সারমেয় গেণ্ডুকের কাঁটা – ১২

১২

আমি মনে মনে প্রীতম ঠাকুরের চেহারা যেরকম ভেবে রেখেছিলাম ওঁকে দেখতে সেরকম নয়। ওঁর উপাধি দেখছি ঠাকুর—ওঁর আদি নিবাস উত্তর ভারত না রাজস্থান জানি না, কাশ্মীরও হতে পারে—কারণ গায়ের রঙ খুব ফর্সা, একমুখ কুচকুচে কালো দাড়ি, মাথায় পাগড়ি। মনে হল, ধর্মে উনি খালসা শিখ। অথচ পরিষ্কার বাংলা বলছিলেন। প্রীতমের আবির্ভাবমাত্র হেনার একটা পরিবর্তন হল। যেন একটা পর্দার আড়ালে সরে গেল। সেখান থেকে সে অনাসক্তকণ্ঠে বাসু-মামুর পরিচয় দিল। আমাকে সে পাত্তাই দিল না।

—আহ্। মিস্টার পি. কে. বাসু – বার-অ্যাট-ল! আপনি তো স্বনামখ্যাত। কিন্তু আপনার ভেল্কি তো শুনেছি আদালতের চৌহদ্দিতে, এ গরিবখানায় পদার্পণ করে হঠাৎ আমাদের ধন্য করছেন যে?

বাসু বললেন, আসতে হলো। এক বৃদ্ধা মক্কেলের প্রয়াণে। মিস্ পামেলা জনসন।

–হেনার বড়মাসি? তিনি আপনার মক্কেল ছিলেন? কী ব্যাপার?

বাসু-মামু ধীরে ধীরে বললেন, তাঁর মৃত্যু-বিষয়ে কয়েকটি তথ্য সংগ্রহ করতে….

হেনা তাড়াতাড়ি বলে ওঠে, তাঁর শেষ উইলটার বিষয়ে, প্রীতম। মিস্টার বাসু আসছেন টুকু আর সুরেশের কাছ থেকে। ওরা আদালতে যেতে চায়।

আবার আমার দৃষ্টিবিভ্রম হল কি না জানি না, কিন্তু প্রসঙ্গটা পামেলার ‘মৃত্যু’ থেকে সরে গিয়ে তাঁর ‘উইলে’ পরিবর্তিত হওয়ায়—আমার মনে হল—প্রীতম আশ্বস্ত হল। বললে, আহ্! সেই নিষ্ঠুর উইলখানা! কিন্তু সে-বিষয়ে আমার নাক গলানো বোধ হয় ঠিক হবে না।

বাসু-মামু স্মৃতিটুকু আর সুরেশের সঙ্গে তাঁর আলোচনার একটা সংক্ষিপ্ত সারাংশ দাখিল করলেন। সত্য-মিথ্যায় মেশানো। তির্যক ইঙ্গিত রইলো—উইলটা নাকচ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

—অস্বীকার করে লাভ নেই, আমি ইন্টারেস্টেড। তবে তার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করি না। ইতিপূর্বে আমি একজন আইনজ্ঞের পরামর্শ নিয়েছি।

মামু বললেন, উকিলরা সাবধানী, মামলায় হেরে যাবার সম্ভাবনা থাকলে তাঁরা কেস. নিতে চান না—এখনি আপনার স্ত্রীকে সে কথা বলছিলাম। তবে আমার পদ্ধতি একটু অন্য জাতের। আমার তো মনে হয়েছে—উইলটা বাতিল করার বেশ কিছুটা সম্ভাবনা আছে। আপনি কী বলেন?

—আমি আগেই বলেছি, এ বিষয়ে নাক-গলানো আমার তরফে অশোভন। ব্যাপারটা হেনার ইচ্ছার উপর নির্ভর করছে। তবে, এ-কথাও বলবো, আমি আপনার সঙ্গে একমত। কিছু একটা করা দরকার। কিন্তু, সেটা মনে হয় অত্যন্ত ব্যয়-সাপেক্ষ?

—এ যুক্তি মিস্ হালদারও দিয়েছিল—সে বলেছে, সাফল্যলাভ করলেই আমাকে ‘ফিজ’ দেবে। উইল নাকচ করতে না পারলে আমার এক্সপেন্সও মেটাবে না।

—আপনি তা সত্ত্বেও কেসটা নিয়েছেন! তার মানে, আপনি একটা কিছু পথের সম্ভাবনা নিশ্চয় দেখতে পেয়েছেন। শর্তটা সে-জাতের হলে আমাদের আপত্তি নেই, কী বল হেনা?-মিষ্টি হেসে হেনার দিকে চাইলো প্রীতম। হেনাও মিষ্টি করে হাসবার চেষ্টা করলো—কিন্তু তা যেন যান্ত্রিক হাসি।

প্রীতম জমিয়ে বসলো। বললো, আমি আইন জানি না, তবে আমার মনে হয়েছে—মিস্ জনসন উইলটা পালটে ফেলেন স্বেচ্ছায় নয়, ওঁর ঐ সহচরীটির প্ররোচনায়—মিনতি মাইতি বোকা সেজে থাকে, আসলে সে অত্যন্ত ধূর্ত আর শয়তানী বুদ্ধি তার পেটে পেটে।

মামু চট করে ঘুরে হেনাকে প্রশ্ন করেন, তুমি এ বিষয়ে একমত?

হেনা একটু বিব্রত হয়ে পড়ে। বলে, মিন্টিদি আমাকে খুব ভালোবাসে। তাঁকে বুদ্ধিমতী বলে আমার মনে হয়নি। আর শয়তানী…

কথাটা তার শেষ হয় না। প্রীতম মাঝখানেই বলে ওঠে, হ্যাঁ। মিস্ মাইতি তোমাকেই ভালোবাসে। আমার প্রতি তার ব্যবহারটা অন্য রকম। শুনুন বাসু-সাহেব, একটা উদাহরণ দিই। বৃদ্ধা একবার সিঁড়ি থেকে উল্টে পড়েন, আমি ওঁর কাছে থেকে যেতে চেয়েছিলাম—মানে ডাক্তার হিসাবে সেবা-শুশ্রূষা করতে। তিনি রাজি হননি— সেটা স্বাভাবিক—ভদ্রমহিলা একা-একা থাকতেই অভ্যস্তা, কিন্তু ঐ মহিলাটি, আই মীন মিস্‌ মাইতিও আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল আমাদের তাড়াতে। কারণ, এ নয় যে তার খাটনি বাড়বে। কারণটা এই যে, অসুস্থ বৃদ্ধাকে সে আগলে রাখর্তে চাইছিল–কাউকে কাছে ঘেঁষতে দিত না।

একই ভঙ্গিতে বাসু-মামু হেনাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি একমত?

এবারও স্ত্রীকে জবাব দেবার সুযোগ দিল না প্রীতম। বলে ওঠে, হেনার মনটা নরম। ও কারও দোষত্রুটি দেখতে পায় না। কিন্তু আমি এ বিষয়ে নিশ্চিত। আরও একটা উদাহরণ দিই। বুড়ি ভূত-প্রেত আত্মা-ফাত্মা বিশ্বাস করতো না, আর মিস্ মাইতি একজন লোকাল গুনিন্‌কে আমদানি করে ওঁর ওপর প্রভাব বিস্তার করছিল-

—‘লোকাল গুনিন’ মানে?—বাসু-মামু যথারীতি ন্যাকা সাজলেন।

প্রীতম ঐ ঠাকুরমশাই আর সতী-মায়ের গল্প শোনালো। তার বিশ্বাস—শয্যাশায়ী এক বৃদ্ধাকে এভাবে প্রভাবান্বিত করা খুবই সহজ। সম্ভবত একটি ভেল্কির মাধ্যমে বুড়ির মতটা বদলে দেওয়া হয়–হয়তো প্ল্যানচেটে স্বর্গত যোসেফ হালদার এসে তাকে আদেশ করেছিলেন—সমস্ত সম্পত্তি ঐ শয়তানির নামে লিখে দিতে।

একই ভঙ্গিতে মামু হেনাকে প্রশ্ন করেন, তোমারও তাই বিশ্বাস?

এবার প্রীতম আর বাধা দিল না। বরং একটু ধমকের সুরেই স্ত্রীকে বললো, মিনমিন কোরো না, হেনা। তোমার কী মতামত তা স্পষ্ট করে জানাও!

স্বামীর মর্মভেদী দৃষ্টির প্রতি নজর হেনার। সে যেন কুঁকড়ে গেল। মিনমিন করেই বললে, আমি এসবের কী বুঝি? আমার মনে হয়, তুমি ঠিকই বলছো, প্রীতম!

প্রীতম খুশি হলো। বললো, আমি চিরকালই ঠিক বলি, হনি।

বিলাতী কায়দায় সর্বসমক্ষে স্ত্রীকে ‘হনি’ ডাকা শিষ্টাচারসম্মত—প্রীতম কিন্তু—আমার মনে হল—সে কায়দায় অভ্যস্ত নয়। তবে, হেনা অবাধ্যতা করছে না, এটা প্রণিধান করে সে হঠাৎ খুশিয়াল হয়ে উঠেছে।

বাসু প্রসঙ্গান্তরে চলে এলেন। প্রীতমকে জিজ্ঞাসা করলেন, মিস্ জনসনের মৃত্যুর আগের শনিবারে আপনারা মেরীনগরে গিয়েছিলেন, নয়?

প্রীতম মনে করার চেষ্টা করছে। এতক্ষণে হেনা স্বাভাবিক হয়েছে অনেকটা। বললে, না। আমরা গেছিলাম তার আগের সপ্তাহে, তখনো উনি দ্বিতীয় উইলটা করেননি

বাসু-মামু একদৃষ্টে তাকিয়েছিলেন প্রীতমের দিকে। তাকেই বলেন, না। আমি পঁচিশে এপ্রিলের কথা বলছি। সেদিন আপনি কাঁচড়াপাড়া থেকে গোপাল মোদকের রিক্সা নিয়ে একাই মরকতকুঞ্জে গিয়েছিলেন। তাই নয়?

হেনা এবার তার স্বামীর দিকে ফিরলো, বললে, তুমি বড়মাসির কাছে গেছিলে? পঁচিশে?

যেন এতক্ষণে মনে পড়লো। স্ত্রীকেই বললে, হ্যাঁ, ফিরে এসে তোমাকে তো বলেছিলাম? ঘণ্টাখানেক আমি মরকতকুঞ্জে ছিলাম। ফিরে এসে বললাম, মিস্ জনসন ভালই আছেন। মনে নেই?

এবার শুধু বাসু-মামু নয় আমিও একদৃষ্টে হেনার দিকে তাকিয়ে আছি। সে আঁচল দিয়ে মুখখানা মুছলো। প্রীতম তাগাদা দেয়, মনে পড়ছে না? অদ্ভুত তোমার স্মৃতিশক্তি, বাপু!

যেন এতক্ষণে হেনার মনে পড়লো। বললো, ও হ্যাঁ, হ্যাঁ! আমার কিছুই মনে থাকে না। তাছাড়া দু’মাস হয়ে গেল তো?

বাসু-মামু এবার প্রীতমকে বলেন, তখন ওরা দু’জন ছিল মরকতকুঞ্জে? টুকু আর সুরেশ?

—তা হবে। আমি ওদের দেখতে পাইনি। মাত্র ঘণ্টাখানেক ছিলাম…

বাসু নির্নিমেষ নেত্রে তাকিয়েই আছেন। প্রীতম একটু নড়েচড়ে বসলো। বললে, অস্বীকার করে লাভ নেই, আমি ওঁর কাছে কিছু টাকা ধার করতে গেছিলাম। ভবি ভুললো না!

বাসু একটু গম্ভীর হয়ে বলেন, আপনাকে সোজাসুজি একটা প্রশ্ন করবো ডক্টর.ঠাকুর? প্রীতমের মুখে কি একটা আতঙ্কের ছায়া পড়লো? একটু সামলে নিয়ে বললে, স্বচ্ছন্দে!

—মিস্ স্মৃতিটুকু আর মিস্টার সুরেশ হালদারের সম্বন্ধে আপনার কী ধারণা? ডক্টর ঠাকুরের একটা স্বস্তির নিশ্বাস পড়লো যেন। স্ত্রীর দিকে ফিরে বললেন, তোমার ভাই-বোনদের সম্বন্ধে আমার ‘ফ্র্যাঙ্ক ওপিনিয়ন’ দিলে তুমি কিছু মনে করবে না তো?

হেনা জবাব দিল না। নিঃশব্দে নেতিবাচক গ্রীবাভঙ্গি করলো শুধু।

—তাহলে খোলাখুলিই বলি, ওরা দুজনেই একেবারে বখে গেছে। তবু সুরেশকে আমার ভালো লাগে। সে প্রাণবন্ত, স্পোর্টসম্যান, খোলামেলা। স্মৃতিটুকু অন্য জাতের মানুষ। গ্ল্যামারাস, বেহিসাবি, ওভারস্মার্ট—তার নানান পুরুষ বন্ধু! সে বোধহয় প্রয়োজনে কারও পাত্রে অনায়াসে বিষও মিশিয়ে দিতে পারে। সবটা তার নিজের দোষ নয়—হেরিডিটি—ওর রক্তে হয়তো আছে এর প্রভাব। আপনি জানেন কি না জানি না, ওর মায়ের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল—প্রথম স্বামীকে নাকি তিনি বিষপ্রয়োগে হত্যা করেছিলেন—

—জানি। শুনেছি, তিনি বেকসুর খালাসও পেয়েছিলেন। আর ডাক্তার নির্মল দত্তগুপ্ত?

—ডক্টর দত্তগুপ্ত? হ্যাঁ, তার সঙ্গে আলাপ হয়েছে। ফার্স্ট ক্লাস ব্রেন। লিভার এক্সট্র্যাক্ট নিয়ে সে একটা থেরাপিউটিক্যাল আবিষ্কার নাকি করে ফেলেছে। সে একদিন মরকতকুঞ্জে ডিনারে এসেছিলো। সেদিনই বললে—

—ব্যাপারটা কী? আই মীন, আবিষ্কার কী জাতীয়?

