সেলুলয়েডের মজা
‘একটা লোক চোখের সামনে মারা যাচ্ছে, আর আপনি হ্যাহ্যা করে হাসছেন।’ ভদ্রমহিলা আমাকে ফিসফিস করে এই তিরস্কার করেছিলেন অন্ধকার সিনেমা হলে। আমার ডানপাশে বসেছিলেন। আমার কোনও দোষ ছিল না। অনেক চেষ্টা করেও একালের বাংলা সিনেমার ভেতরে আমি ঢুকতে পারিনি। বাংলা ছবির প্রেম, মারামারি, মৃত্যু, তিনটে দেখলেই আমার হাসি পায়।
একটা ছবি, যে ছবি আমাকে বাধ্য হয়েই দেখতে হয়েছিল, অন্যের পাল্লায় পড়ে, সেই ছবিতে হল ফ্যামিলি পাগল হয়ে গিয়েছিল, একে, একে। ওয়ান বাই ওয়ান। প্রথমে বাবা পাগল হয়ে গেলেন। ভাবলুম ঠিক আছে—যেকোনও পরিবারে, দু:খে কষ্টে, সংসারের চাপে বাড়ির কর্তা পাগল হতেই পারে! পাগলাবাবা রাস্তায়-রাস্তায় ঘুরে বেড়ান। অদ্ভুত, অদ্ভুত সব ডায়লগ বলেন। পাগলের অভিনয়ে যথেষ্ট ড্রামা থাকে। সেই ড্রামাটুকু নিঙড়ে নেওয়ার জন্যে, পাগলের প্রয়োজন, ভিলেনের প্রয়োজন, রাগী যুবকের প্রয়োজন। বাংলা সিনেমা দর্শকরা পাগল ভীষণ পছন্দ করেন। ভাঁড়ে আর পাগলে বিশেষ তফাত নেই। বাবা পাগল হয়ে যাওয়ার পর মেয়ে সংসার চালায়। কোনওরকমে। চেষ্টা চরিত্র করে। এখন বাংলা সিনেমার চরিত্রদের স্বতন্ত্র একটা নিয়তি থাকে। মেয়েটিও সেই নিয়তির শিকার হল। লোকাল লিডার চাকরির লোভ দেখিয়ে মেয়েটিকে একটা হোটেলে তুলে রেপ করতে গেল। জীবনের প্রথম রেপ বোধ হয়। একেবারেই আনাড়ি। কথা হল নেতা আনাড়ি, না নেতার ভূমিকায় অভিনয়কারী অভিনেতা আনাড়ি বলা মুশকিল। রেপটা তেমন জমল না। অবশ্য জমাবার উপায়ও তেমন ছিল না, সেন্সার কেটে দেবে। মেয়েটি সারা ঘরময় ছোটাছুটি করতে-করতে হঠাৎ একটা অ্যাশট্রে তুলে লিডারের মাথা লক্ষ্য করে ছুঁড়ল। বোম্বাই ছবি হলে অ্যাশট্রেটা মাথা মিস করত। কারণ বোম্বাই সংবিধানে অপরাধীকে শেষ মার মারার অধিকারী নায়ক। ভিলেন নায়িকাকে সেন্সার আইনের শেষ সীমা পর্যন্ত গিয়ে উন্মোচিত করবে। দর্শকরা যতটা পারেন দেখে নেবেন। আসনে টানটান। আরও একটু, আরও একটু। এমন সময় কাচের জানলা খানখান করে ভল্ট মেরে নায়কের প্রবেশ। তারপর বেধড়ক ধোলাই। দর্শকদের সে কি আনন্দ! পাপীর সাজা। তারপর আসবে সুদীর্ঘ এক নাচগানের দৃশ্য।
বাংলা ছবিতে অ্যাশট্রে লিডারের মাথায় লাগবে। রক্ত। সেই রক্ত দেখে নায়িকা পাগল হয়ে গেল। আমি আর আমার বন্ধু পাশাপাশি বসে সেই অপূর্ব ছবি দেখছি। বন্ধু বললে, ‘দেখবি ডিরেক্টার একটি বৈপ্লবিক কাণ্ড করবেন, হোল ফ্যামিলি কমপ্টি করবেন।’ হলও তাই। মা পাগল হলেন। শেষ দৃশ্যে ভাই। আমরা হাততালি দিয়ে উল্লাসে চিৎকার করে উঠলুম, ‘হয়েছে হয়েছে।’ পেছনের সারির মহিলা দর্শকরা তখন অভিভূত। চোখের জলে লেডিজ রুমাল সপসপে। তাঁরা সমস্বরে বললেন, ‘বেরিয়ে যান, বেরিয়ে যান। অসভ্য ইতর।’ ‘আমরা আর মুহূর্ত কাল বিলম্ব না করে বেরিয়ে এলুম। ছবির নাম আমি ভুলে গেছি। মৃত্যুর দৃশ্যে আমি চোখ বুজিয়ে থাকি। আমার ভীষণ হাসি পায়, সিনেমার সব মৃত্যু প্রায় একরকম। মাথাটা বালিশ থেকে একটু, একটু করে ওপর দিকে উঠতে থাকবে। চোখ দুটো ক্রমশই ঠেলে বেরিয়ে আসতে থাকবে। তারপর ঝপ করে মাথাটা পড়ে গিয়ে একপাশে কাত হয়ে যাবে। আর সঙ্গে-সঙ্গে বেহালা বেজে উঠবে করুণ সুরে। সমস্ত মৃত্যুই এই মৃগী রোগীর মতো। কোনও-কোনও মৃত্যুতে, যিনি মরছেন, তিনি কোনও জরুরি কথা বলার চেষ্টা করবেন। থেমে-থেমে, জড়িয়ে জড়িয়ে, হাঁপাতে হাঁপাতে; কিন্তু কিছুতেই বলতে পারবেন না। শেষে আঁক করে মরে যাবেন। আর সঙ্গে-সঙ্গে বুকের ওপর একজন এরোপ্লেনের মতো গোঁত্তা খেয়ে পড়ে যাবেন, হৃদয়-বিদারক ডাক ছাড়বেন—মাধুরী! সেই ডাক ফেঁড়ে বেরিয়ে যাবে সিটি মারা রেলগাড়ি। আত্মা মনে হয় রেলগাড়ি চেপে পরলোকে যায়। বড়-বড় পরিচালকরা মৃত্যুর দৃশ্যে নানারকম সিম্বল ব্যবহার করেন; যেমন এক ঝাঁক পায়রা ফটফট করে উড়ে গেল, কি একটা প্রদীপ নিবে গেল। পোড়া সলতের ধোঁয়া পাকিয়ে, পাকিয়ে উঠছে, কি একটা ছবি দড়ি ছিঁড়ে পড়ে গেল। কাচ ভেঙে খানখান। বৈদান্তিক সিম্বলও লাগানো হয়। মাটির একটি কলসি ভেঙে দেওয়া হল। মানে ঘট ভেঙে দেওয়া হল। দেহঘট। প্রেমিক বা প্রেমিকার মৃত্যু হলে, ভীষণ করুণ গান থাকবে। সেই গানের বাণীতে গোটাকতক পেটেন্ট শব্দ থাকবে—জীবন-পারাবার, মাঝি। অনুমতি মিললে, রবীন্দ্রসঙ্গীত লাগানো হবে— আছে দু:খ, আছে মৃত্যু। মৃত্যু আর চোখের জল এই নিয়েই বাংলা সিনেমা ও বেতার নাটক। কী কান্নাই যে কাঁদতে পারেন বাংলার নায়িকারা। সেলুলয়েড একেবারে ভিজে সপসপে। পরদা পর্যন্ত ভিজে যায়। সেইজন্যেই সাদাপরদায় অত ছোপছোপ দাগ। কোন একটি ছবিতে, নাম মনে নেই, মৃত্যুর দৃশ্যে গোটা পরদাটা কিছুক্ষণের জন্যে সাদা করে দেওয়া হয়েছিল, আর সঙ্গে-সঙ্গে অবুঝ-দর্শকদের সে কী হল ফাটানো চিৎকার। পুরোনো আমলের প্রেম হত রাতে। আকাশে একটা থালার মতো চাঁদ। একটা গাছের ডাল। চাঁদ-মুখ নায়িকা, সেই ডাল ধরে গান গাইবেন। ভীষণ বিরহের গান। ফটফট করে ফুল ফুটবে। কোকিল ডাকবে ঝোপের আড়ালে। বুঝে নিতে হবে নায়িকার অবস্থা শোচনীয়। প্রেম যমুনায় হাবুডুবু অবস্থা। প্রেমিক নায়কের একটা বাঁশি থাকবে। তিনি ফুরফুর করে বাজাবেন দূরে বসে। সে-যুগের প্রেমে তেমন সেকস ছিলই না। চুম্বন তো ছিলই না। ওই গান গাওয়ার অপরাধেই কত নায়িকার জীবন বরবাদ হয়ে গিয়েছিল। সে কালের প্রেমে তেমন ম্যানুয়েল লেবার থাকত না। বিনা পরিশ্রমের প্রেম। একালের বোম্বাই ছবির প্রেম তো বিশাল এক ফিজিক্যাল লেবার। নায়িকা নায়ককে নাচাতে-নাচাতে বিশাল এক প্রান্তরে নিয়ে গিয়ে ফেলবে। সেখানে পাহাড়, নদী, ঝরনা। সময়, সময় বরফ। নায়িকা গিরগির করে নাচতে-নাচতে একবার এদিক যায় তো একবার ওদিক। সে এক ভয়ঙ্কর উন্মত্ত অবস্থা। আর নায়ক যেন ফেথফুল অ্যালসেসিয়ান। বল দেখে লাফাচ্ছে, ঝাঁপাচ্ছে। ডিরেক্টার আগেই বলে দেন, দ্যাখো বাপু, ঘাম ছাড়া প্রেম হয় না। আর নায়িকার ওজনটা দেখে নাও। ওজন তোলার অভ্যাস আছে তো! নায়িকাকে বারকতক তুলতে হবে। দুহাতে চিৎ করে ফেলে বনবন করে ঘোরাতে হবে। এরপর আমরা জল ঢালব। নায়িকা না ভিজলে তার শরীরের খাঁজ-খোঁজ স্পষ্ট হবে না। ড্যাম্প নায়িকা মানে হট বকস অফিস। বাংলার নায়ক-নায়িকাদের সর্দির ধাত। অমন ভেজা ভিজলে নিউমোনিয়া হয়ে যাবে। উত্তম, সুচিত্রা তো বাংলা ছবির অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রেমিক-প্রেমিকা ছিলেন। সবই ফুসফুসে প্রেম, সুরেসুরে প্রেম। কথায় প্রেম। বলিষ্ট প্রেম নয়। সুচিত্রাকে কোলে নিয়ে উত্তম চরকিপাক দিচ্ছেন, এমন দৃশ্য ছিল না। আধুনিক বাংলা ছবিতে চেষ্টা চলছে—ঘরোয়া প্রেমকে মেঠো প্রেম করার, ঘর্মাক্ত প্রেম। তেমন জমছে না। সব গুডিগুডি নায়ক নায়িকা দৌড় ঝাঁপে তেমন অভ্যস্ত নয়। ছুটতেও পারেন না, তেমন তুর্কি নাচ নাচতেও পারেন না। ছোটার বদলে হেঁটে-হেঁটে প্রেম। সদাসতর্ক দৃষ্টি পায়ের দিকে। গাছের শিকড় কি ইটের টুকরোয় হোঁচট খেলে সেইটাই হবে আসল। প্রেম তো নকল। নায়িকার নাচ যেন আড়মোড়া ভাঙা। বুকের দিকটা একটু ঠেলে উঠলেই পরিচালক সন্তুষ্ট। বিশ-বাইশ লাখের ছবি, বেশির ভাগই ফ্লপ, ওর বেশি আর কি মশলা আশা করেন দর্শক? দুর্বল লিভারে কম মশলার স্টুই ভালো। বোম্বাই ছবির প্রেমিকা রীতিমতো লড়াই করে একেবারে শেষ দৃশ্যে, পরদা পড়ার মিনিটখানের আগে বিয়ে করেন। নায়কদের এমনই পোড়া বরাত, একটা ভিলেন নয়। গোটা একটা গ্যাং পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। এই একটু নাচ গান হয় তো, পর মুহূর্তেই ঘুসোঘুসি। শেষ লড়াইটা হবে তেলের গুদামে। টিন আর ব্যারেলের আড়ত। ঘুসির পর ঘুসি। ড্রাম উলটে পড়ছে, প্যানেল ভেঙে পড়ছে। ওদিকে আগুন লেগে গেছে। ভিলেনের গোদাটা নায়িকার মাকে এনে চেন দিয়ে বেঁধে রেখেছে। ওদিকে নায়িকাকে বেঁধে রাখা হয়েছে পোস্টে। দুটো হাত ওপরে তোলা। একে বলে লাস্ট মোমেন্ট সেকস। ক্রাইম সিন্ডিকেট বুঝতে পারছে না নায়িকাকে কী করা উচিত, পোড়ানো, পেটানো, ঝলসানো! কোনটা?
ডাকাতের ছবি হলে নায়িকাকে ভাঙা কাচের টুকরোর ওপর নাচানো হত। এই পরিস্থিতি থেকে নায়িকাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবেন নায়ক। নায়িকার মায়েরা চিরকালেই নেগলেকটেড। তিনি শেষ দৃশ্যে বাঁচতেও পারেন, মরতেও পারেন। মরার সম্ভাবনাই বেশি। ভিলেন লাস্ট মোমেন্টে মরতে-মরতে একটা গুলি ছুঁড়বেন। সেই গুলি মায়ের বুকে। তিনি বুক চেপে, নিভাঁজ, নিপাট শাড়ি পরে শুয়ে পড়বেন। এক পাশে নায়ক আর নায়িকা। নায়িকার চোখে জল। জল থেকে গান, গান থেকে নাচ। মিটে গেল মামলা। শেষ হল হামলা। ছবি সবই এক। একই নাম—পেয়ার কি লিয়ে অথবা প্রেম পরিণাম। এইটারই বাংলা প্রণয় পাশা।
সাবেক কালের বাংলা ছবিতে একটা প্রেমের ত্রিভুজ তৈরি করা হত। ত্রিভুজ ছাড়া প্রেম হয়? সেটাও হত প্রায় একই টাইপের। বড় লোকের একটা লালুভুলু ছেলে হত প্রতিদ্বন্দ্বী। সে আবার স্যুট-বুট-টাই পরে, ফোলা-ফোলা গাল নিয়ে, বোকা-বোকা কথা বলত। প্রখরা নায়িকার কিছুতেই তাকে পছন্দ হওয়ার কথা নয়। অথচ অভিভাবকরা সেই ছেলেটির সঙ্গেই মেয়েটির বিয়ে দেবেন। মেয়েটি যাকে চায়, সে আদর্শবাদী, শিক্ষিত এক মধ্যবিত্ত। গোটা ছবি জুড়ে মহা অশান্তি। শেষটায় দুটি পরিণতি হত। হয় এটা না হয় ওটা। হয় বিয়ে হবে না হয় মেয়েটি চিরকুমারী থাকার সিদ্ধান্তে সমাজ-সেবায় নিয়োজিত করবে নিজেকে। আধুনিক বাংলা ছবির প্রেমিক-প্রেমিকারা সব কাঁচা বয়সের। বোম্বাই ছবির ক্রেজ হল, টিনএজার লাভ স্টোরি। সেই হাওয়া এখানেও এসে গেছে। ‘বলো, জন্ম হইতেই আমাদের জীবন মায়ের জন্য বলি প্রদত্ত।’ সেই রকম জন্ম হইতেই এদের জীবন প্রেমের জন্যে নিবেদিত। বেশ আদুরে, আদুরে চেহারা সব। প্রেম ছাড়া তো আর অন্য কিছু করার নেই। এঁরা বোম্বাই হিরোর মতো কায়িক প্রেম করবেন না। মজুরি কম। অভ্যস্তও নন। গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে বসে থাকবেন। নায়িকার মাথা কাঁধে নিয়ে গান গাইবেন—চলো যাই বেড়িয়ে আসি তেপান্তরে। চলো, চলো বেড়িয়ে আসি। অথবা একটা পার্কে নায়িকা সামান্য একটু নাচার চেষ্টা করবেন। সে নাচ অনেকটা ওই দুহাত তুলে ‘আনিমানি জানি না’-র মতো। বা দুহাতে শাড়ির প্রান্ত ধরে অল্প একটু ওপরে তুলে, ‘কুমির তোর জলকে নেমেছি’ গোছের একটা ব্যাপার। নায়ক একেবারে স্টিম লন্ড্রি ফেরত। নিভাঁজ নিপাট। তিনি, ‘একবার বিদায় দে মা’-র ঢঙে দুহাত দুদিকে তুলে চারপাশে ঘুরঘুর করবেন ঘুরঘুরে পোকার মতো।
বাংলা ছবির ফাইট সিন তুলনাহীন। যেন ভল্লুকের লড়াই। খামচাখামাচি। আঁচড়া আঁচড়ি। ঠেলাঠেলি। ঘুসি খেয়ে নায়ক ছিটকে পড়ছে যেন সাবধানে বিছানায় পাশ ফিরছে। কোমরে দীর্ঘকালের আরথারাইটিসের ব্যথায় লেগে না যায়। বোম্বাই হিরোর কায়দায় ডিগবাজি খেয়ে লাফিয়ে উঠতে হবে। তাও খুব মেপে। যেন স্লো মোশানের নাগরদোলা। যেন বুড়ো বয়সে বাবা ডিগবাজি খাচ্ছে, ছোট ছেলেটি পেছন থেকে উৎসাহ দিচ্ছে—মারো, মারো, আর একটু, আর একটু পরিচালক বলছেন—বা: বাহাদুর, লড়ো বাহাদুর। আর বাংলা ছবির ভিলেন, সে-ও দেখার মতো। অনভ্যাসের ফোঁটা কপাল চড়চড়। আমরা বাঙালিরা হলুম গিয়ে কাছাটানা ভিলেন। সম্প্রতি অবশ্য বাজারে ক্যাডার রিলিজ করা হয়েছে। রিভলভার, ছোরা আসছে। মধ্যবিত্ত বাঙালির ছেলে ঠিক-ঠিক বিলিতি ভিলেন হয় কী করে। আমাদের ভিলেনদের কাজ চোখে-মুখে। আবার খাব গোল্লা গোল্লা চোখে নায়িকার দিকে তাকানো আর স্যাঙাতদের সঙ্গে মাল খেয়ে নকল মাতলামো।