সিগারেট
খবরের কাগজে দেখলাম, হাওড়া স্টেশনে সিগারেট বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
পরে অবশ্য রেল কোম্পানির বিজ্ঞাপনদৃষ্টে জানা গেল যে শুধু হাওড়া স্টেশনেই নয়, সব স্টেশনেই, সব প্ল্যাটফর্মে, রেলগাড়ির ভেতরে সিগারেট বিক্রি বন্ধ করা হয়েছে।
আমার একটু মায়া হচ্ছে, হাওড়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ঢোকার মুখে যে টোব্যাকো কর্নারটি ছিল সেই সিগারেট বিপণিটির জন্য। সেই দোকানটি অদ্যাবধি চালু ছিল কি না তা ঠিক জানি না। কিন্তু হাওড়া স্টেশনে বন্ধুবান্ধবী, পরিচিত জনের সঙ্গে মিলিত হওয়ার একদা এটাই ছিল ঠিকানা। যাত্রা শুরুর জংশন।
আমরা অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতাম হাওড়া স্টেশনে দেখা হবে। হয়তো বন্ধুবান্ধব মিলে বাইরে যাব। ওই টোবাকো কর্নারে পরস্পরের দেখা হত। জায়গাটা বেশ ফাঁকা ফাঁকা ছিল, লোকে সিগারেট কিনতে আসত, কিনে চলে যেত।
অন্য সর্বত্র ভিড়। এখানটা একটু ফাঁকা, মাথার ওপরে স্টেশনের বড় ঘড়ি। নির্দিষ্ট স্থান ও সময়ে নিজেদের মধ্যে দেখা হয়ে যেত। তারপর যাত্রা শুরু।
ওই দোকান থেকে আমরা বেশি করে সিগারেট কিনে নিতাম। একটু সস্তা হত, মনে আছে ঠিক চল্লিশ বছর আগে যখন এক প্যাকেট চার্মিনারের দাম পুরনো সাত পয়সা তখন আট-আনা মানে বত্রিশ পয়সায় এ দোকানে পাঁচ প্যাকেট চারমিনার পাওয়া যেত, তিন পয়সা সাশ্রয় হত। সে কম নয়, সেকেন্ড ক্লাস ট্রামে ধর্মতলা থেকে কালীঘাট।
বহুদিন পরে হাওড়া স্টেশনে সিগারেট বিক্রি বন্ধের খবরে, এসব কথা মনে পড়ল। সিগারেটের ধোঁয়ায় ভেসে গেছে চল্লিশ বছর। আমি অবশ্য এখন আর ধূমপান করি না, কিন্তু একদা শৃঙ্খলিত ধূমপায়ী ছিলাম, দৈনিক চল্লিশ-পঞ্চাশটা সিগারেট খেয়েছি।
এ-বিষয়ে অবশ্য আদর্শ ছিলেন আমার এক খুল্ল-প্রপিতামহ। তিনি মৃত্যুশয্যায় শুয়েও নাকি হুঁকো টেনেছেন।
কথিত আছে স্থানীয় কবিরাজ তাঁকে বলেছিলেন, ‘রায় মশায়, এখন আর তামাক খাবেন না। নিশ্বাসে তামাকে গন্ধ লেগে থাকবে। যখন পরলোকে পৌঁছবেন চিত্রগুপ্ত আপনার নিশ্বাসে তামাকের গন্ধ পাবে।’
বৃদ্ধ মুখ থেকে ক্ষণিকের জন্য গড়গড়ার নল বার করে নাকি বলেছিলেন, ‘নিশ্বাস থাকবে কোথায়? আমার তো ধারণা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেই পরলোক যাব।’