সাপ
স্কুলে ঢুকে টুনি যখন নিজের ক্লাসরুমের দিকে যাচ্ছে তখন লক্ষ করল একেবারে গেন্দা সাইজের বেশ কয়েকজন ছেলেমেয়ে খুবই গম্ভীর ভঙ্গিতে কোথায় জানি হেঁটে যাচ্ছে। বাচ্চাগুলো দেখেই বোঝা যাচ্ছে এরা ক্লাস ওয়ান কিংবা টুয়ের বেশি হবে না। টুনি জিজ্ঞেস করল, “এই! তোরা কই যাস?”
দলটার সামনের দিকে চশমা পরা একটা মেয়ে মুখটা গম্ভীর করে বলল, “প্রিন্সিপাল ম্যাডামের কাছে।”
টুনি অবাক হয়ে বলল, “প্রিন্সিপাল ম্যাডামের কাছে? কেন?”
“আমরা একটা ভ্যারাইটি শো করব। সেইটার পারমিশান নেবার জন্য।”
“তোরা ভ্যারাইটি শো করবি? সেইটা কী জিনিস?”
এবারে একটা ছেলে উত্তর দিল। তার মনে হয় ঠাণ্ডা বেশি লাগে কারণ তার একটা সোয়েটারের ওপরে একটা জ্যাকেট এবং গলায় মাফলার। সে খুবই গম্ভীর গলায় বলল, “ভ্যারাইটি শো হচ্ছে যেখানে নাচ-গান-আবৃত্তি নাটক এই সব হয়।”
“তোরা এই সব করবি?”
এবারে পুরো দলের সবাই একসাথে গম্ভীরভাবে মাথা নাড়ল।
একজন যোগ করল, “নাটকও হবে।”
চশমা পরা মেয়েটা বলল, “হ্যাঁ। নাটকও হবে।”
“নাটকের নাম কী?”
“প্রেতাত্মার অট্টহাসি। ভৌতিক নাটক।”
টুনি চমৎকৃত হলো। জিজ্ঞেস করল, “কার লেখা নাটক?”
“পূর্ণা।” বলে কয়েকজন পূর্ণাকে সামনে ঠেলে দিল। পূর্ণারও চোখে চশমা এবং সত্যিকারের নাট্যকারের মতো তার উশকোখুশকো চুল। তবে নাট্যকারের মতো সে গম্ভীর নয়, তার চোখে-মুখে লাজুক হাসি।
“কী সাংঘাতিক।” টুনি হাতে কিল দিয়ে বলল, “যা তোরা প্রিন্সিপাল ম্যাডামের কাছে। পারমিশান নিয়ে আয়।”
ছোট ছোট বাচ্চা কাচ্চাদের মোটামুটি বড়োসড়ো দলটি আবার গুটি গুটি পায়ে প্রিন্সিপাল ম্যাডামের অফিসের দিকে রওনা দিল।
.
ক্লাসরুমে ঢুকে টুনি দেখল সেখানে একটা জটলা। নিজের সিটে ব্যাগটা রেখে দেখল মেঝেতে কাঁচের টুকরো এবং তাদের ক্লাসের কয়েকজন ছেলে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে। এরা এই ক্লাসের দুষ্টু ছেলেগুলোদের কয়েকজন। এদের উৎপাতে মোটামুটি সবাই অতিষ্ঠ। কী হচ্ছে বোঝার জন্যে টুনি দাঁড়িয়ে গেল তখন দুজন মারামারি শুরু করে দিল। কয়েকজন তাদের টেনে আলাদা করে দেয়। যে বেশি মারকুটে নাম সবুজ, সে চিৎকার করে বলল, “আমি এক্ষুনি যাব প্রিন্সিপাল ম্যাডামের কাছে নালিশ করতে। তোরা সাক্ষী। তোরা বল, কে আগে শুরু করেছে? কে?”
যাদেরকে সাক্ষী মানা হয়েছে তাদের কাউকেই কে আগে শুরু করেছে সেটা নিয়ে মাথা ঘামাতে দেখা গেল না। একজন বলেই ফেলল, “দিন-রাত মারামারি করিস লজ্জা করে না? আবার আগে-পরে নিয়ে ঘোট পাকাস?”
আরেকজন বলল, “জানালার কাঁচ ভেঙেছিস, এখন ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকবে–”
আরেকজন বলল, “সেই জন্যেই তো ভেঙেছে, যেন ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকে আর আমরা ক্লাস করতে না পারি।”
সবুজ নামের মারকুটে ছেলেটা হিংস্র মুখে বলল, “আমি গেলাম প্রিন্সিপাল ম্যাডামের কাছে নালিশ করতে। তোরা কে যাবি আমার সাথে?”
টুনি বলল, “আমি যাব।”
সবুজ অবাক হয়ে বলল, “তুই? তুই কেন যাবি?”
“তুই না সাক্ষী চাইছিস। আমি সাক্ষী দেব।”
সবুজ থতমত খেয়ে বলল, “তুই-তুই-তুই কী সাক্ষী দিবি?”
“যেটা দেখেছি সেটা।”
সবুজকে আড়ালে অনেকেই ষণ্ডা সবুজ ডাকে। তার সাথে আরো কয়েকজন থাকে তারা বলল, “আয় সবুজ আমরা যাব তোর সাথে। কুনো চিন্তা নাই।”
তারা টুনিকে নিতে চাইছিল না কিন্তু টুনি তাদের পিছু পিছু গেল। স্কুলের প্রিন্সিপাল ম্যাডাম খুবই সুইট, কোনো দরকার ছাড়াই তার সাথে যখন খুশি দেখা করতে যাওয়া যায়।
প্রিন্সিপাল খুলল, “আসতে পর দরজার ঝোল
প্রিন্সিপাল ম্যাডামের অফিসের দরজার ঝোলানো পর্দা সরিয়ে সবুজের দলের একজন বলল, “আসতে পারি ম্যাডাম?”
প্রিন্সিপাল ম্যাডাম দরজায় দাঁড়ানো সবুজ এবং তার দলবলের দিকে তাকিয়ে একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, “আমার বলার ইচ্ছা করছে, না, তোমরা আসতে পার না। কিন্তু সেইটা তো বলা যাবে না। তোমাদেরকে আসতে দিতে হবে। এসো। এসে এই পাশে দাঁড়াও।”
সবাই যখন ভেতরে ঢুকল তখন প্রিন্সিপাল ম্যাডাম টুনিকে দেখতে পেলেন, একটু অবাক হয়ে বললেন, “তুমি? তুমি এদের সাথে কেন?”
টুনি মুখ কাচুমাচু করে বলল, “এইখানে কী হয় দেখতে চাচ্ছিলাম।”
“ও আচ্ছা, সার্কাস দেখতে এসেছ?”
“অনেকটা সেইরকম।”
সবুজ এবং তার দল চোখ পাকিয়ে টুনির দিকে তাকাল, টুনি সেটাকে বেশি গুরুত্ব দিল না। প্রিন্সিপাল ম্যাডাম বললেন, “সার্কাস দেখার জন্যে একটু অপেক্ষা করতে হবে। আমি এই সুইট বাচ্চাগুলোর সাথে কথা বলছি। খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা। তোমরা কী জানো এই বাচ্চাগুলো নিজেরা নাটক লিখেছে, নিজেরা অভিনয় করবে, নিজেরা ডিরেকশান দেবে?”
টুনি বলল, “জানি ম্যাডাম।”
“কী অসাধারণ!” তারপর বাচ্চাগুলোর দিকে তাকিয়ে বললেন, “হ্যাঁ যেটা বলছিলাম। অবশ্যই আমি তোমাদের পারমিশান দেব। পারমিশানের জন্য একটা এপ্লিকেশন পর্যন্ত লিখে এনেছ, সেখানে কোনো বানান পর্যন্ত ভুল নেই শুধু একটা শব্দের প্রয়োগ পুরোপুরি ঠিক হয় নাই–”
উশকোখুশকো চুলের নাট্যকার মেয়ে রীতিমতো ভুরু কুচকে বলল, “কোন শব্দ ম্যাডাম?”
“তোমরা লিখেছ এই স্কুলে বিদ্যা আরোহণের পাশাপাশি আমরা উৎসব করতে চাই। এখানে আরোহণ হবে না, হবে আহরণ। বিদ্যা আহরণ করে আর গাছে আরোহণ করে। বুঝেছ?”
নাট্যকারের সাথে সাথে অন্যরাও মাথা নাড়ল। প্রিন্সিপাল ম্যাডাম অন্যপাশে দাঁড়ানো সবুজের দলটি দেখিয়ে বললেন, “এই যে এরা সবসময় বাদরামো করে। কাজেই আমরা বলতে পারি এই বানরের দল বৃক্ষে আরোহণ করবে আর তোমরা বিদ্যা আহরণ করবে–”
এই তুলনামূলক আলোচনায় বাচ্চাগুলো খুবই আনন্দ পেল এবং কয়েকজন মুখে হাত দিয়ে খিক খিক করে হেসে ফেলল। সবুজ এবং তার দলবল চোখ পাকিয়ে বাচ্চাদের দিকে তাকাল এবং বাচ্চাগুলো সাথে সাথে ভয়ে হাসি বন্ধ করে ফেলল।
প্রিন্সিপাল ম্যাডাম বাচ্চাগুলোর দিকে তাকিয়ে বললেন, “তোমরা দুই মিনিট অপেক্ষা করো, তোমাদের কী লাগবে না লাগবে আমি দেখছি।”
তারপর সবুজের দলটার দিকে তাকিয়ে বললেন, “এখন তোমরা বল কী জন্যে এসেছ।”
সবুজ একটু কেশে গলা পরিষ্কার করে বলল, “ম্যাডাম আমরা একটা কমপ্লেন নিয়ে এসেছি।”
প্রিন্সিপাল ম্যাডাম ভুরু কুচকে বললেন, “দাঁড়াও, তুমি সবুজ না?”
সবুজ মাথা নাড়ল। প্রিন্সিপাল ম্যাডাম অন্যদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আর তোমরা লাল নীল বেগুনি–”
সবুজের সাঙ্গোপাঙ্গ ম্যাডামের ঠাট্টাটা ধরতে পারল না। ছোট বাচ্চারা ঠিকই ধরতে পারল এবং তারা আবার হি হি করে হেসে উঠল তখন সবুজ আবার তাদের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকাল এবং বাচ্চাগুলো আবার ভয় পেয়ে হাসি বন্ধ করল।
সবুজ আরেকবার কেশে গলা পরিষ্কার করে বলল, “ম্যাডাম, আমরা একটা কমপ্লেন করতে এসেছি। আমাদের ক্লাসে–”
ম্যাডাম হাত তুলে থামালেন, বললেন, “দাঁড়াও, দাঁড়াও। তুমি আরেকবার তোমার দলবল নিয়ে কমপ্লেন করতে এসেছিলে না? পরে দেখা গেল তুমিই হচ্ছ কালপ্রিট? তুমি বুঝে গিয়েছ অন্য কেউ কমপ্লেন করার আগেই তুমি কমপ্লেন করে ফেলবে, তাহলে পরে তোমাকে ধরা যাবে না–অফেন্স ইজ দা বেস্ট ডিফেন্স?”
সবুজ আমতা আমতা করে বলল, “না, মানে ইয়ে ম্যাডাম–”
“এর আগেরবার একটা চেয়ার ভেঙেছিলে। এইবারে কী ভেঙেছ?”
সবুজ আমতা আমতা করতে লাগল। প্রিন্সিপাল ম্যাডাম টুনিকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি জান? কিছু কী ভেঙেছে?”
“ক্লাস রুমে ভাঙা কাঁচ। জানালার কাঁচ ভেঙেছে কিন্তু কে ভেঙেছে আমি দেখি নাই।”
প্রিন্সিপাল ম্যাডাম হাল ছেড়ে দেবার ভঙ্গি করে নিজের মাথা কিছুক্ষণ চেপে ধরে রেখে বললেন, “শোনো সবুজ। তোমাদের বয়সী ছেলেমেয়েরা একটু আধটু দুষ্টুমি করবে সেটা আমি মেনেই নিয়েছি। আমি সেগুলো দেখেও না দেখার ভান করি। কিন্তু দুষ্টু এক জিনিস আর পাজি অন্য জিনিস। আগে তুমি দুষ্টু ছিলে, এখন তোমার প্রমোশন হয়েছে, তুমি দুষ্ট্র থেকে পাজি হয়েছ। পাজি ছেলেমেয়েদের কীভাবে সোজা করতে হয় আমি কিন্তু সেটা জানি।”
সবুজ আমতা আমতা করে বলল, “কিন্তু ম্যাডাম আগে আমি শুরু করি নাই। জিজ্ঞেস করে দেখেন—”
“কী শুরু কর নাই?”
সবুজ বুঝতে পারল কথাটা বলা ঠিক হয় নাই। তাই এবারে মুখ বন্ধ করে রাখল।
প্রিন্সিপাল ম্যাডাম আবার জিজ্ঞেস করলেন, “কী শুরু করো নাই?”
টুনি সাহায্য করল, বলল, “ক্লাসে একটু মারামারি হয়েছে, সবুজ মনে হয় তার কথা বলছে। তাই না’রে সবুজ?”
সবুজ মাথা নাড়ল। প্রিন্সিপাল ম্যাডাম আবার নিজের মাথা চেপে ধরলেন, বললেন, “শুধু জানালার কাঁচ ভাঙেনি, মারামারিও হয়েছে?”
টুনি আবার সাহায্য করার চেষ্টা করল, বলল, “বেশি সিরিয়াস মারামারি না, হালকা একটু হাতাহাতি। তাই না’রে সবুজ?”
সবুজ এবারে জোরে জোরে মাথা নাড়ল। টুনি বলল, “নিজেরা নিজেরা আবার মিটমাট করে নিয়েছে। তাই না’রে সবুজ?”
সবুজ এবারে আরো জোরে জোরে মাথা নাড়ল। প্রিন্সিপাল ম্যাডাম কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, “দেখো সবুজ, তোমরা বড় হয়েছ, আমি আশা করব তোমরা দায়িত্বশীল হবে। কিন্তু উল্টোটা হচ্ছে তোমরা দিনে দিনে দায়িত্বহীন হয়ে যাচ্ছ।”
প্রিন্সিপাল ম্যাডাম ছোট বাচ্চাদের দলটিকে দেখিয়ে বললেন, “অথচ দেখো, এই ছোট বাচ্চারা মাত্র ক্লাস টুতে পড়ে তারা নিজেরা নিজেরা একটা অনুষ্ঠান অর্গানাইজ করছে। গান কবিতা আবৃত্তি করছে। নিজেরা নাটক লিখেছে সেটা অভিনয় করবে। এদেরকে দেখে তোমার লজ্জা হওয়ার কথা।”
সবুজ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে রইল, খুব লজ্জা হলো বলে মনে হলো না। বাচ্চাগুলোর ওপর উল্টো তার খুব রাগ হলো সেটা অনুমান করা যায়। টুনি দেখল সবুজের চোখ দিয়ে রীতিমতো আগুন বের হতে শুরু করেছে।
প্রিন্সিপাল ম্যাডাম বললেন, “যাও এখান থেকে। বিদায় হও। আর শুনে রাখো, তোমার বিরুদ্ধে যদি আর কোনোদিন কোনো নালিশ আসে তাহলে আমি তোমাকে সিধে করে দেব। মনে থাকবে?”
সবুজ মাথা নাড়ল। প্রিন্সিপাল ম্যাডাম বললেন, “এখন দূর হও আমার সামনে থেকে।”
সবাই বের হয়ে গেল, টুনিও পিছু পিছু বের হয়ে এলো। বাইরে বের হয়েই সবুজ হিংস্র গলায় বলল, “আমি আন্ডাবাচ্চাদের নাটক করা বের করছি।”
টুনি বলল, “কী বললি? তুই কী বললি?”
সবুজ মুখ শক্ত করে বলল, “কিছু বলি নাই।”
“বলেছিস। আমি শুনেছি।”
“যদি শুনেছিস তাহলে আবার আমাকে জিজ্ঞেস করছিস কেন?” বলে সবুজ গট গট করে দলবল নিয়ে হেঁটে ক্লাসের দিকে এগিয়ে গেল।
টুনি একটু দুশ্চিন্তার মাঝে পড়ে গেল। প্রিন্সিপাল ম্যাডাম ঠিকই বলেছেন, সবুজ আগে দুষ্টু ছিল। এখন প্রমোশন হয়ে পাজি হয়েছে। দুষ্টু ছেলেমেয়েদের নিয়ে সমস্যা হয় না কিন্তু পাজিদের নিয়ে অনেক সমস্যা। এই পাজি সবুজটা ছোট ছোট ক্লাস টুয়ের ছেলেমেয়েদের পেছনে লেগে গেলে তো অনেক ঝামেলা হবে।
টুনি স্কুলের বারান্দায় চিন্তিত মুখে বসে রইল। বাচ্চাগুলোকে একটু সাবধান করে দিতে হবে।
.
দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ পার হয়ে গেল। ক্লাস টুয়ের বাচ্চাগুলো পুরো সপ্তাহ রিহার্সাল করেছে। তাদের উৎসাহের কোনো সীমা নেই। যেদিন ভ্যারাইটি শো
সেদিন প্রিন্সিপাল ম্যাডাম তাদের সকলের ক্লাস ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। তাই তারা সকাল থেকে স্টেজ সাজাচ্ছে। নানা রকম রঙিন কাগজ কেটে কেটে স্কচ টেপ দিয়ে পেছনে লাগানো হচ্ছে, স্টেজটা একটা ভ্যারাইটি শো’-এর স্টেজ মনে না হয়ে বিয়েবাড়ির মত দেখাচ্ছে কিন্তু সেটা নিয়ে কারো খুব মাথাব্যথা নেই।
টিফিন ছুটির ঘণ্টা পড়ার সাথে সাথে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেল। ক্লাস টুয়ের ক্লাসরুমটা বেশি বড় না, নিজেদের ছেলেমেয়ে দিয়েই বোঝাই হয়ে গেছে। অনুষ্ঠান দেখার জন্যে অন্য ক্লাসের কিছু ছেলেমেয়েরাও এসেছে, সবাই মোটামুটি গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছে। স্টেজের বাম পাশে দরজার কাছাকাছি সবুজ তার ছোট বিপজ্জনক দলটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মুখে এক ধরনের বাঁকা হাসি দেখলেই বুক ধক করে ওঠে।
সবুজের দল কী করে ফেলে সেটা দেখার জন্যে কিংবা সম্ভব হলে সামাল দেওয়ার জন্য টুনিও সবুজের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে। টুনি অনুষ্ঠান থেকে বেশি চোখ রাখছে সবুজের দিকে। দুষ্টু মানুষ কখন কী করবে আন্দাজ করা যায় কিন্তু পাজি মানুষ কখন কী করবে বলা খুব মুশকিল।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অনেকগুলো ছেলেমেয়ে মিলে লাল পরি নীল পরি গানটা গেয়ে যখন মাত্র শেষ করেছে তখন সবুজ হঠাৎ স্টেজের সামনে লাফ দিয়ে দাঁড়াল, তারপর আঙুল দিয়ে স্টেজের নিচে দেখিয়ে চিৎকার করে বলল, “সাপ! সাপ! সাপ!”
সবাই তার আঙুল দিয়ে দেখানো স্টেজের নিচের জায়গাটার দিকে তাকাল এবং দেখতে পেল সত্যি সত্যিই একটা মোটাসোটা সাপ সেখানে কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছে।
সবুজের সাথে সাথে তার দলের অন্যরাও ‘সাপ! সাপ!’ বলে চিৎকার করতে করতে ঘরের মাঝে লাফালাফি দাপাদাপি করতে লাগল।
তখন পুরো ক্লাসরুমটাতে একটা ভয়ংকর অবস্থা শুরু হয়ে গেল। স্টেজের ওপর যে গানের দলটা ছিল তারা সেখানেই লাফাতে লাগল, একজন আরেকজনকে ধরে চিৎকার করতে লাগল। স্টেজের পাশে যারা ছিল তারা লাফ দিয়ে কাছাকাছি জানালার ওপর ঝুলে পড়ে চিৎকার করতে লাগল। যারা দর্শক ছিল তারা যে যেখানে আছে প্রথমে সেখানে লাফাতে লাফাতে চিৎকার করতে থাকল। কয়েকজন দৌড় দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যাবার চেষ্টা করে মেঝেতে আছাড় খেয়ে পড়ল, তাদের পেছনে পেছনে যারা আসছিল তারা তাদের ওপর আছাড় খেয়ে পড়তে শুরু করল। কয়েকজন বেঞ্চের ওপর দাঁড়িয়ে সেখানে লাফাতে লাগল। চিৎকার চেঁচামেচি হইচই কান্নাকাটিতে পুরো ঘরটার যা একটা অবস্থা হলো সেটা বলার মতো না।
টুনি সবুজের পরিকল্পনাটা শেষ পর্যন্ত ধরতে পারল, কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। বাচ্চাদের ভ্যারাইটি শো তখন আসলেই ‘ভ্যারাইটি শো হয়ে গেছে। কী করছে চিন্তা না করেই টুনি স্টেজের দিকে ছুটে গেল। লাফ দিয়ে স্টেজে উঠে সে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করল, “চুপ। সবাই চুপ। একেবারে চুপ। যে যেখানে আছিস সেখানে দাঁড়িয়ে যা।”
তার চিৎকার সবাই শুনবে সেইটা সে আশা করে নাই–কিন্তু সবাই শুনল। তার কথামতো সবাই একেবারে চুপ না করলেও একটু শান্ত হলো। যে যেখানে আছে সেখানে দাঁড়িয়ে গেল। টুনি তখন চিৎকার করে জিজ্ঞেস করল, “এইটা কী মাস?”
এবারে সবাই চুপ করে একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকাতে লাগল। যখন স্টেজের নিচে একটা ভয়ংকর সাপ কুণ্ডলী পাকিয়ে আছে তখন এইটা কোন মাস সেই বিষয়টা কেন জানতে হবে?”
টুনি আবার জিজ্ঞেস করল, “কোন মাস?”
এবারে একজন সাহস করে রিনরিনে গলায় বলল, “ডিসেম্বর।”
“বাংলা কোন মাস?”
কেউই জানে না কিংবা কারো বলার সাহস নেই তাই টুনি নিজেই বলে দিল, “পৌষ মাস।”
তখন একজন কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, “তুমি এখন কেন এটা জিজ্ঞেস করছ?”
তার আগে বল, “এইটা কি গরম কাল, নাকি বর্ষাকাল নাকি শীতকাল?”
কয়েকজন ভয়ে ভয়ে বলল, “শীতকাল।”
“তোরা জানিস না শীতকালে সাপ গর্ত থেকে বের হয় না?”
কেউই জানত না তাই তারা ভয়ে ভয়ে একজন আরেকজনের দিকে তাকাল। জানালায় ঝুলে থাকা উশকোখুশকো চুলের নাট্যকার কাঁপা গলায় বলল, “কিন্তু এই যে বের হয়েছে?”
“তার কারণ হচ্ছে এইটা নকল সাপ। এই দ্যাখ।”
এবারে পুরো ক্লাসের বাচ্চা-কাচ্চা চুপ করে গেল। তারা অবাক হয়ে দেখতে লাগল কী হয়। টুনি তখন স্টেজ থেকে নেমে সাপটার কাছে গেল। উবু হয়ে বসে সাপটার দিকে তাকাল, সাপটা একেবারে স্থির হয়ে কুকুতে চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। টুনির যে একটু ভয় করছিল না তা নয় কিন্তু তার পরেও সে খপ করে সাপটার ঘাড়ে ধরে টেনে আনল। তার ধারণা সত্যি, এটা রবারের তৈরি সাপ কিন্তু দেখতে হুবহু সত্যিকারের সাপের মতো।
সাপটা ধরে সবাইকে দেখানোর সাথে সাথে পুরো ক্লাসে নৃতন করে অন্য ধরনের একটু হট্টগোল শুরু হলো। প্রেতাত্মার অভিনয় করবে বলে যে মেয়েটি মুখে রং মেখে জানালার শিক ধরে ঝুলছে সে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল, “আপু এইটা কী আসলেই নকল সাপ? তাহলে নড়ছে কেন?”
“এইটা মোটেই নড়ছে না, আমি ঝুলিয়ে রেখেছি বলে নড়ছে। এই দ্যাখ–”
টুনি রবারের সাপটা মেয়েটাকে দেখানোর জন্যে তার কাছে নিয়ে যেতে চাইছিল কিন্তু সেই মেয়েটা তার প্রেতাত্মার রং মাখা মুখে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে লাগল, বলল, “ভয় করে। আমার ভয় করে। সাপকে আমার অনেক ভয় করে। নকল সাপকেও ভয় করে।”
তার সাথে সাথে আরো কয়েকজন বলল, “হ্যাঁ আপু, নকল সাপটা মনে হচ্ছে জীবন্ত। আমাদের ভয় করে।”
আরেকজন জিজ্ঞেস করল, “সাপটা আসলেই কী নকল?”
টুনি সাপটার দিকে তাকাল, তারপর বলল, “হ্যাঁ নকল। বিশ্বাস না করলে এই যে সাপটার পেটের মাঝে তাকিয়ে দ্যাখ, লেখা আছে মেড ইন চায়না। সত্যিকারের সাপের পেটের মাঝে কখনো লেখা থাকবে মেড ইন চায়না?”
একটা ছোট ছেলে রিনরিনে গলায় জিজ্ঞেস করল, “যদি চাইনিজ সাপ হতো?”
এবারে বেশ কয়েকজন হেসে উঠল। একজন বলল, “চাইনিজ হলে চাইনিজরা এটাকে খেয়ে ফেলতো তাই না আপু?”
টুনি কী বলবে বুঝতে না পেরে বলল, “হ্যাঁ মনে হয় খেয়ে ফেলতো। কিন্তু এইটা রবারের, এইটা কেউ খাবে না।”
এবারে অনেকেই নকল সাপটা দেখার জন্যে টুনির কাছে ছুটে আসতে লাগল। যারা সাহসী তারা ছুঁয়ে দেখল। যারা বেশি সাহসী তারা রীতিমতো হাতে ধরে টিপেটুপে দেখল। টুনি কিছুক্ষণ তাদেরকে দেখতে দিয়ে বলল, “কিন্তু আমি তো তোদের ভ্যারাইটি শো দেখতে এসেছি। রবারের সাপ দেখতে আসি নাই।”
উশকোখুশকো চুলের নাট্যকার মেয়েটা জানালা থেকে নেমে এলো, জিজ্ঞেস করল, “আবার করব?”
“করবি না কেন? শুরু কর।”
সবাই ততক্ষণে নিচে নেমে এসেছে। শুধু প্রেতাত্মা মেয়েটি জানালার শিক ধরে ঝুলে থেকে বলল, “আপু, তুমি সাপটা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে আমরা কেমন করে নাটক করব? আমার সাপ অনেক ভয় করে।”
“রবারের সাপও ভয় পাস?”
“হ্যাঁ। দেখলেই শরীরের মাঝে কী রকম জানি ইলি বিলি করে।”
ইলি বিলি জিনিসটা কী টুনির জানার ইচ্ছা ছিল কিন্তু এখন মনে হয় এইটা নিয়ে আলাপ আলোচনা করার সময় না। সে সাপটা কয়েকবার গোল করে প্যাচিয়ে নিয়ে বলল, “ঠিক আছে আমি এইটা সরিয়ে অন্য জায়গায় রেখে আসছি। তোরা অনুষ্ঠান শুরু কর।“
“ঠিক আছে আপু। ঠিক আছে।” বলে বাচ্চাগুলো আবার ছোটাচ্চুটি শুরু করে দিল।
.
টুনি ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে অফিসের দিকে হেঁটে যেতে থাকে। দূরে একটা গাছের নিচে সবুজ তার সাঙ্গোপাঙ্গদের নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। টুনি তাদের না দেখার ভান করে তাড়াতাড়ি অফিসের দিকে রওনা দিল।
কিছুক্ষণের মাঝেই আবার অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেল। নাচগান আবৃত্তি এবং নাটক। অনুষ্ঠানের শুরুতে দর্শকরা খুবই সভ্য-ভব্য হয়েছিল কিন্তু সাপ নিয়ে হই চই করার কারণে দর্শকরা উত্তেজিত হয়ে একটুখানি জংলি হয়ে গেছে। যেখানে শুধু হাততালি দিলেই হয় সেখানে তারা টেবিলে থাবা দিল। যেখানে টেবিলে থাবা দিলেই হয় সেখানে চিৎকার করল, আর যেখানে একটুখানি চিৎকার করা যায় সেখানে তারা বেঞ্চে উঠে লাফালাফি করল। অনুষ্ঠান খুবই ভালো হলো শুধু কবিতা আবৃত্তি করার সময় একজন মাঝামাঝি এসে ভুলে গিয়ে অন্য একটা কবিতা বলে ফেলল। নাচটাও খুবই ভালো হতো কিন্তু মাঝখানে শাড়ি খুলে যাওয়ার কারণে সেটাকে তাড়াতাড়ি শেষ করে দিতে হলো। দর্শকরা সবচেয়ে পছন্দ করল নাটকটা, কিন্তু ভৌতিক নাটক হওয়ার পরও অভিনেতা-অভিনেত্রীরা মাঝে মাঝেই হি হি করে হাসতে শুরু করার কারণে নাটকটাতে ভৌতিক ভাব না এসে একটা হাসির ভাব চলে এসেছিল। শুধু তাই না এতবার রিহার্সাল দেওয়ার পরও বাচ্চাগুলো ডায়লগ ভুলে যাচ্ছিল তখন তারা বানিয়ে বানিয়ে ডায়লগ দিতে শুরু করল। বানানো ডায়লগগুলো আসল ডায়লগ থেকেও হাসির হওয়ার কারণে শেষের দিকে আসল ডায়লগ না বলে সবাই বানিয়ে বানিয়ে বলতে শুরু করল, সেইজন্যে নাটকটা একটু লম্বা হয়ে গেল। উশকোখুশকো চুলের নাট্যকার রেগে মেগে স্টেজে এসে ধাক্কাধাক্কি করার কারণে হঠাৎ করে নাটকটা শেষ হয়ে গেল।
টুনি অবশ্যি নাটকের শেষের দিকে মনোযোগ দিতে পারছিল না কারণ তখন কোথা থেকে সবুজ এসে হাজির হয়েছে। সে টুনির পাশে দাঁড়িয়ে খুবই কাচুমাচু মুখ করে ইনিয়ে-বিনিয়ে কথা বলতে শুরু করল, জিজ্ঞেস করল, “সাপটা কই?” (টুনি পুরো ব্যাপারটা বোঝার পরেও না বোঝার ভান করল। জিজ্ঞেস করল, “সাপ? কোন সাপ?”
“ঐ যে স্টেজের নিচে ছিল। রবারের সাপ।”
“ও!” টুনি বোঝার ভান করল, বলল, “কেন?”
“না। মানে ইয়ে–জানতে চাচ্ছিলাম।”
“বাচ্চারা দেখে ভয় পায়, সেইজন্যে লুকিয়ে রেখেছি।”
সবুজ মাথা চুলকে আমতা আমতা করে বলল, “সাপটা দিবি আমাকে?”
টুনি চোখ কপালে তুলে অবাক হওয়ার ভান করে বলল, “দেব? তোকে? তোকে কেন দেব?”
“সাপটা আসলে আমার। আমি এনেছিলাম।”
“তোর? তুই রেখেছিলি?”
সবুজ বোকার মতো হাসার ভঙ্গি করে বলল, “হ্যাঁ। এমনি বাচ্চাদের সাথে একটু মজা করার জন্য।”
টুনি চোখ লাল করে বলল, “একটু মজা করার জন্য? বাচ্চারা কত কষ্ট করে সবকিছু রেডি করেছে আর তুই এসে দিয়েছিস সবকিছু নষ্ট করে? তুই কী রকম মানুষ?”
সবুজ অপরাধীর মতো ভঙ্গি করে বলল, “আসলে গাধামো হয়েছিল। আর হবে না। খোদার কসম।”
“ঠিক আছে। আর যেন না হয়। যদি হয় তাহলে কিন্তু খবর আছে।”
সবুজ মাথা নেড়ে দাঁড়িয়ে রইল, একটু পরে, উশখুশ করে বলল, “দিবি না?”
“কী দেব না?”
“আমার সাপটা?”
“আমি তো জানতাম না এটা তোর সাপ! আমি তো আমি তো–”
সবুজ আতঙ্কিত গলায় বলল, “তুই কী?”
“আমি তো ঠিক করে রেখেছি এই বাচ্চাদের সাপটা গিফট দেব।”
সবুজ ফ্যাকাসে মুখে জোরে জোরে মাথা নেড়ে বলল, “না না না। বাচ্চাদের দিস না। তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।”
“কেন?”
“সাপটা আসলে আমার নিজের না। কিসলু ভাইয়ের।”
“কিসলু ভাইটা কে?”
“আমাদের পাড়ায় থাকে। বডি বিল্ডার।”
সবুজ শুকনো গলায় বলল, “আমি এক দিনের জন্য ধার এনেছিলাম। বলেছিলাম আজকে বিকেলে ফেরত দেব। ফেরত না দিলে কিসলু ভাই অনেক রাগ করবে।”
টুনি চিন্তিত মুখে বলল, “দেরি হয়ে গেছে মনে হয়।”
“কিসের দেরি হয়ে গেছে?”
“সাপটা ফেরত দেবার।”
সবুজ প্রায় আর্তনাদ করে উঠল, বলল, “দিতেই হবে।”
টুনি মাথা নেড়ে বলল, “পুরোটা তো আর ফেরত দেয়া যাবে না।”
“পুরোটা? পুরোটা মানে কী?”
“একটু অপেক্ষা কর। নাটকটা শেষ হোক। দেখবি।”
কাজেই সবুজকে নাটকটা শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হলো।
যখন নাটকটা শেষ হলো এবং বাচ্চারা হাততালি দিয়ে, টেবিলে থাবা দিয়ে, বেঞ্চের ওপর উঠে লাফ দিয়ে চিৎকার করে অনুষ্ঠান শেষ করল তখন টুনি তার হাতের পলিথিনের ব্যাগটা নিয়ে স্টেজে উঠে গলা উঁচিয়ে বলল, “আমি কী তোমাদের সাথে একটু কথা বলতে পারি?”
“বল। বল আপু বল।”
টুনি সাপটা ধরে তাদের ভ্যারাইটি শো রক্ষা করেছে কাজেই তারা যদি টুনির কথা না শুনে তাহলে কার কথা শুনবে?
টুনি বলল, “তোমাদের ভ্যারাইটি শো খুবই ভালো হয়েছে। এত ভালো ভ্যারাইটি শো আমি জীবনেও দেখি নাই।”
বাচ্চারা আবার চিৎকার করে লাফিয়ে টেবিলে থাবা দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করতে লাগল। টুনি তাদের থেমে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করল, যখন শেষ পর্যন্ত সবাই থেমে গেল তখন টুনি বলল, “আমি তাই তোমাদের সবার জন্য একটা গিফট রেডি করেছি। খুবই ছোট গিফট কিন্তু আমার মনে হয় তোমার এই গিফটা পেলে খুবই মজা পাবে।”
বাচ্চারা এবারে আগ্রহ নিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। টুনি তার পলিথিনের ব্যাগটা ওপরে ধরে বলল, “আজকে আমরা যে রবারের সাপটা ধরেছিলাম আমি সেটাকে টুকরো টুকরো করে এনেছি। সবার জন্যে এক টুকরো। তোমরা এইটাকে রবার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে।”
কথা শেষ করে টুনি পলিথিনের ব্যাগটা উল্টো করে ধরল এবং তার ভেতর থেকে সাপের টুকরোগুলো ঝুর ঝুর করে স্টেজের ওপর পড়তে লাগল। বাচ্চারা আনন্দে চিৎকার করে সেই টুকরোগুলোর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।
টুনি বলল, “শুধু সাপের মাথাটা তোমরা নিও না। এইটা তোমাদের সবুজ ভাইয়ার জন্য। তার জন্যেই আজকে তোমরা এই গিফটটা পেয়েছ।”
কেউ একজন সাপের মাথাটা এনে টুনির হাতে দিল। টুনি সেটা নিয়ে সবুজকে ডাকল, বলল, “সবুজ নিয়ে যা। তোর কিসলু ভাইকে বলিস এর থেকে বেশি পাওয়া গেল না।”
সবুজের মুখ প্রথমে ফ্যাকাশে তারপর ছাইয়ের মতো সাদা হয়ে গেল। তারপর সেখানে লাল-নীল ছোপ ছোপ রং দেখা যেতে থাকে।
.
পরের দিন সবুজ স্কুলে এলো না। এর পরের দিন সে যখন স্কুলে এসেছে তখন তার বাম চোখটা ফুলে আছে এবং চোখের নিচে কালো দাগ। শুধু তাই না স্পষ্ট মনে হলো তার বাম কানটা ডান কান থেকে লম্বা। সবুজ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ক্লাসে এসে পিছনে গিয়ে চুপচাপ বসে রইল, কারো সাথে কথা বলল না।
টুনি কাছে গিয়ে গলা নামিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কিসলু ভাই?”
সবুজ চোখ লাল করে বলল, “খবরদার কথা বলবি না। খুন করে ফেলব।”
টুনি বলল, “তুই নিজেই বল, দোষটা কার? তোর না আমার?”
সবুজ এবারেও কোনো কথা বলল না। টুনি বলল, “তুই আগে যখন খালি দুষ্টু ছিলি তখন ভালো ছিলি! কেন যে পাজি হতে গেলি?”
সবুজ কোনো কথা না বলে ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে মাথা নিচু করে বসে রইল।