মোগলমারির আবিষ্কৃত বৌদ্ধমহাবিহার : প্রত্নকথা
উৎখননের ইতিবৃত্ত ও সংবাদ শিরোনামে মোগলমারি
ইতিহাস ও পর্যটন
বৌদ্ধ প্রভাব

সাতদেউলা থেকে মোগলমারি : কিংবদন্তি ও ইতিহাসের সন্ধানে

সাতদেউলা থেকে মোগলমারি :  কিংবদন্তি ও ইতিহাসের সন্ধানে – সূর্য নন্দী

বহু বছর ধরে, বহু মানুষের নিরন্তর সাধনায় গড়ে ওঠে সভ্যতার ইমারত। মানুষ যেমন সৃষ্টি করে, নির্মাণ করে—তেমনি ধ্বংসও করে। সংকীর্ণ স্বার্থসিদ্ধির কারণে অনেক সৃষ্টিসম্ভার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আবার, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কিংবা কালের নিয়মেও বিলীন হয়ে যায় কত স্থাপত্যের মহিমা। তবু বলতে হয়, কীর্তির কিছু কিছু অংশ থেকে যায়। মাটি খুঁড়ে পাওয়া যায় মানুষের কীর্তিকাঠামো, স্থাপত্যভাবনা, সৃজন ও কর্ষণ ভাবনার নানাবিধ প্রত্ন উপাদান। মাটির উপরে সদাচলমান মানুষের জীবনযাত্রায়, ধর্মাচরণে, প্রথাপালনে, কথায়-গল্পে-কিংবদন্তিতে পাওয়া যায় ইতিহাসের ইঙ্গিত। সুবর্ণরেখার পূর্বতীরে বর্তমান দাঁতন শহরের খুব কাছাকাছি দু-টি গ্রাম সাতদেউলা ও মোগলমারি। দু-টি গ্রামের থেকে প্রাপ্ত নৃতাত্ত্বিক-প্রত্নতাত্ত্বিক-ঐতিহাসিক-সাহিত্যিক প্রভৃতি নানা সূত্রের ইতিহাস-মালা গাঁথবার চেষ্টা করব এই প্রবন্ধে। প্রথমেই, এই অঞ্চলে হাজার বছর ধরে প্রচলিত কিংবদন্তি ও জনশ্রুতির কাহিনিটি জেনে নেব। যে কাহিনি দু-টি স্থানের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সংযুক্ত করেছে।

কিংবদন্তি ও জনশ্রুতি

একদা অমরাবতী পুরীতে বাস করতেন রাজা বিক্রমকেশরী। তাঁর এক সুন্দরী ও বিদুষী কন্যা ছিল যার নাম সখিসোনা। নানা শাস্ত্রে জ্ঞান অর্জনে আগ্রহী, এবং অস্ত্রবিদ্যায়ও পারদর্শিনী ছিলেন। রাজার এক মন্ত্রী নি:সন্তান ছিলেন। মন্ত্রীর পত্নী দেবী মনসার পূজা করতেন। সর্পদেবী মনসার বরে একদিন তিনি তাঁর ঘরে শয্যার উপরে একটি বিষধর সাপ দেখেন। কিছুক্ষণ পরে দেখা যায় সাপের বদলে শয্যায় পড়ে আছে স্বর্ণশৃঙ্খল। সেই স্বর্ণশৃঙ্খল রূপান্তরিত হয়ে ওঠে এক সুন্দর বালকে। মন্ত্রী ও তাঁর পত্নী বালকটিকে পরমযত্নে পালন করতে থাকেন এবং তার নাম রাখেন অহিমানিক। অমরাবতীর যে পাঠশালায় গুরুর কাছে সখিসোনা যান শিক্ষালাভ করতে —সেই একই পাঠশালায় বিদ্যার্জন করতে অহিমানিককেও পাঠানো হল। সেই পাঠশালাতেই উভয়ের পরিচয় এবং প্রণয় শুরু। একদিন পাঠশালায় সখিসোনার লেখনী খুঁজে পেয়ে অহিমানিক তা তুলে দেয় সখিসোনার হাতে। এবং রাজকন্যার কাছ থেকে একটি শর্ত আদায় করে নেয় যে, তার নাম ধরে ডাকার অধিকার দিতে হবে। রাজকন্যা সম্মত হয়। তারপর প্রতিদিন পাঠশালাতে আসার পথে, গাছের আড়াল থেকে অহিমানিকের সম্মোহিত স্বর ভেসে আসত—‘সখিসোনা, সখিসোনা।’ মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনত সখিসোনা, শিহরিত হত। প্রতিদিন, প্রতিরাতে শয়নে স্বপনে শুনত অন্তরের সেই আহ্বান। তারপর প্রণয়, গভীর প্রণয়। তারপর একদিন রাজ-আক্রোশের ভয়েই এক দুর্যোগের রাত্রে সখিসোনা-অহিমানিক বেরিয়ে পড়ল নিরুদ্দেশের পথে। অরণ্যপথ, নদীপথ, বিপদসংকুল পথ অতিক্রম করে চলছিল তারা। একবার দস্যুরা তাদের উপাস্যা দেবীর কাছে নরবলি দেবে বলে ধরে নিয়ে গেল অহিমানিককে। একাকিনী সখিসোনা অরণ্যমধ্যে অন্তরের সমস্ত আর্তি দিয়ে দেবী চন্ডীর কাছে প্রার্থনা করলে সশরীরে অহিমানিক বেঁচে ফিরে এল সখিসোনার কাছে। তারপর উভয়ের পুনরায় পথ চলা। বিভিন্ন স্থান পরিভ্রমণ করে প্রায় ৬ মাস পরে তারা পৌঁছোল সুবর্ণরেখা নদীর তীরে, সাতদেউলাতে (বর্তমান দাঁতন শহর-সংলগ্ন এক্তারপুর-তকিনগর মৌজা)।

সেই রাজ্যের রাজা মাধবচন্দ্র। রাইবনিয়া ছিল সুবর্ণরেখার পশ্চিমে এবং দূরত্ব মাত্র ৬ মাইল। সাতদেউলার ১ মাইল দক্ষিণে পাণিপুকুর (বর্তমানে ঘোলাইতে অবস্থিত)-এর পাড়ে সখিসোনা ও অহিমানিক এসে পৌঁছোয় এবং সেখানেই তারা নিরাপদে বসতি গড়ে বসবাস করতে থাকে। খাদ্যদ্রব্য ক্রয়ের জন্য অহিমানিক একদিন সাতদেউলার নিকটবর্তী বাজারে আসে। সেই পথের ধারে সাতদেউলার নিকটবর্তী স্থানে (বর্তমানে তকিনগর গ্রামের দক্ষিণ প্রান্তে) বসবাস করত এক মায়াবিনী হীরা মালিনী (গয়ানন্দা)—সুন্দরী ও চতুরা মহিলা। যুবক অহিমানিকের সুন্দর রূপ দেখে মুগ্ধ হয় হীরা মালিনী। তার সাথে আলাপ করে এবং ভুলিয়ে ভালিয়ে অহিমানিককে তার ঘরে নিয়ে যায়। জাদুগরি হীরা তার জাদুমন্ত্রের দ্বারা অহিমানিককে তার ঘরে দিনের বেলায় ভেড়া করে রাখত এবং তার স্বরূপে রূপান্তরিত করত রাত্রিবেলায়। অনেকদিন অহিমানিক ফিরে না আসায় তার স্ত্রী সখিসোনা স্বামীকে খুঁজে ফেরে, কিন্তু কোথাও পায় না। তখন সেপুরুষবেশ ধারণ করে এবং সাতদেউলাতে শশীশেখর নামে থাকে। সেই সময় সেখানে এক ভয়ংকর হিংস্র গণ্ডারের উৎপাতে অধিবাসীরা নাজেহাল। ঘরের বাইরে যেতেও লোকে ভয় পাচ্ছে। রাজা মাধবচন্দ্র ঘোষণা করেন যে, ওই হিংস্র গণ্ডারকে যে হত্যা করতে পারবে, তাকে অর্ধেক রাজ্য দিবেন ও রাজকন্যার সঙ্গে তার বিবাহ হবে। শশীশেখর নামধারী সখিসোনা এই গণ্ডারকে হত্যা করে ও পুরস্কারস্বরূপ অর্ধেক রাজ্য ও রাজকন্যা লাভ করে। বর্তমানে এক্তারপুর ও বড়বাঘড়া গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে গণ্ডার হত্যার সেই স্থানকে এখনও লোকে ‘গণ্ডা মারা পাদা’ (মাঠ) বলে থাকে। শশীশেখর শর্ত করিয়ে নেয় রাজকন্যার সাথে কথা বলবে না ও স্পর্শ করবে না এক বছর। শশীশেখর রাজা হয়ে সাতদেউলায় সাতটি বড়ো মন্দির নির্মাণ করায়, অতিথিশালার ব্যবস্থা করে, গরিব প্রজাদের জন্য নানাবিধ কল্যাণমূলক কাজ করে। তারপর এক রাত্রে ‘কান্ত বিচ্ছেদ’ নামে এক যাত্রাপালার আয়োজন করে। অহিমানিক খবর পেয়ে হীরা মালিনীকে অনুরোধ করে ওই যাত্রাপালা দেখতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। হীরা রাজি হয়ে যায়। যাত্রা দেখতে গিয়ে অহিমানিক চিনতে পারে তার স্ত্রীকে। তখন সেসুযোগ বুঝে মন্দিরের দেওয়ালে লিখে দেয়—সেকোথায় কিভাবে অবরুদ্ধ আছে। পরদিন সকালে শশীশেখর সেই লেখা পড়ে সব বুঝতে পারে। তৎক্ষণাৎ সেনাবাহিনী নিয়ে হীরা মালিনীর ঘর চড়াও হয়। প্রথমে অস্বীকার করলেও শশীশেখরের শাসানিতে হীরা বাধ্য হয় অহিমানিককে মুক্তি দিতে। ওই স্থানে হীরা মালিনীরও মৃত্যু হয়—তাই স্থানটি ‘মালিপোতা’ নামে পরিচিত। রাজার আদেশে যাত্রীরা ওই পথ দিয়ে আসা-যাওয়ার সময় ইট-পাথর ছুঁড়ে মারত ওই জায়গাকে লক্ষ করে।

সখিসোনার সঙ্গে মন্ত্রীপুত্র অহিমানিকের রোমাঞ্চকর এই প্রণয়কাহিনি এখনও লোকের মুখে মুখে প্রচলিত। এই কাহিনি নিয়ে পালাগান গাওয়া ও অভিনয় বহুবছর ধরে হচ্ছে বাংলা-উড়িষ্যার এই সীমান্ত অঞ্চলে। পূর্বে বহুল প্রচলিত ছিল। সম্প্রতি সীমান্তবর্তী লক্ষ্মণনাথ রাজগড়ের পাশের গ্রামে বিরিজপুর-এ সুশীল শেঠ নামে একজন লোকপালা গায়কের সাথে পরিচিত হওয়া গেল। তিনি সখিসোনা-অহিমানিকের প্রণয় নির্ভর এই কিংবদন্তিমূলক পালাগানটি এখনও গেয়ে বেড়ান। বর্ধমানের লোককবি ফকিররাম প্রায় ৩০০ বছর আগে অমর কাব্য রচনা করেছেন যার নাম ‘সখিসোনা’। সম্প্রতি বর্ধমানের গবেষক প্রাবন্ধিক মোহম্মদ আয়ুব খান একজন লোকগায়কের কাছ থেকে ওই কাব্যের কিছু গান ও কাহিনিটি সংগ্রহ করেছেন। প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ তাঁর বিখ্যাত কিংবদন্তীর দেশে গ্রন্থে ‘সখীসোনার পাঠশালা’ নামে এই গল্পটি সংযোজিত করেছেন। নরেন্দ্রনাথ দাস লিখিত History of Midnapore, Vol -3, ‘Report on the Archaeology of the District of Midnapore’ অংশে চমৎকারভাবে কাহিনিটি বর্ণিত হয়েছে। পূর্বেই বলা হয়েছে, মোগলমারির এই ঢিবিকে এখনও স্থানীয় লোকেরা সখিসোনার পাঠশালা বলে থাকেন। সুবর্ণরেখার পশ্চিমে নয়াগ্রাম থানার স্বস্তিনীর কাছে সখিসোনার মাঠ নামে একটি মাঠ রয়েছে বলে জানা গেছে। ঝাড়গ্রামের জামবনী ব্লকের কুইলাপাল গ্রামে সখিসোনার হাট আছে বলে ড. আশুতোষ ভট্টাচার্য তাঁর ‘লোকশ্রুতি’ বইতে উল্লেখ করেছেন। এসব থেকে মনে হয়, এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সখিসোনা বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর প্রেম, তাঁর বীরত্ব, তাঁর মহত্ত্ব তাঁকে হয়তো অমর করে রেখেছে।

অবস্থান

মোগলমারি ও সাতদেউলা দু-টি গ্রামই প্রাচীন ‘দন্ডভুক্তি’র অন্তর্গত রাজধানীর অংশবিশেষ, কেন্দ্রস্থল ছিল। বৌদ্ধগ্রন্থ দাঠাবংস-এ উল্লেখিত দন্তপুর বর্তমানের দাঁতন কি না তা নিয়ে পন্ডিতদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। সম্রাট অশোকের কলিঙ্গ যুদ্ধের ক্ষেত্র ছিল বঙ্গোপসাগরের উপকূলভূমি জুড়ে এই বিশাল অঞ্চল—যার স্মারকরূপে এই অঞ্চল ‘দন্ডপ্রদেশ’—এ রকম মতও কেউ কেউ পোষণ করেন। কলিঙ্গরাজ খারবেলের অধিকৃত বিশাল সাম্রাজ্যের মধ্যে ‘দন্ডভুক্তি’ ছিল। ষষ্ঠ শতক থেকে দশম শতক পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন সামন্ত রাজা বা রানি কতৃক ঘোষিত ৫টি তাম্রশাসন বা তাম্রপট্ট এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়েছে যার মধ্যে ‘দন্ডভুক্তি’ উল্লেখিত। ১১ শতকে তিরুমলৈ শিলালিপিতে এবং সন্ধ্যাকর নন্দী রচিত রামচরিত গ্রন্থে দন্ডভুক্তি-র নাম পাওয়া যায়। পরবর্তীকালে কোনো কোনো সময় দন্ডভুক্তি তাম্রলিপ্ত রাজ্যের অন্তর্গত কিংবা বর্ধমানভুক্তির অন্তর্ভুক্তও হয়েছে। বেশ কয়েক-শো বছর কলিঙ্গের কেশরী, সূর্য ও গঙ্গ বংশের সাম্রাজ্যসীমানার অন্তর্ভুক্ত ছিল ‘দন্ডভুক্তি’। মুসলিম শাসনকালে ও ব্রিটিশ আমলে এই অঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ থাকলেও তার গৌরব ক্রমশ স্তিমি হয়ে এসেছে। সুতরাং, দেখা যাচ্ছে খ্রিস্টপূর্ব যুগ থেকে ব্রিটিশ শাসনকাল পর্যন্ত দাঁতন ও সন্নিহিত অঞ্চল নানা কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক দিক থেকে দন্ডভুক্তি বা দাঁতনের গুরুত্ব দক্ষিণ ভারতের সাথে উত্তর ভারতের যোগাযোগের স্থলপথের জন্যই। একদিকে সুবর্ণরেখা নদী আর কিছুদূরে সমুদ্র থাকার কারণে বন্দরনগরী হিসেবেও ‘দন্ডভুক্তি’র এই কেন্দ্রস্থল একসময় খ্যাতি অর্জন করেছিল। প্রাচীনকালে মোগলমারি ও সাতদেউলা দু-টি গ্রামের পাশ দিয়েই (পশ্চিমদিকে) সুবর্ণরেখা নদী বয়ে যেত।

বর্তমান পশ্চিমবাংলার দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তবর্তী শেষ খানা-দাঁতন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাঁতন-১নং ব্লক, ৩নং মনোহরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত একটি বর্ধিষ্ণু গ্রাম মোগলমারি যার মৌজা নাম উত্তর সিমুলিয়া, সংযুক্ত মৌজা জয়রামপুর পশ্চিমে, এবং উত্তরদিকে পুঞ্জা মৌজা। এই তিনটি মৌজার বিস্তৃত এলাকা জুড়ে ছিল প্রাচীনকালের ‘অমরাবতী’। বর্তমান নাম মোগলমারি। অক্ষ ও দ্রাঘিমা যথাক্রমে ২১°৫৭ উত্তর এবং ৮৭°১৬ পূর্ব। গ্রামের ৪১/২কিমি পশ্চিমে বয়ে যাচ্ছে সুবর্ণরেখা নদী। গ্রামটির পূর্বদিক দিয়ে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর গেছে ন্যাশনাল হাইওয়ে ৬০—দক্ষিণ ভারতের সাথে যোগাযোগের অন্যতম পথ। কিছুদিন আগে পর্যন্ত এই পথকে বলা হত ও টি রোড বা উড়িষ্যা ট্রাঙ্ক রোড। অহল্যাবাঈ রোডও বলা হত। পুরীর জগন্নাথ মন্দির যাওয়ার রাস্তা বলে জগন্নাথ সড়ক নামেও এই পথ পরিচিত। ওই রাস্তার পূর্ব পাশ বরাবর রয়েছে রেলপথ। ১কিমি দূরত্বে আছে একটি ছোট্ট রেলওয়ে স্টেশন। বর্তমান দাঁতন শহর থেকে ৬কিমি উত্তরে মোগলমারির অবস্থান।

মোগলমারি গ্রাম থেকে ৭কিমি দক্ষিণে সাতদেউলা গ্রাম। বর্তমান মৌজা নাম এক্তারপুর-তকিনগর, জে এল নং ৯০। দাঁতন থানা, দাঁতন-১নং ব্লকের দাঁতন-১/৮ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত গ্রামটি। দাঁতন শহরসহ এক্তারপুর-তকিনগর গ্রামকে বাইপাস করে গেছে এন এইচ। বামনপুকুর থেকে ঘোলাই পর্যন্ত এন এইচ পুরোনো ও টি রোড ছেড়ে দিয়েছে। ফলে বর্তমানে এন এইচ রাস্তা এক্তারপুর-তকিনগরের পশ্চিম পাশ ঘেঁসে প্রসারিত। মোটামুটিভাবে বর্তমান গ্রামের পশ্চিম অংশকে এক্তারপুর, আর পূর্ব অংশকে তকিনগর বলা হয়। গ্রামের পূর্বদিকে ১কিমি দূরত্বে রেলপথ ও দাঁতন রেলওয়ে স্টেশন। মৌজার কিছুটা অংশ দাঁতন শহরের একদিকে ঢুকে গেছে। সরাই বাজার চক-এর পশ্চিম পাশটা উক্ত মৌজাভুক্ত। বর্তমান দাঁতনের কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যাণ্ড, সাবরেজিস্ট্রি অফিস প্রভৃতি অবস্থিত এই মৌজাতেই। এই মৌজার দক্ষিণদিক লাগোয়া জয়পুরা মৌজা ও ভবানীপুর মৌজা—দাঁতন শহরের পশ্চিমাংশ।

মোগলমারির প্রত্নসমীক্ষা

ইতিমধ্যে মোগলমারির প্রত্নখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। ২০০৪ থেকে ২০১২ পর্যন্ত মোট ৭বার প্রত্নখনন হয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে, প্রত্নবিদ ড. অশোক দত্তের অধিনায়কত্বে। উৎখনন শুরুর বহু পূর্ব থেকেই বিভিন্ন প্রত্নসামগ্রী পাওয়া গেছে ওই গ্রামে। একটি বুদ্ধমূর্তি, একটি টেরাকোটার সিল যাতে ব্রাহ্মীলিপি উৎকীর্ণ, একটি সূর্যমূর্তি, একটি গণেশমূর্তি ছাড়াও অনেকগুলি ভগ্নমূর্তি, কারুকাজ করা ভগ্নপাথর প্রভৃতি বহু প্রত্নসামগ্রী পূর্বেই পাওয়া গিয়েছিল। বস্তুত, মোগলমারি পুরো গ্রামটি অসাধারণ এক প্রত্নক্ষেত্র। হ্যারিসন সাহেবের ‘Report on the Archaeology of the District of Midnapore’ (No-207, Dated the 20th August, 1873) থেকে আমরা জানতে পারি যে, রাজঘাট রোড নির্মাণের জন্য মোগলমারি ও সাতদেউলা থেকে ২৬ লক্ষ ইট ও পাথর তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সুতরাং, অনুমান করা যেতে পারে এই দুই গ্রামে কী বিপুল-বিশাল স্থাপত্যকীর্তি বিরাজ করত। ২০০৪-২০১২ ড. অশোক দত্তের নেতৃত্বে মোগলমারি গ্রামের অংশে এবং কিংবদন্তি-খ্যাত সখিসোনা ঢিবিতে উৎখনন করে আরও বহু প্রত্নসামগ্রী এবং নানা অলংকরণে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ এক বৌদ্ধবিহারের স্থাপত্য নিদর্শন পাওয়া গেছে। ৮০মি × ৮০মি টিবিতে যে-বৌদ্ধবিহারের আদল (ইটের দেয়ালের কাঠামো) পাওয়া যাচ্ছে পরে তা দু-টি পর্যায়ে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। দেয়ালের বাইরের অংশে স্টাকোর অভিনব অলংকরণ—বিভিন্ন মূর্তি, পদ্মফুল, ধর্মচক্র প্রভৃতি মুগ্ধ করে আমাদের। এ ছাড়া পাওয়া গেছে বুদ্ধমূর্তি, লিপি-উৎকীর্ণ কয়েকটি সিল, প্রচুর মাটির প্রদীপ, অর্ঘ্যপাত্র, অসংখ্য কড়ি, অনেকগুলি ভোটিভ ট্যাবলেট—যাতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আকারের সারিবদ্ধ ধ্যানী বুদ্ধের মূর্তি উৎকীর্ণ প্রভৃতি। মোগলমারিতে প্রত্নপ্রাপ্তির বিবরণ সংক্ষেপে এই স্বল্পপরিসরে উল্লেখ করলাম। কিন্তু এ তো গেল প্রাপ্তির কথা—যা লোকগোচরে এসেছে। বহু বছর ধরে বহু মূল্যবান প্রত্নসামগ্রী বিক্রি করে দিয়েছেন, লুকিয়ে রেখেছেন কেউ কেউ। আমরা তা জানি না। যাই হোক, ড. অশোক দত্তের আন্তরিক প্রয়াসে প্রত্নখননে মোগলমারি গ্রামে আবিষ্কৃত এই বৌদ্ধবিহারটি আজ পৃথিবী-পরিচিত।

সাতদেউলার প্রত্নসমীক্ষা

১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হ্যারিসনের রিপোর্টে মোগলমারি ও সাতদেউলা গ্রাম দু-টির কথা জানা গেছে। জানা গেল, রাজঘাট পর্যন্ত রাস্তা তৈরির জন্য দু-টি গ্রাম থেকে বিপুল পরিমাণে ইট-পাথর নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু সাতদেউলা গ্রামটি কোথায় অবস্থিত তা জানা ছিল না। অনেক খোঁজ করার পর জানা গেল বর্তমান দাঁতন ১/৮ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত, দাঁতন শহর-সংলগ্ন এক্তারপুর-তকিনগর মৌজা নামের গ্রামটিই প্রাচীন সাতদেউলা। প্রবীণ লোকের মুখে মুখে ‘সাতদেউলা’ নামটি প্রচলিত। প্রতিবেদক নিজেই এই গ্রামের অধিবাসী। গ্রামের চারদিকে ছড়ানো-ছিটোনো প্রত্নবস্তু, ভূপ্রকৃতি, বিশাল দীঘি প্রভৃতি দেখে বিশ্বাস জন্মে। ২০০৪-এর এপ্রিলে, একদিন মোগলমারিতে প্রত্নখনন করতে আসা তপন দাস ও শুভেন্দু মুখার্জী গ্রামে আসেন। তারপর ড. অশোক দত্ত এসে গ্রামটি পরিদর্শন করে অভিভূত হন। তাঁরা সকলেই মন্তব্য করেন, এই এক্তারপুর-তকিনগর গ্রামই প্রাচীন সাতদেউলা। প্রাচ্যবিদ্যামহার্ণব নগেন্দ্রনাথ বসুর একটি উক্তিও এ প্রসঙ্গে প্রণিধানযোগ্য। তিনি লিখেছেন—‘At that time the principal gate of Mughalmari was close to the satdeul of Dantan’ দাঁতন শহরের কাছাকাছি ‘সাতদেউল’ গ্রামটি এবং সাতটি দেউলের অবস্থিতি ইঙ্গিত করছে, না, সেই দেউল, সেই গৌরব এক্তারপুর-তকিনগর গ্রামে বর্তমান নেই। তবে, অসংখ্য প্রত্ন উপাদান এখনও পরিদৃশ্যমান। গ্রামের উমাকান্ত প্রধান মহাশয়ের বাড়ি ও সংলগ্ন ভূমি বেশ উঁচু, একটা ঢিবির মতো। তাঁর বাড়ির সামনে বটের শিকড়বেষ্টিত ইটের দেওয়ালের অংশ এখনও দাঁড়িয়ে আছে। ওই উঁচু ঢিবির উত্তর ও দক্ষিণ- দিকে বেশ কয়েকটি ডোবা, ছোটো পুকুর। আর পূর্বদিকে বেশ বড়ো একটা পুকুর, নাম—হাটপুকুর। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে পঞ্চায়েতের প্রকল্পে ওই হাটপুকুর পুর্নখননে পাওয়া গেছে কালো পাথরের শিরস্ত্রাণসহ একটি বিশাল মুখমন্ডল—যার পরিমাপ ৪৩সেমি × ৪১সেমি × ২৪সেমি সুন্দর কারুকাজ করা। মূর্তিটি গ্রামের সুবল দাসের বাড়িতে আছে। একই সময়ে ওই পুকুরে পাওয়া গেছে কালো পাথরের এক ভগ্নবাহু যার সর্পতকতি বাহুবন্ধনী দৃশ্যমান। গ্রামের কীচকেশ্বরী মন্দিরের দেবীমূর্তি কালো ব্যাসল্ট পাথরের, আর একটি ওই একই মূর্তি-পাথর কার্তিক দাসের বাড়ির সম্মুখে পূজিতা। দেবীমূর্তির স্পষ্ট রূপ প্রতীয়মান নয়। গ্রামের ঝগড়েশ্বর শিবমন্দিরের প্রাঙ্গণে একটি প্রাচীন তেঁতুলগাছের তলায় সংরক্ষিত রয়েছে এক বিশাল আকারের মাকড়া পাথরের মূর্তি, অসংখ্য ছোটো-বড়ো মূর্তির ভগ্নাংশ, মন্দিরগাত্রের অলংকরণের টুকরো-টাকরা প্রভৃতি প্রত্নসামগ্রী। সুভাষপাণি মহাশয়ের বাড়িতে, টিপু সরেন মহাশয়ের বাড়িতে, শিবনারায়ণ দাস-অরুণময় দাস-এর বাড়িতে এবং আরও কারও কারও বাড়িতে কিছু কিছু প্রত্নদ্রব্য রক্ষিত আছে। গ্রামের শীতলা মন্দিরে, ঝিলকেশ্বর শিবমন্দিরের সম্মুখপ্রাঙ্গণে, দিলীপ মিশ্রর বাড়ির পাশে গাছের তলায় নানা কারুকার্যময় প্রত্নসামগ্রী রয়েছে। একটি ডোবা থেকে প্রাপ্ত ৩টি লোহার পাটাতন গ্রামের সুধাংশু মিশ্র মহাশয়ের বাড়িতে রাখা হয়েছে। স্থাপত্যের অন্যতম একটি নিদর্শন চৌধুরী ঘোষ মহাশয়ের গৃহপার্শ্বস্থ পুকুরের দক্ষিণদিকের পাড়—আগাছা সরিয়ে দেখা যাচ্ছে লম্বমান পাড়ের পুরোটাই পুরানো ইটের দেওয়াল। পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত। ইটের সাইজ ২৩সেমি × ২৩সেমি × ৫সেমি এই ইটের দেওয়াল, এইসব প্রত্নসামগ্রী দেখে ড. অশোক দত্ত মন্তব্য করেছিলেন পাল যুগের প্রত্ননিদর্শন। ওই ইটের দেওয়ালটি আরও কিছুটা পশ্চিমদিকে প্রসারিত হয়ে উত্তরদিকে লম্বমান অনেকদূর পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে বলে অনুমান করা যেতে পারে। কেননা, ক্ষেত্রসমীক্ষায় চাষজমি দেখে দেখে উত্তরদিকে ‘কঁইগেড়িয়া শ্মশান’-এর উপর দিয়ে হাইস্কুলের খেলার মাঠের পশ্চিম পাশ দিয়ে, পুরোনো ইটের টুকরো-টাকরা পাওয়া যাচ্ছে। সুতরাং, সাতদেউলা গ্রামের এই পশ্চিমাংশ ইটের প্রাচীর দেয়াল দিয়ে হয়তো সুরক্ষিত ছিল বলে অনুমান করা যেতে পারে। কেননা, কাছেই ছিল সুবর্ণরেখা নদীর অবস্থান। ও টি রোডের পূর্বদিকে উত্তর-দক্ষিণে প্রসারিত বিশাল দীঘি ধর্মসাগর। দীঘির মাঝখানে মাকড়া পাথরের একটি গোলাকৃতি গম্বুজ। ব্যাসার্ধ প্রায় চার ফুট। থাকে থাকে সাজানো গোলাকৃতি পাথর। হয়তো সেটি দীঘি প্রতিষ্ঠার চিহ্নস্বরূপ। দীঘির চারদিকে উঁচুপাড়। ও টি রোড থেকে দীঘির উত্তর পাশ দিয়ে দাঁতন রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত পঞ্চায়েত থেকে একটি নতুন রাস্তা হয়েছে সংযোগ সাধনের জন্য। দীঘির দক্ষিণ পাশ দিয়ে পূর্ব-পশ্চিমে প্রসারিত একটি খাত এখনও পরিদৃশ্যমান—যেটি খাল হয়ে সুবর্ণরেখার সাথে সংযুক্ত হয়েছে। গ্রামের উত্তরদিকে ও পূর্ব-পশ্চিম বরাবর খাত পরিলক্ষিত হচ্ছে। গ্রামের বিখ্যাত বর্ধিষ্ণু ঘোষ পরিবারের চিংড়া পুকুর পুনর্খননের সময় (২০১০) দক্ষিণদিকে পুরোনো ইট পাওয়া গেছে। বর্তমান এক্তারপুর-তকিনগর মৌজা ও জয়পুরা মৌজার সন্ধিস্থলে অবস্থিত দাঁতন হাইস্কুলের খেলার মাঠ। সরাইবাজার চক থেকে পশ্চিমদিকে একটি গলি রাস্তা দিয়ে ৩ মিনিট হেঁটে গেলে পড়বে মাঠটি। মাঠের ভূমির প্রকৃতি প্রত্নচোখ দিয়ে দেখলে বিস্মিত হতে হয়। কচ্ছপের পিঠের মতো বেশ উঁচু মাঠ। মাঠের পূর্ব ও দক্ষিণদিকে প্রায় ২৫/৩০ ফুট নীচে খাল/জমি পশ্চিমদিকে ঢালু হয়ে নেমে গেছে ‘দহন’-এর দিকে। লোকে ‘দন’ বলে—দহ>দহন>দন। ২০১২-র ২১ মে প্রত্নতাত্ত্বিক ড. অশোক দত্ত মহাশয় মাঠটি দেখেছেন। তিনি পর্যবেক্ষণ করে উৎসাহিত হয়েছিলেন। প্রত্নক্ষেত্র বটে! তিনি কথা দিয়েছিলেন, পরের বার এলে সেখানে পরীক্ষামূলক একটি Trench খুঁড়ে দেখবেন।

সাতদেউলার সাথে অমরাবতী—ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক যোগসূত্রের সন্ধানে

এ প্রসঙ্গে প্রথমেই উল্লেখ করব প্রাচ্যবিদ্যামহার্ণব নগেন্দ্রনাথ বসুর একটি মন্তব্য। তিনি লিখেছেন:

About two miles to the north of Dantan are lying the extensive ruins of the once famous Mughalmari; and in the north of the Present Village are to be found the remains of the gada which bore its name. The natives point to this place as having been the site of the gada which was built by the famous warrior vikramjit…. At that time the principal gate of Mughalmari was close to the sat-deul of Dantan.

এই বর্ণনায় যে তথ্যসূত্র পাওয়া যাচ্ছে তা হল—প্রথমত, রাজা বিক্রমজিতের নাম। বিক্রমকেশরীও হতে পারে। সম্ভবত তিনি একাদশ শতকের সামন্ত রাজা ছিলেন। দ্বিতীয়ত, মোগলমারিতে গড়-দুর্গ এবং রাজপ্রাসাদ তিনিই নির্মাণ করিয়েছিলেন। তৃতীয়ত, মোগলমারি তখন বিখ্যাত ও ব্যস্ত অঞ্চল ছিল। চতুর্থত, মোগলমারিতে যাওয়ার প্রধান প্রবেশদ্বার ছিল দাঁতনের নিকটবর্তী সাতদেউলায়। আগেই উল্লেখ করেছি সাতদেউলার পশ্চিম-পাশ ঘেঁসেই সুবর্ণরেখা প্রবাহিত হত প্রাকৃতিক কারণেই। জলপথে যাত্রীরা এসে সাতদেউলায় নামতেন, দেবদেউল দর্শন করে মোগলমারি বা অমরাবতীর উদ্দেশ্যে রওনা হতেন—এ রকম অনুমান করা যেতে পারে। প্রাচীন এই সড়ক পথটিও বর্তমান অবস্থানের নিরিখে কল্পনা করা যেতে পারে। বলভদ্রপুর মৌজা থেকে বর্তমান ও টি রোডের পশ্চিমদিকে একটি প্রশস্ত পথ নেমে গিয়ে বর্তমান এক্তারপুর-তকিনগর মৌজার (প্রাচীন সাতদেউলা) পশ্চিমপ্রান্ত দিয়ে (বর্তমান পালপাড়ার পেছন দিয়ে) পথটি প্রসারিত হয়েছে। ভূমিদপ্তরের নকশায় পথটি এখনও বেশ প্রশস্ত। সম্ভবত সেই পথটি দাঁতন হাইস্কুল মাঠের পশ্চিমদিকে আদিবাসী পাড়ার উপর দিয়ে জয়পুরা-ভবানীপুর-কারকপুর-দোয়াস্তি-ধলহারা (বামন পুকুর) মৌজার উপর দিয়ে মোগলমারি পৌঁছেছে। জয়পুরা ভবানীপুর মৌজার ভূমির অবস্থান-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করলে এ অনুমান সত্য বলে মনে হয়। এই মৌজাগুলির প্রত্ন খনন করলে তথ্য প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে। এই মৌজাগুলির পশ্চিম প্রান্ত ধরে সুবর্ণরেখা প্রবাহিত হত। বর্তমান ভবানীপুর মৌজায় মন্দির বাজারে অবস্থিত শ্যামলেশ্বরের মন্দিরের পিছনের ভূপ্রকৃতি দেখলে এখনো তা বোঝা যায়। ভবানীপুর-জয়পুরা প্রভৃতি মৌজায় কিছু প্রত্ন-উপাদান পাওয়া গেছে। মাটি খুঁড়তে গিয়ে পুরোনো আমলের ২২ × ২২ × ৫সেমি সাইজের ইট পাওয়া গেছে। জয়পুরাতে কয়েকবছর আগে পঞ্চায়েত প্রকল্পে মাটি খুঁড়তে গিয়ে পাওয়া গেছে অজস্র শঙ্খ। গ্রামের প্রায় প্রত্যেকের বাড়িতে সেই শঙ্খ আছে এখনও।

যে সময়ের কথা আলোচনা করছি সেই দশম-একাদশ শতাব্দীর পূর্বে বর্তমানের শ্যামলেশ্বর মন্দির বা দাঁতন শহরে অবস্থিত জগন্নাথ মন্দির, চন্দনেশ্বর মন্দির প্রভৃতির স্থাপত্য-অস্তিত্ব ছিল বলে মনে হয় না। ‘বিদ্যাধর দীঘি’ হয়তো ছিল না —যে-বিদ্যাধর দীঘির পশ্চিমদিকের চরের উপর দিয়ে বর্তমানের রাস্তা দাঁতন শহরের অনেকাংশ জুড়ে প্রসারিত। সাতদেউলা থেকে অমরাবতী যাওয়ার উক্ত Route ধরে প্রাচীন যে-সড়কপথের আলোচনা করছি তার পশ্চিমদিকে কাছেই ছিল সুবর্ণরেখা নদী এবং পূর্বদিকে বিস্তৃত ছিল জনবসতি। এক্তারপুর-তকিনগর-জয়পুরা-ভবানীপুর-কারকপুর-দোয়াস্তি-উত্তর সিমুলিয়া-পুঞ্জা-জয়রামপুর প্রভৃতি বর্তমানের যে মৌজাগুলির অবস্থান—তার উপর দিয়েই সাতদেউলা থেকে প্রাচীন অমরাবতী যাওয়ার সড়ক ছিল। রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক কারণে সড়কসংশ্লিষ্টঅঞ্চল ব্যস্ত ও বিখ্যাত ছিল।

উপরে যে-মৌজাগুলির নাম উল্লেখ করেছি তার পূর্বদিকে লাগোয়া মৌজাগুলি হল চাউলিয়া-উত্তর রায়বাড়-কৃষ্ণপুর-কৃষ্ণমাইতিবাড়-বেজদা-কাকরাজিত-গণপাদা-মালিয়াড়া-সুন্দরপুর-মনোহরপুর প্রভৃতি। বর্তমানের নামধারী এইসব মৌজাগুলির এলাকা মিলিয়ে ছিল দন্ডভুক্তির কেন্দ্রস্থল। ষষ্ঠ শতকের পূর্ব থেকেই ইতিহাসে, সাহিত্যে, বিভিন্ন তাম্রশাসনে দন্ডভুক্তির উল্লেখ পাওয়া যাচ্ছে। ইতিমধ্যে সংক্ষেপে কিছুটা আলোচনা করেছি। বহু লেখক-গবেষকের উদ্ধৃতি এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়। কেবলমাত্র নীহাররঞ্জন রায়-এর একটি মন্তব্য জেনে নেব। তিনি লিখেছেন:

 পশ্চিম-দক্ষিণবঙ্গের আর একটি সুপ্রসিদ্ধ নগর দন্ডভুক্তি। এই নগর দন্ডভুক্তির এবং পরে দন্ডভুক্তি মন্ডলের শাসনাধিষ্ঠানরূপে খ্যাতিলাভ করিয়াছিল। মেদিনীপুর জেলার দাঁতন থানা ও দাঁতন শহর প্রাচীন দন্ডভুক্তির স্মৃতি বহন করিতেছে।

সুতরাং, বলা যেতে পারে, এই অঞ্চল জনবসতিপূর্ণ ছিল এবং দন্ডভুক্তির কেন্দ্রস্থল ছিল।

বিভিন্ন কারণে এই অঞ্চল ব্যস্ত ও বিখ্যাত ছিল। প্রথমত, বাণিজ্যিক কারণে— জলপথ ও স্থলপথের দু-দিক থেকেই সুবিধা ছিল এখানে। সুবর্ণরেখা নদীপথের সামান্য দূরে সংযোগ ঘটেছে সমুদ্রের সঙ্গে। বড়ো বড়ো নৌকা বা বাণিজ্য তরীর এখানে আগমন ঘটত। মোগলমারি গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিমদিকের নীচু ধানখেত এলাকাকে এখনও স্থানীয় মানুষ ‘জাহাজডুবি’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। সাতদেউলার তথা দাঁতন হাইস্কুলের খেলার মাঠের পশ্চিমদিকের ‘দন’ (দহ-ন) এলাকাকে বলা হয় ‘জাহাজঘাটা’। ইতিহাসের নির্যাস থেকে গেছে জনশ্রুতিতে। এক সময় বন্দরনগরী ছিল এই দাঁতন। জয়পুরা গ্রামে এক জায়গায় অসংখ্য পরিমাণে শঙ্খ পাওয়া গেল। সম্ভবত আড়ত বা গুদাম ছিল এখানে। স্থলপথে তাম্রলিপ্তর সাথে যেমন যোগাযোগ ছিল তেমনি দক্ষিণ ভারত ও উত্তর ভারতের সাথেও যোগাযোগ ছিল। সারা ভারতের ও বিদেশের বণিকের দল এখানে আসতেন পণ্যাদি ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য। ‘দন্ডভুক্তি’র উল্লেখযোগ্য বাণিজ্যজাত সামগ্রী ছিল চন্দনকাঠ, কাজুবাদাম, শাঁখের তৈরি বিভিন্ন উপকরণ, রেশম, রেশমজাত দ্রব্য, বস্ত্র, শুকনো মিষ্ট, কার্বন ইত্যাদি। দন্ডভুক্তির তৈরি শোলা শিল্পাদি, মিহিচাল, কাঠের তৈরি জিনিসপত্র ভারতের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি হত। দাঁতনে ছিল পণ্যসামগ্রী কেনা-বেচার খোলা বাজার। নানা সূত্র থেকে আরও জানা যায়, এখানে গোরুর গাড়ি তৈরি হত, এবং নৌকা, শকট প্রভৃতি নির্মাণ হত। মহুয়াজাত আসব বা মদ এখানে পাওয়া যেত। পোর্তুগিজ ভ্যান-ডেক-ব্রুক (১৬৬০ খ্রিস্টাব্দ) ও ইংরেজ রেনেলের (১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দ) মানচিত্রেও দাঁতন গুরুত্বপূর্ণ শহরাঞ্চল ও বাণিজ্যকেন্দ্র রূপে চিত্রিত। দাঁতনের ৪০কিমি দক্ষিণ-পূর্বে সমুদ্র-নিকটবর্তী ছিল ‘পিপলিবন্দর’। তারও চিত্রণ আছে ওই মানচিত্রে। সুতরাং, নিশ্চিতভাবে বলা যেতে পারে, দীর্ঘ কয়েকশত বছর ধরে সাতদেউলা থেকে অমরাবতী সুবর্ণরেখা-তীরবর্তী এই দন্ডভুক্তি অঞ্চল বাণিজ্যের কারণে বেশ সরগরম ছিল। তাই তো সরাইখানা, ‘সরাইবাজার’ এখনও বিদ্যমান। এক সময় ছিল পথশ্রান্ত পথিকের বিশ্রামস্থল।

দ্বিতীয়ত, ধর্মীয় কারণেও এই অঞ্চল প্রায়ই ব্যস্ত থাকত ও বিখ্যাত ছিল। সাতদেউলা ও মোগলমারি—উভয় গ্রামেই পাওয়া গেছে বহু প্রত্ন উপাদান। বিভিন্ন দেবদেবীর প্রস্তরমূর্তি ও ধর্মীয় উপকরণ মিলেছে। সেইসব উপকরণগুলি ও মূর্তিগুলি পালযুগের বা পাল-পূর্ববর্তী যুগের বলে প্রত্নবিদরা মন্তব্য করেছেন। তাহলে অনুমান করা যেতেই পারে পঞ্চম-ষষ্ঠ শতক থেকেই সাতদেউলা ও অমরাবতী ধর্মচর্চার অন্যতম পীঠস্থান ছিল। সাতদেউলা নামটির মধ্যেই সাতটি দেউল-এর নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু কোন ধর্মের দেব-দেবীর দেউল ছিল তা আজও নির্ণীত হয়নি। এসব অঞ্চলে কোনো কোনো সময়ে হিন্দুধর্মের বা বৌদ্ধধর্মের প্রভাব বা প্রাধান্য ছিল। কোনো সময়ে হয়তো জৈনধর্মেরও প্রভাব ছিল। বর্তমান এক্তারপুর গ্রামে সুবল দাসের বাড়িতে রক্ষিত পাথরের বিশালাকায় মুখমন্ডলের ভগ্ন মূর্তিটি দেখলে (২০১০-এ প্রাপ্ত) আশ্চর্য হতে হয়। মুখমন্ডল যদি এই আকারের হয়, তাহলে পূর্ণাঙ্গ দেহের উচ্চতার পরিমাপ ৮ থেকে ১০ ফুট হবে। এই বিশাল মূর্তি যে-মন্দিরে অধিষ্ঠান করে, সেই দেউল কেমন হবে, কতটা উচ্চতার হবে তা আন্দাজ করা যায়। সুতরাং, সেই যুগে সেই দেবস্থানে ধর্মপ্রাণ মানুষের আগমন তো ঘটবেই। তাই বলা যায়, জনকোলাহলে পরিপূর্ণ ছিল এই এলাকা। তেমনি মোগলমারিতে, প্রাচীন অমরাবতীতেও। সেখানে বৌদ্ধবিহার আবিষ্কৃত, প্রমাণিত। পঞ্চম-ষষ্ঠ শতাব্দীর নির্মিত সেই বৌদ্ধবিহার। পরে ২ বার সংস্কারও হয়েছে। বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্য সন্ন্যাসী এবং সাধারণ বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের নিরন্তর আসা-যাওয়া ছিল। সুতরাং, অনুমান করা যেতে পারে বেশ কয়েকশো বছর ধরে এইসব অঞ্চল মুখরিত ছিল ত্রিশরণ ও ত্রিরত্নের সেই মহামন্ত্রে—‘বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি, ধর্মং শরণং গচ্ছামি, সংঘং শরণং গচ্ছামি।’

তৃতীয়ত, রাজনৈতিক-প্রশাসনিক কারণেও এই সদাব্যস্তময় অঞ্চল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গৌড়রাজ শশাঙ্কের বহু পূর্ব থেকেই বিভিন্ন রাজপুরুষের নজরে থাকত এই অঞ্চল। বিভিন্ন সূত্রে কয়েকজন সামন্তরাজা দন্ডভুক্তি-অধিপতির নাম পাওয়া যাচ্ছে। যেমন —অচ্যুত (গোপচন্দ্রের অধীনস্থ), সোমদত্ত, শুভকীর্তি, ধর্মপাল (পালবংশের নয়), জয়সিংহ (রামপালের শাসনকালে), বিক্রমজিৎ, উন্মত্তকেশরী, মঙ্গলকলস প্রমুখ। তাঁদের কারও কারও প্রশাসনিক দপ্তর অমরাবতীতে ছিল বলে মনে হয়। কারও কারও দপ্তর সাতদেউলা বা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ছিল হয়তো। ১০২৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম রাজেন্দ্র চোল ভীষণ যুদ্ধে দন্ডভুক্তিরাজ ধর্মপালকে পরাজিত ও নিহত করেন। সেই ধর্মপালের স্মৃতিবাহী বিশাল ‘ধর্মসাগর’ দীঘি সাতদেউলার বর্তমান তকিনগর গ্রামের অংশে বিদ্যমান। জয়পুরা গ্রাম জয়সিংহের স্মৃতি বহন করছে। জয়সিংহ উড়িষ্যারাজ কর্ণকেশরীকে বা কর্ণজিৎকে পরাস্ত করেন। কর্ণজিৎ-এর স্মৃতিনির্ভর বর্তমানের কাকরাজিত গ্রাম। ১৫৭৫-এর মোগল-পাঠান-এর রক্তক্ষয়ী ভীষণ যুদ্ধের স্মৃতি বুকে নিয়ে আজকের মোগলমারি। কিংবা মঙ্গলকলস নামে এখানে এক রাজা ছিলেন, যাঁর স্ত্রীর নাম শশিলেখা। শশিলেখার পিতা বিরাট বংশ নাগ-এর উপাসক ছিলেন এবং তাঁরা বিরাট ভুজঙ্গ রূপেও পরিচিত ছিলেন। দেখা যাচ্ছে, মোগলমারির নাম ও কিংবদন্তিতে আরও কিছু ঐতিহাসিক সূত্রের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। কিংবদন্তিতে অহিমানিক ও সখিসোনা বা শশিসোনা। ‘অহি’ শব্দের অর্থ সাপ। সাতদেউলা থেকে সোজা পশ্চিমে ৬ মাইল দূরত্বে রাইবনিয়া দুর্গ। সেও বিশাল প্রত্নক্ষেত্র। ময়ূরভঞ্জ-খিচিং-এর রাজপুরুষের/ভৌমকরের অধীনেও ছিল এই অঞ্চল। সাতদেউলায় কিচকেশ্বরীর (সর্পদেবী মনসা) প্রভাবও রয়েছে। সদ্য নির্মিত কিচকেশ্বরী মন্দির। একটি কালো ব্যাসল্ট পাথরের অস্পষ্ট রূপ মূর্তিকে কিচকেশ্বরী রূপে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এসবের মধ্যেই যেন ইতিহাস লুকিয়ে রয়েছে। দ্বাদশ শতকের পর থেকেই এই অঞ্চলের কোলাহলমুখর গৌরব স্তিমি হতে শুরু করে। বঙ্গের শাসক মুর্শিদকুলি খাঁর সময়ে মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের পুনরায় বঙ্গভুক্তি ঘটে। এই সময় মোহম্মদ তকি খাঁ সুবর্ণরেখার তীরবর্তী দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গের প্রশাসক ছিলেন। এঁর সময়ই সুবর্ণরেখা নদী উৎকল ও বঙ্গের সীমানা নির্দেশক হিসেবে চিহ্নিত হয়। সম্ভবত সেই সময় প্রশাসক মোহম্মদ তকি খাঁ কিছুকালের জন্য হলেও প্রাচীন সাতদেউলার বর্তমান তকিনগর গ্রামে অবস্থান করেছিলেন, সঙ্গে প্রশাসনিক দপ্তর ও লোকজন। তিনশো বছর আগের সেই দক্ষ প্রশাসকের নাম বহন করছে তকিনগর গ্রাম।

পরিশেষে ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ হ্যারিসনের রিপোর্টের সেই পরিচিত অংশ উল্লেখ করব যেখানে মোগলমারি ও সাতদেউলার ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা বলেছেন। তিনি রিপোর্টে লিখেছেন:

On the occasion of excavating earth to get out bricks and stones for the use of Rajghat Road under construction several magnificant remains of the old buildings have been discovered at satdeula and Moghalmari, and bricks, and stones, it is estimated have been dug out, numbering about 26 Lakhs and some crores yet lie buried under the ground. From these it appears that the above place were once the residence of the ancient Rajas and exceedingly populous.

মোগলমারি ও সাতদেউলা গ্রাম থেকে ২৬ লক্ষ ইট-পাথর নিয়ে যাওয়া হয়েছে রাস্তা তৈরির জন্য। আরও লক্ষ লক্ষ ইটB থেকে গেছে মাটির ভিতর। রাজার প্রাসাদ ছিল, দেব-দেউল ছিল, মন্দির-মঠ-বিহারের বিশাল ও বিপুল স্থাপত্য ছিল এই দু-টি গ্রামে ও সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে, একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।

উপসংহারেও কিছু কথা বলার থাকে, আছেও। সাতদেউলা থেকে অমরাবতী —বর্তমানের এক্তারপুর-তকিনগর থেকে মোগলমারি এবং সংশ্লিষ্ট গ্রামগুলি, বিশেষ করে কাকরাজিত, জয়পুরা, ভবানীপুর, উত্তর-রায়বাড়, কৃষ্ণপুর প্রভৃতি গ্রামগুলি বিপুল ঐতিহ্যপূর্ণ বিশাল প্রত্নক্ষেত্র। নির্দিষ্ট অংশ চিহ্নিত করে সরকারি উদ্যোগে প্রত্ন উৎখনন হওয়া প্রয়োজন। ইতিমধ্যে ২০০৪ থেকে ২০১২—এই বছরগুলিতে মোট ৭ বার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিভাগ থেকে ড. অশোক দত্তের নির্দেশনায় মোগলমারিতে উৎখনন হয়েছে। উন্মোচিত হয়েছে একটি বৌদ্ধবিহারের কাঠামোর। মোগলমারির এই সখিসোনার ঢিবিকে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (ASI) ২০১০ খ্রিস্টাব্দে ‘জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সৌধ’ রূপে ঘোষণা করেছেন। বর্তমানে রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব অধিকার থেকে প্রত্নখনন চলছে। সাতদেউলা ও সংলগ্ন প্রত্নক্ষেত্রে উৎখননের কাজ হলে ইতিহাস আরও সমৃদ্ধ হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। ড. অশোক দত্তের আত্যন্তিক আশা ও অন্তিম বাক্য—‘We hope this discovery will add new chapter in the history of Bengal in the near future.’

তথ্যসূত্র :

 ১. N.N.Vasu-Archaeological Survey of Maurbhanja, vol-1

 ২. N.N.Vasu, Archaeological Survey of Maurbhanja, vol-1

 ৩. নীহাররঞ্জন রায়, বাঙ্গালীর ইতিহাস, আদিপর্ব, পৃ. ২৯৮

 ৪. শ্যামাপদ ভৌমিক, দাঁতনের ইতিকথা—দাঁতন গ্রামীণ মেলার মৈত্রী সংকলন, ২০০৪।

 ৫. ড. শ্রীকান্তচরণ পাত্র—সুবর্ণরেখার তীরে, ইতিহাস কহে কথা—দাঁতন গ্রামীণ মেলার ১৫বর্ষ পূর্তি সংকলন মৈত্রী; ২০০৪

 ৬. Harrisons Report on the Archaèology of the District of Midnapure. No.-207. Dated the 20th August 1873.

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *