সার্থক নৈরাশ্য

  তখন ছিল যে গভীর রাত্রিবেলা , 
              নিদ্রা     ছিল না চোখের কোণে ; 
  আষাঢ় - আঁধারে আকাশে মেঘের মেলা , 
              কোথাও    বাতাস ছিল না বনে । 
  বিরাম ছিল না তপ্ত শয়নতলে , 
              কাঙাল   ছিল বসে মোর প্রাণে ; 
  দু হাত বাড়ায়ে কী জানি কী কথা বলে , 
              কাঙাল   চায় যে কারে কে জানে । 
  দিল আঁধারের সকল রন্ধ্র ভরি 
              তাহার   ক্ষুব্ধ ক্ষুধিত ভাষা ; 
  মনে হল যেন বর্ষার বিভাবরী 
              আজি    হারালো রে সব আশা । 
  অনাথ জগতে যেন এক সুখ আছে , 
              তাও     জগৎ খুঁজে না মেলে ; 
  আঁধারে কখন সে এসে যায় গো পাছে 
              বুকে     রেখেছে আগুন জ্বেলে । 
  ‘ দাও দাও ' বলে হাঁকিনু সুদূরে চেয়ে , 
              আমি     ফুকারি ডাকিনু কারে । 
  এমন সময়ে অরুণতরণী বেয়ে 
              প্রভাত   নামিল গগনপারে । 
  পেয়েছি পেয়েছি , নিবাও নিশার বাতি , 
              আমি     কিছুই চাহি নে আর । 
  ওগো নিষ্ঠুর শূন্য নীরব রাতি , 
              তোমায়     করি গো নমস্কার । 
  বাঁচালে বাঁচালে— বধির আঁধার তব 
              আমায়   পৌঁছিয়া দিল কূলে । 
  বঞ্চিত করি যা দিয়েছ কারে কব , 
              আমায়   জগতে দিয়েছ তুলে । 
              ধন্য প্রভাতরবি , 
         আমার     লহো গো নমসকার । 
               ধন্য মধুর বায়ু , 
         তোমায়    নমি হে বারম্বার । 
              ওগো প্রভাতের পাখি , 
         তোমার    কলনির্মল স্বরে 
              আমার প্রণাম লয়ে 
         বিছাও      দূর গগনের'পরে । 
              ধন্য ধরার মাটি , 
         জগতে     ধন্য জীবের মেলা । 
               ধুলায় নমিয়া মাথা 
         ধন্য         আমি এ প্রভাতবেলা । 
Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *