীর কিছু বইপত্র পড়া ছিল। তা ফাঁস না করে মাথা চুলকে জবাব দিয়েছে, দেখে-শুনে একজন মেয়ে মাস্টার রেখেছিলাম—সেই শিখিয়ে পড়িয়ে পাকা করে দিয়েছে।
দু-হাতের ধাক্কায় বাপী খাট থেকে উল্টে পড়তে যাচ্ছিল। সে-ই ফাঁকে মিষ্টি ঘর থেকে পালিয়েছে। ভালো মুখ করে ঝগড়ুর সঙ্গে গল্প করতে বসেছে। আর ভয়ে ভয়ে বার বার পিছন ফিরে দেখছে।
তিন দিন বাদে বাপী ওকে নিয়ে বাংলো থেকে বেরিয়ে আসতে চাইল। বলল, চলো আজ জঙ্গলে বেড়িয়ে আসি।
মিষ্টি উৎসুক তক্ষুনি। তার পরেই থমকালো।— কোনরকম অসভ্যতা করবে না?
৬২৬
বাপী হাসতে লাগল।—তা কি বলা যায়, সব এখানকার বাতাসের দোষ।
—যাব না, যাও।
বাপী আশ্বাস দিল, ঠিক আছে, চলো। এই জঙ্গলে পিঠে দাগ পড়ার মতো কোনো কারণ ঘটেনি।
পিঠে না হোক, মনে দাগ পড়ার মতো কিছু ঘটেছিল। মিষ্টির হাত ধরে বেড়াতে বেড়াতে এক জায়গায় পা ফেলা মাত্র সেটা মনে পড়ে গেল। আঙুল তুলে সামনের মস্ত দেবদারু গাছটা দেখিয়ে বলল, ওখানে এক অদ্ভুত মানুষের সঙ্গে দেখা হয়েছিল।
মিষ্টির তক্ষুনি আগ্রহ।—কার সঙ্গে?
—উদোম ন্যাংটো এক সন্ন্যাসীর সঙ্গে। তখন হাড় কাঁপানো শীত— ওই গাছটার নিচে দিব্বি বসেছিল, সমস্ত গায়ে ভস্মমাখা, সামনে একটা ত্ৰিশূল। অমন দুটো চোখ আমি আর দেখিনি, ঝাঁকড়া চুল-দাড়িতেও তার আলো ঠিকরোচ্ছিল। আমার দিকে একটু চেয়ে থেকে বলল, আগে বাঢ়। মিল জায়গা।
মিষ্টি অবাক।—কি মিল জায়গা?
—ও-ই জানে। আমার তখন সব সামনে এগোনোটা শুধু তোমাকে লক্ষ্য করে। এসবে ভক্তি বিশ্বাসের ছিটে-ফোঁটাও নেই—কিন্তু গমগমে গলার স্বর আমার কানে বসে গেল, আর তারপর থেকে মনে এক আশ্চর্য জোর পেলাম। হেসে মন্তব্য করল, এর কোনো মানে নেই, সবটাই সাইকোলজিক্যাল ব্যাপার জানি, কিন্তু তখন শুধু মনে হচ্ছিল, আমার দিন ফিরবেই আর তোমারও নাগাল পাবই।
মিষ্টি বাধা দিল, মানে নেই বলছ কেন, দিনও ফিরেছে, নাগালও পেয়েছ। বাপী হেসে উঠল। জবাব দিল, সে-কি ওই সন্ন্যাসীর দয়ায় নাকি! আমার তেড়ে-ফুঁড়ে এগনোটা তো দেখোনি। তবে এগনোর জোরটা মনের সেই অবস্থায় অনেক বেড়ে গেছল সত্যি কথা।
মিষ্টি আর কথা বাড়ালো না। সাধুসন্তদের মাহাত্ম্য সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই। কিন্তু অমঙ্গলের আশঙ্কায় তাদের প্রতি কোনোরকম অবিশ্বাস বা অবজ্ঞার কথাও শুনতে চায় না।
ফেরার পথে জঙ্গল ঘেঁষা সেই ছোট পাহাড়। বাপী নিজে উঠল খানিকটা হাত ধরে মিষ্টিকেও টেনে তুলল। তারপর টেনে জায়গায় বনমায়ার শোকে পাগল সেই বুনো হাতির খপ্পরে পড়েছিল, আর কোন্ পর্যন্ত ওটা তাদের ধাওয়া করে নিয়ে গেছল, দেখালো। এই অবধারিত মৃত্যু থেকে প্রাণে বাঁচার গল্প মিষ্টি কলকাতায় বাপীর প্রথমবারের সেই নামী হোটেলের সুইটে বসে শুনেছিল। তখনো শিউরে উঠেছিল। কত অল্পের জন্য বেঁচেছে চোখে দেখে এখন আরো গায়ে কাঁটা।
দুদিন বাদে সকালের দিকে আবু গাড়ি নিয়ে হাজির। একটা বড় কনট্রাকটের যোগাযোগ। মালিকের সামনে পার্টির সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ইচ্ছে। বহিনজিকে আশ্বাস দিল বিকেলের মধ্যেই ফিরে আসতে পারবে।
বাপীর ফিরতে সন্ধ্যা গড়ালো। বাদশা পৌঁছে দিয়ে গেল। মুখ-হাত ধুয়ে চা খেতে খেতে বাপীর মনে হল, মিষ্টি একটু চুপচাপ। জিগ্যেস করল, সমস্ত দিন কি করলে?
মিষ্টি বলল, ঝগড়ুর সঙ্গে গল্প করলাম, তোমার এখানকার বাগানে কি কি চাষ হয় না হয়, ঝগড়ু বোঝালো, সাপের বিষ তোলার ঘরও দেখালো—একটা মেয়ে মরে গেল বলে অমন লাভের ব্যবসাটাই তুমি বন্ধ করে দিলে বলে ঝগড়ুর খুব দুঃখ।
বাপী চেয়ে রইল একটু। তারপর অল্প অল্প হাসতে লাগল।—তোমার আরো কিছু বলার ইচ্ছে মনে হচ্ছে?
মিষ্টিও হাসল একটু।—তুমি রাগ না করলে বলতে পারি।
—তুমি আমার রাগের পরোয়া করো এই প্রথম জানলাম। আচ্ছা, বলেই ফেলো—
মিষ্টির তবু দ্বিধা।—আজ থাকগে, সমস্ত দিনের ধকল গেছে তোমার…।
—কিছু না। তার দিকে চেয়ে বাপী একটু মজার খোরাক পাচ্ছে। বলল, যেদিন তোমাদের ডিভোর্সের রায় বেরুলো, আমার ওপর ক্ষেপে গিয়ে তুমি জিগ্যেস করেছিলে যা হয়ে গেল তার পিছনে আমার হাত ছিল, আমি বলেছিলাম সবটাই—মনে আছে?
মিষ্টি মাথা নাড়ল, মনে আছে।
—তার মানে তোমাকে চাওয়া বা পাওয়ার ব্যাপারে আমি কোনো মিথ্যের আশ্রয় নিইনি। তোমার আমার মধ্যে লুকোচুরির কিছু থাকতে পারে না এটুকু ধরে নিয়ে মনে কি আছে বলে ফেলো দেখি?
এবারে মিষ্টি সোজা চেয়ে রইল একটু। মনে যা আছে ব্যক্ত না করা পর্যন্ত নিজেও স্বস্তি বোধ করছে না। বলে গেল, কলকাতার এয়ারপোর্ট থেকে প্রথম যেদিন তুমি আমাকে হোটেলে নিয়ে গেছলে সেদিনও তুমি বনমায়ার সেই বুনো হাতির হাত থেকে প্রাণে বাঁচার ব্যাপারটা আমাকে বলেছিলে।…বলেছিলে, তোমার সঙ্গে একজন ছিল, সে-ই তোমাকে বাঁচালে। সেই একজন কোনো মেয়েছেলে তখনো বলোনি…এখানে বেড়াতে নিয়ে গিয়ে সেই জায়গা যখন দেখালে, তখনও না।
বাপীর ঠোঁটের হাসি মিলিয়েছে। বুকের তলায় মোচড় পড়ছে। কলকাতার হোটেলে রেশমার নামটা করতে পারেনি বলে নিজেকে অকৃতজ্ঞ ভাবছিল, তাও মনে আছে।
—তোমার কাছে এ গল্প কে করল, ঝগড়ু?
সাদা মনেই করেছে। তোমাকে বাঁচানোর ব্যাপারে জঙ্গল আলো করা মেয়েটা কত সাহস আর কত বুদ্ধি ধরে তাই বলছিল।…রাত পোহাতে হঠাৎ সে এখান থেকে চলে গেল, আর কয়েকদিনের মধ্যে বানারজুলির সাপঘরে গিয়ে সাপের ছোবল খেয়ে আত্মহত্যা করল—সেই শোক আর সেই অবাক ব্যাপার ওর মনে লেগে আছে।
মুখের দিকে চেয়ে কিছু একটা যন্ত্রণার আভাস দেখছে মিষ্টি। একটু চুপ করে থেকে বাপী ঠাণ্ডা গলায় জিগ্যেস করল, বানারজুলির বাংলোর সামনে সেদিন যে পাগল লোকটাকে দেখেছিলে, মনে আছে?
—হারমা না কি নাম বলেছিলে।
—হ্যাঁ। রেশমা ওকে ভালবাসত না, ও দারুণ ভালবাসত। তার শোকে এই দশা। এখন ওর ধারণা রেশমা আমার জন্যেই আত্মহত্যা করেছে। বলে বেড়ায়, রেশমাকে যে বাঁচতে দিল না তার কি ভালো হবে…।
মিষ্টি সত্রাসে চেয়ে আছে।
—হারমার ধারণা খুব মিথ্যে নয়। …রেশমাকে বাঁচাতে পারতাম। তাহলে বাপী মরত। সে তোমাকে পেত না। তোমার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারত না।
মিষ্টি নির্বাক।
ভারী অথচ নিরুত্তাপ গলায় বাপী এরপরে অব্যর্থ সেই বীভৎস মৃত্যু থেকে রেশমার তাকে বাঁচানোর চিত্রটা অকপটে তুলে ধরল। বাংলোয় ফেরার পর রাতের ঘটনাও।
মিষ্টি উৎকর্ণ। তারও চোখে মুখে বেদনার ছায়া।
বাপী বলল, এরপর ক্ষিপ্ত হয়ে সে আমার কত বড় শত্রুর হাতের মুঠোয় চলে গেল আর কোন্ অনুশোচনায় সে নিজের ওপর অমন বীভৎস শোধ নিল—সে কথা তুমি দুলারির মুখে শুনে নিতে পারো—রেশমা তাকে সব বলে গেছে।
মিষ্টি সখেদে মাথা নাড়ল। দু চোখে অনুতাপ। আর কারো কাছে কিছু শোনার দরকার নেই।
তেমনি ভারী গলায় বাপী আবার বলে গেল, কিন্তু তোমার কথার জবাব এখনো দেওয়া হয়নি।…যাই করুক, রেশমা রেশমাই। নিজের ওপর ওরকম শোধ সে-ই নিতে পারে। সেই বীভৎস দৃশ্য তুমি কল্পনা করতে পারবে না। পর পর অনেকগুলো রাত আমি ঘুমুতে পারিনি। যন্ত্রণায় বুক ফেটে গেছে। কলকাতায় বা এখানে তোমার মনে এতটুকু ভুলের ছায়া পড়ুক তা আমি চাইনি। তোমাকে পাওয়ার আনন্দে স্বার্থপরের মতো অতবড় শোকের স্মৃতিও ভুলতে চেয়েছি। তাই তার নাম করিনি।
মিষ্টির বিচ্ছিরি লাগছে। নিজের ওপরেই রাগ হচ্ছে। ছেলেবেলা থেকে যাকে হাড়ে হাড়ে চিনেছে, তার ভোগের দুর্বার তৃষ্ণাও দেখছে এখন। রেশমার সম্পর্কে এই গোপনতার ফলে একটা কুৎসিত সন্দেহ বার বার মনে আসছিল, নিজের কাছে অন্তত সেটা অস্বীকার করার নয়। চেয়ার ছেড়ে কাছে এসে দাঁড়াল। একটা হাত তার পিঠে রাখল।—ঘাট হয়েছে, আর কক্ষনো তোমাকে কিছু বলব না— হল?
—হাজার বার বলবে। বললে বলেই এখন হাল্কা লাগছে। তোমার আমার মধ্যে কোনো মিথ্যে থাকবে না, লুকোচুরি থাকবে না—ব্যস!
দশ দিন বাদে আবার বানারজুলি। এসে সেই বিকেলেই গেটের কাছে আবার হারমাকে দেখেছে। বাংলোর দিকে চেয়ে বিড়বিড় করে কি বলছিল। তাকে দেখেই ভেতরটা ছাঁৎ করে উঠল। লোকটা নাকি বলে, রেশমাকে যে বাঁচতে দিল না তার কি ভালো হবে…।
মিষ্টির এই অস্বস্তি বাপীও লক্ষ্য করেছে। আবুকে বলেছে, হারমার এদিকে আসা আটকাও তো। তোমার বহিনজি ঘাবড়ে যায়।
তিন দিন দার্জিলিং আর দুদিন শিলিগুড়ি বেড়ানোর পর আবার বানারজুলিতে ফিরে মিষ্টি কলকাতায় ফেরার জন্য ব্যস্ত। তার এক মাসের ছুটি প্রায় শেষ।
এ ব্যাপারে বাপী নির্লিপ্ত। জিগ্যেস করল, এয়ার অফিস তোমাকে কত মাইনে দেয়?
—কেন, তুমি তার থেকে বেশী দেবে?
—দেব।
মিষ্টি হেসেই জিজ্ঞাসা করল, কত বেশি দেবে?
—বেণীর সঙ্গে মাথা।
তার চাকরির ব্যাপারে এই লোক বিগড়বে এরকম আশঙ্কা মিষ্টির ছিলই। এরপর যা দেখল তাতে দু চক্ষু স্থির। উত্তর বাংলার নানা ব্যাঙ্কের এক-গাদা পাশবই। তার কোনোটাতে বাপী তরফদার, কোনোটাতে বিপুল তরফদার, কোনোটাতে বিপুলনারায়ণ তরফদার, কোনটাতে বা শুধু নারায়ণ তরফদার। এক একটাতে টাকার অঙ্ক দেখেও মাথা ঘোরার দাখিল।
শুধু অবাক নয়, মিষ্টি অস্বস্তিও বোধ করেছে। সাদা সিধে রাস্তায় এত টাকা এলে নামের এত কারচুপি কেন? শুধুই ইনকাম ট্যাক্স এড়ানোর জন্যে বলে মনে হল না। পাহাড়ের বাংলোয় গিয়ে সে আরো কিছু দেখেছে, জেনেছে। রেশমাকে নিয়ে অমন এক আবেগের ব্যাপার ঘটে গেল বলেই মুখ ফুটে তখন কিছু জিগ্যেস করতে পারেনি। বানারজুলিতে ফেরার পর ভুলে গেছল।
ভাবনাটা এখনো চেপেই গেল মিষ্টি। বাপীর তক্ষুনি আবার দরকারী কাজ মনে পড়েছে। এসব পাশবই বাতিল করে দুজনের নামে অ্যাকাউন্ট করতে হবে। চার পাঁচ দিন অন্তত লাগবে তাতে।
তাকে কিছু না জানিয়ে মিষ্টি টেলিগ্রামে আরো এক সপ্তাহের ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে নিল।
ওই সব ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট দুজনের নামে ট্রান্সফারের সময়েও সেই নাম বদলের খেলা দেখল। এবারে একজনের নয়, দুজনেরই। কোথাও মিষ্টি তরফদার কোথাও মালবিকা তরফদার। কোথাও শুধু মিষ্টি দেবী বা মালবিকা দেবী। কোনটাতে আগে বাপীর নাম পরে ওর। কোনটাতে আগে ওর পরে বাপীর।
মিষ্টির সাদামাটা বিস্ময়—নামের ওপর এত হামলা কেন?
জবাব দিতে গিয়েও থেমে গেছে। দুষ্টুমি চিকিয়ে উঠেছে।—সত্যি আমি রাম বোকা একটা, আসল লোক এত কাছে, তাকে ছেড়ে কিনা তার নামের ওপর হামলা!
নিরাপদ ব্যবধানে সরে গিয়ে মিষ্টি আবার জানতে চেয়েছে, বলো না কি ব্যাপার?
বাপীর এবারে সত্যি বলার দায়ে-পড়া মুখ —জেল-টেল যদি হয় কখনো, একলা গিয়ে মরি কেন, দুজনে জড়াজড়ি করেই যাব।
মিষ্টিও হেসে ফেলে তাড়াতাড়ি কৌতূহল চাপা দিল। ধুরন্ধর কম নয়, উদ্বেগ টের পেয়েই এই ঠাট্টা। মিষ্টি তার পরেও শুধু লক্ষ্য করেছে। মুখের আয়নায় ভেতর দেখতে চেষ্টা করেছে। বড় রকমের গলদ বা জটিলতা কিছু থাকলে কেউ এমন নিঃশঙ্ক অকপট স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দে দিন কাটাতে পারে না। এখানে এসে মিষ্টি পাহাড়ী ঝরনা কম দেখল না। পাথুরে বিঘ্ন ঠেলে, কোনো আবর্জনা গায়ে না মেখে তরতর করে নেমে আসে। হাতে নিলে স্ফটিকস্বচ্ছ। এই লোকের সঙ্গে মেলে। বিঘ্ন মানে না। আবর্জনা গায়ে মাখে না। ওসব যে দেখে, দেখুক।
মিষ্টিও আর দেখতে চেষ্টা করল না। উৎকণ্ঠাও সরে গেল। সবই জানতে বুঝতে খুব সময় লাগবে মনে হয় না। পাহাড়ের বাংলোয় এই লোকের সেদিনের জোরের কথাগুলো ভোলার নয়। বলেছিল, তোমার আমার মধ্যে কোনো মিথ্যে থাকবে না, লুকোচুরি থাকবে না—ব্যস!
থাকবে না যে, তার প্রমাণ কলকাতা রওনা হবার দিনও আর এক-দফা পেল। উপলক্ষ হাতের চিঠি। এই সকালে এসেছে। আমেরিকা থেকে ঊর্মিলা একসঙ্গে ওদের দুজনকে লিখছে। রেজিস্ট্রি হয়ে যাওয়ার পরেই বাপী আট-দশ লাইনের চিঠিতে বিয়ের খবর আর বানারজুলিতে লম্বা হনিমুন কাটানোর খবরটা শুধু দিয়েছিল। তার জবাব। চিঠিতে এমন কিছু প্রগলভ রসিকতার আভাস ছিল যার দরুন বউয়ের জেরার ভয়ে অনেক পুরুষ ওটা লুকিয়ে ফেলতে চাইত। চিঠিটা নিজে পড়ে বাপী নিঃসঙ্কোচে তার হাতে তুলে দিয়েছে। পড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত মিটিমিটি হেসেছে।
‘ফ্রেন্ড ডিয়ার অ্যান্ড ডিয়ার ডিয়ার মিষ্টি। চিঠি পেলাম। চিঠি এত ছোট কেন তাও বুঝলাম।
যুগলে শোনো! দেশের মতো এখানেও সামার এখন। ছোট বড় যে কোনো উপলক্ষে এখানে এখন মেয়ে পুরুষের নাচার ধুম। ওর আপিসের অসভ্য বন্ধুগুলোর আমাকে নিয়ে নাচার জন্য টানাটানি। আমি ছুতোনাতায় পালিয়ে বেড়াই। কিন্তু সেদিন চিঠিখানা পেয়ে আর পড়েই ঘরের মধ্যে আমি এমন নাচা নাচতে লাগলাম যে তোমাদের মিস্টার মেহেরার দুই চোখ ছানাবড়া। ঘাবড়ে গিয়ে আমাকে থামাতে এসে আরো বিপাকে পড়ে গেল। আমি তাকে নিয়েই ধেই ধেই নাচতে লাগলাম।
বাপী, তুমি একখানা সত্যিকারের শয়তান। যা চাও তাই পাও। তাই করো। আমি এরকম শয়তানের কত যে ভক্ত জানলে মিষ্টি না রেগে যায়। যাক এখন কি করে মিষ্টি পেলে না জানা পর্যন্ত আমার ভাত হজম হবে না। পত্রপাঠ সবিস্তারে লিখবে।
মিষ্টি, তুমি কত যে মিষ্টি একদিন স্ব-চক্ষে দেখেছি। আজ সত্যি কথা বলছি ভাই, তোমার সেদিনের অত ঠাণ্ডা হাব-ভাব দেখেও আমার মনে হয়েছে তুমি কোনো গৌরবের সমর্পণের অপেক্ষায় বসে আছ। নইলে সেদিন তুমি অত ঘটা করে ফ্রেন্ডের অস্তিত্ব উপেক্ষা করতে চাইতে না। কিন্তু খুব সাবধান, ওই ডেনজারাস মানুষকে কক্ষনো যেন আর মিষ্টি ছাড়া করতে চেও না। তার মিষ্টি ছাড়া হবার আক্রোশ আমি যেমন জানি তেমন আর কেউ জানে না। এই আক্রোশে সে নিজে রসাতলে ডুবতে পারে অন্যকেও টেনে নিয়ে যেতে পারে।
বাপী, মিষ্টিকে এভাবে সাবধান করার জন্য জন্য তুমি নিশ্চয় আমার মুণ্ডুপাত করছ। মানে মানে এখন সরে পড়ি।
তোমাদের হনিমুনের হনি অফুরন্ত হোক।—ঊর্মিলা’
বাপীর ঠোঁটে হাসি ঝুলছে। চিঠি পড়া শেষ করে মিষ্টি মুখ তুলল। স্বাভাবিক জেরার সুরে জিগ্যেস করল, শেষের এই কথাগুলোর মানে কি?
—মানে, অত দূরে বসেও ওই মেয়ের আমাকে ডোবানোর মতলব।
—তোমার মিষ্টি ছাড়া হবার আক্রোশ ও যেমন জানে আর কেউ তেমন জানে না লিখেছে। আক্রোশে ওকেই রসাতলের দিকে টেনেছিলে নাকি?
—প্ৰায়।
মিষ্টির কৌতূহল বাড়লো।—শুনি না কি ব্যাপার?
বাপী বিপন্ন মুখ।—শুনতেই হবে?
মিষ্টি একটু হালকা খোঁচা দেবার লোভ ছাড়ল না।—তুমিই বলেছিলে আমাদের মধ্যে লুকোচুরির কিছু থাকতে পারে না। বলতে আপত্তি থাকলে বোলো না।
বাপী বড় নিঃশ্বাস ছাড়ল একটা।—এরপর আর না বলে পারা যায় কি করে।…তোমার বিয়ে হয়ে গেছে জেনে সমস্ত মেয়ে জাতটাকে ভস্ম করার মেজাজ নিয়ে বানারজুলি ফিরেছিলাম। সেই আক্রোশে ঊর্মিলার প্রেম-কাণ্ডে আগুন ধরিয়ে ওকেই প্রায় গিলে বসেছিলাম—
মিষ্টি হাসতে গিয়েও হোঁচট খেল।—তোমার গেলার নমুনা তো জানি, প্ৰায় বলতে কতটা?
—তা অনেকটা। ওর মা তখন ষোলো আনা আমার দিকে—আমাকে ঠেকায় কে?
মিষ্টি এবারে রুদ্ধশ্বাস।—তারপর?
—তারপর ওই মেয়ের চোখের জল আমার পিঠে চাবুক হয়ে নেমে এলো। পড়িমরি করে আবার কলকাতায় ছুটে গিয়ে বিজয়কে শিলিগুড়ি ধরে নিয়ে এলাম। আর এখান থেকে মায়ের অজান্তে মেয়েকে ধরে নিয়ে গিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে ওদের বিয়ে দিলাম।
মিষ্টি চেয়ে আছে। তার কান-মন ভরে যাচ্ছে।