সাহিত্যে দেশ কাল ও জাতিগত রূপ
মানুষ তার স্বদেশে স্বকালের জাগতিক আনন্দ ও যন্ত্রণা এবং সম্পদ ও সমস্যার মধ্যেই জীবন নির্বাহ করে। অতএব দেশগত ও কালগত সম্পদে ও প্রভাবে মানুষের দেহ-মন-আত্মা গড়ে উঠে। অর্থাৎ মানুষ তার দৈশিক জলবায়ু প্রকৃতি-নিসর্গ এবং ভাষা ও জীবিকা-পদ্ধতি এবং কালিক ধর্মবোধ বিশ্বাস, সংস্কার, নৈতিক চেতনা, আর্থিক অবস্থা, আচারিক নিয়ম, সামাজিক বিধান ও রাষ্ট্রিক শাসনের মধ্যেই লালিত হয়। কাজেই মানুষের জীবনচেতনার বারোআনাই দেশ-কালের দান, বাকি চার আনা অনুশীলন লব্ধ। আবার বোধ, বুদ্ধি, জ্ঞান ও শিক্ষা ভেদে মানুষের চেতনায়ও বিকাশ ভেদ ও বৈচিত্র্য থাকে। এজন্যেই মানুষের অভিব্যক্ত আচরণে মগ্ন চৈতন্যের প্রভাব যত বেশি, পরিস্রত-চেতনার সাক্ষ্য তত নেই। ফলে বোধ-বুদ্ধি ও জ্ঞান-সংস্কৃতি সম্পন্ন অগ্রসর মানুষের সংখ্যা কম।
এই স্বল্পসংখ্যক অগ্রসর মানুষই তাদের অনুশীলন লব্ধ ভাব-চিন্তা-জ্ঞান প্রত্যয়ে ও কর্মে, আচরণে ও আবিষ্কারে, শিল্পে ও সাহিত্যে এবং দর্শনে ও ইতিহাসে প্রকাশ করেন। সামান্য অর্থে জীবনচেতনাই সংস্কৃতি। এ তাৎপর্যে প্রত্যেক সভ্য ও অসভ্য ব্যক্তির সংস্কৃতি রয়েছে কিন্তু তা সর্বমানবে সুলভ বলেই আমরা তাকে সংস্কৃতি বলে স্বীকার করিনে। অতএব বিশেষ পরিশীলিত চেতনাই সংস্কৃতি এবং সে-কারণে সংস্কৃতি সব সময়েই ব্যক্তিক। তা কখনো দেশগত কিংবা সমাজাশিত হতে পারে না। সংস্কৃতিকে যদি রুচি ও কর্মে বিভক্ত করি, তাহলে যা দেখতে শুনতে বলতে-করতে-শুঁকতে চাখতে-ধরতে কুৎসিত তা এড়িয়ে চলা এবং যা সুন্দর–শোভন ও কল্যাণকর- প্রত্যয়ে ও কর্মে, আচারে ও আচরণে, বরণে ও বর্জনে, সৃজনে ও আবিষ্কারে তার অনবরত চর্চাই সংস্কৃতি। ব্যক্তিক সংস্কৃতি অনুকৃত হয়ে দৈশিক, সামাজিক কিংবা জাতিক-রাষ্ট্রিক সংস্কৃতি রূপে পরিচিত হয়। আসলে ব্যক্তিক চেতনাসঞ্জাত সংস্কৃতি অনুকারীদের পক্ষে আচার মাত্র। এবং তা-ই দেশীয়-জাতীয় কিংবা গোত্রীয় সংস্কৃতি নামে অভিহিত হয়।
ব্যক্তিক সংস্কৃতিতে যে সৌন্দর্য-বুদ্ধি, কল্যাণ-চিন্তা, সৃষ্টিশীলতা, গ্রহণপ্রবণতা, সৌন্দর্য- অন্বেষা থাকে; দৈশিক, সামাজিক কিংবা জাতিক সংস্কৃতিতে তা থাকে না বলেই তা প্রাণহীন লোকাঁচার মাত্র। আর তখন সে-সংস্কৃতি প্রাণের প্রেরণা নয়-সুজনের সুরুচি সুকর্ম ও সৌজন্য নয়, আচারের বেড়ি বা সংস্কারের শৃঙ্খল মাত্র। যেমন ধূতি-চাদর কিংবা পাজামা-পাঞ্জাবি বাঙালির সংস্কারগত আচার মাত্র। কিন্তু এ পোশাক উদ্ভাবকের পক্ষে ছিল সংস্কৃতিবানতা।
সাধারণত মানুষের সংস্কৃতি প্রকাশ পায় তার দায়িত্ব ও কর্তব্য চেতনায়; তার সৌন্দর্য, সুরুচি ও সৌজন্য বোধে; তার ন্যায়-অন্যায় বোধজাত আইন-কানুনে; তার নৈতিক-সামাজিক আর্দশানুগত্যে; তার বরণ-বর্জন ক্ষমতায়, ঈর্ষা-দ্বেষ-দ্বন্দ্ব-ঘৃণা-লোভে-ক্ষোভ প্রভৃতির ক্ষেত্রে তার সংযম সাধনায়; পরের প্রতি তার প্রীতি ও শুভেচ্ছার অনুশীলনে ও তার মানবকল্যাণ কামনায়। কাজেই সংস্কৃতি পরিসুতি ও পরিশীলন সাপেক্ষ।
শিল্প-সাহিত্য-দর্শন প্রভৃতি মানস-সংস্কৃতির প্রসূন। যার সংস্কৃতি নেই, তার সৃজনশীলতা নেই। ব্যক্তিভেদে সংস্কৃতির মাত্রাভেদ আছে। কাজেই শিল্পে-সাহিত্যে-দর্শনেও গুণভেদে উৎকর্ষের স্তরভেদ রয়েছে। সংস্কৃতির প্রকাশ সাহিত্যে সুলভ। আমাদের পূর্ববাঙলার সাংস্কৃতিক জীবনের পরিমাপও তাই আমাদের সাহিত্য দিয়েই সহজে করা সম্ভব।
আগেই বলতে চেয়েছি, দেশগত ও কালগত জীবন মানুষের ভাব-চিন্তা-কর্মে প্রতিফলিত হয়। সাহিত্য সেই জীবনের প্রতিবিম্বিত রূপ। শিক্ষা ভেদে, মন ভেদে, আর্থিক-সামাজিক অবস্থানভেদে মানুষের জীবনচেতনা বিভিন্ন হয়। কাজেই সাহিত্যও হয় বিভিন্ন স্তরের, আদর্শের ও লক্ষ্যের। জ্ঞান রুচি-আদর্শ ও চিত্তের প্রসারভেদে ভাষা, ভঙ্গি, অলঙ্কার এবং অনুভূতি ও দৃষ্টি হয় বিভিন্ন। কাজেই সাহিত্যের বহিরঙ্গে ও অন্তরঙ্গে দৈশিক ও কালিক স্বাক্ষর থাকেই।
সৎসাহিত্যের রস সর্বমানবিক হওয়া সত্ত্বেও দেশ-কালের প্রভাব থাকে বলেই সাহিত্য কখনো নির্বণ, নির্বিশেষ ও নির্লক্ষ্য হয় না। বক্তব্যের অবলম্বন হয় দেশজ-কালজ আনন্দ কিংবা যন্ত্রণা, গৌরব কিম্বা লজ্জা, সম্পদ কিংবা সমস্যা, আশা কিংবা নৈরাশ্য। আমাদের বাঙলা সাহিত্যেও তা সুপ্রকট।
ভাষার ক্ষেত্রে গল্প-উপন্যাস লেখকদের কেউ বুলির ব্যবহারে উৎসুক, কেউ আরবি–ফারসি শব্দ প্রয়োগে আগ্রহশীল, কেউবা নতুন শব্দ গঠনে তৎপর, কারো বা লৌকিক Idiom-এ বেজায় আকর্ষণ।
বুলির সতর্ক ও সুষম ব্যবহারে উৎসুক দেখি সৃজনশীল প্রগতিবাদী লেখকদের। বুলির যথেচ্ছ ব্যবহারে আগ্রহ রয়েছে স্বাতন্ত্রকামী লিখিয়েদের আরবি–ফারসি শব্দের প্রতি গভীর মমতা আছে আরব-ইরান প্রিয় প্যান-ইসলামী তমদুনপন্থীদের। কিন্তু কবিতা ও প্রবন্ধের ক্ষেত্রে দুই-একজন ছাড়া সবাই চলতি রীতির ও চালু বাঙলা শব্দ সম্পদের প্রয়োগে অভ্যস্ত। দশ বছর আগেকার মোহ ও মূঢ়তা এখন আর কোথাও তেমন প্রবলভাবে আত্মপ্রকাশ করে না।
তবু সাহিত্যিকের শক্তিভেদে ভাষায় শব্দের অপপ্রয়োগ ও ভঙ্গির ত্রুটি প্রায়ই দৃশ্যমান। জ্ঞান-বিদ্যা-মন-রুচি অনুসারে রূপপ্রতীক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কেউ দেশী ঐতিহ্যে, কেউ স্বধর্মীর বিদেশী পুরাণে, কিংবদন্তিতে ও ইতিহাসে আশ্রয় খোঁজেন এবং অন্যেরা প্রয়োজনমতো পৃথিবীর যে- কোনো দেশের বা জাতির পুরাণ, কিংবদন্তি ও ইতিহাসের সহায়তা গ্রহণে উৎসুক। এর কারণ একশ্রেণীর লেখক স্থানিক জাতীয়তায়, আর এক দলের লেখক ধর্মীয় জাতীয়তায় আস্থা রাখেন এবং তৃতীয় দল উদারচিত্তে মানবিক প্রয়োজনকে স্বীকার করেন। এই মানববাদী দল দেশ-কাল জাত-ধর্ম নিরপেক্ষ সর্বমানবিক ঐশ্বর্যে ও ঐতিহ্যে বিশ্বাসী।
অবশ্য স্বাদেশিক ও স্বাধর্মিক রূপ-প্রতীক প্রীতির আড়ালে জ্ঞানগত অসামর্থ্যও আছে। ডালিয়া ডেইজি ডেফোডিল ক্যামেলিয়া রডেনডভ্রো বিদ্যাসাপেক্ষ। অধিগত বিদ্যা ও জ্ঞানের পরিসরেই মানুষের মন-মননের বিচরণ। আবার পরিচিত দেশী রূপ-প্রতীক সাধারণ পাঠকের সহজবোধ্য। কাজেই সেদিক দিয়ে তা অভিপ্রেত। কিন্তু সাহিত্যের দিগন্ত বিস্তারকামীর পক্ষে দেশান্তরে রূপ প্রতীক সন্ধান আবশ্যিক। যারা স্বজাতির ও স্বধর্মীর ঐতিহ্যনিষ্ঠ, তারা ভুলে থাকেন যে ভবিষ্যতের জন্যে ঐতিহ্য সৃষ্টির দায়িত্ব তাঁদেরও রয়েছে এবং সে দায়িত্ব পালন করতে সম্মুখ দৃষ্টির প্রয়োজন। ফেলে-আসা পশ্চাতের দিকে তাকাতে হলে দেহ ফিরিয়ে পশ্চাৎকেই সম্মুখ করতে হয় এবং তাতে অগ্রগতি কেবল ব্যাহতই হয়। এমনি ঐতিহ্যনিষ্ঠ শিল্পী-সাহিত্যিকের দানে পাঠকের মন-আত্মার বিকাশ অসম্ভব, কেননা এতে লেখক-পাঠক কারো চিত্তের বদ্ধতা ও অন্ধতা ঘুচে না।
মানুষের প্রগতির পথে ঐতিহ্যের পাথেয় কি অপরিহার্য? ঐতিহ্য কি সবার থাকে? দিগ্বিজয়ী সিকান্দর-চেঙ্গিস- এটিলার কি ঐতিহ্য ছিল? হযরত ইব্রাহিম-মুসা-ঈসা- মুহম্মদের, সক্রেটিস এ্যারিস্টটল-কনফুশিয়াসের, কোপার্নিকাস-রুশো-গেলেলিওর, শেকসপীয়ার- গ্যটে-রবীন্দ্রনাথের কিংবা ডারুইন-মার্ক-ফ্রয়েডের কি ঐতিহ্য ছিল? এঁরা প্রত্যেকেই কি স্বস্ব ক্ষেত্রে দেশীয়, গোত্রীয় বা জাতীয় ঐতিহ্য পরিহার করে নতুন ঐতিহ্য সৃষ্টি করেননি? বুনো নিগ্রোদের রাষ্ট্রিক ঐতিহ্য নেই বলে কি তাদের আত্মোন্নয়ন ও আত্মপ্রসার রুদ্ধ থাকবে? মানুষের জীবনে সত্যি সত্যি ঐতিহ্য প্রেরণার প্রয়োজন যদি থাকে তবে তা হবে মানবিক ঐতিহ্য–প্রয়াসে ও প্রযত্নে মানুষের পক্ষে সবই সম্ভব। এবং এ প্রত্যয় অঙ্গীকার করে এগুলোই হবে তার কর্তব্য।
তাছাড়া ধর্মসূত্রে, শাসনসূত্রে, জ্ঞান ও বিদ্যাসূত্রে মানুষ কি চিরকাল বিদেশী-বিজাতি ও বিভাষী-বিধর্মীর ঐতিহ্যকে নিজের করে নেয়নি? তাহলে স্বাদেশিক ও স্বাধর্মিক ঐতিহ্যে ঐকান্তিক নিষ্ঠা বদ্ধচিত্তের অন্ধতারই নামান্তর। সাহিত্য-শিল্প-দর্শন মানুষের একই বৃত্তি-প্রবৃত্তির এবং ব্যক্তি সমাজ-ধর্ম-রাষ্ট্র সম্পর্কিত সমস্যা, সংকট-আনন্দ যন্ত্রণা ও ভাব-চিন্তার অভিব্যক্ত রূপ।
গদ্যে পদ্যে বাঙলা সৎসাহিত্যে বহিরাঙ্গিক উপাদান-উপকরণ দৈশিক ও কালিক। আর্থিক দৈন্য, সামাজিক পশ্চাৎমুখিতা, প্রশাসনিক ত্রুটি, নৈতিক শৈথিল্যে মানবিক দায়িত্বে অস্বীকৃতি ও কর্তব্যে অবহেলা, রাজনীতিক অনিশ্চয়তা, প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রভৃতির পটভূমিকায় মানুষের দয়া দ্বন্দ্ব, প্রীতি-অসূয়া ভয়-ভরসা, পীড়ন-পোষণ, মাৎসর্য-রিরংসা, আনন্দ-যন্ত্রণা-সম্পদ-সমস্যা, চাওয়া পাওয়া প্রভৃতির রূপায়ণ ঘটেছে। এই রস সর্বমানবিক জীবন ও জীবিকার সর্বক্ষেত্রে মানবিক সমস্যার সমাধান-প্রয়াস ও প্রতিবেশ- প্রভাবিত মানবিক বৃত্তি-প্রবৃত্তির স্বরূপ নিরূপণই তাই এ সাহিত্যের অন্তরঙ্গ রূপ।
অতএব ভাষা বা ভঙ্গি, কাহিনী বা বিষয়, গৌরব বা লজ্জা, ক্ষোভ বা উল্লাস, বিশ্বাস বা সংস্কার, আদর্শ বা উদ্দেশ্যে, লক্ষ্য কিংবা সমস্যা হবে স্থানিক ও কালিক, কিন্তু প্রতিপাদ্য বিষয় থাকবে সর্বমানবিক। অর্থাৎ স্থানিক ও কালিক বিষয় হবে সাহিত্যের বহিরঙ্গ আর অন্তর্নিহিত রস হবে সর্বজনীন।
আমাদের পূর্ব বাঙলার সাহিত্যে আমরা পূর্ব বাঙলার মানুষ ও প্রকৃতিকেই প্রত্যাশা করি। এই মানুষ ও প্রকৃতি পৃথিবীর আর কোথাও মিলবে না। অর্থাৎ সব মানুষে ও প্রকৃতিতে গূঢ় সাদৃশ্য থাকলেও বাহ্য স্বাতন্ত্র্য থাকে অলঙ্ঘ্য। এখানকার মানুষ তার বিশ্বাসে সংস্কারে, মনে মননে ও আদর্শে উদ্দেশ্যে স্বতন্ত্র। তার ভূত-প্রেত-দেও তার, হুর- পরী-জীন, তার যক্ষ-রক্ষ-গন্ধর্ব, তার আকাশ-জল-মাটি, তার তুকতাক-দারু-টোনা, তার-ঝাড়ফুঁক-মানত, তার-তাবিজ-কবজ, মাদুলি তার জীবন নিয়ন্ত্রণ করে।
সে জীবনের ও মানসের রূপায়ণ ঘটে তার সাহিত্যে ও সঙ্গীতে তার নৃত্যে ও চিত্রে, তার দর্শনে ও অধ্যাত্মচিন্তায়, তার জীবন-ভাবনায় ও জীবিকা নির্বাচনে, তার সমাজবোধে ও নৈতিক চেতনায়, তার ধর্ম ভাবে ও রাষ্ট্রিক জীবনে।
এই দেশের নদী-নালা-হাওরের প্রভাব তাকে কখনো করেছে উদাসী, তখন তার বিবাগী মন ও দেহকে ভেবেছে অকুল নীরে মন-পবনের নৌকা বলে। আবার কখনো করেছে সংগ্রামী। পদ্মা-মেঘনা ব্রহ্মপুত্রের তীরবাসী মানুষ প্রকৃতি ও প্রতিবেশীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্যেই বাঁচে। বাউল-ভাটিয়ালী-ভাবাইয়া-হাপু-জাগ-জারি-সারি গানেই তাই তার জগৎ ও জীবনচেতনা অভিব্যক্ত। তার পারত্রিক চিন্তায় প্রাধান্য পেয়েছে পীর, মুর্শিদ ও দরগাহ। তার অধ্যাত্মসাধনার অবলম্বন হয়েছে যোগ ও জিকির। তার জাগতিক জীবন-ভাবনায় নিয়ম ও নিয়তির বাধা তাকে কখনো করেছে উদ্বিগ্ন, কখনো করেছে উদ্বেল, আবার কখনো করেছে বিক্ষুব্ধ বিদ্রোহী। চাঁদ বেহুলার কাহিনীতে ও ময়মনসিংহ-চট্টগ্রামের গীতিকায় রয়েছে তার সাক্ষ্য। আমাদের একালের সৎসাহিত্যেও রয়েছে স্বদেশের ও স্বজাতির সে-পরিচয়। বাঙলার গদ্য-পদ্য রচনায় গ্রাম-বাঙলার প্রকৃতি ও মানুষ সুচিত্রিত এবং জীবন ও জীবিকার ধ্যান-ধারণা সুপরিব্যক্ত। আরও রয়েছে বিশ্বাস সংস্কার-দুষ্ট পীড়িত, শোষিত ও দুর্ভিক্ষক্লিষ্ট বিপর্যস্ত জীবনের আলেখ্য এবং পীর-দরগাহ-সংপৃক্ত জীবনচরিত্র।
অনেক তরুণ লেখকের রচনা প্রপীড়িত শোষিত মূক মানুষের জীবনের মর্মবেদনার ও জীবন যন্ত্রণার বর্ণনায় মুখর।
আমাদের শিক্ষিতের সংখ্যা আজও কম। কবি-সাহিত্যিকের সংখ্যা শিক্ষিত লোকের তুলনায় আরো কম। তাছাড়া দেশ-কাল ও জনজীবনের অন্তরঙ্গ পরিচয় তুলে ধরার যোগ্যতা থাকা চাই শিল্পীদের। দেশের মাটি ও মানুষকে ভালো না বাসলে তার পরিচয় জানা সম্ভব নয়। মানুষকে সত্যই ভালোবাসেন তেমন লেখকও আমাদের বেশি নেই। এসব কারণে আমাদের দেশ-কাল মানুষের সামগ্রিক পরিচয়–তাদের বিশিষ্টতা আজো সাহিত্যে তেমন পরিস্ফুট হয়ে ওঠেনি।