।। সর্ব-সংস্কার বর্ণন।।
জাতকর্মাদি সংস্কারান্বর্ণানামনু পূৰ্বশঃ। আশ্রমাণাং চ যে ধর্ম কথয়স্য দ্বিজোত্তম।।১।। গর্ভাধানং পুংসবনং সীমান্তোন্নয়নং তথা। জাতকর্মান্ন প্রাযাশ্চ চূড়া মৌঞ্জীবন্ধনম্।।২।।
সর্বসংস্কার বর্ণন
সর্ব-সংস্কার বর্ণন অধ্যায়ে গর্ভাধানাদি সংস্কার সংক্ষেপে করা হয়েছে এবং আচমনবিধিও উক্ত হয়েছে।।১।।
রাজা শতানীক বললেন, হে দ্বিজোত্তম! সকল বর্ণের জাতকর্মাদি সংস্কার তথা যে সকল আশ্রমধর্ম বর্ত্তমান তা কৃপাপূর্বক আনুপূর্বিক বর্ণনা করুন।।২।।
বৈজিকং গাভিকং চৈনো দ্বিজানামপসৃজ্যতে। স্বাধ্যায়েন ব্ৰতৈহো মৈস্ত্রৈবিদ্যেনেজ্যয়াশ্রুতৈঃ।।৩।। মহাযঞ্জৈশ্চ ব্ৰহ্মীয়ং যজ্ঞৈশ্চ ক্রিয়তে তনুঃ। শৃণুম্বৈকমনা রাজন্যযা সা ক্রিয়তে তনুঃ।।৪।। প্রানাভিকর্তনাৎ পুংসৌ জাতকর্মবিধীয়তে। মন্ত্রবৎপ্রাশনং চাস্য হিরণ্য মধুসপির্যাম্।।৫।। নামধেয়ং দশম্যাং তু কেচিদিচ্ছন্তি পার্থিবঃ। দ্বাদশ্যামপরে রাজনমাসি পূর্ণাতথাপরে।।৬।। অষ্টাদশোহনি তথাহন্যে বদন্তি মনীষিণঃ। পুণ্যে তিথৌ মুহূর্তে চ নক্ষত্রে চ গুণান্বিতে।।৭।। মংগলং তাত বিপ্ৰস্য শিবশর্মেতিপার্থিব। রাজন্যস্য বিশিষ্টং তু ইন্দুবৰ্মেতি কথ্যতে।।৮।।
মহর্ষি সুমন্ত বললেন, গর্ভধান, পুংসবন, সীমন্তোয়ন, জাতকর্ম, অন্নপ্রাশন, চূড়াকরণ, মৌঞ্জী নিবন্ধন, বৈজিক এবং গার্ভিক এই সকল দ্বিজের মনকে অপমৃজ্য করে। স্বাধ্যায়, ব্রত, হোম, দান, শ্রুত দ্বারা এবং মহাযজ্ঞ দ্বারা তনু ব্রহ্মীয় করতে হয়।। হে রাজন্, তুমি একাগ্রচিত্তে তা শ্রবণ কর বিপ্রকারে দেহ ব্রহ্মীয় করা হয়।।৩-৪।।
নাভিকর্তনের পূর্বাবস্থা থেকেই জাতকর্ম আরম্ভ হয়। হিরণ্য-মধু এবং ঘৃতের প্রাশন মন্ত্রযুক্ত করতে হয়। কোনো কোনো বিদ্বান ব্যক্তি নামকরণ সংস্কার দশমী তিথি বা জন্মের পর দশম দিনে করতে হয়, আবার কোনো ব্যক্তি দ্বাদশ দিনে আবার কোনো বিদ্বান ব্যক্তি একমাস পূর্ণ হওয়ার পর নামকরণ করা উচিত বলে মনে করেন। আবার অন্য পন্ডিতগণ জন্মের পর আঠারো দিনে নামকরণ করা উচিত বলে মনে করেন। পূণ্যতিথি, সঠিক মুহূর্ত এবং গুণবান্ নক্ষত্র বিচার পূর্বক নামকরণ করা উচিত বলে সেই সকল বিদ্বান্তর্গ মনে করেন।।৫-৭।।
বৈশস্য ধনসংযুক্তং শূদ্রস্য জুগুন্সিতম্। ধনবর্ধনেতি বৈশস্য সর্বদাসেতি হীনজে।।৯।। মনুনা চ তথা প্রোক্তং নান্মৌ লক্ষণামুত্তমম্। শর্মবদ্ ব্রাহ্মণস্য স্যাদ্রাজ্ঞো রক্ষাসমন্তিতম্।।১০।। বৈশস্য পুষ্টিসংযুক্তং শূদ্রস্য প্রেষ্য সংযুতম্। স্ত্রীণাং সুখোদ্যমক্রূরং বিস্পষ্টার্থ মনোরমম্।।১১।। মংগলং দূর্ঘবর্ণান্ত মাশীর্বাদাভিধানবৎ। দ্বাদশোহহানি রাজেন্দ্র শিশোনিষ্ক্রমণং গৃহাৎ।।১২।। চতুর্থে মাসি কর্তব্যং তথান্বেষাং মতং বিভো। যষ্ঠেহন্নপ্রাশনং মাসি যথেষ্টং মংগলং কুলে।।১৩।। চূড়াকর্ম দ্বিজাতীনাং সর্বেষামনুপূর্বশঃ। প্রথমেহ দ্বে তৃতীয়ে বা কর্তব্যং কুরুনন্দনঃ।।১৪।।
হে বিপ্র, নামকরণ সংস্কারে দ্বিজগণের ‘শিবশর্মা’ ইত্যাদি নামকরণ করা উচিত। ক্ষত্রিয়গণের বিশেষত্বযুক্ত ইন্দুধর্মা ইত্যাদি নাম রাখা উচিত। বৈশ্যবর্গের ধনসম্পদের সংগে সংযুক্ত কোনো নাম এবং শূদ্রের জগুপ্সা বাচক নামকরণ করা উচিত।। যেমন বৈশ্যগণের নাম ধনবর্ধন এবং শূদ্রের নাম সর্বদাস হওয়া উচিত।।৮-৯।।
ভগবান্ মনু বলেন, প্রত্যেক বর্ণের নামের উত্তম লক্ষণ হওয়া প্রয়োজন। ব্রাহ্মণের নাম ‘শর্মা’ ইত্যাদিযুক্ত, ক্ষত্রিয়বর্ণের নাম ‘রক্ষার’ সংগে সংযুক্তা, বৈশ্যগণের নাম ‘পুষ্টি’ সংযুক্ত এবং শূদ্রবর্ণের নাম ‘দাস’ সংযুক্ত হওয়া উচিৎ।। স্ত্রীগণের নাম সুখ এবং উদ্যম দ্বারা পরিপূর্ণ–স্পষ্ট অর্থ যুক্ত এবং সুন্দর হওয়া উচিৎ।। ১০-১১।।
নাম মংগলসূচক, অন্তে আশীর্বাদ সূচক শব্দযুক্ত দীর্ঘবর্ণ হওয়া প্রয়োজন। হে রাজেন্দ্র, দ্বাদশ দিনে শিশুকে গৃহ থেকে বহিঃনিস্ক্রমণ করাতে হয়।।১২।। অন্য পন্ডিতগণ চতুর্থমাসে এই নিস্ক্রমণের কথা বলেন। ষষ্ঠমাসে অন্নপ্রাশন দ্বারা কুলগত অন্যান্য কর্ম করা উচিৎ।।১৩।।
দ্বিজগণের চূড়ারর্ম সংস্কার আনুপূর্বিক প্রথম বা তৃতীয় বর্ষে করা প্রয়োজন।।১৪।।
গর্ভাষ্টমেহবেদ কুর্বীত ব্রাহ্মাণস্যোপনায়নম্। গর্ভাদেকাদশো রাজক্ষত্রিয়স্য বিনির্দিশেৎ।।১৫।। দ্বাদশোহদ্বেপি গর্ভাত্তু বৈশ্যস্য ব্রতমাদিশেৎ। ব্রহ্মবর্চ,কামেন কার্যং বিপ্ৰস্য পঞ্চমে।।১৬।। বলার্থিনা তথা রাজঃ যষ্টেহব্দে কার্যমেব হি অর্থকামেন বৈশ্যস্য অষ্টমে কুরুনন্দন।।১৭।। আষোড়শাদ্ ব্রাহ্মণস্য সাবিত্রী ণাতিবর্ততে। দ্বাবিংশতেঃ ক্ষত্রবন্ধোরাচতুর্বিংশতে বিংশঃ।।১৮।। অত ঊর্দ্ধং তু যে রাজণ্যথা কালমসংস্কৃতাঃ। সাবিত্রীপতিতা ব্রাত্যা ব্রাত্যস্তোমাহতে ক্রতোঃ।।১৯।। ন চাপ্যেভিরপুতৈস্তু আপদ্যপি হি কহিচিৎ। ব্রাহ্মং যৌনং সম্বন্ধমাচরেদ ব্রাহ্মণৈঃ সহ।।২০।। ভবস্তি রাজংশ্চর্মানি ব্রতিনাং ত্রিবিধানি চ। কাঞ্চারৌবব বাস্তানি ব্রহ্মক্ষত্রবিশাং নৃপ।।২১।।
ব্রাহ্মণগণের উপনয়ন সংস্কার গর্ভষ্টমে করা শাস্ত্র সম্মত। গর্ভ থেকে একাদশ বর্ষে ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্যগণের দ্বাদশ বর্ষে উপনয়ন সংস্কার করা প্রয়োজন। ব্রহ্মাচর্য পালনকারী ব্রাহ্মণের পঞ্চমবর্ষে উপনয়ন সংস্কার করা উচিৎ, রক্ষাকারী ক্ষত্রিয়ের ষষ্ঠ বর্ষে এবং অর্থকামী বৈশ্যের অষ্টমবর্ষে উপনয়ন সংস্কার করাই শাস্ত্রীয় বিধান।।১৫-১৭।।
ব্রাহ্মণে সাবিত্রীব্রত বা উপনয়ন সংস্কার ষোড়শবর্ষ অতিক্রম করা উচিৎ নয়। ক্ষত্রিয়বর্ণের দ্বাবিংশ এবং বৈশ্যগণে চতুর্বিংশ বয়ঃক্রম অতিক্ৰম না করে উপনয়ন সংস্কার করা উচিৎ।।
দ্বিজাতীয়গণের মধ্যে যে সকল ব্যক্তি এই অবস্থা স্বীকার না করে যথা সময়ে উপনয়ন দ্বারা সংস্কৃত হন না তাঁরা সাবিত্রীপতিত হয়ে ব্রাত্য হন। তাদের স্তোম নামক ত্রুতু ব্যতীত ব্রাহ্ম এবং গার্হস্থ্য সম্বন্ধ না করা উচিৎ।। না করা হলে ব্রাহ্মণগণ ব্রাহ্মণ ইত্যাদি বর্ণভুক্ত হন না। হে নৃপ, ব্ৰত পালনকারীদের তিন প্রকার চর্ম দ্বারা ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্যগণের যথাক্রমে কার্ফ, রৌরব ও বাস্তু কৰ্ম।।১৮-২১।।
বসীরংশ্চানুপূর্বের্ণ বস্ত্রানি বিবিধানি তু ব্রহ্মক্ষত্রবিশো রাজঞ্ছাণক্ষৌমাদিকানি চ।। ২২।। মৌজ্ঞী হিবুৎসা কার্যা বিপ্ৰস্য মেখলা। ক্ষত্রিয়স্য চ মৌবীজ্যা বৈশ্যস্য শণতান্তবী।।২৩।। মুঞ্ছালাভে তু কর্তব্যা কুশাশ্ম তকবল্কজৈঃ। ত্রিবৃতা গ্রন্থিনৈকেন তিথিঃ পঞ্চভিরেব চ।।২৪।। কার্পাস মুপবীতং স্বাদ্বিপ্রস্যেধ্ববৃতং ত্রিবৃৎ। শণসূত্রময়ং রাজ্ঞো বৈশ্যস্যাবিকসৌত্রিকম্।।২৫।। পুস্করানি তথা চৈমাং ভবন্তি ত্রিবিধানি তু। ব্রহ্মণো বৈল্বপালাশৌ তৃতীয়ং প্লক্ষজং নৃপ।।২৬।। বাটখাদিরৌ ক্ষত্রিয়স্তু তথাণ্যং বেতসোদ্ভবম্। পৈলবোদুম্বরৌ বৈশ্যস্তথাশ্বহুজমেব হি।।২৭।।
ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্যগণ ক্রমান্বয়ে শন, এবং ক্ষৌম ইত্যাদি বিবিধপ্রকার বস্ত্রধারণ করবেন।।২২।।
ব্রাহ্মণের ত্রিদন্ডী উপবীত হওয়া উচিৎ এবং মৌজীতৃণ নির্মিত মেখলা, ক্ষত্রিয়গণের মুঠাতৃণ নির্মিত মেখলা এবং বৈশ্যবর্ণের শনতন্ত্র নির্মিত মেখলা হওয়া প্রয়োজন।।২৩।।
মুঞ্জাতৃণ প্রাপ্ত না হলে কুশ দ্বারা বা উপলতৃণ দ্বারা মেখলা বানানো কর্তব্য। একগ্রন্থিযুক্ত ত্রি বা পঞ্চ উপবীত পরিধান করা উচিৎ।।২৪।।
বিপ্রগণের উপবীত কার্পাসসূত্র নির্মিত, ক্ষত্রিয়গণের শন নির্মিত এবং বৈশ্যগণের মেষলোম নির্মিত হবে।।২৫।।
ব্রাহ্মণাদি ত্রিবর্ণের দন্ডও তিনপ্রকার হবে। ব্রাহ্মণের বিল্বদন্ড বা পলাশ বৃক্ষের দন্ডহবে। যদি এই দুই দন্ড প্রাপ্ত না হয় তাহলে প্লক্ষদন্ড ধারণ করা উচিৎ। ক্ষত্রিয়গণের বটবৃক্ষের দন্ড বা খদির দন্ড বা বেতসদন্ড ধারণ করা কর্তব্য এবং বৈশ্যগণ পীলুবৃক্ষ দন্ড বা ডুমুরবৃক্ষদন্ড বা অশ্বত্থদন্ড ধারণ করবেন।।২৬-২৭।।
দন্ড নেতান্মহাবাহো ধর্মতোহ ইতি ধারিতুম্। কেশান্তিকো ব্রহ্মণস্য দন্ডঃ কাৰ্যঃ প্ৰমাণতঃ।২৮।। ললাটসন্মিতো রাজ্ঞঃ স্যাত্ত্ব নাসান্তিকোবিশঃ। ঋজবস্তে তু সর্বে সাব্রাহ্মণাঃ সৌম্যদর্শনাঃ।।২৯।। অনুদ্বেগকরা নৃণাং সত্ত্বচো নাগ্নিদূষিতাঃ। প্রগৃহ্য চেপিসতং দন্ডমুপস্থায় চ ভাস্করম্।।৩০।। সম্যগগুরু তথাপূজ্য চরেদ্ভৈক্ষ্যং যথবিধি। ভবৎপূর্ব চরেদ্ভৈক্ষ্যপনীতো দ্বিজোত্তমঃ।।৩১।। ভবণ মধ্যং তু রাজন্যো বৈশ্যস্য ভবদুত্তরম্। মাতরং বা স্বসারং বা মাতুর্বা ভগিণীং নিজাম্।।৩২।।
হে মহাবাহু, ত্রিবর্ণের পুরুষগণ উক্তপ্রকার দন্ড ধারণের যোগ্য। ব্রাহ্মণগণ কেশ পর্যন্ত লম্বদন্ড ধারণ করবেন। ক্ষত্রিয়গণ কপালপর্যন্ত উচ্চ দন্ড ধারণ করবেন। বৈশ্যগণ নাসিকা পর্যন্ত দীর্ঘ দন্ড ধারণ করবেন। এই তিনপ্রকার দন্ডই ঋ জু হওয়া আবশ্যক।। ব্রাহ্মণের দন্ড সুন্দর, দর্শনীয় হওয়া উচিৎ।।২৮-২৯।।
দন্ডসকল মানুষের উদ্বেগের কারণ যেন না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। এছাড়া দন্ডটি ছালযুক্ত এবং অগ্নিদগ্ধ না হওয়া উচিত। এইরূপে দন্ডগ্রহণ পূর্বক দন্ডমধ্যে ভাস্কর ভগবানের উপস্থাপনা করতে হয়।।৩০।।
নিজগুরুকে সম্যকরূপে অর্চনা করে উপনীতগণ ভিক্ষা প্রার্থনা করবেন। ব্রাহ্মণগণ ভিক্ষা প্রার্থনা করার সময় আদিতে ভবৎ শব্দ প্রযুক্ত করে “ভবতি ভিক্ষাং দেহি” ইত্যাদি বাক্য উচ্চারণ করবেন। ক্ষত্রিয়গণ ‘ভবৎ’ শব্দ মধ্যে প্রযুক্ত করে “ভিক্ষাং ভবতি দেহি” ইত্যাদি বলবেন এবং বৈশ্যগণ ‘ভবৎ’ শব্দ অন্ডে প্রযুক্ত করে “ভিক্ষাং দেহি ভবতি” ইত্যাদি রূপে ভিক্ষা প্রার্থনা করবেন। মাতা, ভগিনী অথবা মাতৃস্বসার নিকট ভিক্ষা প্রার্থনা করতে হয়। মাতাকে “ভো মাতঃ” এই প্রকার সম্বোধনপূর্বক ভিক্ষা প্রার্থনা করা বিধেয়।।৩১-৩২।।
ভিক্ষেৎ ভৈক্ষ্যং প্রথমং যা চৈণং নাবমানয়েৎ। সুবণং রজতং চান্নং সা পাত্রেহস্য বিনির্দশেৎ।।৩৩।। সমাহৃত্য ততৌ ভৈক্ষং যাবদর্থমমায়। নিবেদ্য গুরুবেহস্ত্রীয়াদাচম্য প্রঙ্ মুখঃ শুচিঃ ৩৪।। আয়ুষ্যং প্রাখো ভুঙক্তে যশস্যং দক্ষিণামুখঃ। শ্রিয়ং প্রত্যখো ভুঙক্তে ঋঙক্তে উদয়খঃ।।৩৫।। উপস্পৃশ্য দ্বিজো রাজন্নন্নমদ্যাৎ সমাহিতঃ। ভুক্ত্বা চোপস্পৃশোৎ সম্যগপ্তিঃ খানিচ সংশৃশেৎ।।৩৬।। তথান্নং পূজয়েন্নিত্যংদ্যাচ্চৈতদকুৎসয়ন্। দর্শাণাত্তস্য হৃষ্যেদ্বৈ প্রসীদেচ্চাপি ভারত।।৩৭।। অভিনন্দ্য ততোহশ্ৰীয়াদিত্যেবং মনুব্রবীৎ। পূজিতং ত্বশণং নিত্যং বলভোজশ্চ যচ্ছতি।।৩৮।।
ব্রহ্মচারী সর্বপ্রথম যাঁর কাছে ভিক্ষা প্রার্থনা করেন, তাঁর ব্রহ্মচারীকে অপমান করা উচিৎ নয়। তিনি ব্রহ্মচারীর ভিক্ষাপাত্রে সোনা, রূপা অথবা অন্ন ভিক্ষা দেবেন।।৩৩।।
ব্রহ্মচারী যা কিছু ভিক্ষা প্রাপ্ত হন এবং যা যা ভিক্ষার প্রয়োজন সকল কিছুই তিনি আচার্যদেবকে নিবেদন করবেন।। অতঃপর গুরু আজ্ঞা প্রাপ্ত হয়ে মুখ হস্ত পদাদি ধৌত করে, আচমনপূর্বক ভোজন করবেন।।৩৪।।
যিনি পূর্বমুখে ভোজন করেন তিনি দীর্ঘায়ু প্রাপ্ত হন। দক্ষিণ মুখ হয়ে ভোজন করেন তিনি যশ লাভ করেন। পশ্চিম মুখে ভোজনকারী শ্রী অর্থাৎ সম্পদ লাভ করেন এবং উত্তর মুখে ভোজন করলে সত্য লাভ করে।।৩৫।।
হে রাজন, দ্বিজগণের আচমনপূর্বক ভোজন করা উচিৎ এবং ভোজন সমাপনান্তে আচমন করা একান্ত কর্তব্য।।৩৬।।
প্রত্যহ অন্নের পূজনপূর্বক কোনোরূপ অশুচি না করে প্রফুল্লতা লাভ করা কর্তব্য।।৩৭।।
অপূজিতং তু তদ্ভুক্তমুয়ং নাশয়েদিদম্। নোচ্ছিষ্টং কস্যচিদদ্যান্নাদ্যাচ্চৈতও যান্তরা।।৩৯।। যত্ত্বন্নমন্তরা কৃত্বা লোভাদপি নৃপোত্তম। বিনাশং যাতি স নর ইহ লোকে পরত্র চ। যথাভবৎপুরা বৈশ্যো ধনবৰ্দ্ধনং সংজ্ঞিতঃ।।৪০।। স কথামন্তরং পূর্বমত্রস্য দ্বিজসত্তম্। কিমন্তরং তথান্নস্য কথা বা তৎকৃতং ভবেৎ।।৪১।। পুরা কৃতযুগে রাজনবৈশ্যো বসতি পুস্করে। ধনবর্ধণামাবৈ সমুদ্বৌ ধন ধান্যতঃ।।৪২।। নিদাঘকালে রাজেন্দ্র স কৃত্বা বৈশ্বদেবিকম্। সুপুত্র ভাতৃভিঃ সার্ধং তথা বৈ মিথবন্ধভিঃ। আচারং কুরুতে রাজভক্ষ্যভোজ্য সমন্বিতম্।।৪৩।।
ভগবান মনু বলেছেন, প্রথমে অন্নের অভিনন্দন করে ভোজন করা উচিৎ। যে অন্নকে প্রত্যহ এইরূপে পূজা ও সংস্কার করে ভোজন করা হয় সেই অন্ন বল ও তেজ প্রদান করে। আর যে অন্ন পূজিত হন না সেই অন্ন বল ও তেজ উভয়কেই নিবষ্ট করে। উচ্ছিষ্ট অন্ন বা তৎসদৃশ কোনো প্রকার অন্ন ভক্ষণ করা উচিৎ নয়।।৩৮-৩৯।।
যে ব্যক্তি লোভ বশতঃ উচ্ছিষ্টান্ন ভোজন করে সেই ব্যক্তি পীড়াকালে বিনাশপ্রাপ্ত ও ধনবর্দ্ধন নামক বৈশ্যের ন্যায় ইহলোক ও পরলোক উভয় জায়গায় বিনাশ প্রাপ্ত হয়।।৪০।।
রাজা শতানীক বললেন, হে দ্বিজশ্রেষ্ঠ ধনবর্দ্ধন কিভাবে অন্নের ব্যবধান কি এবং তা কি প্রকারে হয় তা বলুন।।৪১।।
মহর্ষি সুমন্ত বললেন, প্রাচীনকালে সত্যযুগে পুস্কর নামক স্থানে ধন- ধান্য-সম্পদে পূর্ণ ধনবর্দ্ধন নামে এক বৈশ্য বাস করতেন।।৪২।।
হে রাজেন্দ্র, গ্রীষ্মকালে তিনি বিশ্ব দৈবিক করেছিলেন এবং নিজ পুত্র ও ভ্রাতাদের সংগে তথা মিত্রদের সংগে বহুভোজযুক্ত হয়ে ভোজন করছিলেন।।৪৩।।
অথ তদ্ভুঞ্জস্তস্য অন্নং শদ্বো মহানভূৎ। করুণঃ কুরুশার্দূল অথ তংস প্রধাবিতঃ।।৪৪।। ত্যক্ত্বা স ভোজনং যাবন্নিষ্ক্রান্তো গৃহবাহ্যতঃ। অথ শব্দস্তিরোভূতঃ স ভূয়ো গৃহমাগতঃ।।৪৫।। তমেব ভোজনং গৃহ্য আহারং কৃতবানৃপ। ভূক্তশেযং মহাবাহো আহারং সতু ভূক্তবান্।।৪৬।। ভূক্তা স শতধা জাতস্তসিমম্মেব ক্ষণো নৃপ তসমাদং ন রাজেন্দ্র অশীয়াদত্তরা ক্বচিৎ।।৪৭।। ন চৈবাত্যশানং কুর্যান্ন চোচ্ছিষ্টঃ কচিজেৎ। রসৌ ভবত্যত্যনশানাদ্রসাদ্রোগঃ প্রবর্ততে।।৪৮।। স্নাণং দানং জাপো হোমঃ পিতৃদেবাভিপূজনম্। ন ভবন্তি রসে জাতে নারাণাং ভরতমভ।।৪৯।। অনারোগ্যমনায়ুষ্যস্বর্গ্যং চাতিভোজনম্। অপুণ্যং লোকবিদ্বিষ্টং তৈসমাত্তৎপরিবর্জয়েৎ।।৫০।।
অতঃপর তিনি যখন ভোজন করছিলেন তখন এক মহাশব্দ উৎপন্ন হয়। হে কুরুশার্দূল, তিনি তখন সেই শব্দের অনুসরণ করে অত্যন্ত করুণভাবে ধাবন করলেন।। ৪৪।।
ভোজন ত্যাগপূর্বক তিনি যখন ঘর থেকে বাইরে নির্গত হলেন তখন সেই শব্দ তিরোহিত হয়ে গেল। তিনি পুনরায় ঘরে পিরে এসেছিলেন।।৪৫।।
হে নৃপ, সেই ত্যক্ত্ব পাত্র থেকে তিনি অবশিষ্ট খাদ্য খেয়েছিলেন।।৪৬।।
হে নৃপ, সেই খাদ্য গ্রহণ করে তিনি শত ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। সুতরাং হে রাজেন্দ্র ঐরূপ ত্যক্ত অন্ন কদাপি ভক্ষণ করা উচিৎ নয়।।৪৭।।
অত্যধিক ভোজন করাও কখনও উচিৎ নয়। আবার উচ্ছিষ্ট ভোজন করাও অনুচিৎ। অতিরিক্ত ভোজন থেকে রস উৎপন্ন হয় এবং রস থেকে রোগ সৃষ্টি হয়।।৪৮।।
যক্ষভূতপিশাচানাং রক্ষসাং চ নৃপোত্তম। গম্যো ভবতি বৈ বিপ্ৰ উচ্ছিষ্টো নাত্র সংশয়ঃ।।৫১।। শুচিত্বমাশ্রয়েওসমাচ্ছচিত্বানেমাদতে দিতি সুখেন চেহ রমতে ইতীয়ং বৈগিকীশ্রুতিঃ।।৫২।।
স্নান, দান, জপ, হোম, পিতৃগণ ও দেবপূজন করলে মানুষের ম্যধ্য রস উৎপন্ন হয় না। হে ভরতর্যভ, অতি ভোজনে অনারোগ্য, অনামুষ্য, অপুণ্য, লোকদ্বেষ তথা স্বর্গহানি ঘটে। সুতরাং তা বর্জন করা উচিৎ, শুচিতার আশ্রয় গ্রহণ করলে সুখে পৃথিবীতে রমণ করা যায়–এই হল বৈদিক মত।।৪৯-৫২।।