।। সাধু-বণিক কথা বর্ণনম্।।
অথ তে বর্ণয়িষ্যামি কথাং সাধুপচারিতাম্। নৃপোপদেশতঃ সাধুঃ কৃতাথোহ ভূদ্বানিগ্যথা।।১।। মনিপূরপতী রাজা চন্দ্রচূড়ো মহাযশাঃ সহ প্রজাভিরানর্চ সত্যনারায়ণং প্রভুম্।।২।। অথ রন্তপুরস্থায়ী সাধুলক্ষপতিবণিক্। ধনৈরাপূয তরণীঃ সহ গচ্ছন্নদীতটে।।৩।। দদর্শ বহুলং লোকং নানাগ্রামবিলাসিনম্। মনিমুক্তাবিরচিতৈবি তানৈসসমলংকৃতম্।।৪।। বেদবাদাংশ্চশুশ্রাব গীতবাদিত্ৰসংগতান্। রম্যং স্থানং সমালোক্য কর্ণধারং সমাদিশৎ।।৫। বিশ্রামযাত্র তরণীরিতি পশ্যামি কৌতুকম্। ভত্ৰাদিষ্টস্তথা চক্রে কর্ণদারঃ সভৃত্যকৈঃ।।৬।। তটসীন্নঃ সমুত্তীর্ণ মল্ললীলাবিলাসিনঃ। কর্ণধারা নগা বীরা যুযুধুল্মললীলয়া।।৭।। স্বয়মুত্তীর্য সামাত্যো লোকাপুপ্রচ্ছ সাদরম। যজ্ঞস্থানং সমালোক্য প্রশস্তং সমুদো যযৌ।।৮।। কিমত্র ক্রিয়তে সভ্যা ভবদ্ভিলোক পূজিতৈঃ। সভ্যাট্টচুশ্চ তে সর্বে সত্যনারায়ণো বিভুঃ।।৯।। পূজ্যতে বন্ধুভিঃ সার্ধং রাজ্ঞা লোকানুকম্পিনা। প্রাপ্তং নিষ্কন্টকং রাজ্যং সত্যনারায়ণার্চনাৎ।।১০।। ধনার্থী লভতে দ্রব্যং পুত্ৰাৰ্থী সুতমুত্তমম্। জ্ঞানার্থী লভতে চক্ষুনির্ভয়ঃ স্যাদ ভয়াতুরঃ।।১১।। সর্বান্ কামানবাপ্নোতি নরঃ সত্য সুরাচনাৎ।। বিধানং তু ততঃ শ্রুত্বা চৈলং বদ্ধা গলেহ সকৃৎ।।১২ দন্ডবৎ প্রনিপত্যাহ কামং সভ্যানমোদয়ৎ। অনপত্যোহস্মি ভগবন্ বৃথৈশ্বর্যো বৃথোদ্যম্।।১৩।। পুত্রং বা যদি বা কন্যাং লভেয়ং ত্বৎপ্রসাদতঃ। পতাকাং কাঞ্চনীং কৃত্বা পূজয়িষ্যে কৃপানিধিম্।।১৪।।
।। সাধু-বণিক কথা বৰ্ণন।।
এই অধ্যায়ে সত্যনারায়ণ ব্রতে সাধু বণিক কথা বর্ণিত হয়েছে। শ্রীসূতজী বললেন,–সাধু বর্ণিত উপচরিত্র কথা বর্ণন তোমাদের শোনাব। নৃপের উপদেশে বণিক সাধু উপকৃত হন।।১।।
মণিপুরপতি মহাযশ চন্দ্রচূড় নৃপতি নিজ প্রজাগণের সাথে সত্য নারায়ণদেবের পূজা করতেন। অনন্তর রত্নপুর নিবাসী বণিক সাধু নৌকা নিয়ে নদী তটে গমন করছিলেন। তিনি মণিযুক্ত বিভূষিত অনেক লোক দর্শন করেন ও বেদমন্ত্র স্বরণ করেন। তাদেখে কর্ণধারকে নৌকা ঐস্থানে নিয়ে যেতে বলেন। অঁর আদেশে নৌকা ঐ স্থানে নিয়ে গেলে তিনি মল্ললীলা দর্শন করেন। সেই বণিক নিজ লোকজনের সাথে সেখানে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন–তোমরা কার পূজা করছ? তারা উত্তরে বলেন যে–তারা প্রভু সত্যনারায়ণের পূজা করছেন। তার প্রভাবে তাঁরা নিমকমটর রাজ্য ভোগ করেন। তাঁর অর্চনা করলে পুত্র মিত্র ধনসম্পদ ইত্যাদি পার্থিব কামনা পূর্ণ হয় ও ভয় বিদূরিত হয়। তারপর তিনি পূজার সমস্ত আচরণ শ্রবণ করে পুত্র কামনায় গলবস্ত্র হয়ে সত্যনারায়ণকে বললেন–হে দেব, আমি পুত্রহীন, তাই আমার ঐশ্বর্যের সঙ্গে সমস্ত উদ্যম ব্যর্থ। আপনি কৃপাপূর্বক পুত্র বা কন্য প্ৰদান করুন। তাহলে আমি সুবর্ণ পতাকা নির্মাণ করে আপনার পূজা করব।।২-১৪।।
শ্রুত্বা সভ্যা অব্রকস্তে কামনাসিদ্ধিরস্তু তে। হরিং প্রণম্য সভ্যাংশ্চ প্রসাদং ভূক্তবাং স্তদা।।১৫।। জগাম স্বালয়ং সাধুমনসা চিন্তয়ন্ হরিম্। স্বগৃহে হ্যাগতে তস্মিন্নাযো মংগলপাণয়ঃ।।১৬।। মংগলানি বিচিত্রানি যলোচিত মকারয়ন। বিবেশন্তঃ পুরে সাধুমহাকৌতুকমং গলম্।।১৭।। ঋতুস্নাতা সতী লীলাবতী পর্যচরৎ পতিম্। গভং ধৃতাবতী সধ্বী সময়ে সুমুবে তু সা।।১৮।। কন্যাং কমললোলাক্ষীং বান্ধবামোদকারিণীম্। সাধুঃ পরাং মুদলেভে বিততার ধনং বহু।।১৯।। বিপ্ৰনাহুয় বেদজ্ঞান কারয়ামাস মংগলম্ লেখয়িত্বা জন্মপত্রীং নাম চক্রে কলাবতীম্।।২০।। প্রৌঢ়া কালেন তাং দৃষ্ট্বা বিবাহাথর্মচিন্তয়ৎ।।২১।। নগরে কাঞ্চন পুরে বণিক্ শংখপতিঃ শ্রুতঃ।।২২।। কুলীনো রূপসং পত্তিশীলৌদার্যগুণান্বিত।।২৩।। বরয়ামাস তং সাধু দুহিতুঃ সদৃশং বরম্। শুভে লগ্নে বহুবিধৈমং গলৈরগ্নি সন্নিধৌ।। ২৪।। বেদবাদিত্রনিদৈদদৌ কন্যাং সথাবিধি। মনিমুক্তা প্রবালানি বসনং ভূষণানি চ।।২৫।। মহামোদমনাঃ সাধুমং গলাৰ্থং দদৌ চ হ। প্রেন্না নিবাসয়ামাস গৃহে জামাতারং ততঃ।।২৬।।
তার প্রার্থনা শ্রবণ করে সভ্যগণ বললেন তোমার কামনা পূর্ণ হবে। এরপর হরি ভক্তগণকে প্রণাম জানিয়ে তিনি প্রসাদ ভক্ষণ করেন ও নিজ গৃহে ফিরে আসেন। তারপর নানা মঙ্গল দ্রব্য আনয়ন করে তিনি নারীগণের দ্বারা বিচিত্র কার্য সম্পন্ন করেন। অনন্তর তার স্ত্রী গর্ভবতী হন ও কমল নয়না চঞ্চল এক কন্যার জন্ম দেন। সাধু মহানন্দে ধনদান করেন। বেদজ্ঞ মহর্ষিগণকে ডেকে মঙ্গল কার্য সম্পন্ন করেন। জন্মপত্রী তৈরী করে পুত্রীর নাম কলাবতী রাখেন। ক্রমে বিবাহের কাল উপস্থিত হলে কাঞ্চনপুরের পরমকুলীন ও সম্পদশালী বণিক শঙ্খপতির সাথে তার বিবাহ দেন। শুভলগ্নে বেদমন্ত্র উচ্চারণ করে বিবাহ সম্পন্ন হয়। বণিক তার কন্যাকে মণি, সুক্তা, প্রবাল, বস্ত্র, ভূষণ প্রদান করে আনন্দিত হন এবং জামাতাকে নিজগৃহে রেখেছেন। অনেকদিন অতিক্রান্ত হলে সত্যনারায়ণ পূজার কথা তিনি ভুলে যান। পুনঃ জামাতাকে নিয়ে তিনি বাণিজ্য করতে চলে যান।।১৫-২৭।।
ত্বং মেনে পুত্রবৎ সাধুঃ স চ তং পিতৃবৎসুধীঃ। অতীতে ভূয়সঃ কালে সত্য নারায়ণার্চনম্।।২৭।। বিস্মৃত্য সহ জামাত্রা বানিজ্যায় মসৌ পুনঃ। অথ সাধুঃ সমাদায় রত্নানি বিবিধানি চ।।২৮।। নৌকাঃ সংস্থাপ্য স সমৌদেশদেশান্তরং প্রতি। নগরং নর্মদাতীরে তত্র বাসং চকারঃ সঃ।।২৯।। কুর্বনক্রয়ং চ চিরং তস্থৌ মহামনাঃ। কর্মণা মনসা বাচা ন কৃতং সত্যসেবনম্।।৩০ ।। ততঃ কর্মবিপাকেন তাপসাপাচিরাদ্বনিক্। কস্মিশ্চিদ্ দিবসে রাত্রৌ রাজ্ঞো গে হে তমাবৃতে।।৩১ জ্ঞাত্বা নিদ্রাগতান সর্বানহৃতং চৌরৈমহাধনম্ প্রভাতে বাচিতো রাজ্ঞা সূতমা গন্ধাবন্দিভিঃ।।৩২।।
প্ৰাতঃ কৃত্যং নৃপঃ কৃত্বা সদঃ সংপ্রাবিশচ্চ সঃ। ততস্তত্র সমায়াতঃ কিংকরো রাজবল্লভঃ।।৩৩।। উবাচ স তদা বাক্যং শূনুষ ত্বং ধর্মপতে। মুত্তপমালাশ্চ বহুদা রত্নানি বিবিধানি চ।।৩৪। মুমূর্ষু শৌরা গতাঃ সর্বে ন জানীমো বয়ং নৃপঃ। ইতি বিজ্ঞাপিতো রাজ্ঞা পুণ্যশ্লোক শিখামনিঃ।।৩৫।। উবাচ ক্রোধতাম্রাক্ষো যূয়ং সংযাত মা চিরম্। সচৌরং দ্রব্যমাদায় মৎপার্শ্বং ত্বমুপানয়।।৩৬।। নো চেদ্ধনিষ্যে সগরানিতি দূতান্ সমাদিশৎ। নৃপবাক্যং সমাকর্ণ প্রজাগুস্তে চ কিংকরাঃ।।৩৭।। বহুযত্বৈর্ণ সংশোধ্য দ্রব্যং চৌর সমন্বিতম্। একীভূত্বা নিশি তদা মহাচিন্তাতুরোহভবৎ।।৩৮।। হন্তা মাং সর্গণং রাজা কিং করোমি কুতঃ সুখম্। নৃপদন্ডাচ্চ মে মৃত্যুঃ প্রেতত্বায় ভবেদিহ।। ৩৯।। নর্মদায়াং চ মরণং শিবলোক প্রদায়কম্। ইত্যেবং সম্মতং কৃত্বা নর্মদায়াস্তটং যঃ।।৪০। বিদেশিনোহস্য বণিজো দদর্শ বিপুলং ধনম্। মুক্তাহারং গলে তস্য লুণ্ঠিতং বণিজোহস্য চ।।৪১।। চৌরোহয়মিতি নিশ্চিত্য তৌ ববন্ধাত্মরক্ষণাৎ। সধনং সহ জামাত্রা নৃপত্তি মুপানয়ৎ।।৪২।।
সূতজী বললেন–অনেক রত্ন নিয়ে সাধুবণিক নর্মদা তীরের এক তটে উপস্থিত হন। সেখানে অনেক দিন ক্রয়-বিক্রয় বাণিজ্য করলেও কর্ম, মন ও বচন দ্বারা সত্যনারায়ণ পূজা করলেন না। এরপর কর্ম বিপাকে পরে তিনি তাপিত হন, সেই রাজ্যের রাজা ও রক্ষীগণ নিদ্রাভিভূত হলে চোরে সকল কিছু হরণ করে। রাজা তা রাজসেবকদের কাছ থেকে হানতে পারেন। রাজা ক্রোধিত হয়ে চোরের অনুসন্ধানে অনুচর নিয়োগ করেন। তাদের আদেশ দেন তারা যেন সকল চুরি যাওয়া ধনসম্পদ নিয়ে তার কাছে আনে। না হলে তাদের মৃত্যুর কথা বলেন। তা শ্রবণ করে অনুচরবর্গ চোরের অন্বেষণ করতে থাকে। কিন্তু অনেক অন্বেষণের পরেও তা না পেয়ে তারা রাজরোষ থেকে… রক্ষা পাওয়ার উপায় চিন্তা করে। তারা চিন্তা করে যে রাজার হাতে মৃত্যু হলেও প্রেতত্ব প্রাপ্তি ঘটবে কিন্তু নর্মদা সলিলে ডুবে মরলে শিবত্ব প্রাপ্তি হবে, তাই তারা নর্মদা সলিলে আত্মহত্যা করার জন্য নদীতটে আসে। সেখানে তারা বিদেশী বণিকের কাছে অনেক ধনরত্ন দেখতে পায়। ভগবান্ হরি প্রতিকূল হলে রাজা সেই বণিককে জামাতাসহ শৃঙ্খলাবদ্ধ করে কারাগারে বন্দী করে। এরপর সেই বণিক বিলাপ করে জামাতাকে বলে–হে জামাতা আমাদের প্রতিকূলে হরৌ তস্মিন্নাজ্ঞাপি চ বিচারিতম্। ধনাগারে ধনং নীত্বা বন্ধীত তৌ সুদুমতী।।৪৩।। কারাগারে লোহময়েঃ শৃংখলৈরগপাদয়ো। ইতি রাজাজ্ঞয়া দূরস্তথা চক্ৰনিবন্ধনম্।।৪৪।। জামাত্রা সহিতঃ সাধুবিললাপ ভৃশং মুহুঃ।। হা পুত্ৰ তাত তাতেতি জামাতঃ ক ধনং গতম্।।৪৫।। ক্ব স্থিত্বা চ সুতা ভার্যা পশ্য ধাতুবিপর্যয়ম্। নিমগ্নৌ দুঃখজলধৌ কো বাং পাস্যতি সংকটান্।।৪৬। ময়া বহুতরং ধাতুবিপ্রিয়ং হিপুরা কৃতম্। তৎ কর্মণঃ প্রভাবোহয়ং ন জানে কস্য বা ফলম্।।৪৭। সমং শ্বশুরজামাত্রৌ দ্বাদশে বিষাদিনৌ।।৪৮।।
সকল ধনরাশি কোথায় চলে গেল। আমার ভার্যা ও কন্যা কোথায়? এইভাবে দুঃখ করতে থাকেন। তিনি বলেন আমি পূর্বে বিধাতার অপ্রিয় কোনো কাজ করেছি তাই এই দুঃখ ভোগ করতে হল। জানিনা কোন কর্মের ফল আজ ভোগ করতে হচ্ছে। তাঁর জামাতাও এইরূপ দুঃখ করতে থাকেন।।২৮- ৪৮।।