—সিরাম ইনজেকশানের একটা পেটেন্ট নেবে সে। তার এক্সপেরিমেন্ট নাকি সাকসেসফুল। অন্তত তার মতে। আশ্চর্য! সে যে কেমন করে স্মৃতিটুকুর প্রেমে পড়লো এটা আজও আমার মগজে ঢোকে না। দুজনের চরিত্র একেবারে বিপরীত।

ওপাশ থেকে মীনা বলে উঠলো, মা লাঞ্চে যাবে না? রাকেশের ভুখ্ লেগেছে।

মামু উঠে পড়েন, সো সরি! আপনাদের লাঞ্চে দেরি করিয়ে দিলাম।

হেনা তার স্বামীর দিকে একটা চোরা চাহনি হেনে বাসু-মামুকে বললে, আপনারাও আসুন না। আমরা ঐ সামনের রেস্তোরাঁয় লাঞ্চ করি। রান্নাবান্নার হাঙ্গামায় যাইনি। প্রীতমের বোন আর ভগ্নীপতি ক’দিনের জন্য বেড়াতে গেছে…

বাসু-মামু বললেন, গোপালপুর-অন-সীতে নয় নিশ্চয়?

প্রীতম অবাক হয়ে বললে, আশ্চর্য! আপনি কেমন করে জানলেন? রিয়ালি, আপনি একজন জিনিয়াস! অফ অল দ্য টুরিস্ট স্পটস…

বাসু-মামু তাঁর ভাগ্নের দিকে চোরা চাহনি হানলেন একবার। প্রীতমের টেলিফোন নাম্বারটা লিখে নিলেন। বললেন, প্রয়োজনে যোগাযোগ করবেন। তারপর বিদায় নিয়ে আমরা রাস্তায় নেমে আসি।

সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে প্রশ্ন করি, কাঁচড়াপাড়ার রিকশাওয়ালা গোপাল মোদক-

-–ও নামটা আবিষ্কার করলাম। নাহলে হয়তো প্রীতম কবুল করতো না।

নিচে নেমে এসে গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিচ্ছি, হঠাৎ নজর হলো, মিসেস ঠাকুর বেশ একটু দ্রুতপায়েই এগিয়ে আসছেন আমাদের দিকে। বাসু-মামু আমার হাতটা চেপে ধরলেন। নজর হলো হেনা একাই আসছে। প্রীতম বা ছেলেমেয়ে তার সঙ্গে নেই। সে বারে বারে পিছন দিকে তাকাচ্ছে আর প্রায় ছুটতে ছুটতে এগিয়ে আসছে। ততক্ষণে আমরা দুজনেই গাড়ির ভিতর। আমি ড্রাইভারের সিটে। হেনা এগিয়ে আসতে মামু কাচটা নামিয়ে দিলেন। হেনা ঝুঁকে পড়ে বললে, মিস্টার বাসু, আপনাকে একটা কথা বলার আছে…অত্যন্ত জরুরি এবং অত্যন্ত গোপনীয়….

—বল? –বাসু-মামুও ঝুঁকে পড়েন।

হেনা চারিদিকে তাকিয়ে দেখল। কেউ তাকে নজর করছে কি না। তারপর আবার বললে, আপনি…আপনি…মানে, কাউকে বলবেন না তো?

—গোপন কথা কেন বলবো? বল, কী বলতে চাও?

—জানাজানি হলে কিন্তু সর্বনাশ হয়ে যাবে।

—দেরি কোরো না হেনা। এখনই প্রীতম নেমে আসবে। কথাটা কী?

প্রীতমের নাম শুনেই মেয়েটি পিছন ফিরলো। তখনই নজর হলো ছেলেমেয়ের হাত ধরে প্রীতম সদর দরজা দিয়ে এগিয়ে আসছে। কাছে এসে বললে, আপনারা যাননি দেখছি!

হেনা সহজ গলায় বললে, আজ আপনারা এক কাপ কফি পর্যন্ত খাননি। তাহলে কবে আসবেন বলুন?

—ও! নিমন্ত্রণ করা হচ্ছে?

বাসু বললেন, টেলিফোন করে জানাবো।

—তাহলে ঐ কথাই রইলো। এখনি যা বলছিলাম। টুকুকে বলবেন, আমরাও আছি তার সঙ্গে। নমস্কার।

আমি স্টার্ট দিলাম গাড়িতে। ঠাকুর দম্পতি সামনের রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করলেন ছেলেমেয়েদের নিয়ে। গাড়ি চালাতে চালাতেই বলি, হেনা কী বলতে এসেছিল বলুন তো? অত্যন্ত জরুরি এবং অত্যন্ত গোপন?

–শোনা হল না! শোনার দরকার ছিল।

—পরে টেলিফোন করলে জানা যাবে নিশ্চয়।

—যদি প্রীতম সে সময় বাড়িতে না থাকে!

১৩

বাড়ি ফিরে দেখি সুজাতার চিঠি এসেছে। গোপালপুর-অন-সী থেকে। জানতে চেয়েছে, আর কদিন দেরি হবে আমাদের। আমরা কেন যেতে দেরি করছি।

আহারান্তে বিশ্রাম নেওয়া গেল না। বিশু এসে খবর দিল বড়কর্তা ডেকে পাঠিয়েছেন। ওঁর ঘরে গিয়ে দেখি ইজিচেয়ারে লম্বা হয়ে শুয়ে আছেন তিনি। মুখে পাইপ

আমাকে দেখেই বলে ওঠেন, অফ অল দ্য টুরিস্ট স্পটস্ লোকে কেন যে ‘গোপালপুর-অন-সী’তে দৌড়য় বুঝি না।

এই ‘লেগ-পুলিং’ আমার ভালো লাগে না। বলি, ডেকে পাঠিয়েছেন কেন? কিছু বলবেন?

—তোমার হাতে যদি সময় থাকে। আর যদি এই মওকায় চিঠির জবাবটা লিখে ফেলতে চাও তা হলে, এখন বরং থাক।

—চিঠির জবাব? কোন চিঠি?

—আজকের ডাকে গোপালপুর থেকে একখানা খাম এসেছে মনে হলো? বলি, না, গোপালপুর থেকে নয়, ও আমার এক বন্ধুর চিঠি।—উনি যদি ক্রমাগত মিথ্যে কথা বলে যেতে পারেন, তাহলে আমিই বা পারবো না কেন?

বলেন, বোসো। কেসটা একটু আলোচনা করি

কিছুক্ষণের মধ্যেই কেসটার মধ্যে আমরা ডুবে গেলাম।

—একটা জিনিস লক্ষ করেছ কৌশিক। আমি মিস্ জনসনের চিঠি পেয়েছি শুনে এক-একজনের এক-একরকম প্রতিক্রিয়া হল। শান্তি ধরে নিল—সেটা সুরেশের চৌর্যবৃত্তি—উদ্ঘাটিত হল একটি নতুন অধ্যায়। টুকু বললে, স্বর্গীয় পোস্ট-অফিস থেকে কেউ চিঠি লেখে না—যেন, মৃত ব্যক্তি কোনও ফরিয়াদ আনতে পারে না। কিন্তু আমি যেই বললাম, তিনি মৃত্যুর পূর্বে চিঠিখানা আমাকে লিখেছিলেন, অমনি সে নার্ভাস হয়ে সিগারেট ধরালো। আর মিনতি মাইতি এর মধ্যে কোনও কিছু বিস্ময়ের দেখতে পেল না। হয় সে অত্যন্ত চতুর-তার বোকাসোকা চরিত্রটা সব সময় বিশ্বাসযোগ্য করে রাখতে সক্ষম, অথবা সে এতই বোকা যে, বুঝতে পারে না—মৃত্যু মুহূর্তে উচ্চারিত কথাটা মিস জনসনের পক্ষে চিঠিতে জানানো সম্ভবপর নয়। আবার ওদিকে কথাটা শোনামাত্র হেনার রিফ্লেক্স অ্যাকশন : ‘আমার স্বামীর বিরুদ্ধে?’ কেন? মিস পামেলা জনসন ওর স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে আমাকে তদন্ত করতে বলবেন কেন?

আমি বলি, হেনা একটা কথা জানে, যা আমরা জানি না।

—হ্যাঁ, কিন্তু কী সেটা? মিনতি মাইতির ধারণা, প্রীতম হুকুম করলে হেনা মানুষ খুন করতে পারে। আবার প্রীতমের ধারণা : প্রয়োজনে স্মৃতিটুকু কারও খাদ্যে বিষ মিশিয়ে দিতে পারে। সুরেশের বিবেকের বিষয়ে প্রায় সবাই একমত। সবটা মিলিয়ে মনে হয়—এ ডেনমার্কে কোথাও কিছু একটা পচেছে। গন্ধটা পাওয়া যাচ্ছে, উৎসটা বোঝা যাচ্ছে না, তাই নয়?

স্বীকার করতে হলো, আমি একমত মামু।

—তুমি কিন্তু বদলে যাচ্ছ কৌশিক। এ মত গোড়ায় ছিল না তোমার। বল তো, তোমার মতটা ঠিক কোন মুহূর্ত থেকে বদলে গেল?

একটু ভেবে নিয়ে বলি, না। হঠাৎ বাঁক নেয়নি, ইটস্ আ কন্টিনিউয়াস্ কার্ভ। ধীরে ধীরে আমি আপনার সঙ্গে একমত হয়ে গেছি। বোধ করি স্থির-নিশ্চয় হয়েছি যখন হেনা ছুটে এসে তার ‘গোপন কথা’ বলতে চেয়েছিল—প্রীতমকে দেখে কথা ঘোরালো। মনে হলো ও একটা দারুণ আতঙ্কের মধ্যে আছে—

—আতঙ্ক! কাকে ওর ভয়? আমাকে?

—প্রথমে আমার তাই মনে হয়েছিল। প্রথম সাক্ষাতেই যখন আপনি মিস জনসনের ‘মৃত্যু’র কথা তুললেন, তখনই ও সাদা হয়ে গেছিল—যেন সেই মৃত্যু-রহস্য সম্বন্ধে সে কিছু একটা কথা জানে। ঠিক পরমুহূর্তেই সে স্বাভাবিক হলো, যখন দেখল—না, ‘মৃত্যু’ নয়, আপনি তার ‘উইলটা’র বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়েছেন। পরে আমার মনে হয়েছে, ওর আতঙ্কের উৎস-ওর স্বামী। প্রীতমকে সে দারুণ ভয় করে। আমি হলপ নিয়ে বলতে পারি—পঁচিশে এপ্রিল প্রীতম যে মরকতকুঞ্জে গেছিল তা ফিরে এসে তার স্ত্রীকে বলেনি।

—আর সুরেশ? সে কি বলেছিল টুকুকে যে, দ্বিতীয় উইলটা সে স্বচক্ষে দেখেছে?

—হ্যাঁ! এখানে স্মৃতিটুকুই মিথ্যেবাদী! সে জানতো! আর তাতেই সে বলেছিল ‘ইউ ফুল’!

—ঐ ‘ব্লু’-টার সাহায্য তো তোমার নেওয়ার কথা নয় কৌশিক। আড়িপাতা ‘ক্রিকেট’ নয়।

—’বডিলাইন বোলিং ইজ নট ক্রিকেট আইদার!’

—হুঁ। মনে হচ্ছে আমার ঠাঁই বদল করেছি!

—উনি নীরবে ধূমপান করতে থাকেন। কিছুক্ষণ নীরবতার পর বলি, কী ভাবছেন?

—অনেকের কথা। ইন্সপেক্টর রবি বোস, দারুণ স্মার্ট জয়দীপ রায়। …

ঠিক সেই মুহূর্তে আমার মনে পড়লো না, ওরা কারা। জানতে চাই, তার মানে?

—সমস্ত ব্যাপারটা পরপর সাজিয়ে দেখো কৌশিক-

বাধা দিয়ে বলি, একই কথা বারে বারে বলে কী লাভ?

—না, খুব সংক্ষেপে সারবো। প্রথম কথা : বুড়িকে হত্যা করার যে একটা চেষ্টা হয়েছিল—সিঁড়িতে একটি মৃত্যুফাঁদ পেতে—এটা তুমি এখন মেনে নিচ্ছো?

—হ্যাঁ। এ সম্বন্ধে সন্দেহের আর অবকাশ নেই।

—তাহলে তার অনিবার্য অনুসিদ্ধান্ত, একজন হত্যাপ্রয়াসীর অস্তিত্ব। য়্যু কান্ট হ্যাভ অ্যাটেম্পটেড মার্ডার, উইদাউট আ মার্ডারার! সে রাত্রে কেউ ঐ মৃত্যুফাঁদটা পেতেছিল।

—মেনে নিলাম।

—প্রশ্ন হচ্ছে, প্রথমবার ব্যর্থ হয়ে সে কি থেমে গেছিল?…বাধা দিও না কৌশিক….আমি জানি, ডক্টর পিটার দত্ত বলেছেন—পামেলার মৃত্যু স্বাভাবিক। প্রথম কথা, পতনজনিত দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে কার লাভ হতো?

—মিস্ মাইতি বাদে সকলেরই।

—ঠিক কথা! অথচ ঐ পতনজনিত দুর্ঘটনাই হয়তো মূল হেতু যার জন্য মিস্ জনসন উইলটা পালটে দিলেন। যাকে বাদ দিতে চাই একমাত্র সেই হল লাভবান।

—তার মানে কাকে সন্দেহ করছেন আপনি?

—সেটা পরের কথা। এখন আমাদের বিচার্য বিষয় ‘কার্য-কারণ সম্পর্ক’! পর পর চিন্তা করে দেখো। দুর্ঘটনার পরেই কী ঘটলো?

—মিস্ জনসন শয্যা নিলেন। অতিথিদের সবিনয়ে কিন্তু দৃঢ়ভাবে বিতাড়ন করলেন। দশদিন তিনি চিন্তা করলেন। তাঁর অ্যাটর্নিকে আসতে বললেন আর আপনাকে চিঠি লিখলেন।

—হ্যাঁ, কিন্তু চিঠিখানা ডাকে দিলেন না। কেন? ভুলে গেলেন? অথচ প্রবীর চক্রবর্তীকে লেখা চিঠিখানি তো ডাকে দিতে ভোলেননি।

—কী জানি। আমি তার কোনও কার্য-কারণ সম্পর্ক খুঁজে পাচ্ছি না।

—আমার একটা আন্দাজ হচ্ছে। উনি চিঠিপত্র লিখে হয়তো সচরাচর ওঁর সহচরীকে ডাকে দিতে দিতেন। কিন্তু আমার চিঠিখানি তাকে দিতে চাননি। হেতু, উনি মিস্ মাইতিকেও জানাতে চাননি যে, পি. কে. বাসুকে তিনি একটি চিঠি লিখেছেন। বুড়ি ওর চরিত্রটা ঠিক জানতো কি না জানি না—অর্থাৎ সে নির্বোধ না অত্যন্ত চতুর—কিন্তু এ-কথা জানতো যে, সে পি. কে. বাসুর ‘ফ্যান’, ‘কাঁটা সিরিজ’-এর পোকা।

—সম্ভবত আপনার ডিডাকশান ঠিক।

—সম্ভবত। বুড়ি চিঠিখানা তোশকের তলায় রেখে দিয়েছিল, সুযোগমত ছেদিলাল বা তার বৌয়ের হাতে ডাকে পাঠাবে বলে। তারপর ভুলে যায়। যাহোক তারপর কী হলো?

—হেনা আর প্রীতম আঠারই দেখা করে গেল। সম্ভবত তিনি তাদের জানাননি প্রবীরবাবু বা আপনাকে চিঠি লেখার কথা।

—মোস্ট প্রব্যাবলি! তারপর?

—উকিলবাবুর আবির্ভাব। দ্বিতীয় উইল প্রণয়ন। একুশে এপ্রিল।

—ইয়েস! পরের সপ্তাহে, পঁচিশে এল টুকু আর সুরেশ। কর্ত্রী নিঃসন্দেহে সুরেশকে উইলখানি দেখিয়েছিলেন—

—সে সিদ্ধান্তের একটিই এভিডেন্স! সুরেশের স্বীকৃতি—

—না! মিন্টির স্টেটমেন্টও! মিন্টি কান পেতে ওঁদের কথোপকথনটা শুনেছিল। না হলে তার পক্ষে কথাগুলো ভার্বাটিম বলা সম্ভবপর হতো না—’ওর বাবা আর বোনেরা শান্তি পাবেন না তাঁদের রক্ত জলকরা টাকা কেউ যদি উড়িয়ে-পুড়িয়ে দেয়’, অথবা ‘প্রীতমের মতো ফাটকাবাজি করে—’

—ও ইয়েস! মিস্ জনসন উইলটা সুরেশকে দেখিয়েছিলেন। ঐ আলোচনা হয়েছিল দুজনের মধ্যে। সুরেশের সঙ্গে টুকুর যে সম্পর্ক তাতে সুরেশ নিশ্চয় তার বোনকে ব্যাপারটা জানিয়েছিল। অথচ স্মৃতিটুকু সে-কথা কিছুতেই স্বীকার করলো না।

—বাট হোয়াই? কেন?

—সেটা বুঝে উঠতে পারছি না।

–দ্যাটস্ আ ভাইটাল ব্লু, কৌশিক! কেন টুকু বারেবারে অস্বীকার করলো যে, সুরেশ তাকে ও-কথা বলেনি!

স্বীকার করতে হলো, আমার সব গুলিয়ে যাচ্ছে মামু!

—ঠিক আছে। তারপর কী হলো? ঐ পঁচিশে প্রীতম ঠাকুরও এসেছিল। ঘণ্টাখানেক মরকতকুঞ্জে ছিল, অথচ সে ফিরে গিয়ে সেকথা তার স্ত্রীকে বলেছিল? হেনা মিথ্যা কথা লছে?

—না মামু! এখানে ডক্টর ঠাকুরই মিথ্যাবাদী। হেনা জানতো না যে, তার স্বামী পঁচিশে ঘণ্টাখানেকের জন্য মেরীনগর ঘুরে এসেছে। আমি নিশ্চিত।

—বরং ধরে নেওয়া যায় খুব সম্ভবত হেনা জানতো না। তারপর কী ঘটলো? শনিবারেই প্রীতম কলকাতা ফিরে গেল। টুকু আর সুরেশ ফিরে গেল সোমবার—সাতাশে। পরদিন বসলো প্ল্যানচেটের আসর।

— পরদিনই ধরে নিচ্ছেন কেন?

—যেহেতু মিস্ ঊষা বিশ্বাস বলেছিলেন ‘মঙ্গলবার’। শনি-মঙ্গলই এসব ব্যাপারের প্রশস্ত বার। সুতরাং পরদিনই মঙ্গলবার। আঠাশ তারিখে মিস্ জনসন প্ল্যানচেটের আসর থেকে লুটিয়ে পড়ে গেলেন। তাঁকে বিছানায় শুইয়ে দেওয়া হলো। ডাক্তার এলো। পরীক্ষা করে বললো, অ্যাকিউট কেস অব জনডিস! তার তিনদিন পরে মিস্ জনসন মারা গেলেন আব মিস মাইতি হয়ে গেল—সুতৃপ্তির বয়ের ভাষায় ‘ছপ্পড়ফোড় মালকিন’। এবং সমস্ত বিবরণটা শ্রবণান্তে সুকৌশলীর সিনিয়ার পার্টনার বললেন, স্বাভাবিক মৃত্যু!

আমার আর সহ্য হল না। বলে উঠি, সেই সিনিয়ার পার্টনারের গুরু কোন এভিডেন্স ব্যতিরেকেই সিদ্ধান্তে এলেন, বিষ-প্রয়োগে হত্যা!

মামু রাগ করলেন না। বললেন, না! বিনা এভিডেন্সে নয়, কৌশিক। মিস্ জনসনের মুখ থেকে সাপের মতো কুণ্ডলী পাকিয়ে কিছু একটা বার হয়েছিল—’লুমিনাস, অর্থাৎ প্রোজ্জ্বল, দীপ্তিময়, জোনাকির আলো হলুদরঙের হলে যেমন হয়’, তাই নয়? একথা মিস্ বিশ্বাস একা বলেননি। মিনতি মাইতি তা করবোরেট করেছে।

—তাতে কী হলো? অ্যাকিউট কেস অব জনডিসে এমন হয় না?

বাসু-সাহেব জবাব দিলেন না।

বলি, খোলাখুলি বলুন তো মামু? আপনি কি সন্দেহটা সূচীমূল করতে পারছেন না আমার মতো?

—না কৌশিক। আমার সন্দেহভাজন ব্যক্তি একজনই। কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছি!

—ভয় পাচ্ছেন? সে পালিয়ে যেতে পারে বলে?

—না! মরিয়া হয়ে সে দ্বিতীয় আর একটি খুন করে বসতে পারে বলে!

—দ্বিতীয় খুন! কে? কাকে?

সে কথার জবাব না দিয়ে উনি বললেন, রহস্য উদ্ঘাটনের কথা আর আমি ভাবছি না কৌশিক, ভাবছি এই দ্বিতীয় হত্যাটা কী ভাবে ঠেকানো যায়।

১৪

বেলা তিনটের সময় ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রিটে অ্যাটর্নি প্রবীর চক্রবর্তীর সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করাই ছিল।

কিন্তু মামু বললেন একবার নিউ আলিপুরের ডেরায় যেতে হবে। তাঁর কিছু কাজ আছে। তাছাড়া দুপুরে বাইরে খাওয়ার কোনও কথা ছিল না। বিশু আমাদের ভাত আগলে বসে থাকবে, নিজেও খাবে না।

অগত্যা এলগিন রোড থেকে ফিরে আসতে হলো নিউ আলিপুরের বাড়িতে।

সেখানে পৌঁছাতেই শোনা গেল বৈঠকখানায় এক বাবু বসে আছেন বাসু-মামুর প্রতীক্ষায়। বৈঠকখানায় নয়, মামুর চেম্বারে। দুজনে তাই সেখানেই গেলাম প্রথমে।

একটু আশ্চর্য হলাম সুরেশ হালদারকে দেখে। সে নাকি ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করছে।

মামু তাঁর চেয়ারে বসতে বসতে বললেন, কী ব্যাপার? সুরেশবাবু যে …

জানতে এলাম স্যার, কতদূর কী হচ্ছে এদিকে?

—আহারাদি হয়েছে?

—হ্যাঁ স্যার, আপনারা বরং খেয়ে-দেয়ে নিন, তারপর কথা হবে।

—না। অনেকক্ষণ বসে আছো, এসো, কথাবার্তা যেটুকু আছে তা আগেই সেরে ফেলি।

—আপনি কিছু ফন্দি-ফিকির বার করতে পারলেন?

—উইলটাই তো এখনো দেখিনি। আজ বিকালে দেখবো। আচ্ছা সুরেশ, তোমরা কি মিনতি মাইতির সঙ্গে কোনো কথাবার্তা বলেছো?

—বৃথা চেষ্টা। সে রীতিমতো উকিলের পরামর্শে চলছে। ও আমাদের দুজনকে দু’চক্ষে দেখতে পারে না। সোজা আঙুলে ওর কাছ থেকে ঘি বার করা যাবে না—

—তার মানে আঙুল বাঁকাতেই হবে?

—আমার আঙুলগুলো এমনিতেই বাঁকা-বাঁকা স্যার, আপনার মদত পেলে—

—মদত পেলে? কী জাতীয় সমাধানের কথা ভাবছো তুমি?

—কিছুই মাথায় আসছে না স্যার। মিন্টিকে হুমকি দিলে কি কিছু কাজ হবে?

—হুমকি? হুমকিতে কি কাজ হয় সুরেশ? বড়পিসিকে তো দিয়ে দেখেছিলে? সুরেশ একটু অবাক হয়ে বললে, আপনি তা কেমন করে জানলেন?

—তাহলে ব্যাপারটা আদ্যোপান্ত বানানো নয়? সত্যি কথাটা বলবে?

—বলবো। বড়পিসিকে হুমকি দিইনি আমি। সহজ কথাটা সরল করে বলে ফেলেছিলাম শুধু। বলেছিলাম—তোমার শরীর দুর্বল, একা-একা থাকো, উইল করে যা আমাদের দেবে তার থেকে আগে-ভাগে কিছু দিয়ে দেওয়াই ভালো নাকি? আমাদের চারজনের অবস্থাই সঙ্গিন। মানুষ মরিয়া হয়ে উঠলে হিতাহিত জ্ঞান হারায়। শেষে তোমার কিছু ভালোমন্দ না হয়ে যায়।

—হ্যাঁ, এটা একটা সহজ কথা এবং সরল করেই বলা। তা শুনে তিনি কী বললেন?

—বড়পিসি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছিলেন, শরীর দুর্বল হলেও সে নিজেকে রক্ষা করতে জানে। তারপর আমাকে সোজা দরজা দেখিয়ে দিল।

—বুঝলাম। আচ্ছা তুমি কি জানো যে, ডক্টর ঠাকুর পঁচিশে, শনিবার মরকতকুঞ্জে গিয়েছিল, ঘণ্টাখানেক মাত্র ছিল?

—না! কে বললো?

—ডক্টর ঠাকুর নিজেই।

—বেচারি! সে নিশ্চয় বড়পিসির কাছে দরবার করতে গেছিল। চিঁড়ে ভেজেনি।  বলুন স্যার, এরকম মরিয়া হয়ে গেলে মানুষ খুন করার কথা ভাবে না? আমি বড়পিসিকে ফাঁকা হুমকি দেখিয়েছি?

—না! তবে একথাও বলবো, মানুষ মরিয়া হয়ে গেলে শুধু ‘হত্যার কথাই ভাবে না। তুমি ভাবো কি না, সে-কথা তুমিই বলতে পারবে।

একগাল হাসলো সুরেশ। বললে, ওভাবে আমাকে দিয়ে কিছু স্বীকার করিয়ে নিতে পারবেন না, বাসু-সাহেব। আমি কোনওদিন বড়পিসির স্যুপে আরসে—

—স্যুপে?

—স্ট্রিকনিন্-বিষ মেশাইনি। যাক, আপনাদের লাঞ্চের দেরি হয়ে যাচ্ছে। আজ চলি। হাসতে হাসতেই বিদায় নিল সে।

বলি, আপনি কি ওকে ভয় দেখাতে চেয়েছিলেন মামু? ও কিন্তু একটুও ভড়কায়নি।

—তাই মনে হল তোমার? ঐ ক্ষণিক বিরতিটুকু সত্ত্বেও?

—ক্ষণিক বিরতি? কখন?

—‘বড়পিসির স্যুপে’ বলে ও হঠাৎ থেমে গেল না?

—হয়তো একটা তীব্র বিষের নাম ওর মনে আসছিল না।

—হতে পারে। কিন্তু সবচেয়ে সহজ নামটা ওর মনে পড়ল না। কেন?

—সবচেয়ে সহজ নাম? কী? পটাসিয়াম সায়ানাইড?

—সেটা দুর্লভ। আর কোন নাম?

—আর্সেনিক?

—আমার যেন তাই মনে হল। ‘আর্সেনিক’ বলতে গিয়েই ও থেমে গেছিল, ঘুরিয়ে নিয়ে বাক্যটা শেষ করলো ‘স্ট্রিকনিন্’ প্রয়োগ করে। যা হোক চলো, খেয়ে নেওয়া যাক। বিশু ইতিমধ্যে বার দুই উঁকি মেরে গেছে।

আহারান্তে ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রিট। চক্রবর্তী, চ্যাটার্জি অ্যান্ড সন্স বেশ নামকরা সলিসিটার্স ফার্ম। বর্তমানে সিনিয়ার পার্টনার প্রবীর চক্রবর্তী প্রৌঢ় মানুষ। আমাদের আপ্যায়ন করে বসিয়ে মামুকে বললেন, মিস্ স্মৃতিটুকু হালদার টেলিফোন করে জানিয়েছিলেন যে, আপনারা আমার কাছে আসছেন। ওরা ভাইবোনে নাকি আপনাকে নিয়োগ করেছে; কিন্তু কী উদ্দেশ্য নিয়ে এটা আমি বুঝে উঠতে পারিনি এখনো।

—ধরুন সমস্ত ব্যাপারটা নিয়ে একটা গোপন তদন্ত করে দেখতে।

—মিস্ হালদার এবং সুরেশ ইতিপূর্বেই আমার সঙ্গে আলোচনা করে গেছে। আমি ওদের বলেছি, আইনের দিক থেকে ওদের কিছুই করার নেই। দ্বিতীয় উইলখানি প্রণয়নের বিষয়ে তদন্তের কোনও অবকাশ নেই।

—বটেই তো। তা হলেও আপনি যদি আমার কিছু কৌতূহল দূরীভূত করেন তাহলে কৃতার্থ হই। দায়িত্বটা যখন নিয়েছি—

আয়াম অ্যাট য়োর সার্ভিস।

—আমার খবর, মিস জনসন আপনাকে দ্বিতীয় উইলখানা তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন সতেরই এপ্রিল, তাই নয়?

ফাইলের কাগজপত্র দেখে নিয়ে উনি বললেন, হ্যাঁ, চিঠির তারিখ সতেরই এপ্রিল।

—উনি আপনাকে একটি নতুন উইল তৈরি করার কথা বলেছিলেন একথা আমি জানি। আপনি সেটা কোথায় বানালেন? মরকতকুঞ্জে গিয়ে?

—না। মিস জনসন আমাকে অনুরোধ করেছিলেন সব কিছু তৈরি করে, স্ট্যাম্প কাগজে টাইপ করে নিয়ে যেতে, যাতে উনি সই করে দিতে পারেননি ‘প্রভিশন্স’ খুব সরল ছিল, নির্দেশও স্পষ্ট—মানে ঝি-চাকরদের কাকে কত দিতে হবে, চ্যারিটেব্ল ফান্ডে কোথায় কত—এবং বাকি সমস্ত স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তি ঐ ওঁর সহচরীকে। ফলে উইলটা কলকাতাতেই টাইপ করে ফেলতে কোনও অসুবিধা হয়নি আমার।

—মাপ করবেন মিস্টার চক্রবর্তী। চিঠির নির্দেশটা পেয়ে আপনি বেশ অবাক হয়ে গেছিলেন, নয়?

—অস্বীকার করবো না, তা হয়েছিলাম।

—উনি এর আগে আর একটি উইল করেছিলেন, আপনার মাধ্যমেই, তাই নয়?

-–হ্যাঁ, বছর পাঁচেক আগে। ওঁর সব আইনঘটিত কাজ আমার মাধ্যমেই হতো।

—আর সেই উইল মোতাবেক সম্পত্তিটা ওঁর তিন আত্মীয়ের সমান ভাগে পাওয়ার কথা ছিল।

—না, সমান ভাগ নয়। অর্ধাংশ পেত হেনা ঠাকুর, এক-চতুর্থাংশ করে স্মৃতিটুকু আর সুরেশ।

–সেই উইলখানা কী হল?

—সেটা বরাবর আমার কাছেই ছিল। মিস জনসনের নির্দেশ মতো আমি সেখানিও নিয়ে যাই—ঐ একুশে এপ্রিল তারিখে।

—আপনি যদি সেই একুশ তারিখের ঘটনাগুলি একটু বিস্তারিত জানান তাহলে আমার খুব সুবিধা হয়।

—আপত্তি নেই। একুশ তারিখ আর্লি লাঞ্চ সেরে আমি কলকাতা থেকে সরাসরি আমার গাড়িতে যাই। ওখানে পৌঁছাই তিনটে নাগাদ। সঙ্গে ছিল আমার ল-ক্লার্ক আর ড্রাইভার। মিস জনসন নিচের ঘরে আমাদের প্রতীক্ষা করছিলেন। টেলিফোনে আমি জানিয়েছিলাম—তিনটার সময় পৌঁছাবো।

—ওঁকে কেমন দেখলেন? শারীরিক ও মানসিক?

—শরীর ভালোই ছিল; যদিও একটা লাঠি নিয়ে হাঁটছিলেন। ইতিপূর্বে তাঁকে কখনো লাঠি ব্যবহার করতে দেখিনি। মানসিকভাবে তিনি কিছু উত্তেজিত ছিলেন, কিন্তু তাঁর ভিক্টোরিয়ান স্থিতপ্রজ্ঞতা ছিল বিস্ময়কর—সে উত্তেজনা সহজে নজরে পড়ছিল না।

—মিস মিনতি মাইতিও ছিল সেখানে?

—হ্যাঁ, যখন আমরা পৌঁছাই। তারপরে কর্ত্রীর নির্দেশে সে চলে যায়।

—তারপর?

—উনি জানতে চাইলেন, উইলটা আমি তৈরি করে এনেছি কিনা। আমি ‘হ্যাঁ’ বলাতে সেটি উনি দেখতে চাইলেন। আদ্যন্ত ধীরে ধীরে সবটা পড়ে যখন সই করতে গেলেন, তখন…

—তখন?

—না। সব কথাই স্বীকার করবো, তখন আমি ওঁকে বলেছিলাম, কাজটা কি ভালো হচ্ছে? আপনি ভেবে চিন্তে দেখেছেন তো এভাবে আপনার পরিবারের সবাইকে বঞ্চিত করাটা ঠিক উচিত হচ্ছে কিনা? জবাবে উনি বললেন, আমি কী করতে যাচ্ছি তা আমি জানি।

—উনি খুব উত্তেজিত ছিলেন, তাই নয়?

—তা ছিলেন; কিন্তু হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে যাবার মতো উত্তেজিত ছিলেন না। স্মৃতিটুকু, সুরেশ, হেনাদের আমি ওদের ছেলেবেলা থেকেই দেখেছি। তাদের প্রতি আমার পূর্ণ সহানুভূতিও আছে; কিন্তু উকিল হিসাবে আমাকে বলতেই হবে–মিস জনসন যা করেছেন তা আইনসম্মত। নিজের সম্পত্তি দেখাশোনা করার ক্ষমতা ও মানসিক স্থৈর্য তাঁর শেষ পর্যন্ত ছিল। যে কথা বলছিলাম—উনি কলমটা বার করে সই করতে গিয়েও একবার থামলেন, জানতে চাইলেন—’আমি যা করছি, তা করবার আইনত অধিকার আমার আছে?’ আমি স্বীকার করতে বাধ্য হলাম। তখন উনি বললেন, ‘তাহলে আপনার ল-ক্লার্ক আর ড্রাইভারকে ডাকুন, তাদের সামনে আমি স্বাক্ষর করবো।’ আমি ওদের ডেকে আনলাম, তাদের সামনে উনি সই দিলেন।

—তারপর? উইলটা উনি আপনাকে রাখতে দিলেন?

—না, আগের উইলখানা যদিও বরাবর আমার কাছে গচ্ছিত ছিল, তবু এখানা উনি নিজের কাছেই রাখলেন। ওঁর ঘরে যে আলমারি আছে তার ভিতর।

—আর পুরোনো উইলখানা? যেটা বাতিল হলো? সেটা ছিঁড়ে ফেললেন?

—না। সেখানাও উনি একই আলমারিতে তুলে রাখলেন।

—এই অদ্ভুত আচরণের হেতুটা কী, তা আপনি জানতে চাননি?

–চেয়েছিলাম। উনি জবাবে একই কথা বললেন : আমি জানি, আমি কী করছি।

—আপনি বিস্মিত হয়েছিলেন! তাই নয়?

—হ্যাঁ। কারণ আমি নিশ্চিতভাবে জানতাম ওঁর ‘ফ্যামিলি ফিলিংস’ খুব গভীর!

—সেই প্রথম উইলখানা কি ওঁর মৃত্যুর পর খুঁজে পাওয়া যায়নি?

—না, গিয়েছিল। এক্সিকিউটার হিসাবে ওঁর আলমারির একটি চাবি আমার কাছে বরাবরই থাকতো। ওঁর মৃত্যুর পর সকলের সামনে আমি যখন আলমারি খুলি তখন দুটি উইলই দেখতে পাই—ঠিক যেভাবে উনি গুছিয়ে রেখেছিলেন, সেভাবেই।

—মিস মিনতি মাইতি কি জানতো যে, কর্ত্রী তাকেই সব কিছু দিয়ে দ্বিতীয় একখানি উইল করেছেন?

—রুদ্ধদ্বার কক্ষে আমরা কিছু একটা করছিলাম, এটুকুই সে জানতো। কী করছিলাম, তা জানতো না।

—মিস্টার চক্রবর্তী, আপনি কি আপনার মক্কেলকে বলেছিলেন, দ্বিতীয় উইলের ‘প্রভিশন্স’ তাঁর সহচরীকে না জানাতে?

উনি হাসলেন। সংক্ষেপে বললেন, বলেছিলাম।

—কেন? এ পরামর্শ কেন দিয়েছিলেন?

ওঁর হাসিটা মিলিয়ে গেল না। বললেন, হেতুটা আপনি জানেন, আপনি আইনজীবী। এবং জানেন, এসব কথা আলোচনা না করাই ভালো। তাই মূল হেতুটা এড়িয়ে আপনার প্রশ্নের কৈফিয়ত হিসেবে আমি বলবো, যদি আমার মক্কেল তৃতীয়বার উইলটা বদল করেন তখন মিস মাইতি মর্মাহত হবে। এ জন্যই আমার মক্কেলকে বারণ করেছিলাম।

—তার মানে আপনি ভেবেছিলেন যে, আপনার মক্কেলের পক্ষে অচিরেই দ্বিতীয় উইলখানা বদল করার প্রয়োজন হতে পারে?

—ঠিক তাই। আমার মনে হয়েছিল—পরিবারের প্রত্যাশিত ওয়ারিশদের সঙ্গে আমার মক্কেলের কোনও কারণে কিছু মনোমালিন্য হয়ে থাকবে। উনি যখন ঠাণ্ডা হয়ে যাবেন তখন আমাকে ডেকে পাঠাবেন তৃতীয় উইল করবার প্রয়োজনে।

—আপনার কি একথা মনে হয়নি যে, মিস জনসন সে পদক্ষেপ করবার বদলে হয়তো প্রথম উইলখানা রেখে দ্বিতীয়খানা শুধু ছিঁড়ে ফেলবেন?

—মিস্টার বাসু, আপনি আইনজ্ঞ-আপনি জানেন যে, দ্বিতীয় উইল করা মাত্র তাঁর প্রাথমিক উইলখানি আইনের চোখে বাতিল হয়ে গেছে।

—কিন্তু আপনার মক্কেল আইনজ্ঞ ছিলেন না। এই আইনের খুঁটিনাটি হয়তো তাঁর জানা ছিল না। তাছাড়া দ্বিতীয় উইলখানি পাওয়া না গেলে—স্বাভাবিক ওয়ারিশ হিসাবেই ওরা তিনজন সম্পত্তিটা পেতো। নয় কি?

—দ্যাটস্ আ ডিবেটেবল পয়েন্ট। কিন্তু ঘটনা তো সেই খাতে বয়নি। দু’খানি উইলই যথাস্থানে রাখা ছিল।

—এমন কি হতে পারে না যে, মৃত্যুশয্যায় তিনি প্রথম উইলখানি ছিঁড়ে ফেলতে চেয়েছিলেন–হয়তো একটা ‘ডামি-উইল’ ছিঁড়েও ফেলেছিলেন? শেষ সময়ে, মৃত্যুসময়ে কে বা কারা উপস্থিত ছিলেন তা আপনি জানেন। তারাই হয়তো ওঁর নির্দেশে দেরাজ খুলে উইল দুটি বার করে এনেছিল—

প্রবীর চক্রবর্তী বাধা দিয়ে বললেন, মাপ করবেন মিস্টার বাসু, এসব কথা কি আপনি আদালতে প্রমাণ করতে পারবেন?

বাসু নীরব রইলেন। প্রবীরবাবু এবার নিজে থেকেই বলেন, এমন ঘটনা ঘটেছিল বলে মনে করেন আপনি?

—মাপ করবেন। এই পর্যায়ে আমি কিছুই বলতে চাই না। আপনাকে শুধু একথাই বলবো যে, ব্যাপারটার গভীরে একটা কিছু আমার নজরে পড়েছে। তারই তদন্ত করছি আমি।

—বুঝেছি। কিন্তু আপনার মক্কেলটি কে? মিস হালদার না সুরেশ?

—ওদের দু’জনের একজনও নয়?

—তার মানে মিসেস হেনা ঠাকুর?

—আজ্ঞে না, তাও নয়। আমার মক্কেল : মিস পামেলা জনসন। আপনাকে যেদিন চিঠি লিখে দ্বিতীয় উইলখানি বানাতে বলেন সেইদিনই তিনি আমাকে একটি চিঠি লেখেন। না, না, আপনি যা ভাবছেন তা নয়। আইনঘটিত কোনও কিছু নয়। তিনি আমাকে একটি বিষয়ে তদন্তের ভার দেন। আমার ক্লায়েন্ট অবশ্য মারা গেছেন; কিন্তু অসমাপ্ত কাজটা শেষ না করে আমি তৃপ্ত হতে পারছি না। আমি আপনার কাছে এসেছিলাম জানতে যে, আপনার কি মনে হয়নি—উনি অদূর ভবিষ্যতে আবার একটি উইল বানাতে চাইবেন। আপনি আমার সে কৌতূহল চরিতার্থ করেছেন।

প্রবীরবাবু মাথা নেড়ে বললেন, আমি শুধু আমার ব্যক্তিগত অনুমানটা আপনাকে জানিয়েছি মাত্র। আমার ধারণার স্বপক্ষে কোনও এভিডেন্স নেই কিন্তু—

—দ্যাটস্ পার্ফেক্টলি আন্ডারস্টুড, মাই ডিয়ার স্যার।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *