সহস্রাক্ষ
আমি নিশ্চিতই অপেক্ষমাণ মানুষ। নদী এসে
ছুঁয়ে গেছে। আমার দেহ ঠুকরে অতিক্রম করে
গেল মাছের ঝাঁক। কিন্তু আমি তো কোনো
স্রোতের বা তরঙ্গের জন্য বসে থাকিনি। ঋতুর
পর ঋতু আমার ত্বকে স্পর্শ বুলিয়ে ফিরে গেছে,
দ্যাখো আমি নড়িনি। তবে আমি কার জন্য
বসে থাকি।
একদিন ব্যাকুল হয়ে এক নারী এসে হাত
ধরল। আমি তার আকুলতায় কম্পিত হলেও
চিনতে ভুল হল না তিনি আমার পরিচর্যাকারিণী
স্ত্রী ছিলেন। আমার স্থবিরতা তাকেও বিমুখ
করল। তার শাড়ির আঁচল ধরে অতিক্রম করে
গেল সন্ততিরা আমি অনড়। অটল আমার
প্রতীক্ষা।
পৃথিবীর কত উত্থান-পতন, মানবিক বুদ্ধির
মহাকাশশী সাফল্য, অন্যদিকে পৃথিবীর
দুঃখ-দারিদ্র ঝড়ঝঞা কোনো কিছুই
প্রতিজ্ঞাবদ্ধ কবির অপেক্ষাকে বিচলিত করতে
পারে না। আমি আরও দেখবো, আরো আরো
অফুরান দৃশ্যাবলীর চলচ্চিত্র। কিংবা সমস্ত
প্রত্যক্ষতার বিলয়।
দেখবো বলছি, কিন্তু আমি কি জানতাম চোখ
আর কাজ করে না। আতশকাঁচ ধরেও
প্রজাপতির ডানায় আঁকা অর্থবহ অক্ষর আমি
আর পড়তে পারব না? এখনও কি আমার
দেখার শেষ হবে না? নয়ন নিষ্প্রভ হলে বুকের
ওপর হাত রেখে দেখি হৃদয়ের কাছে হাজার
চোখের পাপড়ি কে যেন মেলে দিয়েছে।
অশ্রুজলে ভেজা।
০৪-০১-২০০২