সেদিন অক্টোবর – ১৪

১৪

তানভীরের ফোনটা এসেছিল ফাহাদের ওয়ালিমার ঠিক পরদিন। বাংলাদেশের অপরিচিত নম্বর দেখে একটু অবাক হয়েছিল আরশান। তবে তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছিল 

ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তিটির পরিচয় পেয়ে। 

‘হ্যালো, আরশান বলছেন?’ 

‘জি বলছি। আপনি কে?’ 

‘আমি তানভীর।’ 

‘কে?’ 

আরশান একটু হোঁচট খাওয়া গলায় বলল, ‘কে?’ 

‘তানভীর।’ 

‘কোন তানভীর?’ 

‘সকালের ফিয়ান্সে।’ 

কয়েকটা সেকেন্ড নিঃশব্দে কাটার পর আরশান কাঠকাঠ গলায় বলল, ‘কী চাই?’ 

‘ভাই, শোনেন, আপনি তো জানেন সামনের মাসে সকালের সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে। জানেন তো?’ 

দৃঢ় এবং আত্মবিশ্বাসী শোনাল তানভীরের কণ্ঠস্বর। আরশান বুকের তোলপাড়টা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে ধীরেধীরে, টেনে টেনে শব্দ দুটো উচ্চারণ করল, ‘হ্যাঁ, জানি।’ 

‘তাহলে ভাই আপনি আর কোনো ঝামেলা কইরেন না।’

‘আমি তো কোনো ঝামেলা করিনি।’ 

‘করেননি একথা ঠিক। কিন্তু করতে কতক্ষণ? আপনার জানা উচিত যে সকালের সাথে আমার পরিচয় বহুদিনের। আমাদের ভালোবাসা রেসিপ্রোকাল।’ 

শরীরের সমস্ত তন্ত্রীতে একটা অসহ্য জ্বালা টের পেলো আরশান। হিমশীতল কণ্ঠে বলল, ‘ সকাল আপনাকে ভালোবাসে?’ 

তানভীর বিদ্রুপের হাসি হাসল। ‘কেন আপনার কোনো সন্দেহ আছে?’ 

ফোনের লাইন কেটে দিল আরশান। বুকের ভেতর সংক্রমিত হলো ভয়ঙ্কর গ্লানি। এমন প্রতারক বেইমান মেয়েকে ভালোবাসার অপরাধে অশুচি মনে হলো নিজেকে। খুন করতে ইচ্ছে হলো। পুরো পৃথিবীটাকে ভেঙেচুরে গুঁড়িয়ে দিতে ইচ্ছে হলো। দেওয়ালে মাথা ঠুকে ঠুকে মরে যেতে ইচ্ছে হলো! বলেছিল প্রেমে ব্যর্থ হয়ে কখনো মাতাল হবে না। কিন্তু ভেতরকার লুণ্ঠিত, উৎসন্ন এবং বিধ্বংসী আত্মাকে যখন নিয়ন্ত্রণে আনার আর কোনো উপায় অবশিষ্ট রইল না, তখন নিজ মুখ নিঃসৃত সেই দৃঢ় অঙ্গীকার মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য হলো। দুটো দিন সে অফিসে গেল না। কোনো কাজ করল না। শুধু মদ্যপ আর বেহেড হয়ে পড়ে রইল। ডুবে রইল বিভীষিকাময় এক নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে। ওর চারপাশে তখন কোনো জগত নেই, বাতাস নেই, আকাশ নেই, সুখ দুঃখ নেই, আছে কেবলই এক রোমহর্ষক সর্বগ্রাসী খা-খা শূন্যতা! 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *