সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি – কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়

সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি – কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়

একবার স্কুটার অ্যাক্সিডেন্ট করে হাত ভাঙার পর মা আমাকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিয়েছিল যে আর কোনোদিন দু-চাকার গাড়ি চালাব না। তারপর থেকেই আমি একটা সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ির খোঁজ করছিলাম। অনেককে বলেও রেখেছিলাম। রবিবার কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে ফোন করতাম।

একদিন সন্ধেবেলায় আমার বাড়িতে এসে হাজির হলেন এক ভদ্রলোক। নাম বললেন তুষার সামন্ত। জিজ্ঞেস করলেন আমার গাড়ি কেনা হয়ে গেছে কিনা। আমি ‘না’ বলাতে উনি বললেন, ”আমার গাড়িটা আমি বিক্রি করে দিতে চাই। আপনি একবার আমার গাড়িটা দেখুন।”

ভদ্রলোক অচেনা। তাই আমি ওনার ব্যাপারে প্রথমেই একটু খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করে বললাম, ”আমার খবর আপনি কোথার থেকে পেলেন?”

—”ভোম্বল আমার গ্যারাজের মেকানিক। অনেকের মতো ওকেও আমি জানিয়ে রেখেছিলাম আমার প্রয়োজনের কথা।”

আমি আশ্বস্ত হয়ে বললাম, ”ঠিক আছে, আপনি আপনার ঠিকানা, ফোন নম্বর দিন, একদিন আমি গিয়ে দেখে আসব আপনার গাড়ি।”

—”আপনাকে কষ্ট করে যেতে হবে না। গাড়িটা আমি চালিয়েই এনেছি। আপনার বাড়ির সামনেই আছে। আপনি বাইরে আসুন, এখনই দেখে নিন।”

আমি একটু আশ্চর্যই হলাম। গাড়ি বিক্রি করার জন্য কেউ গাড়িটা চালিয়ে নিয়ে সম্ভাব্য খদ্দেরের বাড়িতে চলে আসে না। তা ছাড়া আমার আরেকটা অসুবিধাও ছিল। ড্রাইভিং স্কুলে আমি গাড়ি চালানো শিখে লাইসেন্স পেলেও চার চাকা চালাতে আমি সেরকম পটু নই, চার চাকার ব্যাপারে সেরকম জ্ঞানগম্যিও নেই। আমার মনে পড়ল পাড়ার বন্ধু অসীমের কথা, গাড়ি সম্পর্কে ওর অসাধারণ জ্ঞান, ভদ্রলোককে চা দিয়ে একটু অপেক্ষা করতে বললাম, অসীমকে ফোন করলাম এবং ভাগ্যগুণে ওকে পেয়েও গেলাম। পনেরো মিনিটের মধ্যে অসীম চলে এল আমাদের বাড়ি।

অসীমকে নিয়ে বেরিয়ে এলাম গাড়িটা দেখতে। আমাদের পাঁচিল ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে গাড়িটা। মেটে লাল রং চকচক করছে। গাড়িটার চারপাশ ঘুরে দেখলাম গাড়িটার বডিতে একটা আঁচড়েরও দাগ নেই। ভদ্রলোক অত্যন্ত যত্নে রেখেছেন গাড়িটা। শুধু চারটে চাকার মধ্যে একটা চাকার ক্যাপ নেই। এত যত্নে রাখা নিঁখুত এই গাড়িটার এই একটাই বিসাদৃশ্য। ভদ্রলোককে জিজ্ঞাস করতে উনি বললেন, ”কয়েকদিন আগে ক্যাপটা ঢিলে হয়ে খুলে পড়ে গেছে। একটা সিঙ্গল ক্যাপ কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। কিনতে হলে চারটেই কিনতে হবে। আজ কিনব, কাল কিনব করে কেনা আর হয়ে ওঠেনি। তা ছাড়া ক্যাপেরতো কোনো ফাংশন নেই, ওটা চাকার ডেকরেশন মাত্র। আপনারা আসল জিনিসটা দেখুন। চালিয়ে দেখুন গাড়ির ইঞ্জিনটা কেমন।”

তুষারবাবু অসীমের দিকে গাড়ির চাবিটা বাড়িয়ে দিলেন। আমি সামনে অসীমের পাশে বসলাম। পিছনে তুষারবাবু। গাড়িতে উঠে স্টার্ট দেওয়ার কিছুক্ষণ পরে অসীম গাড়ির এসিটা চালিয়ে দিল। আমি এতদিনে অসীমের কাছে কিছু কিছু ফান্ডা পেয়েছি। তার একটা হল এসির লোড নিয়ে গাড়িটা কেমন চলে দেখে বোঝা যায় ইঞ্জিনের কন্ডিশন কেমন।

এসিটা সত্যিই আরামদায়ক। বরং আমার একটু শীত শীত করছিল, অসীম তখন ছোটোখাটো গাড্ডায় চাকা ফেলে দেখে নিচ্ছে গাড়ির সাসপেনশন কীরকম। এসির ঠান্ডা হাওয়া বয়ে গাড়ির পারফিউমের সুন্দর একটা গন্ধ নাকে আসছিল। তার মধ্যে অসীম চালিয়ে দিল গাড়ির মিউজিক সিস্টেমটা। অসীমবাবুর রুচি ভালো। হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার বাঁশির মূর্ছনায় স্বর্গীয় হয়ে গেল গাড়ির ভেতরটা। অসীম আমাকে এক ফাঁকে ছোট্ট একটা ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিল গাড়িটার কন্ডিশন দুর্দান্ত।

গাড়িটার ট্রায়াল রান শেষ করে আমরা বাড়ি ফিরে এলাম। অসীম তুষারবাবুকে জিজ্ঞেস করল, ”আপনার গাড়ির কন্ডিশন এত ভালো, আপনি গাড়িটা বিক্রি করে দিতে চাইছেন কেন?”

—”একদম নিরুপায় হয়ে বিক্রি করছি। আমি ট্রান্সফার হয়ে নিউ ইয়র্ক চলে যাচ্ছি। সামনের সপ্তাহেই আমাকে চলে যেতে হবে। কলকাতায় ভাড়া বাড়িতে থাকি। গাড়িটা রেখে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। বাধ্য হয়ে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে।”

অসীম ভদ্রলোকের জরুরি প্রয়োজনটার সুযোগ নিয়ে বলল, ”আমরা কিন্তু এক লাখ দিতে পারব।”

ভদ্রলোক এককথায় রাজি হয়ে গেলেন। আমি বেঁকা চোখে অসীমের দিকে তাকালাম। এককথায় রাজি হওয়াতে ওর ভুরু দুটোও কুঁচকে আছে। গম্ভীর গলায় বলল, ”কোনও গণ্ডগোল নেইতো?”

—”মোটর ভেইকেলসে, পুলিশের ট্রাফিক ডিপার্টমেন্টে খোঁজ করে নিন। পুরো খোঁজ খবর পেলে তবেই আমাকে টাকা দেবেন।”

ওনার শর্তে আমি রাজি হয়ে গেলাম। তবে তারপরে আরও একটা অবাক করে দেওয়া প্রস্তাব দিলেন উনি।

—”সব যখন পাকা কথা হয়েই গেল, গাড়িটা আজ থেকে আপনার কাছেই থাক।”

আমি তাড়াতাড়ি প্রতিবাদ করে উঠলাম, ”না, না, তা হয় না। আগে আপনাকে টাকা দিয়ে ওনারশিপ নিই।”

তুষারবাবু ম্লান হেসে বললেন, ”খুব অবাক হচ্ছেন তাই না? সত্যি কথা বলব? গাড়িটা আমার ভীষণ প্রিয়। আমি তো জানি আপনারা খোঁজখবর করে কোনও গণ্ডগোল পাবেন না। আর গাড়িটাও আপনার হয়ে যাবে। একবার যখন মনস্থ করে ফেলেছি যে গাড়িটা আপনাকে বিক্রি করে দেব তখন আর চোখের সামনে গাড়িটা রেখে মন খারাপ বাড়াতে চাই না।”

তুষারবাবুর জোরাজুরিতে রাজি হয়ে গেলাম, আসলে নিজের ভেতরেও ঝাঁ চকচকে গাড়িটা পাওয়ার একটা উত্তেজনাতো ছিলই। অসীম বাস্তববুদ্ধিসম্পন্ন ছেলে। তুষারবাবুকে বাড়িতে নামিয়ে আসার অছিলায় ওর বাড়িতেই নিয়ে গেল আমাকে। বাড়িতে দেখলাম তুষারবাবুর স্ত্রী আর ছোট্ট এক ছেলে আছে। ফেরার সময় তুষারবাবুর পাড়ার এক পানের দোকান থেকে অসীম কায়দা করে খোঁজ নিয়ে নিল, গাড়িটা তুষারবাবুরই। রোজ সকালে উনি গাড়িটা চেপে ছেলেকে স্কুল যাওয়ার বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে অফিস যান আর সন্ধেবেলায় বাড়ি ফেরেন।

বাড়ি ফিরেই আমি চিৎকার করে মাকে বললাম, ”মা গাড়ি কেনা হয়ে গেছে, শিঘ্রি দেখবে এসো।” এরকম দুম করে সন্ধেবেলায় গাড়ি কেনা হয়ে গেল দেখে মা-বাবাও খুব অবাক হল। অসীম মা-বাবাকে দু-চক্কর গাড়িটায় ঘুরিয়েও দিল, আমার মতো মা-বাবারও খুব পছন্দ হয়ে গেল গাড়িটা। তবে মা বলল, ”আগে তুষারবাবুকে পুরো টাকাটা দে, তারপরে মন্দিরে পুজো দিয়ে গাড়িটা চাপবি।”

খুব খুশি খুশি মনে ঘুমোতে গেলাম। উত্তেজনায় রাত্রে প্রথমে ঘুমই আসছিল না। তারপর ঘুমিয়ে পরেই এক সাংঘাতিক স্বপ্ন দেখলাম। স্বপ্নে দেখলাম, আমি গাড়িটার কাছে এগিয়ে গেলাম। তারপর চাবি দিয়ে পেছনের ডিকিটা খুললাম। ডিকির মধ্যে ‘দ’ করে রাখা আছে একটা লাশ। লাশটার চোখটা বন্ধ ছিল। হঠাৎ পট করে খুলে গেল চোখটা। ফ্যাকাসে মুখে নিষ্পলক দৃষ্টিতে বড়ো বড়ো চোখ করে আমার দিকে চেয়ে থাকল লাশটা।

আমার মুখ দিয়ে গোঙানির মতো আওয়াজ বেরোচ্ছিল। পাশের ঘর থেকে ঘুম ভেঙে মা-বাবা উঠে এল। ঝাঁকিয়ে আমার ঘুম ভাঙিয়ে দিল। আমি কিছুতেই বলতে পারলাম না লজ্জায় আমি কী স্বপ্ন দেখেছি। মা আমাকে জল খেতে বলল। জল খেয়ে লজ্জারও মাথা খেলাম আমি। মাকে বললাম রাত্রে আমার পাশে শুতে।

মা পাশে শোওয়াতে একটু নিশ্চিন্ত হলাম। তবে মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকল একটা ভয়। গাড়িটার সব দেখা হলেও ডিকিটাতো দেখা হয়নি। অসীম কি দেখেছে? ও সাধারণত দেখে নেয় স্টেপনির কন্ডিশন কেমন, জ্যাকট্যাক ঠিকঠাক আছে কিনা। ভীষণ ইচ্ছে করছিল অসীমকে একবার ফোন করতে। কিন্তু ঘড়িতে রাত্রি দুটো চল্লিশ দেখে অসীমকে আর ফোন করলাম না। অনেকক্ষণ ঘুম না-এলেও শেষপর্যন্ত ভোরের দিকে ঘুমিয়ে গেলেও আর কোনও দুঃস্বপ্ন দেখলাম না।

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই প্রথমেই গাড়ির চাবিটা নিয়ে নীচে নেমে এলাম। একটা দমবন্ধ উত্তেজনা নিয়ে গাড়ির ডিকিটা খুললাম। তারপর স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লাম, না! ডিকিতে কিচ্ছু নেই। খুব খুঁটিয়ে ডিকির ম্যাটটা দেখলাম। কোনো রক্তের দাগটাগও নেই। বুকের ভেতর থেকে ভারি বোঝাটা নেমে গেল। রোদ্দুরে ঝকঝক করছে গাড়িটা। সত্যিই আশাতীত কমদামে দুর্দান্ত একটা গাড়ি এসেছে হাতে।

অফিসে এসে সকালের কাজের ধাক্কাটা সামলেই অসীমকে ফোন করলাম, ”মা কিন্তু বারবার বলে দিয়েছে আজ একটা পুজো দিতে। তোকে ছাড়াতো গতি নেই।”

অসীম আমাকে ঠেস দিয়ে বলল, ”তুই ড্রাইভিংটা কীজন্য শিখেছিস বলতো? আগে না-হয় তোর গাড়ি ছিল না, কিন্তু এখনতো……..”

—”তোকে ছাড়া গতি নেই। কারণ ড্রাইভিংটা প্র্যাকটিস করতে হলে তোকে দরকার। আর গাড়িটাতো এখনও কেনাই হয়নি। তুই পুলিশের কাছ থেকে খোঁজখবর না-এনে দিলে…”

—”ভালো মনে করিয়ে দিয়েছিস। দাঁড়া আমি এখনই শান্তিদাকে বলছি” তবে তুইও একটা কাজ কর। ভোম্বলের গ্যারেজ থেকে তুষারবাবু সম্পর্কে একটু খোঁজখবর কর।”

কথাটা শুনে আমার একটু খটকা লাগল। অসীম একথাটা কেন বলল, আমার গলাটা শুনে অসীম বলল, ”না, আসলে অনেক অ্যাক্সিডেন্টের রেকর্ডতো পুলিশের কাছে থাকে না। গাড়ির মেকানিকরা বলতে পারে গাড়িতে অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল কিনা। দরকার হলে ভোম্বলকে ডেকে একবার গাড়িটা দেখিয়ে নে।”

আমার মনে খচখচানিটা আবার শুরু হয়ে গেল। ফোনটা কেটে দেওয়ার আগে আমি অসীমকে জিজ্ঞাসা করলাম, ”কাল রাত্রে তুই কোনো স্বপ্ন দেখেছিস অসীম?”

