সেবক
সত্যকে হায় হত্যা করে অত্যাচারীর খাঁড়ায়, নেই কি রে কেউ সত্যসাধক বুক খুলে আজ দাঁড়ায়? শিকলগুলো বিকল করে পায়ের তলায় মাড়ায়, – বজ্র-হাতে জিন্দানের ওই ভিত্তিটাকে নাড়ায়? নাজাত -পথের আজাদ মানব নেই কি রে কেউ বাঁচা, ভাঙতে পারে ত্রিশ কোটি এই মানুষ-মেষের খাঁচা? ঝুটার পায়ে শির লুটাবে, এতই ভীরু সাঁচা? – ফন্দি-কারায় কাঁদছিল হায় বন্দি যত ছেলে, এমন দিনে ব্যথায় করুণ অরুণ আঁখি মেলে, পাবক-শিখা হস্তে ধরি কে তুমি ভাই এলে? ‘সেবক আমি’ – হাঁকল তরুণ কারার দুয়ার ঠেলে। দিন-দুনিয়ায় আজ খুনিয়ার রোজ-হাশরের মেলা, করছে অসুর হক-কে না-হক, হক-তায়ালায় হেলা! রক্ষ-সেনার লক্ষ আঘাত বক্ষে বড়োই বেঁধে, রক্ষা করো, রক্ষা করো, উঠতেছে দেশ কেঁদে। নেই কি রে কেউ মুক্তি-সেবক শহিদ হবে মরে, চরণ-তলে দলবে মরণ ভয়কে হরণ করে, ওরে জয়কে বরণ করে – নেই কি এমন সত্য-পুরুষ মাতৃ-সেবক ওরে? কাঁপল সে স্বর মৃত্যু-কাতর আকাশ-বাতাস ছিঁড়ে, বাজ পড়েছে, বাজ পড়েছে ভারতমাতার নীড়ে! দানব দলে শাস্তি আনে নাই কি এমন ছেলে? একী দেখি গান গেয়ে ওই অরুণ আঁখি মেলে পাবক-শিখা হস্তে ধরে কে বাছা মোর এলে? ‘মা গো আমি সেবক তোমার! জয় হোক মা-র।’ হাঁকল তরুণ কারার-দুয়ার ঠেলে! বিশ্বগ্রাসীর ত্রাস নাশি আজ আসবে কে বীর এসো ঝুট শাসনে করতে শাসন, শ্বাস যদি হয় শেষও। – কে আজ বীর এসো। ‘বন্দি থাকা হীন অপমান!’ হাঁকবে যে বীর তরুণ, – শির-দাঁড়া যার শক্ত তাজা, রক্ত যাহার অরুণ, সত্য-মুক্তি স্বাধীন জীবন লক্ষ্য শুধু যাদের, খোদার রাহায় জান দিতে আজ ডাক পড়েছে তাদের। দেশের পায়ে প্রাণ দিতে আজ ডাক পড়েছে তাদের, সত্য-মুক্তি স্বাধীন জীবন লক্ষ্য শুধু যাদের। হঠাৎ দেখি আসছে বিশাল মশাল হাতে ও কে? ‘জয় সত্যম্’ মন্ত্র-শিখা জ্বলছে উজল চোখে। রাত্রি-শেষে এমন বেশে কে তুমি ভাই এলে? ‘সেবক তোদের, ভাইরা আমার! – জয় হোক মা-র!’ হাঁকল তরুণ কারার দুয়ার ঠেলে!