সে ও সখা

সে ও সখা

গলা ছেড়ে গাইলে যখন উলটোদিকের ফুটপাথে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনের কেউ কেউ এগিয়ে আসত কাছে বা দ্রুতবেগে হাঁটতে থাকা কেউ দাঁড়িয়ে পড়ত ব্যাটারি থেমে যাওয়া যন্ত্রের মতো, বেশ মজাই লাগত পিয়ালের। কিন্তু সেই মজাটা যে একদিন ওকে নিজের ভিতর মজিয়ে নেবে পুরোপুরি, তা কখনও কল্পনাও করেনি পিয়াল। কীভাবে কী হল পিয়াল নিজেও পুরোটা জানে না। শুধু জানে সতীর্থ ওর সঙ্গে ছিল সবসময়। মফস্‌সলের একটা ছেলে, কলকাতার সঙ্গে যার অক্ষর পরিচয় হয়নি তখনও, তার ভিতরে সতীর্থ কী দেখেছিল পিয়াল জানে না! শুধু জানে, ওকে কেউ গানের পর গান গাওয়াচ্ছে দেখলেই সতীর্থ চটে যেত। বলত, অ্যাই শোন, ওকে যে ফ্রিতে পারফর্ম করাচ্ছিস ও যদি কোনওদিন মঞ্চে উঠে গায়, আসবি? টিকিট কেটে শুনতে আসবি?

যাকে বলা হত কথাটা সে চমকে গিয়ে চুপ করে থাকত। তার সেই নীরবতাকে খানখান করে সতীর্থ বলে উঠত, আমি জানি কেন চুপ করে আছিস। আসলে পিয়াল যে কোনওদিন বড় গাইয়ে হতে পারে, নাম করতে পারে এটা বিশ্বাসই করিস না, তাই না? ভাবিস চিরকাল তোদের এন্টারটেনার হয়েই থেকে যাবে।

খুব লজ্জা করত পিয়ালের। একটু গলা ছেড়ে গাইতে পারা কী এমন গুণ যে, তার জন্য লোকের ওপর রোয়াব নিতে হবে? কিন্তু সতীর্থ ওকে ধমকে বলত, হিরের খনিকে কয়লার খনি বলে বেচে দিস না পিয়াল। অন্যের সম্মান পাওয়ার আগে নিজেকে সম্মান করতে শেখ।

নিজেকে সম্মান? পিয়াল হেসে ফেলত মনে মনে। ও তো প্রথাগতভাবে গান শেখেনি কখনও। যা কিছু, সবটাই রেডিয়ো আর পরে একটা লজঝড়ে টেপরেকর্ডারে এর-ওর থেকে চেয়ে আনা ক্যাসেট শুনে। আসলে একটা প্রায় গ্রামের অল্প বয়সে বাপ-মরা ছেলের বড় গায়ক হওয়ার স্বপ্নটা এতই অবাস্তব ছিল যে, সেটাকে প্রশ্রয় দেওয়ার কথা কখনও মনেই আসেনি। ওর।

স্বপ্ন তো অবাস্তবই হয় পিয়ালদা, টুয়া ওর কথা শুনতে শুনতে একটা চিউয়িংগাম মুখে ফেলে বলেছিল।

বিকেলের আলো মুক্তোর মতো ছড়িয়ে পড়েছে তখন ট্রামের ছাদে, বাসের দেওয়ালে, অটোর পিঠে সাঁটা পোস্টারে, ঘরফের স্কুলের বাচ্চাদের হাসিতে। সেই আলোয় টুয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে পিয়ালের মনে হল ও ভূগোলের সিলেবাসে পড়ে না এরকম কোনও দ্বীপে চলে এসেছে, অজস্র মানুষের ভিড়েও যে একা দাঁড়িয়ে থাকে, টুয়ার মতো।

দাঁড়িয়ে থাকতে হত না টুয়ার। আরও অনেক আগেই চলে আসতে পারত পিয়াল, পারল না কারণ আসার আগে ও সতীর্থকে ফোনে বলেছিল, টুয়া আমার জন্য দাঁড়িয়ে আছে সতীর্থ।

কোথায়? সতীর্থ বলল,

উলটোডাঙা ওভারব্রিজে।

তুই শুনেই একদম উলটে গেলি?

না, উলটে যাইনি, কিন্তু একটা মেয়ে একা দাঁড়িয়ে রয়েছে আমার জন্য!

কেউ যখন কারও জন্য দাঁড়ায়, তখন একাই দাঁড়ায় পিয়াল।

সে তো ঠিকই আছে কিন্তু ও বলল আমি না গেলে ও ওভারব্রিজ থেকে নামবে না।

তা হলে ওকে দাঁড়িয়েই থাকতে দে। কারণ ও একইভাবে আগের সপ্তাহে অন্য কোনও ছেলের জন্য দাঁড়িয়েছে, সামনের সপ্তাহে আবারও অন্য একটা ছেলের জন্য দাঁড়াবে।

এটা তুই কী বলছিস? টুয়া একটা বাচ্চা মেয়ে…

বাচ্চা নয়, চৌবাচ্চা। তুই ওকে তোর প্রাইভেট মোবাইল নম্বর দিয়েছিলি কেন?

আসলে আর একটা তো বেশিরভাগ সময় তোর কাছেই থাকে… পিয়াল তোতলাল।

দরকারে থাকে। তোর প্রোগ্রামের বন্দোবস্ত করার জন্যই থাকে। যদি দরকার না থাকে বলবি, রাখব না।

আমি সেকথা বলিনি, তুই একটু বোঝ।

আমি সব বুঝতে পারছি। আর বুঝতে পারছি বলেই ভয় করছে। নাম-ডাক হচ্ছে, লোকে চিনছে, এইসময় নিজেকে এতটা সহজলভ্য করিস না পিয়াল।

পিয়াল চুপ করে গেল। ও কীভাবে সতীর্থকে বোঝাবে যে টুয়ার এক-একটা কথা ওকে ভিতসুদ্ধ নাড়িয়ে দেয়।

তুই আধঘণ্টা ওকে দাঁড় করিয়ে রাখ, তারপর যাবি, সতীর্থ আদেশের গলায় বলল।

পিয়ালের খারাপ লাগল কথাটা। কিন্তু ওর আর ইচ্ছে করল না সতীর্থর সঙ্গে তর্ক করতে। সতীর্থর আজ্ঞার ভিতরেই ও মিশিয়ে দিল নিজের চাপা আবেগ। এতদিনের বন্ধুত্ব বলে কথা!

ভাগ্যিস আপনি দেরি করে এলেন, নয়তো আমি একদম খালি হাতে চলে এসেছিলাম আপনার সঙ্গে দেখা করার জন্য।

পঁচিশ মিনিট দেরি করে পৌঁছে পিয়াল বুঝতে পারছিল না টুয়া ঠিক কতটা রাগ করে আছে ওর ওপর। তাই খানিকটা আঁতকে উঠে বলল, না না, ও সব গিফট-টিফট কিছু আমায় দেওয়ার দরকার নেই।

টুয়া নির্বিকার মুখে বলল, বেশ দেব না, কিন্তু একবার দেখুন তো! বলে একটা দু’ভাঁজ করা ফুলস্কেপ কাগজ পুরোটা খুলে দেখাল পিয়ালকে। পিয়াল দেখল একটা পেনসিলে স্কেচ করা রামধনু, যার ভিতর দিয়ে একটা কালো দাগ দৌড়ে গেছে।

তোমার আঁকা? পিয়াল জিজ্ঞেস করল।

হ্যাঁ, আপনার জন্য অপেক্ষা করতে করতে আঁকলাম।

এই ওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে? পিয়াল স্তম্ভিত হয়ে জিজ্ঞেস করল।

কেন? কী হয়েছে?

না, মানে এখানে এত এত লোক!

ছবি আঁকার জন্য মঙ্গল গ্রহে যেতে হবে নাকি? টুয়া মুখ টিপে হাসল।

মিনিট পনেরো পরে একটা অযত্নলালিত কাফেতে টুয়ার মুখোমুখি বসে পিয়ালের মনে হচ্ছিল ও সত্যিই মঙ্গলগ্রহে কিংবা মঙ্গলের যমজ কোনও লাল রঙের গ্রহে বসে আছে, যেখানে ক্যালেন্ডারের প্রতিটা তারিখই লাল রঙে রাঙানো।

এর মধ্যে দিয়ে ছুটে যাওয়া কালো দাগটা কীসের সিম্বল টুয়া? পিয়াল কফিতে দ্বিতীয় চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করল।

ওটাই তো সূর্যের ঘোড়া। দৌড়োতে দৌড়োতে কালো হয়ে গেছে, টুয়া কাপের গায়ে চামচের আওয়াজ তুলে বলল। পিয়াল একবার নিজের কবজির দিকে তাকাল। তারপর নিজের মনেই হাসল একটু।

হাসলেন কেন? টুয়া চেপে ধরল।

মানে আমিও তো অনবরত দৌড়োচ্ছি। কিন্তু লোকে বলে, আমি নাকি আগের চেয়ে অনেক ফরসা হয়েছি, পিয়াল হাসল।

লোকের কথায় আপনার খুব আসে যায়, তাই না? টুয়া চোখে চোখ রাখল পিয়ালের।

পিয়াল একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল, না, তা ঠিক নয়।

মিথ্যে বলবেন না, তাই-ই। আমি খেয়াল করেছি।

কীরকম?

সেদিন আপনার ওই বন্ধু যখন ট্যাকর-ট্যাকর কথা বলছিল, আপনার খারাপ লাগছিল আমি বুঝতে পারছিলাম। কিন্তু আপনি এমন একটা স্ট্যান্ড নিচ্ছিলেন, যাতে আমরাও না খেপে যাই আবার ওকেও না চটানো হয়। কী তাই তো?

বোধহয় নয়। তুমি যার কথা বলছ, সেই সতীর্থ আমার জীবনে ঠিক লোকের পর্যায়ে পড়ে না।

তা হলে কীসের পর্যায়ে পড়ে? পাখি? টুয়া ভুরু নাচাল।

পিয়াল হেসে ফেলল। বলল, তা বলতে পারো। সতীর্থ না থাকলে আমি কেরানি, বাস কনডাক্টর কিংবা রেলের টিকিট চেকারও হতে পারতাম! কিন্তু তুমি যে জন্য আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছ, সেটা হতে পারতাম না।

এত কনফিডেন্সের অভাব কেন আপনার?

আমার জন্ম, আমার বড় হয়ে ওঠা, আমার চারপাশ আমাকে যে এভাবেই তৈরি করেছে, টুয়া!

কিন্তু আপনার ফ্যানরা কি প্রতিনিয়ত অন্যভাবে তৈরি করছে না আপনাকে?

সেটা কীরকম আমি জানি না, তুমি বলো…

আমাদের কলেজেই আপনার অনেক ভক্ত আছে। তাদের মধ্যে একজন বলে যে, আপনি যদি স্টেজে উঠে চারটে গালাগালি দিয়েও নেমে আসেন, তা হলেও ওর মনে হবে যে ওর পয়সা উশুল হয়ে গেছে।

আমি নিশ্চিত, আমার কিংবা আমাদের ব্যান্ডের অধিকাংশ শ্রোতাই এভাবে ভাবে না।

ধরে নিলাম তাই। কিন্তু যদি ভাবত, আপনি খুশি হতেন তো?

না, একেবারেই হতাম না। বরং জানতাম যে আমাদের সর্বনাশের দিন ঘনিয়ে এসেছে। অ্যানিমিয়ার রুগি যেরকম ফুলতে শুরু করে মরার আগে, আমরাও সেরকম ফুলতে শুরু করেছি।

আপনি কীরকম মরালিস্টের মতো কথা বলছেন, টুয়া স্যান্ডউইচের ভিতর থেকে একটা টমেটোর কুচি বের করে নিয়ে মুখের ভিতর পুরল।

কারণ আমি ভিতরে ভিতরে মরালিস্ট, টুয়া। আমি নিজেকে খুব একটা বড় গায়ক ভাবি না।

আস্তে, আস্তে। এখানে আপনার কোনও ভক্ত থাকতে পারে। নেগেটিভ পাবলিসিটি হয়ে যাবে…

আমি কেয়ার করি না। আমাদের বাড়িতে ওপরে একটা অ্যাসবেস্টস দেওয়া ঘর এবং অর্ধেকটা সিমেন্ট আর অর্ধেকটা মাটির বারান্দা ছিল। সেই বারান্দার মাটি-সিমেন্টের বর্ডারে লক্ষ-লক্ষ লাল পিঁপড়ে জেগে থাকত সারারাত। আমি ওদের মধ্যেই একটা শতরঞ্চি পেতে শুয়ে থাকতাম আর ভাবতাম কবে ওরা আমাকে একটা চিনির পাহাড় মনে করে সকলে মিলে কামড়ে ধরে নিয়ে যাবে।

ধরে কোথায় ফেলবে? নজরুল মঞ্চে না কলামন্দিরে? টুয়া টোন কাটল।

ওসব জায়গাতেই হয়তো ফেলেছে। কিন্তু আমার মন থেকে ওই বারান্দাটা মুছে ফেলতে পারেনি। পারেনি বলেই আমি নিজেকে খুব সাধারণ মানের একজন গায়ক বলে মনে করি…

যার গান শোনার জন্য হাজারো লোক পাগল, টুয়া বলল।

তুমি যতটা বলছ অতটা নয়।

অতটাই। আপনার গানের ক্রেজ কীরকম, আপনি জানেন না।

আমি ‘গান’ কী, তাই ঠিকমতো জানতাম না। এখন পেটের দায়ে শিখছি আর শিখছি বলেই কিছুটা হলেও ধারণা জন্মাচ্ছে গান সম্পর্কে।

যথা? টুয়া হাত দিয়ে একটা ভঙ্গি করল। পিয়াল সদ্য দিয়ে যাওয়া কফিটা কাপ থেকে ঢেলে ফেলল ডিশে। পুরোটা আঁটল না। কিছুটা চলকে পড়ল টেবিলে।

টুয়া হতভম্ব গলায় জিজ্ঞেস করল, কী করছেন?

পিয়াল নির্লিপ্ত স্বরে বলল, বিরাট বড় একজন সংগীত সমালোচকের কাছ থেকে একটা ব্যাপার শিখেছিলাম, সেটাই তোমাকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। এই কাপ-ডিশের সেটটা যদি খানদানি হত, তা হলে কাপে যতটা কফি ছিল ডিশে ততখানিই ধরত। একফোঁটাও চলকে পড়ত না। প্রকৃত সংগীত ঠিক এরকম। ওখানে কথার যতটা ধারণ ক্ষমতা, সুরেরও ততটাই। আর এখনকার বেশিরভাগ গানে দুর্দান্ত কথা কিন্তু পাঁচালির মতো করে গেয়ে যাচ্ছে, নয়তো সুরটা বেড়ে, কিন্তু কথাগুলো পাতে তোলা যায় না।

বাব্বা! আপনি কত ভাবেন! টুয়া গালে হাত রেখে তাকাল।

আমি ভাবি না টুয়া, আমি ওই সূর্যের ঘোড়াটার মতো দৌড়োই, শুধু দৌড়োই। কিন্তু কী জানো টুয়া, এই অশিক্ষিত পটুত্ব বেশিদিন চলবে না। তাসের ঘরের মতো সব ভেঙে পড়ল বলে।

ভেঙে পড়লে আপনার একার ক্রেজেই তো ভেঙে পড়বে না।

না, আরও অনেকেই ধসবে। কিন্তু তাঁদের ব্যাপারটা তাঁরা ভাববেন, আমাকে আমারটা ভাবতে হবে।

শ্রোতাদেরও তো কিছু ভাবনা থাকতে পারে। তারা যে সবসময় ঠকার মতো বোকা নয়, এই কথাটা বিশ্বাস করেন তো?

হান্ড্রেড পারসেন্ট করি। তাই তো তোমার কথা শুনতে এসেছি। বলো না, সত্যিই কিছু পাও আমার, আই মিন আমাদের থেকে?

পাই বলেই তো আপনার লাইভ প্রোগ্রাম দেখার জন্য এই কলেজের ফেস্ট থেকে ওই কলেজের ফেস্টে চরকি কেটে বেড়াই। আপনি হয়তো বিশ্বাস করবেন না, তবু আমাকে বলতে হবেই, আপনার মধ্যে এমন একটা ব্যাপার আছে যেটা শিক্ষা দিয়ে অর্জন করা যায় না, মেধা দিয়েও না।

কীরকম?

সত্যি বলব? আপনি হচ্ছেন একটা ক্লাস এইটে পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়া বখাটে ছোকরা যে… টুয়া ওপরের ঠোঁট দিয়ে নীচের ঠোঁটটা চেপে চুপ করে গেল।

যে? পিয়াল অধৈর্য।

যে একদিন একটা কোনও নতুন গ্রহ কিংবা নক্ষত্র আবিষ্কার করবে, টুয়া একচুমুকে কফি শেষ করল।

পিয়াল ভিতরের উচ্ছাস কোনওরকমে সামলে নিয়ে বলল, সতীর্থ না তাতালে আমার কিছুই হত না।

টুয়া বলল, সেটা আপনার ধারণা।

না, টুয়া না। তুমি সতীর্থর ফোন নম্বর নিয়ে ওর সঙ্গে কথা বলে, তা হলে বুঝতে পারবে, আমার চেয়ে আমাকে ও বেশি চেনে। আমি একটা কাদার তাল ছিলাম জানো তো…

এখনও তাই আছেন। একদম মাটির মানুষ, টুয়া পিয়ালকে থামিয়ে বলল।

আসলে যে-জায়গাটা থেকে উঠে এসেছি, সেখানে ইট-কাঠ-কংক্রিট কিছু ছিল না তো…।

আর এখন যে আমি আছি? কেমন দেখলেন আমাকে?

পিয়াল বলতে চাইল, সেই রামধনুর মতো যার আলাদা করে রং লাগে না, পেনসিলে স্কেচ করলেই যথেষ্ট। কিন্তু বলতে পারল না।

টুয়া পিয়ালের চোখে চোখ রেখে বলল, কী হল বলুন?

পিয়াল চোখ নামিয়ে বলল, সতীর্থ আমার কথা আমার চেয়েও ভাল বলতে পারবে। তুমি প্লিজ ওকে একটা ফোন কোরো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *