সাক্ষাৎকার-৬
প্র : আপনি কবিতা লিখে কতটুকু তৃপ্ত?
উ : শুধুমাত্র কবিতা লিখে জীবনযাপন করতে পারি না বোলে আমি অতৃপ্ত। কবিতা লিখতে পারার জন্য আমি পরিপূর্ন তৃপ্ত।
প্র : আপনি কি মনে করেন ‘মানুষের মানচিত্রে’র চেয়েও উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ভবিষ্যতে লিখতে পারবেন?
উ : কেন নয়?
প্র : কেউ কেউ আপনার কাব্যধারাকে ‘নব্য জসীমিজম’ বলে চিহ্নিত করেছেন—এ সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কী?
উ : ঠিক আমার কাব্যধারাকে নয়, আমার একটি বইকে এইভাবে আক্রমন করা হয়েছিলো। সবিস্তারে তার জবাবও আমি দিয়েছিলাম। ব্যাপারটি ঠিক নয়।
প্র : কোন শ্রেণীর কবিতা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে?
উ : একমাত্র জীবনঘনিষ্ঠ কবিতাই দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
প্ৰ : বর্তমান বিশ্বে বাংলা কবিতার স্থান কোথায়?
উ : বিভিন্ন ভাষার কবিতা সম্পর্কে যতোটুকু জানি তাতে মনে হয় বাংলা কবিতাই দেশটির মর্যাদা রক্ষা করতে পারে। উপস্থাপনা করার মতো অন্তত একটি জিনিশই এদেশের আছে।
প্র : তরুণ কবিদের প্রতি আপনার কি কিছু বলার আছে?
উ : অকবিদের হাত থেকে কবিতাকে রক্ষা করুন।
প্র : জনসাধারণের সুবিধার্থে কবিতা অনুশীলন কেন্দ্র খোলা উচিত কি?
উ : জনসাধারনের জন্য নয়— পাঠকদের সুবিধার্থে ছন্দ অনুশীলন কেন্দ্ৰ খোলা যেতে পারে।
প্ৰ : আবৃত্তিকারদের কি মৌলিক শিল্পীর মর্যাদা দেয়া যায়?
উ : অভিনেতাদের মধ্যে ফেলা উচিত।
প্র : দলভুক্ত হয়ে কাব্যচর্চায় কারা বেশি সুবিধা পায়?
উ : দলভুক্ত হয়ে কাব্যচর্চায় অকবিরাই বেশি সুবিধা পায়।
প্র : উপরতলার দেখাদেখি অনেকেই হঠাৎ করে কবি হয়ে যাচ্ছেন— এঁদের সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কী?
উ : কবিতা অঙ্গনে এসে ভন্ডামি করা উচিত নয়— এর আরো বহু স্থান আছে।
প্র : কবিদের ভেতর আজ সুবিধাবাদের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে— এটা রোধ করার উপায় কী? দালাল কবি বলতে কাদের বুঝায়?
উ : মেরুদন্ডের ব্যায়াম করা উচিত। রাজার অনুগ্রহভাজন কবিরাই দালাল কবি, যদি সে রাজা হয় জনগনের অনাকাংখিত।
প্র : কবিতাগ্রন্থ প্রকাশের ক্ষেত্রে যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে তা কিভাবে নিরসন করা যায়?
উ : পেশাদারী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রকাশনায় আসা।
প্র : কবিদের আন্দোলন দ্বারা জনগণ একদিন পেট ভরে ভাত খাবে, স্বাস্থ্য-সুন্দর জীবন পাবে এটা কি আপনি বিশ্বাস করেন?
উ : শুধু কবিদের দিয়ে এ-কাজটি সম্ভব নয়, এর জন্য প্রয়োজন সৎ-রাজনীতির বাস্তব প্রয়োগ। কবিতা সেই রাজনীতির প্রেরনাদাতা।
প্র : একজন কবি হিসেবে আপনি সমাজের কাছ থেকে কতটুকু মর্যাদা আশা করেন?
উ : স্বাধীন মানুষের মর্যাদা ও গ্রহনযোগ্যতা আশা করি।
প্র : দুই বাংলার কবিদের মধ্যে একটি মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠুক— এটা কি আপনি চান?
উ : শুধু দুই বাংলার কবিদের মধ্যে নয়, বিভক্ত দুটি অংশের মধ্যে সীমারেখা ঘোচানো দরকার।
প্র : কী কী সাবধানতা অবলম্বন করলে বাংলা কবিতাকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে?
উ : রাজনীতি ব্যবসায়ী এবং লোলুপ আমলাদের হাত থেকে কবিতাকে যথাসম্ভব দূরে রাখতে হবে, সৎ সমালোচক এবং সৎ পুরস্কারদাতা নিশ্চিত করতে হবে।
প্র : একজন কবি সারাজীবন লিখে সফল হলেন, না ব্যর্থ হলেন—এটা নির্ণয় করার সহজ উপায় কী?
উ : পাঠক! ধন্যবাদ।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ : সমরেশ দেবনাথ
কবিতার দশদিক, ঢাকা, জুলাই ১৯৯০