1 of 2

সেই অচেনা মেয়েটি – শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

সেই অচেনা মেয়েটি – শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

চরম বিচ্ছেদের আবেদনপত্র যথারীতি সই করেছিলাম, ধীরেশবাবু সেটা নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়েও গেলেন, আর উনি? উনিও চুপচাপ বসে রইলেন অভ্যাগত কোনও পরিজনের মতো আমার সেলাইয়ের টেবিলের সামনের চেয়ারটায়। ধীরে-ধীরে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল, বাইরের আলো পাণ্ডুর হয়ে তারপর মিলিয়ে গেল, রাস্তার কোনও আলোর ছটা ওঁর পাঞ্জাবির সোনার একটা বোতামের ওপর আবছা এসে পড়ে ঝিলমিল করে উঠল। বোধহয়, তারপরই তিনি উঠে দাঁড়ালেন, ঘর ছেড়ে ওঁর নিজের ঘরে যেতে-যেতে বললেন, অন্ধকার। আলোটা জ্বেলে নাও।

রাত বাড়তে লাগল। আমার ঘুঙুর দুটো টেবিলের ওপর পড়েছিল, ওদুটো তুলে টিনের বাক্সে রেখে দিতে গিয়ে একটা ঘুঙুর হঠাৎ হাত থেকে পড়ে ঝনঝন করে বিশ্রী একটা শব্দ তুলল।

বিকেলের স্কুলে সেদিন আর যাওয়া হয়নি। যে দুটি মেয়েকে ‘ভারতনাট্যম’ শেখাই, তারা নিশ্চয় স্কুলে এসে আমার জন্য কিছুক্ষণ বসে থেকে নিজেদের মধ্যে আজে-বাজে গল্প করে—হয়তো আমাকে নিয়েই ওদের মনোমতো গল্প—অবশেষে ওরা বাড়ি ফিরে গেছে। নাচের স্কুলের মালিক ও অধ্যক্ষ প্রৌঢ় আদিত্যবাবু আমাকে না দেখতে পেয়ে নিশ্চয়ই ঘর আর বার করেছেন, কারণ আমার গত তিন বছরের নৃত্য-শিক্ষকতার জীবনে একটি দিনের জন্যও অনুপস্থিতি ঘটেনি।

স্কুল আমার দুটি। সকাল আর বিকেল। সকালের স্কুলটা হচ্ছে আমাদের সুরুচিদির। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের ভক্ত এমন কে আছেন যে তাঁর নাম শোনেননি? কিন্তু আমি তো গান শিখিনি, আজীবন ধরে যা শিখেছি, তা নাচ এবং নাচের মধ্যেও অন্য নাচে আমার তেমন দক্ষতা নেই, যেটা যত্ন নিয়ে মাদ্রাজে দীর্ঘদিন থেকে শিখেছিলাম, সে হচ্ছে ভারতনাট্যম। কিন্তু সুরুচিদি ছাড়বেন না, ছোট মেয়েদের প্রাথমিক নৃত্যশিক্ষা দিতে হবে আমাকেই।

ভাবছিলাম, কাল সকালেও কি সুরুচিদির স্কুলে যেতে পারব? ওখানেও তাহলে ঘটবে গত তিন বছরের কর্মজীবনে একটি দিনের অনুপস্থিতি।

কিন্তু কীই-বা করা যায়? মনের সঙ্গে-সঙ্গে দেহটাও ক্লান্তিতে ভরেছিল সেদিন।

খাওয়া-দাওয়া সেরে শুতে এলাম যখন, রাত দশটা বেজে গেছে। উনি ওঁর ঘরে গেছেন যথানিয়মে। হয়তো টেরাকোটা-আর্টের সেই ভাঙা যক্ষিণী-মূর্তিটি এই রাত্রে টেবিল-ল্যাম্পের সামনে ধরে অতসী কাচ দিয়ে কী-কী সব লক্ষ করছেন। মূর্তিটি নাকি ভয়ানক দামি, ওঁর কোন এক গবেষণারত সরকারি বন্ধু ওঁকে কিছুদিনের জন্য দেখতে দিয়েছেন গবেষণার সুবিধার জন্য। ডায়মন্ডহারবারের দক্ষিণে হরিনারায়ণপুর না কী নামের যেন একটা জায়গা থেকে পাওয়া গেছে ওই মূর্তি।

উনি ইতিহাসের গবেষক ও অধ্যাপক। কিন্তু, এযাবৎ যা নিয়ে উনি নিজের খেয়ালে গবেষণা করছিলেন, তা হচ্ছে নৃত্য। দাক্ষিণাত্যের মন্দিরে-মন্দিরে ঘুরে তার স্থাপত্য লক্ষ করেছেন। ‘মেলাটুর’ বলে মাদ্রাজের যে গ্রামে গুরুগৃহে আমি নাচ শিখেছিলাম, সেই গ্রামে গেছেন আমাকে নিয়ে, আমার যিনি ‘নট্টুবান’ বা নৃত্যশিক্ষক, তাঁর সঙ্গে তো দেখা করেছিলেনই, অন্য ‘নট্টুবান’দের সঙ্গে কথাবার্তা বলেও ‘ভারতনাট্যম’ সম্পর্কে বহু জ্ঞাতব্য বিষয় জেনে নিচ্ছিলেন।

সেদিন বলেছিলাম, এসবের দিকে ঝোঁক হল কেন?

বলেছিলেন, যেজন্য তোমার দিকে ঝুঁকেছিলাম, সেজন্য এসবের দিকেও ঝুঁকছি! অভিমান-ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলেছিলাম, ও, মাত্র ঝোঁকের মাথায় আমাকে বিয়ে?

একটু হেসে আমাকে কাছে টেনে নিয়েছিলেন, বলেছিলেন, ঝোঁকটা কিন্তু ভালোবাসার ঝোঁক।

—Love at first sight?

হেসে উঠলেন, তারপরে আমার মুখখানা দু-হাতে ধরে মুখের ওপর ঝুঁকে কী যেন দেখতে লাগলেন, বললেন, সেটা হয়। অন্তত আমার হয়েছিল, তোমাকে যেদিন প্রথম দেখি। তোমার হয়নি বুঝি?

মনে-মনে বলেছিলাম, বলা শক্ত!—কিন্তু মুখে তা উচ্চারণ করতে পারিনি, এসব ক্ষেত্রে সোজা সাদাসিধে কথা পুরুষরা সহ্য করতে পারে না। তাই, একটু হেসে ওঁর চোখের দিকে স্নিগ্ধ চোখে তাকিয়ে বলেছিলাম, হ্যাঁ, তা হয়েছিল আমারও।

উনি আদরে-আদরে আমাকে অস্থির করে তুলেছিলেন। কিন্তু, আমি মনে-মনে অবাক হয়ে ভাবছিলাম, এত বড় একজন পণ্ডিত লোক, আমার এই সামান্য কথাটায় ভুলে গেলেন কেমন করে!

পরে, অনেক পরে, ভেবে দেখেছি, পুরুষদের কাছে এই উচ্ছ্বাসটাই বুঝি সব। উচ্ছ্বসিত হয়ে কিছু বানিয়ে বললেও, তৎক্ষণাৎ ওরা বিশ্বাস করে নেয়।

সেই প্রথম কলকাতায় এসে আমার নাচ দেখানো। বাবা বললেন, খুকি, কলকাতাতেই পাকাপাকিভাবে থেকে যাই। মাত্র এই ছুটি-ছাটাতে মাদ্রাজ-কলকাতা, কলকাতা-মাদ্রাজ,—আর ভালো লাগছে না!

—তোমার চাকরি?

বাবা বললেন, ট্রান্সফারের চেষ্টা করছি। বোধহয় পেয়ে যাব।

তা বাবা অবশ্য পেয়েছিলেন। কিন্তু খুব বেশি দিনের জন্য কি? আবার হঠাৎ এখনি বদলির আদেশ-পত্র এসে পৌঁছল, এবং সে আর মাদ্রাজ থেকে নয়, একেবারে ওপার থেকে—যেখান থেকে মানুষ আর ফেরে না। মাকে তো হারিয়েছিলাম ছোটতেই, এরপর বাবাকেও হারালাম।

ওঁর সঙ্গে বিয়ে অবশ্য ততদিনে হয়ে গেছে। সেই প্রথমদিনের নাচ দেখেই ভালো লেগে গিয়েছিল ওঁর। বাবার সঙ্গে আলাপ করে একরাশ ফুল নিয়ে একেবারে আমার গ্রিন-রুমে।

—Love at first sight?

বারবার প্রশ্ন করে একই উত্তর পেতাম, সেটা হয়।

আমার বিয়ে হয়েছিল কুড়িবছর বয়সে—আজ আমি আঠাশ। দেখায় নাকি আরও কম। অবশ্য এটা শোনা কথা—উনিও বলেন, ওঁর বন্ধু ধীরেশবাবুও বলেন। নিজে বুঝতে পারি না। নিজের যেটা মনে হয়, সেটা চুপিচুপি বলতে পারি। মনে হয়, দশ বছরের সেই ছোট্ট মেয়েটিই আমি আছি, কাঁদছি ‘মা-মা’ করে—আর বাবা কোলে নিয়ে আমাকে শান্ত করবার চেষ্টা করছেন, বলছেন, খুকু, আমি তোর মা-বাপ। বলতে-বলতে নিজেই কেঁদে ফেলেছিলেন ঝরঝর করে।

আট বছরের বিবাহিত জীবনে কোনও সন্তান আসেনি, আমি আসতে দিইনি।

বছরতিনেক আগে একবার টাইফয়েড হয়েছিল। খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম। কী একটা স্নায়বিক রোগও নাকি দেখা দিয়েছিল। ডাক্তার বারণ করে দিয়েছিলেন নাচতে।

চোখ ফেটে কান্না এসেছিল। নাচবই না যদি, তাহলে কী শিখলাম সারা জীবনের সাধনায়? তাছাড়া, বিভিন্ন জলসায় নাচ দেখিয়ে, বা কোনও-কোনও নাচের দলের সঙ্গে সারা ভারত ঘুরে, কিম্বা দুটি-তিনটি ছায়াছবিতে বিশিষ্ট একক নৃত্য প্রদর্শন করে, অর্থ ও খ্যাতি,—দুই-ই অর্জিত হচ্ছিল মন্দ নয়। বললাম, নাচ ছেড়ে দেব? তুমিও বলছ?

উনি বললেন, তা আমি কোনওদিনই বলব না। তোমার শিল্পী-জীবনকে ব্যর্থ করার অধিকার আমার নেই। তাছাড়া, তোমার কোনও কাজে বাধা তো আমি দিইনি।

মুখে বললেন বটে, কিন্তু মনে হল, কন্ঠস্বরে একটা অদ্ভুত অভিমানও যেন ফুটে উঠল।

মনের মধ্যে বুঝি ঝড় বইছিল, একে শারীরিক দুর্বলতা, তার ওপরে এই মানসিক উত্তেজনা। ওঁর দুটি হাত শক্ত করে ধরে বলে উঠেছিলাম, কেন বিয়ে করেছিলে আমাকে?

অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়েছিলেন কিছুক্ষণ, মুখখানা যেন আকস্মিক বেদনার আঘাতে পাণ্ডুর হয়ে গিয়েছিল।

ওঁর হাত ছেড়ে দিয়ে দ্বিগুণ কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। শুনেছিলাম, সেদিন রাত্রে আমার ‘ফিট’ও হয়েছিল।

ধীরেশবাবু ওঁর বন্ধু। অদ্ভুত লোক, ওকালতিও করেন, অধ্যাপনাও করেন, পত্রিকায় মনস্তত্ত্বের ওপর সারগর্ভ প্রবন্ধও লেখেন। আবার, পাড়ার গরিবদের হোমিওপ্যাথির বই দেখে দেখে বিনা পয়সায় ওষুধও দেন। বিয়ে-থা করেননি, চিরকুমারই থাকবার নাকি ইচ্ছা ছিল, কিন্তু বয়স সম্প্রতি চল্লিশের কাছাকাছি এসে পড়ায়, হঠাৎ মত বদলাতে শুরু করেছে। বলেন, সত্যি কথা বলব, মিসেস চৌধুরী? মনের মতো মেয়ে পাই তো, বিয়ে করি। নিচের তলাটা পুরো ভাড়া দিয়েছি, ওপর তলাকার চারখানা ঘর একেবারে খাঁ-খাঁ করছে।

হেসে বলেছিলাম, ভাড়া দিন না।

—না, না, ভাড়া নয়,—হাসতে-হাসতে বলে উঠেছিলেন, নিজেকে দিয়েই ভরাতে চাই।

—কীরকম!

উনিও ছিলেন আমার পাশে বসে, বললেন, এটা বুঝলে না? ধীরেশ বিয়ে করে এক থেকে বহু হতে চায়।

কথাটা বুঝতে পেরে লজ্জায় বোধহয় রাঙা হয়ে উঠেছিল আমার মুখ—ওঁর গায়ে একটু ঠেলা দিয়ে জনান্তিকে বলে উঠেছিলাম, যাঃ! অসভ্য!

হাসছিলেন তখনও উনি, বললেন, যাই বলো, ছেলেপিলে না হলে ঘর মানায় না।

ওঁরা দুজনে মহাকৌতুকে হাসছিলেন, কিন্তু আমার সেই মুহূর্তে মনে হচ্ছিল, চারদিকে প্রবল একটা ষড়যন্ত্র চলেছে। এর প্রতিরোধ করতেই হবে।

মাথাধরার অজুহাতে নিজের ঘরে এসে খিল দিয়েছিলাম। আঁচলটা বুক থেকে নামিয়ে ফেলে আয়নার সামনে অনেকক্ষণ ধরে নিজেকে দেখছিলাম সেদিন।

সত্যি কথা বলতে কী, গর্বই হচ্ছিল মনে-মনে। মাথায় সিঁদুর আর হাতে লোহা না থাকলে আজও আমাকে বিবাহিত বলে ভাবা শক্ত, পুরুষদের পক্ষে তো বটেই, মেয়েদেরও ভ্রম হতে পারে।

আধুনিক লেখকরা আমাকে নিয়ে গল্প লিখলে, আমাকে বর্ণনা করতে বসে রীতিমতো সুন্দরীই বলে বসবেন আমাকে, এ আমি দৃঢ় কণ্ঠে বলতে পারি। কেন, সেই যে কী-সব সিনেমা-পত্রিকা হয়েছে আজকাল, যা বেরোলে নাকি পঞ্জিকার মতো ঘরে-ঘরে কিনে নেয় অনেকে, তার একটিতে কিছুদিন আগে আমার ছবি ছাপিয়ে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গে আমার দেহ-লাবণ্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখই হয়ে উঠেছিলেন লেখক।

অস্বাভাবিক নয়। ধীরেশবাবু প্রতিদিন আমাদের বাড়িতে আসেন ঠিক ঘড়ি ধরে রাত আটটায়, দু-ঘণ্টা গল্প করে ঠিক দশটায় বাড়ি ফিরে যান। বলেন, সারাদিনের খাটুনির পর এটুকুই আমার recreation—অর্থাৎ, নিজেকে নতুন করে উজ্জীবিত করা।

হাসিমুখে বলতাম, কিন্তু, ঠিক আটটা কেন, ধীরেশবাবু?

বলতেন, ওই যে আপনি স্কুল সেরে আটটার মধ্যে ফিরে আসেন।

বলতাম, তাহলে আমিই?

—কী?

—আপনার recreation?

বলতেন, আপনারা দুজনেই। দুজনেরই মিলিত একটি সুর।

উনি সকৌতুকে বলতেন, ভণ্ড কোথাকার। আমার ওপর তোর টান? রোববার আসিস?

বলতেন, না, রোববারটা কোথাও আসা-আসি নয়। ও-দিনটা আমি নিজেকে নিয়ে কাটাই। ওটা আমার আত্মদর্শনের দিন। আর তাছাড়া, রোববারটা নিছক তোমাদেরই দুজনের থাকা দরকার। Two is company, three is crowd.

উনি বলতেন, একটু বাড়াবাড়ি হচ্ছে নাকি?

ধীরেশবাবু মুহূর্তে গম্ভীর হয়ে যেতেন, বলতেন, না। ওটা দরকার।

তারপরেই আবার পরিহাস-তরল কণ্ঠে বলতেন, মিসেস চৌধুরী কিন্তু great inspiration.

—কীরকম?

ধীরেশবাবু আমার প্রশ্নে আমার দিকে ফিরে বলতেন, দেখছেন না আপনার কর্তার দশা! কী নিয়ে পড়াশুনা করত, আর আপনাকে বিয়ে করার পর থেকে ও এই আট বৎসর ধরে ‘ভারতনাট্যম’ নিয়ে পড়েছে। ঘোরাঘুরি করতে আর বই কিনতে ও কি কম পয়সা নষ্ট করছে!

—কী যে বলেন!

লজ্জিত হয়ে কথাটা বললেও মনে-মনে ভয়ানক খুশি হতাম। ওঁর ‘ভারতনাট্যম’ সম্পর্কে এই ঔৎসুক্য, এর খুঁটিনাটি, এর আধ্যাত্মিক ব্যঞ্জনা, এর সুবিস্তৃত ও সু-বিচিত্র ইতিহাস জানবার ওঁর বিপুল আগ্রহ যে এই আমি, নিছক এই মেয়েমানুষটিকেই জানবার নামান্তর, এটা বুঝতে আমার ভুল হত না। প্রেমের এই অদ্ভুত এক দিগন্তের বিকাশ আমাকে মনে-মনে এত অভিভূত করত যে, আমি আরও বেশি নাচের অনুশীলনে ডুবে যেতাম, আরও বিচিত্র ও কঠিন ভঙ্গিমা অনুক্ষণ আয়ত্তে রাখবার চেষ্টা করতাম।

আহারে-বিহারে নিয়ম মেনে চলা আর এই নৃত্যের শ্রম আর অভ্যাস, এবং ভারতনাট্যমেরই অনুপূরক হিসাবে পরিমিত কুম্ভক ও রেচক, এই যৌগিক প্রক্রিয়া যে আমার দেহচ্ছন্দনকে অপরূপ করে রাখবে, এতে আর আশ্চর্য কী?

তার প্রতিফলন দেখতাম ধীরেশবাবুর চোখে। গল্প করতে-করতে ওঁর দুটি চোখে যে মুগ্ধ দৃষ্টি ফুটে উঠতে দেখতাম, তার অর্থ বুঝতে নারী হয়ে ভুল করব কেন? প্রশ্রয় দিতাম না বটে, নিবারণও করতাম না। মনে হত মুগ্ধ ভক্তের নীরব পুষ্পাঞ্জলি এসে আমার পায়ে পড়ছে!

ঘর-সংসার আমি দেখতাম না, তার জন্য ঝি ছিল, রাঁধুনি ছিল। আর তাছাড়া, সংসার তো দুটি লোকের, আমি আর উনি। আমার দেওর বা ভাশুররা নানান জায়গায় থাকেন, বিশেষ আসেনও না। গত আট বছর ধরেই এটা দেখে আসছি। আমাকে বিয়ে করায় তাঁদের ভাইয়ের প্রতি তাঁরা খুশি নন। শ্বশুর নেই, বিধবা শাশুড়ি তাঁর বড় ছেলের কাছে সুদূর পুনায় পড়ে আছেন, কলকাতা আসেনও না, মাঝে-মাঝে চিঠি আসে শুধু তাঁর।

সেদিন শুয়ে-শুয়ে সমস্ত অতীতটাকে দেখতে পাচ্ছিলাম চোখের সামনে ছায়াছবির মতো। টাইফয়েডের পর নিজে নাচ দেখানো ছেড়েছি বটে, কিন্তু নাচ শেখানো ধরেছি। বাড়ি বসে নিষ্ক্রিয় থাকতে পারব না, সে উনি জানতেন। গত তিনবছর ধরে চলেছে আমার শিক্ষকতা। কিন্তু শিক্ষকতা চললেও, অন্য এক ঝড় চলেছিল সংসারে। অতি সূক্ষ্ম এক ধরনের মানসিকতার ঝঞ্ঝা। বাইরে থেকে বোঝা যায় না, ভিতরে-ভিতরে বিপর্যস্ত করে দেয়।

বিবাহের পঞ্চম বর্ষ থেকেই এর শুরু হয়েছিল। আমি বুঝেছিলাম, এবং বুঝেই শুরু হয়েছিল আমার প্রতিরোধ। মুখে উনি কিছু বলতেন না, কিন্তু হাবে-ভাবে-ভঙ্গিতে মনে হত, উনি কী চাইতেন।

বলতাম, আমার এই জীবন আমি নষ্ট করব?

চমকে উত্তর দিতেন, কোন জীবন?

বলতাম, তুমি কী চাও, আমি কি তা বুঝি না? পারব না, পারব না নষ্ট করতে আমাকে।

বলে কেঁদে উঠে ছুটে চলে আসতাম নিজের ঘরে, নিজের বিছানায়।

উনি বোধহয় ঠিক বুঝতে পারতেন না, একটু অবাক হয়েই চলে আসতেন পেছনে-পেছনে। বলতেন, কী বলছ তুমি, মানসী?

বলতাম, বোঝো না? কী ভাবে আমি থাকি? আমার এই ‘ফিগার’—।

কথা শেষ না করে থেমে যেতেই উনি যেন মুখের দিকে তাকিয়ে বাকিটা বুঝে নিতেন, বলতেন, ও, এই! না মানু, তুমি তো জানো, আমি সেসব চাই না। তোমাকে পেয়েছি, এই আমার যথেষ্ট। সন্তান-টন্তান আমার দরকার নেই।

মুখ ফিরিয়ে চলে যেতেন ওঁর ঘরে। আমি আরও অবাক হয়ে চেয়ে-চেয়ে দেখতাম ওঁর চলে যাওয়া। কিন্তু বারবার মনে হত, ঠিক উনি বলেননি। বৈজ্ঞানিক যুগে সন্তানের জন্ম এড়ানো সম্ভব, আমরাও তা সম্ভব করেছি। অথচ—।

বুক ফেটে কান্না পাচ্ছিল সেদিন। বোধহয়, আবারও ফিট হয়েছিল আমার। গলির মোড়ে তাঁর বাড়ি থেকে আবার ডেকে আনতে হয়েছিল ধীরেশবাবুকে। ধীরেশবাবু আর তাঁর হোমিওপ্যাথি ওষুধ।

তিনবছর ধরে ক্রমাগত এইভাবে সংগ্রাম করতে-করতে বিবাহের অষ্টম বর্ষে পড়ে মনে হল, এ চলবে না, চলতে পারে না। বিচ্ছেদ অবশ্যম্ভাবী।

উনি বললেন, বেশ। তোমার কোনও ইচ্ছায় বাধা দিইনি, আজও দেব না। ধীরেশকে ডাকি। করো Legal separation-এর দরখাস্ত।

করলাম। ধীরেশবাবু প্রাণপণে বাধা দিয়েছিলেন। কিন্তু, তাঁর চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল, ভিতরে-ভিতরে খুশিই হয়েছেন তিনি। কোর্টের আদেশ হলেই আলাদা থাকব তিনবছর, তারপরেই বিবাহ-বিচ্ছেদ।

বললেন, কোর্টের হুকুমটা বেরুক, তখন আলাদা বাড়ির খোঁজ করা যাবে, এখনই ব্যস্ত হচ্ছেন কেন?

বলেছিলাম, সে আপনি বুঝবেন না।

ধীরেশবাবু বললেন, আমার দোতলায় চারখানা ঘর। না হয় একখানা ঘর আপনাকেই ভাড়া দেব।

বলেছিলাম, খুবই ভালো। বাড়ির যা প্রব্লেম কলকাতায়।

ধীরেশবাবু বলেছিলেন, একটা কথা জিজ্ঞাসা করব? কেন এটা করতে যাচ্ছেন?

দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে উত্তর দিয়েছিলাম, আপনি তা বুঝবেন না।

আবেদনপত্র সই করার আগের দিন। ওঁর ঘরে গেছি। সেই তাকিয়াশোভিত খাটো তক্তপোশ, আর অসংখ্য বই আর খাতাপত্র। হঠাৎ দেখি, বহু পুরোনো মাটির একটা ভাঙা পুতুল, লালচে রঙের।

বললাম, এটা কী?

উনি হাঁ-হাঁ করে ছুটে এলেন, বললেন, ধরো না, পড়ে গিয়ে ভেঙে যাবে। ওটা একটা যক্ষিণী মূর্তি, বহু পুরাতন যুগের। হরিনারায়ণপুরে পাওয়া গেছে।

তাড়াতাড়ি রেখে দিলাম যথাস্থানে, বললাম, হবে কী ওটা দিয়ে?

বললেন, ওটা নিয়েই তো গবেষণা করছি আজকাল!

—কীসের গবেষণা?

—বাঙলার পুরোনো ইতিহাসের। জানো, কলকাতাকে ঘিরে পঞ্চাশ বর্গমাইল জুড়ে বহু প্রাচীন সমৃদ্ধ জনপদ ছিল, তার নিদর্শন পাওয়া যাচ্ছে। হরিনারায়ণপুরে গঙ্গার ভাঙনে—।

বাধা দিয়ে বলে উঠলাম, থাক, শুনতে চাই না।

অবরুদ্ধ কণ্ঠে কোনওক্রমে কথাটা বলে নিজের ঘরে এসে আবার আশ্রয় করেছিলাম বিছানা। মনে হল, সব আমার চলে গেল। যে মাটির ওপর দাঁড়িয়েছিলাম, সেই মাটিটাই যেন মুহূর্তে সরে গেল পায়ের নিচে থেকে।

ওই যক্ষিণী এসে আমার সমস্ত সত্তাটাকে যেন মুহূর্তে চুরমার করে দিয়ে গেল। কিন্তু, ওঁরই বা এই পরিবর্তন কেন? ‘ভারতনাট্যম’-এর গবেষণা ছেড়ে অন্য বিষয়ে এইরকম অখণ্ড মনোনিবেশ?

কীসের এ প্রতিক্রিয়া? আমি মনে-মনে বুঝতে পারছিলাম, কীসের এ প্রতিক্রিয়া। মাত্র আমিই নয়, আরও কিছু ওঁর চাই। সন্তান—সন্তান ওঁর চাই।

কিন্তু মুখ ফুটে সে-কথা বলেন না কেন?

মুখে সেই ক্ষমাশীল হাসি, চোখে সেই অপার স্নেহ। কে চায় ক্ষমা, কে চায় স্নেহ!

ওই যক্ষিণী মূর্তিটির কথা যত চিন্তা করতে লাগলাম, ততই যেন আগুন ধরে যেতে লাগল মাথায়। মনে হল, এই ঘর, এই আসবাব, এই বাড়ি—এগুলো সব ভেঙে, গুঁড়িয়ে চুরমার করে দিই।

উনি সব শুনে স্থির মনে বলে গেলেন ওঁর কথা। বললেন, আমার নামেই দোষারোপ দিও আবেদনপত্রে। আমার নিষ্ঠুরতা, আমার—।

আরও কী যেন বলতে গিয়ে থেমে গিয়েছিলেন উনি।

গায়ের জামাটা খুলে টকটকে লাল সেই আটপৌরে তাঁতের শাড়িটা পরেই শুয়েছিলাম। এইসব ভাবতে-ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কে জানে! হঠাৎ ভেঙে গেল ঘুমটা। বুকটা কেমন যেন আপনিই ধড়াস-ধড়াস করছে—কানের মধ্যে ঝাঁ-ঝাঁ করছে—চোখেও যেন কেমন অন্ধকার দেখছি মনে হল। বেডসুইচ টিপে আলোটা জ্বেলেও আঁধার কমছে না। দেয়ালের ঘড়িতে রাত প্রায় তিনটে—টকটক করে পেন্ডুলামটা প্রহর গুনে যাচ্ছে।

কিন্তু, আবার কি ফিট হবে নাকি আমার? কেমন যেন ভয় হল। গরমও লাগছে ভীষণ। ধীরে-ধীরে উঠে গিয়ে সামনের বারান্দার দরজাটা খুললাম। বারান্দাটা রাস্তার দিকে। বারান্দায় বেরিয়ে বাঁদিকে ফিরলেই ওঁর ঘর। খোলা জানলা দিয়ে একঝলক আলো এসে পড়েছে বারান্দায়। সেই লালচে আলোর ছটার দিকে তাকাতে-তাকাতে মনে হল, এত রাতে করছেন কী উনি, জেগে?

যাব না মনে করেও পায়ে-পায়ে এগিয়ে গেলাম জানলার দিকে। জানলার পাশেই ওঁর শোওয়ার খাট, দেখি, খাটে উনি নেই, নিচের সেই বই-ছড়ানো তক্তপোশের ওপরে বই পড়তে-পড়তে বই খোলা রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছেন। কিন্তু এ কী?

ঠিক ওঁর মাথার কাছটিতে পা মুড়ে বসে কে একটি মেয়ে পরম যত্নে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছে ওঁকে, আর অপলক চোখে তাকিয়ে আছে ওঁর মুখের দিকে। একরাশ খোলা চুল ছড়িয়ে পড়েছে পিঠের ওপরে, খালি গায়ের ওপর লাল শাড়িটির আঁচলটা জড়ানো।

কে এই মেয়েটি?

অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। ভুল দেখছি না তো? ভালো করে চোখ মুছে নিয়ে দেখতে লাগলাম—মেয়েটি আঁচলের খুট দিয়ে ওঁর মুখের বিন্দু-বিন্দু ঘাম অতি যত্নে মুছে নিচ্ছে!

আমার বুকের ভিতরটা কেমন যেন করতে লাগল। পাছে ফিট হয়ে পড়ে ওদের ব্যাঘাত ঘটাই, এই ভয়ে তাড়াতাড়ি এসে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।

মাথাটায় ভীষণ যন্ত্রণা হতে লাগল। কে—কে—কে এই মেয়েটি? কোথা থেকে এল ও?

লুকিয়ে-লুকিয়ে তাহলে এইসব হচ্ছে?

এইজন্যেই বিচ্ছেদের প্রস্তাবে এককথায় উনি বলতে পেরেছিলেন, আচ্ছা, বেশ।

বেশ। তাই হবে। আমিও মুখ ফুটে কথাটিও কইব না।

আর, কইবও-বা কেন? আর কী সম্পর্ক রইল ওঁর সঙ্গে আমার?

পরদিন ধীরেশবাবু আসতেই বললাম, কোর্টে দিয়েছেন? কবে নাগাদ আদেশ পাব?

বললেন, শিগগিরিই হবে। ব্যস্ত হবেন না।

—ব্যস্তই হয়ে পড়েছি।—বললাম, ধীরেশবাবু, আপনি আমায় বাঁচান। আপনার ঘরই কিন্তু ভাড়া নেব। যত শিগগিরি পারেন, এখান থেকে আমাকে নিয়ে চলুন।

ধীরেশবাবু বললেন, কী হয়েছে বলুন তো? অসুস্থ? শুনলাম, ইস্কুলেও যাননি!

—না। কোথাও যাব না। এখান থেকে না বেরুলে কোনও কাজই করতে পারব না।

—একটা কথা বলবেন?—ধীরেশবাবু বলে উঠলেন, আসল ব্যাপারটা কী?

—সে আপনি বুঝবেন না!—বলতে-বলতেই উঠে দাঁড়িয়ে চলে এসেছিলাম নিজের ঘরে। উনি ছিলেন। ওঁতে আর ধীরেশবাবুতে কী কথা হয়েছিল জানি না।

পরদিন। ঠিক সেই রাত তিনটে। দরজা খুলে ওঁর জানলায় গিয়ে আরও কাছ থেকেই মেয়েটিকে দেখলাম। আমার বয়সিই হবে। সুন্দরী। সেইরকম খালি গা, এলো চুল। হলদে একটা শাড়ি পরা। ওঁর খাটের ওপর উনি শুয়ে আছেন। মেয়েটি ঠিক পাশেই শুয়ে। দুটি হাতে ওঁর গলা জড়িয়ে ধরে—।

দু-হাতে চোখ ঢেকে ছুটে চলে এলাম নিজের ঘরে।

নাঃ! আর দেরি নয়, কোর্টের আদেশ আসুক বা না—আসুক, কাল ধীরেশবাবু এলেই ওঁর সঙ্গে আমাকে চলে যেতে হবে।

সকালেই ডেকে পাঠালাম।

—কী ব্যাপার?

—ব্যাপার যাই হোক, এক্ষুনি আমাকে নিয়ে চলুন। এক মুহূর্তও টিকতে পারছি না

এ-বাড়িতে।

বললেন, কোর্ট থেকে আদেশটা নিয়ে আসবই আজ।

—তাহলে সন্ধ্যাতেই চলুন।

উনি বললেন, সেই এক কথা—বেশ। তাই হোক।

তারও পরের দিন। ধীরেশবাবুর সারাদিন দেখা নেই। এলেন রাত্রে।

বললেন, ক্ষমা করুন। আরও একটি দিন দেরি হবে।

বললাম, আমি কী করব? আমি কিছুতেই এখানে থাকব না।

বললেন, কী ব্যবস্থা করবেন!

—কাল আমিই চলে যাব।

—কোথায়?

বললাম, সে যেখানেই হোক।

ধীরেশবাবু বললেন, না, তা নয়। আমার বাড়িতেই নিয়ে যাব। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।

উনি ছিলেন না কাছে। কথার মাঝে হঠাৎই উঠে চলে গিয়েছিলেন বারান্দায়।

রাত তিনটের সময় যথারীতি ঘুম ভেঙে গেল। দরজা খুলে ওঁর জানলায় এসে যা দেখলাম, তা কোনও মেয়েই সহ্য করতে পারে না। সেই অচেনা মেয়েটি। খালি গা, এলো চুল, সাদা একটা শাড়ি পরা। ওঁর পাশে খাটের ওপর শুধু শুয়েই নয়—ওঁকে দু-হাতে নিজের দিকে টেনে নিয়ে ব্যাকুল হয়ে বারবার কী যেন বলছে। শুনছে না ওঁর কোনও বারণ—শুনছে না ওঁর কোনও কথা। স্পষ্ট শুনতে পেলাম, মেয়েটি বলছে, আমি মরে যাচ্ছি! বোঝো না তুমি! সন্তান—ছোট একটি সন্তান চাই আমার কোলে!

প্রচণ্ড একটা শব্দ। আর কিছু মনে নেই। ফিট হয়ে পড়ে গিয়েছিলাম বারান্দার ওপরে।

কী আর বলব, দুটি দিন নাকি অজ্ঞান অবস্থাতেই কেটে গিয়েছিল আমার। যমে-মানুষে টানাটানি।

যখন চোখ খুললাম, দেখি আমারই বিছানায় আমি শুয়ে। সামনের চেয়ারে বসে ধীরেশবাবু। পাশে আর-একটি চেয়ার। সেটি খালি। সম্ভবত উনিই বসেছিলেন এতক্ষণ।

ধীরেশবাবু বললেন, ভয় নেই। ভালো হয়ে গেছেন। ভয় পেয়েছিলেন, না?

ওঁকে ডেকে আনলেন ধীরেশবাবু। সব শুনলেন আমার কাছ থেকে। কেউ কিছু বললেন না, শুধু ধীরেশবাবুকে কিছুটা চঞ্চল মনে হল।

বিছানায় শুয়ে-শুয়ে আরও কাটল দুটো দিন। ডাক্তার আর নার্সের ঘনঘন আনাগোনা।

দু-দিন পরে নার্স বিদায় নিল। আমিও উঠে বসলাম।

ধীরেশবাবু বললেন, মেয়েটিকে প্রথম দিন দেখেছিলেন লাল শাড়ি পরে?

—হ্যাঁ।

—পরদিন দেখেছিলেন হলদে শাড়িতে?

—হ্যাঁ।

—তার পরদিন সাদা শাড়িতে?

—হ্যাঁ।

ধীরেশবাবু আমার স্বামীকে ডাকলেন। তারপর আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনার আলনার দিকে তাকান তো!

তাকালাম। পাশাপাশি তিনটি আটপৌরে শাড়ি ঝুলছে। লাল, হলদে, সাদা।

বললেন, যে-মেয়েটিকে দেখেছিলেন, সে আর কেউ নয়, সে আপনি নিজে। আপনারই অবচেতন মনের প্রতিচ্ছবি আপনি দেখেছিলেন, মিসেস চৌধুরী।

—আমি!—অবাক হয়ে মনস্তত্ত্ববিদ ধীরেশবাবুর কথা শুনছি।

অনেক, অনেকক্ষণ পরে ধীরেশবাবু আমার স্বামীর নাম উচ্চারণ করলেন, বললেন, বিচ্ছেদের দরখাস্ত আমি কালই কোর্ট থেকে নাকচ করিয়ে আনছি।

বলে ধীরে-ধীরে বেরিয়ে গেলেন তিনি।

আমার স্বামী তাকালেন আমার মুখের দিকে। নতুন এক দৃষ্টি। অথবা, দৃষ্টি আমারই নতুন, যা দেখছি, তা-ই নতুন লাগছে!

মাসিক রোমাঞ্চ

পুজো সংখ্যা, ১৯৫৮

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *