সাত টাকা বারো আনা

সাত টাকা বারো আনা

বেশ পাকা পকেটমারই মৃত্যুর পর আমাদের স্ত্রী হয়ে জন্মায়। এই মহাসত্য আমার অজানাই থেকে যেত যদি না আমি বিবাহ করতুম। এর মধ্যে আবার আর একটি সত্য আছে। সেটাও আমার আবিষ্কার। পেনিসিলিন আবিষ্কারের মতোই আকস্মিক। অথচ সাংঘাতিক। বেদান্ত বলেছেন সত্য গুহায় গা ঢাকা দিয়ে থাকে। হামাগুড়ি দিয়ে বের করে আনতে হয়। যে স্বামী নাড়ুগোপালের মতো হামা দিয়ে প্রাক-বিবাহ পর্বে স্ত্রীরূপী নাড়ুটিকে ধরার চেষ্টা করেছিলেন, তাঁরই এই ফাউ সত্যটি লাভ হয়। কী সেই সত্য! প্রেমিকা যদি স্ত্রী হয়ে জীবন-আঙিনায় নৃত্য করতে আসেন, তাহলে তিনি তো নেত্যকালী হবেনই, সেই সঙ্গে ‘গোদের ওপর বিষফোঁড়া’র মতো শুধু পকেটমার নন, চোরও হবেন। অনেকটা অ্যালসেসিয়ান চোরের মতো। অ্যালসেসিয়ান চোর জিনিসটা কি? একটু ব্যাখ্যার দরকার। ছিঁচকে চোর আছে, সিঁদেল চোর আছে, যে বস্তুটি বলছি সেটি কী? অ্যালসেসিয়ানের ঘ্রাণ আর শ্রবণশক্তি খুব প্রখর এবং বিশ্বস্ত। সেই অ্যালসেসিয়ান যদি চোর হয় তাহলে প্রেম করে বিয়ে করা বউয়ের মতো হবে। এমন বউয়ের ঘ্রাণেন্দ্রিয় আর শ্রবণেন্দ্রিয় বড়ো সাংঘাতিক।

বুক পকেটে সাত টাকা আর পাশ পকেটে বারো আনা। জামা ঝুলছে হ্যাঙারে। সংসার খরচের টাকা, আলুকাবলি, ঘুগনি, ফুচকা খাবার টাকা, সিনেমা দেখার টাকা, সবই সেই মহীয়সীর হাতে জমা করে দিয়ে অবশিষ্ট কয়েকটা টাকায় লেংচে লেংচে আমার মাস চলে। লোকলৌকিকতা হলে সেই অর্থেও সংসার খাবলা মারে। তখন টিফিনে মুড়ি আর গুটিকয়েক বাদামদানা খেয়ে দিন চালাতে হয়। প্রেমের তুফানে অর্থনীতির নৌকোর তলা ফেঁসে গেছে। মনকে বোঝাই, ওরে মন, পস্তাও মাৎ, প্রেম বড়ো পবিত্র মাল। লায়লা-মজনুর কথাই স্মরণ করো। রামী-চন্ডীদাসের কথা ভাব। বিল্বমঙ্গলের উদ্দেশে প্রণাম করো। প্রেম যুগে যুগে। পচা বাদাম চিবিয়ে মুখের বারোটা বেজে গেছে। কুছ পরোয়া নেহি। অধর সুধা পানে চাঙ্গা হয়ে যাবে।

অফিসবারে সকালের দিকেই যত ফ্যাঁকড়া বেরবে। হঠাৎ জগন্নাথবাবু আসবেন। বললেন, আচ্ছা মশাই সিমেন্ট ডিপার্টমেন্টে আপনার কেউ জানাশোনা আছে? নেই! হেলথ ডিপার্টমেন্টে? তাও নেই। মোটর ভিহিকলস? তাও নেই। কী আছে আপনার? খালি আপনি আছেন আর আপনার ছায়া আছে? সমাজের কোনো কাজেই লাগবেন না? সমাজবন্ধু হতে পারেন না? ওয়ার্থলেস বাঙালি।

অথবা কাকে স্টেনলেস স্টিলের চামচে ঠোঁটে করে নিয়ে নিম গাছের বাসায় গিয়ে ছেলেকে পুডিং খাওয়াচ্ছে। একটু পেড়ে এনে দাও না গো। জীবনে যে টুলে উঠে বালব পরাতে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যাবার ভয়ে মরে, সে উঠবে নিম গাছে! বলো কী ম্যাডাম! আহা তুমি উঠবে কেন? রকে গোবিন্দ বসে আছে। তাকে গোটা দুই টাকা দিলেই পেড়ে এনে দেবে।

বারো আনা দামের চামচের জন্যে দু’টাকা খরচ।

তা তো বলবেই। তুমি যে সোনার চামচে মুখ দিয়ে জন্মেছিলে! আমি বলে কত কষ্ট করে পাঁচ কেজি কাপড় কাচার গুঁড়ো কিনে চামচেটা ফিরে পেয়েছিলুম। সুন্দর চামচে! আমার চামচে!

তোমার চামচে তো কি হয়েছে, ওটা তো নেতার চামচে নয় যে কাকে নিয়ে গেছে বলে, চলবে না, চলবে না করার লোক কমে যাবে!

মাদ্রাজি মহিলা হলে আমি তোমাকে আজই তালাক দিতুম। জান কি, তাদের স্টেনলেস স্টিলের প্রাণ। কিংবা, আমার সেই প্রেমাঙ্গিনী বাথরুম থেকে বিকচ্ছ অবস্থায় বেরিয়ে এলেন, ওগো শুনছ!

একি? তুমি যে হিন্দি ছবির নায়িকা হয়ে আছ, একেবারে সত্যম শিবম সুন্দরম। সেনসার না কেটে ছেড়ে দিলে কী করে? এখুনি সামনের আসনের দর্শকরা যে সিটি মারবে!

আঃ রসিকতা রাখো। কী হবে?

হাউসফুল হবে।

রসিকতা কোরো না। সর্বনাশ হয়ে গেছে, আমার আঙুল থেকে এক ভরির আংটিটা সিলিপ করে প্যানে পড়ে গেছে।

বাঁচা গেছে।

ওমা সে কী! আমার বিয়ের আংটি! একবার দেখো না, হরিয়াকে যদি ধরতে পার। হাত ঢুকিয়ে বের করে এনে দিতে পারে কিনা দেখুক।

আজ সেইরকম একটা দিন। শ্যালক আসছেন শোলাপুর থেকে। তিনি চিংড়ির মালাইকারি ছাড়া আর কিছু খান না। ক্ষার সহযোগে খানছয়েক ফুলকো লুচি চলতে পারে। আর নতুন ফুলকপি উঠেছে। ভাপিয়ে দিলে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। শ্যালকের মালমশলা যোগাড় করতে গিয়ে ঘড়ির কাঁটা ঝুলে গেল। তেড়েফুঁড়ে রাস্তায় বেরোতেই পিতার বয়সী শশাঙ্কবাবু গুপ্ত প্রেস আর বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত নিয়ে এক কুচকটালে প্রশ্ন করে বসলেন। গাদী খেলার কায়দায় ঝুল কেটে পালাতে চাইছি। পথ পাচ্ছি না। সাবেক কালের মানুষ, আমার চেয়ে ভালো খেলেন। কিছুতেই ঘর ছেড়ে বেরোতে দিচ্ছেন না।

মুক্তি যখন পেলুম, তখন আর বাসে যাবার সময় নেই। এদিকে আজই ইনকামট্যাক্সের হিয়ারিং-এর দিন। অনেক চেষ্টায় একটা ট্যাক্সি ধরে ফেললুম। আগে চাকরি, পরে খরচের হিসবে। গাড়িতে উঠেই মনে পড়ল, পকেটে পড়ে আছে সাত টাকা বারো আনা। সাত টাকা বারো আনায় চার চাকায় চাপা যায় না। ঝাঁকামুটের চার্জও অনেক বেশি।

গাড়ি ঘুরিয়ে আবার বাড়ি ফিরে এলুম। গোটা পঞ্চাশ টাকা পকেটে রাখা উচিত। যেতে হবে বাম্বুভিলা। সেখানেও কিছু পূজা অর্চনা আছে। আসতে আসতে পকেটটা একবার চেক করার ইচ্ছে হল। সাত টাকা আছে না গেছে। বুকপকেটটা আমি ইচ্ছে করেই হরেক রকম কাগজে ঠেসে রাখি। একে বলে ‘অ্যান্টি-পকেটমার ডিভাইস।’ টুক করে টাকা তুলে নোব, তা হবে না। বিশল্যকরণীর সন্ধানে জাম্বুবানের মতো গন্ধমাদন ঘাড়ে করতে হবে। স্ত্রী মোরে করিয়াছে জ্ঞানী।

লন্ডির বিল বেরুচ্ছে, র‌্যাশানের ক্যাশমেমো, কোষ্ঠীর ছক; বাজারের হিসেব, যাবতীয় ভেজাল, সবই ঠিকঠাক বুক পকেটে বহাল, টাকা সাতটাই নেই। সর্বনাশ! পাশ পকেটেও তেমন ঝঙ্কার উঠছে না। আধুলি আর সিকি সরব দম্পতির মতো সাড়া দিচ্ছে না। সিকি আধুলিকে ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে গেছে। তার মানে পঞ্চাশ পয়সা নিয়ে কলকাতা শহরকে চ্যালেঞ্জ জানাতে বেরিয়েছিলুম। আমি কি নাগা সন্ন্যাসী। কুম্ভমেলায় নাঙ্গা হয়ে ঘুরে বেড়াব। মেজাজের এই অবস্থাকেই বলে, বাবু একেবারে ফায়ার।

যে কেশদামে একদা হাত বোলাতে বোলাতে বলতুম চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা, সেই কেশভারে তিনি চিরুনি চালাচ্ছিলেন বেশ আয়েস করে, আমাকে দেখেই ভূত দেখার মত চমকে উঠলেন, একি ফিরে এল?

ক্রোধে কন্ঠ রুদ্ধ। হুম করে গলা দিয়ে বাঘের মতো গর্জন বেরুলো।

কী, বড়ো বাইরে পেয়েছে।

মাঝে মাঝেই আমাকে অসময়ে নিম্নচাপে কাহিল হয়ে ফিরে আসতে হয় ঠিকই, তবে আজ যে অন্য কারণ। দাঁত চেপে বললুম আজ্ঞে না। সব ঝেড়ে ফাঁক করে দিয়েছ, তোমার কি কোনো কালেই আক্কেল হবে না, বলতে কী হয় যে, তোমার পকেট সাফ করে দিয়েছি।

বাইরে ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে আছে, শোবার ঘরে ঢুকে গুপ্তধন খুঁজছি। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এক একদিন এক এক জায়গায় টাকা রাখি! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রোমেলের ট্যাক্সি। একে বলে ম্যানুভার। যুদ্ধক্ষেত্রে আর সংসারে কোনো তফাত নেই। তিন পাট বিছানায় যেকোনো এক পাটে খামে ভরা গোটা কতক কুড়ি টাকার নোট থাকা উচিত। খাটের চার পাশ। চার পাশের কোন পাশে আছে? মাথার দিকে না পায়ের দিকে? ডান পাশে না বাঁ-পাশে। প্রথম পাটে, না দ্বিতীয় পাটে, না তৃতীয় পাটে। সাত ঝামেলায় স্মৃতি এখন এতই বিপর্যস্ত, কিছুই মনে থাকে না। কোথায় টাকা রাখলুম ডায়েরীতে লিখে রাখতে হয়। কম্বিনেশান তালার কোডের মতো। এক জায়গায় পর পর দুদিন তো আর রাখা যাবে না।

—কী খুঁজছ অমন হন্যে হয়ে বলো না। হয়তো সাহায্য করতে পারি।

—থাক তোমাকে আর সাহায্য করতে হবে না। যে ভালো করেছ কালী, আর ভালোতে কাজ নেই, তুমি এখন সরে পড়ো।

—বিছানাপত্তর অমন ওলট-পালট করছ কেন? বিছানায় ছারপোকা নেই।

—কী খুঁজছি তুমি ভালোই জান। যদি সরিয়ে থাক, দয়া করে খামটা দিয়ে দাও। বাইরে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে দেরি হয়ে যাচ্ছে।

—মাইরি বলছি আমি নিই নি। আমি নিলে বলে নি।

ভাল মানুষের মতো মুখ করে তিনি সরে পড়লেন। এখন ডায়েরি ভরসা। সাত তারিখে রেখেছিলুম মায়ের ছবির পেছনে। আট তারিখে বিভূতি গ্রন্থাবলীর তৃতীয় খন্ডের আঠাশ পাতায়। ন তারিখে দেরাজের তলায়। দশ তারিখে কাপড়ের আলমারির তৃতীয় তাকে হলদে শাড়ির ভাঁজে। মাঝে মাঝে শত্রুপক্ষের এলাকায় ঢুকতে হয়। ভুলেও ভাবতে পারবে না, তস্করের ডেরায় মাল সাজানো। এগারো তারিখে বাথরুমে সেভিংসেটের ভেতরে। বারো তারিখে পুরোনো খবরের কাগজের গাদায়। তেরো তারিখে রেকর্ডপ্লেয়ারের স্পিকারের তলায়। কাল কোথায় রেখেছি। মরেছে, কোনো এনট্রি নেই।

সারা ঘর তোলপাড়। হিঁয়া কা মাল হুঁয়া। গাড়ি হর্ণ দিয়ে অধৈর্য প্রকাশ করছে। এখন তিনিই ভরসা। আমারই টাকা আমাকে চাইতে হবে ভিখিরির মতো। এখন আর খোঁজার সময় নেই। পরে এক জায়গায় চোখ বুজিয়ে বসে ধীরে ধীরে ভাবতে হবে। অফিস থেকে এলুম, জুতো খুললুম, অবিনাশ বাইরের ঘরে বসেছিল, তার সঙ্গে কথা বলতে বলতে লোডশেডিং। তারপর, তারপর কি হল! দেশলাই কোথায়, বাতি কোথায়? হইহই, রইরই। তারপর? আর মনে পড়ছে না।

হ্যাঁগো, কোথায় গেলে?

