১৩
পরদিন ওরা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল। নাবিলা, টিলি, সকাল আর সকালের মা। ফাহাদের অফিস আছে। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সে সময় দিতে পারল না। নাবিলা আর টিলি, দুজনেই এখন বেশ ভালো গাড়ি চালায়। কোনো ভয়-ভীতি নেই, জড়তা নেই। কয়েক মাসের ব্যবধানেই বেশ পাকাপোক্ত ড্রাইভার হয়ে উঠেছে দুজনে। মায়ের মেজাজ মর্জি বাড়ি থেকে বেরোনোর পর থেকে ফুরফুরে। ডিসির পথেঘাটে বেশ উদ্যমের সাথেই ঘুরে বেড়ালেন। হোয়াইট হাউজের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুললেন। ঘুরে ঘুরে মিউজিয়াম দেখলেন নিবিষ্ট মনে। মায়ের মানসিক উন্নতি ভালো লাগছিল সকালের। সেই আনন্দে সেও আনন্দিত হতে চাইছিল। কিন্তু কী করবে, মনের ওপর যে জোর নেই! যতই চেষ্টা করুক না কেন ভেতরকার হতাশা আর বিষণ্ণতা সে লুকাতে পারছিল না। তার মুখখানা ফ্যাকাশে। ঠোঁট শুকনো। চোখের চাউনিতে একটা দুঃখী-দুঃখী ভাব।
পরবর্তী কটা দিন ওরা নিউইয়র্কে কাটালো। বাঙালি অধ্যুষিত পাড়া জ্যাকসন হাইটসে মায়ের স্কুল জীবনের এক বান্ধবী থাকেন। সকালের দুঃসম্পর্কের মামা থাকেন আপস্টেট নিউইয়র্কে। পরিচিতদের বাসায় ঘুরে ঘুরে দুটা দিন কেটে গেল। তৃতীয় দিন ওরা গেল বাফেলো, নায়াগ্রাফলস। ঘুরে বেড়াতে কার না ভালো লাগে? মায়ের বিষণ্ণতা ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছিল। তিনি মানুষের সাথে হাসিমুখে কথা বলা শুরু করেছেন। স্বাভাবিক আচরণ করছেন। এর চেয়ে সুখের সংবাদ সকালের জন্য আর কী হতে পারে? কিন্তু সকাল এসব সুখের ছোঁয়া টের পাচ্ছে না। তার মন অবশ হয়ে আছে। সমগ্র সত্তা অনুক্ষণ ছেয়ে আছে এক গভীর ম্লানালোকে। জীবনের প্রতি তীব্র বিষাদ জাগছে।
আশ্চর্য বিষয় হলো এই কদিন আরশান একটা বার তার খোঁজ নেয়নি। এমনকি নম্বরটা পর্যন্ত আনব্লক করেনি। মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে সারাদিনে একাধিকবার ফোন চেক করেছে সকাল। কিন্তু সেই মানুষ লাপাত্তা। কী নিষ্ঠুর! কী ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর! এত কাছে থেকেও কাঙ্ক্ষিত মানুষটি যেন শত সহস্র মাইল দূরে। অথচ মন থেকে কিছুতেই তাকে দূরে সরানো যায় না। এভাবে কি বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে? করে না তো! কেবলই মরে যেতে ইচ্ছে করে। বাবাকে দেখতে ইচ্ছে করে। বাবা থাকলে কি আজ জীবনটা এমন দুর্বিষহ হয়ে উঠত?