সৃজন ও সেই লোকটা
আজ না হোক কাল চাকরিটা যে যাবেই, সে বিষয় একেবারে নিশ্চিত সৃজন। আজ থেকে বছর তিনেক আগে অ্যাকাউন্টস অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে জয়েন করেছিল এই আয়রন স্টিল কোম্পানিটায়। তিন বছরে কোম্পানি যেমন ফ্লারিশ করেছে ওর স্যালারিও বেড়েছে ভালোই। ভালো মানে বেশ ভালো। নিকিতার সঙ্গে বিয়েটাও হয়ে গেছে বছর দেড়েক আগে। ইস্যু নেয়নি এখনও। ভাগ্যিস নেয়নি। দুজনে ভেবেছিল আরও কিছুদিন যাক, তারপর না হয়…উফফফ, কী বাঁচান যে বাঁচা গেছে!
আসলে মাস কয়েক হল কোম্পানির অবস্থা বেজায় খারাপ। হওয়ারই কথা। কোম্পানিটা যে হারে চুরি করার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছিল তাতে আন্দাজ করাই যাচ্ছিল—এ একদিন ডেফিনিট ডুববে। এইধরনের কোম্পানিগুলো প্রবল বিক্রমে জালিয়াতি করে ব্যাঙ্ক থেকে কোটি কোটি টাকা লোন নেয় তারপর মাছের তেলে মাছ ভাজতে থাকে। আর ব্যাঙ্কের কিছু অসৎ অফিসারের সঙ্গে যোগসাজশে লোনও পেয়ে যায়। ওদের কোম্পানিতেও এমন অনেকগুলো সিস্টার কনসার্ন রয়েছে যেগুলোর বছরে দেড়-দু-হাজার কোটি টাকা টার্নওভার কিন্তু কোম্পানিটা রয়েছে স্রেফ নামেই। মানে পেপারেই তার অস্থিত্ব। বাস্তবে একটা টাকারও লেনদেন নেই। এমন সিস্টার কোম্পানি ওদের গ্রুপে কম করে সাত-আটখানা রয়েছে। পুরোটাই জালি কেস। নিজেদের কোম্পানিদের মধ্যেই সেল পারচেজ করিয়ে টার্নওভার বাড়ায়।
চলছিল এইভাবেই। এমনই একটা কোম্পানির সেল পারচেজ এন্ট্রি , বি আর এস, লেটার অফ ক্রেডিট ইত্যাদির কাজ করত সৃজন। কিন্তু মাস আষ্টেক আগে থেকে মার্কেটে লোহার দাম পড়তে শুরু করল হু-হু করে। তার মধ্যে আবার সেলসট্যাক্সের রেডের পরে ওইসব ভুয়ো কোম্পানিগুলোর শাটার জ্যাম করে দিল সেলসট্যাক্সের লোকেরা। ব্যস, সৃজনদের মতো জুনিয়রদের আর কোনও কাজ নেই। সকাল দশটায় এসে সন্ধে সাতটা-সাড়ে সাতটা পর্যন্ত একপ্রকার বসে থাকা। মনে কু ডাকছিল তখন থেকেই। এইসব কোম্পানি আর কতদিন এমপ্লয়িদের বসিয়ে মাইনে দেবে? কিন্তু মার্কেটে জুনিয়র অ্যাকাউট্যান্টের চাকরি নেই। বিশেষ করে আয়রন স্টিল কোম্পানিগুলোর প্রায় সকলেরই একই অবস্থা।
সত্যি কথা বলতে, সৃজনের খুব একটা ইচ্ছেও ছিল না এই কোম্পানিটা ছাড়ার। ব্র্যান্ডটার ভালো নাম রয়েছে। কাজের পরিবেশটাও স্যুট করে গেছিল। বারবার চেঞ্জ করতে কার ভালো লাগে?
মাঝে মাঝেই কানে আসছিল অমুক স্টিল কোম্পানি এতজনকে আজ ছাঁটাই করেছে। অতজনকে বসিয়ে দিয়েছে। বুক ঢিপ ঢিপ করত শুনে। আর প্রহর গুনত বাকি সবাই।
মাস খানেক আগে সৃজনদের কোম্পানির সিএমডি মিটিং কল করে সব এমপ্লয়িদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, কারও চাকরি যাবে না। আর আশ্বাসের ঠিক মাস খানেক পরেই একজন দুজন করে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট থেকে লোক ছাঁটতে শুরু করল। অ্যাকাউন্টস ম্যানেজার ব্রজমোহন সোনি সৃজনের বস। দুজনের সম্পর্কটা মধুর নয়। কাজের ব্যাপারে আগে দু-একবার দুজনের তর্কাতর্কি হয়েছে। সুতরাং অ্যাকাউন্টসে ছাঁটাই খাতায় যে সোনিজি ওর নামটা সবার আগে রাখবেন, সে ব্যাপারে নিশ্চিন্ত সৃজন। গতকালই পারচেজের শ্যামলদা আর এইচআর-এর সরকারবাবুকে এক মাসের স্যালারি এক্সট্রা হাতে ধরিয়ে বলে দেওয়া হল, যাও আর পাঠশালা নাই। এবার তোমার ছুটি। এখনও পর্যন্ত সব ডিপার্টমেন্ট মিলিয়ে ন-দশ জনের ছুটি হয়ে গেছে। প্রত্যেক ডিপার্টমেন্টের এইচওডি-রা যেন নিজেরদের মধ্যে কম্পিটিশনে নেমে পড়েছেন যথাসম্ভব লোক ছেঁটে সিএমডির কাছে নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণে। মজার ব্যাপার কোপটা বেশি পড়ছে সব ছোটোখাটো কুচোকাচা এমপ্লয়িদের ওপর, যাদের মোট মাইনে দিয়েও সিএমডির সারা মাসের মিনারেল ওয়াটারের খরচ ওঠে না। রাঘববোয়ালরা ইচ্ছে করেই নিজেদের বাঁচাতে বোড়েদের সামনে ঠেলে দিয়ে আই ওয়াশ করছে।
সকাল দশটা থেকে রাত সাতটা-সাড়ে সাতটা পর্যন্ত ফ্লোরের সবাই যার যার নিজের চেয়ারে ঘাড় গুঁজে বসে থাকে। কেউ কারও সঙ্গে কথা বলে না। আগে কী সুন্দর একটা পরিবেশ ছিল। এখন সেটা বেমালুম হাওয়া হয়ে গেছে। সকলের মনে শুধু ভয়। এই বুঝি ডাক এল চলে যাওয়ার। সারাদিন এমন চুপ করে বসে থাকে যেন মনে হয় প্রিয়জনকে শ্মশানে চুল্লিতে ঢুকিয়ে অপেক্ষা করছে। লাঞ্চ আওয়ারেও কেউ কারও সিট থেকে নড়ে না, যে যার ডেস্কে বসে অশৌচ পালনের চরু খায়।
আর ভালো লাগছে না এইভাবে। রিয়্যালি অসহ্য লাগছে প্রতিদিনের এই আতঙ্ক। নিকিতা এইসবের খুব সামান্যই জানে। হোমমেকার ওয়াইফকে বেকার টেনশন খাইয়ে লাভ কী? কিছু করতে তো পারবে না। বরং ঝামেলা বাড়বে। কিন্তু এবার একটা এসপার ওসপার হওয়া দরকার।
রোজ সকালে আটটা পনেরোর মধ্যে নাকে মুখে কিছু একটা গুঁজে সাইকেল নিয়ে সৃজন ছোটে শ্রীরামপুর স্টেশনে। প্ল্যাটফর্মের কাছে একটা শেডে সাইকেল রেখে ট্রেনে হাওড়া, তারপর বাসে করে সেই বেকবাগান মোড়। সেখানেই অফিস। ট্রেনে বেশিরভাগ ডেলি প্যাসেঞ্জারদের গ্রুপ এবং নির্দিষ্ট কামরার সিটও নির্দিষ্ট থাকে। তারপর আড্ডা কিংবা খোশ গল্পে তাস পেটানো অথবা ফালতু ছুতোয় মিষ্টি খাওয়া ইত্যাদি নানা অজুহাতে কিছুটা সময় ভুলে যেতে যেতে হাওড়া পোঁছয় সবাই। তারপরেই যে যার মতো একা।
সৃজন অবশ্য প্রথম থেকেই একা। ইচ্ছে করেই অমন কোনও গ্রুপে জয়েন করেনি। বরং অফিস টাইমের প্রচণ্ড ভিড় ট্রেনে যদি এক-আধদিন একটু ভালোমতো চ্যানেলে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়ে যায় তাহলে ব্যাগ থেকে বই বা ম্যাগাজিন বার করে পড়তে থাকে।
আজ একটু ইচ্ছে করেই দেরি করে ঘুম থেকে উঠেছিল ও। নিকিতা বেশ কয়েকবার ওকে ঘুম থেকে ঠেলে তোলার ব্যর্থ চেষ্টা করে বিফল হয়ে ওয়াকওভার দিয়েছে। সৃজন ধীরে সুস্থে স্নান খাওয়া সেরে যখন বাড়ি থেকে বেরল তখন প্রায় সোয়া নটা। যাক গে…কী আর হবে? আর দুদিনের মেহমান। নটা চল্লিশের ট্রেন পেল। শেষ কম্পার্টমেন্ট। আজ জানলার ধারে একজনের পরে বসার জায়গাও পেয়ে গেল ও। চার-পাঁচটা বছর চব্বিশ-পঁচিশের ছেলে নিজেদের মধ্যে চুটিয়ে তাস খেলছে। ভাবসাব দেখেই আন্দাজ করা যায় বড় বাজারের কোনও পট্টির গদিতে কাজ করে। এদের বোধ হয় চাকরি যাওয়ার ভয় নেই।
বালি স্টেশন আসতেই হঠাৎ বাইরে জানলার সামনে প্রায় হুমড়ি খেয়ে এসে দাঁড়াল একটা লোক। বয়েস বছর পঞ্চাশ হবে। শীর্ণ চেহারা, তোবড়ানো গালে কাঁচাপাকা দাড়ি, এলোমেলো দৃষ্টি, ঠোঁটের দুই কোণায় থুতু জমে। পরনে চুড়ান্ত ময়লা সাদা শার্ট আর নস্যি রঙের ফুলপ্যান্ট। শার্ট ইন করে পরা। কোমরে বাঁধা চামড়ার বেল্টটা বয়েসের কারণে কুঁকড়ে গেছে। লোকটার কাঁধে টিপিকাল কেরানিমার্কা কালো রঙের নাইলনের ব্যাগ ঝোলানো। ব্যাগটার অবস্থাও মালিকের মতোই। কুঁচকে যাওয়া চামড়াওলা আঙুলগুলো দিয়ে জানলার রড খামচে ধরে এদিক ওদিক তাকাল লোকটা। কাকে যেন খুঁজছে। তারপর নিজের সঙ্গে কথা বলার মতো করে ছেলেগুলোর দিকে আলগোছে তাকিয়ে বলে উঠল, বি শিফট ধরবে তো? অ্যাঁ, বি শিফট?
ওদের মধ্যে একটা ছেলে দাঁত বার করে সঙ্গে সঙ্গে বলল, হ্যাঁ কাকা, বি শিফট ধরব।
বেশ বেশ…নরেন পোদ্দার, আমাকে ফোন করল না তো। আমার নাম্বার হারিয়ে ফেলেছে কি? একটু বোলো ফোন করতে।
কোনও চিন্তা নেই কাকা, আজই বলে দেব। ফোন পেয়ে যাবে। বেশ রসিয়ে বলল আরেকটা ছেলে।
বেশ বেশ, বোলো তাহলে কেমন…নরেন পোদ্দার, ব্রজ ধর কাউকে বললেই হবে। বকুলের দোকানের ফোন নাম্বার দেওয়া আছে। আমি ওখানেই থাকি। একটা ফোন দিলেই আমি বি শিফট ধরে নেব। অন্য শিফটেও অসুবিধা নেই বলে দিও। সর্দি জড়ানো গলায় ঘড় ঘড় করে বলল লোকটা।
হ্যাঁ হ্যাঁ, এই তো গিয়েই বলছি। আজই ফোন আসছে।
ছেলেগুলো খুব মজা পেয়েছে। সৃজন হাঁ করে তাকিয়ে ছিল লোকটার দিকে। ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। লোকটা জানলার রড দুহাতে চেপে ধরে ট্রেনের সঙ্গে প্ল্যাটফর্ম বেয়ে হাঁটতে শুরু করল।
মনে থাকবে তো? নরেন পোদ্দার আর…। কথা থামিয়ে প্ল্যাটফর্মের ওপর একদলা কফ ফেলল লোকটা…আমাকে বলেছিল ফোন করবে। করল না তো। নাম্বারটা কি হারিয়ে ফেলেছে? কথা বলতে বলতে প্রচণ্ড হাঁফাচ্ছিল লোকটা। ট্রেনের গতির সঙ্গে তাল রাখতে পারছিল না। কিন্তু জানলার রড ধরে এগোতেই থাকল। কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল ওর। কারও দিকেই যেন তাকিয়ে নেই।
আমরা নাম্বার দিয়ে দেব কাকা। তুমি দোকানে গিয়ে বসো।
হ্যাঁ মনে থাকবে তো বকুলের দোকানের নাম্বারটা। তোমরা জানো তো?
হ্যাঁ জানি জানি, তুমি এবার বসো গিয়ে। আজই ডিউটি ধরবে।
লোকটা ট্রেনের সঙ্গে ছুটতে ছুটতে একেবারে প্ল্যাটফর্মের শেষ মাথায় চলে এসেছিল। ভয় করতে শুরু করেছিল সৃজনের। যদি খেয়াল না করে তাহলে নির্ঘাত চাকার তলায় পড়বে। একেবারে শেষ মাথায় থেমে গেল। আটকে রাখা নিঃশ্বাসটা ছাড়ল সৃজন।
কে লোকটা? ছেলেগুলো চেনে? কৌতূহল চাপতে না পেরে সৃজন জিগ্যেসই করে ফেলল ছেলেগুলোকে। কে দাদা লোকটা?
আমরাও চিনি না দাদা। জানলার পাশে বসা ছেলেটা উত্তর দিল। এই কিছুদিন হল দেখছি। এই টাইমে রোজ প্ল্যাটফর্মে এসে বসে থাকে আর লাস্ট কম্পার্টমেন্টের ঠিক এই জানলাটাতেই যারা বসে তাদের মধ্যে কাকে যেন খোঁজে, তারপরেই শুরু হয়ে এই একই ডায়ালগ।
সে কী! গা ছমছম করে উঠল সৃজনের।
এমনি কিন্তু দেখলে বোঝা যায় ভদ্দরলোক। বলল আরেকটা ছেলে। তবে এখন একেবারে কেস মেন্টু খেয়ে গেছে। কোথায় কাজ করত কে জানে…। কার যে সালা কপালে কী আছে ভগাদাই জানে। বলেই ছেলেটা হাঁই করে উঠল, কী হল তুই টেক্কা ফেললি কেন! ধুর মাইরি, এইজন্য তোর পার্টনার হতে ইচ্ছে করে না।
আজ প্রায় দেড় ঘণ্টা লেটে অফিসে ঢুকল সৃজন। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে একটুও টেনশন হচ্ছে না এত দেরিতে ঢোকার জন্য। ধীরে সুস্থে কম্পিউটার অন করে কিছুক্ষণ মেইল চেক, ফেসবুক করল। এখন মেলে আর তেমন কোনো সুইটেবল জব অফার আসে না। বিশ্বজুড়ে কেমন একটা মন্দা শুরু হয়েছে যেন। ড্রয়ার খুলে পারচেজ বিলগুলো বার করে এন্ট্রি শুরু করল।
পাশে বসা বিকাশদা একবার তাকাল ওর দিকে। বিকাশদা এই কোম্পানির অনেক পুরোনো অ্যাকাউন্ট্যান্ট। বছর চল্লিশেক বয়েস। খুবই ভালো মানুষ। কোম্পানির ফিনান্সের কাজ করেন। সৃজনের দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করল, এত দেরি করলি?
হ্যাঁ হয়ে গেল দেরি।
হুম…। বলে একটু থেমে আবার বলল এই টাইমে দেরি করিস না। একটু আগেই বস খুঁজছিল তোকে?
ওহ তাই, কথাটা বলার সময় সৃজন দেখল ওর যতটা ভয় পাওয়ার কথা ছিল, ততটা পেল না। নিজেই অবাক হল নিজের প্রতি।
যা একবার দেখা করে আয়।
হ্যাঁ যাচ্ছি। বলে উঠতে গেল সৃজন।
শোন।
হ্যাঁ বলো।
চিন্তা করিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে। হাজারটা কোম্পানি রয়েছে মার্কেটে।
বিকাশদা যেন বুঝিয়েই দিল, কেন ওকে ডেকেছে সোনিজি।
আমি আর চিন্তা করছি না বিকাশদা। আমি রেডি। এই রোজ রোজের মৃত্যু থেকে আমিও রেহাই চাই এবার।
এতটা খারাপই বা ভাবছিস কেন? অন্য কারণেও তো ডাকতে পারেন উনি।
হুম দেখি গিয়ে। মুচকি হেসে সোনিজির চেম্বারের দিকে গেল সৃজন।
সোনিজির চেম্বারের দরজাটা অল্প ফাঁক করে মুখ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, স্যার আসব?
সোনিজির রুমে পারচেজ ম্যানেজার বিকাশ অগ্রবালও বসেছিলেন। সোনি ওকে দেখে মোলায়েম গলায় বললেন, আরে সিরজন, আও অন্দর আ যাও।
ভেতরে ঢুকল সৃজন। চেম্বারটা কনকনে ঠান্ডা। এদের চামড়া কি গন্ডারের থেকেও মোটা হয়? নইলে এই জানুয়ারি মাসের শীতেও এমন চিলড করে রাখে কেন রুম?
ডেকেছিলেন আমাকে? এই প্রথম পরিষ্কার বাংলায় সোনিজিকে জিগ্যেস করল সৃজন। অন্যসময়ে হিন্দিতেই কথা বলতে হয় এর সঙ্গে।
হাঁ বুলায়া থা। তুম কেয়া আজ লেটসে আয়া?
হ্যাঁ।
কিঁউ।
এমনই। ইচ্ছে করছিল না তাড়াহুড়ো করতে।
সোনি কী বুঝলেন বোঝা গেল না। ভাবলেশহীন মুখে একবার ওর দিকে আরেকবার অগ্রবালজির মুখের দিকে তাকালেন।
আচ্ছা তুমসে যো বাত হ্যায়, তুম তো জানতেই হো কোম্পানি কা হাল অভি বহোৎ খরাব চল রহা হ্যায়।
হুম।
তো ম্যানেজমেন্ট নে ডিসিশন লিয়া অভি তুমকো ছোড়না হোগা। দিল ছোটা মৎ করো। ম্যায় তুমহে দুসরা জাগা সেটিং কর দেনে কা কোশিস করে গা। আপনা বায়োডেটা মুঝে দে দেনা।
সৃজন মনে মনে প্রস্তুতই ছিল কিন্তু কথাটা শোনার পর আচমকাই শরীরটা যেন পালকের মতো ভারহীন হয়ে উঠল। না আনন্দে নয়, ঠিক কীসের জন্য, বুঝতে পারল না। কোম্পানিতে জয়েন করার প্রথম দিনটার কথা মনে পড়ল।
ঠিক আছে স্যার, দরকার হবে না। আমি চাকরি খুঁজে নেব।
একটু যেন থমকালেন সোনি। তারপর বললেন এ্যায়সে তুমসে কোম্পানিকা কোয়ি সিকায়েত নেহি হ্যায়, লেকিন অভি ম্যানেজমেন্ট মজবুর হ্যায় ছাটনে কে লিয়ে। এক মাহিনা কা স্যালারি তুমে এক্সট্রা দিয়া যায়গা। ঘোষ সে দেখা কর লো।
তাহলে কবে থেকে আসব না স্যার?
কাল সে।
ওক্কে থ্যাঙ্ক ইউ। বলে চলে যাচ্ছিল সৃজন। হঠাৎই থামল। তারপর সোনিকে জিগ্যেস করল, আচ্ছা স্যার, আপনি কি নরেন পোদ্দার, ব্রজ ধরকে চেনেন?
কৌন? চোখ কোঁচকাল সোনিজি।
নরেন পোদ্দার। ব্রজ ধর।
নেহি।
স্যার আপনি চেনেন, বলে প্রশ্নটা ছুঁড়ল অগ্রবালজির দিকে।
নেহি তো। কৌন হ্যায় ইয়ে লোগ? অবাক হয়ে জিগ্যেস করলেন অগ্রবাল।
আমিও চিনতাম না স্যার। তবে চিন্তা নেই, চিনে যাবেন, আপনারাও চিনে যাবেন স্যার। চিনতেই হবে। আজ না হোক কাল ঠিক চিনবেন। বলে দরজা ঠেলে ঘর থেকে বেরিয়ে এল সৃজন।
কাল বালি স্টেশনে নেমে একবার ওই লোকটাকে খুঁজতে হবে। সেই লোকটাকে খুঁজে পাওয়া খুব দরকার।