বলো, কি বলছ?

গোটা কুড়ি টাকা দেবে?

কোথায় পাব?

কোথায় পাব মানে! আজ ত সবে পনেরো তারিখ। সংসার খরচের টাকা নেই।

তোমাকে আমি টাকা দোব না। তুমি নিলে আর দিতে চাও না। শেষ মাসে বড়ো বিপদে পড়তে হয়। আগে দুচার টাকা এদিক-ওদিক থেকে সরাতুম, পুষিয়ে যেত। এখন কোথায় যে রাখ খুঁজে পাই না।

ও এখন আর সরাও না! আমার দু-টাকার নোটের বান্ডিল থেকে রোজই সরছে। জান কী, আমি নম্বর লিখে রাখি!

তোমার সন্দেহ বাতিক।

ও তাই নাকি। তাহলে সকালে সাত টাকা চার আনা সরল কী করে। ক্লিন হাপিস। একবার বলার ভদ্রতাটাও হল না। পথে বেরিয়ে বিপদের একশেষ।

ভুলে গেছি। তুমি সব আনলে, একটু মিষ্টি আনলে না। ওই টাকায় মিষ্টি আসবে।

আবার হর্ণের শব্দ। কী টাকা তাহলে দেবে না?

দিতে পারি এক সর্তে।

ঘড়ি বাঁধা দিতে হবে?

ও তো তোমার ঘড়ি নয়। বাবার দেওয়া।

বেশ, তাহলে আমার বাবার দেওয়া এই সোনার তাবিজ।

ওসব তাবিজ-মাবিজ নয়, কথা দাও আজ রাতেই ফিরিয়ে দেবে। আজ নয় কাল, কাল নয় পরশু, তোমার ওই ন্যাজে খেলা চলবে না।

বেশ তাই হবে। ফিরে এলে কান ধরে আদায় করে নেবে।

ট্যাক্সিচালক বললেন, কি মশাই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন না কি?

না না, ঘুমবো কেন? টাকা খুঁজছিলুম। কোথায় যে রেখেছি কিছুতেই মনে করতে পারছি না।

আপনি ব্যাগ ব্যবহার করেন না?

না।

ভালোই করেন। ব্যাগ মানেই পকেটমার। ও হবেই হবে।

আমার আবার দু-জায়গাতেই ভয়, ভেতরে বাইরে।

আরে মশাই, ভেতরের পকেটেই রাখুন, আর বাইরের পকেটেই রাখুন, পকেটমারের হাত থেকে রেহাই নেই। আমার বাড়িতেও পকেটমার হয়।

ছেলে বুঝি বড়ো হয়েছে। হিন্দী সিনেমা যতদিন না দেশ থেকে যাচ্ছে ততদিন বাপের পকেট গড়ের মাঠ হবেই।

ছেলে নয় মশাই, স্ত্রী। সবচেয়ে মারাত্মক জিনিস।

হ্যাঁ, তা যা বলেছেন। ওকেই বলে খাল কেটে কুমির আনা। আপনি আমার মতো করতে পারেন।

কী বলুন তো?

সেরেফ চোরের ওপর বাটপাড়ি।

যেমন?

আপনিও চুরি করে ফাঁক করে দিন।

ও বাব্বা, সে একবার দুবার চেষ্টা করে দেখেছি। কোথায় যে রাখে! রান্না ঘরে শ খানেক কৌটো। কোনটার মধ্যে যে মাল আছে, কে জানে?

ওদের টাকা রাখার ফিকসড কতকগুলো জায়গা আছে, যেমন মিটসেফ, চালের টিন। এছাড়া শাড়ির আঁচল। বালিশের খোল। একটু চেষ্টা করলেই সন্ধান পেয়ে যাবেন।

আমি তো খুচরো পয়সা কোনোদিন চোখেই দেখতে পাই না। এই আছে, এই নেই।

খুচরো বাড়িতে ঢোকাবেন না। শেষ নয়া পয়সা শেষ করে বাড়ি ঢুকবেন। অন্যের হাতে যাওয়ার চেয়ে নিজের হাতেই যাওয়া ভালো। খরচ করার আর কোনও রাস্তা না পেলে শেষ দশ পয়সায় একটা ওজন নিয়ে নেবেন।

সময় বিশেষে অন্যের কাছে নিজের স্ত্রীর নিন্দে করতে পারলে মনটা বেশ হালকা হয়ে যায়। সর্বক্ষণ আমার সেই এক কাজ, নিজেকে অনুসরণ করা। অবিনাশ। কথা বলতে বলতে লোডশেডিং। দেশলাই, বাতি, আমার জামা ছাড়া তারপর পকেট থেকে টাকার খাম বের করে কোথায় রাখলুম। কোথায় যেন রাখলুম। বাথরুমে?

ইনকাম ট্যাক্স অফিসার কী একটা প্রশ্ন করেছিলেন, খেয়াল করিনি। বেশ বিরক্ত হয়ে বললেন, কি মশাই ভাবসমাধি হয়ে গেল নাকি?

কী বলতে কী বললুম কোথায় রেখেছি বলুন তো?

কী রেখেছেন? কালো টাকা? ধমকের সুর।

আজ্ঞে না, সাদা টাকা।

সাদা টাকা আর নেই। সবই কালো। কই দেখি, রেন্ট রিসিটটা দিন।

বাম্বুভিলা থেকে বেরিয়ে অফিসে আসার পথে চটির স্ট্র্যাপ ছিঁড়ে গেল। নাও, বোঝো ঠ্যালা। ট্যাক্সি ভাড়া মেটাবার পর পকেটে মাত্র ছটা টাকা পড়ে আছে। যাই হোক চটিটাকে টানতে টানতে এক মেরামতঅলার কাছে নিয়ে এলুম। আজকাল যা বাজার পড়েছে, দেড়টা টাকা খসে গেল। কোনো কোনো পেশায় মানুষের বিপদটাই হল মূলধন। চাপ দিয়ে রস বের করার মতো, নিঙড়ে বের করে নাও। ট্যাক্সের ফাঁড়া কাটতে না কাটতেই আর এক ফাঁড়া। ছেঁড়া চটি। চটি সারাতে বিদ্যুৎ চমকের মতো পূর্ব রাতের জায়গা। কারুর বাবার ক্ষমতা নেই খুঁজে বের করে। আমার নিউকাট জুতোর শুকতলার ভেতরে। এমন একটা জায়গা অন্য কারুর কল্পনায় আসবে না। যাক, এখন আমার কাজে মন আসবে। ঘিনঘিনে চিন্তাটা চলে গেল। সারা মাসের রসদ। হারালেই হাতে হারিকেন।

সন্ধ্যের পরে নাচতে নাচতে বাড়ি ফিরে এলুম। আসতে আসতে ভাবছি, শ্যালক মহারাজ এতক্ষণে তোফা চিঁড়ে, বাদাম ভাজা খাচ্ছেন। একটু পরেই ফুলকো লুচি চিংড়ির মালাইকারি। কিন্তু কোথায় সেই দশাসই ঘরজোড়া নয়নলোভন, ব্যাঘ্রলালা-উৎপাদনকারী শ্যালক মহোদয়! আমার স্ত্রী রত্নটিই বা কোথায় গেলেন!

মানুর মা বললে, জামা কাপড় ছাড়ুন চা করে দিচ্ছি।

ওরা কোথায় গেল?

বউদিরা দক্ষিণেশ্বরে গেছেন। বেলাবেলিই গেছেন। ফিরে আসার সময় হয়েছে।

যাক বাবা, ওরা আসার আগে গুপ্ত স্থান থেকে টাকাটা বের করে রাখি। দেখতে পেলে হাসাহাসি করবে। জুতোর র‌্যাকে ছেড়াখোঁড়া জুতো, জুতোর বাকসের অভাব নেই। এক জোড়া বাইশ-শো বাইশ হাফ-বুট শ্যালকের মতোই খুশ মেজাজে বসে আছে। কিন্তু আমার নিউকাট জোড়া কোথায়? জুতো কী মালিক ছাড়াই বেড়াতে বেরিয়ে গেল।

মানুর মা, এখানে আমার এক জোড়া জুতো ছিল, কোথায় গেল জান কি?

জুতো! মনে হয় দাদাবাবু পরে গেলেন। বউদি আপনার ধুতি পাঞ্জাবি বের করে দিলেন, তারপর জুতোটা পায়ে গলিয়ে দাদাবাবু বললেন, বেশ ফিট করেছে। বউদি বললেন, তাহলে ওইটাই পরে চলো। বেশ জামাই জামাই দেখাচ্ছে।

সে কি? জুতো আর চশমা, হ্যাঁ আর একটি বস্তু, স্ত্রী, যার যায়, তার তার, এই রকমই তো শুনে এসেছি এতকাল। নয়া জমানায় স্ত্রী হাত পালটাপালটি হয়, আজকাল হামেসাই হচ্ছে। জুতোটা ফিট করেছে বলে পরে চলে গেল। যেমন বউ তার তেমনি ভাই। সব যেন গামছা হাতে জন্মেছে। গামছাবতার। লম্বা গলা দেখলেই লাগাও আর মারো টান। পঁয়তাল্লিশ টাকার জুতোর শুকতলায় পাঁচখানা কুড়ি টাকার নোট। জুতো ছেড়ে মন্দিরে ঢুকবে। জুতো চোর মুখিয়ে থাকবে। ধর্মের স্থানেই যত অধার্মিকের উৎপাত হয়ে গেল। একেই বলে গ্রহ। পেয়েও হারালুম।

সাতটা বাজল, সাড়ে সাতটা বাজল। খবর শেষ হয়ে গেল। দুই মালের তবু দেখা নেই। গেছে তো গেছেই। মানুর মা বসে বসে ঢুলছে। দুধ ওতলানের মতো এক-শো টাকার শোক মনে উতলে উতলে উঠছে। উদাসীনতার পাখার বাতাস মারছি। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।

পৌনে ন’টা নাগাদ গাড়ি থামার শব্দ হল! উৎকন্ঠার শেষ সীমায় পৌঁছে গেছি। শ্যালকের জন্যে নয়, জুতোর জন্যেই উতলা হয়ে দরজা খুলে বাইরে ছুটে গেলুম। রোমান্সের সবুজ পাতা কবে শুকিয়ে ঝরে গেছে জীবন-তরু থেকে। চলতে গেলে মচমচ শব্দ হয়! জীবনসঙ্গিনী না ফিরলেই সুখী হতুম। কেউ পরে চলে যাক না। দিন কতক পরেই বাপ বাপ বলে ফিরিয়ে দিয়ে যাবে। আমার সেই জুতো জোড়ার মতো। পরলেই ফোসকা। ভেসলিন, গ্লিসারিন, তুলো, সব হার মনে গেল। জুতোয় টক দই, কেরোসিন, স্বভাব আর কিছুতেই নরম হয় না। প্রেমের কোনো লক্ষণই নেই। যে জগাই মাধাই, সেই জগাই মাধাই। দেখলেই কলসির কাণা ছোড়ে। শেষে জুতো বিশেষজ্ঞরা বললেন, ও মশাই খাঁটি গন্ডারের চামড়া, কিছুতেই কিছু হবে না। পা গলিয়ে আর পিরিতের দরকার নেই। স্বভাব না যায় মলে। পরম ভট্টারকের জুতো করে তাকে তুলে রাখো। শান্তি পাবে। এক জোড়া চপ্পল কিনে নাও, আর লেংচে লেংচে চলতে হবে না। তোমার দুঃখে আমাদের বুক ফেটে ভেঙে যায় মা। জুতো তাকে তুলে রাখা যায়। বউকে তো আর তুলে রাখা যাবে না, ঠিক নেমে আসবে।

শ্যালক সূর্যবাবু নেমে আসছেন। আমার ধুতির ফুলপাড় কেমন ঝিলিক মারছে! আমার নজর পায়ের দিকে। যাক জুতো জোড়া পায়েই আছে। শ্যালকের পেছন পেছন আমার সহধর্মিণী নামছেন। চলন বলন দেখে মনে হচ্ছে, বেশ বল পেয়েছেন। এমনিই খুব বলবতী। যখন বলতে শুরু করেন তখন আর সহজে থামানো যায় না। এত আর প্রেস ফ্রিডম নয়। সে অর্ডিন্যান্স করে চেপে দেওয়া যাবে। এ হল নারী স্বাধীনতা, যার শুরু আছে, শেষ নেই। বাপের বাড়ির লোক পেয়ে আজ একটু বেশি খরখর করছেন।

গাড়ি থেকে মালপত্তর নামছে তো নামছেই। বাবা কত কী কিনেছে। সারা দক্ষিণেশ্বরটাই কিনে এনেছে। ক্লিং করে মিটার তুলে গাড়ি চলে গেল। অন্ধকারে এবার তেমন দেখতে পাচ্ছি না। শ্যালকের পায়ে সেই জুতো জোড়াই তো?

সূর্যবাবু বললে, কী দেখছেন অমন করে। আপনার জুতো আমার পায়ে দারুণ ফিট করেছে। সেম সাইজ। আপনি বাঁ-দিকে কেতরে চলেন। আমিও বাঁ-দিকে কেতরে চলি। আপনিও প্রেমিক আমিও প্রেমিক। আপনি ফেঁসেছেন, আমি ফাঁসিনি।

স্ত্রী বললেন, ধরো, ধরো।

কাগজে মোড়া বেশ ভারী একটা কী হাতে এসে গেল। স্পর্শে মনে হচ্ছে, কাপ ডিশ। অনেক স্বামীই তোয়ালে জড়ান ছেলে ধরে, বোকা বোকা মুখে স্ত্রীর পেছন পেছন সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে আসেন। সামনে বেটার হাফ চলেছেন বুক ফুলিয়ে। বেশ মূল্যবান উপহার দিয়ে লোক যেভাবে বিয়ে বাড়িতে খাবার টেবিলের দিকে এগিয়ে যান। ইনিও সেই ভাবেই চলেছেন। আয়না নেই, থাকলে দেখতে পেতুম, আমাকেও নিদারুণ বুদ্ধুর মতো দেখাচ্ছে। মন কেবলই উসখুস করছে, কখন তুমি জুতো জোড়া খুলবে, আমি অমনি তাক বুঝে নোট ক-খানা বের করে নোব। পায়ের চাপে ভেপসে কী অবস্থা হয়েছে কে জানে!

খাবার টেবিলের ওপর একে একে কেনা জিনিস সাজাতে সাজাতে আমার শ্যালকের বোন বললেন, আজ একেবারে প্রাণ খুলে কিনেছি। তোমার সঙ্গে বেরোলে কেনাকাটা করে তেমন সুখ হয় না। যা কিনতে যাব তুমি অমনি বলবে, উঁহু, উঁহু, বাজে খরচ। এই দেখ কেমন কাপডিস কিনেছি। পাথরের চাকি বেলন। আঃ লুচি বেলেও সুখ। আজই উদ্বোধন হবে। এই নাও তোমার অ্যাশট্রে। আর এখানে-সেখানে ছাই ফেলবে না। বুদ্ধ মূর্তিটা দেখো, আহা তুমি যদি ওইরকম শান্তশিষ্ট, ধ্যানস্থ হতে! সংসারের চেহারাই পালটে যেত। অমন গুলিখোরের মতো মেজাজ করেছ কেন? বাইরে মনে হয় তোমার কোনো মেয়েছেলে আছে!

হ্যাঁ, এক মেয়েছেলেতেই চক্ষু চড়ক গাছ!

আমার মতো মেয়ে তুমি পাবে না গো! পড়তে অন্যের পাল্লায়, হৃদয়ে হাফশোল লাগাতে হত। এই দেখ, দু-ডজন চুড়ি কিনেছি, শাড়ির সঙ্গে রং মিলিয়ে। এবার যখন তোমার সঙ্গে সেজেগুজে বেরব না, তখন দেখবে, চড়চড় করে সকলের বুক ফাটবে। ফিস ফিস করে বলবে, দ্যাখ দ্যাখ, বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা।

আমি বাঁদর!

মানুষের মতো তো কিছুই দেখি না, সব সময় দাঁত খিচোচ্ছ।

স্বামীকে বাঁদর বললে কি হয় জান?

নরকে যেতে হয়। তোমার সঙ্গে সংসার করার চেয়ে নরকে গিয়েও সুখ। তোমার ড্যাঙোস আর খেতে পারি না। এই নাও তোমার ফুলদানি আর ধূপদানি। নাও হাত পাতা। ভক্তি ভরে মায়ের প্রসাদ খাও, মনে মনে বলো, মা আমার স্বভাবটা একটু ভালো করে দাও মা। বলো, আমি যেন একটা মানুষ হতে পারি। অমানুষ করে রেখেছ মা!

হাতের তালুতে গোল মতো একটা প্যাঁড়া বসিয়ে দিয়ে, তিনি হুট-পাট করে হেঁসেলে গিয়ে ঢুকলেন। আমার নয়, শ্যালকের বড়ো খিদে পেয়েছে।

শ্যালক সূর্যকান্তের জামা, কাপড়, জুতো ছাড়ার তেমন কোনো ইচ্ছেই দেখা যাচ্ছে না। এলিয়ে বসে আছেন সোফায়। বড়ো ক্লান্ত। মনটা বড় ছটফট করছে। জামাকাপড় না ছাড়ুক, জুতোটা অন্তত খোল! তোমার পদতলে আমার অর্থ দলিত হচ্ছে।

সূর্য, জামাকাপড় ছেড়ে, পাজামা পরে, মুখে হাতে জল দিয়ে বেশ ফ্রেশ হয়ে বোসো না। ভালো লাগবে। সূর্যকান্ত ডান থেকে বাঁ-পাশে এলিয়ে পড়ে বললেন, আপনি ব্যস্ত হবেন না জামাইবাবু। গেলুম ট্যাক্সিতে, এলুম ট্যাক্সিতে, কী আর এমন পরিশ্রম। আপনি ব্যস্ত হবেন না। এ তো আমার নিজের বাড়ির মতো।

প্রথম দিনেই তোমার তো হলে বেশ চোট হয়ে গেল! কী বল?

এইভাবেই খেজুরে আলাপে মনটা ঘুরিয়ে রাখি! কখন বাবু উঠবেন। কখন বাবু জুতো ছাড়বেন। বাবুই জানেন। বউয়ের ভাইয়ের হালচালই আলাদা। জামাইয়ের চেয়ে আদর বেশি। একটু এদিক-ওদিক হলেই কাঁধের ভূত কান ধরে মোচড় মারবে।

সূর্যকান্ত একগাল হেসে বললেন, আমার এক পয়সাও খরচ হয়নি। দিদি কার হাতে পড়েছে, দেখতে হবে তো! যেই টাকা বের করতে যাই, অমনি বলে, টাকার গরম তোর বউকে দেখাস।

মনে মনে বললুম, আচ্ছা, তাই নাকি? সখের প্রাণ গড়ের মাঠ। সারামাসের সংসার খরচ হাওয়ায় উড়ছে। যত টানাটানি রোজ মাছের বেলায়, একটু এদিক-ওদিক খাওয়ার বেলায়।

হেঁসেল থেকে আদরের সুর ভেসে এল। সূর্য জামাকাপড় ছেড়ে হাত মুখে ধুয়ে নে। গরম গরম ভাজছি। আমার জন্যে কোনো মধুর নির্দেশ এল না। আমি তো কাঙাল। খেতে বোসো, না হাত ধুয়ে বসে আছি।

দেখতে দেখতে বেস রাত হয়ে গেল। চারপাশ নিশুতি। বড়ো চাপ খাওয়া হয়ে গেল রে দিদি, বড়ো চাপ খাওয়া হয়ে গেল, বলতে বলতে, সূর্যকান্ত বেশ পরিতৃপ্ত বাঘের মতো গোটাকতক হাই তুলে ফুলতোলা চাদরে লটকে পড়ল। বোন এলেন মশারি গুঁজতে! আমার ওপর হুকুম হল, ঘরের মশারিটা ফেলে ভালো করে গোঁজো, হাঁ করে বসে আছ কেন? দেখছ তো, আমি একটা কাজ করছি।

যো হুকুম! আমি তো আর তোমার শ্যালক নই!

দালানে ঘুটঘুট করে ঘড়ি চলছে। বাইরে সূর্যকান্তর নাক ডাকছে। আমার পাশে তার বোন যেভাবে এলিয়ে আছে, মনে হচ্ছে জেগে নেই। এই তো সুযোগ। এই তো চোরেদের বেরোবার সময়। যাই, নিজের টাকা, নিজেই চুরি করে আনি।

ডান পাটির সুখতলা তুলে ফেললুম। ফাঁকা। তবে কি বাঁ-পাটিতে। সে পাটিতেও বিধবার হাহাকার। যা: টাকা নেই। মহারাজ হাঁড়ি খুলে দেখি মাংস নেই। মাঝরাতে পা ছড়িয়ে বসে আছি, সামনে দু-পাটি নিউকাট। পেছন থেকে কাঁধের ওপর দুটো হাত এসে পড়ল। কে রে বাবা, ভূত নাকি!

না, আমার সহধর্মিণী।

কী গো, মাঝরাতেই জুতো পালিশ করতে বসলে কেন?

ঘুম আসছে না। তাই ভাবলুম কাজটা একটু এগিয়ে রাখি! সকালে তো একেবারেই সময় পাওয়া যায় না। মনে হচ্ছে, যেতে-আসতে সূর্য তো এই জুতোটাই পরবে। বলছিল, পায়ে বেশ ফিট করেছে।

দেখেছ, প্রসাদের কী গুণ! তুমি কী ভালো হয়ে গেছ গো, শোনো, বৃথাই খুঁজছ, মাল আর ওখানে নেই। কাপ, ডিশ, অ্যাশট্রে, চুড়ি হয়ে গেছে। এপিঠ-ওপিঠ, দু-পিঠ ট্যাক্সি ভাড়া হয়েছে। গোটা পঁচিশ পড়ে আছে। কুড়ি টাকা আমার ধার শোধ। পাঁচ টাকা কাল সকালে তোমাকে দিয়ে দোব। জুতোর তলায় কেউ টাকা রাখে। ছি:! মা লক্ষ্মী। জুতোর তলায় চোরা চালানকারীরা সোনার বিস্কুট রাখে। চলো শোবে চলো। ঝাড়তে গিয়ে ভাগ্যিস দেখতে পেলুম।

তুমি জুতো ঝাড়তে গিয়ে, সারামাসের হাত খরচ ঝেড়ে দিলে! আমার মাস চলবে কী করে?

ও তুমি ভেব না, যে খায় চিনি তারে যোগায় চিন্তামনি।

সূর্যর নাক গাঁক করে ডেকে উঠল।

আমি অদৃশ্য কাত্যায়নের দিকে কবজি তুলে ধরে মনে মনে বললুম, কাত্যায়ন নাড়ীটা একবার দেখ তো, বেঁচে আছি না মরে গেছি!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *