4 of 8

সরস কবিতা

সরস কবিতা

‘ও প্রাণ মকর গঙ্গাজল,

খুশির খুশি, মহাখুশি

সপত্নী কোন্দল।…

…তুমি আমার

পান্তাভাতে বেগুন পোড়া

ফ্যানসাভাতে ঘি

কেমন করে বলব বঁধু

তুমি আমার কি?’

কিংবা হঠাৎ যদি কখনও কথাচ্ছলে কিংবা কোনও কিছু লিখতে গিয়ে যদি মনে পড়ে,

‘কামরূপেতে কাগ মরেছে

কাশীধামে হাহাকার।’

চট করে হয়তো বলতে পারব না লেখাটা কোথায় আছে, কোন বইতে আছে? আর সেই বইটাই বা কোথায়? এ রকম বই হাতের নাগালে সবসময়ে থাকে না।

তদুপরি এ সমস্যাও কখনও কখনও থাকে, ‘এটা কার লেখা?’ তা হলে তো খুঁজে পাওয়া আরও কঠিন।

ন্যাশনাল বুক ট্রাস্টের ‘বাংলা আধুনিক সরস কবিতা’ ঈশ্বর গুপ্ত থেকে সম্প্রতি প্রয়াত দেবতোষ বসু পর্যন্ত কবির হাস্যময় কবিতা দুই মলাটের মধ্যে উপস্থিত করেছেন।

সম্পাদনা দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এ কাজের যোগ্যতম ব্যক্তি এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। বেশ কয়েক বছর আগে দেবীপ্রসাদ ‘রঙীন কবিতা’ নামে অনুরূপ একটি সংকলন সম্পাদনা করেছিলেন। যতদূর মনে পড়ছে, সেই সংকলনে শুরুর কবি ছিলেন ভারতচন্দ্র। এখন আধুনিক হয়ে ঈশ্বর গুপ্ত থেকে আরম্ভ।

বুদ্ধদেব বসু তাঁর ‘আধুনিক বাংলা কবিতা’ আরম্ভ করেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ দিয়ে। পরবর্তীকালে অনেকগুলি সংকলন অনিবার্যভাবে জীবনানন্দ দিয়ে, তারপরে নবীনতর কোনও প্রধান কবিকে দিয়ে আধুনিকতার সূত্রপাত করানো হয়েছে। আধুনিক বলতে কী বোঝায় সেই জটিল ও সমাধানহীন আলোচনায় যাব না।

আধুনিক-অনাধুনিক যাই হোক ‘রঙিন কবিতা’ নাম অনেক যথার্থ ছিল। এ ধরনের সংকলনে সব কবিতা সরস হয় না, তবে কাব্যগুণে রঙিন বলতে বাধা নেই। তবে বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপকেরা যাই বলুন, ঈশ্বর গুপ্ত কিংবা বঙ্কিমকে আধুনিক বলতে আমাদের কারও কারও সংগত কারণেই বাধে।

সে যা হোক কচকচি করে লাভ নেই। বিশেষত হাতের সামনে যখন রয়েছে তিনশো পৃষ্ঠা হাস্যময় রঙিন কবিতা।

পাতা ওলটালেই চোখে পড়ছে,

ঢল ঢল ঢল ঢল বাঁকা ভাব ধরে

বিবিজান চলে যান লবেজান করে।

এ কবিতা চেনানোর দরকার নেই, এ তো ঈশ্বর গুপ্তের কবিতা। একটু দূরেই রয়েছে রামনারায়ণ তর্করত্নের সেই বিখ্যাত ফলার কাব্য—

‘ঘিয়ে ভাজা তপ্ত লুচি, দু-চারি আদার কুচি।

কচুরি তাহাতে খান দুই।…

অদূরেই রয়েছেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর,

‘গা তোলো রে, নিশি অবসান, প্রাণ।

বাঁশ বনে ডাকে কাক, মালি কাটে পুঁইশাক,

গাধার পিঠে কাপড় দিয়ে রজক যায় বাগান।’

সুপ্রভাতের এমন বর্ণনা জ্যোতিরিন্দ্রনাথের কলমেই সম্ভব ছিল।

আরেকটু এগিয়ে এসে প্রায় আধুনিক কালে, মনীশ ঘটকের সেই বিখ্যাত পঙ্‌ক্তি—

‘তরে বুঝি কই নাই? আমিও বান্ধবী।’

এবং অন্নদাশঙ্কর,

‘করেছি পণ, নেবো না পণ

বৌ যদি হয় সুন্দরী।

কিন্তু আমায় বলতে হবে

স্বর্ণ দেবে কয় ভরি।’

আর উদ্ধৃতি দিয়ে লাভ নেই। সংগ্রহে রাখার মতো বই। দাম বেশি নয়, পঁচাশি টাকা।

সবশেষে একটা কথা, সরস কবিতাগুলি, শ্রাদ্ধের নিমন্ত্রণ পত্রের মতো কালো বর্ডার দিয়ে ছাপা হয়েছে কেন, সেটা কিন্তু বুঝতে পারলাম না।

পুনশ্চ:

এই সংকলনের গুরুত্ব আমার কাছে অন্যদের চেয়ে একটু বেশি এই কারণে যে সদ্য পরলোকগত আমাদের অনুজ কবি দেবতোষ বসুর একটি অসামান্য সরস কবিতা এই সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। প্রচার বিমুখ, সুকবি দেবতোষের প্রতি বিভিন্ন সংকলনকারেরা অনেক সময়েই সুবিচার করেননি।

আরেকটা কথা। এ বইতে দেবতোষের জন্মসাল ভুল দেওয়া হয়েছে। সে আমার থেকে পরিষ্কার দু’বছরের ছোট। তার জন্মসাল ১৯৩৬ নয়, ১৯৩৮। তাকে তার কৈশোরকাল থেকেই চিনি বলে এ কথা হলফ করে বলতে পারি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *