ব্রাহ্ম পর্ব
মধ্য পর্ব
প্রতিসর্গ পর্ব
1 of 3

সৃষ্টি বর্ণন

।। সৃষ্টি বর্ণনম্।।

শূনুগ্বেদং মহাবাহো পুরাণং পঞ্চলক্ষণম্। মচ্ছুত্বা মুষ্যতে রাজপুরুষো ব্রহ্মহত্যয়া।। ১।।

।। সৃষ্টি বৰ্ণন।।

সুমন্তু বললেন হে মহাবাহু, তুমি সেই পঞ্চলক্ষন পুরাণ শ্রবণ কর, যা শুনে পুরুষ ব্রহ্মহত্যারূপ পাপ থেকে রক্ষা পায়।।১।।

পর্বাণি চাত্র বৈ পঞ্চ কীর্তিতানি স্বয়ম্ভুবা। প্রথম কস্যতে ব্রাহ্মং দ্বিতীয়ং বৈষ্ণক্ সমৃতম্।।২।। তৃতীয়ং শৈবমাখ্যাতং চতুর্থং ত্বাষ্ট্রমুক্যতে। পঞ্চমং প্রতিসর্গাখ্যং সর্বলোকৈঃ সুপুজিতম্।।৩।। এতানি তাত পৰ্বাণি লক্ষণানি নিরোধ মে। সর্গশ্চ প্রতিসর্গশ্চ বংশো মন্বন্তরাণি চ।। ৪।। বংশানুচরিতং চৈব পুরাণং পঞ্চলক্ষণম্। চতুর্দশভিবিদ্যাভিভূষিতং কুরুনন্দন।। ৫।। অংগানি চতুরো বেদা মীমাংসান্যায়স্তিরঃ। পুরাণং ধর্মশাস্ত্রং চ বিদ্যা হেতাশ্চতুৰ্দশ।। ৬।। আয়ুর্বেদো ধনুর্বেদো গান্ধবশ্চৈব তে ত্ৰয়ঃ। অর্থশাস্ত্রং চতুর্থং তু বিদ্যা হাষ্টদশৈব তাঃ।।৭।। প্রথমং কথ্যতেসর্গা ভূতাগমিহ সৰ্বশঃ যজ্জু ত্বা পাপনির্মুক্তো যাতি শান্তিপনুত্তমাম্।।৮।। জগাদাসীতপুরা তাত তমোভূতমলক্ষণম্। অবিজ্ঞেয়মতৰ্কং চ প্ৰসুপ্তমিহ সৰ্বশঃ।।৯।।

স্বয়ম্ভূ ব্রহ্মা পুরাণের পঞ্চপর্বের কথা বলেছেন, প্রথম ব্রাহ্ম নামে কথিত দ্বিতীয় পর্বের নাম “বৈষ্ণব’। তৃতীয় পর্ব হল শৈব, চতুর্থও পঞ্চম পর্ব যথাক্রম ত্বাষ্ট্র এবং প্রতিসর্গ।।২-৩।।

হে তাত পঞ্চপর্বযুক্ত এই পুরাণের পঞ্চলক্ষণ হল সর্গ, প্রতিসর্গ, বংশ, মন্বন্তর এবং বংশানুচরিত। এই পুরাণ আবার চতুর্দশা বিদ্যায়ভূষিত। চতুৰ্দশ বিদ্যা হল- যড়বেদাঙ্গ সহ চতুবের্দ, মীমাংসা,ন্যায় এবং পুরাণ ও ধর্মশাস্ত্র এছাড়া আয়ুবের্দ, ধনুর্বেদ, গান্ধর্ব এবং অর্থশাস্ত্র কে গ্রহন করে পুরান অষ্টাদশ বিদ্যাভূষিত।।৪-৭।

পুরাণের পঞ্চলক্ষণের মধ্যে প্রথম সর্গ, যা শ্রবণ করে মনুষ্যগন পাপ থেকে বিমুক্ত হয়ে সর্বোত্তম শান্তি লাভ করে।।৮।।

হে তাত, এই জগৎ প্ৰথমে তমসাবৃত ছিল এবং তা বিশেষরূপে জানার বা তর্কের অযোগ্য ছিল। আর এই জগৎ ছিল প্ৰসুপ্ত।।৯।।

তত স ভগবাণীশো হ্যব্যক্তো ব্যজ্ঞয়ন্নিদম। মহাভূতানি বৃত্তৌজাঃ প্রোতিমতস্তমনাশনঃ।।১০।। সোমাবতীন্দ্রিয়োহগ্রাহঃ সূক্ষ্যোহব্যক্তঃ সণাতনঃ সর্বভূতময়োহচিন্ত্যঃ স এষ স্বয়মুস্থিতঃ।।১১।। যোসৌ যড়বিংশকো লোকে তথা সঃ পুরুষোত্তমঃ। ভাস্করশ্চ মহাবাহো পরং ব্রহ্ম চ কথ্যতে।।১২।। সোহভিধ্যায় শরীরাতস্বাতিসসৃক্ষুবিবিধাঃ প্রজাঃ। অপ এব সসজাদৌ তাসু হীৰ্যমবাসৃজৎ।।১৩।। যসমাদুপ্তদ্যতে সর্বং সদেবাসুরমানুষম্। বীজং শুক্রং তথা রেত উগ্রং বীর্যং চ কস্যতে।।১৪।। বীর্যস্যৈতানি নমানি কথিতানি স্বয়ম্ভুবা। তদন্ডমভবদ্বৈমং জ্বালামালাকুলং বিভৌ।।১৫।। যসিমজ্ঞজ্ঞে স্বয়ং ব্রহ্মা সর্বলোকপিতামহঃ সুরজ্যেষ্ঠশ্চতুর্বক্রঃ পরমেষ্ঠী পিতামহঃ।।১৬।।

অতঃ পর ভগবান্ ঈশ অব্যক্ত এই জগৎ কে প্রকটিত করার জন্য মহাভূত বৃত্তৌজাকে নাশ করতে উত্থিত হন যিনি অতীন্দ্রিয়, অগ্রাহ্য, সূক্ষ্ম, অব্যক্ত, সনাতন, সর্বভূতময় এবং অচিন্ত্য।।১০-১১।।

হে মহাবাহু, যিনি এই লোকে ষড়বিংশক, পুরুষোত্তম এবং ভাস্কর তিনি পরব্রহ্মরূপে পরিচিত।।১২।।

সেই অব্যক্তপরব্রহ্ম প্রথমে প্রজাসৃষ্টির ইচ্ছা প্রকাশপূর্বক আদিতে জল সৃষ্টি করেন এবং তাতে বীর্যের সৃজন করেছিলেন। সেই বীর্যথেকে দেবতা, অসুরএবং মনুষ্য সকলে উৎপন্ন হন। যারা বীজ শুক্র, রেত, উগ্র এবং বীর্য নামে পরিচিত।।১৩-১৪।।

স্বয়ম্ভূ বীর্যের এই নাম বলেছেন। যেখানে সেখানে থেকে স্বয়ং সর্বলোকের পিতামহ ব্রহ্ম জন্মগ্রহন করেছিলেন। এই পরমেষ্ঠী ব্রহ্মা ছিলেন সমস্ত দেবতার মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং চতুমুখ বিশিষ্ট। এই ব্রহ্মা ক্ষেত্রজ্ঞ, পুরুষ, বেধা, শম্ভু, নারায়ণ ক্ষেত্রজ্ঞঃ পুরুষো বেধণঃ শম্ভুনারায়নস্তথা। পর্যায়বাচকৈঃশব্দৈরেবং ব্রহ্মা প্রকীর্ত্যতে।।১৭।। সদা মণীষিভিস্তাত বিরঞ্চি পদ্মজস্তথা। আপো নাারা ইতি পোক্তা তনাপৌ বৈ নরসুনবঃ।।১৮।। তাত সদস্যায়ণং পূর্বং তেন নারায়ণঃ সমৃতঃ অরমিত্যেব শীঘ্রায় নিয়তা কবিভিঃ কৃতাঃ।।১৯।। আপ এবার্ণবীভূত্বা সুক্ষীঘ্রাস্তেন তা নরাঃ। সত্তক্তারণমব্যক্তং নিত্যং সদসগাত্মকম্।।২০।। তদ্বিসৃষ্টঃ স পুরুষো লোকে ব্রহ্মেতি কীৰ্ততে। এবং স ভগবান্ডে তত্ত্বমেব নিরুপ্য বৈ।।২১।। ধ্যান মাসহায় রাজেন্দ্র তদন্ডমকরোদবিধা। শকলাভ্যং চ রাজেন্দ্রদিবং ভূমিং চ ণির্মমে।।২২।। অন্তব্যোম দিশশ্চাষ্টো বারুণং স্থাণমেব হি। উর্দ্ধং মহাণগতৌ রাজসমন্তাল্লৌকভূতয়ে।।২৩।।

ইত্যাদি পর্যায়বাচক শব্দের দ্বারাও পরিচিত হন।।১৫-১৭।

হে তাত, সেই ভগবান ব্রহ্মা মনীষিদের দ্বারা সর্বদা বিরিঞ্চি, পদ্মজ ইত্যাি নামে খ্যাত হন। আপ্ অর্থাৎ জলকে না র বলা হয়। সেই জল নরসূনু। সে জল যেখানে তিনি নিবাস করেন তাই তাঁকে নারায়ণ বলা হয়। কবিগ শীঘ্রতার জন্য নিয়ত অরম্ করেন।।১৮-১৯।।

সেই জলই অর্ণব বা সমুদ্ররূপে সুশীঘ্ররূপে প্রবাহিত। নরকুল তথা জীবকূ সেই মহার্ণব থেকেই সৃষ্ট,তাই সেও অব্যক্ত, নিত্য এবং সদ্- অসদ স্বরূপ সেই মহার্ণব থেকে সৃষ্ট পুরুষ ব্রহ্মরূপে জগতে পরিচিত। এই রূপে অন্ডমধে তত্ত্বনিরূপণ পূর্বক তিনি ভগবান রূপে খ্যাত।।২০-২১।।

হে রাজেন্দ্র, ধ্যানমগ্ন অবস্থায় সেই অন্ডকে দ্বিধাভিক্ত করা হয়। সে খন্ডদ্বয় থেকে আকাশ ও ভূমির সৃষ্টি হয়।।২২।।

অন্তব্যোমথেকে অষ্টদিক এবং বারুণ স্থান সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া এই জগতে সমৃদ্ধির জন্য ঊর্দ্ধলোক সৃষ্টি হয়েছে।।২৩।।

মহতশ্চাপ্যহং কারস্তসমাঞ্চ ত্রিগুণা অপি। ত্রিগুণা অতিসূক্ষ্মাস্তু বুদ্ধিগম্যাহি ভারত।।২৪।। উৎপতিহেতুভূতা বৈ ভূতানাং মহতাং নৃপ। তেষামেব গৃহীতানি শনৈঃ পঞ্চেন্দ্রিয়াণিতু।।২৫।। তথৈবাক্যবাঃ সূক্ষ্মাঃ যন্নামপ্যমিতৌজসাম্।।২৬।। সন্নিবেশ্যাত্মমাত্রাসু স রাজম্ভগবান্বিধঃ। ভূতানি নিৰ্মমে তাত সর্বাণি বিধিপূর্বকম্।।২৭।। সন্মূর্ত্য ক্যবাঃ সূক্ষ্মাস্তস্যেমান্যাশ্রয়ানি যট। তস্মাচ্ছবীরমিত্যাহুস্তস্য মূর্তি মণীষিণঃ।।২৮।। মহান্তি তানি ভূতানি অবিংশতি ততো বিভুম্। কর্মণা সহ রাজেন্দ্র সগুনাশ্চাপি বৈ গুণাঃ।।২৯।। তেষামিদং তু সপ্তানাং পুরুষাণং মহৌজসাম্। সূক্ষ্মাভ্যে মূর্তিমাত্রাভ্যঃ সম্ভবত্যয়াদ্বয়ম্।।৩০।।

মহত্বথেকে অহং কার উৎপন্ন হয়েছে, এবং অহংকার থেকে সত্ত্বাদি ত্রিগুণের উৎপত্তি ঘটেছে। হে ভারত, সেই ত্রিগুন অত্যন্ত সূক্ষ্ম, যা কেবল মাত্র বুদ্ধিগম্য।।২৪।।

হে নৃপ, এই ত্রিগুন থেকে মহাভূত সৃষ্টি হয়েছে এবং তা থেকে ধীরে ধীরে পঞ্চইন্দ্রিয় সৃষ্টি হয়েছে।।২৫।।

সেই প্রকার মহাতেজবান্ ছয় অবয়ব সৃষ্টি হয়েছে।।২৬।।

ভগবান্ ব্রহ্মানিজপঞ্চতন্মাত্র সন্নিবেশ ঘটিয়ে যথানিয়মে সমস্ত প্রানি জগৎ সৃষ্টি করেছেন।।২৭।।

যে সকল মূর্তিতে এই প্রকার অবসর বিদ্যমান, মনীষীগন সেই মূর্তিতে শরীর নামে অভিহিত করেন।।২৮।।

হে রাজেন্দ্র সেই মহাভূত বিভূতে আবিষ্ট হয় এবং কর্ম, গুনও সগুন ও একই সঙ্গে সেই রূপ কার্য করে।।২৯।।

সেই সপ্তওজো বা তেজমুক্তপুরুষের সূক্ষ্মমূর্তি মাত্রা থেকে অব্যয় এবং দ্বয় প্রকটিত হয়েছে।।৩০।।

ভূতাদিমহস্তাত যেন ব্যাপ্তমিদং জগৎ। তস্মাদপি মহাবাহো পুরুষা পঞ্চএব হি।।৩১।। কেচিদেবং পরাং তাত সৃষ্টিমিচ্ছন্তি পন্ডিতাঃ। অন্যেহপ্যেবং মহাবাহো প্রবদন্তি মণীষিণঃ।।৩২।। যোহসাবাত্মা পরস্তাত কলপাদৌ সৃজতে তনুম্ প্ৰজনশ্চ মহাবাহো সিসৃক্ষবিবিধাঃ প্রজাঃ।।৩৩ ।। তেন সৃষ্টঃ পুদগলস্তু প্রধানং বিশতে নৃপঃ। প্রধানং ক্ষোভিতং তেন বিকারানসৃজতে বহুন্।।৩৪।। উৎপদ্যতে মহান্নস্তসমাত্ততৌ ভূতাদিরেব হি। উৎপদ্যতে বিশালং চ ভূতাদেঃ করুনন্দনঃ।।৩৫।। বশালাচ্চ হরিস্তাত হরেশ্চাপি বৃকাস্তযা। বৃকৈমুম্মান্তি চ বুধাস্তসমাস্তং ভবেন্নুপঃ।।৩৬।। তথৈষামেব রাজেন্দ্র প্রাদুর্ভবতি বেগতঃ। মাত্রাণাং কুরুশার্দূল বিরোধস্তদনন্তরম্।।৩৭।।

হে তাত, মহৎ ভূতাদি জগৎ ব্যাপিয়া রয়েছে। হে মহাবাহু, তার থেকে পঞ্চপুরুষের উদ্ভব হয়েছে।।৩১।।

হে তাত, এই প্রকারে বিদ্বান্ গন পরাসৃষ্টির ইচ্ছা প্রকাশ করেন। অন্য মনীষীগণও একথা বলেন।।৩২।।

হে তাত, যিনি সেই আত্মাতে অবস্থান করেন, তিনি সৃষ্টির আদিতে তনু সৃজন এবং প্রজন করেন। তিনি অনেক প্রজা,সৃষ্টি করার ইচ্ছা করেন।।৩৩।।

হে নৃপ্ তাঁর সৃষ্ট পুদগল প্রধানে প্রবেশ করে। তার দ্বারা প্রধান ক্ষোভিত হয় এবং প্রচুর সৃজন করে থাকেন।।৩৪।।

তার থেকে মহান এবং সেই মহান্ থেকে ভূতাদি উৎপন্ন হয়। হে কুরুনন্দন, পুনরায় ভূতাদি বিশাল স্বরূপ প্রাপ্ত হয়।।৩৫।।

সেই বিশাল থেকে হরি এবং হরি থেকে বুক এবং বুক থেকে বুধ সৃষ্টি হয়। আবার তার থেকে সকল কিছু উৎপন্ন হয়।।৩৬।।

হে কুরুনন্দন, বিশেষ বোধ যুক্ত হয়ে বধু সৃষ্টি হয়। তার পর মাত্রাগনের বিশেষ বোধ জন্মায়।।৩৭।।

তস্মাদপি হৃষীকানি বিবিধানি নৃপোত্তম। তবেয়ং সৃষ্টিরাখ্যাতা রাধ্যতঃ কুরুনন্দন।।৩৮।। ভূয়ো নিবোধ রাজেন্দ্র ভূতানামিহ বিস্তরম্। গুণাধিকানি সর্বানি ভূতানি পৃথিবীপতে।।৩৯।। আকাশমাদিতঃ কৃত্বা উত্তরোত্তরমেব হি। এবং দ্বৌ চ তথা ত্রীণি চত্বারশ্চাপি পঞ্চচ।। ৪০।। ততঃ স ভগবান্বহ্মা পদ্মাসনগতঃ প্রভুঃ। সর্বেষাং তু স নামাণি কর্মাণি চ পৃথক পৃথক।।৪১।। বেদশদ্বেভ্য এবাদৌ পৃথক সংস্থাশ্চ নির্মমে। কর্মোদ্ভবাণাং দেবানাং সোসৃজদ্দেহিনং প্রভুঃ।।৪২।। তুষিতানাং গণং রাজন্যজ্ঞং চৈব সনাতনম্। দত্ত্বা বীর সমানেভ্যো গুহ্যং ব্রহ্ম সনাতনম্।।৪৩।। দুদোহ সজ্ঞসিদ্ধয়র্যমৃগ্যজুঃ সামলক্ষণম্। কালং কালবিভক্তীশ্চ গ্ৰহনৃতুংস্তযা নৃপ।।৪৪।

হে নৃপশ্রেষ্ঠ, বোধ থেকে বিভিন্ন ইন্দ্রিয় সৃষ্টি হয়। এই ভাবে আরাধ্যদেব কথিত সৃষ্টিবর্ণনা রপলাম।।৩৮।।

হে রাজেন্দ্র, পুনরায় ভূতসকলের বিস্তার শ্রবণ কর হে পৃথিবীপতে, ভূতগণ অধিকগুন সম্পন্ন।।৩৯।।

সৃষ্টির আদিতে ভূতসকলের মধ্যে আকাশ প্রথমে সৃষ্টি হয়েছে। পরবর্তীকালে উত্তরোত্তর পাঁচ প্রকার ভূত সৃষ্টি হয়েছ।।৪০।।

অনন্তর পদ্মাসনস্থিত ব্রহ্মা প্রত্যেক পৃথক্ পৃথক্ নামকরন এবং কর্মনির্দেশা করেছেন।।৪১।।

সৃষ্টি আদিতে তিনি বেদাদি পৃথক সংস্থা নির্মান করেছেন এবং কর্ম থেকে উৎপন্ন দেহধারী দেবগনের সৃজন করেছেন।।৪২।।

হে রাজন্ অনন্তর ব্রহ্মা তুষিত গনের সম্মানের জন্য সনাতন যজ্ঞ এবং সনাতন গুহ্যব্রহ্মা প্রদান করেছেন।। ৪৩।।

হে নৃপ্ এর পর প্রজাপতি ব্রহ্মা যজ্ঞসিদ্ধির জন্য ঋক সাম এবং যজুর্বেদ সৃষ্টি করেছেন কাল এবং কালভেদ্। গ্রহ তথা ঋতু সৃষ্টি করেছেন।।৪৪

সরিতঃ সাগরাঞ্ছৈলানসমানি বিমমানিচ। কামং ক্রোধং তথা বাচং রতিং চাপিকুরুদ্বহ।।৪৫।। সৃষ্টিং সসর্জ রাজেন্দ্র সিসৃক্ষুবিবিধাঃ প্রজাঃ। ধর্মাধর্মৌ বিবেকায় কর্মণাং চ তথাসৃজৎ।।৪৬।। সুখদুঃখাদিভিদ্বন্দ্বৈঃ প্রজাশ্চেমা ন্যয়োজ্যৎ। অন্বোমাত্রাবিনাশিন্যোদশর্ধানান্তু মাঃ সমৃতাঃ।।৪৭।। তাভিঃ সর্বমিদং বীব সম্ভবত্যনুপূর্বশঃ। সৎকৃতঃ তু পুরা কর্ম সন্নি যুত্তোন র্বৈ নৃপ।।৪৮।। স তদেব স্বয়ং ভেজে সৃজ্যমানং পুনঃ পুনঃ হিংসাহিংশে মৃদুত্তুরে ধর্মাধর্মে কৃতানৃতে।।৪৯।। সদ্যযাস্যাভবৎসর্গে তত্তস্য স্বয়মাবিশ‍। সমা চ লিংগান্যতবঃ স্বয়মেবানুপর্যয়ে।।৫০।। স্বানিস্বানভপদ্যন্তে তথা কর্মাণি দেহিনঃ। লোকস্যেহ বিবৃদ্ধেয়র্থং মুখবাহুরুপাদতঃ।।৫১।।

নদীসকল, সমুদ্র, পর্বত, সম, বিযম, কাম,ক্রোধ, বাণী, এবং রতির সৃষ্টি করেছেন।।৪৫।।

হে রাজেন্দ্র, বিভিন্ন প্রকার প্রজা সৃজনকারী বিবেকেরজন্য ধর্ম ও অধর্ম সৃষ্টি করেছেন।।৪৬।।

পুনরায় সৃষ্ট এই প্রজাবর্গকে সুখ-দুঃখাদি দ্বন্দ্বে নিয়োজিত করেছেন। যার মধ্যে দশাণুমাত্র বিনাশশীল।।৪৭।।

হে বীর! তারা আনুপূর্বিক উৎপন্ন হয়। পূর্বজন্মের কর্মফল অনুযায়ী তারা পুনরায় জন্ম লাভ করে।।৪৮।

তিনি স্বয়ং বারবার তাদেরই সৃষ্টি করেন। হিংসা ও অহিংসা, মৃদু ও ক্রূর, ধর্ম ও অধর্ম তথা সত্য ও মিথ্যা এসবই তিনি নিজে সৃষ্টি করেন।।৪৯।।

পূর্বে যে যেমন থাকে পরে সে সেই ব্যাপারে নিজেই নিবিষ্ট হয়। যেমন- লিঙ্গ, ঋতু সকল পরিবর্তত হয়। একে অন্যের পর আসা-যাওয়া করে।।৫০।। সংসারে লোকের বিবৃদ্ধি করার জন্য দেহধারী মুখ, হাত, ঊরু এবং পায়ের মাধ্যমে নিজ নিজ কর্মফল প্রাপ্তি দেখা যায়।।৫১।।

ব্ৰহ্ম ক্ষত্ৰং তথা চৌভৌ বৈশ্যশূদ্রৌ নৃপোত্তম। মুখানি যানি চত্বারি তেভৌ বেদা বিনিঃসৃতা।।৫২।। ঋগ্বেদসংহিতা তাত বসিষ্ঠন মহাত্মনা। পূর্বান্ মুখানহাবাহৌ দক্ষিণাচ্চাপি বৈ শৃণু।।৫৩।। যজুর্বেদ মহারাজ যাজ্ঞবল্ক্যন বৈ সহ। সামানি পশ্চিমাত্তাত গৌতমশ্চ মহাঋ ষিঃ।। ৫৪।। অথর্ববেদো রাজেন্দ্র মুখাচ্চাপ্যুত্তরান্নৃপ। ঋযিচ্চাপি তথা রাজঞ্জৌনকো লোকপূজিতঃ।।৫৫।। যত্তনমুখং মহাবাহৌ পঞ্চং লোকবিশ্রুতম্। অষ্টাদশ পুরাণানি সেতিহাসানি ভারত।।৫৬।। নির্গতানি ততস্তসমানমুখাতুরু কুলোদ্বহ। তথান্যাঃ স্মৃতয়শ্চাপি যমাদ্যা লোকপূজিতাঃ।।৫৭।। ততঃ স ভগবান্দেবৌ দ্বিধা দেহমকারয়ৎ। দ্বিধা কৃত্বাত্মনৌ দেহমধ্যেণ পুরুষোভবৎ।।৫৮।। অর্ধৈণ নারী তস্যাং চ বিরাজম সৃজতপ্রভুঃ। তপস্তপ্তবাসৃজদ্যং তু স স্বয়ং পুরুষো বিরাট্।।৫৯।।

হে নৃপশ্রেষ্ঠ! ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র এই চার মুখ থেকে বেদ নিঃসৃত হয়।।৫২।।

হে পিতা! ঋগ্বেদসংহিতা মহাত্মা বশিষ্ঠের সাথে পূর্বমুখে নিঃসৃত হয়। হে মহারাজ! দক্ষিণ মুখ থেকে যাজ্ঞবন্ধ্যের সাথে যজুর্বেদ নিঃসৃত হয়। পশ্চিম মুখ থেকে গৌতম ঋষির সাথে সামবেদ প্রকট হয়। হে রাজেন্দ্র! উত্তর মুখ থেকে শৌণক ঋষির সাথে অথর্ববেদ নিঋ সৃত হয়।।৫৩-৫৪-৫৫।।

হে মহাবাহু! লোকপ্ৰসিদ্ধ যে ৫ম মুখ আছে সেখান থেকে ইতিহাসের সাথে অষ্টাদশ পুরাণ নিঋ সৃত হয়।।৫৬।।

এরপর ভগবানদের নিজের দেহকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন। এরমধ্যে অর্ধেক ভাগ পুরুষ এবং অর্ধেক ভাগ নারীরূপ ধারণ করেছেন সে হল স্বয়ং বিরাট্ পুরুষ।।৫৭-৫৯।।

স চকার তপৌ রাজর্ষি সূক্ষুবিবিধাঃ প্রজাঃ। পতীনপ্রজা নামসৃজন্মহর্ষীনাদিতো দশ।।৬০। নারদং চ ভৃগুং তাত কং প্রচেতসমেব হি। পুলহং ক্রতুং পুলস্থং চ অত্রিমংগিরসং তথা।।৬১।। মরীচি চাপি রাজেন্দ্র যোসাবাদ্যঃ প্রজাপতিঃ। এতাং শ্চান্যাংশ্চ রাজেন্দ্র অসৃজডুরিতেজসঃ।।৬২।। অথ দেবাষীন্দৈত্যা নেসৗহ সৃজহ্নুরুনন্দন। মক্ষরক্ষঃ পিশাচাংশ্চ গন্ধর্বা পযরসোহ সুরান্।।৬৩ মনুষ্যাণাং পিতৃণাংচ সৰ্পাণাং চৈব ভারত। নগানাং চ মহাবাহো সসর্জ বিবিধাগণান্।।৬৪।। ক্ষণরুচোহশনিগণাত্রৌহিতেন্দ্ৰধনুংষি চ। ধূমকেতূং স্তথাচৌল্কানির্বার্তা জ্যোতিষাংগণান্।।৬৫।। মনুষ্যাক্লিন্নরামস্ত্যান্বরাহাংশ্চ বিহংগ মান্। গজানশ্চানথ পশূন মৃগাম্ব্যালাংশ্চ ভারত।।৬৬।।

তিনি তপস্যা করেছেন কেননা তাঁর বিবিধ প্রকারের প্রজা সৃষ্টি করার পূর্ণ ইচ্ছা হয়েছিল। প্রথমত দশজন মহর্ষি প্রজাপতির সৃষ্টি করেছেন।।৬০।। দশজন প্রজাপতি মহর্ষিরা হলেন- নারদ, ভৃগু, কম্, প্রচেতস, পুলহ, ঋতু, পুলস্ত্য, অত্রি, অঙ্গিরস এবং মরীচি। হে রাজেন্দ্র! মরীচি হলেন প্রথম প্রজাপতি। এঁকে এবং অন্যদের প্রচুর তেজ দ্বারা তিনি সৃষ্টি করেছিলেন।।৬১-৬২।।

হে কুরুপুত্র! এরপর তিনি দেবতা, ঋষি, দৈত্য, রাক্ষস, যক্ষ, পিশাচ, গন্ধর্ব, অপ্সরা এবং অসুরদের সৃষ্টি করেছেন।।৬৩।।

হে ভারত! মহাবাহ মনুষ্য, পিতৃগণ, সপবর্গ, নাগ এবং বিবিধগণের সৃষ্টি করেছেন।।৬৪।।

বিদ্যুৎ, অশনি, রেহিতেন্দ্ৰ ধনু, ধূমকেতু, উল্কা নিপাত, জ্যোতির্গণ, মানুষ, কিন্নর, মৎস্য, বরাহ এবং বিহঙ্গের সৃষ্টি করেছেন। হাতি, ঘোড়া, পশু, মৃগ এবং হিংস্র জন্তুর সৃষ্টি করেছেন।।৬৫-৬৬।।

কৃমিকীর্তপতংগাংশ্চ মুকালিক্ষকমকুণান। সর্ব চ দংশমশকং স্থাবরং চ পৃথগ্বিধম্।।৬৭।। এবং স ভাস্করো দেব সসর্জ ভুবনত্রয়ম্। যেষাং তু যাদৃশং কর্ম ভূতানামিহ কীৰ্তিতম্।।৬৮।। কথয়িষ্যামি তৎসর্বং ক্রমযোগং চ জন্মনি। গজা ব্যালা মৃগাস্তাত পশব্যচ পৃথগ্বিধাঃ।।৬৯।। পিশাচা মানুষা তাত রক্ষাংসি চ জরায়ুজাঃ। দ্বিজাস্তু অন্ডজাঃ সর্পা ণক্রা মৎস্যাঃ সকচ্ছপাঃ।।৭০।। এবং বিধানি মানীহ স্থলজান্যৌদকানি চ। স্বেদজং দংশমংশকং কালিক্ষ কমৎকুণাঃ।।৭১।। উষ্মণা চোপজায়ন্তে সচ্চান্যক্তিচিদীদশম্। উদ্ভিজ্জাঃ স্থাবরাঃ সর্বে বীজকান্ড প্ররোহিণঃ।।৭২।।

কৃমি, কীট, পতঙ্গ, জোঁক, লিক্ষা এবং ছারপোকা সৃষ্টি করেছেন। দংশ (ডাঁশ) এবং বিবিধ মশার সৃষ্টি করেছেন।।৬৭।।

এই ভাবেই সূৰ্য্যদেব এই ভুবনত্রয় নির্মাণ করেছেন, যেখানে প্রাণীদের বিভিন্ন কর্ম নির্দেশ করা হয়েছে।।৬৮।।

এরপর ভবিষ্যজন্মের সব ক্রমযোগ বলা হবে, হে পিতা! হস্তি, হিংস্র জন্তু, মৃগ এবং অন্য প্রকারের পশুবর্গ, পিশাচ, মানুষ, রাক্ষস সব কিছু জরায়ুজ। পক্ষী, সর্প, মৎস্য এবং কচ্ছপ হল অন্ডজ। জরায়ুতে উৎপন্ন হলে জরায়ুজ এবং অন্ড (ডিম) থেকে উৎপন্ন হলে সেই জীবকে বলা হয় অন্ডজ।।৬৯-৭০।।

কিছু জীব আছে যারা স্থলভাগে জন্মায় এবং কিছু জীব আছে যারা জলে জন্মায়। দংশনকারী মশা, জোঁক, লিক্ষা এবং ছারপোকা এদের স্বেদজ বলা হয়। কারণ এরা উষ্মা (স্বেদ) থেকে উৎপন্ন হয় আর এক প্রকারের জীব আছে যাদের উদ্ভিজ্জ বলা হয় কারণ এরা ভূমিতে সৃষ্ট হয় এবং বীজ কান্ডে পরিণত হয়।।৭১-৭২।।

ঔষধ্যঃ ফলপাকান্তা নানাবিধফলোপগাঃ। অপুষ্পাঃ ফলবন্তৌ যে তে বনস্পতয়ঃ সমৃতাঃ।।৭৩।। পুষ্পিণঃ ফলিণশ্চৈব বৃক্ষাস্তুভয়তঃ সমৃতাঃ। গুচ্ছগুল্মং তু বিবিধং তথৈব তৃণজাতয়ঃ।।৭৪।। বীজকান্ডরু হান্যেব প্রতানা বল্লয় এব চ। তমসা বহুরূপেন বেষ্টিতাঃ কৰ্মহেতুনা।।৭৫।। অন্তঃ সংজ্ঞা ভবন্ত্যে তে সুখদুঃখসমন্বিতাঃ। এতাবত্যস্তু গতয়ঃ প্রোদ্ভূতাঃ কুরুনন্দন।।৭৬।। তসমাদ্দেবাদ্দীপ্তি-মন্তৌ ভাস্করচ্চ মহাত্মনঃ। ঘোরেসিমংস্তাত সংসারে নিত্যং সততয়ায়িনি।।৭৭।। এবং সর্বং সসৃষ্ট্রেদং রাজলেঁকগুরুং পরম্। তিরোভূতঃ স ভূতাত্মা কালং কালেন পীড্যণ্।।৭৮।।

এইভাবে জরায়ুজ, অন্ডজ, স্বেদজ এবং উদ্ভিজ্জ এই চারপ্রকার সৃষ্টি হয়েছে। ওষধি, ফল অন্তে পক্ব হয়, নানাপ্রকার ফলযুক্ত এবং পুষ্প রহিত, তাকে বনস্পতি বলা হয়।।৭৩।।

বৃক্ষ দুই প্রকারের হয়। কিছু বৃক্ষ আছে শুধুমাত্র যাতে ফুল হয় এবং কিছু বৃক্ষ আছে যার ফুল ও ফল দুই-ই হয়। গুচ্ছ, গুল্ম অনেক প্রকারের হয়। এভাবে তৃণেরও বিভিন্ন জাতি উৎপন্ন হয়।।৭৪।।

বীজ এবং কান্ডতে প্ররোহণ প্রাপ্ত বৃক্ষকে বল্লী বলে। অনেকপ্রকার কর্মস্বরূপ হেতুর অন্ধকারে সব বেষ্টিত হয়ে আছে।।৭৫।।

এরা নিজের মধ্যে অল্পজ্ঞান রাখার জন্য জড় সৃষ্টি বলে পরিচিত কিন্তু এদেরও সুখ এবং দুঃখের অনুভব অবশ্যই থাকে। অতএব এরা সুখ-দুঃখ সমন্বিত হয়। হে কুরুনন্দন! এই গতি উদ্ভূত হয়। মহান আত্মা সূৰ্য্যদেবের আলোয় দীপ্ত হয় এবং নিরন্তর গমনশীল এই ঘোর সংসারে প্রকট হয়।।৭৬-৭৭।।

এইভাবে তিনি এই জগৎ সৃষ্টি করে এক সময় থেকে অন্য সময়কে পীড়িত করেন এবং তিনি ভূতাত্মা পরম লোকে তিরোভূত হয়ে যান।।৭৮।।

যদা স দেবো জাগর্তি তদেদং চেষ্টতে জগৎ। সদা স্বপিতি শান্তাত্মা তদা সর্ব নিমীলতি।।৭৯।। তস্মিনস্বপিতি রাজেন্দ্র উদ্ভবঃ কর্মবন্ধনাঃ। স্বকর্মভ্যো নিবর্তন্তে মনশ্চ গ্লানি মৃচ্ছতি।।৮০।। যুগপত্তু প্রলীয়ন্তে সদা তস্মিনমহাত্মানি। তদায়ং সর্বভূতাত্মা সুখং স্বপিতি ভারত।।৮১।। তমৌ যদা সমাশ্রিত্য চিরং তিষীতি সেন্দ্রয়ঃ। ন নবং কুরুতে কর্ম তদৌতক্রামতি মূর্তিতঃ।।৮২।। যদাহংমাত্রিকো ভূত্বা বীজং স্বাস্নু চরিষ্ণু চ। সমাবিশতি সংসৃষ্টস্তদা মূর্তিং বিমুঞ্চতি।।৮৩।। এবং স জাগ্রতস্বপ্রভ্যামিদং সর্বং জগতপ্রভুঃ। সংজীবয়তি চাজস্রং প্রমাণয়তি চা ব্যয়ঃ।।৮৪।। কলপাদৌ সৃজতে তাত অন্তে কলপস্য সংহরতে। দিনং তস্যেহ যত্তাত কলপান্তমিতি কথ্যতে।।৮৫।।

যে সময় ঐ দেব জাগ্রত থাকেন সেই সময় ঐ জগৎও চেষ্টাযুক্ত খাকে এবং নিমীলিত হয়ে যায়।।৭৯।।

হে রাজেন্দ্র! তাঁর শয়ন করার পর কর্মের বন্ধনে যুক্ত সে সমস্ত জন্তুগুণ নিজ কর্মে নিবর্তিত হয় এবং মন গ্লানি প্রাপ্ত হয়।।৮০।।

যখন ঐ মহাত্মায় সব কিছু একসাথে বিলীন হয়ে যায় তখন এ সংস্ত ভূতের আত্মা সুখপূর্বক শয়ন করেন।।৮১।।

তখন তমোগুণের সমশ্রয় করে ইন্দ্রিয়ের সাথে চিরকাল ধরে স্থিত থাকে এবং কেউ নতুন কর্ম করে না, এ সময় মূর্তি থেকে উৎক্রান্ত হয়ে যায়।।৮২।

যখন তিনি অহংমাত্রিক হয়ে স্থাণু ও চরিষ্ণু বীজে সমাবিষ্ট হল তখন সংসৃষ্ট হওয়া মূর্তিকে তিনি মুক্তি দেন।।৮৩।।

এই ভাবে অনেকে এইজগৎকে জাগ্রত এবং স্বপ্ন এই দুভাবে সঞ্জীবিত করেন এবং অব্যয়-নিত্যরূপে প্রমাণ করেন।।৮৪।।

হে পিতা! কল্পের আদিতে এই জগৎ সৃষ্টি হয়েছে এবং কল্পের অন্তে এই জগতের সংহার করা হয়েছে, সংহারের দিনকে কল্পান্ত বলা হয়।।৮৫।।

কাল সংখ্যাং ততস্তস্য কলপস্য শৃণু ভরত। নিমেষা দশ চাষ্টৌ চ অক্ষঃ কাষ্ঠা নিগদ্যতে।।৮৬।। ত্রিংশক্তাষ্ঠাঃ কলামাহুঃ ক্ষণস্রিংশক্তলা সমৃতাঃ। মুহূর্তময মৌহুর্তা দস্তি দ্বাদশ ক্ষণম্।।৮৭।। ত্রিংশন্মুহূর্ত মুদ্দিষ্টমহোরাত্রং মণীষিভিঃ। মাসস্ত্রিংশ দহোরাত্রং দ্বৌ দ্বৌ মাসাবুনুঃ সমৃতঃ।।৮৮।। ঋতুত্ৰয়মপ্যয়নময়নে দ্বে তু বৎসরঃ। তনহোরাত্রে বিভজতে সূর্যো মানুষ দৈবিকে।।৮৯। রাত্রিঃ স্বপ্নায় ভূতানাং চেষ্টায়ৈ কর্মণামহঃ। পিত্রে রাত্র্যহনী মাসঃ প্রবিভাগস্তু পক্ষয়োঃ।।৯০।। কর্ম চেষ্টাস্বহঃ কৃষ্ণোঃ শুক্লঃ স্বপ্নায়শর্বরী। দৈবে রাত্র্যহনী মাসঃ প্রবিভাগস্তু পক্ষয়োঃ।।৯১।।

হে ভারত! এরপর কল্পের কালসংখ্যা শ্রবণ করুন। নেত্রের আঠারোটি যে নিমেষ আছে তাদের এক কাষ্ঠা বলা হয়। ত্রিশ কাষ্ঠায় এক কলা হয় এবং ত্রিশ কলায় এর ক্ষণ হয় এবং বারো ক্ষণে এক মুহূর্ত হয়। ক্ষণকে মৌহুর্ত ও বলা হয়।।৮৬-৮৭।।

মণীষীগণ ত্রিশ মুহুর্তে এক অহোরাত্র হলেন। অহোরাত্রের অর্থ হল এক দিন এবং এক রাত্রি। ত্রিশ অহোরাত্রে এক মাস হয় এবং দুই মাসে এক ঋতু হয়।।৮৮।।

তিন ঋতুতে এক অপন হয়। দুই অপনে এক বৎসর হয়। সূর্য্যদেব মানুষ এবং দৈবের অহোরাত্রের বিভাজন করেন। অর্থাৎ অহোরাত্র মানুষ এবং দৈবিক দুই প্রকারের হয়।।৮৯।।

অহোরাত্রে যে রাত্রি থাকে তা প্রাণিবর্গের স্বপ্নের জন্য এবং দিনের বেলা বিবিধ কর্ম করার চেষ্টা করার জন্য নির্ধারিত থাকে। পিতৃগণের রাত্রি এবং দিন মাস হয় যেখানে পক্ষের বিভাগ করা হয়।।৯০।।

কর্মের চেষ্টায় কৃষ্ণপক্ষ দিন হয় এবং মাসের শুক্লপক্ষ রাত্রি হয় যা স্বপ্নের জন্য নির্দিষ্ট। দৈবিক রাত্রি এবং দিন বৎসর হয়। তারও বিভাগ করা যায়।।৯১।।

অহস্তত্রোদগয়নং রাত্রিঃ স্বাদ্দক্ষিণায়ণম্। ব্রাহ্মস্য তু ক্ষপাহস্য যৎপ্রমাণং মহীপতে।।৯২।। একৈকশো যুগানাং তু ক্রমশস্তন্নিবোধমে। চত্বামাহুঃ সহস্ত্রানি বর্ষাণাং তৎকৃতং যুগম্।।৯৩।। তস্য তাবচ্ছতী সন্ধ্যা সন্ধ্যাংশশ্চ তথাবিধঃ। ত্রেতা ত্ৰীনি সহস্ত্রানি বর্ষানি চ বিদুর্বুধাঃ।।৯৪।। শতানি ষন্চ রাজেন্দ্র সন্ধ্যাসন্ধ্যাংশয়ো পৃথক বর্ষাণাং দ্বে সহস্রে তু দ্বাপরে পরিকীর্তিতে।।৯৫।। চত্বারি চ শতান্যাহুঃ সন্ধ্যা সন্ধ্যাংশয়োবুধঃ। সহস্ৰং কথিতং তিষ্যে শতদ্বয় সমন্বিতম্।।৯৬।। এষা চতুর্যুগস্যাপি সংখ্যা প্রোক্তা নৃপোত্তম। যদেতৎ পরিসংখ্যা তমাদাবেব চতুযুর্গম্।।৯৭।। এতদ্বাদশ সাহস্রং দেবানং যুগমুচ্য তে। দৈবিকণাং যুগানং তু সহস্র পরিসংখ্যয়া।।৯৮।।

২৩ বর্ষের উত্তরায়ণ হয় যা দেবতাদের দিন হয় এবং যে দক্ষিণায়ণ হয় তা দেবতাদের রাত্রি হয়। ব্রাহ্মণ দিন রাত্রির প্রমাণ বলবেন, তাই হে মহীপতি! তা শ্রবণ করুন।।৯২।।

এক-এক যুগের ক্রমে ব্রহ্মার দিন এবং রাত্রি বিভক্ত হয়। ব্রহ্মার চার সহস্র বর্ষের কৃতযুগ আছে। তার কত শত সন্ধ্যা এবং ঐ প্রকারে সন্ধ্যাংশ আছে। জ্ঞানীব্যক্তিগণ ত্রেতাযুগকে তিন সহস্র বর্ষ বলেছেন।।৯৩-৯৪।।

হে রাজেন্দ্র! ছয়শো পৃথক পৃথক সন্ধ্যা এবং সন্ধ্যাংশ হয়। দুই সহস্র বর্ষে ত্রেতার পরে দ্বাপর যুগ হয়।।৯৫।।

দ্বাপরের সন্ধ্যা এবং সন্ধ্যাংশ চারশো হয়। তৃতীয়টিকে এক সহস্র বর্ষ বলা হয়. যে দুই শো সন্ধ্যা এবং সন্ধ্যাংশ দ্বারা।।৯৬।।

হে নৃপোত্তম! যে চারটির (সত্যযুগ- ত্রেতাযুগ-দ্বাপরযুগ-কলিযুগ) সংখ্যা বলা হল। এদের যে পরিসংখ্যা আছে তা প্রথমে চতুর্যুগ বলা হল।।৯৭।।

বারো সহস্র দেবতাদের নিয়ে একযুগ হয়। এই প্রকারে দৈবিক যুগের যে এক সহস্র পরিসংখ্যা আছে তা ব্রহ্মার একদিন হয়।।৯৮।।

ব্রাহ্মমেকমহজ্ঞেয়ং তাবতী রাত্রিরুচ্যতে। তদগসহস্রাংতং ব্রাহ্মং পুন্যমহৰ্বিদুঃ।।৯৯। রাত্রিং চ তাবতীমেব তে হোরাত্র বিদোজনাঃ। ততৌহসৌ যুগপর্যংতে প্ৰসুপ্তঃ প্রতি বুধ্যতে।।১০০।। প্রতিবুদ্বস্তু সৃজতি মনঃ সদসদাত্মকম।

মনঃ সৃষ্টিং বিকুরুতে চোদ্যমানং সিসৃক্ষুয়া।।১০১।। বিপুলং জায়তে তস্মাত্তস্য শদ্বং গুণং বিদুঃ। বিপুলাত্ত্ব বিকুর্বাণাৎসর্বগন্ধবহঃ শুচি।। ১০২।। বলবাজ্জায়তে বায়ু স বৈ স্পর্শগুণো মতঃ। বায়োরপি বিকুর্বাণাদ্বিরোচিষ্ণু তমোনুদম্।।১০৩।। উৎপদ্যতে বিচিত্রাংশুস্তস্য রূপং গুণং বিদুঃ। তস্মাদপি বিকুর্বাণাদয়ো জাতাঃ সমৃতা বুধৈঃ।।১০৪।।

ব্রহ্মার যতগুলি দিন হয় ততগুলি পরিমাণে ব্রহ্মার রাত্রি হয়। যুগের সহস্র দিনের অন্তিম দিনকে পুণ্য দিন বলা হয়।।৯৯।।

ঐ দিনের সমান রাত্রি হয়। এইভাবে দিন এবং রাত্রিকে এক অহোরাত্র বলে জানা যায়। এই ভাবে একযুগ পর্যন্ত তিনি সুপ্ত থেকে পুনরায় জেগে ওঠেন।।১০০।।

যখন ব্রকহ্মা প্রতিবুদ্ধ হয়ে যান তখন তারপর জেগে উঠে সৎ এবং অসৎ স্বরূপ বিশিষ্ট মনের সৃষ্টি করেন। সৃষ্টি করার ইচ্ছা থেকে প্রেরণা প্রাপ্ত হয়ে তিনি মন সৃষ্টি করেন।।১০১।।

তা থেকে বিপুল আকাশ উৎপন্ন হয় যার গুণ হল শব্দ। বিপুল থেকে যখন তিনি বিকারযুক্ত হন তখন সর্বগন্ধবহনকারী বায়ু উৎপন্ন হয়।।১০২।। বায়ু বলবান্ উৎপন্ন হয়ে গেলে তার গুণকে স্পর্শ বলা হয়। বিকারযুক্ত বায়ু থেকে পুনরায় অন্ধকার দূরকারী বিরোচিষ্ণু উৎপন্ন হয়।।১০৩।।

তাসাং গুণো রসো জ্ঞেয়ঃ সর্বলোকস্য ভাবনঃ। অদ্ভুয়ো গন্ধগুণা ভূমিরিত্যেষা সৃষ্টিরাতিঃ।।১০৫।। যৎপ্রাগদ্বাদশসাহস্রমুক্তং সৌমনসঃ যুগম্। তদেক সপ্ততিগুণং মন্বন্তরমিহোচ্যতে।। ১০৬।। মন্বন্তরাণ্যসংখ্যানি সর্গঃ সংহার এব চ। তথাপ্যহে সদা ব্রাহ্মে মনবস্তু চতুৰ্দশ।।১০৭।। কয্যন্তে কুরুশার্দূল সংখ্যয়া পন্ডিতৈঃ সদা। মনোঃ স্বায়ম্ভুবস্যেহ যড়বংশা মনবোহপরে।। ১০৮।। সৃষ্টবন্তঃ প্রজাঃস্বাঃ মহাত্মানো মহেজসঃ। সাবর্নের্যস্তথা পঞ্চভৌত্যো রৌচ্যস্তথাপরঃ।।১০৯।। এতে ভবিষ্যা মনবঃ সপ্ত প্রোক্তা নৃপোত্তম। স্বে স্বেন্তরে সর্বমিদং পালয়ন্তি চরা চরম্।।১১০।। এবং বিধং দিনং তস্য বিরিঞ্চেস্ত মহাত্মণঃ। তস্যাংতে কুরুতে সর্গং যথেদং কথিতং তব।।১১১।।

এই উৎপন্ন বিচিত্রাংশুর গুণ হল রূপ। যখন তা বিকারযুক্ত হয় তখন তা থেকে জল উৎপন্ন হয়। এই জলের গুণ হল রস, যা সমস্ত লোকের প্রিয় বলে গণ্য হয়। এই জল থেকে গন্ধ গুণযুক্ত ভূমি উৎপন্ন হয়। এই প্রকারে আদি সৃষ্টির ক্রম শুরু হয়।।১০৪-১০৫।।

যে বারো সহস্র দেবতাদের যুগ এখন বলা হল তাকে একাত্তর দিয়ে গুণ করলে এক মন্বন্তর হয়।।১০৬।।

এইভাবে অসংখ্য মন্বন্তর হয় এবং তাদের সর্গ ও সংহারও হয়। ব্রহ্মার সময়ে চোদ্দজন মনুর কথা জানা যায়।।১০৭।।

হে কুরুশাদুল! পন্ডিতদের দ্বারা সর্বদা সংখ্যা এই প্রকারে বলা হয়। যেখানে স্বয়ভুব মনুর দ্বিতীয় বংশে জাত মনুর সংখ্যা হল ছয়।।১০৮।।

এই মহান আত্মা এবং মহান ওজ-এর সাথে যুক্ত নিজ নিজ প্রজাদের সৃষ্টি করেন। সবর্ণেয়, পঞ্চভৌত্য এবং রৌচ্য মনু। হে নৃপোত্তম এই সাত পূৰ্বস্থিতকে মনু বলা হয়। অপর সবাই নিজে এই চরাচর পালন করে গেছেন।।১০৯-১১০।।

এই প্রকার মহাত্মা বিরঞ্চির দিন হয়। এরপর সর্গে কি করা হয়- যেমন তোমার সামনে আমি বলবো।।১১১।।

ক্রীড়ন্নিবৈতৎ কুরুতে সর্গং যথেদং কথিতংতব। চতুষ্পাদ্ সকলো ধর্মঃ সত্যং চৈব কৃতে যুগে।।১১২।। ভূতানাং প্রাণিনঃ শ্ৰেষ্টাঃ প্ৰানিনাং বুদ্বিজীবিনঃ। বুদ্ধিমশু নরাঃ শ্রেষ্ঠা নরেষু ব্রাহ্মণাঃ সমৃতাঃ।।১১৩।। ব্রাহ্মণেষু বিদ্বাংসো বিদ্বৎসু কৃতবুদ্বয়ঃ। কৃতবুদ্বিষু কর্তারঃ কর্তৃযু ব্ৰহ্মবেদিনঃ।।১১৪।। জন্ম বিপ্রস্য রাজেন্দ্র ধর্মার্থমহ কথ্যতে। উৎপন্নঃ সর্বসিদ্ধয়র্থে যাতি ব্ৰহ্মসদৌ নৃপ।।১১৫।। মহলোকাজ্জনোলোকং ব্রহ্মলোকং চ গচ্ছতি। ব্ৰহ্মত্বং চ মহাবাহো যাতি বিপ্ৰোন সংশয়ঃ।।১১৬।।

হে মানুষের অধিপ! পরমেষ্ঠী পিতামহ এই জগতের সৃষ্টি ক্রীড়ায় ভ্রান্তি তৈরী করেছেন। পূর্বে ধর্ম চার পাদযুক্ত ছিল এবং সত্য হল যা কৃতযুগে ছিল।।১১২।।

জগতের সমস্ত ভূতে প্রাণী হল শ্রেষ্ঠ। প্রাণীদের মধ্যে যারা বুদ্ধিজীবী তারা শ্রেষ্ঠ। বুদ্ধির দ্বারা নিজের জীবন যাপন করে যে প্রাণী তাদের বুদ্ধিজীবী বলা হয়। বুদ্ধিমানদের মধ্যে মানুষ শ্রেষ্ঠ এবং মানুষদের মধ্যে ব্রাহ্মণ পরম শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হয়।।১১৩।।

ব্রাহ্মণদের মধ্যে যারা বিদ্বান তারা শ্রেষ্ঠ, বিদ্বানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হল কৃতবুদ্ধিগণ। কৃতবুদ্ধিগণের মধ্যে কর্তা শ্রেষ্ঠ এবং কর্তাদের মধ্যে ব্রহ্মাজ্ঞানীগণ হলেন শ্রেষ্ঠ।।১১৪।।

হে রাজর্ষি! সংসারে ব্রাহ্মণের জন্ম হয় ধর্মের জন্য। তাঁরা সমস্ত সিদ্ধির জন্য উৎপন্ন হয়ে ব্রহ্মপদকে প্রাপ্ত হন।।১১৫।।

মহলোক থেকে জনলোক পর্যন্ত এবং ব্রহ্মলোকে তাঁরা যান। হে মহাবাহু! ব্রাহ্মণ শেষে ব্রহ্মত্ব অর্থাৎ ব্রহ্মের স্বরূপকে প্রাপ্ত হয়। এতে কোনও সংশয় নেই।।১১৬।। ব্রহ্মত্বং নাম দুষ্পাপং ব্ৰহ্মলোকেযু সুব্রত।।১১৭।। ব্রহ্মত্বং কীদৃশং বিপ্রো ব্ৰহ্মলোকং চ গচ্ছতি। নাম মাত্রোহ্য কিং বিপ্রো ব্রহ্মত্বং ব্রহ্মণঃ সদা। যাতি ব্রহ্মগুণাঃ কে সব্রহ্মপ্রাপ্তৌ মমোচ্যতাম্।।১১৮।। সাধু সাধু মহাবাহো শৃণু মে পরমং বচঃ।।১১৯।। যে প্রোক্তা বেদশাস্ত্রেষু সংস্কারা যস্য পার্থিব।।১২০।। চত্বারিংশত্তমাষ্টৌ চ নিবৃত্তা শাস্ত্ৰতো নৃপ। স ব্রহ্মণঃ স্থানং ব্রাহ্মণত্বং চ মানদ। সংস্কারাঃ সর্বথা হেতুব্রহ্মত্বে নাত্র সংশয়।।১২১।। সংস্কারাঃ কে মতা ব্রহ্মন্ ব্রহ্মত্বে ব্রহ্মণস্য তু। শংস মে দ্বিজশার্দূল কৌতুকং হি মহনমম।।১২২।।

হে সুব্রত! শতানীক বলেছেন- ব্রহ্মলোকে ব্রহ্মত্ব অনেক কঠিন এবং দুষ্প্রাপ্য।।১১৭।।

ব্রহ্মত্ব কিরূপ যেখানে ব্রাহ্মণ ব্রহ্মলোকে গিয়েও তারপর প্রাপ্ত হয়? তবে কি নামমাত্র ব্রাহ্মণ সর্বদা ব্রহ্মার ব্রহ্মত্ব প্রাপ্ত হয়। হে ব্রাহ্মণ! এমন কি গুণ আছে যা ব্ৰহ্মপ্রাপ্তিতে পাওয়া যায়। আপনি দয়া করে সেইসব কথা বলুন।।১১৮।।

সুমন্ত বললেন–হে মহাবাহু! খুব ভাল প্রশ্ন। এবার তুমি আমার কথা শোনো।।১১৯।।

বেদে ব্রাহ্মণদের সংস্কারের কথা বলা হয়েছে এবং যেখানে গর্ভধান আদি বা প্রথম সংস্কার। ব্রাহ্মণের ৪৮টি সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। যিনি শাস্ত্ৰ বিধিমতো সব পূর্ণ করেছেন তিনি ব্রহ্মার পদ প্রাপ্ত হন এবং হে মানদ! তিনি ব্রহ্মত্বও প্রাপ্ত হন। এই সংস্কার সর্বপ্রকারে ব্রহ্মত্ব প্রাপ্তি হেতু, সে বিষয়ে কোন সংশয় নেই।।১২০-১২১।।

রাজা শতানীক বলেছেন–হে ব্রহ্ম! ব্রাহ্মণের ব্রহ্মত্ব স্বরূপ প্রাপ্ত করতে কোন সংস্কার মানা হয়? হে দ্বিজশার্দুল! আমার মন ইহা জানতে বড় কৌতুহল প্রকাশ করছে। আপনি কৃপা করে আমাকে বলুন।। ১২২।।

সাধু সাধু মহাবাহো শৃণু মে পরমং বচঃ। যে প্রোক্তা বেদশাস্ত্রেষু সংস্কারা ব্রাহ্মণস্যতু। মনীষিভিমহাবাহো শৃণু সর্বনশেষতঃ।।১২৩।। গর্ভাধানং পুংসবনং সীমান্তোন্নয়নং তথা। জাতকর্মান্নাশণং চ চূড়োপনয়নং নৃপ।।১২৪।। ব্রহ্মব্রতানি চত্বারি স্নানং চ তদনন্তরম্। সধর্মচারিপোযোগো যজ্ঞাণাং কর্মমানদ।। ১২৫।। পঞ্চাণাং কার্যমিত্যাহুরাত্মনঃ শ্রেয়সে নৃপ। দেবপিতৃ মনুষ্যাণাং ভূতানাং ব্রহ্মণস্তথা।।১২৬।। এতেষাং চাষ্টকাকর্ম পার্বণশ্রাদ্ধমেব হি। শ্রাবণী চাগ্রহায়ণী চাশ্বযুজী তথা।।১২৭।। পাক্যঞ্জাস্তথা সপ্ত অগ্ন্যাধানং চ সৎক্রিয়াঃ অগ্নিহোএং তথা রাজন্দর্শ চ বিধুসংক্ষয়ে।।১২৮।।

মহর্ষি সুমন্ত শতানীক রাজার প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বললেন–হে মহারাজ! খুব ভাল প্রশ্ন। এবার তুমি এই বিষয়ে আমার বচন শ্রবণ কর। বেদে এবং শাস্ত্রে ব্রাহ্মণের যে সংস্কারের কথা বলা হয়েছে এবং মনীষীগণ যে বলেছেন, ওই সবকিছুর পূর্ণ কথা তুমি আমার থেকে শ্রবণ কর।।১২৩।।

এই সংস্কারের ক্রম হল–সর্ব প্রথমে গর্ভধান সংস্কার তারপর পুংসবন, সীমন্তোন্নয়ন, জাতকর্ম, অন্নপ্রাশন, চূড়োপনায়ন, চার ব্রহ্মব্রত এবং তারপর স্নান, সহধর্মচারিণীর সাথে যোগ অর্থাৎ বিবাহ।।১২৪-১২৫।।

হে নৃপ! পঞ্চযজ্ঞের কার্যকর্ম এই সমস্ত সংস্কারের আত্মার পক্ষে শ্রেয়। দেব, পিতৃগণ এবং মানুষের অর্থাৎ ভূতের এবং ব্রহ্মের কল্যাণের জন্য করা হয়।।১২৬।।

পৌর্ণমাসং চ রাজেন্দ্র চাতুর্মাস্যানি চাপি হি। নিরুপণং পশুবধং তথা সৌত্রমণীতি চ।।১২৯।। হবির্যজ্ঞাস্তথা সপ্ত তেষাং চাপি হি সৎক্রিয়া। অগ্নিষ্টোমোত্যাগ্নিষ্টোমস্তমোথ্যঃ ষোড়শী বিদুঃ।। ১৩০।। বাজপেয়োতিরাত্রশ্চ আপ্তোর্যামেতি বৈ স্মৃতঃ। সংস্কারেষু স্থিতাঃ সপ্ত সোমাঃ কুরুকূলোদ্বহ।।১৩১।। ইত্যেতে দ্বিজযং স্কারাশ্চত্বারিংশন্ন পোত্তম। অষ্টৌ চাত্মগুণাস্তাত শুণুতানপি ভারতম্।।১৩২।। অনসূয়া দয়া ক্ষান্তিরনায়াসং চ মংগলম্। অকার্পণ্যং তথা শৌচমস্পৃহা চ কুরুদ্বহ।।১৩৩।। য এতেষ্ট গুণাস্তাত কাত্যন্তে বৈ মণীষিভিঃ। এতেষাং লক্ষণং বীর শৃণু সৰ্বমশেষতঃ।।১৩৪।। ন গুণান্ গুণিনো হন্তিন সৌত্যত্মগুণানপি। প্রহৃয্যতে নান্যদোষৈরনসূয়া প্রকীর্তিতা।।১৩৫।

এর আটটি কর্ম- পার্বনশ্রাদ্ধ, শ্রাবণী, আগ্রহায়ণী, চৈত্রী, আশ্বযুজী, সাত পাক যজ্ঞ, অগ্ন্যাধান, সৎক্রিয়া তথা হে রাজন! অগ্নিহোত্র, দর্শ, বিধু, সংক্ষয়ে পৌর্ণমাস এবং চাতুর্মাস্য, নিরূঢ় পশুবন্ধ, সৌত্রামণী হল সাতটি হবির্যজ্ঞ।।১২৭-১২৮-১২৯।।

সাত হবির্যজ্ঞ এবং তার সৎক্রিয়া অগ্নিষ্টোম, অত্যগ্নিষ্টোম, উবথ্য, ষোড়শী, বাজপেয়, অতিরাত্র, আপ্তোর্যাম এই সাতটি হল সোম সংস্কারের অঙ্গ। হে কুরুকুলোদ্বহ! এই সমস্ত চল্লিশ ব্রাহ্মণের সংস্কার। হে পিতা! আত্মগুণ আটটি, সে গুলিও আমি বলছি, তুমি শ্রবণ কর।।১৩০-১৩১-১৩২।।

আত্মগুণ ৮টি হল–অনসূয়া, দয়া, ক্ষান্তি, অনায়াস, মঙ্গল, অকার্মণ্য, শৌচ এবং অস্পৃহা। এই আত্মগুণ যার আছে স্বয়ং আত্মা সংসারে তার দেহ ধারণ করে।।১৩৩।।

হে পিতা! এই আটটি গুণের কথা মণীষীগণ বলেন। হে বীর! এখন এদের লক্ষণ পূর্ণরূপে শ্রবণ করুন।।১৩৪।।

গুণীর গুণ যে হনন করে না এবং নিজ গুণের যে প্রশংসা করে না এবং অন্যের দোষে যে প্রসন্ন হয় না সেই ধর্মকে অসূয়া বলা হয়।।১৩৫।।

অপরে বন্ধুবর্গ বা মিত্রে দ্বেষ্টরি বা সদা। আত্মবদ্বর্তনং যৎস্যাৎ সা দয়া পরিকীর্তিতা।।১৩৬।। বাচা মনসি কার্যে চ দুঃখে নোৎপাদিতেনচ। ন কুপোতি ন চা প্রীতিঃ সা ক্ষমা পরিকীর্তিতা।।১৩৭।। অভক্ষ্যপরিহারশ্চ সংসর্গশ্চপ্যনিন্দিতৈঃ। আচারে চ ব্যবস্থাণং শৌচমেতৎ প্রকীর্তিতম্।।১৩৮।। শরীরং পীজতে যেন শুভেনাপি চ কৰ্মণা। অত্যন্তং তত্র কুর্বীত অনায়াসঃ সউচ্যতে।।১৩৯।। প্রশস্তাচরণং নিত্যমপ্রশস্তবিবর্জনম্।।১৪০।। এতদ্বি মংগলং প্রোক্তং মুনিভিব্ৰহ্মবাদিভিঃ।।১৪১।। স্তোকাদপি প্রদাতব্যমদীনেনান্তরাত্মমা। অহন্যনি সৎকিঞ্চিদকার্পণ্যং তদুচ্যতে।।১৪২।।

দ্বিতীয় বিষয় হল–বন্ধু বর্গের সঙ্গে, মিত্রদের সঙ্গে এবং শত্রুদের সঙ্গেও যে সর্বদা নিজে সমান ব্যবহার করে তাকে দয়া বলা হয়।। ১৩৬।।

বচন, মন এবং শরীরে উৎপাদিত দুঃখেও যে ক্রোধ করে না এবং অপ্রীতি ভাব রাখে না তাকে ক্ষমা বলা হয়।। ১৩৭।।

যা ভক্ষণের যোগ্য নয় তা পরিহার করবে এবং যা অনিন্দিত অর্থাৎ সৎ পুরুষ তাঁর সাথে সংসর্গ রাখবে এবং আচারে ব্যবস্থিত থাকবে একে শৌচ বলা হয়।।১৩৮।।

যে শুভ কর্মে শরীরে পীড়া উৎপন্ন হয় সেই কর্ম বেশী পরিমাণে না করাকে অনায়াস বলা হয়।।১৩৯।।

প্রশস্ত কর্ম করা উচিত এবং নিত্য অপ্রশস্ত কর্ম ত্যাগ করা উচিত, একে মঙ্গল বলা হয়। একে সমস্ত মুণিগণ, ব্রহ্মবাদীগণ মঙ্গল নামে চিহ্নিত করেন।।১৪০-১৪১।।

নিজ অল্প বস্তু থেকেও অন্তরাত্মাকে দুঃখী না করে যে প্রদান করে এবং দিন প্রতিদিন অল্প বেশী দান করে তাকে অকার্পণ্য বলা হয়।।১৪২।।

যথোৎপন্নে সন্তুষ্টঃ স্বলেপ্যথ বস্তুনা। অহিংসয়া পরস্বেষু সাহসস্পৃহা পরিকীর্তিতা।।১৪৩।। বপুর্যস্য তু ইত্যেতৈঃ সংস্কররৈঃ সংস্কৃতং দ্বিজঃ। ব্ৰহ্মত্বমিহ সংপ্রাপ্য ব্রহ্মলোকংচ গচ্ছতি।।১৪৪।। বৈদিকৈঃ কর্মভিঃ পুণ্যৈনিষেবগদ্যৈ দ্বিজন্মনাম্। কার্যঃ শরীর সংস্কার পাবনং প্রেত্য চেহ চ।।১৪৫।। গর্ভশুদ্বি ততঃ প্রাপ্য ধর্মং চাশ্রমলক্ষণম্। যাতি মুক্তি ন সন্দেহঃ পুরণেসিমন্বপোত্তম।।১৪৬।।

যে অল্প কিছু লাভ করে তাতে সন্তুষ্ট থাকতে চায় সে খুবই কম দেখা যায়, পরের ধনে হিংসা ভাব না থাককে অস্পৃহা বলা হয়।।১৪৩।।

এই সংস্কারের দ্বারা যার দেহ সংস্কৃত করা হয় সেই দ্বিজ ব্রহ্মত্ব প্রাপ্ত হয়ে নিশ্চয় ব্রহ্মলোকে যায়।।১৪৪।।

দ্বিজাতিগণ শরীর সংস্কাররূপ নিষেকাদিপুণ্য কর্মের দ্বারা পবিত্র হন এবং প্রেতত্ব মুক্ত হন।।১৪৫।।

হে নৃপোত্তম, অতঃপর গর্ভশুদ্ধি ইত্যাদি কর্ম করে আশ্রমধর্ম পালন করলে জীব মুক্ত হয়— এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।।১৪৬।।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *