সমাজ ও সাহিত্যিক
সাহিত্যিক সমাজেরই অঙ্গ। সমাজেই তার উৎপত্তি, সমাজেই তার লয়। সমাজে ও সামাজিক প্রয়োজনেই হয়েছে ভাষার সৃষ্টি–যে ভাষা হচ্ছে সাহিত্যের বাহন, সাহিত্যিকের মন-মানসের মাধ্যমে।
সাহিত্যিক ছাড়া সমাজ কল্পনা করা যায়। কিন্তু সমাজ ছাড়া সাহিত্যিক কল্পনা করাই যায় না। ব্যষ্টি থেকে সমষ্টির তথা সাহিত্যিক থেকে সমাজের শ্রেষ্ঠত্ব তাই অনস্বীকার্য। সমাজ ছাড়া সাহিত্যিক, সাহিত্যিক হতে পারে না, পারেন না পা বাড়াতে জীবনে, এমন কি রচনায়ও তারা অচল হয়ে থাকতে বাধ্য। কারণ, তার কাঁচামাল অর্থাৎ রচনার উপকরণের একমাত্র সরবরাহ ক্ষেত্র হল সমাজ–সমাজিক মানুষ। তাই অন্যের বেলায় যেমন সাহিত্যিকের বেলায়ও তেমনি সামাজিক দায়িত্ব এক মহৎ কর্তব্য–বরং সাহিত্যিকের ওপর এই দায়িত্বের দাবি অধিকতর। কারণ, তার কার্যকারণ ও রচনার প্রভাব সুদূরপ্রসারী এবং তার প্রতিক্রিয়া দেশ-কাল-পাত্রকেও ডিঙিয়ে।
এখন জিজ্ঞাস্য, সাহিত্যিক আজ সামাজিক দায়িত্ব তথা নিজের সাধনা ও প্রতিভার প্রতি যে দায়িত্ব তা পালন করতে সক্ষম হচ্ছে কি না? পুরোপুরি দূরে থাক, আংশিকভাবেও পালন করতে সক্ষম হচ্ছেন কি না? বর্তমানে সমাজের রূপ এবং চেহারা যেভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, তাতে এই দায়িত্ব পালন সম্ভব কি না? সাহিত্যিকও মানুষ–সামাজিক মানুষ, একদম রক্ত মাংসের মানুষ। গজ দন্ত-মিনার’ কথাটা রূপকথার একটা উপমামাত্র, না হয় কোনো কালেই কোনো সত্যিকার সাহিত্যিক ‘গজ-দন্ত মিনার’বাসী ছিলেন না–অমন ভাগ্যবান ‘লাখে না মিলে এক’!
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের নৈতিক মান অধঃপতনের পাতালপুরীতে গিয়ে ঠেকেছে। এই সর্বগ্রাসী অধঃপতনের হাত থেকে সাহিত্যিক-শিল্পীরাও আত্মরক্ষা করতে পারেন নি। বড় কারণ–জীবন সংগ্রাম অর্থাৎ দেহ-প্রাণ এক ঠাঁই রাখার যে প্রয়াস তা এক নিদারুণ রক্তক্ষয়ী ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন। জীববিজ্ঞানের মূল কথা বেঁচে থাকার চেয়ে বড় ধর্ম আর নেই। এই বেঁচে থাকার ধর্মের কাছে অন্য সব ধর্ম–সত্য, ন্যায়, কল্যাণ ও সৌন্দর্য-সাধনা হার মানতে বাধ্য। তাই বেঁচে থাকার স্বভাবধর্ম পালন করতে গিয়ে সাহিত্যিকও আজ তাঁর সাহিত্যধর্ম বিসর্জন দিচ্ছেন অর্থাৎ দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
সাহিত্যিকের কাজ শুধু সমাজ-জীবনের রূপায়ণ নয়–মহৎ জীবনের মহৎ চিন্তা ভাবনার রূপায়ণও–সমাজকে অর্থাৎ সমাজের মানুষকে সত্য, ন্যায়, কল্যাণ ও সৌন্দর্যের তথা সর্বাঙ্গীণ সামঞ্জস্যের দিকে নিয়ে যাওয়া। এক কথায়, সুদৃঢ় সামাজিক ভিত্তির ওপর মানুষের মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে তোলাই সাহিত্যিকের ধর্ম। সেই ধর্ম সাহিত্যিক আজ পালন করতে পারছে কি? যেখানে তার নিজের জীবনই সামঞ্জস্যহীন, ভারসাম্যহীন অবস্থা যেখানে সাহিত্যিককেও মনুষ্যত্বভ্রষ্ট করে ছেড়েছে, সেখানে সাহিত্য-ধর্ম পালনের কথা একটা হেঁয়ালির মত শোনায় না কি?
একদিন সুলতান মাহমুদের সামান্য মিথ্যাচারকে ফেরদৌসী ক্ষমা করেন নি। আত্মমর্যাদার এক অবিস্মরণীয় বিদ্যুৎ-ঝলক সেদিন দুর্ধর্ষ সম্রাটের রক্ত চক্ষুকে শুধু ঝলসে দেয় নি, নির্মম এ একচ্ছত্র রাজপ্রতাপকেও লাঞ্ছিত ও বিকৃত করে ছেড়েছিল। নিঃস্ব ফেরদৌসীর সাহিত্য-ধর্মের জয় এভাবে ইতিহাস বিশ্রুত হয়ে রয়েছে। এই নৈরাজ্যের যুগেও সত্যনিষ্ঠার মূল্য সমাজে স্বীকৃত হতো এবং সামাজিক পরিবেশ ছিল এর অনুকূল আর ফেরদৌসীর নিজের জীবন ছিল অকলঙ্ক সত্যের নিষ্কোষিত অসি তুল্য। তখন স্বভাব ধর্মের খাতিরে অর্থাৎ অন্নবস্ত্রের জন্যে সাহিত্যিককে পদে পদে সাহিত্য-ধর্ম বিসর্জন দিতে হতো না। তাই ফেরদৌসীর সাহিত্য-ধর্ম সেদিন নিছক বেঁচে থাকার স্বভাবধর্মকেও পরাস্ত করতে পেরেছিল। সমাজ ও সামাজিক পরিবেশই কি তার মনে এই দুর্জয় সাহস ও মেরুদণ্ডে ইস্পাতকাঠিন্য সঞ্চারিত করে দেয় নি? কারণ, কবি তো ভূঁইফোড় বা আকাশকুসুম ছিলেন না–ছিলেন সমাজেরই অঙ্গ, সমাজের সৃষ্টি ও সমাজেরই সন্ততি।
এখন সামাজিক অধঃপতনের সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্যিকদেরও চরম অধঃপতন ঘটেছে। তার জৈব-ধর্ম কীভাবে পদে পদে সাহিত্য ধর্মকে লাঞ্ছিত করছে তার দৃষ্টান্তের অভাব নেই। এ কারণেই নেহাৎ জৈব-ধর্মের তাড়নায় এখন বহু খ্যাতনামা সাহিত্যিককেও বিত্তবান ও ক্ষমতার অধিকারীকে বই উৎসর্গ করতে দেখা যায়। একজন সুপরিচিত সাহিত্যিক তো এক বহুনিন্দিত মন্ত্রীর জীবনী লিখতেই সংকল্প করে বসেছিলেন। কিন্তু কালচক্রে ও ঘটনাক্রমে যখন সে মন্ত্রীর মন্ত্রিত্ব আর রইল না সঙ্গে সঙ্গে উক্ত সাহিত্যিকের মন্ত্রী ভক্তিও একেবারে উবে গিয়ে শূন্যে মিলিয়ে যেতে একমুহূর্তও দেরি হলো না। সাহিত্যিকদের এসব কীর্তি নিছক গুণগ্রাহিতার পরিচয়–একথা মনে করলে মনকে। চোখ ঠারানো হবে। বলা বাহুল্য, সামাজিক অবস্থাই আজ সাহিত্যিককেও এভাবে মনকে চোখ ঠারাতে বাধ্য করছে। নেহাত অযোগ্য ও নানা সমাজ-বিরোধী কার্যকলাপে রত এমন ধনী পত্রিকা-মালিক ও প্রকাশকদের দুয়ারে সাহিত্যিকদের ধরনা দেওয়া, মাথা বিকানো তো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এই অবস্থায় সাহিত্যিক সামাজিক দায়িত্ব কী করে পালন করবেন? কী করেই বা রক্ষা করবেন সাহিত্য-ধর্ম? আজ সমাজের কাছে। সাহিত্যিকের এই এক জিজ্ঞাসা।
নিছক গল্প-কাহিনীতেও সমাজ জীবনই প্রতিফলিত হয়। সেই চিনিখোর বালকের গল্পের কথাই স্মরণ করুন। তখন রেশন প্রথা ছিল না। চিনির দামও এক টাকা পাঁচ আনায় গিয়ে ঠেকে নি, সাদা চিনি নিয়ে কালোবাজার যখন কল্পনাই করা যেত না–তখন এক বালকের পিতা ছেলের চিনি খাওয়া কমাতে চান। তখন সাধু সজ্জনের ওপরে লোকের বিশ্বাস ও আস্থা ছিল। তাই এক সাধু ব্যক্তির কাছে বালককে নিয়ে গিয়ে তার বাবা বললেন, হুজুর, ছেলেটা বউড় চিনি খায়, তাকে একটু কম খেতে উপদেশ দিন। সাধু বললেন, এক সপ্তাহ পরে নিয়ে এসো। এক সপ্তাহ পর ছেলেটিকে নিয়ে তিনি আবার হাজির হলেন সাধুর সন্নিধানে। এবার সাধু ছেলেটিকে উপদেশ দিলেন, বাবা, চিনি কম করে খেয়ো, বেশি চিনি খেলে অসুখ হয়, ক্রিমি বাড়ে ইত্যাদি। কৌতূহলী বাপ জিজ্ঞাসা করলেন, হুজুর এক সপ্তাহ পরে আসতে বলার কারণ? সাধু বললেন, আমি নিজেও খুব চিনি খেতাম, নিজে চিনি খাওয়া না কমিয়ে তোমার ছেলেকে উপদেশ দিই কী করে? এই এক সপ্তাহ ধরে নিজে চিনি কম খাওয়া অভ্যাস করেছি।
এটা প্রাচীন যুগের গল্প। প্রাচীন হলেও এর অন্তর্নিহিত সত্য অর্থাৎ কথা ও কাজে সঙ্গতি রক্ষা চিরকেলে ব্যাপার–এ কখনো পুরনো বা বাসি হতে পারে না। কারণ এর ওপর শুধু ব্যক্তির নয়, সমাজেরও সামঞ্জস্য ও তার সুস্থ বিকাশ নির্ভর করে। কথা ও কাজে যদি সঙ্গতি না থাকে তাহলে সামাজিক জীবন বানচাল হতে দুদিনও লাগবে না। সাহিত্যের ধর্ম হলো জীবনে সঙ্গতি, সামঞ্জস্য সন্ধান ও প্রতিষ্ঠা। সামাজিক জীবনে যেটুকু অসঙ্গতি আছে সাহিত্যিক তাকে সঙ্গতি দিয়ে থাকেন। তাই জীবনের ফটোগ্রাফিক বর্ণনা কখনো সাহিত্য নয়–জীবনকে সাহিত্যের রূপে রূপায়িত অর্থাৎ সঙ্গতিদানই শ্রেষ্ঠ সাহিত্যের লক্ষ্য। যেখানে জীবন একটা সঙ্গতি ও সামঞ্জস্যে পরিণতি লাভ করেছে, যা বাস্তব হয়েও হয়েছে বাস্তবাতীত তাই সাহিত্য। তাকে সন্ধান ও রূপায়ণই সাহিত্যিকের ধর্ম।
এ সাহিত্য রচনা করতে হলে সাহিত্যিকের নিজের জীবনে চাই সঙ্গতি ও সামঞ্জস্য। জীবনে যদি না থাকে সঙ্গতি, তাতে যদি না থাকে সামঞ্জস্য ও তা যদি হয় পরস্পর বিরোধিতায় খণ্ডিত, পর্যদস্ত, তাহলে সত্যিকার সাহিত্য কী করে রচিত হতে পারে? আজ এই পরস্পর ও আত্মবিরোধিতায় প্রত্যেক সাহিত্যিকের জীবন ক্ষতবিক্ষত। তিনি যা বলেন, সাহিত্য ধর্মের প্রেরণায় যা বলতে চান, তা অনেকখানি আজ সুখ-রক্ষার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কথা ও কাজে তিনি নিজেই কোনো সামঞ্জস্য রক্ষা করতে পারছেন না আজ। ফলে সমাজের কাছে শুধু নয়, নিজের কাছেও আজ তিনি এক হাস্যাস্পদ চরিত্রে পরিণত হয়েছেন। গ্রাম্য জীবনের প্রতি কোনো সাহিত্যিকের হয়তো মোহ আছে। প্রাণের টানও থাকতে পারে—’গ্রামে ফিরে যাও’ একথা তিনি সব সময় লেখেন, বলেনও অথচ নিজে শহর ছাড়েন না। কারণ, শহরের তুলনায় গ্রামে জীবিকার ক্ষেত্র সঙ্কুচিত। যাদের তিনি উপদেশ দেন তাদের বেলায়ও যে এটা সত্য হতে পারে তা তিনি নির্বিচারে ভুলে যান। আত্ম-বিরোধিতার এও এক শোচনীয় চিত্র। অনেকে কালোবাজারকে কবিতা-গল্পে এলোপাতাড়ি মার লাগান অথচ সুযোগ পেলে নিজেরাও যে তা করেন না তা নয়, অনেকে দু একখানা অতিরিক্ত রেশন কার্ডও হাতে রাখেন সপ্তাহ কুলোয় না বলে। পত্রিকা বের করতে চান কেউ কেউ লাইসেন্সের দিকে নজর রেখে। কেউ কেউ অন্যের জমি বা বাড়ি ঘরও হয়ত বেআইনিভাবে দখল করে থাকেন আর নিজেকে সমর্থন করেন এই বলে—’এ না করলে আজ কাল শহরে থাকা যায় নাকি?’
আজ সাহিত্যধর্ম স্বভাব ধর্মের কাছে এইভাবে পদে পদে লাঞ্ছিত হচ্ছে। সাহিত্যিকরা যে উপদেশ দিচ্ছেন, সাহিত্য ধর্মের প্রেরণায়, হয়তো বা অভ্যাসবশতই, যেসব মহৎ কথা বলছেন–মনুষ্যত্নের কথা, সত্যের কথা, ন্যায়ের কথা, সুবিচারের কথা–এ যেন উপদেশের খাতিরেই উপদেশ দেওয়া। অর্থাৎ এর কোন দায়িত্ব তাদের নেই। তারা শুধু উপদেশের মালিক, পালনের দায়িত্ব অন্যের।
অনেক সাহিত্যিক পঞ্চম কণ্ঠে পুঁজিবাদের নিন্দা করেন, পুঁজিপতিদের গালমন্দ না করে ‘বাড়তি ধনে’র মুণ্ডপাত না করে কলমই ধরেন না। অথচ দেখি আবার তারাই পেটের ধান্দায় এই পুঁজিপতিদেরই দুয়ারে দুয়ারে ধরনা দিয়ে থাকেন। কেউ কেউ সখের সাহিত্য সভা করেন তাদের লেখনী-নিন্দিত এসব বাড়তি ধনের মালিকদের সুসজ্জিত ড্রয়িং রুমে যেখানে মূল্যবান ও পুরু সোফায় বসে বেশ আরামসে তিনি অভুক্ত ও অধভূক্ত ভিখিরিদের জন্য কবিতা ও গল্পে বেশ কিছুটা মায়াকান্না কাঁদেন। আর গৃহস্বামী হয়ত দামি সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে বেশ মুরুব্বিয়ানার চালে এই অপূর্ব সাহিত্য-লীলা উপভোগ করেন। সাহিত্যিকের জন্মলব্ধ শালীনতা ও আত্মমর্যাদাবোধ আজ এভাবে এক করুণ দৃশ্যে পরিণত হয়েছে।
আগের দিনে দেশে এমন বহু আলেমকে দেখেছি যারা তীব্র ভাষায় যেমন সুদ খাওয়াকে নিন্দা করতেন তেমনি শত প্রলোভনেও সুদখোরের বাড়ির ত্রি-সীমানায়ও পা বাড়াতেন না, সুদখোরের বাড়িতে দাওয়াত কবুল তো দুরের কথা। আজ আমরা তাদের থেকেও তীব্র ভাষায় কালোবাজারি, পুঁজিপতি ও বাড়তি ধনের মালিকদের নিন্দা করছি, অথচ আবার বহুনিন্দিতদের প্রসাদ ভিক্ষা করে করেই আমাদের অনেকের সময় কাটছে। প্রাচীনপন্থী আলেম সমাজ যতটুকু মেরুদণ্ডের, আত্মমর্যাদার, কথা ও কাজের সঙ্গতি রক্ষার পরিচয় দিয়েছেন, আজ আমরা তথাকথিত আধুনিক প্রগতিপন্থী সাহিত্যিকরা তার এক শতাংশ পরিচয় দিতেও পারছি না।
অথচ একদিন সাহিত্যিকই ছিলেন সমাজের বিবেক। সমাজের মানসিক ও নৈতিক স্বাস্থ্যরক্ষার দায়িত্ব ছিল তাঁর। আজ তার সেই ভূমিকা নেই। জানি, ভারসাম্যহীন সমাজ-ব্যবস্থাই এর জন্য দায়ী। স্বভাবধর্মের তাড়নায় আজ আমরা পদে পদেই সাহিত্যধর্মকে জলাঞ্জলি দিতে বাধ্য হচ্ছি। আজ সামাজিক পরিবেশ ও আবহাওয়া সাহিত্যধর্মের এতই প্রতিকূল যে সাহিত্যিকের পক্ষে আজ সাহিত্যিক হিসেবে বেঁচে থাকাই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ভাল সাহিত্য হচ্ছে না, কথাটা মিথ্যা নয়। এই সামাজিক পরিবেশ যেখানে জীবিকার কোনো নিরাপত্তা নেই, শুধু সাহিত্য করে যেখানে দেহ ও প্রাণ এক ঠাঁই রাখার কোনো সম্ভাবনা নেই, যেখানে চারদিকের পরিবেশ মন-মানস ও চরিত্র বিকাশের অনুকূল নয়, সেখানে ভাল সাহিত্য আশা করা যায় কি? বিশেষ করে জীবিকার নিরাপত্তা ছাড়া, সৎ সাহিত্য সৃষ্টির জন্যে যে সর্বাঙ্গীণ স্বাধীনতার দরকার তা কি আসতে পারে? তার অভাবে সাহিত্যিক কি পরিপূর্ণ মুক্তির সঙ্গে, নিজের খেয়াল-খুশিমতো লিখতে ও সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে পারেন? পারেন না বলেই আজ লেখনী আর অশনি নয়–pen is mightier than sword কথাটা আজ তাই নেহাত উপহাসের মতই শোনায়।
[‘সমাজ ও সাহিত্যিক’ ১৯৬১ সালে দুপাতা পত্রিকার প্রথম প্রকাশিত হয়। ঐ বছরই এটি সাহিত্য ও সংস্কৃতি সাধনা গ্রন্থে সংকলিত হয়ে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।]