সামনে সমুদ্র নীল – পরিচ্ছেদ ৩

০৩.

কলকাতা শহরে তখন প্রচণ্ড তাপদাহ চলেছে কয়েক দিন ধরে একটানা। জুনের সেটা গোড়ার দিক। আটত্রিশ থেকে চল্লিশ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। সকাল যেন দেখতে দেখতে গড়িয়ে দুপুর হয়ে যায়।

দুপুরের দিকে যেন পশ্চিমের মত লু চলে, রাস্তায় বেরুলে হাত পা মুখ ঝলসে যায়। কিরীটীর বাড়ির কলিং বেলটা ডিং ডিং শব্দে বেজে উঠল।

জংলীই এসে দরজাটা খুলে দিল। সামনে দাঁড়িয়ে ট্যাক্সি একটা, এক ভদ্রমহিলা নামছেন ট্যাক্সি থেকে। পরনে সরু কালোপাড় একটা শাড়ি, মাথায় ঘোমটা টানা। দুহাতে তিনগাছা করে ক্ষয়ে যাওয়া সোনার চুড়ি, মাথায় বা সিঁথিতে সিঁদুর নেই। বয়স হয়েছে আগন্তুক ভদ্রমহিলার, তিপান্ন থেকে চুয়ান্ন হবে। কিরীটীর সঙ্গে দেখা করতে চায় শুনে জংলী তো প্রথমটায় কিছুতেই সম্মত হয় না। বলে, না, এখন দেখা হবে না।

মহিলা কাকুতিমিনতি করতে থাকেন। বিশেষ প্রয়োজনে এসেছেন, একটিবার তাকে দেখা করতেই হবে। জংলী অনিচ্ছাসত্ত্বেও মহিলাকে বাইরের ঘরে এনে বসাল।

কিরীটী জেগেই ছিল তার মেজোনিন ফ্লোরের বসবার ঘরে। ডিভানে শুয়ে একটা বই পড়ছিল। জংলী এসে ঘরে ঢুকল।

বাবু!

কি রে?

একজন মেয়েছেলে এসেছেন, আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান।

এই দুপুরের প্রচণ্ড রৌদ্রে কেউ যে দেখা করতে আসতে পারে, বিশেষ কোন প্রয়োজন না থাকলে বুঝতে পারে কিরীটী, তাই জংলীকে ঐ ঘরেই ভদ্রমহিলাকে নিয়ে আসতে বলল।

ভদ্রমহিলা ঢুকতেই কিরীটী তার আপাদমস্তকে দৃষ্টি বুলিয়ে নিল। তার বুঝতে কষ্ট হয় না, এখন বয়স হলেও আগন্তুক মহিলা যৌবনে মোটামুটি দেখতে সুন্দরীই ছিলেন। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, সামান্য লম্বাটে ধরনের মুখের গঠন, চোখেমুখে বয়সের ছাপ অনিবার্য ভাবেই পড়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও চেহারার প্রতি যে তার একটা সযত্ন প্রয়াস আছে সেটা ওর দিকে তাকালেই বোঝা যায়।

বসুন।

মহিলা সামনের সোফাটার উপরে বসে ব্যাগ থেকে ছোট একটি রুমাল বের করে তার মুখের ঘামটা মুছে নিলেন।

মিঃ রায়, আমি আপনাকে চিনি না, কেবল আপনার নামের সঙ্গেই আমার যা পরিচয়। একটা বিশ্রী রকম সংকটে পড়ে আপনার শরণাপন্ন হয়েছি, আপনি যদি দয়া করে আমাকে সাহায্য করেন।

কি হয়েছে?

ভদ্রমহিলা তখন সংক্ষেপে তার স্বামীর তিন বৎসর আগে পুরীর এক হোটেলে আত্মহত্যার কথা বললেন ও সেই সঙ্গে নিজের সংক্ষিপ্ত পরিচয়ও দিলেন।

বললেন, তিন বৎসর আগে যে দুঃখের ও লজ্জার ব্যাপারটা ঘটে গিয়েছিল, এত বছর পর যে আবার সেই ব্যাপারটায় এমনি করে একটা সঙ্কট সৃষ্টি হবে ভাবতেও পারিনি। যাকে এই তিনটে বছর জেনে এসেছি মৃত বলে, তারই কাছ থেকে যে এমন একটা চিঠি পাব কেমন করে ভাবব বলুন!

চিঠিটা আপনার সঙ্গে আছে?

আছে, এই যে—মালতী ব্যাগ থেকে মুখ-ছেড়া টিকিট লাগানো সাদা খাম বের করে কিরীটীর হাতে তুলে দিলেন।

জামসেদপুরের ঠিকানা ও মালতী দেবীর নাম লেখা খামটার উপরে হাতের লেখায়। খাম থেকে চিঠিটা বের করে কিরীটী পড়ল। সংক্ষিপ্ত একটা হাতে লেখা চিঠি লেখাটা পুরুষের হাতের বলেই মনে হয়।

এ চিঠি আপনি বলছেন আপনারই স্বামীর লেখা? প্রশ্নটা করে কিরীটী তাকাল মালতী দেবীর মুখের দিকে।

হ্যাঁ, তারই হাতের লেখা।

লেখাটা চিনতে আপনার কোন রকম ভুল হয়নি তো মালতী দেবী?

না, ওটা আমার স্বামীরই হাতে লেখা। সে বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই।

আপনার স্বামীর লেখা অন্য কোন চিঠিপত্র আপনার কাছে আছে?

আছে। আমি নিজেও মিলিয়ে দেখেছি, আপনিও দেখুন—বলে গোটা দুই পুরাতন চিঠি মালতী কিরীটীর হাতে তুলে দিলেন।

কিরীটী সব চিঠিগুলো দেখে বুঝতে পারে একই ব্যক্তির লেখা প্রত্যেকটি চিঠি। মালতী দেবী, আপনি তাহলে বিশ্বাস করেন আপনার স্বামী আজও বেঁচে আছেন? অর্থাৎ তিন বছর পূর্বে পুরীর হোটেলে যিনি ক্ষুর চালিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন, তিনি অন্য কোন তৃতীয় ব্যক্তি!

মালতী দেবী বললেন, ঐ চিঠিটা পাবার পর তা ছাড়া আর অন্য কি ভাবতে পারি বলুন। আপনিও তো চিঠিগুলো দেখলেন, আপনারও কি তাই মনে হয় না?

হ্যাঁ, তাই মনে হয় বটে, তবে কথা হচ্ছে—

কি বলুন?

আপনি একটু আগে তিন বছর আগে পুরীর এক হোটেলের মধ্যে যে ঘটনাটা ঘটেছিল বললেন, সে-সময় আপনিই তো নিজে গিয়ে মৃতদেহ সনাক্ত করে বলে এসেছিলেন মৃত ব্যক্তি আপনার স্বামী–

হ্যাঁ, বলে এসেছিলাম।

তাহলে কি ভাবব, আপনি যে কারণেই হোক সত্য কথাটা পুলিসকে বলেননি?

সত্যিই বলেছিলাম।

সত্য বলেছিলেন?

হ্যাঁ, সেদিন যেমন মৃতদেহ দেখে বলেছিলাম সে-ই আমার স্বামী, আজও ঐ চিঠি যে তারই লেখা তাও বলছি! সেদিন যেমন আমি নিঃসন্দেহ ছিলাম, আজও তেমনি আমি নিঃসন্দেহ।

মৃতদেহটা আপনার স্বামীরই ছিল?

হ্যাঁ। শান্ত দৃঢ় গলায় জবাব দিলেন মালতী দেবী।

কিন্তু এই চিঠি যদি সত্যি-সত্যিই আপনার স্বামীরই লেখা হয় তাহলে কি ব্যাপারটা এই দাঁড়াচ্ছে না যে সেদিন যে মৃতদেহকে আপনার স্বামীর বলে সনাক্ত করে এসেছিলেন তিনি নিশ্চয় আপনার স্বামী নন, কারণ মৃত ব্যক্তি তো আর চিঠি লিখতে পারেন না। সুতরাং তিনি সম্পূর্ণ অন্য ব্যক্তি ছিলেন এবং তিনি অবিকল আপনার স্বামীর মতো দেখতে ছিলেন বলেই আপনার ঐ ভুলটা হয়েছিল।

মালতী দেবী কোন জবাব দিলেন না। চুপ করে রইলেন।

মালতী দেবী, আপনি সমস্ত ব্যাপারটা আর একবার ভেবে দেখুন–

চিঠিটা পেয়েছি আমি প্রায় মাস দেড়েক আগে, তারপর আমার স্বামী সত্যিই আজও বেঁচে আছেন কিনা—কিম্বা আমারই হয়ত সেদিন ভুল হয়েছিল সেই কথা ভেবেই সমস্ত রকম অনুসন্ধান করার পর ব্যাপারটার একটা মীমাংসায় পৌঁছবার জন্যই শেষ পর্যন্ত আপনার কাছে। এসেছি।

কিন্তু আপনাকে সাহায্য করতে হলে কতকগুলো আবশ্যকীয় প্রশ্নের জবাব আমার একান্ত দরকার।

বলুন কি জানতে চান?

আপনার স্বামীর সঙ্গে আপনার মানে বুঝতেই পারছেন, পরস্পরের সম্পর্কটা কেমন ছিল যদি বলেন।

কি বলব বলুন, বলতে লজ্জাও হয় দুঃখও হয়, আমাদের মধ্যে সম্পর্কটা সুখের বা শান্তির ছিল না। অথচ আপনি শুনলে হয়ত অবাকই হবেন, পরস্পরকে ভালবেসেই আমাদের বিবাহ হয়েছিল।

বিবাহের পূর্বেই আপনাদের জানাশোনা হয়েছিল তাহলে?

হ্যাঁ, আমার শ্বশুরমশাই এবং শাশুড়ি জীবিত থাকা সত্ত্বেও আমার স্বামী তার কাকার কাছেই মানুষ–

আপনার শ্বশুর-শাশুড়ি আজও বেঁচে আছেন কি?

জানি না, তাদের কখনও দেখিনি। আমার স্বামীও তার মা-বাবা সম্পর্কে কখনও কোন কথা বলতেন না বলে আমিও কখনও সে সম্পর্কে প্রশ্ন করিনি। তাদের নিয়ে কখনও কোন আলোচনা করিনি। কারণ আমি বুঝতে পেয়েছিলাম, যে কারণেই তোক তিনি তার মা-বাবা সম্পর্কে কোন আলোচনা করতে চান না। অবিশ্যি আমারও কোন দিন কোন আগ্রহই ছিল না সে সম্পর্কে জানবার।

আপনার মা-বাবাও ক্ষিতীন্দ্রবাবুর মা-বাবা সম্পর্কে কোন খোঁজখবর নেননি?

মা-বাবা আমার ছিল না, আমি আমার বড়দিদির কাছেই মানুষ। খুব ছোটবেলায় তারা মারা যান। আমার জামাইবাবু অসুস্থ মানুষ ছিলেন, অল্প বয়সেই সব কাজকর্ম ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। অ্যাক্সিডেন্টের পর, কলকাতা শহরের ওপর খান দুই বাড়ি ছিল, তার আয় থেকেই তাদের চলে যেত ভাল ভাবেই দিদির পক্ষেও অত খোঁজখবর নেওয়া সম্ভব ছিল না।

হুঁ। আপনার স্বামীর কাকা বেঁচে আছেন?

না, বছর চারেক আগে তিনি মারা গেছেন।

তার ছেলেমেয়ে স্ত্রী

স্ত্রী আগেই মারা গিয়েছিলেন, কোন সন্তানাদি ছিল না তাদের। তার যা কিছু জমি-জমা টাকাপয়সা আমার স্বামীই পেয়েছিলেন।

আপনার স্বামী তো টিসকোতে বেশ ভাল চাকরিই করতেন?

মালতী দেবী বলতে লাগলেন, তার এড়ুকেশন বা কোয়ালিফিকেশন বলতে যা বোঝায় তা ততা সে রকম ছিল না, সে আন্দাজে চাকরিজীবনে শেষের দিকে বেশ ভাল মাইনেই পেতেন। শুনেছি শুরু করেছিলেন ৭৩ টাকা হপ্তা থেকে, পরে মাহিনা বৃদ্ধি শেষজীবনে ঠিক কত হয়েছিল আমি ঠিক জানি না।

কত মাইনে পেতেন শেষের দিকে আপনি জানেন না তাহলে?

না। সত্যি কথা বলতে কি, অমন একটা বিচিত্র চরিত্রের মানুষ আমি খুব কমই দেখেছি। এক কথায় অমন স্বার্থপর, অমন লোভী ও আত্মকেন্দ্রিকতার ওপরে চোখে মুখে ডাইনে বাঁয়ে মিথ্যা বলতেন। অথচ যখন আমাদের আলাপ হয়, দেড় বৎসরের আলাপে এতটুকু বুঝতে পারিনি মানুষটাকে, বুঝতে পারলাম বিয়ের পরে একটু একটু করে। মানুষটাকে মানিয়ে নেবারই চেষ্টা করতে লাগলাম, মনকে বোঝাতাম, ভাগ্য আমারই, কি আর করা যাবে। একটার পর একটা সন্তান হতে লাগল আমাদের–

কটি ছেলেমেয়ে আপনাদের? কিরীটীর প্রশ্ন।

চার মেয়ে দুই ছেলে—মালতী একটু থেমে বললেন।

বড় ছেলের বয়স কত আপনাদের? কিরীটী আবার প্রশ্ন করে।

ছাব্বিশ হবে।

ছোট ছেলে?

চব্বিশ বছর হবে।

তারা—মানে আপনার সন্তানদের বাপের প্রতি মনোভাব কেমন?

ঐ প্রকৃতির মানুষের প্রতি মনোভাব যেমন হওয়া উচিত স্বাভাবিক ভাবে তার সন্তানদেরও ঠিক তেমনি।

মেয়েরা?

তাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে।

ছেলেমেয়েদের এই চিঠির কথা আপনি বলেছেন?

না। আমি ঠিক করেছি সমস্ত কিছু ভাল করে না জেনেশুনে তাদের আমি কিছু বলব না। মিঃ রায়, আপনার যোগ্য পারিশ্রমিক দেবার মত ক্ষমতা আমার নেই, তবু আপনার শরণাপন্ন হয়েছি–

টাকা পয়সার জন্য আপনি ভাববেন না। আমাকে দুটো দিন একটু ভাবতে সময় দিন। এই চিঠিগুলো আমার কাছে রাখতে পারি কি?

রাখুন।

দুদিন বাদে আপনার স্বামীর বর্তমানের কোন ফটো থাকলে সঙ্গে আনবেন।

ঠিক আছে। নমস্কার জানিয়ে মালতী দেবী প্রস্থান করলেন।

তিন-তিনটে বছর, কম নয়। কিরীটী মনে মনে ভাবতে শুরু করেছে তখন।

তিন বৎসর আগে যে মানুষটা আত্মহত্যা করেছে এবং যার মৃতদেহ তার নিজের স্ত্রী পর্যন্ত ঘটনাস্থলে গিয়ে সনাক্ত করে এসেছে, তিন বৎসর পরে তারই এক চিঠি এল এবং সে চিঠি তার স্বামীরই লেখা বলে গেলেন মালতী দেবী।

ব্যাপারটা তাহলে কি দাঁড়াচ্ছে? যে মানুষটি পুরীর এক হোটেলে তিন বৎসর পূর্বে আত্মহত্যা করেছে বা মারা গিয়েছে এবং যার অবিংসবাদী প্রমাণও পুলিসের দপ্তরে আজও রয়েছে, সে আজ আবার কেমন করে চিঠি লিখতে পারে? যদি মৃত্যুটা তার সত্য বলে ধরে নেওয়া যায়, তবে কি আগাগোড়াই ব্যাপারটার মধ্যে কোন সত্য নেই, সবটাই গোড়া থেকে সাজানো? নাকি ব্যাপারটার মধ্যে অবিশ্বাস্য কোন ভৌতিক রহস্য আছে? শেষের সম্ভাবনাটা যদি বাদ দেওয়া যায়, তাহলে এটাই প্রমাণিত হচ্ছে না কি যে তিন বৎসর আগে যে মানুষটিকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়েছে, আদৌ সে মরেনি! সে আজও বেঁচে আছে! কিম্বা এমন কি হতে পারে সম্পূর্ণ কোন তৃতীয় ব্যক্তি ঐ পত্র-প্রেরক? যদি তৃতীয় কোন ব্যক্তিই হবে, তাহলে সে ফিক্স ডিপোজিটের কথাটা জানল কি করে? শুধু তাই নয়, সেই ফিক্সড় ডিপোজিটের মেয়াদ কবে পূর্ণ হচ্ছে তাও সে জানে!

আরও একটা কথা মনে হয় কিরীটীর, ভদ্রলোক সত্যি-সত্যিই যদি আত্মহত্যা না করে থাকেন এবং বেঁচেই ছিলেন—সে কথাটা কাউকে না জানতে দেবার কি কারণ থাকতে পারে। অন্য কাউকে না জানালেও স্ত্রীকেও অন্তত জানাতে পারতেন!

এমনও হতে পারে, স্ত্রীকে তার বেঁচে থাকার কথাটা জানতে দেবেন না বলেই হয়ত অন্য কাউকেই কথাটা জানতে দেননি।

স্ত্রীর সঙ্গে তার কোন দিন যাকে বলে মনের মিল তা ছিল না। বিবাহিত জীবনে ভদ্রলোক সুখী ছিলেন না, আর সেই কারণেই হয়ত চুপচাপ ছিলেন। তাই চিঠিপত্রও দেননি স্ত্রীকে হয়ত। ঐ সঙ্গে এই চিন্তাটাও মনের মধ্যে আসে—এতদিন চুপচাপ থেকে হঠাই বা আজ কথাটা স্ত্রীকে জানালেন কেন?

কোন নির্দিষ্ট কারণ ছিল কি এতদিন কথাটা চেপে রাখার? তার চাইতেও বড় কথা-ভদ্রলোক পুরীর হোটেলে গিয়ে আত্মহত্যাই বা করতে গেলেন কেন, যদি অবিশ্যি সত্যিসত্যিই আত্মহত্যা করেই থাকেন?

পারিবারিক জীবনে ভদ্রলোক সুখী ছিলেন না সত্যি। সেটাও তার স্ত্রীর মতে চরিত্রের জন্যই। মানুষটা বরাবর স্বার্থপর লোভী। প্রায় সারাটা জীবন কাটিয়ে এসে প্রৌঢ় বয়সেই বা এমন কি ঘটনা ঘটল যে তাঁকে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করতে হবে। তাও নৃশংসভাবে গলায় ক্ষুর চালিয়ে, অবশ্য যদি ঘটনাটা সত্যি বলেই ধরে নেওয়া যায়! তাও সব যেন কেমন গোলমেলে।

না, কোন যুক্তিই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ঐভাবে ভদ্রলোকের আত্মহত্যা করবার। কিম্বা এও হতে পারে, পুরী যাবার পর এমন কোন ঘটনা হয়ত ঘটেছিল যে লোকটি শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করে নিষ্কৃতি পেয়েছেন। কিন্তু কি-ই বা এমন এক প্রৌঢ়ের জীবনে ঘটতে পারে যে শেষ পর্যন্ত তাকে আত্মহত্যা করতে হল? লোকটির অতীত জীবনে এমন কিছু ছিল না তো, যে কারণে তাঁকে প্রৌঢ় বয়েসে চাকরি থেকে রিটায়ার করবার পর আত্মহত্যা করতে হয়েছিল?

কিরীটী কোন সূত্রই খুঁজে পায় না—যে সূত্র ধরে সে এগুতে পারে।