অসীম গম্ভীর গলায় বলল, ”দেখেছি, তোর নতুন গাড়িটায় চাপিয়ে তুই আমাকে ‘আমার বাংলা’-য় খাওয়াতে নিয়ে যাচ্ছিস।” হো হো করে হেসে উঠল অসীম। অসীমের ইয়ার্কিতে কিন্তু আমার মনের খচখচানিটা দূর হল না। অফিস থেকে একটু আগেই বেরিয়ে আমি সোজা চলে গেলাম ভোম্বলের গ্যারাজে।

—”তুষারবাবুর মতো সজ্জন লোক আর দুটো হয় না”। ভোম্বল তুষারবাবুকে দরাজ হাতে সার্টিফিকেট দিয়ে বলল, ”ওনার গাড়িটার মতো গাড়ি হয় নাকি? চারবছর হতে চলল। মনে হবে গেল মাসেই শোরুম থেকে কিনেছেন। শুধু বাড়ি আর অফিস, অফিস আর বাড়ি— এর বাইরে কোথাও যেতেন না। কতবার বলেছি একবার লং ড্রাইভে দিঘা ঘুরে আসুন বউদি আর ছেলেকে নিয়ে।”

আমি আবার নতুন করে আশ্বস্ত হলাম। এবার শুধু অসীমের পুলিশের রিপোর্টটা দরকার। উত্তেজনায় অসীমকে ফোন করেই মৃদু ধমক খেলাম।

—”দাঁড়া, এটা কী ট্রেনের টাইমের এনকোয়ারি নাকি? জিজ্ঞেস করলাম আর টুক করে বলে দিল। শান্তিদার শালা দুটো দিন সময় চেয়েছে।”

সন্ধের মুখে বাড়ি ফিরতে প্রথমেই চোখে পড়ল গাড়িটা। মনের মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস কাজ করছে, এ-গাড়িটার মালিক আমি না-হয়ে আর যাই না। তবে বাড়ি ফিরতেই মা দু-কথার পর তাড়া দিল, ”কীরে গাড়িটা পুজো দেওয়ার ব্যাপারে কী করলি?”

—”অসীমকে বলেছি মা, সবাই মিলে গিয়ে একদিন পুজো দেব।”

পরের দিন রাত্রে আমি কোনো স্বপ্ন না-দেখলেও হঠাৎ একটা আচমকা শব্দে আমার ঘুমটা ভেঙে গেল। আজও সেই গভীর রাত্রি। আড়াইটে। আওয়াজটা মনে হল গাড়ির দরজা বন্ধ করার আওয়াজ। আর সেটা আমাদের বাড়ির কম্পাউন্ডের ড্রাইভ থেকে। তার মানে আওয়াজটা হল আমার হাতে চলে আসা গাড়িটার থেকে? চট করে আমার মনে পড়ে গেল অসীম সাবধান করে দিয়েছিল, গাড়ির মিউজিক সিস্টেমটা খুলে রাখতে। আজকাল চোরের খুব উপদ্রব হয়েছে। মিউজিক সিস্টেমটা ডিট্যাচ করতে বেমালুম ভুলে গেছি। শিরদাঁড়া টান টান করে আমি দোতলার জানলার একপাশে চলে এলাম। এই জানলা দিয়ে দেখা যায় গাড়িটা। চোরেদের যাতে চোখে না-পড়ে যায় তাই জানলার একপাশ চেপে পর্দাটাকে অল্প ফাঁক করে বাইরে তাকালাম। আর সঙ্গে সঙ্গে শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা একাট স্রোত নেমে গেল। গাড়ির সামনের চাকায় ঠেস দিয়ে বসে আছে সেই লোকটা, যার লাশটাকে কাল রাতে আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম। সেই বড়ো বড়ো চোখগুলো সরাসরি চেয়ে আছে আমার চোখের দিকে।

কোনোরকমে চোখ বন্ধ করে মায়ের ঘরে চলে এলাম। মাকে আর কিছু বললাম না। মাকে ঠেলেঠুলে অল্প জায়গা করে শুয়ে পড়লাম।

পরের দিন সকালে উঠে ঠিক করলাম, মায়ের কথা শুনে আজ পুজোটা দিয়েই আসব, বিশ্বাস করি বা না-করি গাড়িটার সঙ্গে একটা অশুভ কিছু ব্যাপার আছে। অফিসে এসে কাজ গুছিয়েই প্রথমে অসীমকে ফোন করলাম। ফোনটা ধরে অসীম প্রথমেই বলল,—”তোকে এক্ষুনি ফোন করতে যাচ্ছিলাম। শান্তিদা ওনার শালার কাছ থেকে খবর পেয়ে গিয়েছে। তোর গাড়িতে কোনও কেস নেই। একদম ক্লিয়ার।”

অসীমকে দু-রাত্রির অভিজ্ঞতা কিছু বললাম না। ও বিশ্বাস করবে না। আমার পেছনে লাগবে। যথাসম্ভব স্বাভাবিক গলায় বললাম, ”ঠিক আছে। আজকে অফিসের পর তুই চলে আয়। তুষারবাবুকে চেকটা দিয়ে সেল ডিডটা সই করিয়ে নেব। তারপর গাড়িটা নিয়ে মন্দিরে পুজো দেব। আর তোর দেখা স্বপ্ন পূরণ করিয়ে দেব। মানে রাত্রে বাইরে একসঙ্গে ডিনার।”

”তথাস্তু!” অসীম খুশি খুশি মনে ফোনটা ছেড়ে দিল। আমিও ক্রমশ অফিসে সব কাজের চাপে রাতের আতঙ্কটা ভুলে গেলাম। কিন্তু বিকেলবেলায় সব পরিকল্পনা ওলট-পালট হয়ে গেল, অসীমের একটা ফোন পেয়ে।

—”সমু, একটা প্রবলেম হয়ে গেছেরে। আমাকে আজ রাত্রের ট্রেনে আমার বসের সঙ্গে ভুবনেশ্বর চলে যেতে হচ্ছে। হঠাৎ করে ঠিক হয়েছে। সেলসের একটা আর্জেন্ট ব্যাপার আছে। ফিরতে ফিরতে মনে হচ্ছে চার-পাঁচ দিন লেগে যাবে।”

আমি প্রমাদ গুনলাম। তাহলে? অসীম ছাড়াতো গতি নেই। গাড়িটা চালাবে কে? পুজো দেওয়ার কী হবে? মুহূর্তের মধ্যে রাত্রের দেখা সেই দুটো বড়ো বড়ো নিষ্পলক চোখ মনের মধ্যে ভেসে উঠল। ভয়ংকর চোখদুটো ভুলতে আমি অফিসের চারিদিকের জিনিসপত্তর দেখতে আরম্ভ করলাম। আর মনে মনে ভাবতে থাকলাম কী উপায় করা যায়? তখনই মনে পড়ল ভোম্বলের কথা।

ভোম্বলের মোবাইল নম্বরটা সঙ্গেই ছিল। ভোম্বলকে ফোন করে বললাম, ”ভোম্বল, সন্ধেবেলায় একটা ড্রাইভারের ব্যবস্থা করে দিবি?”

ভোম্বল একটু চিন্তা করে বলল, ”ঠিক আছে। একটা ছেলেকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। ছেলেটার নাম রাজা।”

সন্ধে পেরোতেই বাড়ি ফিরে এলাম। গেট পেরিয়ে ড্রাইভে ঢুকতেই দেখলাম গাড়িটা ল্যাম্পপোস্টের আলোয় চকচক করছে। আর একটা ফেদার ডাস্টার দিয়ে খুব যত্ন করে গাড়িটা পরিষ্কার করছে রোগা মতো একটা ছেলে। আমি এগিয়ে যেতেই ছেলেটা খুব বিনীত গলায় আমাকে বলল, ”ভোম্বলদা আমাকে পাঠিয়েছে।”

আমি ব্যাগ থেকে দশ টাকা বার করে ছেলেটার হাতে দিয়ে বললাম, ”তুমি একটু চা খেয়ে এসো। আমি গা ধুয়ে পোশাকটা ছেড়েই আসছি।”

বাড়িতে ঢুকেই দেখলাম বারুইপুর থেকে অঞ্জলি কাকিমা এসেছেন। এই কাকা-কাকিমা প্রায় আসেনই না, তাই বাবা-মাকে নিয়ে মন্দিরে পুজো দেওয়ার যে পরিকল্পনাটা ছিল সেটা বাতিল করতে হল। তবে মাকে আলাদা করে ডেকে বললাম, ড্রাইভার ডাকা হয়ে গেছে। বাইরে অপেক্ষা করছে। তুষারবাবুকে চেকটা আর পুজোটা দিয়ে আসি, অসীম ফিরে এলে আরেকবার না-হয় সবাই মিলে মন্দিরে যাবে।

তাড়াতাড়ি চা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম। রাজা ড্রাইভ থেকে রাস্তায় গাড়িটা বের করে জানতে চাইল, ”কোথায় যাব স্যার?”

আমি তুষারবাবুর বাড়ির ঠিকানাটা বললাম। রাজা দেখলাম বেশ চৌকস ছেলে। শান্ত চুপচাপ হলে কী হবে, রাস্তার ডাইরেকশন সব জানে। কাউকে জিজ্ঞেস না-করে একদম নিয়ে গিয়ে পৌঁছে দিল তুষারবাবুর বাড়ির সামনে। কিন্তু গোল বাঁধল অন্য জায়গায়। তুষারবাবুর দরজায় তালা ঝুলছে। তাড়াহুড়োতে মোবাইলটা নিয়ে আসতে ভুলে গেছি। ভদ্রলোক কখন ফিরে আসবেন জানার উপায় নেই। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ঠিক করলাম মন্দিরে পুজোটা দিয়ে আসি। ফেরার পথে না-হয় আরেকবার খোঁজ করব তুষারবাবুর। গাড়িতে ফিরে এসে রাজাকে বললাম, ”লেক কালীবাড়ি।”

রাজার কলকাতার রাস্তাঘাট সম্পর্কে জ্ঞান দেখে আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছিলাম। অনায়াসে এগলি-ওগলি করে গল্ফগ্রিনের রাস্তাটা ধরল। কিছুটা এগোতেই রাস্তাটা একদম ফাঁকা ফাঁকা হয়ে গেল। আমি দেখলাম এ রাস্তাটা আমার চেনা। সেদিন অসীম এই রাস্তাটাতেই আসতে চেয়েছিল আর তুষারবাবু প্রচণ্ড আপত্তি করেছিলেন। আমি রাজাকে জিজ্ঞেস করলাম, ”এটা দিয়ে কী তাড়াতাড়ি হবে?” কিন্তু রাজা কোনো উত্তর দিল না।

একদম জনমানবশূন্য রাস্তা। কলকাতার রাস্তা রাত্রি আটটায় এরকম ফাঁকা একটু অস্বাভাবিক। রাস্তার আলোগুলোও টিমটিমে। দিব্যি চলছিল গাড়িটা। হঠাৎ কতকগুলো কুকুর প্রচণ্ড জোরে ঘেউ ঘেউ করতে করতে ছুটে এল গাড়িটার দিকে। স্কুটার চালাতে গিয়ে এরকম অভিজ্ঞতা আমার আছে। কুকুর তেড়ে এলে স্কুটার থামিয়ে দিয়ে কড়া গলায় ধমকে উঠলে ওরা পিছু হটে যায়। আমি রাজাকে বললাম, ”গাড়িটা একটু থামাও।”

এই প্রথম রাজা দেখলাম আমার কথা শুনল না। উলটে গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিল। কুকুরগুলো দৌড়োতে দৌড়োতে ধাওয়া করেছে আমাদের গাড়িটা। ওদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। আমার প্রচণ্ড বিরক্ত লাগছিল। আমি রাজার ওপর রেগে উঠলাম, ”কী হচ্ছে রাজা? গাড়িটা থামাও না।”

ক্যাঁচ করে রাজা গাড়িটার ব্রেক কষল। তারপরে একটা অপ্রত্যাশিত কাজ করল। গাড়ির স্টার্টটা বন্ধ করে দিয়ে আমার দিকে একবারও না-তাকিয়ে চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে হাঁটতে আরম্ভ করল।

আমি পড়লাম মহাবিপদে। প্রচণ্ড বিরক্ত হলাম ভোম্বলের ওপর। এই খুব ভালোছেলের নমুনা? সঙ্গে মোবাইল নেই, গাড়ি প্রায় চালাতেই জানি না আর ছেলেটা এই জনমানবশূন্য জায়গায় ছেড়ে পালাল!

কুকুরগুলো সংখ্যায় অনেক বেড়ে গেছে। প্রায় গোটা গাড়িটা ঘিরে ধরেছে। কোথাও ওদের পাগুলো বনেটের ওপর কোথাও জানলার কাচে আঁচড়াচ্ছে। এটা আরেকটা বিপদ। গাড়ি থেকে নামারও কোনও উপায় নেই। কোনোরকমে আমি ড্রাইভিং সিটে এলাম। ভাবলাম হর্ন বাজালে কুকুরগুলো যদি সরে বা হর্নের আওয়াজ শুনে কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসে, কিন্তু কোনো লাভ হল না। কুকুরগুলো যে চিৎকার করছিল সেই চিৎকারই করতে থাকল। আমি অসহায়ের মতো বসে রইলাম।

হঠাৎ দেখি কুকুরগুলোর ডাকগুলো সব পালটে গেল। সেই হিংস্র ডাকগুলো কেমন কুঁই কুঁই করে ডাক হয়ে গেল। কয়েকটা কুকুর সুর করে কেঁদে উঠল। আর সেই সময়ই আমার চোখে পড়ল লুকিং গ্লাসটায়। বুকের মধ্যে থেকে হৃৎপিণ্ডটা মনে হল বেরিয়ে আসবে। আয়নায় দেখলাম পেছনের সিটে বসে আছে সেই লোকটা। আয়না দিয়ে বড়ো বড়ো নিষ্পলক দৃষ্টিতে সোজা চেয়ে আছে আমার দিকে।

বাইরের কুকুরগুলোর ভয় তুচ্ছ মনে হল। কোনোরকমে গাড়ি থেকে নেমে এলাম আমি। গাড়ির যা হয় হোক। কোনোদিকে না-তাকিয়ে সোজা হাঁটতে থাকলাম আমি। সবে কয়েক পা এগিয়েছি, এমন সময় পেছন থেকে জ্বলে উঠল গাড়ির হেড লাইটটা সেই আলোয় আমি দেখলাম রাস্তার ধারে চকচক করছে থালার মতো একটা জিনিস। আমি মুখটা ঘুরিয়ে নিতেই পেছন থেকে বেজে উঠল হর্নটা। বার দুয়েক এরকম হওয়ার পর আমার মনে হল, আরে এটা গাড়ির চাকার হাফ ক্যাপটা নয়তো? একটা ঝোপের পাশে পড়ে আছে।

খুব ভয় পেয়ে গেলে বোধহয় অদৃশ্য শক্তি পরিচালনা করে। পায়ে পায়ে আমি এগিয়ে গেলাম। যে কুকুরগুলো ঘেউ ঘেউ করছিল তারা সব দৌড়ে কোথায় যেন পালিয়ে মিলিয়ে গেল। নীচু হয়ে আমি হাফ ক্যাপটা তুলতে যাব হঠাৎ শুনি একটা কেঁউ কেঁউ করে ক্ষীণ আওয়াজ। ঝোপটার মধ্যে দেখলাম একটা ছোট্ট কুকুর ছানা গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে।

হোক না কুকুরছানা। একটা প্রাণতো। কুকুরছানাটাকে কোলে তুলে নিলাম। নরম তুলতুলে গা আর শরীরের ধুকপুকানিটা আমাকে কীরকম যেন একটা সাহস জোগাল। আমার মনে হল, আমি যেন আর ঠিক একা নই। গাড়ির কাছে ফিরে যাওয়ার সাহস পেলাম। গাড়িতে ফিরে এসে সিটের ওপর ওকে বসিয়ে মা দুর্গা বলে গাড়িতে স্টার্ট দিলাম এবং দেখলাম দিব্যি গাড়িটা চালিয়ে বাড়ি ফিরে আসতে পারলাম।

বাড়িতে ফিরে ড্রাইভে গাড়িটা ঢুকিয়ে কুকুরছানাটাকে কোল থেকে ড্রাইভে নামালাম। এবার খেয়াল করলাম কুকুরছানাটার পেছনের একটা পায়ে চোট আছে। হাঁটতে পারছে না। আমি আবার ওকে কোলে তুলে নিলাম। দরজা খুলে কুকুরছানা কোলে নিয়ে আমাকে দেখে মা খুব বকাবকি আরম্ভ করে দিল, ”তোর কী আক্কেল বুঝি না। মোবাইলটা ফেলে গেছিস। তারওপর দুটো ড্রাইভারকে আসতে বলেছিস। ভোম্বলের গ্যারাজ থেকে রাজা বলে একটা ড্রাইভার এসে এই এতক্ষণ অপেক্ষা করে করে চলে গেল……”

আমি মাকে বকাঝকা শেষ না-করতে দিয়ে বললাম, ”শিগগির খানিকটা গরম দুধ দাও। বেচারির মনে হচ্ছে খুব খিদে পেয়েছে।”

মা-র অবশ্য রাগতে যতক্ষণ, ঠান্ডা হতেও ততক্ষণ। কুকুরছানাটাকে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মা আদর করে নাম দিয়ে দিল ভোলা। আমার খাটের তলায় মা কাঁথা দিয়ে ভোলার বিছানা করে দিল। কুণ্ডলী পাকিয়ে ভোলা দিব্যি ঘুমিয়ে পড়ল বিছানাটায়।

রাত্রি আড়াইটেয় আবার ঘুম ভেঙে গেল। এবার আর কোনো স্বপ্ন দেখে নয় বা গাড়ির দরজার আওয়াজ শুনে নয়। হঠাৎ শুনি ভোলা কুঁই কুঁই করে ডাকছে। বেডল্যাম্পটা জ্বালিয়ে প্রথমেই খাটের তলাটা দেখলাম। ভোলার বিছানাটা ফাঁকা। তারপরেই দেখলাম ভোলা লাফিয়ে লাফিয়ে জানলাটায় ওঠার চেষ্টা করছে। আমার দমটা আবার গলার কাছে আটকে এল। কিছুতেই বাইরে তাকাব না তাকাব না করেও জানলার পর্দাটা অল্প ফাঁক করে বাইরে তাকিয়েই ফেললাম। নীচে চাঁদের আলোয় চকচক করছে গাড়িটা। আর গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে আছে সেই লোকটা। বড়ো বড়ো নিষ্পলক চোখ। তবে আজ যেন চোখের ভাষাটা নরম। মাথার থেকে টুপিটা খুলে আমাকে অভিবাদন জানাল লোকটা তারপর হাঁটতে হাঁটতে আমাদের বন্ধ গেটটা খুলে অনায়াসে চলে গেল।

এরপর আমি আর কোনোদিন দেখতে পাইনি লোকটাকে। ভোলাকে পরের দিন ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। ডাক্তার ওর পায়ে ব্যান্ডেজ করে ওষুধ দিয়ে দিল। কয়েকদিনের মধ্যেই ভোলা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গিয়ে লাফালাফি করতে আরম্ভ করল।

কয়েকদিন পর একদিন সন্ধেবেলায় তুষারবাবু এলেন। আমি এতদিন অপেক্ষাই করছিলাম তুষারবাবুর জন্য। গাড়ির চেকটা দিতে হবে। আমার অভিজ্ঞতার কথা কিছু না-বলে দু-এক কথার পর চেকটা আনতে উঠতে যাব, এমন সময় কুঁই কুঁই করে আমার পায়ের কাছে এল ভোলা। আর ভোলাকে দেখেই ভীষণ চমকে উঠে তুষারবাবু জিজ্ঞেস করলেন, ”এই কুকুরছানাটা কতদিন আছে আপনার বাড়িতে?”

এবার আর চেপে যাওয়ার মানে হয় না। আমি সব খুলে বললাম তুষারবাবুকে। তুষারবাবু সব শুনে কিছুক্ষণ মাথা নীচু করে চুপ করে রইলেন। তারপর বললেন, ”একদিন বাড়ি ফেরার খুব তাড়া ছিল। রাত্রি হয়ে গিয়েছিল। বৃষ্টিও পড়ছিল। আমি সচরাচর জোরে গাড়ি চালাই না। সেদিন কবরস্থানের কাছ দিয়ে সর্টকাট রাস্তা নিয়ে একটু জোরেই গাড়িটা চালিয়ে ফেলেছিলাম। হঠাৎ রাস্তার মধ্যে চলে এল এই কুকুরছানাটা। জোরে ব্রেক কষে ওকে চাকার তলায় যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে পারলেও, অল্প চোটের হাত থেকে বাঁচাতে পারিনি। আমার নেমে দেখা উচিত ছিল, হয়ত কুকুরছানা বলে দেখিনি। জোরে ব্রেক করার ঝাঁকুনিতে কোনওভাবে চাকার হাফ ক্যাপটা পড়ে গিয়েছিল। দেখলাম রাস্তার পাস থেকে একটা লোক উদয় হয়ে আমার হাফ ক্যাপটা নিয়ে আমাকে জ্বলন্ত চোখে কিছু বলতে চাইছে। আমি আরও ঘাবড়ে গিয়ে জোরে গাড়ি চালিয়ে বেরিয়ে এলাম। তারপরে ওই লোকটাকে আমি প্রায়ই স্বপ্নে দেখতাম। কুকুরছানাটাকে কোলে নিয়ে জ্বলন্ত চোখে আমাকে কী যেন বলতে চাইছে। আর গাড়িটা নিয়ে আমি বেরলেই কিছু-না-কিছু বিপত্তি হত। তাই গাড়িটা বিক্রি করে দেব ঠিক করলাম। খোঁজ নিয়ে জেনেছি বহুকাল আগে ওই রাস্তাটায় এক ভবঘুরে থাকত। লোকটা কুকুরদের খুব ভালোবাসত। নিজে খেতে পাক বা না-পাক, রোজ রাস্তার কুকুরদের বিস্কুট খাওয়াত। কিন্তু বেশ কয়েক বছর আগে সে মারা যায়। ভূতে আপনি বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, তবুও …… স্যরি, গাড়িটা বিক্রি করে দেওয়ার আসল কারণটা আপনাকে বলা উচিত ছিল……।”

আমি ভোলাকে কোলে তুলে নিয়ে মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললাম, ”আমার মনে হয় আর কেউ আপনার স্বপ্নে আসবে না আর আপনার গাড়িটাও আমার হাতে খুব ভালো থাকবে। বসুন আপনি। আপনার চেকটা নিয়ে আসি।”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *