সুহাসিনীর কপাল
কেউ কেউ কপাল করে আসে, যেমন সুহাসিনী। দশ—বারো বছরে বান্ধবীরা যখন মায়েদের ধমকে রান্নাঘরে উঁকি দিতে বাধ্য হয়েছিল তখন মা বলেছিল, ‘না না, তোকে উনুন তাতে যেতে হবে না। বিয়ের পর থকে তো রান্নাঘরই মেয়েদের শরীর খেয়ে নেয়, এখন থেকেই সেটা প্র্যাকটিস করতে হবে না।’ বাবা শুনে বলেছিলেন, ‘ঠিক কথা বলেছ সুপ্রভা, তবে কিনা একটু— আধটু রান্না না শিখলে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে সমস্যায় পড়বে বেচারা।’
মা চোখ পাকিয়েছিলেন, মেয়ের বিয়ে এমন বাড়িতে দেব যেন সেখানে গিয়ে রাঁধুনির চাকরি করতে হবে না। পাঁচটা কাজের লোক যাদের রাখার ক্ষমতা নেই তাদের বাড়িতে মেয়ে দেব না।’
শহরের একমাত্র কলেজটিতে ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে পড়াশুনা করে। বাবার ইচ্ছে ছিল না সেখানে মেয়ে পড়ুক তাই কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে পড়াতে চেয়েছিল। কিন্তু মা বলেছিল, ‘ক’বছর পরে মেয়ে তো শ্বশুরবাড়িতে যাবেই, এখন থেকে কাছছাড়া কেন করব? নিজেকে ঠিক রাখলে ছেলেদের সঙ্গে পড়লেও ওর কোনো ক্ষতি হবে না।’ বি এ পাশ করার পর মায়ের মনের মতো পাত্রের সংসারে চলে এসেছিলেন সুহাসিনী।
কেউ কেউ কপাল করে আসে। নইলে এরকম শাশুড়ি কেউ পায় যিনি বলেন, তোর শ্বশুর কিংবা বর কিছু খেতে চাইলেই তুই রান্নাঘরে ঢুকবি না। হোক গ্যাসের আগুন, অত সুন্দর রং ঠিক নষ্ট করে দেবে। সবসময় সেজেগুজে থাকবি আর বই পড়বি। এই পৃথিবীটাকে জানতে হলে বই ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। আমি যে লাইব্রেরির মেম্বার, তোকেও তার মেম্বার করে দেব।’
আরম্ভ হল গল্পের বই পড়া। বঙ্কিমচন্দ্র থেকে রবীন্দ্রনাথ— শরৎচন্দ্র—হয়ে আশাপূর্ণা দেবী। স্বামী মানুষটা ভারী ভালো ছিল। শুধু বলেছিল, ‘সুহাসিনী, তুমি বই পড়ো যখন আমি বাড়িতে থাকব না।’
‘যখন বাড়িতে থাকবে?’
‘আমার দিকে চেয়ে থেকো।’ স্বামী হেসে বলেছিল।
স্বামীর সঙ্গে কোথাও বেড়াতে গেলে, এমনকী সিনেমায় গেলেও ভালোভাবে সেজে যেতে হবে। সাজ শেষ হলে শাশুড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালে তিনি খুঁটিয়ে দেখবেন। কোনো কিছু পছন্দ না হলে কী করতে হবে সুন্দর করে বুঝিয়ে দিতেন। শাড়িওয়ালা থেকে কাশ্মীরি শালওয়ালা বাড়িতে আসত। শাশুড়ি আগে বউমাকে যা মানাবে তা কিনতেন, তারপর নিজের এবং অন্যদের। খোকা হওয়ার সময় নার্সিংহোম থেকে সুহাসিনীকে সাহস জুগিয়ে গিয়েছিলেন দু’দিন দুইরাত। শ্বশুরমশাই হেসে বলেছিলেন, ‘শাশুড়িদের বদনাম একাই ঘুচিয়ে দিলে তুমি। খুব ভালো, খুব ভালো।’
মা—বাবা নেই, শ্বশুর—শাশুড়ি নেই, স্বামীও চলে গেছেন। এখন ছেলে আর বউমার সঙ্গে তিনি থাকেন। কিন্তু বউমা বলে, ‘কথাটা ঠিক নয়। আমরা তোমার সঙ্গেই থাকি।’
বড় অদ্ভুত মেয়ে এই বউমা। নামটিও অদ্ভুত, উপলা। ছেলে পছন্দ করেছিল, উপলাও ছেলেকে। স্বামী বিয়েটা দিয়ে গিয়েছিলেন। এবাড়িতে এসে নিজেই এগিয়ে সংসারের হাল ধরেছিল উপলা। ব্যাপারটা শোভন নয় বলে সুহাসিনী আপত্তি জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘এখন তোমার আনন্দ করার সময়। সংসার নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই।’
উপলা হেসে জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘কাউকে তো মাথা ঘামাতে হবে।’
‘হ্যাঁ, ওটা না হয় আমিই ঘামাই।’ সুহাসিনী হেসে বলেছিলেন।
‘না না। তুমি কী করে ভাবলে তোমার মা কিংবা শাশুড়ি যা করতে দেননি তা আমি তোমাকে করতে দেব?’ উপলা হেসেছিল।
মেয়েটিকে ভারী পছন্দ সুহাসিনীর। ইদানীং ওর পাল্লায় পড়ে বেরোতে হচ্ছে। দুপুরের খাওয়ার পর একঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে উপলা তাঁকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। টেলিফোনে ওলা অথবা উবের ট্যাক্সি ডেকে নেয়। তারপর সোজা কোনো শপিং মলে। সাউথ সিটি মলে যেতে খুব ভালো লাগে সুহাসিনীর। ভরদুপুরেই কত মানুষ মলের ভেতর ঘুরছে। কেনাকাটা না করেও উইন্ডো শপিং—এই দিন ফুরিয়ে যায়। তাছাড়া সপ্তাহে অন্তত তিনদিন মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখা তো আছেই। বেশিরভাগই হিন্দি কিন্তু দেখতে বেশ ভালো। বাংলা ছবি ‘প্রাক্তন’ দেখতে দেখতে সুহাসিনীর মনে হয়েছিল, স্কুলে পড়ার সময় পাড়ার সিনেমা হলে মায়ের সঙ্গে দু’তিনবার সিনেমা দেখতে গিয়েছিলেন। মা উত্তমকুমারের ভক্ত হলেও ‘একটা সিনেমায় সৌমিত্র চ্যাটার্জি ছিলেন। ছিপছিপে সুন্দর চেহারা। কত বছর আগের কথা। সৌমিত্র চ্যাটার্জি এখনও সুন্দর আছেন। তার মানে অনেকসময় বয়স সৌন্দর্য কেড়ে নেয় না।
ছেলে এনে দিল স্মার্টফোন। একটু রাগ করে বললেন, ‘ওমা! এত দামি ফোন কেন কিনলি? আমি কাকে ফোন করব?’
‘যাকে ইচ্ছে তাকে করবে। তোমাকে তো কিছুই দিতে পারি না।’ ছেলে দেখিয়ে দিয়েছিল কী করে মোবাইল ফোনটা ব্যবহার করতে হয়। আঙুল ছোঁয়ালেই গোটা পৃথিবী যেন সামনে চলে আসছে। ক্রমশ মজা লাগল সুহাসিনীর। মজাটা বাড়াতে সাহায্য করল উপলা। হোয়াটস আপ, ফেসবুক চালু করে দিল সে। সুহাসিনীকে শিখিয়ে দিল কী করে সেগুলো ব্যবহার করতে হয়।
এতকাল সুহাসিনী ফোন করতেন মাসতুতো বোন বা সেইসব আত্মীয়দের যাঁরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পছন্দ করতেন। কিন্তু এখন আর কথা বলার দরকার হয় না। হোয়াটস আপে বিনা পয়সায় এর—ওর খবর নিতে পারছেন।
হোয়াটস আপ চালু করার পর বেশ মজা হল। একজন লিখল, সুহাসিনী, তুমি কোন সুহাসিনী?
থমকে গেলেন সুহাসিনী। আমি কোন সুহাসিনী? সবাই আমাকে আনন্দে রাখতে চেয়েছিল। সারা জীবন আমি আনন্দে আছি। আমাকে যাঁরা আনন্দে রাখতে চেয়েছিলেন তাঁদের অনেকেই চলে গিয়েছেন। যাওয়ার আগে দায়িত্বটা আর একজনকে দিয়ে গিয়েছেন। তাহলে আমি কোন সুহাসিনী যাকে কেউ দুঃখে থাকতে দিতে চায়নি! মা যখন চলে গিয়েছিলেন তখন শাশুড়ি তাঁর পাশে ছিলেন। তিনিই বুঝিয়েছিলেন, ‘সবাইকে সময় হলে চলে যেতে হয়। তোমার মাকে চলে যেতে হল কিন্তু আমি তো আছি। তুমি দুঃখ পেলে অন্যকেও তো দুঃখ দেবে।’ কথাটা মনে ধরেছিল। শাপমোচনে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন একই কথা। তালভঙ্গের অপরাধে উর্বশীকে অভিশাপ দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল স্বর্গ থেকে চলে যেতে হবে মর্ত্যধামে। সেখানে গিয়ে দুঃখ পাবে, দুঃখ দেবে।
অর্থাৎ দুঃখ যে পায় সে—ই দুঃখ দেয়। এই অভিশাপ অনন্তকাল ধরে মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু সুহাসিনী কাউকে দুঃখ দিতে চান না তাই নিজে দুঃখ পেতে চাননি। শাশুড়ি বা স্বামীর চলে যাওয়ায় বিষণ্ণ হয়েছিলেন নিশ্চয়ই কিন্তু তা থেকে তাঁকে মুক্ত করার মানুষের অভাব হয়নি।
আমি এই সুহাসিনী। নিজের মনেই বললেন তিনি।
ফেসবুকে হারিয়ে যাওয়া মানুষের সন্ধান পেলেও পাওয়া যেতে পারে। সুহাসিনী স্মৃতি হাতড়ে তেমন কারও নাম পেলেন না যার সন্ধান তিনি করতে পারেন। শেষ পর্যন্ত সবিতার কথা মনে এল। স্কুলের শেষ তিনটে বছরে খুব বন্ধু ছিল ওরা। সবিতা কলকাতার কলেজে পড়তে যাওয়ার পর সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। সেটা আর জোড়া লাগেনি। উপলাকে সবিতার কথা বললেন তিনি। সবিতার বাবার নাম, বাড়ির ঠিকানাও। কিন্তু সেই সবিতা নিশ্চয়ই বিয়ের পর অন্য ঠিকানায় চলে গিয়েছে। উপলা হাল ছাড়ার মেয়ে নয়। অনেক চেষ্টা করে সে সবিতার মোবাইল নাম্বার জোগাড় করে এনে বলল, ‘নাও, ফোন করে আগে বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলে নাও।’
‘এটা অন্য কোনো সবিতার নাম্বার নয় তো?’
‘না গো, না। সেই সবিতাই। ভদ্রমহিলা বিয়ে করেননি, বড় চাকরি করেন। আমার সঙ্গে কথা হয়েছে।’ উপলা বলল।
‘ওমা, তাই!’
যেহেতু উনি এখনও বাপের বাড়িতে আছেন তাই খোঁজ পেতে অসুবিধে হয়নি। তুমি শাশুড়ি হয়েছ শুনে বললেন, মাই গড!’
সুহাসিনী ফোন করার আগেই সবিতার ফোন এল, ‘বাই এনি চান্স, তুমি কি সেই সুহাসিনী যার গালে একসময় টোল পড়ত?’
সুহাসিনী হেসে ফেললেন, ‘এখনও পড়ে।’
‘মাই গড। অ্যাদ্দিন কোথায় ছিলে খুকি? আমি সবিতা। মনে আছে?’
‘বিলক্ষণ!’
‘যে মেয়েটা ফোন করেছিল সে কে? বলল, তোর বন্ধু। গলা শুনে তো মনে হল না। বলল, শাশুড়ি হয়ে গিয়েছিস! তাই?’
‘হ্যাঁ। তুই?’ পাল্টা প্রশ্ন করলেন সুহাসিনী।
‘বয়ে গিয়েছে। পুরুষ মানুষ তো বটেই, শ্বশুর—শাশুড়ির গোলামি করার জন্যে আমি জন্মাইনি। বাবা চেয়েছিলেন আমি বিয়ে করি। একজনকে পছন্দও হয়েছিল। সে বিয়ের কথা বললে বাবার কথা ভেবে তাকে বলেছিলাম, বিয়ে করতে পারি কিন্তু মা হতে পারব না। রাজি থাকলে বল।’
সুহাসিনী বুঝলেন তিনি ঠিক সবিতার সঙ্গে কথা বলছেন। তাই খুশি হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কী বললেন তিনি?’
‘টুক করে কেটে পড়ল।’
‘এখন তুই কেমন আছিস সবিতা?’
‘ফাটাফাটি। চাকরি করি। টাকা জমিয়েছি। কেউ পাশে শুয়ে নাক ডাকলেও টলারেট করতে হবে না। তোর স্বামীর নাক ডাকে?’
‘আগে তো ডাকত না।’
‘বুড়ো হওয়ার পর ডাকছে তাই তো?’
‘সেটা জানার সুযোগ পাইনি। তার আগেই সেরিব্র্যাল হল, তিনদিনের মধ্যে চলে গেল।’
‘ওহো!’ সবিতার গলায় একটু সহানুভূতির সুর!
‘তুই ওহো বললি কেন? তখন আমার খারাপ লেগেছিল কিন্তু খারাপ লাগাটা মনে নেই।’ সুহাসিনী বললেন।
‘মাই গড! তুই তো একদম বদলে গিয়েছিস সুহাসিনী। এক কজ কর। সামনের শনিবারে ইন্ডিয়া ক্লাবে চলে আয়। এই সাড়ে বারোটা নাগাদ। একসঙ্গে লাঞ্চ করব।’ সবিতা বলল।
‘নারে! শনি—রবি ছেলের ছুটি থাকে। দুপুরে একসঙ্গে না খেলে ভালো লাগে না। তাছাড়া বউমাকে না নিয়ে আমি কোথাও যাই না।’
‘যাচ্চচলে। তোর আমার মধ্যে বউমাটি কোত্থেকে আসছে? মুখ খুলে কথাই বলতে পারবি না তুই। ঠিক আছে, তুই ভেবে দ্যাখ। দেখা করতে ইচ্ছে হলে ফোন করিস। বাই।’
কথাগুলো উপলাকে বললেন না সুহাসিনী। সবিতা ওকে সঙ্গে নিয়ে যেতে চাইছে না শুনলে ওর খারাপ লাগতে পারে। স্কুলে পড়ার সময় সবিতা একটু ক্যাট ক্যাট করেই কথা বলত। কিন্তু মা হবে না বলে বিয়ে করবে না এটা তখন ভাবা যেত না। বড় চাকরি করে, ইন্ডিয়া ক্লাবে লাঞ্চ করে যখন তখন নিশ্চয়ই ওই অভিজাত ক্লাবের মেম্বার। গলার স্বরে কর্তৃত্ব। এমন মহিলা পুরুষসঙ্গ ছাড়া দিব্যি কাটিয়ে দিল জীবনটা। গল্প উপন্যাসে এরকম চরিত্র পেয়েছেন সুহাসিনী, জীবনে দেখেননি। অবশ্য তাঁর সীমাবদ্ধ জীবনে দেখার মতো বেশি কিছু ছিল না।
সেই রাত্রে নতুন করে বুদ্ধদেব গুহর লেখা ‘কোয়েলের কাছে’ খুলে বসেছিলেন। কী মনে হতে টাচফোন খুলে দেখলেন ফেসবুকে কেউ তাঁকে ইনভাইট করেছে বন্ধু হওয়ার জন্যে। বেশ মজা লাগল। এই প্রথম কেউ এই আগ্রহ দেখাল। উপলা যেভাবে শিখিয়ে দিয়েছিল সেইভাবে পাস ওয়ার্ড ব্যবহার করে তিনি জানতে পারলেন, মানুষটির নাম শোভন বসু। বয়স সাতান্ন। ইংরেজির অধ্যাপক। সুহাসিনী যে কলেজে ছেলেদের সঙ্গে পড়েছেন সেই কলেজের ছাত্র। বছরটা দেখে মনে হচ্ছিল হয় সহপাঠী নয় এক বছরের সিনিয়ার।
শোভন বসু নামের কাউকে মনে করার চেষ্টা করলেন সুহাসিনী। যে দুজন সহপাঠী তাঁর সঙ্গে ভাব করার চেষ্টা করত এবং তিনি যাদের নির্লিপ্ত থেকে সরিয়ে দিতেন তাদের কারও নাম তো শোভন ছিল না।
পরের দিন সবিতা ফোন করল, ‘অ্যাই তোকে শোভন ফেসবুক করেছে?’
‘হ্যাঁ। কিন্তু উনি কে? আমার নাম্বার কী করে পেল?’
‘তোর সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে শুনে নাম্বার চেয়ে নিয়েছিল। তারপরে মনে হল দিয়ে ঠিক করিনি। ফোন করলে ধরিস না।’
‘সেকি! কেন?’
‘তুই এখনও হাঁদা থেকে গেলি। আরে আমাদের বয়সি একটা লোক বিয়ে না করে আছে। এরা কি ডেঞ্জারাস হয়, জানিস না?’
‘না তো!’
‘ওঃ। মাই গড। এরা সারাজীবন ধরে মেয়েদের ভোগ করেও টায়ার্ড হয় না। দে নো দ্য আর্ট। তোর সঙ্গে আলাপ করে কখন কীভাবে তোকে গিলে খাবে তুই বুঝতেই পারবি না। যখন হজম হয়ে যাবি তখন কেঁদে কূল পাবি না। আমি এদের হাড়ে হাড়ে চিনি।’ সবিতা ফোন রাখল।
ধন্দে পড়লেন সুহাসিনী। তাঁর এক মামা ছিলেন, আশি বছরে গত হয়েছেন, বিয়ে করেননি। সারাজীবন যতটা সম্ভব অন্যের উপকার করেছেন। কখনই কোনো মেয়ের ক্ষতি করেছেন বলে শোনা যায়নি। বাবা খুব প্রশংসা করতেন ডক্টর বিধানচন্দ্র রায়ের। তিনিও অবিবাহিত ছিলেন। তাহলে? আর শোভন বসু লোকটা যদি খারাপ হবে তাহলে সবিতা তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছে কেন? সুহাসিনীর মোবাইল নাম্বারও কেন দিতে গেল? জীবনে প্রথমবার সুহাসিনীর মনে কুচিন্তা এল। উল্টোটাও তো হতে পারে। সারাজীবন ধরে যেসব অবিবাহিতা মহিলা ছেলেদের ভোগ করেও টায়ার্ড হয় না, সবিতা এখন তাদের একজন নয় তো? মোবাইল অফ করলেন সুহাসিনী।
শরীর কেমন ঘিনিয়ে উঠল। এই রাত্রে সুহাসিনীর মনে হল স্নান করা দরকার, না হলে রাত্রে ঘুমাতে পারবেন না। এও তাঁর কপালে ছিল?